কাননবালা পর্বঃ১৯

0
819

#কাননবালা!
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ১৯

নীতু পার্স ব্যাগটা শক্ত করে ধরে আছে।চোখ মুখ রাগে থইথই করছে! নীতু ভেবে পায় না, এই আধুনিক যুগেও মানুষ কি করে গায়ের রঙ নিয়ে কটাক্ষ করে? রাগে বেখেয়ালীতে হাঁটতে গিয়ে একজনের সাথে ধাক্কা লেগে যায় নীতুর।নীতু চোখ তুলে সরি বলতে নেয়। কিন্তু সরি আর বলা হলো না।সামনে দাঁড়ানো মানুষটিকে দেখে রাগের পারদ যেন সীমানা ছাড়ালো। এই মুহুর্তে এই পরিবেশে নীতু এই মানুষটিকে আশা করেনি।নীতু প্রথমে অবাক হলেও এখন ভীষণ রাগ হচ্ছে।
তাজ নির্নিমেষ চোখে তাকিয়ে দেখছে নীতুকে।আকস্মিক এই দেখা হওয়ায় তাজও বিস্মিত। কিন্তু বিস্ময়ের পাল্লা খুশির থেকে কম!তাজের মনে হচ্ছে দৃষ্টিতে একগুচ্ছ জারুল ফুলের স্নিগ্ধতা আঁটকে গেছে।কি সুন্দর লাগছে নীতুকে!তাজের মনে চাচ্ছে নীতুকে নিয়ে তার মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে, “দেখো তো মা, কে বেশি সুন্দর?জারুল ফুল নাকি আমার নীতু?”

তাজের অচিন্তনীয় ভাবনার সুতো কেটে দিয়ে নীতু রুঢ় স্বরে বলে, “আপনি এখানে কি করছেন? ”

তাজ নীতুর রাগান্বিত মুখ দেখে কষ্ট পেলো।এখানে একটা কাজে এসে এভাবে হুট করে যে নীতুর সাথে দেখা হবে তা কখনোই ভাবে নি। তাই ঠান্ডা স্বরে বলে,”কাজে এসেছিলাম, তুমি এখানে?”
নীতু টিটকারির সুরে বলে, “কেন আপনি জানতেন না আমি এখানে?নাকি ভান করছেন?”

“আমি কিভাবে জানবো তুমি এখানে নীতু?”

নীতু দুই হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বলে,”ওহ তাজ! অভিনয়ে আপনাকে আমার দশে দশ দিতে ইচ্ছে করছে।বাহ! ”

“আশ্চর্য আমি কি করে জানবো?কিসব বলছো নীতু?”…. তাজের চোখে মুখে বিস্ময়!

নীতু রুক্ষ স্বরে একটু জোরেই বলে,” আপনি জানতেন আমি এখানে। এখন একদম ভান করবেন না।আমি চাতুরীপনা একদম সহ্য করতে পারিনা।”

তাজের এবার একটু মেজাজ খারাপই হলো।কন্ঠে তেজের ভাব ফুটিয়ে বললো,”আশ্চর্য নীতু তুমি এরকম বিহেভ কেন করছো? রাস্তাঘাটে এরকম সিনক্রিয়েট করা তোমার শোভা পায় না।”

নীতু যেন এবার নিজের দিগবিদিক ভুলে গেলো।চোখ মুখ শক্ত করে কিছুটা চেচিয়েই বললো,” আমার জন্য কোনটা শোভনীয় তা আপনার ভাবতে হবে না।রোজ সকাল বিকেলে আমার অফিসের সামনে ঢুঁ মারা।এগুলো বুঝি খুব শোভনীয়? চুপিচুপি একটা মেয়েকে দেখা এটা বুঝি খুব শোভনীয়? শুক্রবার হলেই আমার বাসার সামনে পায়চারি করা এগুলো বুঝি শোভনীয়?….একজন বিবাহিত পুরুষ কখন অন্য একটা নারীকে ফলো করে জানেন মি.তাজ?যখন তার চরিত্রে দোষ থাকে!আপনি কি নিজেকে চরিত্রহীন হিসেবে পরিচিত করাতে চান?”

তাজের চোখে মুখে একই সাথে বিস্ময়, দুঃখ,অভিমান, রাগের অভিব্যক্তি ফুটে উঠলো।চোখের দৃষ্টি নতজানু হয়ে গেলো! নীতুর কাছে এমন করে ধরা পরা যাবে কল্পানাও করেনি তাজ।তাজ বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “তুমি আমার জন্য অন্য নারী নও নীতু!কখনোই নও!”

তাজের অস্ফুটস্বরে বলা কথাও নীতু শুনে ফেললো।তাই বলে উঠলো,”আমি আপনার জন্য অন্য নারী।নিষিদ্ধ আপনার জন্য আমি!এইসব পাগলোমো বন্ধ করুন।আমাকে বাঁচতে দিন!”

তাজ আর্তনাদের সুরে বলে,”এভাবে বলো না নীতু।এতটা কঠোর তো তুমি নও।আমার হৃদপিণ্ড এফোঁড়ওফোঁড় করে দিচ্ছে তোমার তিক্ত ভাষা।আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করার জন্য যাই না বিশ্বাস করো।তোমার ওই মুখটা আমার জন্য শান্তির নিঃশ্বাস! একটু স্বস্তির আশায় চুপিচুপি তোমাকে দেখে চলে আসি।আর কিছু তো নয়!”

নীতু আগের থেকেও রুক্ষ স্বরে বলে, “আমি কোন শান্তিশালা খুলে বসেনি তাজ।নিজের শান্তির এতই যখন পরোয়া তাহলে আপনার উচিত ছিল সময় ফুরাবার আগে গোটা দুনিয়ার সাথে লড়াই করা।তা যখন পারেন নি।এবার আমায় মুক্তি দিন।আর নিজেকেও পিছুটান থেকে মুক্তি করুন।আমি আপনার জন্য ততটাই নিষিদ্ধ যতটা স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ নিষিদ্ধ! “…….. এই পর্যায়ে এসে দুপা কিছুটা এগিয়ে তাজের আরো সামনে এসে দাঁড়ায় নীতু।চোখের তারায় আগুন ঝড়িয়ে এক আঙুল শাসিয়ে বলে,” আমার সাথে আপনি আর আপনার মা যাই করুন আমি প্রতিবাদ করিনি।আমার কষ্টের কারণ হিসেবে আপনাকে কখনো আমি দায়ী করিনি কিন্তু আমার বোনের কষ্টের কারণ আপনি হলে আপনাকে আঘাত করতে আমি একমুহূর্ত ভাববো না।সোজা পুলিশে দিবো।যোগ্য প্রেমিক হতে না পারলেও যোগ্য স্বামী হয়ে দেখান।নিজেকে কাপুরুষের দলে ফেলবেন না।আমি আপনার সূচনা হলেও সমাপ্তি হলো সেতু।তাই তাকেই আঁকড়ে ধরুন।”

একদমে এতগুলো কথা বলে তাজকে পাল্টা কিছু বলতে না দিয়ে নীতু সি এনজিতে উঠে পরে ।পিছনে এক আকাশ কষ্ট আর আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তাজ!তাজের কাছে এই নীতুকে বড্ড অচেনা লাগে!

এতক্ষণের তাজ ও নীতুর কনভারসন অভীক শুনতে না পেলেও রাস্তার অপজিটে গাড়িতে বসে দুজনকেই দেখতে পেয়েছে।নীতুর এমন রাগী মুখ করে আঙুল নাচিয়ে কথা বলা দেখে অভীকও আশ্চর্য হয়েছে।শান্ত মুখশ্রীর আড়ালে যে এমন রণচন্ডীর রুপ লুকিয়ে আছে তা কখনো ভাবেনি অভীক।নীতু নামের মেয়েটা দিন কে দিন তাকে আশ্চর্য করছে।এতকিছু ছাপিয়েও অভীকের মনের মধ্যে খচখচ করে শুধু দুটো প্রশ্নই বিঁধছে, “কেন নীতু এতটা রেগে কথা বললো ছেলেটির সাথে? আর ছেলেটিও বা কে?”

সিএনজি ছেড়ে দিতেই নীতু দুহাতে মুখ ঢেকে হু হু করে কেঁদে দিল।নীতু জানে আজকের ব্যবহারে তাজ কষ্ট পেয়েছে।তবুও নীতু ইচ্ছাকৃত ভাবে রুক্ষ বিহেভ করেছে। এটা ছাড়া তো কোন গতি নেই।নীতুর কি তাজের জন্য খারাপ লাগে না?লাগে।তবুও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে কিন্তু তাজ সেটা পারেনি।তাজের কাছে এখন কেবল একটাই অপশন, সে হলো সেতু!শুধুমাত্র সেতু!নীতু তাজের জীবনে কোন ম্যাটার করে না।তাজকে পিছুটান ফেলে বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে।আর আজকের ব্যবহারের পর তাজের জন্য তা খুবই সহজ হবে!নীতু চোখের জল শাড়ির আঁচলে মুছে দিয়ে ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসি ফুটিয়ে বলে,”একদম কাঁদবি না নীতু।কান্নার মত কিছুই হয়নি।তাজ কখনোই তোর ছিল না।অযথা ছোট বাচ্চাদের মত কান্না করে লাভ নেই!আর কারো জন্য চোখের জল ফেলবিনা সেই ওয়াদা ভুলে যাচ্ছিস কেন?”
নীতুকে একা একা কথা বলতে দেখে সিএনজি ওয়ালা অবাক চোখে পিছনে ফিরে তাকায়। সিএনজি ওয়ালার চোখের দৃষ্টি বলছে তার গাড়িতে কোন মেয়ে প্যাসেঞ্জার নয় বরং কোন জিনে ধরা মেয়ে বসেছে।

*************

সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসের সবার সাথে কাজ করেছে নীতু।ভীষণ টায়ার্ড থাকলেও নতুন ডাটা প্রোজেক্ট নিয়ে সবাই ব্যস্ত।ছেড়ে দেয়া চুল গুলো এখন হাত খোঁপা করা।চোখের কাজলেও লেপ্টে রয়েছে।ঠোঁটের লিপস্টিক শুকিয়ে অবহেলায় পেলব ঠোঁটে লেপ্টে রয়েছে।নীতুর সেদিকে খেয়াল নেই। সে একমনে কাজ করে যাচ্ছে।

ঘন্টাদুয়েক পর অফিস ছুটি হলে নীতু কিছু কেনা কাটার জন্য বাজারে ঢুকে।নতুর প্রেজেন্টেশন নিয়ে সামনের দিনগুলো ব্যস্ত থাকতে হবে।বাসায় কিছু মুদি বাজার লাগবে তাই করা প্রয়োজন।আর সাথি ফোলা পেট নিয়ে এখন কিছুতেই এসব পারবেনা।
হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে নীতু।শাড়ির আঁচল কাঁধের উপর গুটানো।খোঁপাটাও পিঠের কাছে এলিয়ে পড়েছে। এদিক ওদিক দৃষ্টি ঘুরিয়ে রিকশা খুঁজে যাচ্ছে নীতু।
অভীক মায়ের ঔষধ কিনে ফিরছিল রিকশায়। দূর থেকেই নীতুকে দেখতে পেয়ে রিকশা ছেড়ে দিয়ে পায়ে হেঁটে নীতুর সামনে এসে দাঁড়ায়। ভুতের মত অভীককে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীতু চমকে ওঠে। অভীক হাতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,”বাজার করলেন বুঝি?”
নীতু জবাব দিল না।চোখে মুখে বিরক্তি আর রাগ খেলে গেলো নীতুর।দুপুরের আচরণ মনে হতেই চোখের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফেললো।নীতুর এমন আচরণে অভীক ঠোঁট টিপে হেসে ফেললো।তারপর বললো,”এখানে ভীর হয় বলে কোন রিকশা পাবেন না।কিছুটা গলির সামনে আগাতে হবে।চলুন একই সাথে না হয় হাঁটি যেহেতু গন্তব্য একটাই!”

নীতু অনেকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাঁটা ধরলো। ব্যগের ভারে হাত ব্যথা করছে।দাঁড়িয়ে না থেকে চলাই ভালো।নীতুকে হাঁটতে দেখে অভীক মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে নীতুর পাশাপাশি হাঁটা শুরু করে।কয়েক মিনিট পরেই অভীক নীতুর হাত থেকে ব্যগ টান মেরে নিজের হাতে নিয়ে অভীকের হাতে থাকা ঔষধের প্যাকেট আর কোটটা নীতুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে আবার হাঁটা শুরু করে।এত দ্রুত সব ঘটে যাওয়ায় নীতু বোকা বোকা মুখ করে দাঁড়িয়ে পরে।তবুও অভীককে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করেনা।অভীক কয়েক পা সামনে হেঁটে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। পিছনে ঘুরে নীতুর উদ্দেশ্যে বলে,”মিস নীতু দাঁড়িয়ে পড়লেন কেন?আপনার মতলব কি?আপনি নিশ্চয়ই এটা আশা করছেন না?আমি আপনাকেও ব্যাগের মত কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করি?এসব চিন্তা মাথায় আসলেও ঝেড়ে ফেলে দিন। আমি এতটাও পরোপকারী নই।বুঝেছেন?দ্রুত আসুন!”

অভীকের এমন ধারার কথায় নীতুর পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। অভীকের কাছে এসে নীতু শাসিয়ে বলে,”আপনি কি চাইছেন স্যার?আমি রাগের মাথায় আপনাকে খুন করি?”‘

“আমি কিছুই চাইছিনা।আর এখানে আপনার স্যার নই আমি।এখন আমি একজন কেবল দায়িত্বশীল প্রতিবেশী। বুঝেছেন মিস নীতু? ”

নীতু আর কিছুই বললো না।এখন কথা খরচ করা শুধুই বেকার। তাই ফুটপাতের রাস্তার পাশ ঘেঁষে নীতু হাঁটতে শুরু করে।পাশাপাশি নিঃশব্দে হাঁটছে অভীকও।মৃদু বাতাসে নীতুর শাড়ির আঁচল উড়ছে।হাতে ধরা অভীকের কোট আর চোখে অজস্র বিরক্তির নিশান! সোডিয়ামের আলোয় মাখামাখি নীতুর অন্যরকম এক রুপ!অভীক আড়চোখে সবটাই পর্যবেক্ষণ করছে।হুট করে একটা বেসামাল হোন্ডাচালক এলোমেলো ভাবে একদম নীতুর গা ঘেঁষে চলে যেতে নিলে অভীক একমুহূর্ত দেরি না করে নীতুর হাত ধরে অভীকের ডান পাশে নীতুকে সরিয়ে আনে। সাথে সাথেই আবার নীতুর হাত ছেড়ে দেয় অভীক এবং স্বাভাবিক ভাবে আবার চলতে শুরু করে।কিন্তু নীতু স্বাভাবিক হতে পারলো না।অভীকের এমন নিঃশ্চুপ অধিকার খাটানো কর্মকান্ডে নীতুর দম আটকে আসলো। হাত পা তিরতির করে কাঁপতে লাগলো।নীতুকে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভীক শান্ত স্বরে বলে,”এবার কিন্তু ইভটিজিংয়ের স্বীকার হচ্ছি আমি!”

নীতু সাথে সাথেই দৃষ্টি ঘুরিয়ে ফেললো।কিছুক্ষণ পর একটা রিকশা পেতেই অভীক হাতের ইশারায় রিকশা থামিয়ে নীতুকে উঠতে ইশারা করলো।নীতু যন্ত্রচালিত পুতুলের মত উঠে পরলো।নীতু যে এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি তা অভীক বেশ বুঝতে পারলো।একটু হাতের ছোঁয়ায় কোন নারীযে এতটা লজ্জা পেতে পারে তা অভীকের ধারণা ছিলনা।নীতু বসতেই অভীক খুবই যত্নের সাথে বাজারের ব্যাগটা নীতুর পায়ের কাছে রাখলো।উদ্ধত শাড়ির আঁচলটা পায়ের কাছ থেকে উঠিয়ে নীতুর কোলের কাছে রাখলো।ঔষধের প্যাকেট হাতে তুলে নিলো।তারপর নীতুর চোখের দিকে একরাশ সম্মোহনী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,”মিস নীতু, ময়ুর বা কাক কখনোই আমার পছন্দের তালিকায় নেই।না আছে কোন বিশ্বসুন্দরীর স্থান।আমার তো পছন্দ নাকের ডগায় মুক্তোর মত জ্বলজ্বল করতে থাকা রাগের ন্যায় আত্মসম্মানটুকু!একটু রাগলেই যার নাক ঘামে সেটুকুই আমার পছন্দের তালিকায় বিদ্যমান!”

নীতু বিস্মিত বিহ্বলিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অভীকের দিকে।অভীক রিকশাওয়ালার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললো,”মামা সাবধানে যাবেন।আর ভাড়াটা ম্যাডামই আপনাকে দেবে।”
তারপর নীতুর দিকে ফিরে বলে,”মিস নীতু খুচরো টাকা নেই আমার কাছে ভাড়াটা দিয়ে দিবেন।কিছু মনে করবেন না যেন? আর মুখের হা বন্ধ করুন নতুবা পোকা মাকড় প্রবেশের সম্ভাবনা আছে! ”
এরপরই অভীক চলে গেলো।নীতুর হাতে তখনো শক্ত করে আঁকড়ে ধরা অভীকের কালো রঙের কোটটা।যা সম্পর্কে নীতু পুরোপুরি ভুলে বসে আছে।এই এতকিছু ছাপিয়ে অভীক যে তার পাশে রিকশায় বসলো না একটুকু ভদ্রতা নীতুর ভালো লেগেছে!এই ভালো লাগা দিয়ে নীতু অভীকের উপর দুপুরের রাগ কাটাকাটি করে ফেললো, ঠিক কাটাকাটি অংকের মত!

*************

রাত এগারোটা। সেতু কল করলো তাজকে।তাজ বিষন্ন মনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল।অফিস থেকে ফিরে কিছুই খায়নি তাজ।দরজা আটকে বসে আছে বারান্দায়। আজকে নীতুর ব্যবহার আর নীতু দুটোই কেন যেন তাজ মানতে পারছে না।ভীষণ অস্থির লাগছে।ঠিক সেই মুহুর্তে সেতু কল করে।অনিচ্ছা সত্বেও তাজ কলটা রিসিভ করে। ওপাশ থেকে সেতু উদ্ধিগ্ন কন্ঠে বলে ওঠে, “কি ব্যাপার আপনি নাকি অফিস থেকে ফিরে কিছুই খাননি?তারউপর রুম আটকে বসে আছেন।শরীর ঠিক আছে তো?”
এতক্ষণ নিজেকে সামলাতে পারলেও এখন আর সামলাতে পারলো না তাজ।হুট করেই সকল রাগ, মেজাজ খারাপ গিয়ে পরলো সেতুর উপর।এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো,এই মেয়েটাই সব কিছুর জন্য দায়ী? না সেতুর সাথে মায়ের দেখা হত আর না সেতু তার বউ হতো।আর না আজ নীতু তার জন্য নিষিদ্ধ কেউ হতো।
তাজ চিৎকার করে বলে ওঠে, “সব কৈফিয়ত তোকে দিতে হবে?কে তুই?বউগিরি দেখাস…..তোর বউগিরি *****!”

বিচ্ছিরি কিছু স্ল্যাংয়ের শব্দে সেতু বিমূঢ় হয়ে পড়ে।হাত থেকে খসে পড়ে মোবাইলটা। দুচোখের পাতা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে আসে।চোখের সামনে তাজের মুখটাকে বড় কুৎসিত হয়ে ভেসে ওঠে! সেতু মুখচেপে হু হু করে কেঁদে দেয়!

চলবে,
আপনাদের অভিযোগের পাল্লাটা হয়তো ভারী হয়ে আছে কিন্তু আমি নিরুপায়! আমার আম্মুর জন্য সবাই দোয়া করবেন।আজকেও তাকে এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে নিয়ে এসেছি বাসায়। মা অসুস্থ হয়ে পড়লে যেন গোটা পৃথিবীটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here