পাতিলের কালির মত গায়ের রঙ নিয়ে এসেছো মুভির অডিশন দিতে! এই রঙে আবার কালো ড্রেস! কোথা থেকে উঠে চলে আসে এসব। সরে দাঁড়াও চোখের সামনে থেকে।
ডিরেক্টরের এমন ব্যবহারে বিষিয়ে উঠলো সানার মন। আচ্ছা রুপ কি গায়ের রঙে! তবে গুনি জনেরা যে বলে, রুপ হল আলাদা জিনিস গায়ের রঙে কেউ রূপবতী হয় না। তাহলে এসব কি মিথ্যে! সমাজে কালো রং এতো অবহেলিত কেন? অথচ শতশত মানুষের প্রিয় রঙ কালো। তবে গায়ের রং কালো হলে এতো লাঞ্চনা কেন?
ডিরেক্টর নিয়াজ গম্ভীর কন্ঠে বললেন,কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন!যাও চলে যাও এসব মুভির হিরোইন হওয়ার শখ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।এই রুপে নাকি সে হবে হিরোইন। কথাটা তাচ্ছিল্য করে বললো ডিরেক্টর নিয়াজ।
-আজ আমাকে রূপহীন বলে,অপমান করছেন তো!একদিন আমার বাসার বাহিরে আমাকে কাস্ট করার জন্য সিরিয়াল ধরবেন।
– আরেহহ যা যা তোর মত কত এলো কত গেলো রাতের রানী ও তোকে কেউ করবে না। আর হিরোইন হওয়া তো দূরের কথা।
নিয়তি শুটিং সেট থেকে মন মরা হয়ে বের হচ্ছে সানা।
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সানা। ছোট থেকেই তার শখ ছিলো অভিনয় করা।স্কুল কলেজে বিভিন্ন অভিনয় করেছে। কত এক বছর ধরে থিয়েটার করছে। কিন্তু নিজের গায়ের রঙের জন্য তার প্রতিভা কারো নজরে আসছে না। আনমনে হাঁটছে। এফডিসিতে আজ সারফারাজ শাহরিয়ার শান্ত ইন্ডাস্ট্রি বর্তমান হার্ট থ্রোর্ব হিরোর আপকামিং মুভির শুটিং চলছে।
সানার চোখ পড়লো সেদিকে। সারফারাজকে সামনে থেকে দেখার বহু দিনের ড্রীম ছিলো সানার।আজ সুযোগ পেয়ে দূর থেকে দাঁড়িয়ে তাদের সর্ট দেখছে।
তার নায়িকা মাহা মেহবুব।সারফারাজের সাথে মাহার কেমিস্ট্রি সব সময় সুপার হিট। সানা মুগ্ধ হয়ে শুটিং দেখছে আর মাহার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে দিবা স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এক সর্ট বারবার নিচ্ছে পার্ফেক্ট হচ্ছেই না।
সানা আনমনে বলে যাচ্ছে,আমার চোখে দেখো রুদ্র তুমি এচোখে শুধু দহন দেখতে পাবে।অপ্রাপ্তির ঢেউ দেখতে পাবে।রুদ্র আমার চোখে চোখ রেখে বলো,ভালোবেসে আমি দহন কেন পেলাম।কবির লেখা কবিতার মত আমার হৃদয় কেন ছিন্ন হচ্ছে! তুমি কি দেখতে পাচ্ছো রুদ্র। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ! সারফারাজের হাত নিজের বক্ষে রেখে বলে,তুমি কি পারবে এই রক্তক্ষরণ ঘুচিয়ে দিতে!
‘তোমার নয়নে নয়ন রেখে তোমাকে আমি ফেরাতে পারবোনা মাধবীলতা। তোমার বক্ষে যে দহন তা আমাকেও দগ্ধ করছে। মাধবী সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না।আমরা না হয় দূর থেকে বিরহ পুড়বো।
সবাই তালি দিয়ে বলে পার্ফেক্ট সর্ট। ওয়াও যাস্ট আমেজিং।
সানা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সারফারাজের দিকে। সানা যেনো স্বপ্নে দেখছে। সারফারাজ বললো,হেই মিস নাম কি তোমার।
-সুনেহরা তাসনিম সানা।
রাজ আর কিছু বলবে তার আগেই মাহা এসে বলে চলো এখান থেকে। তারপর চিৎকার করে বলে আজকের মতো প্যাকাপ।
সানা যেনো এতোক্ষণ স্বপ্নের ঘোরে ছিলো। নিজের হাতে চুমু দিয়ে বলে যাক তবুও ভালো কিছু হলো!
বাসায় এসে ফাইলস গুলো রেখে অলস ভঙ্গিতে সোফায় বসে বলে, আম্মু ঠান্ডা ঠান্ডা সরবত দাও তো।
– এই নে সরবত খেয়ে মাথা ঠান্ডা করে তাইমুরকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে যা আর কত ঘুরবি!এসব সিনেমা টিনেমা আমাদের জন্য না।
– সরবত রাখো আম্মু জানো আজ কি হয়েছে সারফারাজের সাথে আমার দেখা হয়েছে সে আমার সাথে অভিনয় করেছে। আমার তো আর ঘুম হবে না।
– এসব দিবা স্বপ্ন জেগে জেগে আর কত দেখবি!
– আহা আম্মু যাস্ট ইমাজিন করো আমি আর রাজ খুব শীগ্রই একি ফিল্মে কাজ কারছি।
-হ্যা তা তো করছিস তবে তুই রাজের সার্ভেন্ট এর পার্ট করছিস।
– আম্মু ইট’স নট ফেয়ার। দেখো প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার গায়ের রঙও তো চাঁপা তবুও তার অভিনয় তাকে কোথায় পৌঁছে দিয়েছে। একদিন আমার স্বপ্ন পূর্ণ হবে আম্মু দেখে নিও।
কোন একজন সারাফারাজ আর সানার ভিডিও ক্লিপ সোশাল সাইডে ছেড়ে দেয় মূহুর্তেই সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।
রাজ নিজের বাসায় এসে সাওয়ার নিয়ে এক কাপ ব্লাক কফি নিয়ে বসেছে খোলা বারান্দায়।
নিজের মোবাইল বেশিরভাগ সময় বন্ধ করে রাখে। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। ধোয়া ওঠা কফি মগে চুমুক দিতে দিতে হারিয়ে যায় অতীতে…….
বাবা আমি ক্রিকেটার হবো।
-নো মাই সন তোমাকে হিরো হতে হবে। মানে হবেই। সোহেল সিকদারের ছেলে তাকে তো হিরো হতেই হবে।
রাজের জীবনে এই অধ্যায়টা অপছন্দ বিরক্তিকর তবুও বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য এটাই তার প্রফেশন। নিজের ভালোবাসাকে হারাতে হয়েছে এই প্রফেশনের জন্য। ক্যামেরার সামনের সারফারাজ আর ক্যামেরার বাইরের সারফারাজের মধ্যে যেনো আকাশ সম পার্থক্য। আজ রোজির বার্থডে ঝকঝকে আকাশে একটুরো কালো মেঘ এসে মূহুর্তেই যেমন পুরো আলোকে ঢেকে নেয় রাজের মন ঠিক সে রকম হয়ে আছে। কফির প্রতি চুমুকে যেনো দীর্ঘ শ্বাস আর কষ্ট ছড়াচ্ছে।
রাজের এসিস্ট্যান্ট রিমি এসে বললো,স্যার আসতে পারি!
– কোন জরুরি দরকার?
– স্যার সম্প্রতি আপনার একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
– এটা আবার নতুন কি রিমি?
– স্যার আপনি যদি একবার৷ ভিডিওটি দেখতেন?
– আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ট করে রাখো সময় পেলে দেখে নেবো।আর হ্যা তুমি বাসায় চলে যাও। আজকের মত সব সিডিউল ক্যান্সেল করে দাও।
‘রিমি মনে মনে ক্ষুব্ধ হলেও মুখে তা প্রকাশ করলো না।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,স্যার আপনার বাসা থেকে কল এসেছিল। আন্টি আপনাকে ডিনার করতে বলেছে তাদের সাথে।
-বারোটার আগে পৌঁছে যাবো জানিয়ে দিও।
– ওকে স্যার।
এই এপার্টমেন্টে রাজ একাই থাকে। আলিশান এক ডুপ্লেক্স। সার্ভেন্ট আছে দশজনের মত। তবে রাজকে কেউ ডিস্টার্ব করতে পারেনা। যখন যাকে প্রয়োজন ইন্টারকমের মাধ্যমে ডেকে নেয়।
______________________________________________
দিশা বেগম সোহেল সিকদারকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আজ তোমার কারণে আমার ছেলেটা ঘর ছাড়া। জানিনা কি, কি করে বেরায়।
– তুমি যা ভাবছো তা করলে তো ভালোই! ২৮ বছরের একজন টগবগে যুবক, যে কিনা হাজার হাজার মেয়ের ক্রাশ। বর্তমানে টব হিরোদের তালিকায় যার নাম সবার উপরে, নিউজ ফিটের হট টক দ্যা গ্রেট সারফারাজ শাহরিয়ার শান্ত। সে যদি একটু আধটু ভুল করে ইট’স ওকে।
– তোমাকে দেখলা অবাক হই! মনে হয় সত্যিই কি আমার মত একজন মেয়ে তোমার মত কাউকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল!
– সুইটহার্ট তোমার এই নাকের ডগায় লেপ্টে থাকা রাগ আর এটিটিউড সব সময় আমার হৃদয়ে তুফান বয়ে আনে। ইশশশ রাগলে তোমায় কত্ত ভাল্লাগে বিউটি।
– সেদিন যদি জানতাম তোমার মত কেউ আমার জীবনে আসবে তাহলে নিজেকে আগেই শেষ করে দিতাম।
– সুইটহার্ট বাদ দাও তো সেসব কথা, তোমার ছেলে আমার মত চরিত্র পায়নি সে পেয়েছে তোমার মত পদ্যফুলের মত চরিত্র। আমার মত তার চরিত্র যদি গোবড়ের মত হতো, তাহলে তো এতোদিন কত কন্টভার্সি কানে আসতো। বাদ দাও সেসব কথা তোমার নবাব বাড়ি আসতে রাজি হয়েছে?
– বারোটার আগে আসবে।
– ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলে দিও যত রঙ তামাশা করতে ইচ্ছে করে করুক। তবে কারো সাথে বিয়ে শাদী যেন না করে।
– এসব কথা তুমি বলবে আমি মা হয়ে ছেলের সাথে এতো কুরুচিপূর্ণ কথা বলতে পারবো না।
– দিশা আই লাইক ইট। তোমার এই এটিটিউড আমাকে এখনো তোমার কাছে টানে লাভ ইউ ডার্লিং।
– অসভ্যতা করার একটা লিমিট থাকা দরকার। কয়েকদিন পর মেয়ে বিয়ে দিবে নিজের রুচি পরিবর্তন করো।
– হায় মে মার জাওয়া।
______________________________________________
সানা আজকে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। হুট করে সারার চিৎকার চেচামেচিতে ঘুম উবে যায় সানার। নিভু নিভু চোখে সারার দিকে তাকিয়ে বলে, এভাবে ষাঁড়ের মত চেচাচ্ছিস কেন?
– তুইতো সেলিব্রিটি হয়ে গেছিস বনু। এবার তোর নায়িকা হওয়া কেউ ঠেকাতে পারবেনা। খুব তাড়াতাড়ি টিভির পর্দায় তোকে দেখা যাবে যেখানে সংবাদিকরা বলবে,আমাদের সামনে এখন উপস্থিত আছে হালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুনেহরা তাসনিম সানা।আর চারে দিকে কড় তালিতে মুখরিত হবে।
সানা পিটপিট করে চোখ খুলে বলে,তোর মাথা ঠিক আছে তো?
#চলবে
সূচনা পর্ব
#কাজল_চোখের_মেয়ে
#নুসাইবা_ইভানা
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰