#কাঞ্জি
#পর্ব-৩০
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
পুরো পৃথিবীর মানুষ যদি কাউকে কষ্ট দেয় এবং সেই কষ্টটা সহ্য করা যায় যদি একজন বিশেষ মানুষ থাকে।যে মানুষটা ক্ষণিকেই সেই কষ্ট ভুলিয়ে দিতে পারে এবং ফুটিয়ে তুলে ভালোবাসার হাসি। সময়ের কালস্রোতে সেই মানুষটাও এক সময় কষ্ট দেয়। কিন্তু পুরো পৃথিবী তখন ব্যর্থ হয়ে পড়ে দুঃখ ঘুঁচাতে। আবৃতির মনে আজ সেই কষ্ট লেগেছে।পুরো পৃথিবী যে আজ ব্যর্থ হচ্ছে।বিছানার বালিশ প্রায় ভিজে যাচ্ছে তার দুই চোখের পানিতে। এমন কি অপরাধ ছিল তার?কেবল নিচেই তো নেমেছিল দাদুর কাছে। এজন্য এত বড় শাস্তি দেওয়ার তো কিছুই ছিল না।সোজা বাসা থেকে বের করে দিলো তাকে? না সে ফিরবে না।কোনো দিন আর এই মুখ শাহরিয়ারকে দেখাবে না।কাল সকালেই কোথাও চলে যাবে।এক্ষুণি যাওয়া যেত কিন্তু বাইরে অঝোরে ঝরছে মেঘ।দীর্ঘ সময় কান্না করার কারণে মাথাটা ভার হয়ে আছে।কখন ঘুমিয়েছে নিজেও খেয়াল করেনি।ঘুম ভাঙলো কারোর হাতের বন্ধন ধীরে ধীরে শক্ত হওয়াতে। ত্রস্ত-বিষাদমাখা শরীরে উঠে বসে মেয়েটা।পাশে শাহরিয়ারকে দেখতে পায়। বাহিরের পোশাক এখনো বদলায়নি সে৷ চোখে মুখে ভীষণ ক্লান্তি।আবৃতি উঠে বসলেও সে উঠেনি বরঙ মাথাটা আরো একটু ভালোভাবে বালিশে রেখে দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“আমি এখনো ফ্রেশ হইনি।পাঁচটা মিনিট এসে পাশে থাকলে কি হয় তোমার?তুমি তো স্বৈরাচারী প্রেমিকা হয়ে যাচ্ছো দিন দিন।”
“কেন এসেছেন? বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে আবার এখানে এসেছেন?”
“তাড়িয়ে দিলাম কোথায়?আমি তো তোমার বাঁচিয়ে দিলাম।”
“কীভাবে?”
শাহরিয়ার আবৃতির হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,
“আজ যা হয়েছে সেটা কেবল এক্সিডেন্ট কিন্তু কেন জানি না সবার মনে হচ্ছে তুমি থাকলে এমন হতো না।এটা তোমার সাথেও তো হতে পারতো। এটা মানছি তুমি থাকলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে পারতে কিন্তু এটার দায়ভার পুরোটা তোমার নয় পাখি।”
“সবার সামনে বলা উচিৎ ছিল।লোহা গরম থাকতে তাতে আঘাত করতে হয়।”
“মাঝে মাঝে লাভাকে শীতল হতে দেওয়াও প্রয়োজন হয়।আমি তখন বলিনি বলে যে পরবর্তীতে বলিনি এমন নয়। মাকে ওমন অবস্থায় দেখে আমাদের ভাই বোনের মানসিক অবস্থা ভীষণ বাজে হয়ে পড়েছিল।শাহানারা কান্নাকাটি করছে। এই মুহুর্তে ওকে কিছু বলা মানে আরো চিল্লাচিল্লি বাড়বে।ও নতুন সংসারে কেবল ঢুকেছে।”
“আমার সংসারের তো পঞ্চাশ বছর পূর্তি হলো তাই না?”
“বছর না হোক দিন তো হয়েছে?”
“এমন ব্যবহার না করাও যেতো।”
শাহরিয়ার উঠে বসে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আমি জানি তুমি কষ্ট পেয়েছো।কিন্তু আমি তখন কিছু বললে পরিস্থিতি বিগড়ে যেত। মা অসুস্থ বাবার মানসিক অবস্থা ভালো না।এটা তো সত্য মা তোমাকে এখনো মেনে নিতে পারেনি। মাকে কিছু বলা মানেই তুমি বুঝতেছো না কেন?আমি বুঝেছি আমি ভুল করেছি কিন্তু সবার কথা চিন্তা করেই তোমাকে এখানে থাকতে বলেছি।”
আবৃতির মন এবার গলে।অভিমানের তানপুরায় এবার সুর কাটে। উঠে চুল খোপা করতে করতে বলে,
“কিন্তু আমি চেয়েছিলাম আপনি তখন বলুন।পরে বলেছেন এটার প্রমাণ কী?”
“কী করা উচিৎ ছিল প্রমাণ রাখার জন্য?ফোন রেকর্ড? ”
“মন্দ হতো না।”
“এরপর থেকে করে রাখবো।”
“কী খাবেন?কিছু খাওয়া হয়েছে তো মনে হয় না?বাকীরা খেয়েছে?”
” বাইরে থেকে খাবার আনিয়েছিলাম।”
পুনরায় মেয়েটার মন খারাপ হয়ে যায়।সে এখানে না খেয়ে বসে আছে তার তারা সবাই বাইরে থেকে খাবার এনে খেয়েছে?কই সে তো খায়নি।মায়ের এতবার বলার পরেও গলা দিয়ে একটু খাবার অবধি নামেনি। ভালোবাসার মানুষগুলো এতো যত্ন নিয়ে কষ্ট দেয় কী করে?
গাল প্রায় ফুলিয়ে বসেছিল এমন সময় শাহরিয়ার বলল,
“এতো রাতে তুমি কি রান্না করবে আমার জন্য।খুব সমস্যা না হলে ভাত আর ডিম ভাজিতেই চলে যাবে। ”
চকিতে তার দিকে তাকায় আবৃতি।চোখে মুখে বিস্মিত ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আপনি খাবার খান নি?”
” না কিন্তু এবার ক্ষুধা লেগেছে। করবে কি?”
“ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার ব্যবস্থা করছি।”
রান্নাঘরের টুকটাক শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় রত্না বেগমের।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পায় আবৃতি রান্নাঘরে কাজ করছে। এক চুলোয় ভাত বসিয়েছে অন্য চুলোয় হয়তো মাংস।গন্ধে মো মো করছে পুরো ফ্ল্যাট।চট জলদি পর্দার আড়ালে চলে এলেন তিনি শাহরিয়ারকে দেখে। মেয়ে এবং মেয়ে জামাইয়ের একান্ত মুহূর্ত দূর থেকে দেখা উচিৎ নয় ভেবেও পুনরায় তাকালেন।সৃষ্টিকর্তার কাছে বার বার মিনতির সুরে বলতে লাগলেন,
“আল্লাহ্ আমার জীবনে যদি আমি কোনো দিন কারোর উপকারে এসে থাকি, অজান্তে ভালো কাজ করে থাকি সেই ভালো কাজের প্রতিদান আপনি আমার তিন সন্তানকে দিয়েন।তাদের জীবনে দুঃখ দীর্ঘ স্থায়ী করিয়েন না।”
তিন সন্তান! নিজেই মনে মনে কথাটা আওড়ালেন। অদিতিকে সে নিজের মেয়ে হিসেবে মেনে নিতে শুরু করেছেন তবে?
ভাত নিয়ে আবৃতি যখন রুমে এলো শাহরিয়ার ব্যস্ত নিজের মাঝে।ফোন রেখে হাত বাড়িয়ে প্লেট নিয়ে বসলো সে।প্রথম লোকমা ভাত আবৃতির মুখের সামনে ধরে বলল,
“তুমি আমার আত্মার অংশ হয়ে গেছো পাখি।আমি তোমাকে ছাড়া নিজেকে চিন্তা করতে পারি না। হয়তো মাঝে মাঝে আমাদের জীবনে এমন পরিস্থিতি আসবে যখন আমি তুমি একে অপরের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাবো।কিন্তু এই বলে কখনো ছেড়ে যেও না ভুল বুঝে।কারণ ভালোবাসাটা আমার অনেক দিনের।হারালে আমি মরবো না কিন্তু বেঁচেও থাকতে পারবো না।”
#চলবে (এডিট ছাড়া। যারা পড়েন তারা রেসপন্স করবেন।আর আমার নতুন ইবুক শশীপ্রভা পড়েছেন তো?
লিংক রইল।
পড়ুন ই-বই “শশীপ্রভা”
https://link.boitoi.com.bd/evSF
#ছবিয়াল:ইন্সটাগ্রাম