কাননবালা পর্বঃ১৮

0
816

#কাননবালা!
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ১৮

সময় সকাল এগারোটা। নীতু সবজি কাটতে ব্যস্ত।সাথি ফোলা পেটে গোমড়া মুখো হয়ে বললো,”আপু আজ কি রান্না করবে?”

“টমেটোর ডাল।তোর জন্য কবুতরের ঝোল।আর ডিম ভুনা।চলবে?”

“চলবে।তুমি যাই রাঁধো অমৃত লাগে আর আমি রান্না করলে করল্লা ফিলিং আসে।চুলে কি দিয়েছো?”

নীতু মাথায় হেয়ার প্যাক দিয়ে সবজি কাটতে বসেছিল।
“হোম মেড হেয়ার প্যাক দিলাম।একটু নিজের যত্ন,বুঝলি?”
সাথি হাসলো।বললো,”কি কি দিয়ে তৈরি করলে?”

“গতকাল অফিসে যাওয়ার আগে তিন চামচ মেথি ভিজিয়ে রেখে গিয়েছিলাম।আজ সেই মেথি আর তার নির্গত রস একসাথে ব্লেন্ডারে দিলাম।সাথে একটা পেঁয়াজ, ডিম, এলোভ্যারা দিয়ে ব্লেন্ড করে এক চামচ ক্যস্টার অয়েল।ব্যস তৈরি।”

“তুমিও পারো আপু।এত ঝামেলা আমার সয় না!এমনিতেই তোমার চুল সুন্দর।”

নীতু কেটে রাখা টমেটোর এক টুকরা সাথির মুখে ঠেসে দিয়ে বললো,”সবসময় নিজের যত্ন নিতে হয়।বুঝেছিস? অন্যকে ইমপ্রেস করার জন্য আমরা যতটা প্রচেষ্টা করি নিজের জন্য তার এক আনাও করি না।আমিও আগে এই কাজটাই করতাম।নিজেকে সাজাতাম অন্যের চোখে কি করে ভালো লাগবে তার জন্য। আর এখন নিজেকে সাজাই, যত্ন নেই আমার স্যাটিসফেকশনের জন্য।সবকিছুর যত্ন প্রয়োজন। সেটা হোক সম্পর্কে বা নিজের দৈনন্দিন ছোট ছোট কাজে।তোর কাছে সুন্দর শোপিস আছে বলে যত্ন নিচ্ছিস না,দেখবি একটা সময়ে এসে সেই জিনিসটা হয়তো নষ্ট হয়ে যাবে, না হলে মরিচা পড়ে যাবে।তখন সেই সুন্দর শোপিসটাও তোর কাছে বিদঁঘুটে লাগবে।সম্পর্ক গুলোর ক্ষেত্রেও তাই…. আর তোকে দিয়ে দিতাম কিন্তু ঠান্ডা লাগতে পারে তাই দিলাম না।”

সাথি নীতুর কথায় অবাক হলো না।বললো,”আপু তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে আমার।”

“তোর কাছেও আমার শিখার আছে।”

“কি?”

নীতু হাসতে হাসতে বললো, “কি করে বরকে জ্বালাতে হয়!”
সাথি কাঁদো কাঁদো চেহারায় তাকাঁলো।নীতু সাথির সেই কাঁদো কাঁদো মুখেই আবার একটা টমেটোর টুকরা ঠুসে দিল হাসি মুখে।

***********
নীতু আর সাথি বসে আছে অভীকদের ফ্লাটে।নীতুর অস্বস্তি হলেও সাথি খুবই চনমনে বসে আছে।অনবরত রুশিয়া বেগমের সাথে কথা বলে যাচ্ছে।আর নীতু চুপচাপ তাদের কথোপকথন শুনছে। এখানে আসার মোটেও ইচ্ছে ছিল না নীতুর কিন্তু অভীকের মা গতকাল থেকে দুবার তাদের চায়ের দাওয়াত দিয়ে গেছে।প্রতিবেশী মানুষ না আসলে অভদ্রতা হয়। তাই এখানে আসা।কিন্তু এসেও নীতু বিপাকে পড়েছে কিছুতেই নিজেকে সহজ করতে পারছে না।মনে হচ্ছে চুড়ি করে বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছে সেরকম ফিল হচ্ছে। ভদ্রমহিলা তাদের বসতে বলে কিচেনে চলে গেলো। সাথি বলে বসলো,”আপু তুমি এমন আনসসোশালের মত বিহেভ কেন করছো?আসার সময়েও গড়িমসি করলে, এখন তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে কিডন্যাপ করে এনেছি আমি।”
নীতু সাথির কথার জবাব দিতে পারলো না তার মধ্যেই রুশিয়া বেগম হাতে ট্রে নিয়ে ফিরলেন।নীতু গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। অভীককে দেখতে না পেয়ে অস্বস্তি কম হলেও একেবারে পুরোপুরি কাটছে না।আজ তো শুক্রবার।তারও তো বাসায় থাকার কথা। যদি নীতুকে এখানে দেখতে পেয়ে রাগারাগি করে?নীতুর গলা শুকিয়ে আসে।নিজেকে প্রবোধ দেয়, রাগারাগি কেন করবে? নীতু তার কি ক্ষতি করেছে?
এমনিতেও অফিসে বসে সবসময় নীতুর সাথে চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলে।নীতু আবার ঘামতে শুরু করে!

রুশিয়া বেগম বলে ওঠে, “নীতু তুমি তো কিছুই নিচ্ছো না।শরীর খারাপ? এভাবে ঘামছো কেন?”

নীতু ফ্যাকাসে হাসলো।সেই হাসি দেখে যে কেউ বলবে, নীতুকে মেরে পিটিয়ে হাসানো হচ্ছে!নীতু বড় করে দম ফেলে বললো,”আমি ঠিক আছি আন্টি।”

নীতু টি টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো বড়সড় ট্রেতে তিন পদের ফল, ডিম পোঁচ, মিষ্টি, শরবত সব রাখা।নীতু শরবতের গ্লাস হাতে তুলে নিল।সাথির দিকে তাকিয়ে দেখলো। সাথির মুখ মেশিনের মত চলছে।নীতু সাথির হাতে চিমটি কাটলো।তাতে সাথির খাওয়ায় ব্যঘাত ঘটলো না একটুও।
ভদ্রমহিলা আবার উঠে গিয়ে আমস্বত্ব নিয়ে এলেন।দুজেনর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,”আমার ননদের হাতের আমস্বত্ব।খুবই ভালো খেতে, খেয়ে দেখো।”
তাদের কথার মাঝেই অভীক সদ্য ঘুম ভাঙা চোখে এলোমেলো চেহারা নিয়ে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলো। প্রবেশ করেই বড়সড় ধাক্কা খেলো নীতুকে তাদের বাসায় দেখে।
রুশিয়া বেগম চিৎকার করে বললেন,”তুই এভাবে ন্যাংটো হয়ে আছিস কেন?”

অভীক গেঞ্জি পড়ে ঘুমাতে পারে না।থ্রী কোয়াটার প্যান্ট পড়ে ঘুমিয়ে ছিল।তাই দেখে তাকে কোন হিসেবে মা ন্যাংটো বললো?অভীক বুঝতে পারলো না। অভীক মায়ের এসব বেহিসেবী কথায় বিরক্ত হয়ে রাগী চোখে তাকালো।
ছেলের চাহনি দেখে রুশিয়া বেগম থতমত খেয়ে বলে উঠলেন,”আরে ওভাবে তাকাচ্ছিস কেন?আমি বলেছি মেহমানের সামনে এভাবে কেউ আসে?”

অভীক কিচ্ছু বললো না।গটগট করে নিজের রুমে ফিরে গেলো।
রুশিয়া বেগম নীতুর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”মা তোমরা সময় সুযোগ করে এসো আমার কাছে।আমি বুড়ো মানুষ সারাদিন এই বাসায় থাকি।তোমরা আসলে আমার ভালো লাগবে।”

ঠিক তখনই অভীক গেঞ্জি পড়ে সোফায় এসো ধপ করে বসলো।নীতু মনে মনে গুটিয়ে গেলেও স্বাভাবিক থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।অভীক বসেই বললো,”মা চা দিলে না তোমার মেহমানদের।”
রুশিয়া বেগম চা আনতে উঠে গেলেন।অভীক সাথির দিকে তাকিয়ে বললো,”কেমন আছো সাথি?”

“ভালো ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?”

“ভালো আছি।মাঝে মাঝে মায়ের কাছে এসো সাথি। আর কোন সমস্যায় পড়লে কখনো সঙ্কোচ করো না।জানিও আমাকে।”
সাথি হাসলো।নীতুকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে অভীক কথা বলছে।নীতু বুঝতে পারলো। সাথি বললো,”ভাইয়া আমরা তো এলাম আপনাদের বাসায়, আপনারা কবে যাবেন?”

অভীক দুই হাত প্রসারিত করে সোফার উপরের অংশে রেখে বললো,”না বললে কি যাওয়া যায়?মা বলেছে তবেই না এসেছো।”

“এখন তো বললামই। ”

অভীক একবার নীতুর দিকে তাকিয়ে বললো,”বলেছো কিন্তু একশো পার্সেন্ট সম্মতি আমি পাইনি।”

“মানে?”….. সাথি বুঝতে না পেরে বললো।

” আমি তোমার বাসায় গেলে তোমার সমস্যা না হলেও অন্যকারো সমস্যা হতে পারে!”

সাথি বুঝতে না পেরে বোকার মত তাকিয়ে রইলো। নীতু বুঝতে পারলো না,মি.অভীক সবসময় এমন ডিপ্লোমেটিক কথা কেন বলে?
রুশিয়া বেগম চা বিস্কিট চানাচুর নিয়ে এলো।সাথি চানাচুরের প্লেট হাতে তুলে খাওয়া শুরু করলো।নীতু সেদিকে তাকিয়ে বিরক্ত হলো।দিনদিন প্রেগ্ন্যাসির সময় যত বাড়ছে সাথির তত খাওয়া বেড়ে যাচ্ছে।হয়তো হরমোনাল চেইঞ্জের কারণে। অভীক চা পানে মনোযোগ দিল।চোখ মোবাইলের স্ক্রিনে। রুশিয়া বেগম নীতুর পাশে বসে নীতুর হাত ধরে বললো,”নীতু জানি আমরা তোমার সাথে অন্যায় করেছি কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে না।তুমি সেসব ধরে রেখো না মা।মাঝে মাঝে আমার কাছে এসো।আমার ভালো লাগবে।”

নীতুর অস্বস্তি হলো এসব কথায়।নীতু তাকিয়ে দেখলো অভীক মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত।হয়তো শুনতে পেয়েছে সবটাই।নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,”আন্টি আপনি কষ্ট পাবেন না।আমি ওসব মনে রাখিনি।পুরানো সব কিছু ভুলতে না পারলে আমি আপনার সামনে বসে থাকতাম না।আমি বহুবার ভেঙেছি কারো কথায়, কারো কাজে, কারো ঘৃণ্য ব্যবহারে কিন্তু নিঃশেষ হয়ে যায় নি।এই যে আমাকে দেখছেন, অনেক কিছু ত্যাগ করে আজ আমি এখানে।সবটা সহজ ছিল না কিন্তু হয়েছে।আজ আমাকে ভাঙবার সাহস কারো নেই….সময় পেলে অবশ্যই আসবো আপনার কাছে।”

নীতুর কন্ঠে কিছু একটা ছিল।যা শুনে অভীক কেঁপে উঠলো।চোখের দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো নীতুর কৃষ্ণবর্ণ মুখশ্রীতে!মুহুর্তেই অভীককে শেষ করে দিল নীতুর শক্ত, কঠিন ইস্পাতের মত ধারালো ব্যক্তিত্ব।একরাশ অপরাধবোধ ঝেকে বসলো অভীকের শুভ্র মুখটিতে!

****************

সেতু এসেছে শুনে ইতু এসেছে ছেলেকে নিয়ে দেখা করতে।মহিমা বেগম তাদের সাথে কথা বলে মেয়েদের জন্য নাস্তা বানাতে উঠে পড়লেন। সুরভি এখনো ফিরে নি।নিখিল সকাল সন্ধ্যা অফিস করে আর রাত হলে ছেলেকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ছেলে আর ছেলের বউয়ের চিন্তায় মহিমা বেগম নিজের প্রেসার হাই করে ফেলেছেন।

মা উঠে যেতেই দু বোনে অনেক্ক্ষণ গল্প করলো।ইতু কথা বলতে বলতেই পর্বেক্ষণ করলো সেতুকে।সেতু আগের মত ফটফট করে কথা বললেও চঞ্চলতা কোথাও যেনো মিয়িয়ে গেছে। ইতু সেতুর মাথায় হাত রেখে বললো,”সেতু ওবাড়ির সব ঠিক আছে?কোন সমস্যা নেই তো?তাজ স্বামী হিসেবে কেমন? ”

সেতুর গলার কাছে কান্না এসে দলা পাকালো।আজ দুদিন হলো এসেছে মাত্র একবার কল করেছে তাজ।তাও জানতে ঠিকঠাক পৌঁছেছে কিনা? আর কোন খবর নেয় নি।অথচ ওই নিষ্ঠুর মানুষটার জন্যই সেতুর ক্ষণে ক্ষণে কান্না পাচ্ছে, বুকের ভিতর অস্থির লাগছে।বাড়িতে এসেও সবার সাথে ঠিকমত কথা বলতে পারছে না।হাসতে পারছে না,খেতে পারছে না।সবখানেই তাজকে অনুভব করে। ইতু পুনরায় একই কথা জিজ্ঞেস করলে সেতু হাসিমুখে বলে,”এমন গোয়েন্দার মত কথা বলছো কেন আপু?চিন্তা করো না সব ঠিকাছে।তাজ খুবই ভালো মানুষ। আর শাশুড়ীও খারাপ না কেবল একটু অহংকারী তা সামলে নিতে আমি নিজেই একশো।”……বলে সেতু তুতুনের সাথে খেলায় মেতে উঠলো।
আর ইতু বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো বোনের দিকে।ইতু সেতুর চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পেরেছে কিচ্ছু ঠিক নেই।তারপর তো এখন পুরোপুরি সিওর হলো।আগের সেতু হলে অভিযোগ করতো,কান্না করতো,আবদার করতো কিন্তু বর্তমানের সেতু তা কিছুই করলো না।যে মেয়ে ছোটবেলা থেকে সবকিছু বেশি বেশি পেয়েও অভিযোগ করতো তোমরা আমাকে ভালোবাসো না।আজ সে কি সুন্দর হাসি মুখে বলে দিল, সব ঠিক আছে। শুধুমাত্র বিয়ে নামক বন্ধনে জড়ালেই কি এতটা পরিবর্তন করে দিতে পারে মেয়েদের?

***********
একটা উন্নত ধরনের রেস্তোরাঁয় বসেছে আজকের মিটিং।অভীক, নীতু পলাশ,রিপা আরো তিনজন আছে আজকের সৌজন্য মূলক মিটিংয়ে।সামনে বসা ক্লায়েন্টদের সাথে অনবরত কথা বলে যাচ্ছে অভীক।নীতু এই অভীককে দেখে আশ্চর্য হয়।একটা মানুষ কাজকে কতটা প্রাধান্য দিলে এভাবে পরিশ্রম করতে পারে।স্বচক্ষে না দেখলে নীতু তা জানতো না।
দুই ঘন্টার মিটিং শেষে চললো খাওয়া দাওয়া।এত ব্যস্ততার মাঝেও অভীক ঠিকই খেয়াল করলো পলাশ আজকে মিটিংয়ের থেকেও নীতুকেই দেখতেই বেশি মগ্ন। অভীক খেতে খেতেই নীতুর দিকে তাকালো।ল্যাভেন্ডা রঙের শাড়ি, চোখে কাজল, কপালে ম্যাচিং টিপ,মাঝখানে সিঁথি করে লম্বা চুল গুলো ছড়িয়ে দেওয়া পুরো পিঠজুড়ে ।ঠোঁটে হালকা রঙের ছোঁয়া, এক হাতে ঘড়ি আর একহাতে চারটে কাচের চুড়ি।যাতে বর্তমানে রিনরিন শব্দ হচ্ছে চামচ নাড়িয়ে খাওয়ার ফলে। কাঁচের শার্সি ভেদ করে মধ্য দুপরের দুপুরী রোদ এসে পড়েছে নীতুর মুখের বাম পাশে। যেন একরাশ মিঠের রোদ্দুরের স্নিগ্ধতা!
অভীক দৃষ্টি সরিয়ে নিল।
ক্লায়েন্টরা চলে যেতেই নীতুরাও উঠে পড়লো।ঠিক সেই সময় ঘটলো অঘটনটা।নীতুর জুতোর সাথে শাড়ি পেঁচিয়ে পড়ে যেতে নিল আর খুব দ্রুততার সঙ্গে পলাশ নীতুকে ধরে ফেলল কোমড় পেঁচিয়ে। যেন পলাশ এই মুহুর্তের জন্যই তৈরি ছিল।অভীকের হাতের মুঠো শক্ত হয়ে গেলো,চোখের তারায় ঝিলিক দিল ক্রোধের আগুন।

পলাশ উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো,”তুমি ঠিক আছো নীতু?”
নীতু সাথে সাথেই সরে গিয়ে বললো,”আমি ঠিক আছি।”….বলে অভীকের দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠলো। রক্তাভ চোখ দুটিতে যেন অজস্র রুক্ষতা!
অভীক গমগম স্বরে বলে ওঠে, “এবার যাওয়া যাক।”

সবাই যে যার মত সামনে এগালে পলাশ এক্সকিউজ মি বলে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো।রিপা আর বাকি তিনজন একটু সামনে এগোতেই অভীক নীতুর দিকে ফিরে তাকালো।নীতু অভীকের পিছন পিছন হাঁটছিল।অভীকের এমন আকস্মিক দাঁড়িয়ে পড়ায় নীতু বিভ্রান্তের দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।অভীক কিছুটা নীতুর দিকে ঝুঁকে হিসহিসিয়ে কিন্তু রাগী স্বরে বলে,”জানেন তো মিস নীতু সবাইকে সব কিছুতে শোভা পায় না।কাক কে যেমন ময়ুর সাজালে সুন্দর লাগে না তেমন ময়ুর কখনো কাক সাজে না।যার যতটুকু যোগ্যতা তার ততটুকু পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত!হাই হিল পড়ে যদি হাঁটতেই না পারেন তবে কেন মিছে মিছে আধুনিক সাজার চেষ্টা করা?সুন্দর শাড়ি পড়লে, হাই হিল পড়লেই কেউ বিশ্বসুন্দরী হয়ে যায় না। সৌন্দর্য বিষয়টা কখনো এভাবে আসে না!”

মুহূর্তেই নীতুর চোখে পানি এসে গেলো।এতবড় অপমানে শরীর বিষিয়ে উঠলো।নাক মুখ রাগে লাল হয়ে গেলো।সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো সাথির উপর।কতবার বলেছিল উচু জুতো পরবে না তবুও বলে কিনা শাড়ির সাথে এটাই মানানসই।আজকে মিটিং… হেনতেন বলে রাজি করালো।আর অপমানিত কার হতে হলো?নীতুকেই তো।

অভীক চলে যেতে নিলেই নীতু ছলছল চোখে দৃঢ় কিন্তু শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,”স্যার আমার যোগ্যতা কতটুকু তা আমি জানি।আমার অফিশিয়াল যোগ্যতা সম্পর্কে বলার রাইট আপনার থাকলেও আমার ব্যক্তিগত কোন কিছু সম্পর্কে বলার রাইট আপনার নেই।আমি নীতুই ঠিক আছি, আমার বিশ্বসুন্দরী হবার প্রয়োজন অতীতেও ছিল না বর্তমান, ভবিষ্যতেও হবে না।বিশ্বসুন্দরীদের দরকার পড়ে আপনাদের। যারা মানুষ বিবেচনা করেন সৌন্দর্যের পারদ দিয়ে! আর ময়ুর হয়ে খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকার থেকে আমার কাকই সই!”…….বলে নীতু গটগট করে হেঁটে বেড়িয়ে গেলো।নীতু ফিরে তাকালেই দেখতো পেতো অভীকের ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসির রেখা!

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here