#কাননবালা!
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ৩২
নীতু বিরক্ত মুখে বসে আছে। আর সেতু নিঁখুত হাতে সাজিয়ে দিচ্ছে বোনকে।মূর্তির মত বসে থাকতে থাকতে নীতুর পিঠ কোমড় ব্যথা করছে।নীতু আর না থাকতে পেরে বলেই ফেললো,”কি করছিস সেতু?বিয়েটা আমার না।সঙ সাজানো বন্ধ কর।”
সেতু ধমকে ওঠে বলে,”চুপ করো আপি।একটা প্রোগ্রামে যাচ্ছো আর সাজবে না, এটা কোন কথা হলো?”
ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে নীতু আবার নড়ে চড়ে ওঠে।সেতু নিজেও চোখ মুখ কুঁচকে বলে,”আপি এখন একটুও নড়বে না।আইলানার দিবো।…..আহা!চোখ পিটপিট করছো কেন?”
নীতু পারে না কেঁদে ফেলে।বড় স্যারের একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র কন্যার বিয়ে হয়েছে দুদিন হলো।আজ সে উপলক্ষে অফিসের কর্মকর্তাদের জন্য একটা পার্টি রেখেছে।সেখানের ইনভাইটেশন রক্ষা করতে যেতে হচ্ছে।আর তার জন্যই সেতু আর সাথি মিলে তাকে সঙ সাজাচ্ছে। সাথি বেশি নড়াচড়া করতে না পারলে কি হবে বসে বসে সেতুকে ইন্সপায়ার করছে!নীতু করুণ মুখে সাথির দিকে তাকায়। তাতে অবশ্য কোন কাজ হলো না।সাথি সেই করুণ দৃষ্টি উপেক্ষা করে বড়সড় ভেঙচি কাঁটলো।
লিপস্টিক হাতে নিতেই সেতুর পেট গুলিয়ে আসে!নাকে ওড়না চেপে নীতুর ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে দেয়।তাতেও শেষ রক্ষা হয় না।কোন ধরনের স্মেল সেতু সহ্য করতে পারে না।হুড়মুড়িয়ে বেসিনের সামনে গিয়ে পেটের শেষ দানা পর্যন্ত বমি করে ফেলে।নীতু সেদিকে একবার তাকিয়ে নিজেকে আবার আয়নায় দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে!কি করেছে সেতু?তাকে চেনাই যাচ্ছে না!এত গাঢ় লিপস্টিক কেন দিয়েছে মেয়েটা?আর চোখের উপরই বা এগুলো কি?আই ল্যাশ তো নয় মনে হচ্ছে ভাড়ি কিছু দিয়ে রেখেছে।নীতু লিপস্টিক মুছতে নিলে সেতু এসে ধমক দেয়! নীতু অসহায় চোখে বোনের দিকে তাকায়। সেতু বিছানায় ধপাস করে বসে বলে,”আপি পেটের ভিতর কি ধরেছি বলো তো?আমি তো বমি করতে করতেই শহীদ হবো!পেটে বসেই এত বাঁদরামি করছে, দুনিয়ায় এসে কি করবে?”
নীতু ঝরঝর করে হেসে দেয়।সেতুর মুখে হাত বুলিয়ে বলে,”দেখতে হবে না কার সন্তান?মা কি কোনদিক দিয়ে কম ছিল নাকি?”
সেতু প্রত্যুত্তরে ভেঙচি কাঁটে।তারপর বলে,”দেখো তো সাথিপু, আপিকে কেমন লাগছে?”
সাথি তার ফোলা পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,”আজকে অভীক বাবু কুপোকাত হয়ে যাবে নির্ঘাত!”
নীতু চোখ কুঁচকে আবার নিজেকে আয়নায় দেখে।বেবি পিংক রঙের একটা জামদানী, মেচিং ডিপনেকের ব্লাউজ, ভারি মেকাপ,কানে ঝুমকো,খোঁপার খাঁজে বড়ই মোহনীয় ভাবে বসে আছে রক্তগোলাপ! বেবি পিংক রঙের শাড়ি আর গালের গোলাপি ব্লাশ মিলে মিশে নীতুকে লাজুক লতায় রুপান্তরিত করেছে! নীতু চুপিসারে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে!
কে জেনো বলেছিলো?কালো মেয়েদের সাজলে মায়াবতী লাগে!আজ নীতুকে সেরকমই মায়াবতী লাগছে!নীতু হাতে পার্স তুলে নিতেই সাথি উঠে দাঁড়ায়। গোলাপি আর সাদা মিলিয়ে দু হাত ভর্তি চুড়ি পড়িয়ে দেয়! নীতুর দিকে তাকিয়ে সাথি মুরুব্বিদের মত বলে ওঠে, “থু থু থু সে বাদে কারো নজর না লাগুক!”
নীতু তা শুনে চোখ গরম করে তাকায়। কিন্তু আইল্যাশের কারণে সঠিকভাবে চোখ গরম দিতে পেরেছে কিনা এ নিয়ে নীতু বড়ই শঙ্কিত!
নীতু দরজা পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।সেতু আর সাথির দিকে ফিরে বলে,”আমি না যাই?দুটো অসুস্থ মানুষকে ঘরে রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না!”
সেতু কপট রাগ দেখিয়ে বলে,”সাথিপু, আপিকে যেতে বলো….আমার আবার বমি আসছে!”
সাথি নীতুর ঢঙ দেখে হেসে দেয়।
***********
ওয়েস্টার্ন ক্লাবে জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠান হচ্ছে। নীতু যখন উবার থেকে বের হলো চারদিকে এত আলোকসজ্জা ও লোক দেখে ভীষণ অস্বস্তিতে পড়লো।নীতুর বারবারই মনে হচ্ছে, সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে!ভীষণ অদ্ভুত লাগছে!এতো সাজুগুজু করায় মনের মধ্যেও খচখচ করছে!
হুট করেই পলাশ এসে সামনে দাঁড়ালো। নীতু মৃদু হাসলো। পলাশ বললো,”মাই গড নীতু! তোমাকে তো চেনাই যাচ্ছে না!”
প্রত্যুত্তরো নীতু মৃদু হাসলো।কিছুটা ঘুরে ডানে তাকাতেই নীতু চমকে উঠলো!অভীক তাকিয়ে আছে রুক্ষ দৃষ্টিতে!সেই রুক্ষ দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলাতেই নীতু কেঁপে উঠলো! কি দুর্ভেদ্য চাহনী।যেন এখনই পড়ে ফেলবে নীতুর ভেতর -বাহির সবটা!নীতু সঙ্গে সঙ্গেই দৃষ্টি সরিয়ে নিল।
সাদা ব্লেজার,ডিপ স্কাই শার্ট,সিলভার রঙের ঘড়ি,চুলে একপাশে সিথি করে ব্যাকব্রাশ সেট করা,গালে ট্রীম করা খোঁচা খোঁচা দাড়ি…..পুরোই রমনীঘায়েল করা লুক। অভীক একহাত পকেটে পুরে কিছুটা এলিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো বড় স্যারের সাথে! বড় স্যারের সাথে কথা বললেও চোখের দৃষ্টি বারবার ঘুরে ফিরে আটকে যাচ্ছে কৃষ্ণবতীর দিকে! কি সাঙ্ঘাতিক শাড়ি পরেছে মেয়েটা?ফিনফিনে জামদানী শাড়িতে স্পষ্ট নীতুর শরীরের ভাঁজ!আর এত ডিপনেকের ব্লাউজই বা পড়তে হবে কেন?আর কানের পাশে টকটকে লাল গোলাপ তো নয় যেন রেড সিগনাল! আর ঠোঁটেই বা এত রঙ ঘসেছে কেন? উফফ!অসহ্য!
নীতু বর কনেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে হলরুমের এককোণে গিয়ে দাঁড়ায়।হাতে একগ্লাস কোল্ড ড্রিংস।ঠিক তখনই অভীক নিঃশব্দে এসে পাশে দাঁড়ায়! নীতু চমকে ওঠে! অভীক শান্তস্বরে বলে,”পায়ের ব্যথা কেমন?”
“আগের থেকে বেটার।”….. ক্ষীণ স্বরে বলে নীতু।মুহুর্তেই চারপাশে ভীষণ অস্থিরতা অনুভব করে নীতু।অভীক পাশে আছে বলেই কি?
অভীক তাকিয়ে আছে নীতুর দিকে গভীর দৃষ্টি মেলে।সেই প্রখর চাহনি দেখে নীতুর হাঁসফাঁস লাগে!চোখের দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে আসে। অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে আসে কণ্ঠমণি!হাত পা ঝিনঝিন করে!গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে!এভাবে তাকিয়ে আছে কেন মানুষটা?চোখের দৃষ্টি দিয়েই কি মেরে ফেলতে চায়? নীতু বিড়বিড় করে বলে, ” প্লিজ এভাবে তাকাবেন না মি.অভীক…ঠিকঠাক নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা..দমবন্ধ হয়ে মরে টরে যাই যদি?তখন?”
গ্লাসে চুমুক দিয়ে শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসা গলা ভিজায় নীতু!তাতেও তৃষ্ণা মেটে না!বরং বেড়ে যায় হাজার গুণ।
অভীক সবটাই পর্যবেক্ষণ করে।শুকিয়ে আসা ঠোঁট বারবার জিহ্বা দিয়ে ভেজানো!অনবরত জোর করে ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত রাখা।বা কাঁপতে থাকা হাতে কাঁচের গ্লাস শক্ত করে ধরা!অস্বস্তিতে নাকের উপরে জমে থাকা মুক্তোর মত বিন্দু বিন্দু ঘাম…. সবটাই অভীক শান্ত চাহনিতে দেখে।কখনো বা অসভ্য দৃষ্টি এসে আটকে যায় টকটকে রাঙানো শুষ্ক ঠোঁট জোড়ায়!
অভীক মনে মনে স্বীকার করতে বাধ্য হয়, আজ নীতুকে সত্যিই অন্যরকম লাগছে!একদম অন্যরকম সুন্দর! হ্যা কালো একটা মেয়ের সৌন্দর্য আজ অভীককে ক্ষণে ক্ষণে মুগ্ধ করছে।হার্টবিট বাড়িয়ে দিচ্ছে! অভীক তাতে বিন্দু মাত্র অবাক হচ্ছে না।এই যে চারপাশে নীতুর থেকেও হাজার গুণ সুন্দরী ললনা ঘুরছে ফিরছে তাতে অভীকের কোন মাথা ব্যথা নেই! অভীক শুধু চায় নীতু তাকে দেখুক,লজ্জায় নুয়ে পড়ুক,একটু হাসুক…বা বুকের কাছে মুখ লুকিয়ে কাঁদুক! শুধু নীতু….আর কেউ নয়!আর কারো কখনোই সেই অধিকার হবে না!
‘সৌন্দর্য্য বিষয়টা সম্পূর্ণ নির্ভর করে ভালোবাসার উপর!আমাদের যখন কারো প্রতি প্রবল ভালোবাসা কাজ করে, শুধুমাত্র তাকেই তখন অধিক সৌন্দর্য্যের অধিকারী মনে হয়!পৃথিবীর চোখে সেই মানুষটা যতই অসুন্দর হোক তবুও কিছু যায় আসে না আমাদের! সকল সৌন্দর্য্য ফিকে হয়ে যায় সেই ভালোবাসার সৌন্দর্য্যের কাছে!’
তাই কৃষ্ণবতী নীতুও অভীকের কাছে সৌন্দর্য্যের প্রতিমা! অভীকের গাঢ় চাহনি সহ্য করতে না পেরে একসময় নীতু বলে ওঠে, “আমার কিন্তু ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে,এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন মি.অভীক?”
“হোক অস্বস্তি, তবুও আমি তাকাবো।আমার চোখ দিয়ে আমি কোন দিকে তাকাবো তা নিশ্চয়ই আপনি বলে দিবেন না মিস নীতু?নাকি কন্ট্রোল করতে চাইছেন আমাকে?”…….
অভীকের ত্যাড়া কথায় নীতুর গা জ্বলে ওঠে।চোখ মুখ গরম করে তাকিয়েও ওই প্রখর মাদক দৃষ্টি দেখে কিছুই বলতে পারে না আর!তাই হালছাড়া নিঃশ্বাস ফেলে সেখান থেকে প্রস্থান করে।
নীতুর সামনে প্লেট ভর্তি খাবার কিন্তু নীতু কিছুই খেতে পারছে না।কারণ তার পাশের চেয়ারে বসে আছে পলাশ আর অপজিটে বসে আছে অভীক।যে এখন ক্ষণে ক্ষণে জল্লাদ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে নীতুর দিকে, কে বলবে?যে একটু আগেও এই মানুষটা কতটা মায়া নিয়ে তাকে দেখছিল।আর এখন কেমন কঠিন মুখে খাবার গিলছে। পলাশ ব্যস্ত কন্ঠে বলে,” নীতু তুমি তো কিছুই খাচ্ছো না?ব্যাপার কি?”
নীতু বিড়বিড় করে বলে,”ব্যাটা কারণটা তুই….একটু চুপ থাক….আমি তো চোখের দৃষ্টিতেই আজ খুন হবো।”
নীতু জোর করে হাসলো পলাশের দিকে তাকিয়ে। পলাশ কি বুঝলো কে জানে, একবার অভীকের দিকে তাকিয়ে আর কোন কথা বললো না।পলাশ মনে মনে অভীককে ভাগ্যবান পুরুষ বলে স্বীকার করে।কেন করবে না?নীতুর মত একটা মেয়ে যার হতে পারে সে তো অবশ্যই ভাগ্যবান!পলাশের তাতে অবশ্য কষ্ট হয় না।শুধুমাত্র আফসোস হয়…..নীতুর ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে পলাশ কেবল নীতুকে চেয়েছিল….. আর অভীক তো নীতুকে ভালোবেসেছে।চাওয়ার ভার ভালোবাসার থেকে কখনোই বেশি হতে পারে না!
নীতু সবে খেতে শুরু করেছে তখনই মোবাইলে কল বেজে উঠলো,সেতু কল করেছে।কলটা রিসিভ করতেই সেতু হড়বড় করে বলে, “আপি সাথিপুর পেইন উঠেছে….কেমন চিৎকার করছে আমি এখন কি করবো?”
নীতু আৎকে উঠে দাঁড়িয়ে পরে।ব্যগ্র কন্ঠে বলে,”চিন্তা করিস না।আমি আসছি।পাশের আন্টিকে ডাকে দে।আমি এখখুনি আসছি।”…..বলে নীতু উদ্ভ্রান্তের ছুঁটতে শুরু করে। অভীকও উঠে নীতুকে ফলো করে।
অভীককে এমন করে চলে যেতে দেখে পলাশের পাশ থেকে রিপা বলে, “আমাদের অভীক স্যার কি এমন দেখেছে নীতুর মধ্যে, পলাশ ভাই?আপনিই বলুন নীতুকে কোনদিক দিয়ে মানায় স্যারের পাশে?”
পলাশ সু্প্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”তুমি বুঝবে না রিপা।সবার তো আর জহুরির চোখ থাকে না!”
রিপা বুঝতে পারলো না পলাশ কি ইঙ্গিত করছে।
************
নীতু রোডে দাঁড়িয়ে অনবরত গাড়ি থামানোর চেষ্টা করছে।এর মধ্যেই চিন্তায় কেঁদে ফেলেছে একচোট । অভীক দৌড়ে এসে নীতুর পাশে দাঁড়ায়। ধমকে ওঠে বলে,”কখন থেকে ডাকছি……কি হয়েছে?আমাকে বলুন?”
নীতু শাড়ির আঁচল হাতের মুঠোয় নিয়ে কপালে ও ঘাড়ের ঘাম মুছে।অস্থির কন্ঠে বলে,”সাথির পেইন উঠেছে। একটা গাড়িও পাচ্ছি না। আমাকে দ্রুত পৌছাতে হবে।”
অভীক আর কিছু না বলে নীতুর হাত ধরে রোড ক্রসিং করে।রাইট লাইনে দাঁড়িয়ে হাতের ইশারায় একটা গাড়ি থামিয়ে তাতে উঠে পড়ে। নীতু অনবরত ঘামছে আর
চোখের পানি ফেলছে।অভীক বিরক্ত কন্ঠে বলে,”এত হাইপার হবেন না মিস নীতু?এটাতো স্বাভাবিক প্রসেস!”
আসলে অভীকের নীতুর কান্না সহ্য হচ্ছে না একদমই ।
নীতু ফের কাঁদতে কাঁদতে বলে, “সব দোষ আমার মি.অভীক।আমার খেয়াল রাখা উচিত ছিল।রিপন কতটা ভরসা করে আছে আমার উপর।আজ কেন আসলাম এখানে আমি?না আসলে তো আর সাথিকে এত কষ্ট পেতে হত না!”
অভীক শান্ত স্বরে বলে,”সবসময় নিজেকে দোষারোপ করা বন্ধ করুন মিস নীতু! সকল দোষে নিজেকে দন্ডায়িত করা বন্ধ করুন। সকল সমস্যার কারণ কখনো একজন মানুষ হতে পারে না।যেটা ঘটার সেটা ঘটবেই তাতে আপনার থাকা বা না থাকায় কিছু যায় আসবে না।”
নীতু আর কিছুই বললো না। বাসার সামনে আসতেইই নীতু আর অভীক দৌড়ে সিঁড়ি পাড়ালো।রুশিয়া বেগম বসে আছেন ব্যথায় কাতর সাথিকে নিয়ে। পাশে সেতু আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাথির দিকে। হাতে মোবাইল যেখানে রিপন অনলাইনে।অনবরত কাঁদছে রিপন।সাথির স্থানে নিজেকে আবিষ্কার করতেই… সেতুর কি হলো কে জানে হুট করে তাজের মুখটা মনে পড়ে গেলো।আচ্ছা, তাজ কি তার জন্য এমন করে কখনো কাঁদবে?তাকে হারানোর ভয়ে এমন ছটফট করবে?….. সেতুর কান্না এসে গেলো।তাজ কখনোই এমন কিছু করবে না!বরং মুক্তির নিঃশ্বাস ছাড়বে!
নীতুকে দেখেই সাথি আরো ভেঙে পড়লো যেন।অভীক একমুহূর্ত দেরি করলো না।সাথিকে কোলে তুলে নিল।পাশে নীতুও চললো।রুশিয়া বেগম গুছিয়ে রাখা একটা ব্যাগ নিয়ে নিজেও ওদের সাথে বেড়িয়ে পড়লেন।সেতু থেকে গেলো।নিজেকে কেমন ভারশূন্য লাগছে সেতুর!এমন করে কেন কেউ ভালোবাসলো না তাকে?এই প্রশ্ন হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে তুললো মুহুর্তেই!
রাত একটায় ফুট ফুটে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিল সাথি।নার্স যখন নীতুর কোলে এনে বাচ্চাটিকে দিলো নীতু খুশিতে কেঁদে ফেললো। রুশিয়া বেগম মনে মনে শোকরানা দোয়া পড়লেন।নীতু চোখ জল মুখে প্রশস্ত হাসি ঝুলিয়ে বললো,”মি.অভীক, আপনি কি আজান দিতে পারবেন? ”
অভীকও ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো।চোখের দৃষ্টি আটকে আছে নীতুর উপর।সদ্য জন্মানো ফুটফুটে এক শিশু নীতু পরম আদরে কোলে জরিয়ে রেখেছে।বাচ্চাটিও কাঁদছে নীতুও কাঁদছে….কি অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য! অভীকের ইচ্ছে করছে বাচ্চাসহ নীতুকে বুকের সাথে জরিয়ে ধরতে।অভীক বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “নীতু…. আমার কাননবালা! আমাদের যেদিন ফুটফুটে এরকম একটা বেবি হবে তখনও কি তুমি এমন করেই কাঁদবে?নাকি খিলখিল করে হাসবে?”
অভীক যখন নীতুর পাশে দাঁড়িয়ে বাচ্চাটির কানে আজান দিলো, সেই দৃশ্য দেখে রুশিয়া বেগমের চোখ জুড়িয়ে গেলেন।বুকের মধ্যে শীতল বাতাস বইতে লাগলো।তার ইচ্ছে হলো এই মুহুর্তটা বাঁধিয়ে রাখতে…… এরকম সুন্দর মুহুর্ত সব সময় আসে না!
নীতু বসে ছিল ক্লিনিকের করিডোরে।সাথি আর বাচ্চা দুজনেই ঘুমাচ্ছে। কেবিনে রুশিয়া বেগম আছে।ঠিক তখনই একজন নার্স এসে বললো,”দেখি ম্যাম আপনার পা টা?”
নীতু চমকে তাকালো।অভীক ধপাস করে পাশে বসে বললো,”পায়ের ব্যথা সারেনি তারউপর শাড়ি পড়ে ছুটাছুটি করেছেন…..নার্সকে দেখতে দিন।সমস্যা হলে তারা ক্লিন করে দিবে।”
নীতু এই প্রথম অভীকের দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে চাইলো।পায়ে ব্যথা করছিল কিন্তু নীতু তা প্রকাশ করেনি।তারপরও মানুষটা দিব্যি বুঝে ফেলেছে! এতটা কেয়ার পাবার আদৌ যোগ্য সে?
নার্স মেয়েটা ক্লিন করে চলে গেলো।অভীক চোখ বুঝে মাথা এলিয়ে বসে আছে।নীতু সেদিকে একমনে তাকিয়ে রইলো।আচ্ছা? আমাদের জীবনে সঠিক মানুষগুলো কেন এত দেরি করে আসে?আমরা কেন সবসময় ভুল মানুষগুলোকেই সর্বপ্রথম ভালোবেসে ফেলি……?প্রহরশেষে কেন সঠিক মানুষটার জন্য একরাশ দীর্ঘশ্বাস আর আফসোস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়?
চলবে,
ইগনোর করবেন না,লেখাটা পড়ার অনুরোধ রইলো।
দিনশেষে সবার অভিযোগ কেন লেট করে
গল্প দেই?উত্তরটা একটু ব্যাখ্যা করে দেই।যদিও ব্যক্তিগত কথা বলতে চাইছিলাম না।পরিবারের বড় মেয়ে আমি তারউপর বড় বউ।সবদিক আমাকে দেখতে হয়।সঙ্গী হিসেবে যখন বর থাকে দূরে সব কাজ নিজেকে করতে হয় তখন বুঝা যায় ব্যস্ততা কাকে বলে?একটা মেয়ে হয়ে আমাকে পুরুষের মত(বরের) কাজ করতে হয়।আবার ঘর সামলাতে হয়।কখনো মা হিসেবে দায়িত্ব পালন করি,কখনো কারো বউ,কারো মেয়ে,কখনো বাড়ির বড় বউ। তারপর নিজের পড়াশোনা চালাতে হয়।এরপরে নিজের জন্য সময় থাকে না।প্রশ্ন উঠতে পারে তবে কেন লিখছি।তবে বলবো এই এতটুকু জায়গায় আমার নিজস্ব জগত!এখানে কারো ভূমিকা থাকে না।কারো পরিচয় এখানে খাটে না! পাঠক হিসেবে আমিও চাই তাম দ্রুত পর্ব পড়তে।কিন্তু আমি অপারগ। ঘরে বাহিরে উভয় সথানে ছুটে দম ফেলবার সময় পাই না, তাই রাত হলে ঘুমিয়ে পড়ি।আমি কি লিখি নিজেই জানি না,তাতেও আপনারা অনেক ভালোবাসা দেখান।সত্যিই আলহামদুলিল্লাহ! আপনাদের আমি দুঃখিত বলবো না।কিন্তু এতটুকু বলবো যারা আমার সিচুয়েশন বুঝেন তারা পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করবেন। আমি লিখবোই……..
আজ নীতুর শহর খুলনা এসেছি। নীতুকে অনুধাবন করতে চেয়েছি….
ছোট বোনটাকে দেখতে এতদূর আমাকে ছুটে আসতে হয়েছে।লং জার্ণি করেও গল্প দিলাম।পড়ে অনুভূতি জানাবেন।ব্যস্ততার কারণে কারো মন্তব্যের জবাব দেই নি।এত সুন্দর মন্তব্য পড়ে আমি সত্যিই আপ্লূত! ইনশাআল্লাহ কাল সবার রিপ্লাই দিবো।