#কানামাছি
#পার্টঃ১৪
#জান্নাতুল কুহু (ছদ্মনাম)
একটা বাচ্চার ছবি হাতে নিয়ে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করছে সাঁঝ। পুরানো দিনের ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু একদিকে ছেড়া ছবিটার। বাচ্চাটাকে কেউ কোলে করে আছে। যে কোলে করে আছে সেও নিতান্তই ছোট কিন্তু তার ছবি নেই। ছিড়ে ফেলা হয়েছে। সাঁঝ বুঝতে পারলো না এটা কার ছবি। আজ ইহানের আলমারি গুছানোর সময় আর নিজের ডায়েরী লুকানোর জায়গা খুঁজতে গিয়ে এটা পেয়েছে। বেশ ভিতরের দিকে ছিলো এটা। সাঁঝ ছবিটা পাশে রেখে দিয়ে আলমারি গোছানোতে মন দিলো। ইহান বাসায় নেই নাহলে ওর কাছেই জিজ্ঞেস করতো। কাজ শেষ হলে ইহানের মায়ের কাছে গেলো। আজকাল সে শাশুড়ীকে আম্মু বলেই ডাকছে। মালিহা বেগম রান্নাঘরে কাজে ব্যস্ত ছিলো। সাঁঝ ডাকলো,
—” আম্মু”
—” হুম কিছু বলবা?”
—” কিছু হেল্প করে দিবো?”
—” না হেল্প করতে হবে না। তোমার না ভার্সিটিতে যেতে হবে?”
সাঁঝ ইতস্ততভাবে ছবিটা সামনে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—” এই বাচ্চাটাকে?”
মালিহা বেগম হাতের কাজ রেখে ছবিটার দিকে তাকালো ভালো করে। বেশ কিছুক্ষণ পরে বলল,
—” জানিনা তো কে এটা! চিনতে পারছি না। কার ছবি? কোথায় পেলে?”
—” আমিও জানিনা এটা কার ছবি।”
—” কোথায় পেলে?”
সাঁঝ বিপদে পড়ে গেলো। কি উত্তর দেবে এখন? যদি বলে ইহানের আলমারিতে তাহলে বিষয়টা ভালো হবে না। এর থেকে একবারে ইহানকে জিজ্ঞেস করলেই ভালো হতো। আমতা আমতা করে বলল,
—” ওই পেলাম আর বাসার বাইরে পড়েছিলো”
মালিহা বেগম আবার কাজে মন দিতে দিতে বলল,
—” বাইরে পড়ে ছিলো তাহলে হবে হয়তো কারোর। কাজের লোক, দাড়োয়ান, ড্রাইভার তাদের কারোর নাহলে উড়ে এসেছে”
—” হ্যা হতে পারে”
—” তুমি রেডি হবা না? যেতে হবে তো! যাও রেডি হয়ে নাও”
—” হুম যাচ্ছি”
সাঁঝ ঘরে চলে আসলো। ইহানকেই জিজ্ঞেস করতে হবে কে এটা। ক্যালেন্ডারের দিকে চোখ যেতেই মনে হলো তাদের বিয়ের তিনমাস পার হয়ে গেছে এরমধ্যেই। এই কয়েকদিনে ইহান তার ভালো খেয়াল রেখেছে। বারান্দায় আটকে যাওয়ার পরে সে ট্রমার মধ্যে চলে গিয়েছিলো যেটা কাটাতে বেশ সময় লেগেছে। ইহান এই সময়ে অনেক খেয়াল রেখেছে। যদিও সাঁঝের এখন মানুষের উপর সন্দেহ হয়। আসলেই তারা খেয়াল রাখে, না শুধু নিজের প্রয়োজন? হঠাৎ দেখা যাবে ইহান তাকে একা করে মাঝ রাস্তার মধ্যে ছেড়ে চলে গেছে । এই সব কিছুর জন্যই সে মানসিকভাবে প্রস্তুত আছে।
,
,
,
?
ভার্সিটিতে এসে মাঠে আশিকের দেখা পেলো। অনেক দিন পরে দেখছে। ফাইনাল ইয়ারদের পরীক্ষাসহ নানা ব্যস্ততা চলছে। তাই ওদের দেখা পাওয়া যায় না। সাঁঝকে দেখেই আশিক বলল,
—” কি ম্যাডাম স্যার কই?”
সাঁঝ একটু রাগত্ব স্বরে বলল,
—” কে তোর ম্যাডাম?”
আশিক হাই তুলতে তুলতে বলল,
—” স্যারের বউকে ম্যাডামই বলে”
—” এখন স্যারের বউ পরিচয়টা বড় হয়ে গেলো? আমি যে আগে ফ্রেন্ড সেটা ভুলে গেলি?”
—” আরে না না এমনি বললাম। মজা করছিলাম”
—” হুম। তারপর বল পরীক্ষা কেমন হলো? তোরা চলে গেলে গ্রুপের দায়িত্ব কে নিবে?”
—” নিবে কেউ। তুইও নিতে পারিস। বর লেকচারার আর বউ ভার্সিটিতে মস্তানি করে। ভালো কম্বিনেশন”
আশিক হেসে দিলো। সাথে সাঁঝও হেসে দিলো। বলল,
—” হ্যা ভালোই কম্বিনেশন। স্যারের বউ গুন্ডি! আচ্ছা থাক ক্লাস আছে আমি গেলাম”
—” আচ্ছা”
পর পর দুটা ক্লাস করে ক্যান্টিনে এসে বসার সাথে সাথে ইহানের ফোন আসলো। ফোন তোলার সাথে সাথে ইহান বলল,
—” ৩০২ নাম্বার রুমে আসো এখনই”
সাঁঝ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—” কেন?”
—” আসতে বলছি আসো”
সাঁঝ কঠিন স্বরে বলল,
—” আমার কাজ আছে আমি আসতে পারবো না এখন”
ইহান হয়তো কিছুটা বুঝলো তার কথা। বলল,
—” কাজ শেষ হলে এসো।”
সাঁঝ ফোন কেটে দিলো। গ্রুপের কাজ শেষে প্রায় আধা ঘন্টা পরে সাঁঝ ৩০২ নাম্বার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এই রুমে ক্লাস হয়না। দরজাটা একটু টেনে দেওয়া আছে। ভিতরে ঢুকে দেখলো ইহান টেবিলে বসে কাজ করছে। রুমটা অন্ধকার। কেবল একটা জানালা খোলা আছে। সাঁঝ রুমের ভিতরে ঢুকে ইহানের সামনে থাকা হাই বেঞ্চে বসলো। ইহান একবার মাথা তুলে সাঁঝকে দেখে আবার কাজ করতে থাকলো। অনেকক্ষণ কিছু বললো না ইহান। এরপর সাঁঝ বিরক্ত হয়ে বলল,
—” আজব! ডেকেছেন কথা বলবেন না?”
ইহান কিছু বলল না। সাঁঝের মেজাজ খুব গরম হয়ে গেলো। রেগে বলল,
—” আপনি কি কিছু বলবেন না আমি চলে যাবো? আমাকে কি এই আধা অন্ধকার রুমে আপনার সামনে বসে থাকার জন্য ডেকেছেন?”
ইহান নিজের কাজ থামিয়ে হেঁটে সাঁঝের সামনে এসে দাঁড়ালো। সাঁঝের দিকে ঝুকে চোখের দিকে তাকালো। একদম ঠান্ডা দৃষ্টি। সাঁঝের কিছুটা অস্বস্তি হলো ইহানকে এতো কাছে দেখে। সাথে লজ্জাও পেলো। ইহান ঠান্ডা গলায় বলল,
—” খুব হাসছিলে না তখন মাঠের মধ্যে? এতো কিসের হাসি তোমার?”
সাঁঝের কিছুক্ষণ সময় লাগলো বুঝতে ইহান আসলে কিসের কথা বলছে। তারপর মনে পড়লো আজ মাঠে দাঁড়িয়ে আশিকের সাথে কথা বলছিলো। সে কিছু বলতে যাবে তার আগে ইহান আরেকটু ঝুকে আসলো। এবার ইহানের নিঃশ্বাস সাঁঝের মুখের উপর পড়তে শুরু করলো। ইহান বলল,
—” কৈ অন্য সময় তো এতো হাসতে দেখিনি! আমার সাথে থাকলেও তো মুখ গোমড়া করে থাকো। ও এমন কি বলেছে যে এতো আনন্দ হচ্ছিলো?”
ইহানের কথা, চোখের দৃষ্টি আর এতো কাছে আসা দেখে অপ্রস্তুত হয়ে গেলেও সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিয়ে ইহানের বুকে কনুই দিয়ে গুতা মারলো। ইহান সরে গেলে সাঁঝ বলল,
—” পেঁচার সাথে থাকলে মুখ পেঁচার মতো হয়েই থাকবে”
ইহান টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে বলল,
—” আমি পেঁচা?”
সাঁঝ বাঁকা হেসে বলল,
—” আমি কখন আপনাকে পেঁচা বললাম? আপনি যদি নিজেকে পেঁচা ভাবেন তাহলে আমার কিছু করার নেই। আর মাঠে যার সাথে কথা বলছিলাম সে আমার বন্ধু আশিক”
—” ভালোই সখ্যতা দেখছি ওর সাথে। প্রায় দুজনকে একসাথে দেখা যায়”
—” স্পেশাল বন্ধু বলে কথা। একসাথে তো দেখা যাবেই! আমাদের পরিচয় অনেক দিনের। এই তিন চার মাসের না”
—” তাতো বটেই। ক্লোজ ফ্রেন্ড বলে কথা!”
সাঁঝ আর কিছু বললো না। ইহানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ব্যাগ থেকে সেই বাচ্চার ছবিটা বের করে ইহানের দিকে ধরে বলল,
—” এটা কে?”
ইহান প্রথমে ছবিটা দেখতে না পেয়ে ভালো করে তাকাতেই তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। সাঁঝের কিছুটা অবাক লাগলো। কার ছবি এটা যে ইহানের মুখের রঙ এভাবে পরিবর্তন হবে?
ইহান সাঁঝের চোখের দিকে তাকালো। সাঁঝের শান্ত দৃষ্টিতে কৌতুক আর রহস্য খেলা করছে। মনে হচ্ছে ও এটার ব্যাপারে জানে। ইহান কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—” তুমি এটা কোথায় পেলে?”
সাঁঝ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
—” আপনার আলমারি গোছানের সময় পেয়েছি”
—” এটা আমার ভা….”
ইহানের কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল,
—” আমি আম্মুকে জিজ্ঞেস করেছি। উনি জানেন না এটা কে। আপনার কোন কাজিন নাকি? কিন্তু কাজিন হলে আম্মু কেন চিনবে না?”
ইহান সাঁঝের দিকে তাকালো। এই সাঁঝ বজ্রপাতে ভয় পাওয়া ভিতু না সাঁঝ না। তেজী মেয়ে। এই সাঁঝ অনেক কিছু করতে পারে। কোন কথা ধরে অনেক দূর যেতে পারে। সাঁঝ যখন নিজের এই রূপে থাকে তখন তাকে থামানো কঠিন কাজ। ইহান বলল,
—” এটা আমার একটা বন্ধু। ওর ছোটবেলার একটা ছবি আমার কাছে আছে। আর আমার ছোটবেলার একটা ছবি ওর কাছে আছে”
—” ও। কিন্তু একপাশে ছেড়া কেন?”
—” আমি জানিনা। যখন দিয়েছিলো তখন ছেড়াই ছিলো”
—” আপনি জিজ্ঞেস করেননি কেন ছেড়া? মনে হচ্ছে পাশে যে ছিলো সে এই বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ছিলো”
—” জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু তেমন কোন উত্তর দেয়নি। পাশে কে কোলে নিয়ে ছিলো সেটা জানিনা”
—” আচ্ছা”
সাঁঝ ইহানের হাতে ছবিটা দিয়ে দিলো। বলল,
—” আমি আসি এখন আমার ক্লাস আছে। তারপর বাসায় যাবো”
—” একাই যাবা নাকি আমি রেখে আসবো?”
—” না আপনাকে যেতে হবে না। আপনার কাজ আছে তো। আমি একাই যেতে পারবো।”
—” সাবধানে যেও”
—” হুম আমি আসি”
রুম থেকে বের হওয়ার সময় সাঁঝের উড়ো ভাবে মনে হলো আচ্ছা বাচ্চাটা কি ইহান? আবার মনে হলো, ইহান কিভাবে হবে? ইহান হলে আম্মু চিনতো না? কি যে ভাবছি সে!
,
,
,
?
ইহান সাঁঝের দেয়া ছবিটার দিকে তাকিয়ে নিজের ছোটবেলার কথা মনে করতে শুরু করলো। ছবিটা অনিকের। আর পাশে অনিককে কোলে নিয়ে সে বসে ছিলো। নিজের অংশটুকু কেটে সে বাদ দিয়ে রেখেছে।
অনিক তার চাচাতো ভাই। বড় চাচার প্রথম সন্তান। কিন্তু অনিকের কথা পরিবারের মধ্যে চাচা, সে আর তার বাবা ছাড়া কেউ জানেনা। ইহানের দাদু খুব মেজাজই, রাগচটা আর কড়া মানুষ ছিলেন। তাই উনি বিয়ের আগে ভালোবাসাকে সমর্থন করতেন না। বড় চাচা একজনকে ভালোবাসতো। সেই মেয়েটির সাথে বিয়ে হওয়া সম্ভব ছিলো না। তাই চাচা লুকিয়ে বিয়ে করে নেয়। তার বাবা বয়সে চাচার থেকে ছোট হলেও বিয়ে আগে হয়েছিলো। তাই তার জন্মও হয়ে গিয়েছে ততদিনে। এরপর ইহানের যখন চার-পাঁচ বছর বয়স তখন অনিকের জন্ম হয়। তখনও চাচার বিয়ের খবর কেউ জানতো না। অনিকের জন্মের সময় অনিকের মা মারা যায়। তখন বড় চাচা ভীষণ বিপদের পড়ে। কাউকে কিছু বলতে পারবে না বিয়ের ব্যাপারে। পরিবার থেকে অনেক ঝামেলায় পড়বে। এবং সম্ভাবনা ছিলো যদি আশেপাশের মানুষ অনিকের কথা জানতে পারে তাহলে অনিকের মায়ের নামে অনেক বাজে কথা বলবে। কারণ সবটাই সবার থেকে লুকানো ছিলো। অনিকের মায়ের পরিবারের দিক থেকেও লুকানো ছিলো সব। আর অনিকের নানার বাসার লোকজন গরিব হওয়ার সেখানে অনিককে রাখা সম্ভব ছিলো না। তখন বড় চাচা অনিককে একটা শিশু নিবাস কেন্দ্রে রাখতো। দিনের বেলাতে গিয়ে অনিকের দেখা শোনা করতো। ছোট বাচ্চার সাথে খেলার জন্য পার্কে ঘোরার নাম করে ইহানকে নিয়ে যেতো। বাড়ির কেউ ইহানের যাওয়া নিয়ে আপত্তি করতো না। ইহান যেয়ে খেলতো অনিকের সাথে। বড় চাচা মানা করে দিয়েছিলো যাতে বাড়ির কাউকে সে কিছু না জানায়।
এরপর দাদু বড় চাচার সাথে রাগারাগি শুরু করে এতোদিনেও বিয়ে না করার জন্য। আর জোরাজুরি করে বড় চাচির সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। তখন অনিককে নিয়ে আরেক সমস্যা হয়। বিয়ের পরে বড় চাচার পক্ষে প্রতিদিন ওখানে গিয়ে খেয়াল রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। তাও উনি ইহানকে সাথে নিয়ে যেতো। ইহান খেলা করতো, ঘুম পাড়াতো আর বাকি সব কাজে সাহায্য করতো। সে নিজে অল্প বয়সী হলেও বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করতো। এরপর যখন অনিকের বয়স এক বছরের কাছাকাছি তখন শিশু নিবাস কেন্দ্রে এক নিঃসন্তান দম্পতি আসে বাচ্চা এডপ্ট করার জন্য। তারা অনিককে পছন্দ করে। বড় চাচা খোঁজ খবর নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করে এটাই হয়তো ঠিক হবে। অনিককে নিজের সাথে রাখতে পারবে না। হাজারটা প্রশ্ন আসবে অনিকের জন্ম, পরিচয়, মায়ের উপর। এর থেকে অন্য একটা পরিবারে ভালো থাকলে ভালো হবে। অনেক কষ্টে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। অনিককে যারা এডপ্ট করেছিলো তারা ভীষণ ভালো মানুষ। তাই এরপরের আড়াই বছর পর্যন্ত বড় চাচা আর সে অনিকের সাথে দেখা করতে প্রায় প্রতিদিন যেতো। ইহানের স্কুলের পরে ঘুরতে যাওয়ার নাম করে বা বড় চাচার সাথে থাকার নাম করে ওখানে যেতো। বাড়িতে তেমন কেউ জিজ্ঞেস করতো না কোথায় ছিলো তাই ইহানকে তেমন মিথ্যা বলতে হয়নি।
কিন্তু আড়াই বছর পরে বড় চাচা ঠিক করেন উনি আর অনিককে দেখতে যাবেন না। অনিক বড় হচ্ছে। আর তাছাড়া নতুন মা-বাবাও হয়তো বড় চাচার প্রতিদিন যাওয়া পছন্দ করবে না। কিন্তু ইহান যাওয়া বন্ধ করলো না। অনিককে ছাড়া তার দিন কাটতো না। ওকে একপ্রকার নিজের হাতে খাইয়েছে, ঘুম পাড়িয়েছে, খেলা করেছে। কিভাবে থাকবে? তাই বড় চাচা যাওয়া বন্ধ করলেও ইহান যেতো। চাচা যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতো বাড়িতে বলে। আর অনিকের নতুন বাবা-মাও তাকে পছন্দ করতো। নিজেদের বড় ছেলের মতো দেখতো। একটু বড় হওয়ার পরে ইহান নিজেই চলে যেতো। ছোট বেলা থেকেই সে স্বাধীনতা পেয়েছে। তাই অনিকের কাছে যেতে কোন সমস্যা হতো না। অনিক আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলো আর তাকে নিজের বড় ভাই বা বিগ ব্রো হিসেবে জানতো।
আজ থেকে সাত-আট বছর আগে যখন ইহান উনিশ-বিশ বছরের ছিলো তখন তার বাবা সবটা জানতে পারে। এবং বড় চাচার সাথে এটা নিয়ে রাগারাগি করে। তার সাথেও রাগারাগি করে কেন যোগাযোগ রেখেছে অনিকের সাথে? যদিও ব্যাপারগুলো শুধু তাদের তিনজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। তাও ইহান সেবার বাবার রাগ দেখে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। এবং কথা দিয়েছিলো আর অনিকের সাথে কোনপ্রকার যোগাযোগ রাখবে না। সেই থেকে অনিকের সাথে সেভাবে কোন যোগাযোগ নেই। যোগাযোগ বন্ধ করার কিছু দিনের মধ্যে অনিকরা এই শহর ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যায়। কিন্তু মন কি মানে? তাই ইহান বড় চাচার কাছে ফোন করে অনিকের ব্যাপারে খোঁজ নিতো। যদিও বড় চাচা তেমন কিছু জানতো না। শুধু কেমন আছে, পড়ালেখা করছে, পুলিশের চাকরি পেয়েছে এগুলো অনিকের মায়ের কাছ থেকে জেনেছিলো। সেগুলোই ইহানও জেনে নেয়। এরপর তো সে দেশের বাইরে চলে যায়। আর আসার বেশ কিছুদিন পরে শোনে অনিক আহত মিশনে গিয়ে।
ইহান পুরানো ঘটনাগুলো মনে করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সাঁঝ অনিকের অনুভুতির সাথে খেলা করেছে একবছর ধরে। এরপর অনিককে ভেঙে দিয়েছে। সাঁঝের শাস্তিটাও সে একই ভাবে দিবে। সময় ইনভেস্ট করবে সাঁঝের পিছনে। তারপরে ভেঙে ছেড়ে দিবে।
কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই সাঁঝের সাথে কিছু মুহুর্তে, সাঁঝের কিছু ছবি চোখের সামনে চলে আসে। ওর বুকে মাথা রেখে কান্না করা, ভরসা পেয়ে কাঁধে মাথা রাখা, শাড়ি পরে নিজের বউ রূপে দেখা, যখন রেগে যায় সেই তেজী রূপে মুগ্ধ হওয়া , ভেজা চুল যখন বিরক্ত হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মোছে সেই স্নিগ্ধ রূপ দেখে স্নিগ্ধতার পরশ অনুভব করা, “কোথায় ছিলেন আপনি?”এই অভিযোগের সুরসহ সবটা দেখতে আর কানে শুনতে পায়। সাঁঝের সামনে গেলে ভুলে যায় কি উদ্দেশ্য তার। নিজেকে বারবার মনে করিয়ে দিতে হয় সাঁঝ কি করেছে অনিকের সাথে আর সে কি শাস্তি দেয়ার জন্য সাঁঝকে বিয়ে করেছে! কেন বারবার নিজেকে মনে করাতে হয়? (চলবে)
(ইহানের মনে সাঁঝের ব্যাপারে এগুলো কেন আসছে? কেন নিজেকে রিমাইন্ডার দেয়া লাগে? আপনাদের কি মনে হয়?)