#কাজললতা
লেখিকা : ইভা আক্তার
পর্ব:২
কাজলটা দেখার সাথে সাথেই সেদিনের কথা মনে পড়ে গেলো। এক নিঃস্তব্ধ সন্ধ্যায় অচেনা পুরুষ কুরিয়ারের মাধ্যমে উপহার হিসেবে একটি নীল শাড়ি, দু- মুঠো নীল রঙের রেশমি চুরি, একটি কাজল আর নীল চিরকুট দিয়েছিলো। কে বা কেনো দিয়েছিলো তা জানা নেই তবে এতুটুকু জানি যে তার মনে রয়েছে তার কাজললতার জন্য অসীম ভালোবাসা।
সেদিন এসএসসি পরীক্ষায় A+ পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম। বাসায় এসে প্রত্যেককে একে একে ফোন করে খুশির খবরটা জানিয়েছিলাম। নিজের চরম শত্রুতা ভুলে ইফতি ভাইয়াকেও ফোন দিয়েছিলাম যেটা দেখে ছোটো চাচা থেকে শুরু করে ফুপ্পিরাও অবাক হয়েছিলো। হয়তো তারা কখনো ভাবতে পারি নি যে স্বয়ং আমি নিজ থেকে ইফতি ভাইকে ফোন করবো। সেদিন বিকেলে বান্ধবীদের ট্রিট দেওয়ার জন্য কেফেতে নিয়ে গেছিলাম। সেখানে ওরাও আমাকে বিভিন্ন ধরণের উপহার দিয়েছিলো। সন্ধ্যার দিকে বান্ধবীদের বিদায় দিয়ে বাসায় আসছিলাম তখনই দেখি বাসার সামনে এক কুরিয়ারের জামা পড়া লোক দাড়িয়ে আছে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম “কে আপনি? কাকে খুঁজছেন? ”
কুরিয়ারের লোকটি বললো, “আমি কুরিয়ার থেকে এসেছি। পার্সেলটা আদৃত চৌধুরীর মেয়ে ইভা চৌধুরীর জন্য। ”
আমার নামে পার্সেল এসেছে এটা শুনেই অবাক হয়ে গেলাম। কারণ আজ পর্যন্ত আমাদের বাড়ির কারো জন্যই কখনো কেউ কুরিয়ার পাঠায় নি। তাহলে আমার জন্যই বা কে পাঠাবে কুরিয়ারটা? এসব ভাবতে ভাবতেই কুরিয়ারে সাইন করে বাসায় নিয়ে এলাম। তারপর ড্রেসিং টেবিলের উপরে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ক্লান্ত ছিলাম তাই ফ্রেশ হয়ে রুমের ভিতর এসেই শুয়ে পড়লাম। কখন যে চোখ লেগে গিয়েছিল তা নিজেই টের পাই নি। রাত ১০ টায় আম্মুর ডাকে ঘুম ভেঙে মুখ ধুয়েই খাবার খেয়ে রুমে চলে এসে চুল আছড়াচ্ছিলাম।
তখনই ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখা সন্ধ্যার সেই পার্সেলটার দিকে চোখ পড়লো। হাজারো কথা চিন্তা করতে করতে কুরিয়ারটা খুলতেই ভিতরের জিনিস দেখে চরম লেভেলের অবাক হলাম। কারণ আমার জন্য কখনোই এরকম ধরণের গিফ্ট কেউ দেয় নি আজ পর্যন্ত। পার্সেলটার ভিতরে ছিলো, নীল রঙের খুব সুন্দর একটা শাড়ি। শাড়ি বরাবরের মতোই আমার খুব পছন্দের। কিন্তু এই শাড়িটা ছিলো আমার দেখা খুব সুন্দর একটা শাড়ি। যেই শাড়িটা দিয়েছে বলতে হবে তার পছন্দের জবাব নেই। ভিতরে আরো ছিলো নীল রঙের রেশমি চুড়ি আর একটা কাজল। সাথে একটা নীল চিরকুটও ছিলো। চিরকুটটা খুলে ভিতরের লেখা দেখে আমি আরও অবাক হলাম। চিঠিটিতে লেখা ছিলো,
“প্রিয় কাজললতা,
দেখিনি কভু তোমায় কাজল রাঙানো চোখে। তবুও তোমায় কেনো কাজললতা বলে সম্বোধন করছি জানো? কারণ আমার সপ্নে আমি দেখেছি তোমার ওই কাজল কালো দুটি চোখ। বাদামি রঙের চোখের মাঝে তোমার ওই কাজল টানা আখিঁ যেনো একরাশ মুগ্ধতা এনে জমা করছিলো। দেখেছিলাম তোমায় নীল শাড়িতে। তোমার দু-হাতে ছিলো নীল রঙ ভর্তি চুড়ি যার রিনঝিম শব্দ আমার হৃৎস্পন্দন বাড়ার কারণ হয়েছিলো। তোমার কোমড় পর্যন্ত কালো চুল ছিলো তোমার মায়াবতীর কারণ। বাতাসের দমকা হাওয়ায় তোমার সামনের চুল গুলি যেনো তোমার আঁখি জোড়া লুকিয়ে রাখছিলো যাতে কেউ তোমার কাজলটানা আঁখিতে নজর দিতে না পারে। আর তোমার এই নীল মায়াবতীর স্বাক্ষী ছিলো উপরের ওই নীল আকাশ। তোমার নীল রঙের সৌন্দর্যে যেনো উপরের ওই আকাশও নিজেকে নীল রঙে সজ্জিত করেছিলো।
হবে কি? আমার সেই নীল কাজললতা।
দেখবো কি? আমার স্বপ্নের সেই নীল পরির মতো তোমায়।
অপেক্ষায় থাকবে সেদিন পর্যন্ত তোমার এই ধৈর্যশীল প্রেমিক পুরুষ।
ইতি
কাজললতার প্রেমিক পুরুষ।
চিঠিটা পড়ে আপনা আপনি আমার ঠোঁটে ফুটে উঠেছিলো মৃদু হাসি। এতো এতো উপহারের মধ্যে যেনো এই প্রেমিক পুরুষের উপহারটিই আমার মনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলেছিলো। কে সেই প্রেমিক পুরুষ? যার কাছে আমি হলাম কাজললতা। দেখতে পাবো কি তারে? যে আমাকে দেখতে চায় নীল রঙে রাঙায়িত তার কাজললতার রূপে। শাড়ি যে আমার ভিষণ পছন্দের। তাহলে অপেক্ষার প্রহর কিসের?
সেদিন রাতেই আমি সেই অচেনা প্রেমিক পুরুষের দেওয়া নীল রঙের উপহারে রাঙায়িত হয়েছিলাম। দিয়েছিলাম আঁখিজোড়ায় তার দেওয়া কাজল। সেজেছিলাম তার প্রিয় কাজললতার রূপে। কেনো সেজেছিলাম জানি না। কেনো তার উপহার পেয়ে মুখে হাসি জমা হয়েছিলো তাও জানি না। অন্য সময় হলে হয়তো বা এসব অচেনা পুরুষের উপহার পেয়ে নাটক মনে করে ফেলে দিতাম। তবে আজ তাহলে কেনো ইচ্ছে হলো, অচেনা পুরুষের দেয়া উপহার পরিধান করতে? এসব কোনো কিছুর উত্তরই আমার কাছে ছিলো না।
সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছাদিত ছিলো, তখন এক অচেনা প্রেমিক পুরুষের কাজললতা নামক প্রেয়সী নীল রঙে সজ্জিত হয়েছিলো। ইসস, প্রেমিক পুরুষটা কি দেখতে পারবে না? তার সপ্নের নীল রঙের কাজললতাকে। যে কাজললতা তার অপেক্ষায় নীল শাড়িতে খোলা চুলে বৃষ্টির মধ্যে বারান্দায় দাড়িয়ে প্রহর গুনছিলো। আকাম্মিতভাবে ঠিক তখনই কে জানি কলিংবেল বাজালো। কি মনে করে যেনো মুখে মৃদু হাসি নিয়ে দৌড়ে গেলাম দরজা খুলতে। দরজা খুলেই ওপাশের ব্যক্তিটাকে দেখে আপনা আপনি মুখের হাসিটা উড়ে গিয়ে এক রাশ গম্ভীরতা বিরাজ করলো।……………..
চলবে…..🍁