#কাঞ্জি
#পর্ব-৩৪
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
শাহরিয়ার ফিরলো দুদিন পর। দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পেল আবৃতি শাড়ি পরে খুব সুন্দর করে সেজেগুঁজে দাঁড়িয়ে আছে আয়নার সামনে।খাবার টেবিলে ঢাকা দেওয়া খাবার জানান দিচ্ছে রান্না হয়েছে দারুণ কিছু।আবৃতির মুখে কোনো অভিমান নেই,রাগ নেই।ভিতর ভিতর ভয় লাগছিল শাহরিয়ারের। গত দুদিন এখানে আসার সময় পায়নি সে। কেন পায় নি সেই বিষয় বড়ই দুঃখ জনক।শাহরিয়ারের বাবা স্ট্রোক করেছেন।তাকে নিয়েই ছুটতে হয়েছিল ঢাকার দিকে।দুদিন পর অবস্থা স্টেবল হলে আজ বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। শাহরিয়ার নিজেও আবৃতির কাছে ফোন না থাকার কারণে ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে গিয়েছিল।তার দুই চোখের ক্লান্তি জানান দিচ্ছে কতোটা ধকল গেছে।আবৃতি কি বুঝবে এসব? না কি আর পাঁচ জনের মতো প্রশ্ন করবে,রাগ করবে শেষে কিছু বাজে ঘটে যাবে?
দরজা লাগিয়ে জুতোর র্যাকে বসে জুতো খুলছিল সে। আবৃতি তাকে দেখেও না দেখার ভান করে রান্নাঘরে চলে গেল।চুলো থেকে কিছু একটা নামাচ্ছিল সে।জুতো খুলে শাহরিয়ার ড্রয়িং রুমে বসে গা এলিয়ে দিতেই একটা গ্লাস তার সামনে এগিয়ে দিলো আবৃতি। শাহরিয়ার ভ্রু-কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কি এটা?”
“পড়া পানি।”
গ্লাস হাতে নিতে নিতে শাহরিয়ার বলল,
“আচ্ছা,তো কিসের জন্য এই পড়া পানি?”
“স্বামী বস করার জন্য।”
চুমুক দিয়ে শাহরিয়ার বুঝতে পারলো এটা ঠান্ডা লেবুর শরবত। প্রচন্ড তাপদাহে ক্লান্ত শরীর এর থেকে অধিক কিছুই চায় না।গত দুদিন ঠিক মতো দুই চোখের পাতা এক করতে পারেনি।এক দিকে বাবার চিন্তা অন্য দিকে আবৃতির সাথে যোগাযোগ না করতে পারার আফসোস। ঝটপট গোসল সেরে বেরিয়ে আসতেই ডাক পড়লো খাবার টেবিলে।ধোঁয়া উঠা গরম ভাতের সাথে ইলিশ ভাজা আর গরুর মাংস রান্না করেছে আবৃতি। ভাগ্যিস বাজারটা অন্তত করে দিতে পেরেছিল।না হলে মেয়েটা দুদিন অনাহারেই থাকতো।অথচ সে জানতেও পারলো না আবৃতি সত্যি দুদিন অনাহারেই ছিল।
আবৃতির রোগটা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।ছোট্ট আবৃতিকে কল্পনা করা এবং তার সাথে কথা বলা,তার আবদার পূর্ণ করা। দুদিন যাবত এভাবেই দিন কাটছিল তার।আজ সে শাহরিয়ারের জন্য রান্না করেনি,শাড়িও পরেনি।এটা ছিল ছোট্ট আবৃতি, যে আবদার করেছে আজ এসব খাবে।কান্নারত আবৃতিকে না কি তার ভালো লাগছিল না।তার কথা শুনেই তো আজ এসব আয়োজন। শাহরিয়ার যখন ফিরলো তখন ছোট্ট আবৃতি দৌড়ে বেরিয়ে গেছে সদর দরজা দিয়ে।সে যাওয়ার আগে বলে গেল,
” দুই দিন এখানে আটকা পড়েছিলাম।আমি ঘুরে আসি।তুমি মন খারাপ করে থেকো না কিন্তু। তোমার খারাপ লাগলে আমাকে ডেকো।আমি চলে আসবো।”
শাহরিয়ার দেখলো আবৃতি তেমন কিছুই খাচ্ছে না।তাই চেয়ার টেনে তাকে কাছে নিয়ে এলো। নিজের প্লেট থেকে এক লোকমা ভাত তার মুখের দিকে তুলে দিয়ে বলল,
“ক্লান্ত লাগছে তোমাকে।ঘুমাওনি দুদিন?”
আবৃতি কোনো কিছুই বলল না।শাহরিয়ারের মনে এই কারণে আরো বেশি ভয় লাগছিল।কারন আবৃতি রাগ না করলেও অন্তত জিজ্ঞেস তো করবে?অথচ কিছু করলো না।ক্লান্ত মস্তিষ্ক আর কিছুই ভাবতে চাইলো না। ভরপেট খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম এসে জমা হলো দুই চোখে।আবৃতি কাজ শেষ করে রুমে আসতেই দেখতে পেল শাহরিয়ারের ফোন অনবরত বেজেই চলেছে। কোনো কিছু না ভেবে ফোন রিসিভ করলো সে। অপর পাশ থেকে ওয়াজিফা জিজ্ঞেস করলো,
“কোথায় তুমি?বলে গেলে মিনিট দশের মধ্যেই চলে আসবে।এখনো এলে না?আমি একা কীভাবে সব সামাল দিবো।আর কেউ নেই এখানে।দ্রুত চলে এসো।”
“আপু আমি বলছি।ও ঘুমাচ্ছে।”
“আবৃতি?কেমন আছো?কি খবর তোমার?”
” ভালো আছি।তুমি?”
“ভালো নেই।এতো চাপ আমি নিতে পারছি না।তুমি এই সময় কোথায় আছো?তুমি নেই অথচ তোমার গোটা দায়িত্ব আমাকে দেখতে হচ্ছে।পারলে ফিরে এসো।ভুল মানুষের হয়।দূর্ঘটনায় কারোর হাত থাকে না।একটা বার সবার সাথে কথা বলার চেষ্টা তো করো।”
আবৃতি বাকী কিছু শুনলো বলে মনে হলো না।কারণ তার একটা কথা বার বার কানে বাজতে লাগলো,
“তোমার গোটা দায়িত্ব আমাকে দেখতে হচ্ছে।”
বারং বার মনে হচ্ছিলো সত্যিই তৃতীয় ব্যক্তি যতই শক্তিশালী হোক না কেন,সে তৃতীয় ব্যক্তিই থাকে। আবৃতি যে তাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি ছিল এটা আরো একবার প্রমাণ করে দিলো পরিস্থিতি।
চলবে(যারা গল্প পড়েন রেসপন্স করবেন।এডিট ছাড়া।
আর যাদের এতো এতো মাথা ব্যথার কারণ তারা অনুরোধ ক্রমে গল্প পড়বেন না। তাই আপনাদের মাথা ব্যথাও থাকবে না, নেগেটিভ মন্তব্য করার প্রয়োজন ও থাকবে না।কারণ দিন শেষে আমি নিজের জন্যই লিখবো।আপনাদের নেগেটিভ মন্তব্য আমার ইচ্ছে বা লেখা পরিবর্তন করবে না।)
পড়ুন ইবুক “টেল মি হোয়েন” মাত্র ৫০ টাকায় বইটই তে
https://link.boitoi.com.bd/rt44
#ছবিয়াল:পিন্টারেস্ট