#কাছে_দূরে ??
#muhtarizah_moumita
#পর্ব___৪২
—-‘ মনি এখনো বিয়ে করেনি?’
ইনান প্রশ্ন করলো। সাবাব ছাদের কার্নিশে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
—-‘ নাহ্।’
তরী উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,
—-‘ কি বলছো?এটা সত্যি!’
—-‘ হ্যাঁ সত্যি। ছোটমা এবং বাবাইয়ের খুন হওয়ার দু’বছর আগে মনি একবার এসেছিলো এই দেশে। বেশ ক’দিক ছিলোও এখানে। তখন মনিকে দেখলেই আমার কেমন যেন অদ্ভুত লাগতো। স্বাভাবিক মনে হয়নি কোনোদিন। তাই বাবাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মনির ব্যাপারে। মনির চালচলন, কথাবার্তা সবই কেমন অদ্ভুত লাগতো। মনে হতো মনির মনে এক বাইরে আরেক। মানে ভেতরে একরূপ বাইরে অন্যরূপ। মনি বাবাইয়ের সাথে অদ্ভুত ভঙ্গিতে কথা বলতো। মাকেও অনেকবার বলতে শুনেছিলাম। মা ছোটমাকে বলতো, ‘মনি তোমার মতো নয়।’ এমন অনেক কিছুই ছিলো। তখন বাবাই একদিন হঠাৎ আমায় বলল, ‘জানিস চ্যাম্প মনি কিন্তু এখনও বিয়ে করেননি।’ আমি শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কেন বাবই? মনির জন্য কি তোমার মতো কাউকে পায়নি?’ বাবাই মলিন হেসে বলেছিলো, ‘বড় হ তখন বলবো।’ ব্যস ঐটুকুই শুনেছিলাম বাবাইয়ের থেকে। আর কখনও জানা হয়নি।’
রাতুল ভাবুক কন্ঠে বলল,
—-‘ বাই এনি চান্স, মনি কি রিয়াদ স্যারকে পছন্দ করতেন?’
মির ফট করে উত্তর দিলো,
—-‘ হতেই পারে।’
ইনান এবং তরী মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। তরী দ্বিধায় পরে বলল,
—-‘ ব্যাপারটা কি এমন ছিলো, মনি রিয়াদ স্যারকে ভালোবাসতেন আর রিয়াদ স্যার কনিকা ম্যামকে।’
সাবাব দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লো। আকাশের পানে মুখ তুলে বলল,
—-‘ এর জবাব মনি দিবে।’
‘কিন্তু কিভাবে?’
সবার কন্ঠেই উদ্বেগ। সাবাব জবাব দিলো না। কিছুক্ষন আকাশের পানে মুখ তুলে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে কোনো কিছুর হিসাব কষে তারপর বলল,
—-‘ কাল থেকে আমাদের নিউ মিশন স্টার্ট হবে। আর সেই মিশন থাকবে শীলাকে যেকোনো ভাবে ফাঁসানো। মনিকে হুট করে ফাঁসানো সম্ভব নয়। তাই শীলাই হবে বলির পাঠা। শীলা মনির ডান হাত। মনির বেশির ভাগ কুকর্মের সাক্ষী শীলা।’
তরী সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলো,
—-‘ আমারও সেটাই মনে হয়। শীলাকে ফাঁসাতে পারলেই মনির জায়গাটা নড়বড়ে হবে। এন্ড দেন মনিকে পাকরাও করাও ইজি হবে।’
সাবাব মাথা নেড়ে বলল,
—-‘ হুম, তবে একটা ডাউট আছে৷ আমার মনে হচ্ছে মনি কাল দেশ ছাড়বে।’
ইনান,মির এবং রাতুল তিনজনে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলল,
—-‘ তোর হঠাৎ এরকম টা কেন মনে হচ্ছে?’
—-‘ জানিনা। তবে যদি আমার আশংকা সত্যি হয় তাহলে আমাদের প্ল্যান বি আগে করতে হবে।’
তরী বলল,
—-‘ প্ল্যান বি?’
সাবাব হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।
—-‘ মনিকে ফলো করে মালয়েশিয়া যেতে হবে।’
মির অবাক কন্ঠে বলল,
—-‘ কি বলছিস?’
—-‘ ইয়েস। আর মনিকে ফলো করে তরী এবং মির যাবে। তোদের দু’জনের সঙ্গে আভিক এবং কিরনও যাবে। তোরা দু’জন ওঁদের টিম লিডার থাকবি। এদিকে আমাদের আগের একটা প্ল্যান ছিলো। রাঙামাটি মিশন।’
রাতুল বলল,
—-‘ রাঙামাটি মিশন?’
—-‘ ইয়াপ। রাঙামাটি মিশন। একটা ছেলের খোঁজ বের করা। সিয়াম নামের। আমার মনে হয় ওর পরিবারের সাথে কোনো না কোনো ভাবে কানেক্টেড বাবাইয়ের মার্ডার কেস। কিছু একটা আছে। সেটাই খুঁজে বের করতে হবে। মির?’
মির প্রশ্নবিদ্ধ মুখ করে তাকালো।
—-‘ তুই বরং টিকিট কেটে রাখ। কোনো ভাবে আমার সন্দেহের সাথে মিলে গেলে ব্যস, মনির খেল খতম। আব… তুই বরং ছ’টা টিকিট কাট। তোদের চারজনের সঙ্গে ইভান এবং মাহদীও যাবে।’
—-‘ ওকে সিওর।’
—-‘ তরী? রেডি থেকো। আমাদের প্ল্যানিং এট এনি টাইম কাজে লাগত পারে।’
তরী চোখ ঝাপটে বলল,
—-‘ ইয়েস।’
—-‘ আমি বরং বাকিদের ইনফর্ম করে দেই।’
রাতুল বলল,
—-‘ আচ্ছা সব ঠিকাছে ভাই। কিন্তু রাঙামাটি মিশনে কি তুই একা যাবি?’
—-‘ আপাতত একাই যেতে হবে। ভাবছি হীরকেও নিয়ে যাবো।’
ইনান বাঁধ সেধে বলল,
—-‘ নো ওয়ে! এই মুহুর্তে তোকে আর ভাবিকে কিছুতেই একা ছাড়বোনা আমরা। আমি আর রাতুল তো ফ্রীই থাকবো। আমরা দু’জন যাচ্ছি তোর সাথে।’
সাবাব না করতে নিলেই সবাই একসাথে বারন করলো সাবাবকে। বিপদ বলে কয়ে আসবে না। সবসময় সাবধানে থাকাই উচিৎ।
_______________
সাবাব তার বন্ধুদের সাথে মিটিং শেষ করে নিজের রুমে ফিরলো রাত ২টায়। সাবাবের ধারনা ছিলো এতক্ষণে হীর ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু সে রুমে ঢুকে তেমন কিছুই আবিষ্কার করতে পারলো না। তার পুরো ফাঁকা পড়ে আছে। হীর তো দূর হীরের একটা চুলও এঘরে প্রবেশ করেনি। সাবাব আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না। সোজা চলে গেলো হীরের রুমে। হীরের রুমে সামনে এসে দাঁড়াতেই ভেসে এলো মিলির কন্ঠ।
—-‘ এ কেমন পাগলামি তোর? বিয়ের পর মেয়েরা তার স্বামীর ঘরে থাকে না তো কোথায় থাকে? হীর সাবাব ভাইয়া তোর এসব কথা শুনলে কি ভাববে বলতো? পাগলামি করিস না! চল আমরা তোকে সাবাব ভাইয়ার ঘরে দিয়ে আসি।’
হীর জেদ ধরা গলায় বলল,
—-‘ কিসের বিয়ে আর কেমন স্বামী? আমি কোনো বিয়ে ফিয়ে মানিনা। আমি আগে যেমন আমার ঘরে ছিলাম এখনও তেমন আমার ঘরেই থাকবো।’
—-‘ তো আপনি কি বলতে চান? আমি আরেকটা বিয়ে করে ঘরে আরেকটা বউ তুলবো?’
আকস্মিক সাবাবের গলা পেয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠলো এশা,মিলি। হীর রাগান্বিত চোখে তাকালো সাবাবের দিকে। এশা,মিলি অসহায় চোখে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।
হীর বিরক্ত কন্ঠে জবাব দিলো,
—-‘ তোমার ইচ্ছে। আমি এই বিয়ে মানিনা ব্যস।’
—-‘ মিলি? তোমার বান্ধবী কে বলো বেশি ঘাড়ত্যাড়ামি না করে যেন আমার রুমে চলে যায়।’
মিলি পড়লো বাঁকে। হীরের হাত ধরে অসহায় কন্ঠে বলল,
—-‘ হীর? কথা বাড়াচ্ছিস কেন বলতো? যা না।’
হীর তেতে উঠে বলল,
—-‘ বললাম তো যাবোনা। আমি আমার রুমেই থাকবো।’
—-‘ মিলি ওকে যেতে বলো।’
—-‘ মিলি ওকে বলে দে আমি কোথাও যাবোনা।’
—-‘ হীর! এবার কিন্তু কপালে দুঃখ আছে তোর!’
সাবাবের কথায় মিলি এবং এশা দু’জনে আঁতকে উঠে মুখ চেপে ধরলো। হীর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাবাব হীরের দিকে তেড়ে যেতেই মিলি আর এশা ছুটে পালালো রুম থেকে। হীর তাদের যাওয়া পানে তাকিয়ে দমে গেলো। কিন্তু প্রকাশ করলো না। একই রকম জেদ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সাবাব হীরের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াতেই হীরের গলা শুঁকিয়ে কাঠে পরিনত হলো। তবুও উপরে উপরে একই জেদের ভঙ্গিমা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সাবাব শান্ত কন্ঠে বলল,
—-‘ কথা না বাড়িয়ে রুমে যা। আজ থেকে ওটা তোরও রুম। ঐঘরের প্রত্যেকটা জিনিস এখন আমাদের দু’জনের হীর। আমার সব কিছুতে আজ থেকে তোর যেমন অধিকার। ঠিক তেমনই তোর সব কিছুতে আমারও সমান অধিকার।’
হীর রুক্ষ স্বরে বলল,
—-‘ কোনো অধিকার নেই। না আমার কোনো জিনিসে তোমার অধিকার আছে আর না তোমার কোনো জিনিসে আমার অধিকার আছে। দেখো ভাইয়া, আমি কিন্তু বার-বার বলছি আমি মানিনা এই বিয়ে। আমি মানিনা তুমি আমার স্বামী। আর এটাও মানিনা আমাদের কারোর উপর কারোর কোনো অধিকার আছে।’
সাবাব অধৈর্য্য হয়ে উঠলো। গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
—-‘ জেদ করিস না। এর ফল কিন্তু ভালো হবেনা। ভালো ভাবে বলছি চুপচাপ রুমে যা। তোর শরীর ভালো নেই। গতকালের এক্সিডেন্টের কথা ভুলে গিয়েছিস? তোর শরীর এখনও অনেক দুর্বল। তারপর আবার আজকের সারাদিনের ক্লান্তি। সব মিলিয়ে এই মুহুর্তে জেদ না দেখিয়ে তোর রেস্টের প্রয়োজন।’
—-‘ আমার শরীর একদম ঠিকাছে। আর সারাদিনের কোনো ক্লান্তিও নেই আমার। এখন তোমার যদি মনে হয় আমি ক্লান্ত আমার রেস্টের প্রয়োজন তাহলে আমি এঘরেই রেস্ট নিবো। আর এঘরেই থাকবো। আমাকে কেউ এঘর থেকে নিয়ে যেতে পারবেনা।’
—-‘ আমাকে রাগাস না হীর।’
—-‘ কেন? রাগলে তুমি কি করবে হ্যাঁ? আমি ভয় পাই নাকি তোমার রাগকে?’
সাবাব নিজেকে যথাসম্ভব কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। এখন রাগ নয় হীরকে ভালোবেসে বোঝাতে হবে। কারন আগে যাই ঘটুক বিয়েটা তো হীরের অমতেই হয়েছে। আর বাবার কথাগুলোও খুব আঘাত করেছে হীরের মনকে। সাবাব দীর্ঘশ্বাস ফেললো। হীরের দিকে নির্মল দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। হীরের কাছে আরেক পা এগিয়ে হীরের হাত জোড়া আলতো করে তুলে নিলো। কোমল গলায় বলল,
—-‘ হীরপরি! আমি জানি আজকের দিনটা, আজকের এই দিনের প্রতিটা মুহুর্তই খুব বেশি অদ্ভুত তোমার কাছে। সব কিছুই ভীষণ অস্বস্তি দিচ্ছে তোমাকে। সবটা মেনে নিতে তোমার খারাপ লাগছে বা কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু যা হয়েছে সবটাই আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের জীবনের কঠিন বাস্তবতার সাথে জড়িয়ে আছে সবটা। আমরা চাইলেই সবটা অস্বীকার করে এড়িয়ে যেতে পারবোনা। অস্বীকার করতে পারবোনা আমাদের বিয়ে। অস্বীকার করতে পারবো না আজকের ঘটে যাওয়া কঠিন বাস্তব গুলো। পারবো না…’
হীর তেজি কন্ঠে বলে উঠলো,
—-‘ তুমি পারছো না কিন্তু আমি পারছি। আমি পারছি সবটা অস্বীকার করতে। আমি পারছি তোমাকে আমার স্বামী না মানতে….
সাবাব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো হীরের দিকে। সে এবার নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলোনা। হীরের জেদকে ডিঙিয়ে করে ফেললো এক অদ্ভুত কাজ। হীরের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরলো হীরকে। হীর ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেলো। সাবাবের অদ্ভুত আচরনে বোবা হয়ে কুঁকড়ে যেতে লাগলো। সাবাব উন্মাদের মতো আঁকড়ে ধরলো হীরের ওষ্ঠদ্বয়। যেন কতকাল অভুক্ত ছিলো তার মন। চেপে ধরলো কোমর এবং পেটের খোলা অংশ। হীর পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেলো। নড়াচড়া তার দ্বারা সম্ভব নয়। সাবাব পাগলের মতো আচরন করতে লাগল। চুম্বন অবস্থাতেই সাবাব এক হাত উঠিয়ে আনলো হীরের ব্লাউজের হুকে। ঘটনার প্রবাহ বুঝতেই হীরের পিলে চমকে উঠলো। সাবাবের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য সেও পাগলামি শুরু করলো। সাবাবের বুকে পিঠে কিল-ঘুষি বসাতে লাগল। কিন্তু তাতেও বিন্দু মাত্র নড়লো না সাবাব। বরং আরও উন্মাদনায় মত্ত হলো সে। হীরের ব্লাউজের হুকের উপর থেকে হাত সরিয়ে এনে তার দু-হাত মুচড়ে ধরলো পেছন। একহাতে শক্ত করে চেপে ধরলো হীরের দু’হাত। হীর ব্যাথায় চাপা আর্তনাদ করলো। কিন্তু সাবাবের কানে গেলোনা সেই আর্তনাদ। সাবাব হীরের ওষ্ঠদ্বয় ছেড়ে হীরের গলায় মুখ ডুবালো। এক ভালো লাগার অনুভূতির থেকে মনের বিষাদ বেশি কাজ করলো হীরের। সাবাব হীরকে আগের অবস্থাতেই দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। পূনরায় এক হাত তুলে হীরের ব্লাউজের হুকের উপর রাখলো। হীর না পেরে চেঁচিয়ে উঠার প্রস্তুতি নিলো। কিন্তু সেই আশাতেও জল ঢালল সাবাব। হীরের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল,
—-‘ শশশ, চিৎকার করোনা যেন। বাইরে তোমার বান্ধবীরা দাঁড়িয়ে আছে। তোমার চিৎকার শুনে উল্টোপাল্টা ভেবে বসবে কিন্তু। তখন আবার বলোনা আমি তোমাকে টর্চার করেছি।’
হীর কান্না ভেজা গলায় বলে উঠলো,
—-‘ ছাড়ো আমাকে। কেন এমন করছো?’
—-‘ তোমাকে ছোঁয়া আমার হকে আছে হীরপাখি। আর স্বামীর মনের ইচ্ছে পূরন করা কিন্তু তোমার কর্তব্য। সুতরাং বাঁধা দিলে এর থেকেও বেশি টর্চারের স্বীকার হতে হবে।’
—-‘ আমি মানিনা তোমাকে স্বামী। তাহলে কর্তব্যের কথা উঠছে কোথা থেকে?’
সাবাব হীরের কথায় জবাব না নিয়ে ব্লাউজের একটা হুক টান মেরে খুলে দিলো। হীর আতংকে কেঁপে উঠলো। ঢোক গিলে নড়েচড়ে উঠতেই সাবাব দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—-‘ আরেকবার বলো এই বিয়ে তুমি মানো না?’
হীর দিগুণ জেদ নিয়ে বলে উঠলো,
—-‘ মানি না, মানি না, মানি না।’
সাবাব আবারও একটানে খুলে দিলো আরেকটা হুক। হীর দমে গেলো আতংকে। দমে গেলো তার জেদী কন্ঠ।চোখ জোড়া বন্ধ করে নিয়ে দেয়ালের সাথে মাথা চেপে ধরলো সে। ক্লান্ত কন্ঠে বলল,
—-‘ প্লীজ ছেড়ে দাও।’
সাবাব হীরের হাত দুটো ছেড়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়লো হীর। সাবাব তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
—-‘ রুমে চলো।’
—-‘ আই হেইট ইউ।’ (কান্না জড়িত কন্ঠে)
সাবাব মৃদু হাসলো। হীরের কথায় জবাব না দিয়ে আচমকা পাঁজা কোলে তুলে নিলো তাকে। হীর চমকে উঠে খামচে ধরলো সাবাবের শেরওয়ানি। সাবাব স্মিত হেসে বলল,
—-‘ ভয় নেই, পড়বেনা।’
হীর ঘৃণিত চাহনিতে চোখ ফেরালো। সাবাব সেই চাহনিতেই ভালোবাসা খুঁজলো। হীরকে কোলে করে নিয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখতে পেলো এশা এবং মিলিকে। দরজার পাশে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দু’জনে। হীরকে সাবাবের কোলে দেখতে স্বস্তির হাসলো তারা। সাবাব দু’জনের উদ্দেশ্য বলল,
—-‘ এতক্ষণে হয়তো তোমাদের এক ঘুম হয়ে যেতো। অযথা ওর জন্য তোমরাও সাফার করলে।’
এশা এবং মিলি অপরাধী চোখে তাকালো। হীরের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
—-‘ এমা ছি ছি ভাইয়া। এটা তো হীরেরই রুম বলো? আর ওর রুম থেকে তো আর আমরা ওকে বের করে দিতে পারিনা।’
সাবাব হাসলো। মাথা দুলিয়ে বলল,
—-‘ যাও ঘুমিয়ে পড়ো তোমরা।’
সাবাবের আদেশে চলে গেলো এশা মিলি। সাবাব আর দাঁড়িয়ে না থেকে হীরকে নিয়ে চলে এলো নিজের রুমে। হীরকে বিছানায় বসিয়ে বলল,
—-‘ আলমারি তে শাড়ি রাখা আছে। যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নাও।’
হীর শক্ত হয়ে বসে রইলো। সাবাব সেটা দেখেও কিছু বললো না। আলমারির কাছে গিয়ে নিজেই হীরের জন্য পছন্দ করে শাড়ি বের করে আনলো। শাড়িটা হীরের পাশে রেখে রুমের দরজা লক করে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। দশ মিনিট বাদে ফ্রেশ হয়ে বের হতে দেখলো হীর একই অবস্থায় বসে আছে। একটুও নড়েচড়েছে কিনা সন্দেহ আছে। সাবাব হাতের তোয়ালেটা বিছানার উপর রেখে হীরের সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসল। হীর মাথা নীচু করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। সাবাব তার সামনে বসতেই ছিটকে সরে গেলো পাশে। সাবাব চোখ জোড়া বড় বড় করে তাকালো। অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,
—-‘ এতক্ষণ তো নড়ছিলেও না। আর আমি বসতেই কারেন্ট লেগে গেলো।’
হীর শাড়িটা হাতে উঠিয়ে বিনা বাক্যে প্রস্থান করলো। সাবাব তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
—-‘ না জানি পূনরায় তোমার মনে জায়গা করে নিতে আমার কত কাঠখড় পোড়াতে হয়।’
#চলবে_