কানামাছি,পর্ব:৫

0
1680

#কানামাছি
#পার্টঃ৫
#জান্নাতুল কুহু (ছদ্মনাম)
“স্যার আমাকে মেরেন না। স্যার আল্লাহর দোহায় লাগি আর মারবেন না স্যার। আল্লাহর কসম আমি এই কাজ করিনি। বিশ্বাস করেন স্যার। আর মারবেন না”

সাঁঝের কানে কথাগুলো বারবার বাজছে। অনিককে ফোন দেয়ার সময় যেটুকু জড়তা কাজ করছিলো সেটাও এক নিমিষেই কেটে গেলো। ফোন দিলো সাঁজ। রিং হলো কিন্তু অনিক ধরলো না। সাঁঝ বেশ অবাক হলো। কারণ সে ফোন দিয়েছে কিন্তু অনিক ফোন ধরেনি এরকম কখনোই হয় না। সাঁঝ আবার ফোন দিলো। এই ভাবে ১২ বার ফোন দিলো কিন্তু অনিক ফোন ধরলো না। সাঁঝের ঠোঁট গলা সব শুকিয়ে আসছে। কাজের শুরুতেই এভাবে বাধা কেন আসছে?
ঢকঢক করে আধা বোতল পানি খেয়ে নিলো। এরপর শুয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।

তীব্র গরম অনুভূত হওয়ায় সাঁঝ আলতো করে চোখ খুলে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। কারণ দুপুর শেষ প্রায়। অনিক আবার ওর মিশনে চলে গেলো না তো? সাঁঝ তাড়াতাড়ি উঠে ফোন হাতে নিলো। দেখলো অনিকের মিসড কল উঠে আছে। আর কোন ভাবনা চিন্তা না করে সাঁঝ ফোন দিলো। ফোন ধরে ওপাশ থেকে অনিক বলল,

—” ফোন দিয়েছিলে অনেক বার। আমি ঘুমাচ্ছিলাম। শুনতে পায়নি”

—” আচ্ছা”

সাঁঝের ভয় লাগছে একটু একটু। অনিক বলল,

—” কি হয়েছে? সব ঠিক আছে? তোমার গলা কেমন যেনো লাগছে!”

—” না.. আমি ঠিক আছি। অনিক তোমাকে কিছু জরুরি কথা বলার আছে”

—” হুম বলো”

সাঁঝ একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,

—” অনিক তোমার সাথে আর সম্পর্কটা রাখা সম্ভব না। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে”

অনিক একটু হেসে বলল,

—” আমাকে ঘাবড়ে দেয়ার জন্য মজা করছো না?”

সাঁঝ কঠিন গলায় বলল,

—” অনিক আমি মজা করছি না। আমি সিরিয়াস। আমার বিয়ে আজ রাতেই”

অনিক এবার ঘাবড়ে গিয়ে বলল,

—” কি বলছো সাঁঝ? তুমি না বলোনি কেন তোমার বাড়ির লোককে? আজ রাতে বিয়ে মানে? আম.. আমার কথা কেন বলনি তুমি তোমার বাড়ির লোককে?”

অনিকের কথা জড়িয়ে আসছে। সাঁঝ কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

—” আমি বলেছিলাম তোমার কথা। কিন্তু ওরা প্রেমকে সমর্থন করে না। আমাকে মেরেছে। আর সবাই আমার চরিত্র নিয়ে অনেক বাজে কথা বলছে। আমার চরিত্রের উপর কালি লাগাচ্ছে।”

—” তোমার চরিত্রে কালি? আমি.. আমি তো এখন আসতে পারবো না। আমার দুই ঘন্টার মধ্যে মিশনের জন্য প্রেজেন্ট হতে হবে। তুমি পালিয়ে আসো সাঁঝ। পালিয়ে আমার বাসায় আসো”

সাঁঝ এবার প্রায় কেঁদে বলল,

—” অনিক ওরা আমাকে আটকে রেখেছে। কোন রকমে ফোন নিয়ে তোমার সাথে কথা বলেছি”

—” আমি আমি তাহলে আমার মা-বাবাকে পাঠায় তোমার ওখানে?”

সাঁঝ কান্নাভাবটা দূর করে অত্যাধিক শান্ত গলায় বলল,

—” অনিক আমার কথা শোন। আমি সব বিষয়গুলো ভেবে দেখেছি এই দুই দিনে। আমার বিয়ে দুই দিন আগে ঠিক হয়েছে। তোমার মা-বাবা আসলে তাদের অপমান করে বের করে দিবে। আর তুমি আসলে আমার মরা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। আমার চরিত্রে কি পরিমান কালি লেগেছে আর লাগাচ্ছে আমিই জানি। আমি পালিয়ে বা তোমার সাথে গেলে আমার পরিবারের উপর, আমার মা-বাবার উপর কাদা লাগাবে এরা। এটাই মধ্যবিত্ত পরিবার অনিক। তুমি আসলে আমার ফুফুদেরকে একঘরে করে দিবে। যতই হোক তারা আমার আপনজন। আমাকে নিজের পরিবারের সম্মান রাখতে বিয়ে করতে হবে। তুমি আসলে যে পরিমান আঘাত আমার উপর আসবে সেটা নেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। আমাকে তখন মরতে হবে। আমি এতো সহ্য করতে পারছি না।”

অনিক কান্না করে অনুনয় করে বলল,

—” কিন্তু সাঁঝ তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না? আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমার নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। আমি কিভাবে বাঁচবো?”

—” আমার পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে নিজেকে স্যাক্রিফাইস করতে হচ্ছে। হয়তো বিয়ের পরে আমার অনুভূতিগুলো শূন্য হয়ে যাবে। কিন্তু সেই অনুভূতিহীন আমিটাকেই জীবনটা চালিয়ে নিতে হবে অন্য কোন মানুষের সাথে।”

—” সাঁঝ এভাবে আমাকে ছেড়ে যেও না।”

অনিকের কন্ঠে কান্না, কষ্ট, বেদনা স্পষ্ট। যেটা সাঁঝকে প্রশান্তি দিচ্ছে। সাঁঝ থমথমে গলায় বলল,

—” অনিক আমি তোমার সাথে নিজেকেও ছেড়ে যাচ্ছি। আমার আর কিছু করার নেই। দুইটা অনুরোধ আছে। যদি আমার বিয়ের পরেও কোন দিন তোমার সামনে পড়ি তাহলে আমার সামনে এসো না। আমি মরে যাবো তোমাকে দেখলে। নিজের না পাওয়া ভালোবাসা আর মানুষটাকে দেখে। সত্যি সেদিন নিজেকে শেষ করে দিবো। তাই আমি যদি তোমার কাছে মূল্যবান হই তাহলে আমার সামনে এসো না। আর দ্বিতীয় অনুরোধ অন্য কারোর সাথে নিজের জীবনটা আবার নতুন করে শুরু করো। আমার ভাগের ভালোবাসাটুকুও তাকে দিও। রাখবে আমার অনুরোধ?

সাঁঝ অনিকের কান্নার শব্দ পেলো। অনিক বলল,

—”কিন্তু আমি কি নিয়ে বাঁচবো? আমার কি হবে?”

—” তুমি নতুন কারোর সাথে নতুন ভাবে বাঁচবে। তুমি ভালো থাকলে বুঝে নিবে তোমার সাঁঝও ভালো আছে। আজ আমার কাছ থেকে ফোনটা হয়তো নিয়ে নিবে। আর সিমটাও চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। আর তোমার সাঁঝকে পাবে না ফোন করে। রাখছি। ভালো থেকো।”

—” সাঁঝ প্লিজ সাঁঝ”

সাঁঝ ফোনটা কেটে অনিকের নাম্বার ব্লক করে দিলো। কোন মানুষ যতই ক্ষমতাশালী হোক, যতই ঔদ্ধত্যপূর্ণ হোক, যতই উগ্র হোক তার কোন একটা জায়গা প্রচন্ড দূর্বল হয়। সেই দূর্বলতায় আঘাত করলে সে তার ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারেনা। সাঁঝ নিজে অনিকের সেই দূর্বলতা। এক বছর ধরে নিজের ঘৃণার মানুষের সাথে থেকে নিজেকে তার দূর্বলতায় পরিণত করেছে।

সাঁঝ অনিকের সেই অডিও ক্লিপটা একটা নকল পরিচয়ের আড়াল থেকে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিলো। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে নকল একাউন্ট বন্ধ করে দিলো। যদি এই অডিও ক্লিপটা নিয়ে পুলিশের কাছে বা অনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হতো তাহলে অনিক কোন না কোনভাবে পার পেয়ে যেতো। কিন্তু যখন এটা সে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে তখন কিছু মানুষ এটা বিশ্বাস করবে, কিছু মানুষ অবিশ্বাস করবে কিন্তু কেউ এড়িয়ে যেতে পারবে না। অনিক যখন বাইরে বের হবে সবাই ঘুরে দেখবে ওকে। কানে কানে কথা বলবে। যারা বিশ্বাস করবে ক্লিপটাকে তারা অনিকের গায়ে কাদা লাগাবে। ভাগ্য ভালো থাকলে পুলিশের নজরে আসলে অনিক সাসপেন্ডও হয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হতে পারে। ডাইরিটা বের করে সাঁঝ কানামাছির পাশে লিখলো “Tit for tat”.

সাঁঝের কানে বারবার তার ভাইয়ের সেই কথাগুলো বাজতে থাকলো। মনে হলো এখনই কান থেকে রক্ত বের হয়ে যাবে। সাঁঝ একবার অডিও ক্লিপটা দেখলো। মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে হাজার হাজার মানুষ দেখছে, মন্তব্য করছে, ছড়িয়ে দিচ্ছে। সাঁঝ ভাবলো অনিক নিশ্চয় যাওয়ার আগে দেখে যাবে! এটা দেখার পরে হয়তো এখনই অনিককে উপরমহল থেকে কিছু বলবে না। হয়তো সে মিশনেও যাবে৷ কিন্তু তারপর? ভেবেই সাঁঝের আনন্দ হলো। সে একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লো।
,
,
,
?
কাল থেকে সাঁঝের মনটা খুব ভালো হয়ে আছে। নিজের কাজে সফল হয়েছে। এখন আরো ভালো কারণ আশিক ফোন দিয়ে বলেছে অনিকের কিছু ছবিও পাওয়া গিয়েছে। এটার সাথেও একই কাজ করবে। বরং আরো ভালো প্রমাণ এটা। মনটা ফুরফুরে হয়ে আছে। তাই ভাবলো আজ বাড়ির সবার সাথে ভালো ব্যবহার করবে। সকালে নাস্তার টেবিলে গিয়ে ফুফুকে ডেকে বলল,

—” ফুফু, গুড মর্নিং ”

রোমেসা বেগম বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকলেন। উনি দুই কদম সরে আসলেন সাঁঝের থেকে। এই মেয়ের লক্ষণ ভালো না। এরপর সাঁঝ বলল,

—” দাও আমি হেল্প করে দিচ্ছি। একদিন না একদিন তো বিয়ে করে শশুড় বাড়ি যেতেই হবে। তখন কাজ না পারলে তোমার নামেই খারাপ কথা বলবে।”

রোমেসা বেগম চুপ থাকায় শ্রেয় মনে করলেন। মেয়েটার উদ্দেশ্য বুঝতে পারছেন না।তিনি কি না কি বলবেন আর ক্ষেপে উঠবে। তারপর সাঁঝ আবার বলল,

—” আচ্ছা তোমার সাথে একটা ডিল করি। এরপর যেদিন পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে সেদিন আমি নিজে থেকে ওদের সামনে গিয়ে বসবো। বসা পর্যন্ত ডিল। আজ আমার মন অনেক ভালো। ”

রোমেসা বেগম থমথমে গলায় বললেন,

—” মনে থাকে যেনো।”

—” হ্যা থাকবে”

এরপর টেবিলে নাহিদ আর ফুফা আসলে সাঁঝ হাসি মুখে বলল,

—” আসসালামু আলাইকুম ফুফা। আসসালামু আলাইকুম কাকা”

কাকা ডাক শুনে ফুফু আর ফুফা সাঁঝের দিকে অবাক হয়ে তাকালেও কেউ কিছু বললো না। নাহিদ তার দিকে চোখ তুলে তাকালোও না। সাঁঝ জোর করে সবার সাথে বসে নাস্তা করে নিজের ঘরে গিয়ে রেডি হলো।

ভার্সিটিতে এসে প্রায় দৌড়ে সে আশিকের কাছে যাচ্ছিলো। ছবিগুলো নিতে হবে। মাঠের ভিতর দিয়ে দৌড়ানো সময় কারোর সাথে ধাক্কা লেগে সাঁঝ পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নেয়। কাঁধে এতো জোরে লেগেছে মনে হচ্ছে মানুষ না কোন দেয়ালের সাথে ধাক্কা লেগেছে। এতো স্টিল বডি মানুষের হয়? সাঁঝ পিছন ঘুরে কড়া কিছু কথা শোনাতে যাবে তার আগে মানুষটা পিছনে ঘুরলো। লম্বু মানে ইহান স্যারের সাথে ধাক্কা খেয়েছে। ইহান বিরক্তি নিয়ে বলল,

—” What the hell! কি চোখে দেখো না নাকি? চোখ কি ব্যাগে নিয়ে ঘোর? Rubbish. Disgusting girl”

ইহান আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। সাঁঝের মাথা গরম হয়ে গেলো। যেটুকু কৃতজ্ঞতা ছিলো সেদিনের সাহায্যের জন্য সেটা বিতৃষ্ণায় পরিনত হলো। ঘৃণা চলে আসলো। শুধু ধাক্কা লাগার কারণে এতোগুলো বাজে কথা বলল! মনে মনে ঠিক করলো এর পরের দিন যোগ্য জবাব দেবে ইহানকে এবং আর কোনদিন তার সামনে যাবে না।

মুখ বেজার করে আশিকের কাছে আসলেই আশিক বলল,

—” কি রে মুখ ওমন পেঁচার মতো করে আছিস কেন?”

—” কিছু না এমনি”

আশিক আবার একটা মেমোরি কার্ড হাতে দিয়ে বলল,

—” এই নে এতে ছবি আছে। একটা রাঘববোয়ালের লোকের সাথে টাকা লেনদেনের সময়ের। প্রমাণ সরানোর জন্য টাকা। কিন্তু ছবি অস্পষ্ট ”

—” আচ্ছা চলবে।”

আশিক একটু হেসে বলল,

—” অডিও ক্লিপটা নিয়ে ভালোই খেল দেখালি”

সাঁঝ একটু হাসলো। এরপর ক্লাসে চলে আসলো। তাদের সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার দিন তারিখ দিয়ে দিয়েছে। সামনেই পরীক্ষা।

এরপরের তিন সপ্তাহ সাঁঝ নিজের পড়া আর পরীক্ষা নিয়েই ব্যস্ত থাকলো। অন্য কোন দিকে তেমন খোঁজ রাখলো না । তিন সপ্তাহে অনিকের কোন খোঁজ পেলো না। অন্য নাম্বার থেকে ফোন দিয়েছিলো ফোন বন্ধ। সোসাল মিডিয়াতে নেই। মানে পুরাই গায়েব। সেই ইহানের সাথে ধাক্কা খাওয়ার পর থেকে ইহানও ভার্সিটিতে আসে না। দুটা মানুষ এক সাথে গায়েব। শেষমেশ সব তথ্যের জন্য আশিককে বলেছিলো। অনিকের খোঁজ বের করতে বলেছিলো। শেষ পরীক্ষার শেষে আশিককে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—” কোন খোঁজ পেলি?”

আশিক চিন্তিত মুখে বলল,

—” আংশিক। অনিক মাহমুদের লাস্ট মিশনে গুলি লেগেছে। যেরকম শুনলাম তাতে মনে হচ্ছে অনিক ইচ্ছা করেই বিপরীত পক্ষের গুলির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তার সাথে যারা ছিলো তারা আটকানোর চেষ্টা করেছিলো অনিককে যাতে সামনে না যায়। কিন্তু অনিক কথা শোনেনি। সে বাড়িতে নেই যথাসম্ভব। এখন এরপর সে কি আহত না নিহত না কোন হাসপাতালে আছে সে তথ্য আমি আমার সোর্স দিয়ে পাচ্ছি না।”

সাঁঝ ভ্রু কুচকে বলল,

—” একটু আজব না যে তিন সপ্তাহ আগে গুলি লেগেছে কিন্তু আর কোন খোঁজ নেই!”

—” হ্যা সেটা তো একটু আজবই বটে”

সাঁঝ আশিক আর নিজের গ্রুপকে বিদায় বলে চলে আসে। কয়েকদিন ছুটি পাবে। বাড়িতে গিয়ে এখন একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে ঘুমাবে। অনেক ধকল গেছে পরীক্ষার জন্য।

দুপুরে শুয়ে শুয়ে অনিকের কথা ভাবতে থাকলো। অনিক এই শহরে, নিজের জ্ঞানে আছে এটা না জানা পর্যন্ত সে ছবিগুলোকে লিক করতে পারবে না। অনিকও দেখুক কেমন লাগে নিজের কর্মফল যখন সবার সামনে আসবে। যখন পরিবার পরিজন তার উপর ছি ছি করবে তখন কেমন লাগবে সেটা অনিককে ভোগ করতে হবে।
সাঁঝের হঠাৎ ইহানের কথা মনে হলো। ইহানই বা কোথায় গেলো সেই দিনের পরে? এমন না যে সে দেখেনি ইহানকে, নিজে খোঁজ নিয়ে জেনেছে ইহান তিন সপ্তাহ ধরে ভার্সিটিতে আসে না। কেন সেটা জানতে পারেনি। অফিস রুম থেকে এতো কিছু স্টুডেন্টদের বলে না”

এগুলো ভাবতে ভাবতে সাঁঝ ঘুমিয়ে গেলো। বিকেলে দরজায় জোরে জোরে শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো। বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে দেখে ফুফু দাঁড়িয়ে আছে। চোখ ডলতে ডলতে বলল,

—” কি ব্যাপার এতো জোরে দরজায় বাড়ি মারছো কেন? আগুন ধরেছে নাকি?”

রোমেসা বেগম গম্ভীর স্বরে বলল,

—” পাত্রপক্ষ এসেছে। রেডি হয়ে আসো নিজের কথা মতো”

সাঁঝের চোখে যেটুকু ঘুম ছিলো তা উড়ে গেল। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—” আজ হঠাৎ করে আসলো? আগে থেকে বলোনি কেন?”

—” হঠাৎ এসেছে তাই হঠাৎই বললাম। এখন নিজের কথা মতো রেডি হয়ে আসো”

—” কথা যেহেতু দিয়েছি সেই মতো আমি আসবো”

—” তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসবে। আর নীল শাড়িটা পড়বে”

—” হুম”

সাঁঝ দরজা বন্ধ করে দিলো। নীল শাড়ি, নীল চুড়ি পরতে পরতে ভাবলো আজ সিগারেট জ্বালিয়ে নিয়েই পাত্রপক্ষের সামনে যাবে। ফুফুর সাথে শুধু সামনে যাওয়া পর্যন্ত ডিল হয়েছে। এরপর তার যা করার সে করবে।
যেহেতু তাকে ধরে কেউ পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে যায় না নিজেই যেতে হয় তাই সিগারেট হাতে করে নিয়ে যাওয়াটা অনেক সহজ হলো।
ড্রইংরুমে মাথা নিচু করে গিয়ে সোফায় বসে সামনে পাত্রের মুখের দিকে তাকাতেই সাঁঝের চোখ মাথায় উঠে গেলো। (চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here