মনের মধ্যে একটা ৫ তলা বিল্ডিং এর সমান পাথর চেপে রেখে ক্রাশের বিয়েতে এসেছিলো আস্থা।তবে মনের মধ্যে পাথর চাপা দিলেও একদিকে অনেকটা এক্সাইটেডও ছিলো সে।
” আ….ক্রাশের বিয়ে।ভাবতেই কেমন কেমন যেন লাগছে।আ….ও ক্রাশ তুমি কেন আমার হলে না?সে যাইহোক আজ তো আমি ক্রাশের বিয়েতে জমিয়ে আনন্দ করবো।”
কিন্তু আস্থার ভাবনা চিন্তা সব ভাবনাতেই রয়ে গেলো।ভেবেছিলো ক্রাশের বিয়েতে এসে খুব আনন্দ করবে কিন্তু তা আর হলোনা।কারণ বিয়েটাই হচ্ছেনা।কনে নাকি কোন কারণে বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে।কিন্তু কি কারণে ভেঙেছে তা আস্থার জানা নেই।তবে ক্রাশের বিয়ে ভেঙে গিয়েছে শুনে আস্থা আস্তে আস্তে সেখান থেকে অনেক দূরে চলে যায়।কারণ বলাতো যায় না কবে আবার তার বাবা-মায়ের মনে তার ক্রাশের জন্য মায়া হবে আর তাকেই জোর করে বিয়ের আসরে বসিয়ে দেবে।
কমিউনিটি সেন্টারের বাইরে চলে এসেছে আস্থা।তবে সে বাইরে দাঁড়িয়ে ভেতরে উঁকিঝুঁকি মারছে।বরপক্ষ আর কনেপক্ষ কথা বলছে যাকে বলে কাটাকাটি।
” হায়….বেচারা ক্রাশ।দুঃখ,দুঃখ বেচারা নিশ্চয়ই অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলো কিন্তু বেচারা তার স্বপ্নে একবোতল স্প্রাইট ঢেলে দিলো তার হতে হতে না হওয়া বউ।তবে একদিকে ভালোই হলো ক্রাশটাকে আরো কয়েকদিন না কয়েকবছর সিঙ্গেল দেখতে পারবো।যাই একটা আইসক্রিম নিয়ে আসি।”
আস্থা ফুরফুরে মনে কমিউনিটি সেন্টার থেকে নিচে নেমে আসে আর একটা কাপ আইসক্রিম কিনে খেতে খেতে উপরে উঠতে থাকে।কিন্তু চারটা সিঁড়ি ওটার উপর আস্থা থেমে যায়।ভ্রু-কুচকে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে আস্থা।কারণ তার মা আর তার ক্রাশের মা দাঁড়িয়ে কথা বলছে।কথার মাঝে মাঝে আস্থার ক্রাশের মা টিস্যু দিয়ে নিজের চোখ মুছছেন।
” কি হলো?এনারা দুজন একসঙ্গে কি করছেন?আবার এটা নয়তো যে এনারা দুজন মিলে আমাকে ফাঁসতে চলেছে?না বাবা না এখন উপরে যাওয়া মোটেও সেফ না তার থেকে বরং আমি নিচের কমিউনিটি সেন্টার থেকে ঘুরে আসি।এই বিয়ে তো দেখতে পারলাম না যাই নিচের বিয়েটা দেখে আসি।”
উল্টো পায়ে আস্থা নিচে চলে আসে।নিচের কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকে আস্থা এদিক ওদিক ঘুরতে থাকে।আস্থা জানেও না এটা কার বিয়ে।আইসক্রিম খেতে খেতে আস্থা বর বউয়ের কাছে এসে দাঁড়ায়।তখন বর বউ ছবি তুলছিলো।
” আরে ধুর,এই বিয়েটাও দেখতে পারলাম না।ধুর ছাতার মাথা।”
এদিক ওদিক হাঁটছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে আস্থা।তখন তার ফোন বেজে উঠে।ফোন বের করে আস্থা দেখে তার মা ফোন দিয়ে।
” মা ফোন দিচ্ছে কেন?এরা কি আবার আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললো নাকি?না এ হতে পারে না।আচ্ছা আগে ফোনটা তো ধরতে হবে না হলে বুঝবো কিভাবে কেন ফোন করেছে?হ্যাঁ মা বলো।”
” কোথায় তুই?”
” কেন?” ভয়ে ভয়ে বলে আস্থা।
” বাসায় যাবি না নাকি?এখানে তো থেকে আর কাজ নেই।”
” আচ্ছা তোমরা গেটের কাছে এসো আমি আসছি।”
ফোন কেটে দিয়ে আইসক্রিমটা তাড়াতাড়ি শেষ করে আস্থা।কাপটা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে দ্রুত পায়ে গেটের কাছে আসে সে।
” কোথায় ছিলিস তুই?” আস্থার মা জিজ্ঞেস করে।
” ছিলাম কোথাও।বাবা কোথায়?যাবেনা আমাদের সাথে?”
” তোর বাবা ট্যাক্সি আনতে গিয়েছে।”
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপছে আস্থা তবে তার বেশিক্ষণ দাঁড়াতে হয়নি।কিছুক্ষণের মধ্যেই তার বাবা ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসে।ট্যাক্সি আসলে আস্থা আর তার পরিবার তাতে উঠে বসে।
আস্থা খন্দকার,বাবা-মায়ের বড় মেয়ে।আস্থার একটা ছোট ভাই আছে নাম অনিক খন্দকার।বর্তমানে একটা সরকারী ভার্সিটিতে ফ্যাশেন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করছে আস্থা।
ট্যাক্সি আস্থাদের বিল্ডিং এর সামনে এসে থামে।পুরো বিল্ডিংটা ছোট ছোট লাইট দিয়ে সাজানো কিন্তু যে কারণে সাজানো হয়েছে তা তো আর হলোনা।এই বিল্ডিং এর তিন তলায় থাকে আস্থা আর তার পরিবার আর চারতলায় থাকে আস্থার ক্রাশ আর তার পরিবার।
জামা কাপড় সব খুলে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে আস্থা।বেরিয়ে এসে আস্থা টিভি দেখতে বসে পড়ে।
” কিরে এই সময়ে টিভি দেখতে বসলি যে?যা ঘুমাতে যা।অনেক রাত হলো তো।”
” আরেকটু পরে যাবো।আচ্ছা তুমি তখন লতা আন্টির সাথে কি কথা বলছিলে?”
” আরে ওই তাজকে নিয়ে কথা বলছিলাম।ভাবী খুব ভেঙে পড়েছেন।খুব খারাপ লাগছে তাদের জন্য।আর মেয়েটাও বলিহারি বিয়ে করবে না ঠিক আছে আগে বলবেনা।বিয়ের আসরে এসে কেউ এভাবে বিয়ে ভেঙে দেয় নাকি?”
” আ….মা এভাবে বলোনা।নিশ্চয়ই মেয়েটার কোন সমস্যা ছিল তাই ভেঙে দিয়েছে।আমরা তো আর পুরো ঘটনাটা জানিনা,তাই তুমি আর কিছু বলোনা।”
” আচ্ছা বাদ দে ওসব।কিছু খাবি আর?ওখানে তো বেশি খেলিও না।”
” না আর কিছু খাবোনা।তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।আমি কিছুক্ষণ পর শুয়ে পড়বো।”
পরেরদিন সকালে,
ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত ব্রাশ করছে আস্থা।এই সময়ে ছাদে তেমন একটা কেউ আসেনা।নিচে রাস্তা দেখতে দেখতেই দাঁত ব্রাশ করছিলো আস্থা,হুট করে কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে সে পেছন ফিরে তাকায় কিন্তু পেছন ফিরে যাকে দেখে তাকে দেখে সে ভুত দেখার মতো চমকে যায়।কারণ তার ক্রাশ তাজ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আস্থা পিটপিট চোখে তাজের দিকে তাকিয়ে থাকে।তাজের চোখগুলো উসকোখুসকো,মুখটা কেমন যেন চুপসে গেছে।হঠাৎ করেই আস্থার মনে পড়ে আরে কালকেই তো তার তাজের বিয়ে ভেঙে গিয়েছে।কালকের কথা মনে পড়লে আস্থা মনে মনে আফসোস করে।
” আহারে বেচারা।নিশ্চয়ই কাল সারারাত ঘুমাতে পারেনি।আহা…বেচারা নিশ্চয়ই ভেবেছিলো এবার বুঝি তার সিঙ্গেল জীবনের অবসান ঘটবে।ভেবেছিলো হয়তো রাতে বউয়ের সাথে রোমেন্টিক রোমেন্টিক কথা বলে কিন্তু তার ফুটা কপাল তা আর হলোনা।আহারে বেচারা।” তাজের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো মনে মনে আওড়াচ্ছে আস্থা।আস্থার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে তাজ বেশ বিরক্ত হয়।সে তাড়াতাড়ি গায়ে পানি দিয়ে নিচে নেমে যায়।
” যা বাবা এর আবার কি হলো?ধুর যাই হবে হোক তাতে আমার কি?আমি বাবা আমার কাজে যায়।আমার আবার ভার্সিটিতে যেতে দেরি হয়ে যাবে।”
ব্রাশ নাড়তে নাড়তে নিচে নেমে আসে আস্থা।তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করে খাবার খেতে বসে পড়ে সে।
” আপু আমাকে যাওয়ার সময় স্কুলে দিয়ে আসবি?” আস্থার ছোট ভাই অনিক বলে।
” কেন?আমি কেন যাবো?বাবা দিয়ে আসবে।” রুটি চিবোতে চিবোতে বলে আস্থা।
” বাবা তো নেই।আজকে অনেক আগেই বেরিয়ে গিয়েছে।”
” আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে যাবো।”
” তোর যাওয়ার দরকার নেই আস্থা।আমিই ওকে নিয়ে যাবো।” আস্থার মা বলে।
” আরে মা তুমি কষ্ট করে আবার বের হবে কেন।আমি তো ওই রাস্তা দিয়েই যাবো,সমস্যা নেই আমিই অনিকে নিয়ে যাবো।তোমার আর এতো কষ্ট করতে হবেনা।আর এই যে নবাবজাদা এভাবে হা করে কথা গিলছিস কেন?তাড়াতাড়ি খা।আমার সাথে যেতে হলে তাড়াতাড়ি খেয়ে শেষ কর।আমি তোর জন্য অপেক্ষা করতে পারবোনা।”
বোনের হুমকিস্বরূপ কথা শুনে অনিক তাড়াতাড়ি খাবার খেতে থাকে।
একহাতে অনিককে ধরে বিল্ডিং এর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে আস্থা।হুট করে গেট খোলার শব্দ শুনে আস্থা পেছন ফিরে তাকাই।একটা সিলভার রঙের গাড়ি ভেতর থেকে বের হয়ে আসে।গাড়িটা দেখে অজান্তেই আস্থার মুখে হালকা হাসি ফুটে উঠে কারণ গাড়িটা তাজের।গাড়িটা বিল্ডিং থেকে বের হয়ে আস্থার সামনে এসে দাঁড়ায়।গাড়িটা নিজের সামনে দাঁড়াতে দেখে আস্থার ভ্রু-কুচকে যায়।
” এ আবার এখানে গাড়ি থামালো কেন?”
গাড়ির গ্লাস নামিয়ে আস্থাদের দিকে তাকাই তাজ।
” কি গো অনিক বাবু কোথায় যাচ্ছো?”
” স্কুলে যাচ্ছি তাজ ভাইয়া।তুমি কোথায় যাচ্ছো?”
” আমি আমার অফিসে যাচ্ছি অনিক বাবু।আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমার দেরি করবোনা।যাও স্কুলে যাও আর মন দিয়ে পড়াশোনা করো।সাবধানে যেও।”
” তুমিও সাবধানে যেও তাজ ভাইয়া।টাটা।”
অনিক থেকে বিধায় নিয়ে তাজ চলে যায়।এদিকে এদের দুজনের কথা বলা দেখে মনে মনে আস্থা লুচির মতো ফুলছে।
” হু….শয়তান ক্রাশ।আমার ভাইয়ের সাথে কথা বললো ঠিকই কিন্তু আমার সাথে কথা তো দূরে থাক ফিরেও তাকাইনি।আমাকে কি ওই তাজের চোখের পড়েনি?শয়তান বেটা।একদম ঠিক হয়েছে বেটার বিয়ে ভেঙে গিয়েছে।সারাজীবন সিঙ্গেল থাকুক,বেটা খবিস।”
তাজকে আচ্ছা মতো বকা দিতে দিতে একটা রিকশা পেয়ে যায় আস্থা।তারা দুজন তাড়াতাড়ি রিকশায় উঠে বসে,রিকশা আস্থা আর অনিকের গন্তব্যের উদ্দেশ্য চলতে শুরু করে।
চলবে……
#কি_করিলে_বলো_পাইবো_তোমারে
#পর্বঃ০১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
(স্কুল বন্ধ আছে তাই নতুন গল্প শুরু করে দিলাম।)