#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৭
.
জনমানবহীন শূন্য ছাদ দেখে গা ছমছম করে উঠল। ফোনে সময় দেখে নিল। রাত বাজে প্রায় এগারোটার কাছাকাছি। আশেপাশের বিল্ডিংগুলোতে আলো জ্বলছে। তার থেকেই হালকা আলো আসছে ছাদে। তবুও ভীষণ অন্ধকার। নিকোটিনের গন্ধ এসে নাকে লাগতেই বুঝতে পারল কারও উপস্থিতি। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল ছাদের পেছন দিকে। উপস্থিত মানুষটাকে দেখা না গেলেও জ্বলন্ত সিগারেটটা ঠিকই দেখা যাচ্ছে। তবে মানুষটাকে চিনে নিতে ভুল হলো না অর্ঘমার। নিঃশব্দে এগিয়ে গিয়ে পাশে দাঁড়াল।
অভ্র এসেছে ভেবে পাশে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে গেল নীরদের। অন্ধকারে অবয়ব দেখে ছোট কেউ মনে হচ্ছে। ফোনের স্ক্রিন অন করে পাশে ধরতেই আবছা আলোয় অর্ঘমাকে দেখতে পেল। সাথে সাথেই হাত থেকে সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলল বাইরে। বিস্ময় নিয়ে মুখে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“তুমি এত রাতে এখানে কী করছ?”
-“আপনি কী করছেন?”
-“দেখেই তো ফেলেছ কী করছিলাম।”
-“আমার না সিগারেট খাওয়ার খুব শখ। আমাকে একটা দিবেন? ট্রাই করতাম আরকি!”
নাকমুখ কুঁচকে নীরদ বলল,
-“মাথা ঠিক আছে তোমার? কী বলছ এসব?”
-“ঠিকই বলেছি।”
-“বাসায় গিয়ে মাথায় পানি ঢালো। মনে তো হচ্ছে না সজ্ঞানে আছ।”
-“আমি সজ্ঞানেই আছি।”
বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ জাতীয় শব্দ করল নীরদ। বলল,
-“অভ্র ভাইয়ের আসার কথা ছিল। সে কই?”
-“সে ঘুমায়। তাই তো আমি এসেছি আপনার একাকিত্ব সময়ের সঙ্গী হতে।”
-“ভাইয়া এই সময় ঘুমায়? আমাকে কি বলদ পেয়েছ? রাত দেড়টা বা দুটোর আগে ভাইয়া ঘুমায় না। আর আমি ভাইয়াকে ম্যাসেজ দিয়েছিলাম। ভাইয়া রিপ্লাই করে বলেছে আসছে। তাহলে হঠাৎ ঘুমিয়ে গেল কীভাবে?”
-“কারণ আমি ভাইয়াকে ঘুমাতে বলেছি। আর বলেছি আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই। যদিও ভাইয়া এত রাতে রাজি হচ্ছিল না। কিন্তু আমি রাজি করিয়েছি।”
-“হয়েছে দেখা করা? এবার যাও।”
-“যাও মানে কী? মাত্রই তো এলাম।”
-“অর্ঘ একটু বুঝার চেষ্টা করো। এত রাতে আমার সাথে তোমাকে কেউ ছাদে দেখে ফেললে বিষয়টা খারাপ ভাবে নিবে।”
-“এতক্ষণে তাহলে লাইনে এসেছেন। আজ ওমন মুখ ফুলিয়ে রেখেছিলেন কেন?”
-“কিছু না। তুমি যাও এখন।”
-“যাব তবে আগে বলুন।”
নীরদ বারবার আশেপাশে তাকিয়ে আবার ছাদের দরজার দিকে তাকাচ্ছে। যদি কেউ এসে পড়ে আর তাদের দেখে খারাপ ভাবে, এই ভয় পাচ্ছে সে। কিন্তু অর্ঘমার সেদিকে ধ্যানই নেই। সে তো নিজের মতো জেরা করতে ব্যস্ত।
-“এতদিন কথা বলিনি বলে রাগ করেছেন?”
অর্ঘমার এহেন প্রশ্নে নীরদের সকল দুশ্চিন্তা গায়েব হয়ে গেল। মুহূর্তেই সে অভিমানে জর্জরিত নীরদ হয়ে গেল। গাল ফুলিয়ে আস্তে করে বলল,
-“একটু একটু।”
হাসি দীর্ঘ হলো অর্ঘমার।
-“আজকে আপনার জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিব বলে এই ক’দিন একদম চুপ ছিলাম। আসলে আমি কথা বেশিক্ষণ চেপে রাখতে পারি না। মানে যাকে সারপ্রাইজ দিব তার সাথে কথা বলতে বলতে দেখা যায় একটা সময় আমি তাকে সারপ্রাইজের ব্যাপারটাও জানিয়ে দিয়েছি। তাই চুপ ছিলাম যাতে আপনাকে কিছু বলে না ফেলি।”
নীরদ অবাক হলো। সে ভেবেছিল অর্ঘমা হয়তো তার কথা বিশ্বাস করেনি। সেদিনের মেয়েটা যে তার বোনের ননদ ছিল এই কথা হয়তো অর্ঘমা মিথ্যে ভেবে নিয়েছে। আর সেজন্যই এতদিন তার সাথে কথা বলেনি। তাই তো তার অভিমান হয়েছিল। কিন্তু এখন অর্ঘমার কথা শুনে তার অভিমান কর্পূরের মতো উবে গেছে। অর্ঘমা একগাল হেসে নীরদের বাম হাত ধরে একটা ঘড়ি পরিয়ে দিল। অন্ধকারে কিছু না দেখলেও নীরদ বুঝল তাকে ঘড়ি পরানো হচ্ছে। সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“এটা কেন?”
-“আপনার বার্থডে গিফট।”
ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে ঘড়িটা দেখে জিজ্ঞেস করল,
-“তুমি নিজে পছন্দ করে কিনেছ?”
-“হ্যাঁ। পছন্দ হয়নি?”
যদিও সে এই ধরনের ঘড়ি পরে না। কিন্তু অর্ঘমা নিজে পছন্দ করে কিনেছে শুনে খুশি হয়ে বলল,
-“খুব সুন্দর হয়েছে। থ্যাংক ইউ।”
-“ইয়োর মোস্ট ওয়েলকাম।”
-“আচ্ছা এবার যাও।”
-“আপনি আমাকে তাড়ানোর জন্য পাগল হচ্ছেন কেন?”
-“তুমি বুঝতে পারছ না। সবার মনমানসিকতা তো এক না। কেউ যদি এত রাতে তোমাকে আমার সাথে একা দেখে ফেলে তাহলে বাজে মন্তব্য করতে দু’বার ভাববে না। না জেনেশুনেই মন্তব্য করা শুরু করে দিবে। যা আমি চাইছি না। তাছাড়া কালকে সকালে তো দেখা হচ্ছেই।”
-“ঠিক আছে, যাচ্ছি। গুড নাইট।”
-“গুড নাইট।”
অর্ঘমা হেসে চলে যাচ্ছে। ছাদের দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় নীরদ তাকে পেছন থেকে ডাকল।
-“অর্ঘ!”
পেছন ফিরে তাকাল অর্ঘমা। যদিও অন্ধকারে আবছা অবয়ব ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না। তার ওপর আকাশ আজ কালো মেঘে ঢাকা। কিছু একটা বলতে চাইছিল নীরদ। কিছুক্ষণ চুপ থেকেও যখন কথাটা বলতে পারল না তখন কথা ঘুরিয়ে বলল,
-“গুড নাইট।”
অর্ঘমা মৃদু হেসে বলল,
-“আমার মনে হলো আপনি অন্য কিছু বলতে চাইছিলেন। থাক, ব্যাপার না। যখন বলতে মন চাইবে বলবেন। অপেক্ষায় থাকব। গুড নাইট।”
হাসল নীরদ। অর্ঘমার ঈঙ্গিত সে বুঝতে পেরেছে। হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে সেটাকে ছুঁয়ে দেখল। পর পর চুমু খেল।
___
সময় কীভাবে যেন চোখের পলকে চলে যায়। দিন পেরিয়ে মাস চলে যায়। দেখতে দেখতে অর্ঘমা আর নিধির এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। পরীক্ষার প্রতিটা দিন নীরদ গিয়েছিল তাদের সাথে। অভ্র প্রতিদিন যেতে পারেনি। তবে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কয়েকদিন গিয়েছিল।
মায়ের সাথে অর্ঘমার সম্পর্কটা নেই বললেই চলে। নিধিকে নিয়ে তর্ক করার ঘটনার পর থেকেই মিনা বেগম মুহূর্তের মধ্যেই কীভাবে যেন বদলে গেলেন। অভ্রর প্রতি যত্নশীল হলেও অর্ঘমার চিন্তা করা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। অর্ঘমার প্রচুর খারাপ লাগে। মাঝে মাঝে কান্নাও করে সে। মায়ের সাথে বহুবার কথা বলতে চেয়েছে। কিন্তু মিনা বেগম মুখ ফিরিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়েছেন। একই বাসায় থেকেও অর্ঘমা আর নিধিকে তিনি দেখেনই না। ভাবটা এমন যেন তারা অদৃশ্য কোনো জীব।
বর্তমানে বাসার কোনো কাজই মিনা বেগম করেন না। নিধি আসার পর টুকটাক যা করতেন তাও করা বাদ দিয়ে দিয়েছেন অর্ঘমার উপর রাগ করে। ফলে অভ্র তার বাবার সাথে পরামর্শ করে বাসায় কাজের লোক রেখে দিয়েছে। সব কাজ কাজের লোকই করে দেয়। সব কাজ বলতে শুধু রান্নাবান্না করা আর ঘর মোছা। জামাকাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াশিং মেশিন আছে। আর ঘর ঝাড়ু এক বেলা অর্ঘমা দেয় তো অন্য বেলা নিধি দেয়। এভাবেই চলছে বাসার কাজ।
অর্ঘমার এসএসসির পরের সময়টা নীরদের সাথে ঘুরাঘুরি করে, বই পড়ে, নিধির কাছ থেকে রান্না শিখে, ইউটিউব দেখে কিছু নতুন নতুন মেকাপ টিউটোরিয়াল ট্রাই করে, মুভি বা ড্রামা দেখেই কেটেছে। নিধি বেশিরভাগ সময়ই একাডেমিক বই পড়ে কাটিয়েছে। নীরদকে বলে ইন্টারের কিছু বই সংগ্রহ করেছে। আগেভাগেই সেগুলো দেখে মোটামুটি যা বুঝতে পারছে তাই পড়ে এগিয়ে রাখছে। তার সামনের যাত্রাটা কঠিন। না জানে কতদিন আর বান্ধবীর পরিবারের ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকবে? নিধি এই বাসার সকলের অগোচরে তার বাবার বাসায় গিয়েছিল। তার বাবা আর সৎ মা ছাড়া পেয়েছে জে*ল থেকে। বাসায় যেতেই বাবা আর সৎ মা তাকে বি*শ্রী ভাষায় গা-লি-গা-লা-জ করেছেন। দুটো চ-ড়ও মে*রে*ছে*ন। বাবা তাকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি ত্যা/জ্য কন্যা করেছেন নিধিকে। অর্থাৎ সারাজীবনের মতো তার পরিবারের সাথে তার যোগাযোগ শেষ। বাসায় ফিরে এসে তার সে কি কান্না! অতঃপর নিজের মৃত মায়ের কথা ভেবে, তাকে নিয়ে তার মায়ের সকল স্বপ্নের কথা ভেবে কান্না বন্ধ করেছিল। ধ্যান-জ্ঞান সব লাগিয়ে পড়াশোনা করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে অনেক বড় কিছু হয়ে মায়ের শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করবে নিধি।
রেজাল্ট নিয়ে অর্ঘমার চিন্তার শেষ নেই। তার পরীক্ষা যে খারাপ হয়েছে ব্যাপারটা এমন নয়। তবুও কেন যেন চিন্তায় তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে বারবার। নিধিরও মোটামুটি চিন্তা হচ্ছে। কিন্তু অর্ঘমার মতো এত বেশি নয়। সে নিজের প্রতি মোটামুটি আত্মবিশ্বাসী। তার পরীক্ষা যথেষ্ট ভালো হয়েছে। রেজাল্ট দেওয়ার পর দেখা গেল ঘটনা ঘটল উলটো। যে বেশি চিন্তা করছিল সেই অর্ঘমা এ প্লাস পেয়েছে। কিন্তু নিধি নিজের রেজাল্ট পেয়ে খুশি হতে পারেনি। তার জিপিএ এসেছে ৪.৯৮। একটুর জন্য এ প্লাস মিস গেছে। চোখ দুটো টলমলে হয়ে উঠল মুহূর্তেই। গাল বেয়ে কিছু তরল গড়িয়েও পড়ল। তবে নিমিষেই নিজেকে সামলে নিল। অভ্র আর অর্ঘমা তাকে এখানে না নিয়ে এলে তো সে পরীক্ষাটাই দিতে পারত না। আর নীরদ, অর্ঘমা তাকে পড়ায় সাহায্য না করলে এই রেজাল্টও তার নসিবে থাকত না। অতএব যতটুকু পেয়েছে ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। বেশি লোভ করা ভালো নয়। কথায়ই আছে অতি লো*ভে তাঁতি নষ্ট। আর নিধি কোনো লো*ভে পড়তে চায় না। কিন্তু তবুও কেন যেন অর্ঘমাকে দেখে ভেতরে ভেতরে তার কষ্ট হচ্ছে।
নিজাম সাহেব আর অভ্র তাদের পাড়া-প্রতিবেশী, সকল আত্মীয়স্বজন ও নিজেদের কর্মস্থলে মিষ্টি বিতরণ করে গর্বের সহিত অর্ঘমার রেজাল্টের কথা বলে বেড়াচ্ছেন। বাসায় অর্ঘমার জন্য উপহারসামগ্রী দিয়ে ভরে গেছে। কাছের আত্মীয়স্বজনরা অর্ঘমার রেজাল্ট শুনে খুশি হয়ে এসব পাঠিয়েছে। নিজাম সাহেব মেয়েকে উপহার হিসেবে দিলেন স্বর্ণের চেইন। অভ্র তার বোনকে দিল নতুন ফোন। আগেরটা বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। নীরদের বোন নুসরাত অর্ঘমাকে খুব সুন্দর দেখে একটা ডায়েরি আর কলম উপহার দিয়েছে। এসব দেখে আর ঘর ছেড়ে বের হলো না নিধি। বর্তমানে অর্ঘমা সবার চোখের মণি। তাকে সবাই কত আদরযত্ন করছে, কত ভালোবাসা দিচ্ছে। এসব দেখে নিধির ভেতরে ভেতরে খারাপ লাগলেও চেহারায় খারাপ লাগাটা প্রকাশ পেতে দিচ্ছে না। এক মুহূর্তের জন্য নিধির হি-ং-সে হলো এই ভেবে, অর্ঘমার জায়গায় তো সেও থাকতে পারত। তারও এমন হাসিখুশি, সাপোর্টিভ একটা পরিবার হতে পারত। সে-ও সবার আদরযত্ন, ভালোবাসা পেতে পারত। পারত না? অবশ্যই পারত। কিন্তু তার কপালে এসবের কিছুই নেই। এত খারাপ কেন তার ভাগ্যটা?
___
বিকেলে নীরদ এসে অর্ঘমাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলল,
-“তোমাকে উপহার হিসেবে কী দিব বুঝতে পারছিলাম না। আসলে আমি এসবে খুব কাঁচা। তাই ভাবলাম উপহার হিসেবে আগামীকাল সারাটা দিন তোমার নামে করে দেই। কাল তুমি যা চাইবে তাই হবে।”
অর্ঘমা খুশি হয়ে চোখ বড় বড় করে বলল,
-“সত্যি?”
-“তিন সত্যি।”
অর্ঘমাকে আর পায় কে! খুশিতে নাচতে নাচতে নিজের রুমে চলে গেছে। আজ যেন অর্ঘমার খুশির অন্ত নেই। অভ্র আর নীরদ হেসে দিল অর্ঘমার অবস্থা দেখে।
-“মেয়েটা এমনিতেই একটা পাগল। মাথার যে ক’টা তাড় ঠিক ছিল আজ বোধহয় সেগুলোও ছিঁড়ে গেল।”
অভ্রর কথায় শব্দ করে হেসে ফেলল নীরদ। অভ্র ভুল বলেনি। সে-ও মনে মনে এটাই ভাবছিল।
পরের দিনটা অর্ঘমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগল। এত আনন্দ সে আগে কখনো করেনি। অভ্র, নীরদ, নুসরাত এবং তার হাসবেন্ড আর অর্ঘমা একসাথে ঘুরাঘুরি করেছে। হাজার চেষ্টা করেও নিধিকে সাথে নিয়ে আসতে পারেনি অর্ঘমা। সবাই কত করে বলল তাকে সাথে আসতে। কিন্তু নিধি নাছোড়বান্দা। সে কোনোভাবেই যাবে না। বাধ্য হয়ে নিধিকে ছাড়াই বের হতে হলো। আজ অর্ঘমার সকল আবদার পূরণ করা হয়েছে। সে যা চেয়েছে তাই হয়েছে। সারাদিন আড্ডামাস্তি, ঘুরাঘুরি ও খাওয়া-দাওয়া করে রাতে বাসায় ফিরল তারা।
অর্ঘমা ফ্রেস হয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই টেবিলের ওপর একটা বিশাল বড় ঝুড়ি দেখতে পেল। ঝুড়ির সামনের দিকে বিভিন্ন রঙের ফিতা দিয়ে ডিজাইন করা। ঝুড়ি ভরতি তার পছন্দের বিভিন্ন রকমের চকলেট, চিপস, বিস্কিট, কোল্ড ড্রিংকস এছাড়াও আরো বিভিন্ন রকমের স্ন্যাকস রয়েছে। পাশে একটা মাঝারি সাইজের কার্টন রাখা। কার্টনে কি আছে সেই সম্পর্কে ধারণা নেই। সোফায় বসে আছে অভ্র আর নীরদ। অর্ঘমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“এগুলো আবার কে পাঠাল?”
-“সবাই কত কত উপহার দিল তোমাকে। আমি তো কিছু দেইনি। তাই এটা তোমার জন্য আমার তরফ থেকে।”
-“ওমা! আজকে না কত কিছু কিনলাম, ঘুরলাম, খাওয়া-দাওয়া করলাম। সবই তো আপনি দিলেন।”
-“না। আমি, অভ্র ভাইয়া আর দুলাভাই তিনজনে মিলে শেয়ার করেছি। আমার একার তরফ থেকে হলো না ওটা। তাই এটা আমার একার তরফ থেকে।”
-“থ্যাংক ইউ।”
-“ফ্রিজে আইসক্রিম রয়েছে। ওগুলো এখানে রাখলে গলে যেত। তাই আলাদা করে নিয়ে এসেছি।”
-“আর এই কার্টনে কী?”
-“তোমার উইশলিস্টের কিছু বই।”
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে অর্ঘমা চিৎকার করে বলল,
-“সত্যি?”
-“তিন সত্যি।”
খুশিতে অর্ঘমার চোখজোড়া চকচক করে উঠল। পরক্ষণেই সাজানো-গোছানো ঝুড়িটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“ঝুড়িটা আপনি সাজিয়েছেন?”
-“ধুর! আমি এসব পারি নাকি? আমি সব কিনে এনে আপুকে দিয়ে বলেছি সাজিয়ে দিতে। আপু সাজিয়ে গুছিয়ে দিয়েছে। ফ্রি-তে আমাকে কতগুলো বকাও দিয়েছে অকর্মার ঢেঁকি বলে।”
অভ্র আর অর্ঘমা হেসে দিল। নীরদ মাথা চুল্কে নিজেও হাসল। তার হাসিটা কেমন যেন বোকা বোকা লাগল অর্ঘমার কাছে।
চলবে…
।#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৮
.
দুটো আইসক্রিম, বইয়ের কার্টন আর নীরদের দেওয়া ঝুড়িটা নিয়ে রুমে এসে নিধিকে টেবিলে বসে বইয়ের ভেতরে মুখ গুঁজে থাকতে দেখে বিরক্ত হলো অর্ঘমা। এত পড়ার কী আছে অর্ঘমা সেটাই ভেবে পায় না। ঝুড়িটা জায়গা মতো রেখে হাতের একটা আইসক্রিম নিয়ে এগিয়ে গেল নিধির দিকে।
-“বই রাখ এখন। এই নে আইসক্রিম খা।”
মুখ তুলে অর্ঘমার দিকে তাকিয়ে আইসক্রিমটা নিয়ে মুচকি হাসল নিধি। বই বন্ধ করে বলল,
-“নীরদ ভাইয়া এনেছে এগুলো?”
-“হ্যাঁ।”
-“ভাইয়া আমাকেও একটা গিফট বক্স দিয়েছেন। যদিও এখনো খুলে দেখিনি কী দিয়েছে।”
-“তাই নাকি? কোথায়? এখনই খোল। আমিও দেখব।”
ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে একটা মাঝারি সাইজের গিফট বক্স এনে রাখল পড়ার টেবিলের উপর। অর্ঘমার হাতে আইসক্রিম দিয়ে বক্সটা খুলল। ভেতরে দেখে অবাক হয়ে গেল নিধি। একটা হাতঘড়ি, একটা ডায়েরি সাথে কলম আর কিছু চকলেট রয়েছে বক্সে। নিধি এত বেশি খুশি হলো যা বলার মতো না। কিন্তু খুশিটা প্রকাশ করল না। মুচকি হেসে বলল,
-“নীরদ ভাইকে আরও একবার থ্যাংক ইউ বলতে হবে। গিফট আমার পছন্দ হয়েছে।”
___
অভ্র অর্ঘমার রুমের সামনে এসে নক করল। দরজা খুলল অর্ঘমা। ভাইকে দেখে হেসে জিজ্ঞেস করল,
-“কিছু বলবে?”
-“তোর বান্ধবী কই?”
-“ওয়াশরুমে গিয়েছে। কেন?”
-“আজ তো ওরও রেজাল্ট দিয়েছে। তাই ওকেও কিছু দেওয়া উচিত ভাবলাম।”
হাতের বক্সটা এগিয়ে দিল অর্ঘমার দিকে। বলল,
-“এটা ওকে দিয়ে দিস।”
-“আচ্ছা।”
মৃদু হেসে বক্সটা নিয়ে ভেতরে চলে গেল অর্ঘমা। সেই মুহূর্তে ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হলো নিধি। অর্ঘমার হাতে আবারও গিফট দেখে মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কিন্তু তাকে চমকে দিয়ে অর্ঘমা বক্সটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-“এটা তোর। ভাইয়া দিয়ে গেল।”
বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বক্সটা নিয়ে প্রশ্ন করল,
-“এটা কেন?”
-“ভাইয়ার তরফ থেকে তোর গিফট।”
হতভম্ব নিধি বক্স হাতে নিয়ে তাকিয়ে রইল কিছু সময়। বিছানায় গিয়ে বসে আস্তে আস্তে সময় নিয়ে মাঝারি সাইজের গিফট বক্সটা খুলল। আরেক দফা অবাক হলো নিধি। বক্সের ভেতরে রয়েছে খুব সুন্দর একটা জামা। সাথে কিছু অর্নামেন্টস। হাসি ফুটে উঠল নিধির মুখে। বাবার বাসায় আজ পর্যন্ত একটা দামী ভালো জামা তার কপালে জোটেনি। তাই অভ্রর দেওয়া উপহারের জামাটা দেখে খুশিতে চোখে জল চলে এলো নিধির। কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠল মন।
___
কলেজের প্রথম দিন অভ্র আর নীরদ গিয়েছিল অর্ঘমা আর নিধির সাথে। এর আগে ভর্তি হওয়ার সময় এসে পুরো কলেজ ঘুরে ঘুরে দেখে গিয়েছিল তারা। নিধির পড়াশোনার সম্পূর্ণ খরচ বহন করছেন অর্ঘমার বাবা। অর্ঘমার আবদার ছিল এটা। যেহেতু তাদের আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট ভালো তাই আর আপত্তি করেননি অর্ঘমার বাবা। নিধি প্রথমে একটু ইতস্তত করলেও অর্ঘমা তাকে বুঝিয়ে মানিয়েছে। নিধিও আর কিছু বলতে পারেনি কারণ এছাড়া তার আর কোনো গতি নেই।
নবীন বরণের দিন সকালে নিধি অনেক চিন্তাভাবনা করে অভ্রর দেওয়া জামাটা পরল। এছাড়া তার ভালো কোনো জামা নেই। অর্ঘমা ভেবেছিল শাড়ি পরে যাবে। কিন্তু নিধি শাড়ি পরবে না দেখে সে-ও শাড়ি পরার চিন্তা বাতিল করল। অনেক খুঁজে ধূসর রঙের একটা জামা বের করল। জামাটা সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস। এটা অভ্র কিনে দিয়েছিল তাকে প্রায় বছরখানেক আগে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত একবারও পরা হয়নি। এটাই আজ পরে যাবে বলে ভাবল।
অর্ঘমা নিজের মেকআপ দিয়ে নিধিকে সাজিয়ে দিল। নিজেও কিছুটা সাজল। ভেবেছিল শাড়ি পরে একটু গর্জিয়াসভাবে সাজবে। নীরদের মাথাটা হালকা করে ঘুরিয়ে দিবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি দিল নিধি। ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে নিজেকে আয়নায় ঘুরে ঘুরে দেখল। তাকে দেখতে সুন্দরই লাগছে। আয়নার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ঢং করে বলল,
-“ও মাই গড! এই সুন্দর মেয়েটা কে? আরেহ্! এটা তো আমি। হায়.. কারও নজর যেন না লাগে।”
চুলগুলো হাত দিয়ে পেছন দিকে ঠেলে দিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,
-“মে ইতনি সুন্দার হু মে ক্যায়া কারু?”
নিধি এতক্ষণ যাবৎ বিছানায় বসে অর্ঘমার ঢং দেখছিল। এবার সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
-“হয়েছে তোর ঢং? আর কতক্ষণ লাগাবি? বিগত দুই ঘন্টা ধরে তো শুধু ঢং-ই করে যাচ্ছিস। এবার চল নাহলে অনুষ্ঠানই শেষ হয়ে যাবে।”
-“আগে বল আমাকে কেমন লাগছে?”
-“পরী লাগছে পুরা। এবার চল না রে মা।”
-“হায়.. আমি তো জানি আমি পরী। শাড়ি পরিনি তো কি হয়েছে? এভাবেও আমি নীরদ ভাইয়ের মাথা ঘুরিয়ে দিব দেখিস। নিচে নাম শুধু, দেখবি কীভাবে হা করে তাকিয়ে থাকে।”
-“ভাই, তুই কী বলতো? ভাইয়ার সামনে গেলে লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারিস না। অথচ ঘরে বসে মুখে ফটর ফটর করিস।”
-“ও তুই বুঝবি না। এবার কি বের হবি? কখন থেকে শুধু কথাই বলে যাচ্ছিস। তোর জন্য কত দেরি হয়ে গেল।”
অর্ঘমা ফোন আর পার্স নিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। নিধি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। এতক্ষণ যাবৎ নিজে বকবক করে, রং-ঢং করে দেরি করে এখন তাকে দোষ দেওয়া হচ্ছে? নিধি নিজের পার্সটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
অর্ঘমা হিল জুতো জোড়া হাতে নিয়ে খালি পায়ে দৌড়ে নিচে নেমে এলো। গেইট দিয়ে মাথা বের করে উঁকি দিয়ে দেখল নীরদ গেইটের ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার মনোযোগ হাতে থাকা ফোনের দিকে। হিল জুতো জোড়া পায়ে দিয়ে, চুল ঠিক করে হালকা করে গলা ঝেড়ে নিয়ে বের হলো। গলা ঝাড়ার শব্দ শুনেই গেইটের দিকে তাকিয়ে ছিল নীরদ। অর্ঘমাকে বের হতে দেখে মুখটা হা হয়ে গেল। হাত থেকে ফোনটা প্রায় পরেই যাচ্ছিল এমন সময় নিজেকে সামলে নিল। ফোন পকেটে ঢুকিয়ে আবারও তাকাল অর্ঘমার দিকে। শুকনো ঢোক গিলে বিরবির করে বলল,
-“নির্ঘাত আজকে আমাকে মারার প্ল্যান করে এসেছে।”
-“কিছু বললেন?”
-“কই? না তো। নিধি কোথায়?”
-“ওই তো আসছে।”
বলতে না বলতেই নিধি চলে এলো। কলেজ বাসা থেকে প্রায় আধঘন্টার দূরত্বে। একটা সিএনজি ভাড়া করল তারা। সিএনজিতে নীরদ অর্ঘমার পাশে বসে একটু পর পর আড়চোখে অর্ঘমার দিকেই তাকাচ্ছে। এই পর্যন্ত দুটো বিয়েতে অর্ঘমাকে দেখেছে সে। কিন্তু সেই দু’দিন আর আজকের দিনের অর্ঘমার ভেতরে কিছু একটা তফাত আছে। আজ মেয়েটাকে হুট করেই কেমন যেন বড় বড় লাগছে। এর কারণটা বুঝতে পারল না। পকেট থেকে কলম বের করে আঙুলে গোল গোল ঘুরাতে লাগল। অর্ঘমা তা খেয়াল করে বলল,
-“কী করছেন? হাতে কালি লাগাচ্ছেন কেন?”
নীরদ কোনো জবাব দিল না। কলম পকেটে ঢুকিয়ে হাত উঠিয়ে অর্ঘমার কানের পিঠে কালি লাগিয়ে দিল। অর্ঘমা অবাক হয়ে বলল,
-“এটা কী করলেন?”
-“আমার কাছে কাজল নেই। আর তুমিও কাজল পরোনি। তাই কলমের কালি দিয়ে নজর টিকা দিয়ে দিলাম।”
মুখ টিপে হাসল অর্ঘমা। নিধি জানালার দিকে তাকিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে আর নীরদের কথা শুনে হাসছে। এই দু’জনকে তার ভীষণ ভালো লাগে। একে অপরকে মনের কথা না বলেও কি সুন্দর একে অপরের মনের ভাব বুঝে নেয়। অর্ঘমা প্রশ্ন করল,
-“কেন দিলেন?”
-“যাতে কারো নজর না লাগে। দেখতে তো আস্ত একটা পুতুলের মতো লাগছে। যদি কেউ নজর দিয়ে দেয়? সাবধানের তো আর মার নেই। তাই এই ব্যবস্থা।”
নীরদের সরল স্বীকারোক্তি শুনে মনটা প্রশান্তিতে ছেয়ে গেল অর্ঘমার। গাল দু’টো লজ্জায় উঁচু হয়ে গেছে বুঝতে পেরে অন্য দিকে ঘুরে গেল। গালের গরম আভা সে অনুভব করতে পারছে। নীরদের প্রশংসাই তার জন্য যথেষ্ট। আর কে তার সাজ দেখল না দেখল তা দিয়ে তার কিছুই যায় আসে না।
কলেজে পৌঁছে অর্ঘমা আর নিধিকে ভেতরে পাঠিয়ে দিল। নীরদের বন্ধুরা আশেপাশেই আছে। অর্ঘমা যতক্ষণ অনুষ্ঠানে থাকবে ততক্ষণ বন্ধুদের সাথে এদিকেই ঘুরাঘুরি করবে নীরদ। তাছাড়া এদিকে একটা কাজও আছে তার। সেটাও সেরে নিবে। অর্ঘমা, নিধি ভেতরে ঢুকে যাওয়ার পরও নীরদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল সেখানে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। কলেজ আর ভার্সিটি একসাথে হওয়ার সুবাদে শিক্ষার্থী একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে। ছেলেদেরকে তীক্ষ্ণ নজরে দেখে নিয়ে মনে মনে বলল, ‘এখানের সব মেয়েদের সাথে তোরা লাইন মার, ফ্লার্ট কর আমার কোনো সমস্যা নেই। শুধু আমারটার দিকে নজর দিস না।’ পরক্ষণেই আবারও ভাবল, ‘জলজ্যান্ত পুতুলটার দিকে আজ কেউ তাকাবে না এমনটা হতেই পারে না। হে আল্লাহ্! তুমি দেখে রেখো আমার পুতুলটাকে। সবার বদ নজর থেকে ওকে দূরে সরিয়ে রেখো।’ নীরদের একবার মন চাইল অর্ঘমাকে গিয়ে বলতে যে, ‘চলো এখান থেকে। আমাকে চিন্তায় রেখে তোমাকে নবীন বরণের অনুষ্ঠানে থাকতে হবে না। তোমার সাজ দেখে আমিই পাগল হয়ে যাচ্ছি। তাহলে তোমাদের নবীন বরণে আসা ছেলেগুলো যে পাগল হবে না তার গ্যারান্টি কী?’ পরক্ষণেই এই ভাবনা বাতিল করে গোমড়া মুখে চলে গেল সেখান থেকে। এবার শুধু অর্ঘমার নজর কোনো ছেলের দিকে না পড়লেই হয়।
___
কলেজের মেয়েগুলোকে দেখে অর্ঘমা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। এর থেকে তো স্কুলের মেয়েগুলোই ভালো ছিল। অন্তত এত ভাব তো আর দেখাত না। এক স্কুলেই সে টানা বারো বছর পার করেছে। ক্লাস ফোর থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিল। তার উপর ক্লাস টপার ছিল। সেই সুবাদে ক্লাসের সকলে তার সাথে সেধে সেধেই কথা বলত। আর এখানের মেয়েগুলোকে দেখো! নিজে থেকে সেধে কথা বলতে গেলেও ভাব এমন করছে যেন মহা অপরাধ করে ফেলেছে। একই ক্লাসের হয়েও এমন ভাব দেখানোর মানেটাই খুঁজে পেল না অর্ঘমা। এদের সাথে কীভাবে মানিয়ে নিবে দু’টো বছর সেটাই চিন্তা করতে লাগল।
একদম সামনের সারিতে বসেছেন সকল শিক্ষকরা। তার পেছন সারি থেকে শুরু হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের বসার জায়গা। অর্ঘমা আর নিধি একদম সামনে গিয়ে দেখে কয়েকটা বসার জায়গা খালি। শিক্ষকদের পেছনে হওয়াতে কেউ বসেনি এখানটায়। অর্ঘমা আর নিধি সেখানে বসে পড়ল। পেছন থেকে কয়েকজন তাকাল তাদের দিকে। সেদিকে তাকাল না তারা। তবে অর্ঘমা বিরক্ত হলো এটা দেখে যে ছেলেমেয়েদের বসার জায়গা একসাথে করা হয়েছে। এখানে দু’টো সারি করা উচিত ছিল। এক সারিতে ছেলেরা বসবে, আরেক সারিতে বসবে মেয়েরা। ক্লাসে তো এই নিয়মটা আছে। তাহলে আজকে এই নিয়ম নেই কেন? আপাতত এসব চিন্তা বাদ দিয়ে স্টেজের দিকে তাকাল। অধ্যক্ষ মহোদয় বক্তৃতা দিচ্ছেন। নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়ে কিছু কথা বলছেন। কথাগুলো অর্ঘমার ভালো লাগল। তাই সে মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগল।
চলবে…