#কাছে_দূরে ??
#muhtarizah_moumita
#পর্ব___৪৭
হীরের হাত পা কেটে রক্ত পড়ে তার গায়েই শুঁকিয়ে গিয়েছে। তবে গায়ে এখনও তাজা রক্তে জবজব করছে। মালির শরীরের রক্ত। রিয়াদ মেয়েকে আঁকড়ে ধরে মালির ঘরের পেছনের দিকে ছুটলো। এখানেই তার সিক্রেট রুম। মাটির নীচে সুরঙ্গ কেটে সে নিজে তৈরী করেছে এই সিক্রেট রুম। কারন সে জানতো একদিন তার ভাগ্য তাকে এমন এক বাঁকে এনে ফেলবে। তবে সেটা যে এত দ্রুত ঘটে যাবে সেটা কখনও ভাবতে পারেনি রিয়াদ। সিক্রেট রুমের দরজা মাটির বুকে। রিয়াদ যত দ্রুত সম্ভব হীরকে নিয়ে ঢুকে পড়লো ভেতরে। ভেতরে চারটা রুম। চারটা রুমেই তার দরকারী সব কাগজ,ফাইল আটশাট করে বাঁধা। রিয়াদ প্রতিদিন রাতের মধ্য প্রহরে এই ঘরে আসে। হাতে আসা প্রত্যেকটা কেস নিয়ে সে এখানেই মিটিং করে। রিয়াদ দৌড়ে গেলো শেষ মাথার রুমে। হীরকে নিয়ে সে রুমে ঢুকলো। চারপাশে ফাইল এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। রিয়াদ হীরকে কোল থেকে নামিয়ে নীচে শোয়ালো। হীর এখনও অচেতন। মায়ের সেই নির্মম দৃশ্য বাচ্চাটা সহ্য করতে পারেনি। রিয়াদ পাগলের মতো পানি খুঁজতে লাগলো। এঘর ওঘর করে পানি খুঁজলো। কিন্তু পেলোনা। রিয়াদের বুকটা হাহাকার করছে। সে জানেনা এই নিষ্পাপ প্রানটিকে সে বাঁচাতে পারবে কি না! রিয়াদ মেয়ের পাশে হাঁটু ভেঙে বসে পড়লো। সে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। মন ভেঙে গুরিয়ে যাচ্ছে তার। হায়নারা তার প্রিয় মানুষটাকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। যে মানুষ টা তার অহংকার ছিলো, শক্তি ছিলো তাকে হায়নারা শেষ করে দিয়েছে। রিয়াদ মুখে হাত চেপে ‘আল্লাহ গো’ বলে চিৎকার করে উঠলো। তার যে আর কিছুই রইলো না। সবটা শেষ করে দিলো। সে নিঃস্ব হয়ে গেলো। কনিকার শেষ কথাটাও সে রাখতে পারলো না। কনিকা সবসময় বলতো, ‘তোমার যে প্রফেশন না জানি কবে তোমার শত্রুরা বাড়ি বয়ে এসে আমাদের মা-মেয়েকে মার্ডার করে দিয়ে যায়!’ ‘মরতে তো ভয় নেই। তবে একটাই আক্ষেপ থাকবে, শেষ মুহুর্তে এই হাতটা ধরতে পারবো তো?’
‘শেষ মুহুর্তে এই হাতটা ধরতে পারবো তো’ কথাটা বারবার প্রতিধ্বনি হতে লাগলো চারপাশে। রিয়াদ সহ্য করতে পারছেনা। বারবার চিৎকার করে কাঁদছে। অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে তার ছোট্ট প্রান ভোমরা। রিয়াদ চোখের জল মুছে হীরকে পাঁজা কোলে উঠালো। হীরের শরীর বেশ ঠান্ডা। ভয়ে জমে গেছে বাচ্চাটা। রিয়াদ হীরের কপালে চুমু খেলো। গালে,চোখে, মুখে সব জায়গায় চুমু খেয়ে ভরিয়ে তুলল। তার ভেতরটা ভেঙে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এখন যে তাকে যেতে হবে। কিন্তু মেয়েটাকে এখানে একা ফেলে যেতে তার মন মানতে চাচ্ছেনা। কিন্তু সে নিরুপায়। কনিকার লাশটা শেষবারের মতো দেখতে হলেও তাকে যেতে হবে। হবেই হবে। রিয়াদ হীরকে আবারও শুইয়ে দিলো। গায়ে,মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
—-‘ বেঁচে থাকিস মা। একদিন এর প্রতিশোধ নিতে বেঁচে থাকিস। যখন দয়া করবি মায়ের মতো করে করবি। আর যখন গ্রাস করবি তখন বাবার মতো করে করবি। অন্যায় তো অন্যায়ই। অন্যায়ের সামনে কোনোদিন আত্মসমর্পণ করবিনা আল্লাহর কসম। বেঁচে থাকিস। তোকে যে বাঁচতেই হবে। তোকে বাঁচতেই হবে।’
রিয়াদ উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। বাইরে থেকে দরজা ভেজিয়ে সিক্রেট রুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। রুমের বাইরে ঠিক আগের মতো করে রাখলো। যেন কোনো বিচক্ষণ চোখ ছাড়া এই ঘরের হদিশ কেউ না পায়। আর সেই বিচক্ষণ চোখ হলো জাফর ইকবালের।
রিয়াদের সাদা শার্টে মেয়ের শরীর রক্তের ছোপ ছোপ দাগ পড়েছে। রিয়াদ শেষ বারের মতো পেছন মুড়ে দেখলো। মেয়েটা ভেতরে একদম একা। কথাটা ভাবতেই চোখ থেকে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। রিয়াদ হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছে। চুপিচুপি মালিরঘরের পেছন থেকে বেরিয়ে আসে। ছুটে যায় কনিকার লাশের কাছে। কনিকার লাশের আগেই পড়ে আছে তাইয়্যেবার লাশ। রিয়াদ থমকে যায়। তার মস্তিষ্কে ছেপে যায় কিছুক্ষন আগে বলা জাফরের কথা গুলো,
—-‘ স্যার, আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো ভাষা খুঁজে পাইনা। তাইয়্যেবার মতো লক্ষী মেয়েটা আমার অগোছালো ঘরে আসতে চলেছে কেবল আপনার জন্য। দিলছে ভালোবাসা স্যার। একদম দিলছে।’
রিয়াদ হাসতে হাসতে ঘুরে তাকিয়েছে জাফরের দিকে। জাফর লজ্জায় মাথা নুইয়ে হেসেছে। দু’জনে এই খবর নিয়েই বাড়ির উদ্দেশ্যে আসছিলো। হঠাৎ মাঝপথে জাফরের ফোনে কল আসে। তার মায়ের শরীরটা খারাপ করেছে। সে তখনি ছুটে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায় দুপুরে ঠিক সময়ে হাজির হয়ে যাবে। কিন্তু সে এসে তো আর কিছুই পাবেনা। না তার তাইয়্যেবাকে আর না তার প্রানের স্যারকে।
একটু দূরেই পড়ে আছে কনিকার লাশটা। বিভৎস অবস্থা হয়েছে তার। রিয়াদের পা ভেঙে আসলো। সে বহু কষ্টে কনিকার লাশের পাশে এসে দাঁড়ালো। কনিকার শরীর আর শরীর নেই। কোরবানির গরুর মাংসের মতো ফালাফালা করে কেটেছে যেন। গলার কাছটাতে এক আঙ্গুল ফাঁকা হয়ে আছে। রিয়াদ চোখ বুঁজে নিলো। এমন দৃশ্য দেখে তার পাঁজরের হাড় যেন মড়মড় করে ভেঙে যাচ্ছে। হায়নাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার অর্ধেক শক্তি শেষ হয়ে গেলো। রিয়াদ কনিকার মাথায় হাত রাখতে নিলেই পেছন থেকে কেউ তার মাথায় স্ব জোরে বারি বসায়। রিয়াদ হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায় নীচে। নীচে পড়ে ওঠার চেষ্টা করলে মনে হয়ে তার মাথাটা ফেটে আলাদা হয়ে গেছে। রিয়াদ মাথার পেছনে হাত রাখে। সঙ্গে সঙ্গে হাতের মধ্যে রক্তের নদী বয়ে যায়। পেছন থেকে পৈশাচিক হেসে বলে ওঠে মেয়েলি কন্ঠ,
—-‘ অনেক কষ্ট দিয়েছো আমায়। অনেক অবহেলা করেছো। আমি অনেক সহ্য করে আজ এই জায়গায় এসেছি। আজ আমাকে মেনে নিলে কখনও এমন দিন দেখতে হতোনা তোমায়!’
রিয়াদ মাটিতে গড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই হেসে উঠলো। যে হাসির শব্দে গা পিত্তি জ্বলে গেলো মেয়েটির। রিয়াদ মাথায় হাত চেপে হেলতে দুলতে উঠে দাঁড়ালো। সামনে সব কিছু ঘোলাটে দেখছে সে। তবুও তার বিচক্ষণ চোখ মুখোশের আড়ালের মুখটিকে চিনতে ভুল করেনি। রিয়াদ মেয়েটির চোখে রেখে বলল,
—-‘ সেই একই চোখ, এই স্বর আর একই উদ্দেশ্যে। তবে (কনিকার দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে) ঐ চোখে ছিলো ভালোবাসা আর মায়া। কিন্তু এই চোখে হলো হিংস্রতা,লোভ আর লাসলা। ঐ মনে ছিলো পবিত্রতা আর এই মনে কেবল নোংরা চাহিদা। স্রেফ পার্থক্য এটুকুই মনি।’
মনিকা একটানে নিজের মুখের নেকাব খুলে ছুঁড়ে মারলো দূরে। আর সঙ্গে সঙ্গে উন্মুক্ত হলো তার সুন্দর শ্রীর আড়ালে বিশ্রী রূপ। রিয়াদ অবাক নয়। কারন সে এমন রূপ আগেও দেখেছে। আগেও দেখেছে মনিকা ঠিক কতটা নীচে নামতে পারে। মনিকা চোখে আগুন নিয়ে মুখে হাসলো। ধীরপায়ে রিয়াদের কাছে এগিয়ে এলো। তার গালে আলতো করে হাত রাখতে নিলেই ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নিলো রিয়াদ। যা দেখে মনিকা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো। রিয়াদের শার্টের কলার্ট চেপে ধরে বলল,
—-‘ এতো কিসের অহংকার তোমার? কিসের এতো অহংকার? ছয়টা বছর ধরে পাগলের মতো ঘুরেছি তোমার পেছনে। কোনো দিন এক নজর ফিরেও তাকাওনি তুমি। কেন? ঐমুখটা আর এই মুখটা তো একই রকম দেখতে। ওর শরীরেও যা আমার শরীরেও তাই। তাহলে কিসের জন্য এড়িয়ে গিয়েছো আমায়! কিসের এতো অহংকার ঐ মুখটা নিয়ে?’
রিয়াদ বড় করে নিঃশ্বাস নিলো। তার নিঃশ্বাস ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মনিকা উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে রিয়াদের মুখ পানে। রিয়াদ মৃদু হাসলো। শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো,
—-‘ পার্থক্য মনুষ্যত্বে, পার্থক্য মানসিকতায়, পার্থক্য চিন্তাভাবনায়, পার্থক্য পবিত্র চাহিদা আর নোংরা চাহিদায়। অনেক পার্থক্য। তুমি বুঝবেনা। তুমি কোনোদিন ওর মতো হতে পারবে না মনিকা।’
রিয়াদের কথায় মনিকার রাগ পাল্লা দিয়ে বেড়ে গেলো। সে হাতের রামদা দিয়ে কোপ বসালো রিয়াদের বুকে। রিয়াদ ব্যাথায় কুঁকড়ে গেলো। তার বুক থেকে গলগল করে রক্ত পড়তে লাগলো। রিয়াদে বুকে হাত চেপে মনিকার দিকে তাকালো। সে পাল্টা আঘাত করবেনা। মনিকা সেটা খুব ভালো করেই জানে। কারন তার আঘাত করার অস্ত্র তো তারা সবার আগেই ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ছে। তাই সাহস নিয়ে তাকিয়ে আছে রিয়াদের দিকে। রিয়াদের মুখে চমৎকার হাসি। পেছন থেকে মুখোশ পড়া এক লোক চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
—-‘ মনি! তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছো কি মারো শুয়ো**বা**কে। ওর জন্য অনেক ঝামেলা সহ্য করেছি আমরা। আর নয়।’
পাশ থেকে আরেকজন ক্ষেপা গলায় বলে উঠলো,
—-‘ ঐ শা*** ওকে আগে মারলে কি করে হবে? আগে ওর এই বিশাল সাম্রাজ্য তো নিজেদের দখলে নেই।’
এই লোকটার কথায় আগের লোকটা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। রিয়াদ ঘোলাটে চোখে তাকালো। মনিকা আর দু’জন পুরুষ এই পুরো গ্রুপের মাস্টারমাইন্ড। রিয়াদ দু’জনের কন্ঠ শুনে চোখ বুঁজে নেয়। এই কন্ঠ যে তার পরিচিত। কিন্তু বুকের যন্ত্রনায় সে ক্রমশই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তার বিচক্ষণ মস্তিষ্ক তাকে কিছু একটা বলছে কিন্তু সে ধরতে পারছেনা। মনিকা ক্ষেপা স্বরে বলে উঠলো,
—-‘ যা করবে তাড়াতাড়ি করো। করে ওকে শেষ করো।’
রিয়াদ বুকের উপর থেকে হাত নামালো। মনিকার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
—-‘ আমাকে এই অবস্থায় দেখে কষ্ট হচ্ছে বুঝি?’
মনিকা তাচ্ছিল্য করে বলল,
—-‘ কষ্ট হলে তোমায় মারতে পারতাম নাকি?’
—-‘ টানা ছয়টা বছর ধরে একই ভাবে ভালোবেসে আসা মানুষটাকে নিজ হাতে মারা যায় মনি? যদি মারা যায় তাহলে ‘ভালোবাসা’ কথাটার অপমান হবেনা? আর যদি ভালোইবাসো তাহলে মারছো কি করে?’
মনিকা থমকে গেলো। মুহুর্তেই কথা জোগাড় করে উঠতে পারলো না। হাতে করে বাড়ির কাগজপত্র আর কলম নিয়ে হাজির হলো দুটো চেলা। পেছন থেকে পুরুষালি কন্ঠের একজন বলল,
—-‘ তাড়াতাড়ি সাইন করে দে।’
রিয়াদ কাগজ গুলোর দিকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকালো। হাসতে হাসতে বলল,
—-‘ রিয়াদ আহমেদের সোনার খাজানা উদ্ধার করা এতো সহজ?’
সবাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো রিয়াদের মুখের দিকে। রিয়াদ মনেমনে পরিকল্পনা করছে। তারই হদিস চালাতে সবাই রিয়াদকে তীক্ষ্ণ নজরে দেখছে। রিয়াদ আবারও বলল,
—-‘ আমার সোনার খাজানা নিজ হাতে শেষ করেছো তোমরা। আবার কিসের আশায় এসব করছো?’
—-‘ মানে?’
মনিকা প্রশ্ন করলো। রিয়াদ কনিকার লাশের দিকে ইশারা করে বলল,
—-‘ ঐ যে নিষ্ঠুর ভাবে পড়ে আছে আমার সোনার খাজানা। তোমরা নিজ হাতে যাকে নির্মম অত্যাচার করে মেরেছো।’
—-‘ শুয়ো**বা** হেয়ালি না করে ঠিক করে কথা বল?’
রিয়াদ মুখ তুলে দেখলো তাকে। ভয়ানক চোখ তার। তার পেছনেও যেন একরাশ মায়া ছিলো কখনও। একবুক স্নেহ ছিলো। অসাধারণ সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু কে সে চিনতে পারছেনা রিয়াদ। লোকটা উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। রিয়াদ এ কেমন হেয়ালি করছে। যদি রিয়াদের সোনার ভান্ডারটিই না পাওয়া যায় তবে এতোগুলো নৃশংস হত্যা করে লাভ কি হলো। সে পাশের লোকটার দিকে তাকালো। কিছু একটা ইশারা করল। মনিকা তাদের মুখপানে তাকিয়ে আছে। রিয়াদ হঠাৎ করে বলে উঠলো,
—-‘ এই সাম্রাজ্যের মালিককে তো তোমরা আগেই মেরে ফেলেছো। রইলো বাকি হীরপরী। তার খোঁজ পেতে তোমাদের যুবক থেকে বুড়ো হতে হবে। যাও ধরেই নিলাম তোমরা ওর খোঁজ পেয়ে গিয়েছো। কিন্তু ওকেও যদি মেরে ফেলো তাহলেও এই সাম্রাজ্য তোমরা কখনও ভোগ করতে পারবেনা। কারন এই সাম্রাজ্যের মালিকই যদি না থাকে তাহলে তো এই সাম্রাজ্য কোর্টের হাতে চলে যাবে। তারপর কোর্ট ঠিক করবে এর কি করা উচিৎ।’
—-‘ শা*** জানো**বা** আমি আগেই জানতাম ও কিছু না কিছু একটা বাগড়া দিবেই।’
লোকটার রাগ দেখে পাশের লোকটা অধৈর্য্য হয়ে উঠলো। তাহলে এতোকিছু করে আখেরে লাভটা কি হলো। রিয়াদ মনিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-‘ বিনা অপরাধে তোমরা এতোগুল মানুষের জীবন নিলে। এর ফল একদিন ঠিক পাবে তোমরা। ঠিক এমন-ই করে পাবে। খুব কাছের কারোর থে-
রিয়াদ কথা শেষ করার আগেই বাকি পাপাটাও করে ফেললো কেউ। লোক দুটোর একজন ছুটে গেলো রিয়াদের পেছনে। রিয়াদ কথাগুলো বলতে শুরু করলেই মীরজাফরের মতো সেও পেছন থেকে আঘাত করে। পেছন থেকে ছুরি ঢুকিয়ে দিতেই এপাশ থেকে বেরিয়ে আসে তা। রিয়াদ আল্লাহু আকবর বলে নীচে পড়ে যায়। মনিকা চেঁচিয়ে উঠে বলে,
—-‘ একি করলে!’
লোকটা তৃপ্তি মূলক হেসে বলে,
—-‘ ওর ভাগ্যে যা ছিলো সেটাই করলাম। এই চল সব।’
লোকটা তার দলবল নিয়ে চলে গেলো। রিয়াদ ততক্ষণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। অন্যলোকটা মনিকার পাশে এসে দাঁড়ায়। খুব বিশ্রী ভাবে কটাক্ষ করে বলে,
—-‘ পুরোনো প্রেম জেগে উঠলে বলো ওর মতোই শেষ করে দেই তোমায়।’
মনিকা কেঁপে ওঠে। তার ভেতরের পশুটা আবারও জাগ্রত হয়। রিয়াদের নিথর দেহের উপর লাথি বসিয়ে বলে,
—-‘ এর পরের স্বীকার হবে ওর মেয়ে। আমি কিছুতেই ওদের ভালোবাসার শেষ চিহ্ন হিসেবে হীরকে বাঁচতে দেবো না। কিছুতেই না।’
লোকটা মনিকার কাঁধে হাত রেখে বলে,
—-‘ আগে ওর বাপের সম্পত্তিটা তো হাতাতে দাও।তারপর ওকে দিয়ে যা খুশি করিও কোনো সমস্যা নেই।’
কথাটা বলে পৈশাচিক হাসে লোকটা। যার শব্দে প্রকৃতি বিষাক্ত হয়ে তাদের দেখে। মনে মনে ভাবে সবকিছু ছাড় দিলেও প্রকৃতি কখনও ছাড় দেয়না। একই ঘটনা প্রকৃতি ঠিকই আবারও ঘটাবে। ঘটাবেই।
সবটা শুনে সাবাব থমথমে মুখ নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। সে অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়েছে। এমন নৃশংস ঘটনা তাকে বাকরূদ্ধ করে দিয়েছে। সিয়াম,রাতুল এবং ইনান চোখের জল মুছলো। সাবাব ঢোক গিলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। সে হীরের কাছে যাবে। হীরকে একনজর দেখবে। তার মন বলছে হীরকে এক নজর দেখলেই সে পুনরায় ঠিক হয়ে যাবে। স্বাভাবিক হতে পারবে। এই ঘোর থেকে বের হতে পারবে। সে হাঁটছে। কিন্তু তার পা তার সঙ্গ দিচ্ছেনা। বারবার থমকে থমকে যাচ্ছে। রাতুল আর ইনান ছুটে এলো তার কাছে। আপাতত তাকে কোথাও যেতে দেওয়া ঠিক হবেনা। সাবাব এই মুহুর্তে নিজের ভেতরে নেই। রাতুল, ইনান সাবাবের হাত ধরে থামিয়ে দিলো। তাদের ছোঁয়া পেতেই সাবাব চমকে উঠলো। ভীত চোখে আশেপাশে দেখে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো,
—-‘ ব..ববাবাই! ছোটমা-
রাতুল ইনান মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। রাতুল সাবাবকে ঝাপটে ধরলো। ইনানও সাবাবকে ঝাপটে ধরে বলল,
—-‘ ভাই সামলা নিজেকে।’
সাবাবের বুকের ভেতর হাহাকার শুরু হলো। রাতুলকে শক্ত করে ধরে হুহু করে কেঁদে দিলো সে। ভাঙা গলায় বলল,
—-‘ কেনো এতো কষ্ট দিলো ছোটমাকে। কেন এতো কষ্ট দিয়ে মারলো তাকে। আমি যে সহ্য করতে পারছি না রে ভাই। আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। মনি এতোটা নিকৃষ্ট কি করে হতে পারলো। ছোট মা তো তারই বোন। নিজের ছোট বোন। নিজের বোনের সাথে এতো বড় অন্যায় কি করে করলো ভাই।’
রাতুল সাবাবের মাথায় হাত রেখে বলল,
—-‘ ভাই এখন এসব ভেবে কষ্ট পাওয়ার সময় নয়। এখন নিজেকে সামলে রিয়াদ স্যার আর কনিকা ম্যামের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সব জানো** গুলোকে ধরে নিজের হাতে শাস্তি দেওয়ার সময়। সামলা নিজেকে। ভাব উনাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে নে। এখন দুর্বল হলে চলবেনা। তাদের শাস্তি দিতে হবে।’
ইনান রাতুলের কথার রেশ টেনে বলে,
—-‘ এখন কেবল একশন নিতে হবে। হ্যাঁ ভাই,সময় এসে গেছে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার।’
সাবাব রাতুলকে ছেড়ে দাঁড়ালো। চোখের জল মুছে থমথমে গলায় বলল,
—-‘ আমি হীরকে এসব কি করে জানাবো?’
—-‘ হীরকে জানাতে হবে। আর ওদের শাস্তি হীরের হাতেই দেওয়াতে হবে। রিয়াদ স্যার বলে গিয়েছেন তার মেয়েই যেন পাপীদের শাস্তি দেয়।’
সাবাব ইনানের দিকে তাকালো। বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
—-‘ ঠিক বলেছিস তুই। ওদের খুঁজে বের করা আমার দায়িত্ব। আর তাদের নিজ হাতে শাস্তি দেওয়া হবে হীরের দায়িত্ব।’
#চলবে_