কাঞ্জি #সাদিয়া_খান(সুবাসিনী) #পর্ব:২৮

0
12

#কাঞ্জি
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব:২৮

আবৃতির আফসোসের সুর মোটেও পছন্দ হয় না শাহরিয়ারের। কিছুটা বিরক্ত হয়ে সে বলল,

“ওয়াজিফা যখন এটা নিয়ে কথা বলতে চায় না তুমি কেন এতো বেশি কথা বলছো?একটু বেশি হচ্ছে না?”

“মানুষ হিসেবে খারাপ লাগছে।”

“খারাপ লাগা যাবে না আবৃতি। এটা অন্য কাউকে নিয়ে নয়, তোমার স্বামীকে নিয়ে বলছে।আর তুমি নিজেও উস্কানিমূলক কথা বলছো।”

“সে কিছু বলেনি।আমি নিজেই বলেছি।”

“কারণ সে বাস্তবতা বুঝে, নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখে চলতে জানে। তুমি সেটা বুঝতে পারছো না।ওকে সহমর্মিতা দেখাতে গিয়ে উল্টো অপমান করছো।একজন অতীত ভুলতে চাইলে তাকে ভুলতে দাও আবৃতি।”

শাহরিয়ারের ধমকের কাছে আর কোনো কথা চলে না।এই মুহুর্তে সে টিচার মুডে চলে গেছে।এই মুডটা বেশ ভয় পায় মেয়েটা।কিন্তু স্ত্রীর অধিকার বলেও একটা কথা আছে।তার স্ত্রীর অধিকার বলছে এই মুহুর্তে গাল ফুলিয়ে অভিমান করে বসে থাকাটা।সে তাই করলো। নিছক অভিমানেই গলে যায় শাহরিয়ার।তার হাতে হাত রেখে বলে

“কাউকে ভালোবাসাটা বড্ড অন্যায় আবৃতি, যদি তাকে বিয়ে করার নিয়ত না থাকে।”

“আমি সেটা বলিনি।কেবল…..

” বাইরে অনেক সুন্দর আবহাওয়া। তুমি কি যাবে?জানো র বাড়িতে আমার একটা সাইকেল আছে।চলো?”

উত্তরের অপেক্ষা করে না শাহরিয়ার। এক প্রকার তাকে টেনে নিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে চাঁদের আলোতে।

পরদিন বিকেলে

“তোমার ছেলে শিক্ষিত, তোমাদের টাকা পয়সাও যথেষ্ট তবে ডিভোর্স দেখে ভয় পাচ্ছো কেন?”

শাহরিয়ারের মা পুনরায় আঁচলে দুই চোখ মুছে। চোখ দুটো তার লাল হয়ে গেছে। নাক টেনে টেনে সে বলল,

“শত্রু যদি ঘরেই থাকে তাহলে কিছুই করার থাকে না। ওই বাড়ির সবাই আমার বিপক্ষে।আমি একা কি করতে পারবো?ওরা সবাই মিলে আমাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে।”

“নাস্তানাবুদের ভয় পেলে কান্না থামাও।যা চলছে মেনে নাও।”

“এই মেনে নেওয়াটাই পারতেছি না।আমার ছেলের আশেপাশে ওই মেয়েকে আমার সহ্য হইতেছে না।”

বান্ধুবীর দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় শায়লা বেগম।শাহরিয়ারের মা তার ছোটো বেলার সই।আজ তার কাছে একটা অযৌক্তিক পরামর্শের জন্য এসেছে। শায়লা বেগমের চার ছেলে। সবাই তার কথা মান্য করে চলে, এমনকি ছেলের বউগুলোও লক্ষী মন্ত পেয়েছে। শাশুড়ির কথাই যেন এই বাড়িতে শেষ কথা। সে কিভাবে নিজের ছেলের বউদের হাতে রেখেছে এটাই জানতে এসেছে সে৷ সইয়ের এমন হটকারিতায় উদ্বিগ্ন হলেও প্রকাশ করেন না শায়লা বেগম। তার সই কাঁদছে এই কথা বলে যে ছেলেটা নিজ ইচ্ছেমতো বিয়ে করেছে, সেই মেয়েকে মেনে নিতে পারছে না।অথচ এই ঘরের কথা সবার অজানা।শায়লা বেগমের বাড়ির প্রতিটি ছেলে নিজ নিজ স্ত্রীকে পছন্দ করেই এনেছে।সম্পর্কের কথা শায়লা বেগম জানার পর এক মুহুর্ত দেরী করেনি,প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সমাজের সকলের সামনে নিয়ম মেনে, সন্তানের সুখের কথা চিন্তা করে নিজের অপছন্দের কথা মনেই রেখেছেন। সারা জীবন সংসার করবে তার ছেলে।সে যদি মেনে নিতে পারে তবে তার আপত্তি বড় বিষয় না করাই ভালো। এই যে বড় বৌয়ের কপালে একটা কাটা দাগ, যে দাগটার জন্য পুরো জীবন মেয়েটা কথা শুনে এসেছে, বার বার পাত্রপক্ষ ফিরে গেছে অথচ তার ছেলেটা সেই কাটা দাগে আদর, সোহাগ করে। বাকী বউরা সেসব নিয়ে হাসাহাসি করে বড় বউকে জ্বালাতন করে। সব কিছুই দেখে শায়লা বেগম।তার ছেলের সমস্যা না হলে তার কি?

অথচ সমাজের চোখে সে একজন শাশুড়ি। এই যে প্রতিদিন বিকেলবেলা আসরের নামাজ শেষ তার স্বামী পুত্রবধূদের জন্য ঠোঙায় করে ভেলপুরি, ঝাল মুড়ি বা ভাজা পোড়া নিয়ে আসে, বাড়ির বউরা সেসব খাওয়ার সময় আড্ডায় খিলখিল করে হাসে সেসব লোকে দেখে না।লোকে দেখে শায়লা বেগমের ইশারায় ছেলের বউরা যেকোনো কাজ করে৷ তাদের সেবাযত্ন করে। দুই ঈদ বা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাপের বাড়ি যায় না কিংবা শাশুড়ী বা শ্বশুরকে অসুস্থতায় সেবা করা।

শায়লা বেগম শাহরিয়ারের মাকে তেমন কিছুই বললেন না।তিনি কেবল কু বুদ্ধি দিয়ে বললেন,

“যত পারিস মেয়েটাকে নিজের কাছে রাখিস।ওর হাতের খাবার খাবি কিংবা ওকে বলবি তোর চুলে তেল দিয়ে দিতে, হাদিসের বই পড়ে শোনাতে।আর হ্যাঁ তোর ছেলে বাড়িতে এলে কিন্তু ভুলেও ওকে কাজ দিবি না।”

“কেন?আমি তো চাই আমার ছেলের থেকে ও দূরে থাকুক।”

“বোকা, এইটা করলে তোর ছেলে বউ নিয়ে আলাদা হয়ে যাবে।তুই ওদের এক সাথে রাখার চেষ্টা করবি।প্রয়োজনে ঘুরতে পাঠাবি।”

“তুই ঠিক কি বলতে চাইছিস?”

“তুই যখন বলছিস মেয়েটা ভালো না তবে নিজের উপর দোষ কেন নিবি?তোর ছেলে আর ছেলের বউকে এক সাথে রেখে দেখ।বনিবনা না হলে দুজন দুজনকেই ছেড়ে যাবে।অযথা নিজের উপর দোষ নিবি কেন?”

শাহরিয়ারের মায়ের এই আইডিয়াটা বেশ পছন্দ হলো। খুশি মনে সে বেরিয়ে গেল। তার পিছনে দাঁড়িয়ে শায়লা বেগম মনে মনে বললেন,

“আমি প্রার্থনা করি,এরপরের বার তুই যখন আসবি সেদিন যেন তোর আজকের দিনের কথা ভেবে লজ্জবোধ হয় সই। দোয়া রইল, এতিম মেয়েটাকে পুত্রবধূ নয় বরঙ মেয়ে হিসেবে আগলে নিতে পারিস।”

শাহরিয়ারের মা গেটের সামনে এসে থমকে দাঁড়ায়। বছর ষোলোর এক মেয়ে গাছের থেকে মেহেদী পাতা তুলছে। পরিচয় জানতে চাইলে বলে শায়লা বেগমের মেয়ে শিমু।মেয়েটিকে ভীষণ মনে ধরেছে তার।ওয়াজিফার থেকেও সুন্দরী, অল্পবয়সী। ফিরতে ফিরতে তার কেবল মনে হয়
সইয়ের কাছে তার মেয়েকে চাইলে নিশ্চয়ই সে ফেরাবে না।

চলবে (এডিট ছাড়া।যারা পড়েন রেসপন্স করবেন।আর হ্যাঁ আগামীকাল এক পর্ব দিবো।পড়বেন?”

৩৯% ছাড়ে কুরিয়ার ফ্রিতে মাত্র ৩৬৫ টাকায় #ক্যামেলিয়া বই পাবেন বই কথক-boi kothok এ। বিস্তারিত কমেন্টে।

#ছবিয়াল:chobighor Narayanganj

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here