#কি_করিলে_বলো_পাইবো_তোমারে
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” আস্থা।”
ভার্সিটি থেকে বের হতেই অপরিচিত কারোর কন্ঠস্বর শুনে আস্থা চমকে যায়।সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে তার থেকে দু-তিন হাত দূরেই আবির দাঁড়িয়ে আছে।আবিরকে দেখে আস্থার ভ্রু-কুচকে যায়।
” এই পাগল আবার এখানে কি করছে?আর আমার খবর কি করে পেলো?” বিরবির করে বলে আস্থা।
আস্থা চিন্তা করতে করতে আবির তার সামনে চলে আসে।
” কেমন আছো?”
” ভালো কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন?” ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করে আস্থা।
” ওই আসলে তাজের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।যাওয়ার সময় তোমাকে দেখলাম।বাসায় যাচ্ছো বুঝি?”
” হুম।”
” তো চলো আমি তোমাকে ড্রপ করে দিচ্ছি।”
” না তার দরকার নেই,আমি হেঁটে চলে যেতে পারবো।”
” আরে হেঁটে যাবে কেন?আমি আমার গাড়ি করে তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি।”
” না থাক ঠিক আছে।এতো এলাহি জিনিস আমার আর সহ্য হয়না।”
” আচ্ছা ঠিক আছে,তোমাকে তো আর আমি জোর করতে পারবোনা।আচ্ছা আমি কি তোমার নম্বরটা পেতে পারি?”
” দুঃখিত আমি কোন কারণ ছাড়া অপরিচিত কাউকে আমার নম্বর দিয় না।”
” তুমি তো আমার সাথে ভালো করে কথাও বলোনি।তাহলে পরিচিত হবো কি করে?”
” না থাক আমার পরিচিত হওয়ার কোন ইচ্ছে নেই।”
” আচ্ছা ঠিক আছে নম্বর দিওনা অন্তত ফেসবুক আইডিটা তো দিতে পারো।”
” আমি ফেসবুক চালায় না।”
আস্থার কথা শুনে আবির হো হো করে হেসে উঠে যেন আস্থা অনেক মজার কোন কথা বলেছে।আবিরের কাজে আস্থার বিরক্তি আরো বেড়ে যায়।
” কি হলো হাসছেন কেন?”
” তো হাসবোনা।এই সময় যদি কেউ বলে সে ফেসবুক ইউজ করেনা তাহলে এর থেকে বড় জোক আর কি হতে পারে।হাহাহা…..”
আস্থা বিরক্ত নিয়ে আবিরের দিয়ে তাকিয়ে আছে।
” আস্থা।”
আস্থা আর আবির পেছন ফিরে তাকায়,তাজ দাঁড়িয়ে আছে।
” কিরে তুই এখনো গেলি না যে?”
” যাচ্ছিলামই কিন্তু আস্থাকে দেখলাম।তাই এলাম ওর খবরাখবর নিতে।জানিস ও কি বলছিলো ও নাকি ফেসবুক ইউজ করেনা।তোর বিশ্বাস হয় কথাটা?হাহাহা….”
আবিরের কথায় তাজেরও মোটেও হাসি পায়নি।আস্থা অসহায় দৃষ্টিতে তাজের দিকে তাকাই।আস্থার তাকানো দেখে তাজ বুঝতে পারে তার মনের কথা।
” আস্থা যাও তুমি বাসায় যাও।দেরি হলে আন্টি টেনশন করবে আর সাবধানে দেখে যেও।হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার মাঝে চলে এসোনা।একটু চেপে হেঁটো।”
তাজের কথা শুনে আস্থা মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় আর তাড়াতাড়ি ওখান থেকে সরে পড়ে।তাজ এবার আবিরের দিকে তাকাই,তাজের তাকানো দেখে আবির একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।
রাতের বেলা,
বসে বসে টিভি দেখছিলো নাইরা,এরই মধ্যে তার ফোন বেজে উঠে।নাইরা ফোন তুলে দেখে নম্বরটা কোনকিছু দিয়ে সেইভ নেই কিন্তু নাইরার নম্বরটা দেখে চিনতে অসুবিধা হয়নি।এটা অগ্নির নম্বর।
” হ্যালো।”
” হ্যালো নাইরা,আমি…”
” আমি জানি আপনি অগ্নি,বলতে হবেনা।এবার বলুন কেন ফোন করেছেন?”
” তোমার পা কেমন আছে এখন?” চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে অগ্নি।
” হুম ঠিক আছে।”
” বেশি ব্যথা করছে নাতো?”
” না ঠিক আছে।”
” কি করছো তুমি?”
” টিভি দেখছি আর কিছু?”
অগ্নি বুঝতে পারে নাইরা তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নয়।
” আচ্ছা ঠিক আছে।রাতে সময় মতো খেয়ে নিও।”
নাইরা আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়।অগ্নি ফোনে দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে থাকে নাইরা তার সাথে সম্পর্কে গিয়েছে,তাকে নিজে থেকে প্রপোজ করতে বলেছে তাহলে কেন সে তার সাথে ঠিকভাবে কথা বলেনা।হাঁটুর মধ্যে মাথা দিয়ে অগ্নি এসবই চিন্তা করতে থাকে।
অন্যদিকে,
নিজের পড়া থেকে কিছু সময়ের জন্য ব্রেক নিয়ে ফোনটা হাতে নেয় আস্থা।ডাটা অন করতেই নোটিফিকেশন আসতে শুরু করে।আস্থা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মেসেঞ্জারে যায়।মেসেজ রিকুয়েষ্টটে গুটি কয়েক মেসেজ সো করছে।কিন্তু আস্থা চোখ আটকে যায় একটা আইডিতে,”আবির আহসান”।
আস্থা তাড়াতাড়ি আইডিটাতে ঢুকে মেসেজ দেখার জন্য।
” কি মিস আস্থা?তুমি নাকি ফেসবুক ইউজ করেনা?তাহলে এটা কি?দেখলে তো ঠিকই তোমাকে খুঁজে বের করে ফেললাম।আমাকে বোকা বানানো এতোটাও সহজ নয়।”
এটাই লেখা ছিলো মেসেজে।আস্থা কোন রিপ্লাই দেয়না,সে চুপচাপ মেসেঞ্জার থেকে বেরিয়ে আসে।
পরেরদিন সকালে,
” মিস্টার তাজ,মিস্টার তাজ?”
তাজ থেমে যায়।সে পেছন ফিরে দেখে নাইরা দৌড়ে এসে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
” আরে আপনি?কেমন আছেন?আপনার পা ঠিক আছে এখন?”
” হুম পা এখন ঠিক আছে।আপনি কেমন আছেন?”
” আমি তো বেশ ভালোই আছি।”
” ও ভালো।আসলে অনেকদিন পর আপনাকে দেখলাম তো তাই ভাবলাম আপনার হালচাল জেনে নিয়।”
” তা তো ঠিক আছে।কিন্তু কাল আপনি ওই বিল্ডিং এ কি করছিলেন?ওনাকে তো স্টুডেন্টদের যাওয়া বারণ।”
” আসলে আমার ফ্রেন্ড,ওইযে যে আমার সাথে ছিলো সে আমাকে জোর করে নিয়ে গিয়েছে।”
” কে?আস্থা?”
” হুম আস্থা।আপনি ওকে চেনেন?”
” হুম চিনি।কিন্তু সে কেন ওখানে গিয়েছে?” একটু কঠোরভাবে জিজ্ঞেস করে তাজ।
” সেটা তো আমি জানিনা।আমি ওকে অনেকবার বারণ করেছিলাম কিন্তু ও তো আমার কথা শুনলোই না।”.
” আচ্ছা ঠিক।আপনি ক্লাসে যান,আপনার ক্লাসের লেট হয়ে যাবে।আমি আসছি,ভালো থাকবেন।”
তাজ চলে যায়,নাইরা একদৃষ্টিতে তাজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
” নাইরা।”
হুট করে নিজের নাম শুনে চমকে যায় নাইরা।সে পেছন ফিরে দেখে কথা দাঁড়িয়ে আছে।কথাকে দেখে নাইরা একটা স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।সে চলে যেতে নিলে কথা তাকে থামিয়ে দেয়।
” তাজ ভাইয়ার সাথে তোর কি?”
” কি মানে?”
” মানে বলতে চাইছি ওনারার সাথে তোর এতো কিসের কথা?আমি আরো বেশ কয়েকবার দেখেছি তোকে ওনার সাথে কথা বলতে।ব্যপারটা কি বলতো?”
” কিসের ব্যপার?কোন ব্যপার নেই।”
” তুই কি ওনাকে পছন্দ করিস?”
কথার কথা শুনে নাইরা চমকে যায়।
” তুই এসব কি বলছিস কথা?এরকম কিছু না।”
” হুম,এরকম না হলেই ভালো।তুই কিন্তু ভালো করেই জানিস আস্থা তাজ ভাইয়াকে পছন্দ করে,তাই ভুলেও এসব কিন্তু মাথায় আনিস না।আমি সত্যি বলছি তোর জন্য যদি আস্থা কষ্ট পায় আমি কোনদিন তোকে ক্ষমা করবোনা।”
কথা ধুপধাপ পা ফেলে নিজের ক্লাসে চলে যায়।নাইরা এখনো ওখানে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছে।
বিকেলবেলা,
মন মরা হয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে আস্থা।এখনো পর্যন্ত সে একবারের জন্যও তাজকে দেখতে পাই।আস্থা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে তখনই সে নিজের পেছন থেকে তাজের কন্ঠ শুনতে পায়।আস্থা হাসিমুখে তাজের দিকে তাকাই কিন্তু তাজের কথা শুনে তার মুখের হাসি মিলিয়ে যায়।
” তুমি কাল কনস্ট্রাকশান সাইডে কি করতে গিয়েছিলে?”
আস্থা কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা।
” কি হলো বলো?” একটু গম্ভীরভাবে তাজ।
” ওই আসলে….”
” আমি জানিনা তুমি কেন ওখানে গিয়েছো কিন্তু তুমি জানো জায়গাটা সেভ নয়।ওখানে গেলে যেকোন সময় যেকোন বিপদ হয়ে যেতে পারে।তাও কেন তুমি ওখানে গিয়েছিলে?তুমি কি ছোট বাচ্চা যে বুঝুনি?আর তুমি গিয়েছো গিয়েছো ঠিক আছে,তুমি তোমার ফ্রেন্ডকে কেন নিয়ে গিয়েছো?তোমার জন্য যদি তার কোন ক্ষতি হতো তাহলে তার দায়ভার কে নিতো?কাল তো মাত্র তার পায়ে মোচ এসেছে কিন্তু সেটা না হয়ে বড় কিছু হলে তখন কি হতো?”
তাজের কথা শুনে আস্থাকে একটা অপরাধবোধ ঘিরে ধরে।সে চিন্তা করছে আসলেই যদি তার জন্য যদি নাইরার কোন ক্ষতি হতো তাহলে সে কোনদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারতোনা।তার মোটেও ওখানে যাওয়া উচিত হয়নি আর নাইরাকে নিয়ে যাওয়া তো মোটেও না।এসব ভাবতে ভাবতে নাইরার চোখে হালকা পানি জমে যায়।
” শোন আস্থা,আমি যেন তোমাকে আর কোনদিন ওখানে না দেখি।আর হ্যাঁ কোন কাজের জন্য যথাসম্ভব নিজে একা যাবে,অন্যকে সাথে নিয়ে দলভারী না করে একা চলার চেষ্টা করো।”
কথাগুলো বলে তাজ আর একমুহূর্ত ছাদে না দাঁড়িয়ে নিচে নেমে চলে আসে।তাজের কথা শুনে আস্থা খুব গিল্টি ফিল করে।
চলবে…….