#কাজল_চোখের_মেয়ে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -৩
সকাল দশ-টায় সানা তাজ মাল্টিমিডিয়া প্রডাকশন হাউসে উপস্থিত হয়। আজ সানার পড়নে হালকা ব্লু কালারের লং কুর্তি, জিন্স আর এক পাশে ওড়না।চেহারায় নেই কেন প্রসাধনী। সাদামাটা ভাবেই এসেছে।
পরিচালক আর রাজ বসে আছে পাশাপাশি চেয়ারে। সানা এসে সালাম বিনিময় করে বসলো।
পরিচালক মামুন বললো,তোমার কিছু ফটোশুট করতে হবে।আর লুক সেট করতে হবে। এই নাও স্ক্রিপ্ট। এখান থেকে এই সিনটা আজকে শুট করতে হবে।
সানাকে মেকাপ রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু এখানে বাধলো বিপত্তি। সানা ভারি মেকাপ করবে না। মানে কিছুতেই করবে না।অবশেষে হালকা মেকাপ করিয়ে দিলো। কিছু সুন্দর ফটোশুট করার পর। জায়ান আর সানার কাপল ফটোশুট করলো।
এই প্রথমবার সানা কোন ছেলের এতোটা কাছে। সানা নিজেকে সামলে নিচ্ছে।
রাজ নিম্ন স্বরে বললো, নার্ভাস না হয়ে কম্ফোর্ট হও। নয়তো ভালো হবে না পিকচার। এগুলো আজকে লঞ্চ করবে।
সানা নিজেকে সামলে নিয়ে ফটোশুট শেষ করলো। শুট শেষ হতেই সানা আর রাজ পাশাপাশি চেয়ারে বসলো। দু’জনের হাতেই স্ক্রিপ্ট। মনযোগ দিয়ে সেটাই পড়ছে।
এরমধ্যে বাহির থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসতে লাগলো। রাজ উঠে বাহিরে আসলো সানাও আসলো রাজের পিছু পিছু।
মাহা চেচামেচি করছে পরিচালক মামুনের সাথে। চুক্তি করে কেন তার চুক্তি বাতিল করা হলো। সমস্ত মিডিয়ার লোক এখন এটা নিয়ে গসিব করছে।
রাজ বললো মাহা এভাবে চিৎকার করে কি হবে? যা হওয়ার হয়ে গেছে।আমাদের গল্প অনুযায়ী মিস সানা পার্ফেক্ট।
– এখন মনে হলো মিস সানা পার্ফেক্ট! আমাকে হায়ার করে অপমান করার মানে কি?
রাজ ঠান্ডা কন্ঠে বললো,বেশি চেচামেচি করে হাতের বাকি কাজ গুলো হারাতে না চাইলে, চুপচাপ মিডিয়ার সামনে যে বলো, কালকে সানাকে দেখে তোমার মনে হয়ছে সানা এই মুভির জন্য পার্ফেক্ট তাই তুমি পিছু হটে গেছো।
– তুমি আমাকে থ্রেট দিচ্ছ!
-ভালো পরামর্শ দিচ্ছি এটাও ভাবতে পারো আবার থ্রেট ও ভাবতে পারো। এটা তো জানোই সারফারাজ শাহরিয়ার শান্ত কখনো ফাঁকা আওয়াজ দেয় না।
নাউ ইউর চয়েস।
সানা বোকার মত তাকিয়ে থাকে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।
মাহা চলে যেতেই রাজ এসে বলে মিস সুনেহরা শুট করার জন্য রেডি তো।
‘জ্বি
– কোন রকম নার্ভাস হওয়া যাবে না। একদম রিলাক্সে সট দেবেন।
সব কিছু ওকে করে ডিরেক্টর বললো একশান…
রাজ বললো,এই যে মেয়ে কাজল চোখ!
– আপনার জন্য কি কাজল পড়া বাদ দিয়ে দেবো!
– উঁহু একদম না। কাজল ছাড়া তোমাকে অপূর্ণ লাগে।
– তাহলে সব সময় কাজল চোখ, কাজল চোখ বলে ডাকবেন আমায়!
– হুম তাই ডাকতাম তবে তোমার মাধবী নামটাও বড্ড মিষ্টি তাই মাঝে মাঝে মিষ্টি নামেও ডাকবো।
– কি যে বলো নাম আবার মিষ্টি হয় বুঝি?
– হুম হয় তো! এই আমার সামনে মিষ্টি নামের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
– তবে রুদ্র নামটা করলার মতো কেন? বলতে পারবে?
– আসলে বেশি মিষ্টিতে এলার্জি তো তাই রুদ্র তিত করলা আর মাধবী মিষ্টি।
– এই সরেন তো রাস্তা থেকে বাসায় যাবো।
– আসো এগিয়ে দিয়ে আসি।
– রুদ্র তুমি চাকরি খুঁজবা না। আর কত দিন এভাবে একের পর এক বিয়ে ভাঙবো?
– তুমি চিন্তা করো না খুব তাড়াতাড়ি কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
ডিরেক্টর বললেন কাট।সাথে সাথে ক্যামেরা বন্ধ হয়ে গেলে। সবাই হাত তালি দিয়ে বলে দারুণ সট।
সানা আরো কিছু দৃশ্য শুট করে বের হয়ে আসলো।
‘রাজ,পরিচালক মামুনকে বলল,মনে হচ্ছে এই সিনেমা সুপার হিট হবে?
– আশা করা যায়। দেখা যাক কি হয়।
সানা রাস্তায় আসতেই কয়েকজন ছুটে এসে বলে, কালকে তোমার অভিনয়ের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তাই না!
– হুম। সানা তাদের থেকর বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলো।
বাসায় এসে নিজের মাকে ধরে উল্লাস করতে করতে বলে,মা আমার সিনেমা আসছে মা খুব তাড়াতাড়ি আসছে!,
-সারাদিন কি করলি সেটা বল?
– শুটিং করলাম। আর কিছু ফটোশুটও করেছি। এবার আমাকে খেতে দাও তো ঝটপট।
______________________________________________
রাজ আজ নিজের বাসায়। বাসায় ঢুকেই সোফায় হেলান দিয়ে বসলো। চোখ বন্ধ করে ভাবছে, আচ্ছা রোজি আমি তোমাকে ছেড়েছিলাম!নাকি তুমি আমাকে ছেড়েছিলে? আমি তো শেষ পর্যন্ত আমার পাশে তোমাকেই চেয়ে এসেছি। কিন্তু তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে। ভালো আছো তো আমার ভালোবাসা?
রাজের এসিস্ট্যান্ট রিমি রাজের সামনে এসে বলে, স্যার আমি আজ তাহলে চলে যাই?
– রিমি আমার রুমে বেডের উপর একটা গিফট প্যাকেট আছে। ড্রাইভারকে নিয়ে সেটা পৌঁছে দিয়ে আসো।
– স্যার ঠিকানা।
– হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ট করছি।
– ওকে স্যার।
রিমি বের হতেই রাজ একটা সার্ভেন্টকে বললো আমার খাবারটা রুমে পাঠিয়ে দাও।
রাজ নিজের রুমে এসে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। ভাবছে সময় কত দ্রুত পাল্টে যায়। যাকে ছাড়া এক মিনিট থাকা দূর্বিষহ ছিলো। আজ তিন বছর তাকে ছাড়াই পার করে দিলো। মনে মনে বলছে, একটু মানিয়ে যদি থেকে যেতে খুব কি ক্ষতি হতো? আবার আনমনে নিজেই হাসে।
______________________________________________
রোজি চুলোয় চা বসিয়ে আনমনা হয়ে ভাবছে, জীবনে সব পাওয়া গেলেও ভালোবাসার মানুষটাকে না পেলে সারাক্ষণ কি এক শুন্যতা ঘিরে রাখে আমাদের।আমাদের কতশত আবদার বাচ্চামো সব আমরা আড়াল করে ফেলি। যেগুলো ভালেবাসার মানুষটাকে পেলে নির্দ্বিধায় করতাম। কেন এমন হয় উদাস দুপুরে বিষন্ন বিকেলে মন বারবার তোমার ছোঁয়া চায়।
চুলোর আঁচ কমিয়ে চা কাপে ডেলে নিয়ে রুমে চলে আসলো। ধোঁয়া ওটা চায়ের কাপের মত তার হৃদয় পুড়েও হয়তো ধোঁয়া উড়ছে! তবে কে দেখবে হৃদয়ের দহন। চায়ের কাপে কয়েক চুমুক দিতেই কলিং বেল বেজে উঠলো। রোজি এসে দরজা খুলতেই রিমিকে দেখতে পেলো। দু’জনেই দু’জনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
রোজি নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,কেন এসেছো এখানে?
– কেমন আছেন ম্যাম এটা আপনাদের নতুন বাসা!আপনারা কি লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলেছেন?
– তোমার বাজে কথা শোনার মত টাইম আমার নেই। চলে যেতে পারো।
– সরি ম্যাম আমি থাকতে আসিনি এই নিন স্যার পাঠিয়েছে। রিমি গিফটের প্যাকেটা দরজার সাসনে রেখে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলো।
রোজি দরজা বন্ধ করে গিফটা নিয়ে রুমে গেলো। চায়ের কাপে তখন আর ধোঁয়া নেই। রোজি চিন্তা করলো আচরণ চাও কি আমার মত পুড়তে পুড়তে সব সহ্য করে নিয়েছে! নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে হাতের প্যাকেটা খুলতে শুরু করলো। বেশি কিছু নেই একমুঠো কাচের চুড়ি আর কাজল সাথে একটা চিঠি।
চিঠি উঠিয়ে পরা শুরু করলো,,,, এই যে আমার না হওয়া আমার প্রিয়তমা। ভাবছো এখনো প্রিয়তমা কেন বলছি!তুমি আমার প্রিয়তমা ছিলে আছো থাকবে। একটা প্রশ্ন হৃদয়ে উদয় হয়। আচ্ছা বলতো আমরা কে কাকে ছাড়লাম? রোজির চোখ ভিজে উঠেছে, ইচ্ছে করছে চিৎকার করে বলতে, আমরা কেউ কাউকে ছাড়তে পারলাম না। দিন শেষে দুজনেই শুন্য।বাকিটুকু পড়ার শক্তি রোজির নেই। চিঠিটা স্বযত্নে রেখে চুড়ি গুলো হাতে পড়ে নিলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে মোটা করে কাজল পড়লো। চোখের পানি গুলো অঝোর ধারায় ছড়ছে। ফিরে যাওয়ার সব পথ বন্ধ না হলে, এখন হয়তো রোজি রাজকে জড়িয়ে ধরে বলতো বড্ড ভালোবাসি তোমায়।এভাবেই কথা অপ্রকাশিত কথা আমরা নিজের মাঝে জমিয়ে রেখে হৃদয়ে ক্ষত তৈরি করছি। ঠোঁটের কোনে শুকনো হাসি দিয়ে অভিনয় করে জীবন চালাচ্ছি।
______________________________________________
টানা তিন মাসের শুটিং শেষ করে একটু,রিলাক্সে আছে সানা।নিজের মোবাইল নিয়ে একটু ইনস্টাগ্রামের রিলস দেখছিলো,।তখনি চোখের সামনে আসলো একটা ভয়াবহ নিউজ। সানার হাত থেকে মোবাইলটা ধব করে ফ্লোরে পড়ে গেলো। সানা চিৎকার করতে চাইছে কিন্তু কোন শব্দ তার গলা থেকে বের হচ্ছে না।
#চলবে