#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব_১৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
মাহতিম মাহির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,’ তুমি এখনো ঘুমাও নি…?!!
মাহিঃ ঘুম আসছে না।
মাহতিমঃ তাহলে চলো গল্প করি।
মাহি হেঁসে মাথা নেড়ে এগিয়ে গেলো। নিজের হাতের কফিটা মাহতিম এর দিকে এগিয়ে দিলো।
মধ্য রাতে পাশাপাশি বসে গল্প করছে দুইজন যুবক-যুবতী।
মাহতিম মাহি কে জিজ্ঞেস করলো,’ তোমার বাসায় কে কে আছে..?’
মাহিঃ ভাই- ভাবি, আম্মু আর আমি।
মাহতিমঃ আঙ্কেল..?
মাহি মলিন মুখে বলে উঠলো, ‘ আব্বু পাঁচ বছর আগে হার্ট অ্যাটাক করে মা’রা যান।
মাহতিমঃ তোমার আর কোনো বোন নেই..?
সাথে সাথে মাহির মুখে অন্ধকার নেমে আসলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো “আছে”।
মাহতিম মাহির দিকে তাকালো। চোখে জল চিকচিক করছে মাহির।
মাহতিমঃ উনি কোথায়..?
মাহিঃ দূর আকাশের তাঁরা হয়ে গেছে। কথাটা বলতেই মাহির কন্ঠ কেঁপে উঠল।
মাহি বসা থেকে উঠে রেলিং এর উপরে গিয়ে বসলো৷
মাহতিম নিষেধ করলো মাহি শুনলো না।
মাহি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমি আমার বোন কে অনেক ভালোবাসি কিন্তু কখনো বলা হয়নি। আমি বলার আগেই আমার বোন আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। বলেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
মাহতিম কি বলবে বুৃঝে উঠতে পারলো না। এখন নিজের গালেই থাপ্পর বসাতে ইচ্ছে হচ্ছে। কেনো এইসব জিজ্ঞেস করতে গেলো সে!!!??
মাহি অনেক সময় পর নিচে আসলো রেলিং ঘেঁষে নিচে বসলো। চোখ বন্ধ করে কখন যে ঘুমিয়ে গেলো বুঝতেই পারলো না।
মাহতিম মাহির দিকে তাকিয়ে বুঝলো ঘুমিয়ে গেছে। সে ডাকতে গিয়েও ডাকলো না।
মাহির পাশে বসা রেলিং হেলান দিয়ে নিজেও চোখ বন্ধ করে নিলো।
____
সকাল সকাল সুমুর ঘুম ভেঙে গেলো। সে গায়ে ওড়না জড়িয়ে ছাঁদে উঠে আসলো।
ছাঁদে এসেই নজর গেলো রেলিং এর দিকে।
মাহতিম ঘুমিয়ে আছে ওর কাঁদে মাথা রেখে গলা জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে মাহি।
সুমাইয়া হ্যাঁ করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
আসতে আসতে ওদের দিকে এগিয়ে গেলো।ঝুঁকে ওদের মুখের দিকে তাকালো গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে ওরা।
সুমাইয়া নিজের পিছে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাকালো। নাদিম কে দেখেই চিৎকার মারলো।
নাদিম অবাক হয়ে সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ কি হয়েছে..?!!
সুমাইয়ার চিৎকার শুনে ওদের ঘুম ভেঙে গেলো।
মাহতিম মাহির দিকে মাহি মাহতিম এর দিকে তাকিয়ে নিজেদের এতো কাছে দেখেই আরও জোরে চিৎকার মারলো।
সুমাইয়া আর নাদিম আবার ওদের দিকে তাকালো।
মাহি লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। লজ্জায় মাথা নিচু করে বলে উঠে, ‘ সরি সরি রাতে কখন ঘুমিয়ে গেছি বলতে পারি না।’
সুমাইয়া মুচকি হেঁসে বললো,’ এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই। সমস্যা নেই সুন্দর লাগছিলো বলেই হেঁসে উঠলো।
মাহি বিরবির করে বললো,’ তুমি যেমনটা ভাবছো তেমন কিছু না। ‘
মাহতিম মাথা চুলকে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।
সুমাইয়া হেঁসে বললো,’ আমি কি ভাবছি..?’
মাহি লজ্জায় মাথা নিচু করে আঁড়চোখে নাদিম এর দিকে তাকালো।
নাদিম হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আচ্ছা ঠিক আছে সব বুঝলাম কিন্তু তুমি কেনো এতো লজ্জা পাছো..?’
সুমাইয়া বলে উঠলো, ‘ আপনি এতো কিছু বুঝবেন না। এটা বুঝতে হলে আপনাকে কারো প্রেমে পরতে হবে। ‘
নাদিমঃ তাহলে আজ থেকে আমি বরং আমার বেয়াইন এর প্রেমে পড়ে যাই।
মাহি হেঁসে বললো,’ নাদিম ভাই আপনি বরং এটাই করেন। বলেই ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।
রূপা নাস্তা টেবিলে সাজিয়ে সবাইকে ডেকে নিলো৷
রুমে এসে সাজ্জাদ কে ডাকতেই সাজ্জাদ রূপার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।’
রূপা সাজ্জাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বললো,’ টেবিলে আসেন..’
সাজ্জাদ হাসলো। রূপা লজ্জা পেয়েছে সেটা দেখে।
বিকেলে নাদিম বললো সবাই মিলে ঘুরতে যাবে। ওদের গ্রামের বাড়িতে।
মাহিঃ আমি যেতে পারবো না। আম্মু বলেছে চলে যেতে।
রূপাঃ আমি আন্টির সাথে কথা বলে নিবো।
নাদিমঃ কাল চলে আসবো মাহি চলো ঘুরে আসা যাক।
মাহি খুশি হয়ে রাজি হয়ে গেলো।
রূপা শাড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মাহিও শাড়ি পড়বে।।
সুন্দর করে দুইজন শাড়ি পড়ে নিলো।
রূপা নীল শাড়ি সাথে নীল চুরি, খোঁপা করা চুল। হালকা মেক-আপ বেশ সুন্দর লাগছে।
রূপা বের হতেই ওর আম্মু বললো” মাশাল্লাহ কারো নজর না লাগে।”
মাহতিমঃ আন্টি আপনার এটা আরও আগে বলার দরকার ছিলো এখন তো দেরি হয়ে গেছে।
সবাই ওর দিকে তাকাতেই মাহতিম বলে উঠলো, ‘ না মানে ভাইয়ের তো নজর লেগে গেছে তাই বললাম। ‘
সবাই হেঁসে উঠলো।
সাজ্জাদ রূপার পেছনে গিয়ে ওর খোঁপা এক টানে খুলে দিলো।
রূপা রেগে তাকিয়ে বললো,’ এটা কি করলেন আপনি..?!!
সাজ্জাদ রূপার আরও কাছে গিয়ে বললো,’ তোমাকে খোলা চুলেই সুন্দর লাগে।শাড়ির সাথে খোলা চুলেই বেশ মানায়।’
রূপা কিছু বলতে গিয়েও বললো না।
সবাই মিলে বেরিয়ে পরলো গ্রামের উদ্দেশ্য।
সুমাইয়াঃ সোহা ভাবি থাকলে আরও ভালো হতো।
নাদিমঃ আপু দুলাভাই কে নিয়ে সকালেই চলে এসেছে।
আসতে আসতে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলো।
এখন আর গ্রাম আগের মতো ভাঙাচোরা জায়গা নেই সব শহরের মতো পাকা রাস্তা।
সাজ্জাদরা আসতেই রূপার মামার সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো।
রূপা মামা মামি সাজ্জাদকে খুবি পছন্দ করেন।
সবাই কে শরবত দেওয়া হলো।
রূপার তিন মামাই আজ বাড়িতে ছিলেন। তারা যানতেন না রূপারা আজ আসবে। সবার জন্য সারপ্রাইজ ছিলো এটা।
রূপার মামি সাজ্জাদ কি খাবে..? কি পছন্দ করে..? সব জিজ্ঞেস করা শুরু করলেন।
রূপার মামিদের আপ্যায়ন দেখে আরিফ বলে উঠলো, ‘ ভাই মনে তো হচ্ছে আজ আর আমার কোনো পাত্তা নেই এই বাড়িতে। আমি বরং এক কোনায় বসে থাকি।
সাজ্জাদ হেঁসে বললো,’ তুমি পুরাতন হয়ে গেছো..’
মাহতিম মাঝ থেকে বলে উঠলো, ‘ আহ্ আজও শশুর বাড়িই পেলাম না আর মামাশ্বশুর বাড়ির আপ্যায়েন এর আশা করা বিলাসিতা।
মাহতিম এর কথা শুনে আরিফ হেসে বললো,’ ছোটো ভাই আশেপাশে এতো সুন্দর সুন্দর বেয়াইন নিয়ে ঘুরেও শশুর বাড়ির ঠিকানা পাচ্ছো না সো স্যাড।
মাহতিম মুখ ভার করে মাহির দিকে তাকিয়ে বললো,’ অন্য বেডার বউ এর উপর নজর দেই না ভাই। ‘
নাদিম পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই কথা শুনে বলে উঠলো, ‘ ভাই অন্য কারো হওয়ার আগেই নিজের করে নাও। ‘
মাহতিম নাদিমের কথা হেঁসে উড়িয়ে দিলো। নিজের চাচ্চুর ভালো লাগার মানুষ কে কিভাবে নিজের করবে।
আরিয়ান সবাই কে নামিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেছে। ওর অফিসে কাজ পড়ে গেছে।
সোহা রূপা আর সাজ্জাদ কে একটা রুম দেখিয়ে বললো,’ ফ্রেশ হয়ে নিতে। ‘
মাহি আর সুমাইয়া নাহিদার রুমে গেলো।
নাদিম নিয়ে গেলো মাহতিম কে।
রূপা রুমে প্রবেশ করেই হুঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নেয়।
সাজ্জাদ দুই হাতে যত্ন করে কোমর ধরে বাঁচিয়ে নেয় পড়ে যাওয়া থেকে।
রূপা দাঁড়িয়ে সাজ্জাদ কে ধন্যবাদ জানিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।
ওয়াশরুমে ঢুকেই রূপা চোখে মুখে বেশি করে পানি দেয়৷ সাজ্জাদ ওর আশেপাশে থাকলে কেমন যানো একটা অজানা অনুভূতি হয়। সাজ্জাদ ওর কাছে আসলেই বুকের ভেতর কেউ হাতু*ড়ি পি*টানো শুরু হয়। ওর সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়।
সাজ্জাদ বিছানায় বসতেই ওর আম্মুর ফোন আসে।
ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই সুবর্ণা বেগম সাজ্জাদ কে বলে উঠলো, ‘ আহনাফ বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে। ‘
সাজ্জাদ অবাক হয়ে বলে উঠলো, ‘ সত্যি…?!!! ‘
সুবর্ণা বেগম, ‘ হুম তোমরা কাল চলে আসো। ‘
সাজ্জাদঃ আচ্ছা।
রূপা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সাজ্জাদ কে এভাবে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে..?
সাজ্জাদঃ আহনাফ বিয়ে করে বউ নিয়ে বাড়ি এসেছে….
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।