#কাননবালা!
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ২৩
জীবনে কিছু কিছু মুহূর্ত বা ঘটনার সম্মুখীন আমাদের হতে হয় যার কোন সঠিক ব্যাখ্যা থাকে না। আকস্মিক সেই মুহুর্তগুলো কখনো আমাদের কাঁদায়-হাসায় , অনুভুতির জোয়ারে ভাসায় বা ফেলে দেয় গহীন অন্ধকার গহ্বরে!
নীতুর এখন ঠিক সেই মুহুর্ত চলছে।অভীক খুব সহজেই নীতুর হাত ধরলো অথচ নীতু কোন রিয়েকশন দেখালো না।নীতুর তখন কি হয়েছিল নীতু নিজেই জানে না।ওই যে, কোন কোন মুহুর্তের কোন ব্যাখ্যা থাকে না!
রিকশাটা বাসার সামনে থামতেই নীতুর হাত ছেড়ে দিল অভীক।নীতুর মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা গেলো না। অভীক পকেটে দু হাত পুরে দাঁড়ালো।নীতুর কপাল কুঁচকে গেলো।নীতু সেই কুঁচকানো কপাল নিয়েই রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটালো।নীতু খানিকটা আশ্চর্যই হলো!অভীক সেদিনও ভাড়া দেয়নি, আজও দেয়নি।সাধারণত পুরুষ কেউ সঙ্গে থাকলে তারাই যেচে ভাড়া দেয়।কিন্তু অভীক যেন তার উল্টো।
*****
নীতু বাসায় ফিরে দেখলো সবাই উঠে পড়েছে।দাদাভাই কতক্ষণ গজগজ করলো।কেন তাকে না বলে নীতু বাহিরে গেলো?এতটুকু সে পারতো না?
নীতু আপনমনেই হাসলো।দাদাভাই পারলে তাকে গোটা পৃথিবীটা এনে সামনে ফেলে।
সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলো।সেতু সাথিকে সাজাতে লেগে পরলো।ইতু মিতু দুজনেই রান্নার প্রিপারেশন করছে।নীতু বসার ঘরটা ফুল দিয়ে সাজালো। ছেলেদের কোন কাজ না থাকলেও সবাই টুকটাক কাজ করে এগিয়ে দিচ্ছিল।রিপন গোটা দশেক কল করে নীতুর মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে।সাথি তৈরি হচ্ছে বলে কল রিসিভ করেনি তাই নীতুর জ্বালাতন সহ্য করতে হচ্ছে।
নীতু এক কাপ চা করে শরীফুল কাকার সামনে রাখলো।তিনি মনোযোগ সহকারে টিভি দেখছিলেন।চায়ের কাপটা হাতে তুলে তিনি মৃদু হাসলেন।নীতু তার পাশে বসে বললো,”কাকা আপনি কি রিশার কোন খবর জানেন?”
শরীফুল কাকা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।তারপর বললেন,”মা রে যে নিজ থেকে হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া কি এতই সহজ?”
নীতুর চোখ ছলছল করে উঠলো।ঢাকা আসার পর রিশার সাথে তার হাতে গোনা কয়েকদিন কথা হয়েছে।মেয়েটা কল করলে রিসিভ করে না। যা ফোন দেয়ার নিজ থেকেই দেবে।এই একটা সপ্তাহ কতবার যে ফোনে ট্রাই করেছে? কিন্ত তার কোন খবর নেই! নীতুর চোখে পানি দেখে শরীফুল কাকা নীতুর মাথায় হাত রেখে বললেন,”কাঁদিস না মা।ওই উড়নচণ্ডীকে যেমন তুই ভালোবাসিস তেমনি ও তোকে ভালোবাসে,দেখবি নিজে থেকেই তোর সাথে যোগাযোগ করবে।”
নীতু ছলছল চোখেই ম্লান হাসলো,কোন কথা খুঁজে পেলো না।
**********
কারেন্টের মোটা থামের উপর তাজ বসে আছে।চোখের দৃষ্টি রক্তাভ ,হাতে জ্বলন্ত সিগারেট।অনবরত সিগারেট ফুঁকছে তাজ।নিজেকে মাঝে মাঝে তার চেইন স্মোকার মনে হয়। সামনের বাড়িটির দিকে তাকিয়ে তাজ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।ওয়াক থু বলে একদলা থুতু ফেলে ধুলোপড়া রাস্তায়! কালসিটে পড়া ঠোঁটে আবার সিগারেটের টান মারে।গতকাল রাতে জায়েদ তাকে কল করে নীতুর বাসায় যাওয়ার নিমন্ত্রণ করেছে।পাশে নীতুও ছিল।সেও সৌজন্যের খাতিরে তাজ কে যেতে বলেছে।তাজ মনে মনে নীতুকে বিশ্রী একটা গালি দেয়।এই মেয়ের কতবড় সাহস তাকে বোন জামাই হিসেবে ট্রিট করছে? তাজ তখন কোন জবাব না দিলেও ভেবেছিল নীতুদের বাসায় যাবে না।কোনমতেই না।কিন্তু তাজ সে ভাবনা বাস্তবে পরিণত করতে পারেনি।সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে সকালে হাঁটতে হাঁটতে নীতুর বাসার সামনে চলে এসেছে।তাজ যে এটা ইচ্ছা করেছে তা কিন্তু নয়।নিজের অজান্তেই চলে এসেছে।আসার পরই বুঝতে পেরেছে এখানে আসাটা ঠিক হয়নি।চলে যেতে চেয়েও পারছে না।নীতুকে একপলক দেখে যেতে মনে চাইছিল।এইসব আবোল তাবোল ভাবনায় তাজ নিজের মনটাকেও কতক্ষণ বিশ্রী গালি দিলো।ঠিক সেই মুহুর্তেই দেখতে পেলো নীতুর হাত ধরে একটা ছেলে বসে আছে রিকশায়। রিকশাটা যখন বাসার সামনে থামলো তাজ স্তব্ধ হয়ে দেখলো।নীতুর কৃষ্ণ মুখটার ডান কানে একটা সাদা গোলাপ জ্বলজ্বল করছে আর হাত ধরে রেখেছে একটা ছেলে যত্ন করে।তখন থেকেই তাজের মন বিক্ষিপ্ত! মেজাজ চড়ে আছে সপ্তমে।কে এই ছেলে? গত তিন ঘন্টা যাবত এই ভাবনাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে!
“তুমি কি অসুস্থ? ”
কারো আৎকে উঠা প্রশ্নে তাজ কপাল কুঁচকে তাকালো। সামনে বাচ্চা কোলে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটিকে প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে চিনতে পারলো।স্মৃতি শক্তির যাচ্ছে তাই অবস্থায় খানিকটা বিরক্তও হলো তাজ।
তুতুন কান্না করছিল বলে মিলন তাকে নিয়ে বাসার নিচে হাঁটাহাঁটি করছিল।তখনই নজরে আটকায় তাজ বসে আছে থামের উপর। মিলন বিস্মিত দৃষ্টিতে এখনও তাজের দিকে তাকিয়ে আছে।তাজকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে দীর্ঘদীন অনিদ্রায় ভুগছে, চোখের কোলে কালি,গালে কয়েকদিনের না কামানো দাঁড়ি,চুলগুলো বড় বড়,চোখের মণি টকটকে লাল।মিলন তাজের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলালো। এ্যাশ রঙের শার্ট হাতা গুটিয়ে পরেছে, যা কয়েক স্থানে কুঁচকে আছে।উপরের দুটি বোতাম খোলা,টাইট জিন্স, পায়ে স্লিপার, হাতে সিগারেট। মিলন চুপিসারে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পুনুরায় বললো,”তুমি কি অসুস্থ? শরীরের একি অবস্থা? ”
তাজ ফ্যাকাসে হাসলো।সিগারেট টা ছুঁড়ে মারলো রাস্তায়। এরপর বললো,”অসুস্থ নয়,একটু কাজের প্রেসার যাচ্ছে।আপনি কেমন আছেন?”
মিলন অসন্তোষ কন্ঠে বললো, “ভালো আছি,আগে নিজের শরীর তারপর কাজ।তোমার দিকে তো তাকানোই যাচ্ছে না।”
তাজ এসব আহ্লাদী কথায় মনে মনে বিরক্ত হলো।আজকাল বড় অল্পতেই বিরক্ত এসে যায়।
মিলন ফের বললো, “চলো উপরে চলো।নিচে বসে আছো কেন?নাকি চিনতে পারছিলে না?”
তাজ বাঁধা দিয়ে বললো,”ভাইয়া এখানে একটা কাজ ছিল তাই এসেছি।আর অগোছালো ভাবে অনুষ্ঠানে যাওয়া ঠিক হবে না।আমি না হয় তৈরি হয়ে আসি।”
মিলন সন্দেহের চোখে তাকালো।তার কেন যেন মনে হলো তাজ এখান থেকে চলে গেলে আর আসবেনা।তাই বললো,”পুরুষের আবার গোছালো আর অগোছালো কি?এসব নিয়ে চিন্তা করে মেয়েরা।চলতো ভাই।”
একপ্রকার জোর করেই মিলন উপরে নিয়ে গেলো তাজকে।কলিং বেলের শব্দে নীতু দরজা খুলেই চমকে গেলো সামনে দাঁড়ানো তাজকে দেখে।চোখের দৃষ্টি কেপে উঠলো।নিজেকে সামলাতে দরজার কপাট চেপে ধরলো।তাজকে দেখে শুধু নীতু নয় বাসার প্রতিটা সদস্যই চমকালো।সবার চমকানো দৃষ্টি দেখে তাজ বড় অস্বস্তিতে পরলো।সেতু মাত্রই নিজে তৈরি হয় রুম থেকে বের হয়েছে।বসার রুমে তাজকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে চোখে পানি এসে গেলো।উজ্জ্বল গাত্রের মানুষটাকে কেমন ফ্যাকাশে নিষ্প্রাণ দেখাচ্ছে। এতদিনের অভিমান, ফিরে না যাওয়ার প্রতিজ্ঞা সব কিছু মুহুর্তেই জলের স্রোতের ন্যায় ভেসে গেলো।বিড়বিড় করে বলে উঠলো সেতু,”এত ভালোবাসলেন কেন তাকে?একটু কম বাসলে কি ক্ষতি হতো?তার শূন্যতায় যদি এতটাই ক্ষতবিক্ষত হবেন তবে কেন চলে যেতে দিলেন?আপনার এই রুপ যে আমার চোখে সহ্য হয় না।”
সেতু টলমল পায়ে তাজের সামনে এসে দাঁড়ালো।নীতু তখনও দাড়িয়ে আছে দরজার পাশে।তাজকে দেখেই বুঝে ফেলেছে ভালো নেই তাজ।নীতু দুচোখের পাতা বন্ধ করে বড় করে দম ফেললো।নিজেকে সামলে নিল খুব সহজে। ‘অপূর্ণতার স্বাদ পেয়ে যারা বড় হয় তারা খুব অল্পতেই সকল পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে কিন্তু অপূর্ণতা যাদের কখনো ছুঁতে পারে নি তাদের জন্য অপূর্ণতা আসে অভিশাপ হয়ে!’
নীতুর ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।তাজকে না পাওয়া সে যতটা সহজে মেনে নিতে পেরেছে ততটা সহজে তাজ পারেনি।
বসার রুমে যেন গুমোট ভাব তৈরি হয়েছে।সবাই চুপচাপ। জায়েদ সবাইকে স্বাভাবিক করতে বলে ওঠে, “ভায়রাভাই তোমার অবস্থা দেখি বউ বিরহে দেবদাস! ”
মিলন এই কথায় হাসলেও আর কেউ হাসতে পারলো না।ইতু চিন্তিত দৃষ্টিতে জায়েদের দিকে তাকালো।জায়েদ চোখের পলকে ইতুকে শান্ত হতে বললো।মিতু বলে উঠলো,”সেতু তাজকে নিয়ে রুমে যা।ফ্রেস হোক ও।আমি নাস্তা দিচ্ছি।”
নীতু চুপচাপ এগিয়ে আসলো।সেতুকে বললো রুমে যেতে।এরপর নিজ হাতেই তাজের জন্য নাস্তা সাজালো। তাজ একবারো নীতুর দিকে তাকালো না।তাজ অনেকটা অনিচ্ছা সত্ত্বে উঠে পড়লো।এখানে আসাটা যে চরম বোকামি হয়েছে তা বুঝতে পেরে নিজের কাছেই খারাপ লাগছে।তাজ রুমে ঢুকতেই সেতু হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করলো আর সাথে সাথেই ঝড়ের গতিতে তাজকে জরিয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে ফেললো।তাজের নিজেকে সামলাতে বেগ পেতে হলো।তাজ নড়লো না একচুল।সেতুকে ঠিক হতে সময় দিল।সেতু কেঁদে কেটে নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলেছে। তাজ শান্ত স্বরে বলে, “আমাকে ছাড়ো সেতু।”
সেতু আরো আঁকড়ে ধরে বলে,” ছাড়বো না।”
“আমার শরীরে সিগারেটের গন্ধ। ছাড়ো!”
“থাকুক তবুও ছাড়বো না”
তাজ হালছাড়া কন্ঠে বলে,”বাপের বাড়ি থেকে খেয়ে দেয়ে ভালোই তো সবল হয়ে এসেছো।তোমাকে ছাড়াতে এখন আমার ঘাম ঝরাতে হচ্ছে।”
সেতু শাসানোর সুরে বললো,”একদম ফালতু কথা বলবেন না,বরং আপনি দূর্বল হয়ে গেছেন।”
“আচ্ছা ঠিক আছে,এখন ছাড়ো।খিদে পেয়েছে।ফ্রেস হতে হবে তো।”
এই কথায় কাজ হলো। সেতু ব্যস্ত পায়ে সরে দাঁড়ালো।ছটফটিয়ে রুম থেকে চলে গেলো খাবারের ব্যবস্থা করতে।
*********
রুমি শাড়ি পরেছে কিন্তু এলোমেলো ভাবে।তাই ঠিক মত হাঁটতে পারছে না।বারবার শাড়ি পায়ের সাথে পেঁচিয়ে যাচ্ছে।রুমি বিরক্ত হলো।বিরক্তির মাত্রা কয়েক ডিগ্রি বাড়িয়ে দিলো অনীকের গা জ্বালোনো হাসি।রুমি চোখ কটমটিয়ে তাকালে অনীক ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে মৃদু হাসতে থাকে।রাগে রুমি শাড়ি খুলতে নিলে অনীক রুমিকে জাপটে ধরে কাছে টেনে নেয়।রুমির রাগি মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,”কে বলেছে সবসময় পরিপাটিরূপই ভালো লাগে, এলোমেলো সজ্জাও মাঝে মাঝে পুরুষকে ঘায়েল করতে যথেষ্ট। ”
রুমির মধ্যে লাজুক ভাব কম, তবুও কেন যেন লজ্জায় গাল লাল হয়ে আসলো।অনীক হেসে ফেললো।
ঠিক তখনই রুশিয়া বেগম দরজা নক করলেন।অনীক রুমিকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো।রুশিয়া বেগম রুমে প্রবেশ করেই আৎকে উঠে বললেন,”শাড়ি উল্টো পরেছো কেন?”
রুমি অনীকের দিকে চোখ গরম করে তাকালে অনীক শুকনো ঢোক গিললো। রুশিয়া বেগম হাজার বিরক্তি মুখে একত্রিত করে বললেন,”শাড়িটাও পরতে জানো না অথচ মুখের বুলি দিয়ে ফটরফটর কথা বলতে পারো।দেখি কাছে আসো।….আর তুই এখানে বলদের মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন?যা অভীকের কত দূর হলো দেখ গিয়ে। এমনিতেই লেট হয়ে যাচ্ছে।”
অনীক চলে যেতেই রুমি গোমড়া মুখে শাশুড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।রুশিয়া বেগম মুখে বিরক্তির কপট ছাপ নিয়ে পরম যত্নে ছেলের বউকে শাড়ি পরিয়ে দিলেন।
অনীক অভীকের রুমে ঢুকে দেখে অভীক আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।মেদহীন পিটানো শরীরে শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি, হাতে কালো ঘড়ি,চুল জেল দিয়ে সেট করা, ট্রীম করা খোঁচা খোঁচা দাড়িতে যেন আরো সুদর্শন লাগছে অভীককে।
অনীক বিছানায় বসে বলে,”মাইয়া মানষের মত সাজতেছিস কেন ছোটো?কাহিনী কি?”
অভীক ভ্রু কুঁচকে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,”ছি!ভাষার কি অবস্থা! ”
অনীক সবজান্তার ভঙ্গিতে হাসে,এরপর বলে, “মাঞ্জা মারা শেষ হইলে চল যাই।”
অভীক পারফিউমের বোতলটা সমস্ত শরীরে ঘুরিয়ে স্প্রে করে রুম থেকে বের হয়।পিছু পিছু অনীকও ফলো করে তাকে।
**********
কলিং বেলের শব্দে মিতু দরজা খুলে বিস্মিত কন্ঠে বলে, “খালাম্মা আপনি?”
রুশিয়া বেগম মৃদু হেসে বলেন,”ভিতরে এসে বলি।”
মিতু চমকানো অবস্থায় পাশে সরে দাঁড়ায়। অভীক অনীক রুমি প্রবেশ করে ধীর পায়ে। সাথি তাদের দেখে হাসি মুখে এগিয়ে আসে।ভরন্ত পেটে গ্রাম্য ভাবে শাড়ি পড়া,মাথার দুপাশে ফুল ছেড়ে দেওয়া, হাতে গলায় গহনা। মাতৃত্বের স্নিগ্ধ রুপ! রুশিয়া বেগম সাথির কপালে চুমু খেয়ে বলেন,”মাশাল্লাহ! ”
সাথি মিষ্টি করে হাসে। অনীক অবাক নেত্রে ফিসফিসিয়ে
মাকে বলে,”মা ব্যাপার কি?এরা আমাদের না মেরে সমাদর কেন করছে?”
রুশিয়া বেগম ছেলের কথায় বিরক্তবোধ করেন।মিতু সবাইকে সোফায় বসতে বলে নীতুকে ডাকতে চলে যায়।
জায়েদও অনেকটা চমকেছে তবে নিজেকে খুব দ্রুত সামলে নিয়েছে।অভীক হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে জায়েদ, মিলন, শরীফুলের সাথে। তাজের সাথে হাত মিলাতে গিয়ে অভীকের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে যায়। তাজ নীতুর বোন জামাই শোনার পর কপালে ভাঁজ পড়ে।মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে একটা প্রশ্ন, “নীতু কেন বোন জামাইয়ের সাথে অতোটা রাফ বিহেভ করেছিল সেদিন?”
তাজের ইচ্ছে হলো হাতের মুঠোয় থাকা অভীকের হাতটা পিষে ফেলতে!আফসোস তা পারলো না, বরংচ মুখে সৌজন্যমূলক হাসি ঝুলিয়ে রাখতে হলো।
নীতু যখন কিছুক্ষণ পরে রুমে প্রবেশ করলো তখন ক”জোড়া চোখে মুগ্ধতা ভর করলো।সকলের মনে একটা প্রশ্নই বার বার বাজতে লাগলো,”কে বলে কৃষ্ণবতীরা সুন্দর হয় না? কৃষ্ণবতীরা যতটা মায়াবতী হয় ততটা আর কেউ কবে হতে পেরেছে?”
সাদা স্লিকের শাড়ি গ্রাম্য ভাবে পরা,বড়নেকের লাল রঙা ব্লাউজ, ব্লাউজের হাতায় কুচি দেওয়া, খোঁপা করা চুলে বেলিফুলের মালা, ডাগর ডাগর চোখে মোটা করে কাজলের প্রলেপ, ফিনফিনে ঠোঁটে হালকা রঙের ছোঁয়া, হাতে সাদা লাল মিশেলের রেশমি চুড়ি,নাকে এন্টিকের চাপা নাকফুল!যেন স্রোতস্বিনী পাহাড়ি নদী!
তাজের বুকে হু হু করে নীল রঙা ব্যথার বিষ ছড়িয়ে পরলো।চোখের দৃষ্টি গাঢ় রক্তাভ!
অভীকের চোখে মুগ্ধতা,মাদকতা একসাথে ভর করলো,ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসি। বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো,
” কাননবালা!একান্তই ব্যক্তিগত আমার কাননবালা!”
অনীক সুচারু দৃষ্টিতে দেখলো তার ভাইয়ের মুখ দুপুরী রোদের মত জ্বলজ্বল করছে! অনীক হাসলো।অবশেষে মাঞ্জা মারার কারণ জানতে পেরে মনে মনেই হেসে নিলো একচোট!
চলবে,
কাননবালা বলতে বোঝানো হয়েছে,কোন এক বাগানের সুসজ্জিত যুবতী নারী!
হয়তো আমার লেখা হাতে গোনা কয়েকজন পড়েন।তাতে আমার বিন্দুমাত্র আফসোস হয় না।কিন্তু আপনারা যখন আমাকে জানান না,আমি কেমন লিখছি?তখন যাই লিখি তার আগ্রহও হারিয়ে ফেলি।আপনাদের অনুভূতি জানা আমার জন্য অনেক কিছু!হয়তো লেখা দিয়ে ততটা হৃদয় ছুঁয়ে দিতে পারিনি তাই আপনাদের এতটা কার্পণ্যতা!