#কি_করিলে_বলো_পাইবো_তোমারে
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
১ সপ্তাহ পর,
আস্থাদের বাসায় আজ মানুষের ছড়াছড়ি।বেশি না তবে যারা আছে তাও অনেক।আর এতো মানুষের কারণ হলো আজ আস্থার জন্মদিন।আস্থার বাবা মিস্টার আকাশ প্রতিবছর বড় করে না হলেও ছোট পরিসরে মেয়ের জন্মদিন পালন করে থাকেন।তিনি তার মেয়ে আস্থাকে খুব ভালোবাসেন।তিনি তার ছেলে থেকেও মেয়ের বেশি একটু বেশিই যত্নশীল।
” আস্থু।”
দৌড়ে রুমে ঢুকে আস্থাকে জরিয়ে ধরে কথা।
” আরে কথু চলে এসেছিস।দেরি করলি কেন?”
” কোথায় দেরি করলাম?তাড়াতাড়িই তো এসেছি।”
” হুম দেখতে পাচ্ছি কত তাড়াতাড়ি এসেছেন আপনি।” ওড়না ঠিক করতে করতে বলে আস্থা।
” হ্যাপি পয়দা দিবস বেপি।” আস্থার গলা জরিয়ে ধরে বলে কথা।
” থাংক ইউ আমার জানু।আরে নাইরা তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন?বস না।”
” শুভ জন্মদিন আস্থা।”
” থাংক ইউ নাইরু।”
” চল চল আস্থু তাড়াতাড়ি কেকটা কেটে নে তো।আমার যে আর তর সইছে না।”
” আচ্ছা চল চল।”
কথা আস্থার হাত ধরে তাকে ড্রইংরুমে নিয়ে আসে আর তার পেছন পেছন নাইরাও আসে।
আস্থা কেক কেটে প্রথমে তার বাবা,মা আর ভাইকে খাওয়ায়।তারপর নাইরা আর কথাকেও খাওয়ালো।কেক কাটা শেষ হলে একজন একজন করে সবাই আস্থাকে উইশ করে যাচ্ছে আর কেউ কেউ গিফটও দিয়েছে।
” শুভ জন্মদিন আস্থা।”
এদিকে,
” তুমি এখন কোথায় নাইরা?”
” কেন?”
” বলোনা।”
” বাইরে আছি আমি।”
” বাইরে কোথায়?”
” আমি আস্থার বাসায় এসেছি।”
” কেন?”
” আজ ওর জন্মদিন তাই।আর আপনি আমাকে এতো প্রশ্ন করছেন কেন?”
” তুমি কি আমার সাথে কথা বলতে বিরক্তবোধ করছো নাইরা?”
” না সেরকম কিছু না।”
” নাইরা তোমার কোন সমস্যা থাকলে তুমি আমাকে বলতে পারো।আমি সবসময় তোমাকে সার্পোট করবো।কিন্তু তাও প্লিজ আমাকে এভাবে ইগনোর করোনা।আমি তোমার ইগনোর সহ্য করতে পারিনা।”
” আমি আপনার সাথে পরে কথা বলছি।আস্থা আমাকে ডাকছে।”
বাসার ভেতরে,
আস্থা মাথা তুলে দেখে তাজ দাঁড়িয়ে আছে।তাজকে দেখে আস্থা চট করে দাঁড়িয়ে যায়।তাজ আস্থার দিকে একটা রেপিং পেপারে মোড়ানো একটা বক্স এগিয়ে দেয়।আস্থাও খুশি মনে সেটা নিয়ে নেয়।আস্থা বক্সটা নিতেই তাজ তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে চলে আসে।
তাজ বেরিয়ে আসার সময় সে নাইরার মুখোমুখি হয়।
” আরে মিস্টার তাজ আপনি এখানে?”
” আমার বাসায় উপরের তলায়।কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন?”
” আরে আপনাকে বলেছিলাম না আস্থা আমার ফ্রেন্ড।আর ফ্রেন্ড যেহেতু আমার এখানে থাকা স্বাভাবিক নয় কি?”
” হুম তাও ঠিক।আচ্ছা আপনি ইনজয় করুন আমি আসছি।”
তাজ দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়।তাজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নাইরা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে দরজা টেলে ভিতরে ঢুকে পড়ে।
সবাই চলে যাওয়ার পর আস্থা গিফটের বক্সগুলো খুলতে বসে।গিফটগুলো কমবেশি আস্থার প্রয়োজনীয় না,এগুলো তার থেকে তার মায়ের বেশি কাজের।সব গিফট বক্স খোলা শেষ আর একটা বাকি আছে।আস্থা খুব যত্ন সহকারে রেপিং পেপারটার খুলে কারণ এটা তাকে তাজ দিয়েছে।রেপিং পেপার খুলে আস্থা একটা সুন্দর বক্স দেখতে পায়।বক্সটা খুলে আস্থা দেখে কয়েকটা বই,একটা গোলাপ,একটা কি-চেইন আর একটা চিরকুট।আস্থা প্রথমে চিরকুটটা নেয়।
” সরি আস্থা।নিশ্চয়ই ভাবছো সরি কেন বলছি?সরি বলার কারণ সেইদিন ছাদে আমার তোমার সাথে এভাবে কথা বলা মোটেও উচিত হয়নি।আসলে আমি একটু বেশিই ওভার রিয়েক্ট করে ফেলেছিলাম।আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে তোমার পারসোনাল বিষয়ে আমার হস্তক্ষেপ না করাই ঠিক।কিন্তু না জেনেই আমি তোমার ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে ফেলেছি।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।”
ব্যস এতটুকুই লিখা ছিলো চিরকুটটাতে।সেইদিনের পর থেকে আস্থা একবারের জন্যও তাজকে দেখতে পায়নি।১ সপ্তাহ পর আজই সে আবারো তাজের দেখা পেয়েছিলো।চিরকুটটা পড়ে আস্থার মন ভালো হওয়ার বদলে উল্টো খারাপ হয়ে যায়।কেন তার খারাপ হয়েছে তা আস্থা নিজেও বুঝে উঠতে পারছেনা।
২ দিন পর,
একটা রেস্টুরেন্টে বিরক্তি নিয়ে বসে আছে নাইরা।বিগত তিরিশ মিনিট যাবত সে এখানে বসে অগ্নির অপেক্ষা করছে কিন্তু অগ্নির আশার নাম নেই।নাইরা অগ্নি ফোন করতেই যাবে তখনই হন্তদন্ত হয়ে নাইরার সামনে এসে বসে অগ্নি।বসেই সে ঢকঢক করে একগ্লাস পানি খেয়ে নেয়।নাইরা বিরক্তিকর মুখ নিয়ে অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছে।
” সরি সরি আসলে রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিলো,তাই দেরি হয়ে গিয়েছে।”
” এই দু’দিন ফোন বন্ধ কেন ছিলো আপনার?”
” ওই আসলে ফোনটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।”
” কিভাবে?” ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করে নাইরা।
” আসলে হাত থেকে পড়ে গিয়েছিলো।এরপর আর অন হচ্ছিলো না বিধায় দোকানে ঠিক করতে দিয়েছিলাম।”
” ও আচ্ছা।”
নাইরা তার কথা বিশ্বাস করেছে দেখে অগ্নি স্বস্তির নিশ্বাস নেয় কারণ সে নাইরাকে মিথ্যা কথা বলছে।অগ্নির হাত থেকে কোন ফোন পড়ে যায়নি সে সেদিন নাইরার সাথে কথা বলার পর রাগে ফোনটা ছুঁড়ে মেরেছিলো।যার কারণে ফোনটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
” আচ্ছা আমাকে কেন ডেকেছো?”
” আব….আসলে আমার আজ কোন কাজ নেই তো তাই ভাবলাম একটু কোথাও থেকে ঘুরে আসি।কিন্তু একা গেলে কি আর ঘুরতে মজা লাগে।কিন্তু যাওয়ার মতো কাউকে পেলাম না বিধায় আপনাকে ডাকা।আপনার কি আমার সাথে যাবেন?নাকি কোন কাজ আছে?”
” না না আমার কোন কাজ নেই।তুমি কোথায় ঘুরতে যাবে বলো আমি তোমাকে সেখানেই নিয়ে যাবো।”
” তাহলে চলুন।”
” চলো।”
নাইরা আর অগ্নি রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে পড়ে,তারপর দুজনে একটা রিক্সায় উঠে বসে।বিকেলের দিকে নাইরা বাসায় ফিরে আসে।নাইরা আজ অগ্নির সাথে বেশ অনেকটা সময় কাটিয়েছে।এতে তো অগ্নি অনেক খুশি কিন্তু নাইরার মুখের ভাব দেখে বোঝা যাচ্ছেনা তার মনে আসলে কি চলছে,সে অগ্নির সাথে সময় কাটাতে পেরে খুশি কিনা।
.
.
ভার্সিটি শেষে কথা নাইরা আর আস্থাকে জোর করে শপিং মলে নিয়ে আসে কারণ তার নাকি কিছু জিনিস কেনা প্রয়োজন।
” কথা তোর যা কেনার তাড়াতাড়ি কিনে নে।আমার তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।” নাইরা বলে।
” আজ তো আমি সন্ধ্যার আগে তোদের ছাড়বোই না।দেখি তুই তাড়াতাড়ি কি করে বাড়ি ফিরতে পারিস।” মজা করে বলে কথা।
” আচ্ছা ঠিক আছে দেখা যাবে দেরি হয় কি নাহয়।এবার যেটার জন্য এসেছিস সেটা তাড়াতাড়ি শেষ কর।” আস্থা বলে।
এরপর কথা একবার এই শপিংমলে যায় আবার কিছুক্ষণ পর ওই শপিং মলে যায়।কিন্তু এখনো পর্যন্ত সে একটা জিনিসও কিনেনি।
” কথা তুই কি আধোও কিছু কিনবি?নাকি শুধু শুধু আমাদের হাঁটাচ্ছিস?” নাইরা বিরক্তি নিয়ে বলে।
” হ্যাঁ তোদের হাঁটাচ্ছি।আমার তো বেশ মজাই লাগছে।”
” তাহলে থাক তুই আমি যাচ্ছি,বাই।” নাইরা বিরক্তি নিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়।
” আরে নাইরা,নাইরা।” আস্থা নাইরাকে থামাতে গেলে কথা তাকে আটকিয়ে দেয়।
” কি হলো?আমাকে ছাড়,নাইরা চলে যাচ্ছে তো।নাইরা….।”
” যেতে দে ওকে।এখানে থাকলে পুরোটা সময় বাসায় যাবো করে করে আমাদের মাথা ফেলতো।”
” তাই বলে ওকে আটকাবো না।”
” না দরকার নেই আটকানোর,যাক চলে যাক।ওর ওইসব বিরক্তিমূলক কথাগুলো আমার শুনে ভালো লাগেনা না।যাক,চল তুই আমার সাথে।”
আস্থা একবার নিচে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথার সাথে হাঁটতে শুরু করে।
” আস্থা।”
আইসক্রিম খেতে খেতে মল ঘুরে দেখছিলো কথা আর আস্থা।কিন্তু আস্থার নাম শুনে তারা দুজন থেমে যায়।কথা পেছন ফিরে তাকায় কিন্তু সে ব্যক্তিটাকে ঠিক মতো চিনতে পারেনা কিন্তু আস্থা ঠিকই চিনতে পেরেছে আর ব্যক্তিটার দিকে তাকিয়ে সে মনে মনে চিন্তা করতে থাকে,
” ইনি আবার এখানে কি করছেন?আবার আমার পিছু করছেন নাতো?”
চলবে……
(আমি আগের পর্বের সবার কমেন্ট পড়েছি।কয়েকজন আমাকে বলছেন গল্পটা শুরু দিকে ভালো লাগলেও,আস্তে আস্তে গল্পটা বোরিং হয়ে যাচ্ছে।আমি রহস্য রাখতে গিয়ে একটু বেশিই পেঁচিয়ে ফেলেছি।তো আপনাদের মতামত দেখে আমারো মনে হয়েছে হয়তো আসলেই আমি রহস্য রাখতে গিয়ে গল্প একটু বেশিই পেঁচিয়ে ফেলেছি,যার কারণে আপনারা যত এগোচ্ছে পড়ার আগ্রহটা হারিয়ে ফেলছেন।আমি গল্পটাতে রহস্য রাখতে চাইনি,নরমাল একটা রহস্যবহীন গল্প লিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমি নিজের অজান্তেই গল্পে রহস্য নিয়ে চলে এসেছি।আমি গল্প যেমন নিজের জন্য লিখি তেমনি আপনাদের জন্যও লিখি।গল্প যদি আপনাদের পছন্দ না হয় তাহলে আমার লেখার কোন সার্থকতা নেই।আপনাদের পছন্দ না হলে,আপনারা পড়তে আগ্রহ না পেলে শুধু শুধু পর্ব বড় না করাই আমার মতে শ্রেয়।তাই এই পর্বে আমি মাঝে অনেকটা টাইম স্কিপ করে লিখেছি।আশা করি তাড়াতাড়িই রহস্য সমাধান করে দেবো।আর গল্পের নায়িকা হচ্ছে আস্থা।আর আগের পর্বে আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।আশা করি এই পর্বেও আপনারা আপনাদের মতামত জানাবেন।তাহলে আমার গল্পের কাহিনি এগিয়ে নিয়ে যেতে সুবিধা হবে।)