#কান্নাভেজা_রাত
#১৩তমো_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
হুট করে দরজায় শব্দ হতেই বুক কেঁপে উঠলো। রাতুল এসে গেছে সম্ভবত।কি সর্বনাশ! সবার আগে এখানেই এলো সে! তার মানে জীবন গে*লে সবার আগে আমারটাই যাবে!
আস্তে আস্তে সে এদিকে আসে। তার পায়ের আওয়াজ শোনা যায়।ছমছম করে উঠে গা। প্রচন্ড রকম ঘামতে শুরু করি আমি। সে এসে আমার মাথার কাছে বসে। কাঁথার উপর দিয়ে হাত রাখে মাথার একপাশে। তারপর বলে,’ এই, উঠো, উঠো।’
আমি ভীষণ রকম চমকে উঠি। মেহেরুন এটা। রাতুল না। রাতুল এখনও ফিরেনি তবে।
কাঁথা সরিয়ে এক লাফে বিছানায় উঠে বসি। তারপর বুকে থুথু ছিটিয়ে বলি,’ আল্লাহ! আরেকটু হলে এমনিই ভয়ে মরে যেতাম! আমি ভেবেছি রাতুল এসে গেছে।আর সে এসে কাঁথা টেনে নিচ থেকে আমায় বের করে ফেলতেছে।আমি তো ভেবেছিলাম এতোক্ষণে লা*শ হয়ে যাবো।’
মেহেরুন হাসলো। তবে তার মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। সে বললো,’ রাতে ফিরবে না নাকি রাতুল?’
আমি বললাম,’ যদি না ফিরে তখন কি হবে?’
মেহেরুন বললো,’ আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।’
আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে।ওর জন্য আমি বি*পদে পড়েছি।আমি ভয়ে শুকিয়ে যাওয়া মুখ নিয়ে বললাম,’ তুমি ইচ্ছে করেই আমায় বি*পদে ফেলেছো মেহেরুন! তুমি আমার ভালো চাও না।খারাপ চাও।’
চোখে জল নেমে এলো।কান্না পাচ্ছে খুব।
মেহেরুন আমার কাছে এসে বসলো। তারপর চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললো ,’ শিকার ধরার জন্য ধৈর্য্যশীল হতে হয়। এখনই ভেঙে পড়লে চলবে না।ও ফিরবে। আমার মন বলছে ফিরবে।’
আমি বললাম,’ তাহলে তুমি এখানে কেন? যদি এসে দেখে ফেলে সে তখন কি উপায় হবে!’
মেহেরুন বললো,’ সে এলে বাড়ির গেট খুলেই তো আসবে।গেট খুললে গেটে শব্দ হবে।গেট খুলে বাকি রাস্তা আসার আগেই আমি ওখানে গিয়ে শুয়ে পড়তে পারবো।’
আমি বললাম,’ না তুমি এক্ষুনি চলে যাও। আমার ভীষণ ভয় লাগছে।’
মেহেরুন চলে গেল। এবং ওর যাবার খানিক সময় পরেই রাতুল এলো। রাতুল এসে প্রথমেই আমার ঘরে উঁকি দিলো।গলা খাঁকারি দিয়ে দরজা ভেজিয়ে ওদিকে চলে গেল। ভ*য়ে আমার অবস্থা কাহিল। বুঝতে পারছি না কি হবে । মেহেরুন কি পারবে ওকে শে*ষ করতে?
এর ঠিক তিন থেকে চার মিনিট পর প্রচন্ড শব্দে আঁতকে উঠলাম।গু*লি করেছে। পরপর দুটো গু*লি।এতো তাড়াতাড়ি! কিভাবে?
কে গু*লি করলো? মেহেরুন কি পি*স্তল কেড়ে নিতে পেরেছে নাকি ব্যর্থ হয়েছে? ব্যর্থ হলে গু*লি দুটি রাতুল করেছে। মেহেরুন শেষ এতোক্ষণে। এবার আমার পালা।আর ও যদি সফল হয় তবে রাতুল শে*ষ। তারপর কি হবে?
আমি জানি না!
‘
রাতুল গো*ঙাচ্ছে। এখান থেকে শোনা যাচ্ছে।
কি কি যেন বলছে।অনুনয় বিনয়ের মতো শোনা যাচ্ছে।
মেহেরুন আমায় ডাকলো।ও ঘর থেকেই।
‘ জেসি, এই জেসি, দৌড়ে আসো এখানে।’
আমি দৌড়ে এলাম না। ভ*য়ে ভ*য়ে পা ফেলে এলাম। এসে দেখি রাতুল হাঁটু ভাজ করে মেঝেতে বসে কাতরাচ্ছে। হাঁটু থেকে নিচ পর্যন্ত সবটুকুই রক্তে মাখামাখি তার।এর মানে গু*লি হাঁটুতে করেছে।
রাতুলের ফোন দুটিও কেড়ে নিয়েছে মেহেরুন।
রাতুল আমায় দেখেই হাতজোড় করে বললো,’ জেসি, তুমি আমার স্ত্রী। তুমি আমায় ওর হাত থেকে বাঁচাও।প্লিজ জেসি! ও আমায় মে*রে ফেলবে।’
আমাকে কথা বলতে দিলো না মেহেরুন। সে নিজ থেকেই বললো,’ ও তোর স্ত্রী? সত্যি?’
রাতুল বললো,’ তুমি জানো মেহেরুন।সব জানো।ও আমার বিবাহিত স্ত্রী।’
মেহেরুন হাসলো। হেসে ওর সামনে বসে পি*স্তলের অগ্রভাগ দিয়ে ওর থুতনিতে আঘাত করে বললো,’ তো নিজের স্ত্রীকে কি কেউ অন্যের বি*ছানায় দেয় রাতুল? ‘
রাতুল বললো,’ আমি তো এরকম কিছু করিনি। এমন কিছু করেছি জেসি?’
আমি কিছু বললাম না।ভ*য়েই মরে যাচ্ছি এসব দেখে।মনে হচ্ছে হঠাৎ মাথা ঘুরে এখানে পড়ে যাবো।
মেহেরুন আমায় বললো,’ ওই কাপড় গুলো কোথায়? জুতো গুলো কোথায়?’
আমি ব্যাগ তিনটে বের করে দিলাম।
মেহেরুন বললো,’ তুমি দাঁড়াও জেসি।আমি ওই বুড়িকে এখানে নিয়ে আসি গিয়ে।’
মেহেরুন ও ঘরে গেল রাতুলের মাকে নিয়ে আসতে।আমি এখানে একা। রাতুল কাঁপতে কাঁপতে বললো,’ জেসি, আমার যা আছে সব তোমায় দিয়ে দিবো। তুমি ওর হাত থেকে আমায় জা*নে বাঁচাও। আমার জীবন ভি*ক্ষা দেও তুমি!’
ততোক্ষণে মেহেরুন এসে গেছে।রাতুলের মায়ের হাত পা বাঁধা।মুখও বাঁধা। মেহেরুন মুখের বাঁধন খুলে দিয়ে পেছন থেকে আঘাত করে মহিলাকে বসিয়ে দিলো ছেলের সামনে। তারপর ওই জুতো জোড়া, জিন্স আর অ*ন্তর্বাস বের করে ওদের দুজনের মাঝখানে ফেলে রেখে বললো,’ রাতুল, তোর মাকে এইগুলো পরিয়ে দেই? খুব সুন্দর দেখাবে। তারপর যার সঙ্গে তোর যোগাযোগ হয়েছে। অর্থাৎ যার বি*ছানায় তুই জেসিকে পাঠাতে চেয়েছিলি। ওখানে তোর মাকে পাঠাই? পাঠাবো?’
রাতুল বললো,’ আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি সব ভুল করেছি।’
ওর মা হঠাৎ আগুন বর্ণ করে ফেললো তার চোখ। রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বললো,’ রাতুল, তুই জেসিরে অন্যের ঘরে পাঠাতে চেয়েছিলি? এটা সত্যি?’
মেহেরুন বললো,’ অভিনয় বাদ দেন। আপনি সব জানেন। আপনি একটা শয়তান মহিলা।’
রাতুলের মা এই কথা কানে তুললো না।
সে ধমক দিয়ে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো,’ এটা কি সত্যি? তুই তোর নিজের স্ত্রীরে অন্যের ঘরে দিতে চেয়েছিলি? ‘
রাতুল মাথা নিচু করে বললো,’ সত্যি ।আমি এটা ভুল করেছিলাম।আমি অনুতপ্ত।’
রাতুলের মা ওর মুখে থুথু ছিটিয়ে দিলেন।
তারপর মেহেরুনের দিকে তাকিয়ে বললেন,’ আমার হাতে পি*স্তলটা দেও মা। এরে আমি গু*লি করবো।আমি নিজের হাতেই আমার এই খা*রাপ সন্তানরে খু*ন করবো।’
মেহেরুন হাসলো। হেসে বললো,’ আপনি বিরাট চালাক মহিলা। এইসব অভিনয় টবিনয় করে কাজ হবে না। এখন দেখেন আমি কি করি!’
বলেই সে তিন তিনটে গু*লি করলো রাতুলের বুকে। রাতুলের বুক ঝাঁঝরা হয়ে গেল পর পর গু*লি খেয়ে। লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে। এবং আর্তনাদ করে উঠলো।একবারই শুধু আর্তনাদ করলো। অনেক জোরে। তারপর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেল একেবারে।খুব কম সময়ের ভেতর তার ভেতর থেকে প্রাণবায়ু বিদায় নিলো। তার মা সঙ্গে সঙ্গে বিলাপ করে উঠলো । অ*ভিশাপ দিতে শুরু করলো মেহেরুনকে।বলতে লাগলো,
‘তুইও মাইনষের হাতে মরবি মা*গি। কুত্তার মতো ম*রবি। আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দে।দেখ, আমিই তোরে মা*রবো।’
মেহেরুন রাতুলের মায়ের হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিলো।
অদ্ভুত বিষয় হলো তার মা কিছুই করলো না। ছেলের লা*শের পাশে চুপচাপ বসে রইল। কাঁদছে। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে।
মেহেরুন বলেছিলো, রাতুলের মায়ের হাত পা ভে*ঙ্গে দিবে। কিন্তু সে এরকম কিছুই করেনি। কেন করেনি কে জানে!
সে রাতুলের ফোন দিয়েই থানায় ফোন করলো। ঠিকানা বলার পর বললো, এখানে খু*ন হয়েছে একজন। আসামি এখানেই আছে এখনও।এলেই ধরতে পারবেন।
শুনে ভয়ে আমি মুষড়ে গেলাম। অবশেষে মেহেরুন আমাকেই ফাঁসাতে যাচ্ছে! ধরিয়ে দিবে আমায়। নয়তো এরকম ভাবে বললো কেন, এখানে আসামী আছে।এলেই ধরতে পারবেন।
‘
পুলিশ এলো আরো আধ ঘন্টা পর। এসে ঘেরাও করে ফেললো বাসা।থানার ওসি ভেতরে এলেন কজনকে নিয়ে।
আমি ভ* য়ে তটস্থ। মেহেরুন কি করে কে জানে! হয়তো আমায় দেখিয়ে বলবে, এই যে খু*নি!
আমি তখন কি করবো? কি বলবো?
আমি যে ভীতু! শুধু হাউমাউ করে কাঁদতেই পারবো।
আমাকে আর কাঁদতে হলো না। ভয়ে ম*রে যেতে হলো না!
অদ্ভুত বিষয় হলো, মেহেরুন নিজ থেকেই ধরা দিলো ।ওসি সাহেবের কাছে গিয়ে অ*স্ত্র সমর্পণ করে বললো,’ নি*হত ব্যক্তি ভয়াবহ রকমের স*ন্ত্রাশি ছিল। আমি তার কাছে ধৃত ছিলাম এতো দিন।আজ নিজেই ওকে খু*ন করেছি আমি।এর আগেও আমি একটি খু*ন করেছিলাম। আমার স্বামীকে।সেও ওর মতোই স*ন্ত্রাশি ছিল।’
পুলিশ রাতুলের লা*শ এবং খু*নের দায় নিজ থেকেই স্বীকার করা মেহেরুনকে নিয়ে গেল।যাবার আগে মেহেরুন আমার সঙ্গে আলাদা ভাবে দু মিনিট কথা বলতে চাইলো। ওসি সাহেব সেই সুযোগ দিলেন।
মেহেরুন বললো,’ আমি আমার কথা রেখেছি তাই না জেসি?’
আমি ওর হাত ধরে কেঁদে ফেললাম। বললাম,’ রেখেছো।’
মেহেরুন বললো,’ ভালো থাকবে সব সময়। নতুন করে জীবন শুরু করবে। ফাঁ*সি না হলে এবং মুক্তির আগ পর্যন্ত যদি বেঁচে থাকি তবে আবার দেখা হবে তোমার সঙ্গে। তোমার গ্রামের নাম কি যেন? কোন উপজেলা?’
আমি বললাম।
মেহেরুন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেল। পুলিশের সঙ্গে রাতুলের মাও গিয়েছে। কোন কথা বলছে না। শুধু নিরবে কাঁদছে।
‘
মেহেরুনের জেল হয়েছে চার বছরের। আদালত অনেক কিছু বিবেচনা করেই এই রায় দিয়েছে। তাছাড়া রাতুলের মাও তার ছেলের সব দোষ স্বীকার করেছে আদালতে।আমরাও আদালতে ছিলাম।আমি আর বাবা।রায় হওয়ার পর বাবা মেহেরুনের সঙ্গে দেখা করলেন। তাকে বললেন,’ মেহেরুন, আমার এখন থেকে দুটি মেয়ে। একজন জেসি, অন্যজন মেহেরুন।আমি সব সময় তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসবো। তুমি যেদিন ছাড়া পাবে, আমি সেদিন সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হবো।আমি আমার মেয়েকে আমার ঘরে এসে নিয়ে যাবো। আবার বিয়ে দিবো। আবার নতুন জীবন শুরু হবে আমার মেয়ের।
মেহেরুন কেঁদেছিলো। আনন্দে। আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে সেদিন নিজের প্রতিই নিজে লজ্জিত হয়েছিলাম।মনে মনে বলেছিলাম, এরাই প্রীতিলতা হয়।এরাই দেশ জাতি এবং মানুষের মুক্তির পতাকা উত্তোলন করে। এদের সাহস এবং ত্যাগের জন্যই আমরা শান্তির নীড় গড়তে পারি। বাঁচতে পারি বাঁচার মতো।
———— ———- ——— ———–
পরিশিষ্ট –
‘
জীবন কি রকম যেন।রাতুল খু*ন হবার পর ছ’ মাসের মতো আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম। কিচ্ছু খেতে পারতাম না।ভ*য় পেতাম। বাবাকে নিয়েও আমার ভ*য় ছিল। ভাবছিলাম, বাবার কিছু হয়ে যাবে।এসব শুনলে তিনি আর বাঁচবেন না। কিন্তু আল্লাহর কি অসীম করুণা, বাবা শক্ত আছেন।তিনিই বরং আমায় সান্তনা দেন। এখানে ওখানে ঘুরতে নিয়ে যান।বলেন, ঘুরাফেরা করলে, গল্প গুজবের মধ্যে থাকলে মন ভালো থাকবে।
এর আরো ছ’ মাস পর বাবা বললেন, বিয়ে করতে। বললেন , নতুন জীবন শুরু হলে এসব আর মাথায় থাকবে না।
আমি বললাম, বিয়ে টিয়েতে আমার আর বিশ্বাস নাই।আর কাউকে আমি বিশ্বাসও করি না।
বাবা হাসলেন। বললেন, ‘এই ছেলে ওরকম না। আমার বন্ধুর ছেলে। ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক।আরিফ নাম।বয়স হবার পর থেকেই নামাজ কালাম পড়ে। ওকে আমি ছোট থেকেই চিনি। এরকম মিষ্টি চরিত্রের ছেলে হয় না !’
আমার কেমন অবিশ্বাস হলো।আমি বললাম, ‘এরকম একজন লোক আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এসব জানার পর আমায় বিয়ে করবে কেন?’
বাবা হাসলেন। বললেন, ‘সেটাই তো কথা! তার বাবা সব শোনার পর ছেলেকে জোর দিয়ে ধরেছে।বলেছে, মেয়েটির জীবন এলোমেলো হয়ে আছে। পুরুষের প্রতি তার বিশ্বাস উঠে গেছে।বাবা, তুই যদি একটু ত্যাগ স্বীকার করতি তবে মেয়েটির জীবন নতুন করে সাজতো। সুন্দর হয়ে উঠতো ওর জীবন।
আরিফ রাজি হয়ে গেল। সে বললো, তোমার কথা কোনদিন ফেলবো না আমি।’
‘
আমার বিয়ে হয়েছে ডিসেম্বরের তেরো তারিখ। তখন শীত পড়েছে।আমি ভয়ে ছিলাম। ভাবলাম, আরিফ রসকসহীন লোক কি না কে জানে!
তাছাড়া খুব বেশি রাগি কি না! হাইস্কুলের অংক ইংরেজির শিক্ষকরা প্রচন্ড রাগী হয়। এই জন্যই এই ভয় পাওয়া। কিন্তু মজার বিষয় হলো আরিফের মধ্যে এসবের ছিটে ফোটাও নাই।আরিফ কোমল অথচ মজার মানুষ।
তার প্রতি জমা ভয় কেটে গেল কদিনেই।দেখা গেল সে ভীষণ মিষ্টি লোক।কথা, কাজ, চেহারা সবকিছুতেই সে ভালো।
বিয়ের পনেরো দিন পর এক বিকেলে এসে সে আমায় অবাক করে দিলো। সে এসে বললো,’ আমরা আগামী পরশু এক জায়গায় বেড়াতে যাবো। ‘
আমি হাসলাম। বললাম,’ হানিমুনে নাকি?’
সে বললো,’ ধরো এরকম কিছুই।’
এরপর আমি বললাম,’ কোথায় যাবে বলো না? কোন জায়গায়? ‘
সে বলে না। শুধু এইটুকুই বলে,’ গেলেই দেখতে পাবে।’
কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা। জোরাজুরি করছি।সব সময় এই এক কথায় বলি। শেষ পর্যন্ত সে বলতে বাধ্য হলো।বললো, ‘ আমরা ওমরাহ্ করতে যাবো। আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করে আসবো। নবীজির (সাঃ) রওজায় চুমু খেয়ে আসবো।খুশি তো?’
আমি কিভাবে আমার অভিব্যক্তি প্রকাশ করবো, আমি কতোটা খুশি হয়েছি এই কথা মুখে বলবো কি করে! আমি শুধু ওকে জড়িয়ে ধরলাম।ধরে ওর বুকে মুখ ডুবিয়ে কেঁদে ফেললাম হাউমাউ করে।
‘
ওমরায় যাওয়ার আগে আমরা দেখা করতে গেলাম মেহেরুনের সঙ্গে। মেহেরুনের চেহারা আরো উজ্জ্বল হয়েছে।কি পবিত্র দেখাচ্ছে ওকে।
আমি শিকের ভেতর দিয়ে ওর হাত দুটো ধরে বললাম,’ মেহেরুন, আমি আল্লাহর ঘরে নামাজ পড়ে তোমার জন্য দোয়া করবো। বলবো,আল্লাহ যেন তোমাকে উত্তম স্বামী দান করেন।’
মেহেরুন আমার হাত শক্ত করে ধরলো।
তারপর বললো,’ আমিন।’
___সমাপ্ত___