#কাননবালা!
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ২
নীতু চোখ মুখ শান্ত রেখে রুটি বেলছে।তার মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই মনের ভিতর কি চলছে।নীতু এরকমই! শান্ত! ধীর! শত অপমান নীতু হাসি মুখে মেনে নিতে পারে। এই যে সকাল থেকে ভাবি একটানা চেঁচামেচি করছে তাতে নীতুর কোন সমস্যা হচ্ছে না।ভাবির এক একটা কটু কথা চুপ করে শুনে যাচ্ছে। ভাবিকে রান্নাঘরে আসতে দেখে নীতু কিছুটা জোরে হাত চালায়।তারপরও ভাবি বলে ওঠে, ” নীতু এখনো হয়নি রুটি বেলা?কখন ভাজবে?তপুকে নিয়ে আমার স্কুলে যেতে হবে।আর এসব কি ভাজি করেছো?ঝুরা ঝুরা কেন হলো না।নীতু একটা কাজ অন্তত গুছিয়ে করো।শুধু গান্ডে পিন্ডে গিললেই তো হবে না।একেতো দেখতে সুন্দরী নও তারপর যদি সুন্দর করে কাজও না জানো তবে তোমাকে মানুষ কি দেখে বিয়ে করবে? যেখানেই যাবে গোঁদের উপর বিষ ফোড়ার মত থাকবে, বুঝলে?রোজ রোজ তোমায় পাত্র দেখতে আসে আর আমাদের কতগুলো টাকা গচ্চা যায়,নিজে তো একটা ছেলে পটাতে পারো, তাহলে আমাদের ঘাড়ের বোঝা কমে!”
নীতু ভাইয়ের বউয়ের কথা শুনে অবাক হলো না।এরকম করেই সে সবসময় কথা বলে কিন্তু আজ কেন যেন চোখটা ভিজে উঠলো।চোখের জলকে গুরুত্ব দিতে নেই,ঝরে যাওয়া কোন কিছুরই মূল্য নেই।তার থেকে বুকের ভিতর জমে থাক!তাই নীতু চোখের জল অতি সন্তপর্ণে আড়াল করে।চুলায় গরম তাওয়া রেখে রুটি ভাজতে শুরু করে।নীতুর নিজেকেও উতপ্ত রুটি মনে হয়! যে শুধু জ্বলছেই!
নীতুর মা বাবাকে খাবার খাওয়ার আগে ঔষধ খায়িয়ে সবে রুম থেকে বের হয়ছে তখনই ছেলের বউয়ের কথা শুনে চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।নীতুর জন্য তার ভীষণ কষ্ট হয়,মেয়েটা এত কাজ করার পরও সবার গঞ্জনা শুনেন মা হয়ে তা চোখের সামনে দেখতে হয়।এই সংসারে নিখিলের টাকায় চলে বলে, নীতু কখনো কটু কথার জবাব দেয় না।যাতে পরিবারে কোর ঝামেলা না হয়। তারপরও ছেলের বউ সুরভীর মুখ চলে কেচির মত।অথচ সুরভী সংসারের কোন কাজেই হাত লাগাবে না।ছেলে ছোট থাকতে বাহানা দিত,ছোট ছেলে নিয়ে পারে না।আর এবছর ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানোর পর তো সারাদিন তাই নিয়ে থাকে। আর নীতু সকালের আর রাতের রান্না করে, দুপরের টা গুছিয়ে রেখে যায়,নীতুর মা রান্নাটা করে রাখেন তারপরও সুরভী একটা না একটা ছুতো ধরে নীতুর উপর চিল্লাবে।
সুরভী রান্নাঘর থেকে চলে যেতেই নীতুর মা মহিমা বেগম রান্নাঘরে ঢুকে।নীতু বাবার নাস্তা একটা প্লেটে গুছিয়ে মায়ের হাতে তুলে দেয়।
মহিমা বেগম আমতা আমতা করে বলেন,”তোর একটা চাকরি কেন হচ্ছে না, বলতো নীতু?”
নীতু দুপুরের রান্নার তরকারি কাটতে কাটতে বলে,” মা তুমি যখন নামাজ শেষে তোমার পাঁচ সন্তানের জন্য দোয়া করো তখন আমার জন্য মিনিট পাঁচেক একটু বেশি দোয়া করবে। ঠিকাছে?যাতে আমারও একটা গতি হয় আর তোমাদেরও! ”
“তোর কি মনে হয় আমি তোর জন্য দোয়া করি না?”
“কই মা তোমার দোয়ায় তো কোন কাজ হচ্ছে না,শুনেছি মায়ের দোয়া নাকি বুলেটের মত লাগে তবে আমার বেলায় তা কেন হচ্ছে না?”…. শান্ত কন্ঠে বলে নীতু। মহিমা বেগম কতক্ষণ মেয়ের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে থেকে চলে যান।সংসার সংসার খেলায় তিনি নিজেও হাঁপিয়ে উঠেছেন।
***********
তাশরীফ অভিক যখন অফিসে প্রবেশ করে তখন ছোট বড় সকল কর্মকর্তারাও একটু নড়ে চড়ে বসেন।অভিক কাজে আর ন্যায্য কথায় কাউকে ছাড় দেয় না।এমনি কি অফিসের বড় স্যার পর্যন্ত অভিককে একটু সমঝে চলে।অভিক কাজে খুবই কর্মঠো!যে গরু বেশি দুধ দেয় তার লাথি খাওয়াও ভালো এই নীতি তিনিও মেনে চলেন। আর অফিসের মেয়ে কলিগদের তো নিত্য গসিপের পাঠ হচ্ছে অভিক।অভিকের পোশাক, হাঁটা চলা,কথা বলা, খাওয়া সব নিয়েই তাদের গসিপ।কিন্তু অভিক সেসব বুঝেও পাত্তা দেয় না।ন্যাকা সষ্টি অভিকের বড়ই অপছন্দ।অভিক যখন কোর্ট টাই হাকিয়ে ম্যানলি লুকে অফিসে প্রবেশ করে তখন মেয়ে স্টাফদের যে কতগুল হার্টবিট মিস হয় তার হদিস কি কঠোর অভিক রাখে? রাখে না।আজও অভিককে তার নিজস্ব কেবিনে ঢুকতে দেখে রিপা নিজেকে পরিপাটি করে অভিকের কেবিনে নক করে।অভিক একটা ফাইল খুবই মনোযোগ দিয়ে দেখছিল।নকের শব্দ পেয়ে বলে ওঠে, ” কাম ইন!” এক নজর একবার গেটের দিকে তাকিয়ে আবার ফাইলে মুখ ডুবায় অভিক।রিপা ক্রাশিত চোখে অভিককে পর্যবেক্ষণ করে।সুঠাম গড়নের লম্বা দেহের এই পুরুষ যে কতটা মারাত্মক সুন্দর তা কি সে জানে?রিপা হা করে তাকিয়ে থাকে অভিকের দিকে।
“মিস.রিপা এসির বাতাস খাওয়া হলে বলুন কি বলতে এসেছেন?”
রিপা নিজের আচরণে নিজেকে একশো রকমের গালি দেয়। তারপর বলে,”স্যার, বড় স্যার আপনাকে দেখা করতে বলেছে।”
“আচ্ছা, আপনি এখন আসুন!”
রিপা টলমল চোখে বেড়িয়ে পড়ে। অভিক বড় স্যারের রুমে প্রবেশ করতেই ষাটোর্ধ মানুষটা বলে ওঠে, “হেই ইয়াং ম্যান,তুমি দিন দিন আরো হ্যান্ডসাম হচ্ছো। ”
অভিক প্রতিত্তোরে হাসি দিয়ে বলে ওঠে, “কোন কাজ ছিল স্যার?”
“আহা অভিক আমি কি কাজ ছাড়া তোমাকে ডাকতে পারি না?তোমার মত ইয়াং বয়েসি একটা ছেলে এতটা কাজ পাগল হলে চলে।”
অভিক যারপরনাই বিরক্ত স্যারের কথা বার্তায়।
“তাহলে কি করা উচিত?”
“অভিক তোমাকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করি তাই বলছি। আমার ভাই তার মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজছে।আর পাত্র হিসেবে তুমি একশো তে একশো।আমি তোমায় কোন চাপ দিচ্ছি না। তোমার পছন্দ হলে তবেই আমরা আগাবো।”
“স্যার আমার বিয়ের ব্যপার সব মা হ্যান্ডেল করছেন।”
“সে তো খুলনা।আগে তুমি দেখো তারপর না হয় তোমার মাকে ইনফর্ম করবে।”
“মা ঢাকাতেই আছেন।সবচেয়ে বেটার হয় আপনি তার সাথে কথা বলুন।”
“তাহলে তো খুবই ভালো।দাও দেখি তোমার মায়ের নম্বর। “…. বড় খুবই উচ্ছাসিত কন্ঠে বলেন। অভিক নম্বর দিয়ে বিদায় হয়।
********
নীতু সবটা গুছিয়ে টিউশনির জন্য বের হবে তাই বাবার রুমে দেখা করতে আসে।বাবা বিছানা থেকে নড়তে পারে না।কথা বলতে কষ্ট হয়।যাও বলে তাও জড়িয়ে আসে।নীতুকে দেখে বাবা অশ্রু চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন। নীতু বুঝে যায় বাবা ভাবির বলা প্রতিটা কথা শুনেছে। তাই নীতু বাবার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে,” কাঁদছো কেন বাবা?কাঁদার মত কিচ্ছু হয়নি।তোমার নীতু তো কাঁদে না তবে তুমি কেন কাঁদবে?”
বাবা কিছু বলার চেষ্টা করে কিন্তু তা কেবল গড়গড় করে আওয়াজের সৃষ্টি করে!
***********
নীতু বাসা থেকে বের হতেই তাজ কল করে।নীতু মুখে হাসি ফুটিয়ে কল রিসিভ করে।ছেলেটা যদি কথার সুর একটু অন্যরকম শুনে তবেই ক্ষেপে যায়।
“হ্যালো!”
“হ্যালো! কে বলছেন আপনি?আপনি কি নীতু?”
“কি বলছেন এসব তাজ?”…. নীতুর কন্ঠে বিস্ময়।
” আমি ঠিকই বলছি মিস!আমি তাজের বন্ধু নীতুকে চাচ্ছি। আপনি কি সেই?”
“হুম!আমিই সে।”…. বলে নীতু হেসে ওঠে।
” তুমি ভালো আছো নীতু? “…..আবেগি কন্ঠে জিজ্ঞেস করে তাজ।তাজের কন্ঠে যেন একরাশ মাদকতা!
” আপনার কি হয়েছে তাজ?এমন করে কথা কেন বলছেন?”
“আমার যে কি হলো নীতু নিজেই বুঝতে পারছি না।কেমন জ্বর জ্বর লাগে,চোখে জ্বলে,বুক জ্বলে, ঘুম আসে না।কেমন অসুখ হলো বলতো? কেন তোমার শহর আমায় এতো টানছে নীতু? ”
“তো আসুন। কে মানা করেছে।”
“আসবো নীতু।একটু সবটা গুছিয়ে নেই।সবে চাকরিটা পেলাম।জয়েন করে কিছুদিন কাজ করবো।তারপর হুট করে একদিন এসে তোমার শহরে কড়া নাড়বো।সেদিনের জন্য প্রস্তুত থেকো নীতু!”….. তাজের কন্ঠের ব্যকুলতা নীতুকেও স্পর্শ করে প্রবল ভাবে!
নীতু আবারো স্বীকার করে তাজ খুবই সুন্দর করে কথা বলে।
” অফিস নেই আপনার?”
“এক সপ্তাহ পরে শুরু।আগের জবটা তো ছেড়ে দিলাম।তুমি নাস্তা করেছো নীতু?”
নীতু কি বলবে ভেবে পায় না।সকালে ভাবির কথা শুনে নীতুর খাওয়া হয়নি। তাই মিথ্যে করেই বললো,”খেয়েছি।”
“মিথ্যে কেন বলছো নীতু?খাওনি কেন?”…..ধমকে ওঠে তাজ।আজকাল তাজ যেন একটু বেশিই নীতুর প্রতি যত্নশীল।
” মিথ্যে বলিনি তো।”
“বলেছো নীতু।যদি তুমি সত্যি খেতে তবে বলতে এত সময় নিতে না।আমি তোমায় বলিনি নীতু, কারো জন্য নিজেকে কষ্ট দিবে না।নিজের ভালো থাকা নিজের হাতে!”
“আমি তো সেরকম মেয়ে হতে পারেনি।”
“পারবে নীতু,হতে হবে।তুমি নরম বলেই সবাই চেপে ধরে।একটু শক্ত হও নীতু।আর এখন লক্ষী মেয়ের মত কোন হোটেলে ঢুকে নাস্তা সেড়ে নাও।টাকা আছে তো হাতে? নাকি আমি বিকাশ করবো?”
তাজের এই অস্থিরতা, নীতুর জন্য চিন্তা হওয়া নীতুর ভীষণ ভালো লাগলো,ভীষণ।
“টাকা আছে,আমি খেয়ে নিবো।ভালো থাকবেন।”
“তুমিও।”
.***********
নীতু একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে।সামনে দাদাভাই বসে আছে। তাজের কল কাটতে না কাটতেই নীতু দেখে দাদাভাই বাড়ির এদিকে আসছে।দাদাভাই কোন কথা না বলেই নীতুকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসে।নীতু তখন কিছুই বলে নি।খাবারের অর্ডার দেওয়া হলে নীতু বলে, “তুমি এদিকে কি করছে দাদাভাই?সকাল বেলা দোকান রেখে এদিকে কি?”
জায়েদের একটা ছোট খাটো কাপড়ের দোকান আছে।তা থেকে যা আসে মোটামুটি সংসার ভালোই চলে যায়।
জায়েদ নীতুর কথায় হাসি মুখে বলে,”তোর জন্যই তো আসলাম।কাল দোকানে কাজ থাকায় চলে যেতে হলো। কালকের পর যে তোকে তোদের বাসার সবাই অমায়িক ট্রিট দিবে তা ভেবেই আসা।দেবি পার্বতীর মত তাদের কথা শুনে না খেয়ে যে তুই শুটকি মেরে থাকবি তাতো আমি জানি।এখন আমার সামনে খাবি। তোর জন্য বউয়ের হাতের রান্না মিস করেছি তার শাস্তি স্বরুপ দুটো পরোটা বেশি খাবি।”
নীতু জায়েদের কথায় হেসে দিয়ে বলে,”তবে কেন আসলে?বউয়ের হাতের মজাদার রান্না খেতে।”
জায়েদ টেবিলে চাপড় দিতে দিতে বলে,”আরে এই উসিলায় তোর বোনের থেকে বেশি ভালোবাসা পাবো।বর না খেয়ে কাজে গেছে এই ভেবেই সারাদিন চিন্তায় থাকবে তারপর বাসায় ফিরলে আদর যত্নও বেশি করবে।বুঝেছিস?”
নীতু মাথা নাড়িয়ে বুঝায় সে বুঝেছে।দাদাভাই মানুষটা এরকমই!হাসি মুখে থাকবে সবসময় আর সকলকে হাসি মুখে রাখতেই যেন এই মানুষটা পৃথিবীতে আসা।
জায়েদ ফের বলে ওঠে ,”তোর ভাই একটা গাধা বুঝলি।নাহলে শালা বাবু ওই ধারালো চিজ বিয়ে করে!”
“আহা দাদাভাই থামো তো!”
“ঢং!ভাবি ভক্ত ননদী! “…… বলতে না বলতেই পরোটা চলে আসে।জায়েদ নিজ হাতে গরম গরম পরোটা ছিড়ে নীতুর প্লেটে দেয়।জায়েদ এরকমই।নীতু তার কাছে ছোট বোন।যাকে যত্ন করতে কোন কুন্ঠা বোধ করে না জায়েদ।নীতু ছলছল চোখে বলে,”আমি এত গুলো পরোটা খেতে পারবো না দাদাভাই!”
“তুই খাবি সাথে যার সাথে ফোনে কথা বলছিলি দরকার হলে সেও খাবে!”
নীতু বিস্ফোরিত নেত্রে তাকিয়ে থাকে জায়েদের দিকে আর জায়েদ চোর ধরা পুলিশের মত মিটমিটিয়ে হাসতে শুরু করে!
**********
অনীক মায়ের রুমে বসে আছে।মায়ের জন্য কেমন খারাপ লাগছে।নিজের চুল দুহাতে খামছে ধরে অনীক।বাবার মৃত্যুর পর মা কত কষ্ট করে মানুষ করলো তাদের অথচ তারা মানুষ না হয়ে অমানুষ হলো! রুমি এসে দেখে অনীক গম্ভীর মুখে বসে আছে শাশুড়ীর রুমে।এটা দেখেই রুমির মাথায় আগুন ধরে যায়।মা ন্যাওটা ছেলে কোথাকার!
অনীক রুমিকে দেখে প্রশ্ন করে,”কোথায় গিয়েছিলে রুমি?”
রুমি ভাবলেশহীন কন্ঠে বলে,”সব ফ্রেন্ডরা আসলো।একটু ঘুরলাম,শপিং করলাম,একসাথে চিল করা আরকি!”
অনীক চিল্লিয়ে ওঠে,”সকালে ঘুমিয়ে রইলে।আমি না খেয়ে অফিসে গেলাম।বাসায় ফিরে দেখি তুমি নেই, এমনকি কোন রান্নাও করনি কেন?স্বামী সংসার সব ফেলে তুমি চিল করছো? ছি!”
“ছি!ছি! করবে না।খাবার অর্ডার করে নিলেই তো পারতে।এত হাইপার হওয়ার কি আছে?আমাকে তুমি দাসী পাওনি অনীক!”
অনীকের মনে হলো এক্ষুনি থাপ্পড় টাপ্পর মেরে রুমিকে ঘর থেকে বের করে দিতে।স্বামী সংসারের যত্ন নেয়াকে যদি বলে দাসত্ব, তবে এ কেমন নারী?
অনীকে প্রচন্ড রাগে হনহনিয়ে রুম থেকে চলে যায়।যাওয়ার সময় দরজার পাল্লায় বিকট আকাড়ে বাড়ি মেরে চলে যায়। সেই শব্দে রুমি সত্যি সত্যি কেঁপে ওঠে!
************
সেতু নীতুর সাথে জেদাজেদি শুরু করেছে।সেতুর নতুন একটা ড্রেস লাগবে।চার হাজার টাকা দাম।এত টাকা নীতু কোথায় পাবে?সেতু তা মানতে নারাজ।নীতু যে কয়টা টাকা পায় সবটা ঢেলে দেয় সেতুর পড়ালেখার পিছনে।নীতুর তো আর পড়ালেখা নেই।মোটে অল্পকটা টাকা হাতে রাখে নীতু নিজের কিছু ব্যক্তিগত প্রয়োজনের জন্য। কিন্তু সে কথা মানতে নারাজ সেতু।নিখিলের কাছে টাকা চেয়েছে সেতু কিন্তু তার উত্তর দিয়েছে সুরভি বলেছে,”এমাসে বাজার না করে তোমার টাকা দিবো, ঠিকাছে সেতু?” যার মানে টাকা দিবে না।সেতু এখন জেদ করছে নীতুর সাথে। নীতু ধীর কন্ঠে বলে,”আমি টাকা পাবো কই?যে টাকা পাই সবই তো তোর পড়ালেখার পিছনে খরচ করি!”
সেতু চিৎকার করে বলে,”একদম খোঁটা দিবেনা নীতু আপি।যে কয়টা টাকা দাও তার আবার ফুটানি করো।একটা ড্রেস দিতে পারছো না আবার আবার বড় কথা বলছো।”
সেতুর কথা শুনে নীতু হতভম্ব!
মহিমা বেগম রুমের বাহিরে থেকে ছোট মেয়ের এরকম কথা শুনে বিছানার ঝাড়ু হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে।নীতু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেতুকে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে মা।নীতু আৎকে ওঠে বলে,”এসব কি করছো মা।এতবড় মেয়ের গায়ে হাত কেন তুলছো? ”
মহিমা বেগম মারের গতি বাড়াতে বাড়াতে বলে,”জানোয়ার ধরেছি পেটে।যেখানে নিজেদের চলতে কষ্ট হয় সেখানে সে শখ করে।আর একটা ধরেছি পেটে সেটা বোঝার মত লটকে আছে ঘাড়ে।আর ছেলেটা হয়েছে কুলাঙ্গার। মা বোনদের খাওয়ায় তা নিয়ে আবার হিসেব।এসব দেখার আগে মৃত্যু কেন হলো না আমার? ”
বলে মহিমা বেগম ঝাড়ু ফ্লোরে ফেলে চলে যান।নীতু মায়ের কথায় কষ্ট পেলেও তা গায়ে মাখলো না।নীতু ছুটে গেলো সেতুকে উঠকতে।কিন্তু সেতু প্রচন্ড রাগে নীতুকে ধাক্কা মেরে বলে,”একদম আদিখ্যেতা দেখাতে আসবে না আপি।এসব তোমার জন্য হয়েছে।”
নীতু আবারও হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।তার আসলে কি করা উচিত তা নীতু বুঝে উঠতে পারছে না।
চলবে,
চেক করিনি।ভুল হলে বলবেন।