#কাছে_দূরে ?
#muhtarizah_moumita
#পর্ব___৪৪
ভোররাত। মুখের উপর ল্যাম্পপোস্টের আলো পড়তেই চোখ মুখ কুঁচকে গেলো হীরের। মুখের সামনে হাত রেখে পিটপিট করে চোখ খুলতেই তার পিলে চমকে উঠলো। সে বিছানা রেখে গাড়িতে কি করে এলো? আর এমন সময় এতো ঝাঁক ঝমক করে আলোই বা জ্বলছে কোথায়। ভয়ে মেরুদণ্ড শিথিল হয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে গাড়ি স্থির আছে। মানে গাড়ি কোথাও পার্ক করা। নিজের ঘোর কাটাতে চেষ্টা করলো হীর। চোখ কচলে আবার তাকালো। মন বলছে এটা স্বপ্ন। কিন্তু না,চোখ কচলেও একই দৃশ্য দেখতে পেলো। তার গাড়ির পাশ থেকেই শা শা করে গাড়ি যাচ্ছে। আর সেই গাড়ির আলো সামনের কাচ ভেদ করে এসে তার চোখে পড়ছে বারবার। বুকের ভেতরটা ধক ধক করছে। আবার কোন বিপদে পড়েছে সে। হীর চারপাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। জায়গাটা অপরিচিত। তবে পরিচিত হলেও বিশেষ লাভ হতো কিনা জানেনা হীর। আচ্ছা, তাকে কেউ কিডন্যাপ করে আনেনি তো? কথাটা ভাবতেই শিরদাঁড়া সোজা হয়ে গেলো। সাবাবের কাছ থেকে কেউ তাকে কি করে কিডন্যাপ করে আনতে পারে। এটা অসম্ভব!
হঠাৎ নিজের গায়ের শাড়ি দেখে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো হীরের। রাতে সে লাল শাড়ি পড়ে শুইয়েছিলো। কিন্তু এটা নীল। তার শাড়ি কে পাল্টালো! হীর আর ভাবতে পারলো না। কি হচ্ছে তার সাথে! দ্রুত এখান থেকে পালাতে হবে। নয়তো জানটাও বেশিক্ষণ থাকবে বলো মনে হচ্ছে না। হীর গাড়ির দরজা খুলে পা রাখতে যাবে ঠিক তখনই বড় কালো একটা ছায়া পড়লো মাটিতে। ভয়ে কেঁপে উঠলো হীর। পা টা বের করেও আবার গুটিয়ে নিলো ভেতরে। তাকে গাড়িতে রেখে বাইরে কেউ পাহারা দিচ্ছে। হীরের হাত-পা জমে যাচ্ছে ভয়ে। সাবাব কোথায়? হীরের মনের ছটফটানি ক্রমশই বাড়ছে বৈ কমছেনা। সাবাব থাকতে সে কি করে কিডন্যাপ হতে পারে।
দুটো মানুষের ছায়া ক্রমশ কাছে চলে আসছে। যা দেখে হীরের ভেতরটা হাহাকার তুলছে ভয়ে। আচমকা কারোর হাত পড়লো কাঁধে। ওমনি গগনবিদারী চিৎকারে অতিষ্ট করে ফেললো উপস্থিত সবাইকে। হীরের চিৎকারে ভড়কে গেলো আগন্তুক! ভড়কে গেলো তার সঙ্গীরাও। হীরের দিকে হুমড়ে পড়লো সে। তাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছে হীরের কার্যকলাপে। হীর চোখ বন্ধ করে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি বসাচ্ছে আগন্তুকের উপর। মুলত সে আগন্তুককে তার ধারে কাছে ঘেঁষতে দিবেনা। হীরের এহেম আচরনে ছিটকে সরে গেলো আগন্তুক। পাশের জনের দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বলল,
—-‘ আমার বউটা কি অল্পবয়সেই পাগল হয়ে গেলো রে?’
ফিক করে হেসে দিলো রাতুল। সাবাবের কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
—-‘ একজন্যই বলেছিলাম কিছু না জানিয়ে এভাবে হুট করে আনিস না। তারউপর ছিলো ঘুমন্ত
এবার ঠ্যালা সামলা।’
বলে আবারও হাসতে লাগলো রাতুল। ইনান রাতুলের সুর টেনে বলল,
—-‘ ভাবি হয়তো ভাবছে কেউ তাকে কিডন্যাপ করেছে। ভাই তোরও প্ল্যান-
—-‘ চুপ কর। জানিসও তো ওর জেদ। বিয়ে হওয়াতে জেদের মাত্রা তরতর করে বেড়েছে। যদি গিয়ে বলতাম রংপুর যাবো জামাকাপড় গুছিয়ে নিও তাহলে বোধহয় তিনদিনেও আর আমার সম্মুখীন হতো না। তাই তো এই প্ল্যান।
মাথার চুলে গুলো ঠিক করতে করতে বলল সাবাব। রাতুল হীরের দিকে ইশারা করে বলল,
—-‘ আবার যা। ভয় পেয়ে আছে দেখ।’
সাবাব বুকে ফু দিয়ে আবারও পা রাখলো হীরের দিকে। হীর গুটিশুটি মেরে বসেছে। কিসব যেন বিরবির করছে। সাবাব চোখ দুটো সরু করে কান খাঁড়া করলো। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলো না হীরের প্রলাপ। সাবাব একবার বন্ধুদের দিকে তাকালো। তারা দূর থেকে সাহস দিচ্ছে। সাবাব আর এক পা এগোলো। তার ভয় করছে হীরকে। হীর তাকে না দেখেই এমন আচরণ করছে। আর যদি দেখে, তাহলে তো তার রিভলবার উঠিয়ে তার মাথায়ই তাক করবো। সাবাব বুক চাপড়ে বলল, ‘গো বেটা গো।’
—-‘ হ…হীর হীর পাখি-
হীরের শুকনো মরুভূমিতে জল পড়লো। সাবাবের কন্ঠ পেতেই চমকে উঠে চোখ খুললো। পাগলের মতো আশেপাশে চোখ বুলিয়ে যখন সাবাব কে তার সামনে আবিষ্কার করলো তখন আর এক মুহুর্ত দেরী না করে একপ্রকার ঝাপিয়ে পড়লো সাবাবের উপর। সাবাব কিছু কথা তৈরি করছিলো হীরকে বলবে বলে। কিন্তু হীর আর তাকে সেই সুযোগ দিলোনা। এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলো সাবাব চাইলেও নিজেকে ছাড়ানো সম্ভব না। সাবাব হতভম্ব হয়ে হীরকে নিয়েই পিছিয়ে গেলো দুই কদম। হীর কাঁপছে। হীরের শরীরে উষ্ণতা এবং কাঁপুনি দুটোই নড়বড়ে করে দিচ্ছি সাবাবকে। হঠাৎ তার মস্তিষ্ক আবিষ্কার করলো হীর কাঁদছে। তৎক্ষনাৎ সাবাবের টনক নড়লো। হীর সত্যি ভীষণ ভয় পেয়েছে। সাবাব দুই হাতে হীরকে জড়িয়ে ধরে বলল,
—-‘ কাঁদছো কেন? কি হয়েছে?’
—-‘ ত,,,তুমি! তুমি কোথায় ছিলে? আমা,,কে রেখে কোথায় গিয়ে,,,ছিলে?’
হীর ফোপাঁতে ফোপাঁতে বলে। সাবাব ঢোক গিলে গলা ভেজায়। হীরের মাথায় হাত রেখে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলে,
—-‘ আমি তো তোমার সাথেই ছিলাম হীরপাখি। কি হয়েছে তোমার? ভয় পেয়েছো?’
—-‘ আ,,আমাকে কে যেন এখানে নিয়ে এসেছে!’
—-‘ কে নিয়ে এসেছে?’
—-‘ আমার মনে হচ্ছে আমাকে কেউ তুলে-
—-‘ (তুলেই তো আনা হয়েছে! উফ, কি যে করি!) না না! কে তুলে আনবে? আমার মনে হয় তুমি দুঃস্বপ্ন দেখেছো!’
—-‘ না আমি দুঃস্বপ্ন দেখিনি। সত্যি বলছি!’
—-‘ আচ্ছা আচ্ছা দুঃস্বপ্ন দেখোনি। সত্যি বলছো। কিন্তু তুমি আগে আশপাশ টা দেখবে তো। দেখো?’
হীর আরও লেপ্টে গেলো সাবাবের সাথে। তারমানে সে আশেপাশে দেখতে ভয় পাচ্ছে। তার ভয় এখনও কাটেনি। সাবাব ইনান এবং রাতুলকে এদিকে আসতে ইশারা করলো। তারা হেঁটে এসে দাঁড়ালো সাবাবের পাশে। হীরের উদ্দেশ্য রাতুল বলল,
—-‘ ভাবি আপনি কিডন্যাপ হননি। সাবাবই আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছে।’
রাতুলের কথাটা হীরের কানে বিস্ফোরণ ঘটালো। হীর ছিটকে পড়লো দূরে। সাবাব ভড়কে গেলো হীরের কান্ডে। রাতুলের দিকে করুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বোঝালো, ‘কি দরকার ছিলো বলার!’
ইনান রাতুলের কাঁধে মার বসালো। রাতুল তাৎক্ষণিক জিহ্ব কাটলো। সাবাবের দিকে তাকানোর মাঝেই হীর বলে উঠলো,
—-‘ কেন এনেছো আমাকে এখানে? আমি এক্ষুনি বাসায় যাবো। বাসায় চলো!’
—-‘ পুরো পাঁচ ঘন্টা জার্নি করে অর্ধেকের বেশি পথ এসেছি। এখন কি করে বাসায় ফিরবো?’
সাবাবের কন্ঠ করুন। হীর চেতে উঠলো।
—-‘ মানে?’
ইনান বলল,
—-‘ মানে আমরা রংপুর যাওয়ার মাঝপথে আছি।’
****[ গতপর্বে রংপুরের জায়গাতে ভুল করে রাঙামাটি লেখা হয়েছিলো। পরে সংশোধন করতে পারিনি। তার জন্য দুঃখিত]*****
হীর আকাশ থেকে পড়লো। চোখদুটো গোলাকার করে বলল,
—-‘ কি বলছো!!’
সাবাব মাথা নত করে বলল,
—-‘ হুম।’
হীর অবাক কন্ঠে বলল,
—-‘ আমরা রুংপুর কেন যাচ্ছি?’
রাতুল এবং ইনান দাঁত কেলিয়ে হাসলো। সাবাব মাথা চুলকে বলল,
—-‘ হানিমুনে!’
হীর বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
—-‘ কি!’
সাবাব চমকে উঠে বলল,
—-‘ এই না না, সরি সরি! মিশনে যাচ্ছি।’
________________
ছোট দোতলা বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করালো ইনান। ছোট গলিতে এতো বড় গাড়ি দেখে গ্রামের মানুষ ছুটে এলো দেখতে। এই প্রথম তেমন টা নয়। এই বাড়িতে ঠিক এমন করেই বহুলোক এসেছে। কেন এসেছে তারা জানেনা। কিছু মানুষ জানে। বাকি সবাই কৌতুহল নিয়ে দেখতে আসে। যারা জানে তাদের থেকে আগ্রহ করে জানতে চায়। কিন্তু তারা জবাব দেয়না। মুখে কুলুপ এঁটে থাকে। সাবাব গাড়ি থেকে নেমে হীরের দিকে হাত বাড়ায়। হীর হাত না ধরেই গটগট করে নেমে দাঁড়ায়। ড্রাইভিং সিট থেকে ইনান নেমে আসে। আর তার পাশ থেকে রাতুল নামে। এখন সকাল ৬টা বাজে। মোট ৮ঘন্টার পথ তারা মিলেমিশে গাড়ি চালিয়েছে।
গাড়ির শব্দ পেয়ে দোতলা থেকে উঁকি ঝুঁকি মারছে দুটো অল্প বয়সী ছেলে আর মেয়ে। সাবাব মুখ উঁচিয়ে দেখলো তাদের। সাবাবকে তাকাতে দেখে তারা আতংক নিয়ে ঢুকে পড়লো ভেতরে। সাবাব ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বাড়ির দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো। হীর তার পেছন পেছন হেঁটে এসে কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলো,
—-‘ এটা কার বাড়ি? আমরা এখানে কেন এসেছি?’
সাবাব একবার তাকালো। জবাব না দিয়ে দরজার পাশে কলিং বেল চাপলো। দু’বার চাপতেই উপরে থাকা ছেলেমেয়ে দুটো এসে দরজা খুলে দিলো। তাদের চোখে মুখে এখনও আতংক। কোনো বিষয়ে ভীত তারা। সাবাব মুখে মিষ্টি হাসির রেখা টানলো। কিন্তু তাতে দু’জনের মুখের কোনো ভাবাবেগ হলোনা। সাবাব কিছু জিজ্ঞেস করতে নিলেই আবারও পালিয়ে গেলো তারা। সাবাব অবাক হয়ে দেখে। বাকিরাও বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। হীর কোনো কিছুর আগামাথা বুঝতে পারছেনা। সাবাব বাকিদের ইশারা করে বাসার ভেতর প্রবেশ করতে নিলেই হীর তার হাত ধরে ফেলে। কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,
—-‘ অনুমতি ব্যাতিত কারোর বাসায় ঢোকা ঠিক নয়।’
সাবাব হীরের হাতের উপর হাত রেখে বলল,
—-‘ রিলাক্স। আমাদের প্রয়োজন আছে বলেই আমরা এখানে এসেছি। তাতে আশাকরি কারোর অসুবিধা হবেনা।’
—-‘ আমাদের কিসের প্রয়োজন?’
—-‘ আস্তে আস্তে সব জানতে পারবে। চলো এবার।’
সাবাব হীরের হাত ধরেই ঢুকলো ভেতরে। ভেতরটা অন্ধকার। চারপাশ দেখে ইনান ফোনের আলো জ্বালাতে উদ্যত হলো। রাতুল বাঁধ সেধে বলল,
—-‘ আলো জ্বালাতে হবেনা। অন্ধকার চোখে সয়ে গেলে আর সমস্যা হবেনা।’
—-‘ ঐ যে রুম দেখা যাচ্ছে।’
হীর বলে উঠলো। সবাই রুমের দিকে তাকালো। সাবাব সেদিকে যাওয়ার ইশারা করলো। চারজনেই এগোচ্ছে রুমের দিকে। কারোর গলা পাওয়া যাচ্ছে।
তার মানে ভেতরে লোক আছে। একজন নয়, দু-তিন জন। সবাই রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ভেসে এলো পরিচিত গলা। হীরের মস্তিষ্ক বলে উঠলো, ‘সিয়ামের গলা।’ হীর চারপাশে নজর বুলালো। তবে কি সে সিয়ামের বাড়িতে এসেছে?
সাবাব ইনান কে ইশারা করলো। ইনান মাথা নেড়ে রুমের দরজায় নক করলো। ভেতর থেকে পুরুষালী কন্ঠে ভেসে আসলো,
—-‘ আলি? দাঁড়া বাবা, মায়ের ঔষধ টা দিয়ে আসছি আমি।’
ইনান সাবাবের দিকে তাকালো। সাবাব আবারও কিছু একটা ইশারা করলো। ইনান পূনরায় মাথা নেড়ে দরজায় নক করে বলল,
—-‘ ভেতরে সিয়াম পাটোয়ারী নামে কেউ আছেন? থাকলে বেরিয়ে আসুন। আমরা ঢাকা থেকে এসেছি। আপনার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে।’
ভেতরে পিনপতন নীরবতা। কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। হীর অবাক হয়ে ইনানের উদ্দেশ্য বলল,
—-‘ সিয়াম পাটোয়ারী। তোমরা সিয়ামকে কেন খুঁজছ?’
সাবাব মুখে আঙুল চেপে হীরকে চুপ থাকতে ইশারা করলো। হীর বিস্মিত কন্ঠে কিছু বলতে নিলেই আচমকা সবার সামনে এসে দাঁড়ালো সিয়াম। হীরের বিষ্ময় আরো বেড় গেলো। সিয়াম সবার দিকে তাকিয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলো। কন্ঠে ভয় নিয়ে বলল,
—-‘ আ..আপনারা-
—-‘ সাদমান সাবাব। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাদমান সাবাব।’
নামটা শুনতেই শীতল হয়ে গেলো সিয়াম ভয়ার্ত চোখ। চোখ ভরা সম্মান নিয়ে দেখলো সাবাবকে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে তার পা থেকে মাথা অব্দি। যেন এতকাল ধরে এই ব্যাক্তিরই প্রতীক্ষা ছিলো তার। সিয়ামের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো। সে দ্রুত তার মায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে বলল,
—-‘ ভাবি, মাকে একটু দেখে রেখো। আমি একটু আসছি।’
ভেতর থেকে শব্দ এলো,—-‘ আচ্ছা ভাই।’
সিয়াম উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
—-‘ আসুন স্যার, আপনারা আমার সাথে আসুন।’
সিয়ামের যাওয়ার পথে সবাই হাঁটা ধরলো। হীর বিষ্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছেনা। সবাইকে অনুসরণ করে সেও হেঁটে যাচ্ছে। সিয়াম সবাইকে নিয়ে দোতলায় উঠলো। দোতলার শেষ মাথায় একটা তালা বন্ধ ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো সিয়াম। সাথে বাকিরাও দাঁড়িয়ে পড়লো। সিয়াম আশেপাশে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে দ্রুত তালা খুলে সবাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো। আবার দেখলো চারপাশে। অতঃপর ভেতর থেকে দরজা লক করে দিলো। ভেতরে ঢুকে অবাকের শীর্ষ পৌঁছে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। আলোয় ঝলমল করছে রুমটা। চারপাশে রিয়াদ আহমেদের ছবি দিয়ে ভরপুর। কেবল রিয়াদ আহমেদেরই নয় কনিকা, হীর,নাজমা বেগম সাবাব সবার ছবিই আছে। তবে বর্মানের নয় সবটাই অতীতের। হীর অবাক নয়নে দেখে চলেছে। সিয়ামের কাছে তার পরিবারের যত ছবি আছে সেটা বোধ তার কাছেও নেই। হঠাৎ হীরের মস্তিষ্ক চিৎকার পেড়ে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ থেকে অদ্ভুত আওয়াজ বের হলো,
—-‘ মালিকাকা!’
হীরের দৃষ্টি অসুরন করে বাকিরাও দেখলো ছবিটার দিকে। বাচ্চা হীর ফুলের বাগানে হাতভর্তি মাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই তার মালিকাকা মাথায় হাত রেখে চকিত নয়নে দেখছে হীরকে। ছবিটা রিয়াদ আহমেদের তোলা। তিনি মেয়ে আর মালির এমন দৃশ্য দেখে কোনো মতেই যেন তা ক্যামেরা বন্দি না করে পারছিলেন না। কোনো এককালে হয়তো এটাই হবে তারজীবনের সেরা স্মৃতি।
সিয়াম ছলছল চোখে দেখলো মানুষ টাকে। ছবিটার উপর পরম যত্নে হাত রেখে বলল,
—-‘ আমার বাবা।’
সিয়ামের বানীতে সবার মুখে বিস্ময় খেলে গেলো। সাবাব ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল,
—-‘ উনিই তবে আকবর পাটোয়ারী।’
#চলবে_