#কাঞ্জি
#পর্ব- ৩১
#সাদিয়া খান সুবাসিনী
অভিমানের সুর কেঁটে গেল শাহরিয়ারের মিনতি এবং ভালোবাসার কাছে।নিজের সর্বস্ব সঁপে দেওয়া যায় যে পুরুষ মানুষের কাছে সেই পুরুষের প্রতি নারীর অভিমান কেবল লোক দেখানো। তোমার সনে কথা নাই গো সখা এ যেন কেবল মুখের বুলি মাত্র। স্বামীর হাত থেকে খাবার মুখে তুলে নিয়ে সে বলল,
“আমার নিজের খুব খারাপ লাগছে।আমি কিছুই করতে পারছি না।”
“আমি তো তোমার দোষ দিচ্ছি না।বাদ দাও।”
আবৃতি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকে।এতো ভালোবাসা, স্নেহ কোথায় জমিয়ে রাখে শাহরিয়ার? খাওয়া শেষ হতেই উঠে দাঁড়ায় শাহ।হাত বাড়িয়ে আবৃতির হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল,
“আমি যেমন তোমার স্বামী তেমনি আমার মায়ের ছেলেও।তুমি অভিমান করো না।আমার এখন যেতে হবে।রাতে না ফিরলে রাগ করবে?কাল তোমার জন্য বেলী ফুল নিয়ে আসবো।”
না ফেরার কথা শুনে বর্ষার বিকেলের হুট করে মেঘ জমে গেল আবৃতির মুখে।এইতো সবে এলো তবে এক্ষুণি যাওয়ার কি প্রয়োজন? তার মনে হলো ধারালো নখ দিয়ে কেউ খামছে ধরেছে কলিজাটা। প্রচন্ড যন্ত্রণায় সে কাঁদতে ভুলে হাসতে লাগলো।মুখে স্মিত হাসি ধরে রেখে বলল,
“আমার কোনো সমস্যা নেই।আপনি খেয়াল রাখুন।”
শাহরিয়ার মায়ের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বোন এবং মায়ের কথোপকথন শুনতে পেল।ভিতরে দুইজন কথা বলছে বিকেলের ঘটনা নিয়ে।
“মা একটা সত্যি কথা বলবে?”
“আগে বল তোর ভাই কোথায়?”
“নিজের ঘরেই আছে। আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো।”
“কি?”
“তুমি তো আবৃতিকে মেনে নিতে পারোনি।তাই কি তুমি আজকে নিজের ক্ষতি করতে বসেছিলে?”
“আসলে ঠিক তাই নয়।”
“মা এমন কাজ আর করিও না।কারণ আজ অনেক বাজে কিছু হয়ে যেতে পারতো।”
“বিশ্বাস করবি কি না জানি না। তবে আজ আমার মনে এসব কিছুই ছিল না।আমি কেবল রান্নার উদ্দেশ্যেই গিয়েছিলাম।কিন্তু কি হলো বুঝলাম না।আমি তখনো জানি না আবৃতি বাসায় নেই।ওকে অনেক ডাকাডাকি করেও পাইনি।তখন তোর বাবাকে কল দেওয়ার জন্য উঠেছিলাম কিন্তু পা ফসকে আবার পড়ে যাই।উঠতে পারছিলাম না। পায়ে হাত দিয়ে বসে বসে কাঁদছিলাম তখন তোর ভাই আসে।”
“অযথা সবাই আবৃতিকে কথা শোনালো।আমিও কত কিছু বললাম। ভাইয়াও ভুল বুঝলো।”
“বুঝুক।তোমার ভুল ভাঙানোর দরকার নেই।আমি তো বলিনি কিছু। আমাকে জিজ্ঞেস ও করেনি। কেউ নিজ থেকে ভুল বুঝলে আমার কিছুই করার নেই।”
শাহ রুমে প্রবেশ করলো না। নিজ স্ত্রীকে ভুল বুঝেনি কিন্তু ওভাবে কথা তো বলেছিল। তার উচিৎ ছিল অন্যভাবে বিষয়টা সামলে নেওয়া।যাতে আবৃতি নিজেও কষ্ট না পায় আবার তার মায়ের দিকটাও ঠিক থাকে।ধীরে ধীরে সে বেরিয়ে গেল ছাদের উদ্দেশ্যে। আবৃতির কাছেও ফিরে গেল না। সিগারেটের প্যাকেট এবং লাইটার নিয়ে ছাদে চলে এলো।সিগারেটে টান দিয়ে আকাশের একাকীত্বের দিকে তাকিয়ে রইল সে। মেয়েটাকে প্রচন্ড ভালোবাসে শাহ। হারিয়ে ফেলার ভয়ে বিয়ে করেছে। কিন্তু বুঝতে পারেনি সব সময় আগলে রাখতে পারবে কি না।এখান থেকে তাকে দূরে নিয়ে থাকাই যায়।ক্যাম্পাসের পাশেই তাদের জন্য ফ্ল্যাট কিনেছিল।ধীরে ধীরে সাজিয়ে গুছিয়েও নিয়েছে দুজনে।আবৃতি কি যেতে চাইবে সেখানে? পরিবার থেকে দূরে চলে যাওয়া মানেই সব সমস্যার সমাধান? বুঝতে পারছে না কিছুই।
“আমি কি তবে ভুল করলাম? আবৃতিকে নিজের কাছে রেখে? ও তো পৃথিবীর সকল সুখের অধিকারী। জলে ভেসে থাকা কোমল পদ্ম। আমার কাছে থেকে কতোটা সুখ পাবে সে?আজ না হয় আমি তাকে ভুল বুঝিনি।কাল যে ভুল বুঝবো না কিংবা আমার মন মানসিকতা বদলে যাবে না এটা কে জানে?”
তবে শাহ নিজ থেকে বদলে যেতে চায় না।সে আবৃতিকে নিজের বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখবেই।প্রয়োজনে সব কিছু নতুন করে শুরু করবে তবুও এই মেয়েকে ছাড়া যাবে না।নারীর ভরসা কয় জন পুরুষ পায়?ঠকে যাওয়ার এই সমাজে আবৃতিকে সে জিতিয়ে দিবেই দিবে। প্রয়োজনে নিজেকে হারিয়ে।
#চলবে ( আজ এই অল্প পড়ুন। ইনশাআল্লাহ আগামীকাল বড় করে দিবো।আজ প্রায় ৮০০ শব্দ কেটে গেছে। লিখতে বসে সেভ করার কথা মনে ছিল না।পুনরায় লিখে এটুক দিলাম।আগামীকাল ইনশাআল্লাহ দিব।যারা গল্প পড়েন তারা রেসপন্স করবেন।)
#ছবিয়াল:ইন্সটাগ্রাম