#কাননবালা!
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ২৮
তাজ হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কপাল ও ঘাড় বেয়ে চিকন ঘামের ধারা নামছে!স্নায়ুযুদ্ধ চলছে অবিরত!
নীতু হাসছে কিন্তু চোখ হাসছে না মেয়েটার, আশ্চর্য! চোখের চাহনি কেমন রুঢ়!
নীতু হেসে পুনরায় বললো,”উঠছো না কেন তাজ?চলো এখান থেকে মার্কেটে তারপর সোজা কাজি অফিস!”
তাজ নিজের হাতের দিকে তাকালো। নীতু এখনো ধরে আছে হাতটা!তাজ বড়সড় দম ফেলে বললো,”কেনো হেয়ালী করছো নীতু?”
নীতু হাতটা ছেড়ে দিলো।পুনরায় চেয়ারে বসে সরাসরি তাজের চোখে চোখ রেখে বললো,”হেয়ালী?তাও আমি?”
“হ্যা করছো!এবং হেয়ালীর পাত্র হিসেবে বেছে নিয়েছো আমাকে!”……..তাজ চোখে মুখে অসন্তোষ ফুটিয়ে বললো।
নীতুর মুখ থেকে এবার হাসি মুছে গেলো।চোখের দৃষ্টি কঠিন করে বললো,” আর তুমি করছোটা কি?তুমি হেয়ালী করছো না?নিজের জীবনটাকে তো তছনছ করছোই সাথে সেতুর জীবনটাও শেষ করে দিচ্ছো! ”
তাজ চোখের দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো নীতুর মুখ থেকে। একঝাঁক অভিমান নিয়ে কাচের দেয়াল গলে বাহিরে দৃষ্টি ফেললো।
নীতু তাকিয়ে রইলো।পুরুষের অভিমানী রুপ কি ভয়ংকর সুন্দর হয় তা আজ বুঝতে পারলো!
নীতু নরম স্বরে বললো,” আমার দিকে তাকাও তাজ।”
তাজ তাকালো না। নীতু ফের বললো,”তাকাও। মুখ ঘুরিয়ে রাখলে কথা বলবো কি করে?”
তাজ তাকালো। নীতু বললো,”এভাবে চলতে পারে না তাজ।একটা সমাধানে আসা দরকার।জোর করে তো আর কিছু হয় না।তাই সমাধান হিসেবে চলো বিয়ে করে ফেলি।তাহলে অন্তত তুমি আমি ভালো থাকবো।একজন কষ্ট পাবে!”
তাজ নীতুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কথা শুনে।বুঝতে পারলো না,এ কেমন সমাধান? হুট করেই মেঘে ঢাকা সূর্যের মত একটি মুখ মানসপটে খুব আলতো করে উঁকি দিলো।সেতু!তাজ নিজেও কিছুটা চমকালো!এটা হবার কথা নয়,তবুও হয়েছে!
নীতু মৃদু হাসলো।তাজের অস্থির দৃষ্টি দেখে!তারপর বললো,”তুমি ভালো নেই তাজ।নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো, ঠিকঠাক লাইফ লিড করছো না অথচ ভালো থাকার সমাধান হিসেবে তোমাকে বিয়ে করতে চাইলাম,কিন্তু তোমার চোখে আমি বিন্দুমাত্র খুশির ঝলকানি দেখতে পেলাম না! আশ্চর্য না?”
তাজ বিপন্ন বোধ করলো। অস্থির কন্ঠে বললো,”আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি নীতু!খুবই……বিশ্বাস করো!”
“ভালোবাসলে আমাকে এতটা বিপদে ফেলতে না তাজ।তুমি যেটা করছো তাকে ভালোবাসা বলে না!বলে জেদ দেখানো।আচ্ছা নিজ ইচ্ছায় যে এভাবে সব কিছু এলোমেলো করে দিচ্ছো, গুছানোর চেষ্টা কি একটুও করেছো?এমন পাগলামো করলেই কি সব সমাধান হয় যাবে?আমি ফিরতে পারবো তোমার কাছে?আচ্ছা ধরো না হয় সব কিছু ফেলে দিয়ে তুমি আমি এক হলাম।তারপর কি?কেউ ভালো থাকবো?মাঝখানে সেতু নামটা কাঁটার মত বিঁধবে না?বিঁধবে!সবাইকে হারিয়ে তোমাকে পেলেও পুরোপুরি কি পাওয়া হবে?হবে না। তবে কেন করছো?”
“তবে কি করবো?মানিয়ে নিবো সবকিছু।হাতের পুতুল হতে বলছো নীতু।”….. …তাজের কন্ঠে আক্ষেপ।
” সমাজের কিছু নিয়ম থাকে যা কখনো অস্বীকার করা যায় না।না চাইতেও সেই শিকল পায়ে পড়তে হয়।মানিয়ে নিতে বলছি না তাজ,তোমাকে ভালো থাকতে বলছি।নিজে ভালো না থাকলে অন্যকে ভালো রাখা যায় না!সত্যটা হলো যত যাই হয়ে যাক আমি কখনোই তোমার কাছে ফিরবো না।কারো বৈধ অধিকারে কখনোই আমি হস্তক্ষেপ করবো না।তুমি যেটাকে মানিয়ে নেয়া বলছো তা হলো বৈধতার সম্পর্ক! নিষিদ্ধ সম্পর্কের অনুভূতি প্রখর হলেও দিনশেষে বৈধতা জিতে যায়!সৃষ্টিকর্তা বৈধতা পছন্দ করে, তাজ!”
তাজ কিছুটা চিৎকার করে বললো,”না আমার তোমাকে চাই, না আমার সেতুকে চাই।আমি কিচ্ছু চাই না!”
নীতুর মেজাজ এবার খারাপ হলো।ঝাঁঝালো স্বরে বললো,” আমার বলতে একটুও দ্বিধা হচ্ছে না যে,তুমি একজন কাপুরষ ধরনের মানুষ! না তুমি ভালো প্রেমিক হতে পেরেছো না তুমি যোগ্য স্বামী হতে পেরেছো।অন্যায় ক্ষমা করা যায় কিন্তু অপমান নয়!সেতুকে বেছে নিয়ে আমাকে তুমি অপমান করেছো তবুও আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি।কেন জানো?মা বাবাকে প্রাধান্য দিয়েছো তাই।
ভালোবাসতে সবাই জানে, দায়িত্ব সবাই নিতে পারে না!এই জেদটা যদি তুমি আগে দেখাতে তবে আজ আমি তোমার বউ হতাম তাজ, এখন এসব করা অমূলক!তুমি ভালো সন্তানের রোল প্লে করে সেতুকে বিয়ে করলে।বিয়ের পরেই অনুধাবন করলে আমাকে ছাড়া তুমি সত্যিই ভালো নেই তখনই জেদ ধরলে।আমার তোমাকে নিয়ে ভয় হয় তাজ।একসময় যখন তুমি অনুধাবন করতে পারবে সেতুকে তোমার চাই তখনও তোমার এমন দেরি হয়ে না যায়!আফসোস! ”
তাজের বুকে যেন রক্তক্ষরণ হচ্ছে নীতুর কথার বাণে! অভিযোগের স্বরে বললো,”তোমরা কেউই আমাকে বুঝলে না!”
নীতু কি করবে ভেবে পেলো না।কি করে এই ছেলেকে বুঝাবে ভালোবাসার বাহিরেও অনেক কিছু থাকে!
নীতু এবার তাজের পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলো।তাজের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে গলার স্বর নরম করে বললো,”তাজ আমরা খুবই ভালো বন্ধু ছিলাম।আমার একমাত্র বন্ধু তুমি!এরপরে সম্পর্কের মোড় ঘুরলেও আজও আমি তোমার বন্ধু! তাজ তুমি ইচ্ছে করলে জেদ দেখাতে পারো,ছেড়ে চলে আসতে পারো।কিন্তু আমি পারিনা।একটা কালো মেয়ে হয়ে জন্মানোর পর থেকেই আমি কটু কথা শুনে বড় হয়েছি।হাতেগোনা ক’জন ছাড়া কেউ সত্যি ভালোবাসা দেখায়নি আমাকে ।তার মধ্যে তুমি একজন! সেই ভালোবাসা টুকুও যখন আমি হারালাম তখন আমিই কিন্তু সবার থেকে বেশি ভেঙে পড়েছি।কিন্তু উঠে দাঁড়িয়েছি আবার!সবার আগে নিজেকে নিয়ে ভাবতে হয় তুমি শিখিয়েছো তাজ।তবে আজ কেন ছেলেমানুষী করছো? জানো তো তাজ,জগতে কিছু মানুষ জন্মায় সর্বসুখী হতে আর কিছু মানুষ জন্মায় অন্যকে সুখী করতে!তুমি আমি না হয় দ্বিতীয় কাতারেই পরলাম।সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করো দেখবে সব ঠিক না হলেও তুমি নিজে ভালো থাকবে!”
তাজ এবার নিজেও আর একটা হাত নীতুর হাতের উপর রেখে বললো,”আর তুমি?তোমার কথা মনে হলেই যে আমার ঘুম পালিয়ে যায়,হৃদয়ে ঝড় শুরু হয়!খেতে পারিনা,হাসতে পারি না।মনে হয় সব শেষ করে ফেলি!তার বেলা?”
নীতুর চোখেও এবার পানি এসে গেলো।যতযাই হোক ভালো তো বাসে এই মানুষটাকে!সেতুর নিষ্প্রাণ মুখটা মনে পড়তেই নীতু নিজের আবেগ সামলে নেয়। মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,”ভালোবাসার মানুষটা নিয়তির ফেরে অন্যের হলেও ভালোবাসা নামক অনুভূতিটুকু থেকে যায় দিনশেষে! সে আমার নয় তাই বলে তাকে আমি ভালোবাসি না তা তো নয়!তাকে আমি ভালোবাসি কারণ ভালোবাসাটুকু আমার! এখানে ভালোবাসা টুকুই মুখ্য!দিনশেষে ভালোবাসার মানুষটা ভালো থাকুক এইটুকুই কি যথেষ্ট নয়?থাকুক না কিছু অনুভূতি অন্তরালে,তাজ তুমি আর সেতু ভালো থাকলেই আমার ভালো থাকা হবে! ”
তাজ কিছুই বললো না।শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো নীতুর দিকে।এই মেয়েটা কি দিয়ে তৈরি তাও ভেবে পেল না।হাসিমুখে বিসর্জনের ক্ষমতা সবার থাকে না,আর যার থাকে তাকে সবাই আগলে রাখতে জানে না!হিরে ভেবে কাচ ক্রয় করা মানুষ আমরা যে!
তাজ উঠে দাঁড়ালো। যাওয়ার আগে থমকে দাঁড়িয়ে বললো,”সেতু কি তোমার ওখানে?”
নীতু মাথা দুলিয়ে হ্যা বললো।তাজ চলে যেতে নিলে নীতু বলে ওঠে,”একটু দাঁড়াও তাজ।”
তাজ দাঁড়িয়ে পরে।নীতু সামনে এসে দাঁড়িয়ে সহজ ভঙ্গিতে বলে,”ভালো সন্তান, ভালো প্রেমিক,ভালো বর হতে না পারো।ভালো পিতা হয়ে দেখিয়ে দিও সবাইকে।আমাকে ভুল প্রমানিত করো না। শুভ কামনা রইলো হবু পিতাকে!”
তাজের দৃষ্টি স্তম্ভিত, বিস্মিত!মুখ হা হয়ে গেছে।নীতু আর কোন কথা না বলে সেখান থেকে চলে গেলেও তাজ নড়তে পারলো না একচুলও।বজ্রহত মানুষের মত দাঁড়িয়ে রইলো!
**************
নীতু অফিসে পৌঁছালো বেলা বারোটার দিকে! উত্তপ্ত রোদের ছোঁয়ায় ক্লান্ত শরীর আর মন আচ্ছন্ন হরেক চিন্তায়! তাজ বুঝবে তো এবার সেতুকে?সেতু ভুল বুঝবে না তো কখনো তাকে?সব ঠিক না হলে অপরাধ বোধে নিজেই যে শেষ হয়ে যাবে।হেনতেন চিন্তায় যখন নীতু অস্থির তখনই খেয়াল করলো, এসেছে একঘন্টা হলো।এরমধ্যে একবারো পলাশ এলো না!একটু দেরিতে এলেই তো আসামাত্র জিজ্ঞেস করে, কেন লেট হলো? তবে আজ কি হলো?
নীতু অফিসে বসে কাজ করছে। একটু বাদেই খেয়াল করলো সবাই তাকে অন্যরকম চোখে দেখছে।কি একটা বিষয় নিয়ে ফিসফিস করছে! ব্যাপার কি? নীতু আগে কাজ মনোযোগ দিল।পরে না হয় জেনে নিবে।
অফিস শেষে সবাই যখন যে যার মত বের হচ্ছে তখন নীতু পলাশের ডেস্কের কাছে গেলো।হাসিমুখে বললো,”কি ব্যাপার পলাশ ভাই?আজকে কি কাজের খুব প্রেসার? ”
পলাশ চেয়েও রাগ লুকাতে পারছে না।তাই রাগ আর বিরক্ত মিশিয়ে মুখটা বাঙলার পাঁচ বানিয়ে বললো,”একটু ব্যস্ত ছিলাম ম্যাম।আপনার কিছু প্রয়োজন ম্যাম?”
নীতু গোল গোল চোখে তাকিয়ে বললো, “আপনার মাথা ঠিক আছে পলাশ ভাই? আমাকে ম্যাম ম্যাম করছেন কেন?”
এবার আর পলাশ নিজের রাগ লুকাতে পারলো না।কিছুটা কটাক্ষের সুরে বললো,”স্যারের হবু স্ত্রীকে কি বলে সম্বোধন করতে হয়?আমার জানা মতে তাকে ম্যামই বলা উচিত নাকি অন্য কিছু?”
নীতুর মেজাজ খারাপ হলো।কপাল কুঁচকে বললো,”কে হবু স্ত্রী? কোন স্যার?”
“ম্যাম আপনাকে অভিনয়ে মানাচ্ছে না।অভীক স্যারের বাগদত্তা নন আপনি?অভীক স্যার তো আর মিথ্যে বলবে না।এছাড়া এটা আজকের অফিসের হট নিউজ।”
নীতুর কাছে সব জলের মত পরিষ্কার হয়ে গেলো।একেতো মন শরীর কোনটাই ভালো ছিল না।তারউপর এই কথায় মেজাজের পারদ সপ্তমে পৌঁছালো। ত্রস্ত পায়ে হেঁটে অভীকের কেবিনে নক ছাড়াই প্রবেশ করলো।অভীক তখন কোট পরছিল।নীতুকে এভাবে আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,”মিস নীতু এটা কোন ধরনের অভদ্রতা? নক না করে এসেছেন কেন?”
নীতু যেন মুহূর্তেই ভুলে গেলো এটা অফিস।কোন বাসা বাড়ি নয়।ক্ষুদার্ত বাঘিনীর মত হুঙ্কার ছেড়ে বললো,”আমিও জানতে চাই এটা কোন ধরনের অভদ্রতা? আমি কবে আপনার বাগদত্তা হলাম?আমি নক না করে আসলে দোষ আর আপনি তো বিনা অনুমতিতে আমার লাইফে এন্ট্রি নিচ্ছেন! এর কারণ কি?”
“কোন কারণ নেই।”…….অভীকের দায়সারা উত্তর।
নীতু কয়েক পা সামনে এগিয়ে গেলো।চোখের দৃষ্টিতে রুক্ষতা। ঝাঁঝালো স্বরে বললো,”সোজাসুজি বলুন, কোন ডিপ্লোমেটিক এন্সার চাই না।!”
অভীক হাসলো।নীতুর রাগ দেখতে ভালো লাগছে! আজ পলাশের কিছু কর্মাকান্ডে অভীক এই কথা বলতে বাধ্য হয়েছে।পলাশের কদম বাড়ানোর আগেই থামিয়ে দিয়েছে।
অভীক বেপরোয়া কন্ঠে বলে,”মিথ্যে কি বললাম?আপনি আমার বাগদত্তা। সত্য যা তাই বলেছি।”
নীতু প্রত্যুত্তরে কি বলবে ভেবে পেলো না।খানিক পরে হিসহিসিয়ে বললো,”আমি আপনার বাগদত্তা কবে হলাম,কাইন্ড লি বলবেন?”
অভীক পকেটে দু হাত পুরে আয়েশি ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে নীতুর মুখের দিকে কিছুটা ঝুঁকে বললো,”ঠিক যেদিন আপনার হাতে আমার নামের আংটিটা উঠেছিল সেদিনই আপনি আমার বাগদত্তা হয়ে গিয়েছিলেন মিস নীতু!”
“অযোগ্য বলে সেই আংটি আমাকে খুলে ফেলতে হয়েছিল মি.অভীক!আশাকরি তা আপনার মনে আছে?”
“অফিসিয়ালি এনগেজমেন্ট হলো অথচ আংটি রিটার্ন করা হয়েছে আনঅফিসিয়ালি।তাই কোন কিছুই ব্রেক হয়নি।এখনো আপনি আমার বাগদত্তা! “……
অভীকের বেপরোয়া,জোরালো কথায় নীতুর মনে চাচ্ছে সামনের মানুষটা খুন করতে।তাই বললো,” যা একবার শেষ হয়ে যায় তা আর নতুন করে গড়া যায় না।এখন এসব অফিসে চড়াও করে আমাকে অপমানিত করার মানে কি স্যার?”
অভীক দুর্ভেদ্য ভাবে হাসলো।তারপর বললো,”এখানে অপমানিত করার কি আছে?আপনারও বিয়ের বয়স হয়েছে আর আমারো।তাই শুভ কাজে দেরি করে লাভ কি মিস নীতু?”
নীতু এবার হালকা স্বরে বললো,”মি.অভীক,আত্মবিশ্বাস আর আত্মসম্মানের ভীতটা জোড়ালো করতে আমাকে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়েছে।আশাকরি আপনি নিজের সীমাবদ্ধতা জানেন।আমাকে বাধ্য করবেন না জবটা ছাড়তে!”
অভীক ব্যগ্র কন্ঠে বলে,”আমাকে ভুল বুঝছেন আপনি। মিস নীতু আপনার আত্মবিশ্বাস আর আত্মসম্মানের পথসঙ্গী হতে চাই।আর কিছু নয়!”
“আমার কোন করুণা চাই না।আবারো বলছি আমাকে বাধ্য করবেন না জবটা ছেড়ে দিতে।আসছি।”….. নীতুর কন্ঠে কাঠিন্য!
নীতু দ্রুত পায়ে রুম থেকে বের হলো।অভীক সবকিছু একবার দেখে নিজেও নীতুকে ফলো করে এগোলো।
অভীকের বেপরোয়া মনোভাব, তাজের আকুলতা,সেতুর অসহায়তা সব কিছু যেন মাথার উপর চেপে বসলো নীতুর।নীতু অন্যমনষ্ক হয়ে পা ফেললো চলন্ত রাস্তায়।অভীক যখন অফিস গেটে এসে দাঁড়ালো দেখলো নীতু রোড ক্রসিং করছে।অভীক কয়েক কদম হাঁটতেই বিকট চিৎকার দিয়ে উঠলো।অভীকের করুণ চিৎকারে চলন্ত রোডের ব্যস্ত যানবাহন সব যেন থমকে গেলো।অভীক ধপ করে বসে পড়লো রাস্তায়।
হুট করেই একটা ট্রলি গাড়ি নীতুকে ধাক্কা দিলো।নীতু ছিটকে কয়েক গাত দূরে গিয়ে পড়লো।টকটকে লাল রক্তের স্রোতে যেন ভেসে যেতে লাগলো সবটা!অভীক কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে বসে পড়লো।অভীক ছলছল চোখে দেখলো, গোধূলির শেষ লগ্নে কনে দেখায় আলোয় কৃষ্ণবতীর লাল রং-এ মিলে মিশে একাকার হয়ে পিঁচঢালা রাস্তাটাকে কৃষ্ণচূড়ার রাঙা আলোয় রুপ দিয়েছে যেন!
****************
রাত তিনটা!হসপিটালের সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো। সেখান থেকে হন্তদন্ত হযে বের হলো একটি মেয়ে!দ্রুত পায়ে হসপিটালের ভিতরে ঢুকে পড়লো। কালো জিন্স,সবুজ ফতুয়া পরনে মেয়েটির।ববকাট চুলগুলো রুক্ষ। চোখদুটো টকটকে লাল।হাতে জ্বলন্ত সিগারেট।মেয়েটি কাঁদছে না অথচ ঠোঁট দুটো বারবার ফুঁপে ফুঁপে উঠছে। কি আশ্চর্য! যার জন্য মেয়েটির চোখে মুখে উদ্যোগের ঢেউ সেই মেয়েটি তখন এই ধরায় নিঃশ্বাস বাঁচিয়ে রাখতে লড়ে যাচ্ছে অবিরাম! তাজের কৃষ্ণবতী, অভীকের কাননবালা ফিরবে তো?
চলবে,
আমাকে মারুন, কাঁটুন, বকুন আমি কিচ্ছু বলবো না।পরিক্ষা চলছিল তাই লেট হলো।কারো কমেন্টের রিপ্লাই দিতে পারি নি।আজ দিবো ইনশাআল্লাহ!