#কাছে_দূরে ??
#muhtarizah_moumita
#পর্ব___৬৫
—-‘ দাঁড়া! তোর সাথে আমার একটা কথা আছে?’
ভার্সিটি থেকে সবে বাসায় ফিরতেই আমি শক্ত গলায় বোনকে ডাকলাম। বোন যেতে নিয়েও থমকে দাঁড়াল। ক্লান্ত দৃষ্টি মেলে বলল,
—-‘ কিছু বলবি?’
—-‘ ঐ ছেলেটা কে ছিলো? আর ও এসব কি বলছিলো? তোকে ভালোবাসে,তোকে ছাড়া থাকতে পারবেনা-
—-‘ জানিনা।’
আমার কথা সম্পূর্ন করার আগেই বোন জবাব দিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। যেটা আমার মোটেই পছন্দ হলো না। আমি তেড়ে গিয়ে ওর হাত চেপে ধরে খুব বিশ্রী ভাষায় বললাম,
—-‘ এখানে এসে পড়াশোনার নাম করে ছেলেদের সাথে নষ্টামি করে বেড়াস লজ্জা করে না? নির্লজ্জ, বেহায়া মেয়ে! বাবা-মা যদি এসব জানতে পারে তাদের আদর্শ মেয়ে এখানে এসে ছেলেদের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে বেড়াচ্ছে ভাবতে পারছিস তাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে!’
আমার এমন কটুবাক্যে বোনের ভেতরটা ঠিকই ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে গেলো। কিন্তু প্রকাশ করলো না। আমার চোখের দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
—-‘ এসব তুই কি বলছিস বোন? আ..আআমি! আমি তো ঐ ছেলেকে ঠিক করে চিনিই না! সেখানে তুই আমাকে-
—-‘ চিনিস না? নাটক করছিস আমার সাথে? না চিনলে একটা অপরিচিত ছেলে এসে আমাকে তুই ভেবে এভাবে জড়িয়ে ধরতো? ভালোবাসি,ভালোবাসি বলে পাগলামো করতো?’
বোন আমার থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে আহত কন্ঠে বলল,
—-‘ আমি সত্যিই ছেলেটাকে চিনি না। চিনিনা!’
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বোন চোখের জল মুছতে মুছতে ঘরে চলে গেলো। আমি ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে পৈশাচিক আনন্দ নিয়ে হাসলাম। এটুকু তো সিওর হওয়া গেলো ঐ ছেলেটার প্রতি বোনের কোনো টান নেই। কিন্তু ছেলেটার আছে। আর ছেলেটাকে পেতে হলে আমায় বোন সাজতে হবে। একবার হাত করতে পারলে আমি কে সেটা ম্যাটার করবে না।
আমি আমার মতো প্ল্যান সাজাতে লাগলাম। ছোটবেলার মতো ঘরের বাইরে আমি আবারও কনিকা সাজবো।
বোন সেদিন দুপুরে আর বের হলো না ঘর থেকে। হয়তো ওর আবারও জ্বর এসেছিলো। আর আমার বিশ্রী কটুক্তি গুলোও ওর বুকে ধারালো সুচের মতো ফুটেছিলো। আমি আর সেদিকে কর্নপাত করিনি। শুধু শিলার থেকে জেনেছিলাম বোন দুপুরে খায়নি। এমনকি রাতেও রুম থেকে বের হয়নি। অসুস্থ শরীরে পরপর তিনবেলা না খেয়ে থাকায় পরদিন বোনের বিছানা ছেড়ে ওঠা অসম্ভব হয়ে উঠলো। তাই এমন সুযোগ আমিও আর হাতছাড়া করিনি। ঠিক বোনের গেটআপ নিয়ে চলে গেলাম ভার্সিটি। গিয়ে দেখি যথারীতি ছেলেটা ভার্সিটির গেটে দাঁড়িয়ে কারোর জন্য অপেক্ষা করছে। আকস্মিক আমাকে দেখেই যেন তার অপেক্ষা প্রহর গোনা সার্থক হলো। আমি ওকে দেখতেই আমার পায়ের গতি কমিয়ে দিলাম। যেন ও আমার সাথে কথা বলতে পারে। আমার মনের কথাই ঠিক হলো। আমার পায়ের গতি কমে যেতেই ছেলেটা এক দৌড়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। আমি তার মুখশ্রীতে আরও একবার আহত হলাম। আমার চোখ বিশ্বাস করতে চাইলো না ছেলেটা সত্যি এতো সুন্দর দেখতে। তার মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম আমি। এরই মাঝে সে অনেক কথা বলেও ফেললো কিন্তু আমি শুনতে পায়নি। আমার শ্রবণ শক্তি লোপ পেয়েছে যেন। আচমকা কারোর টান অনুভব করলাম। ঘোর কাটিয়ে তাকাতেই দেখি ছেলেটা আমাকে তার দিকে টেনে নিয়েছে। আমার অনুভূতিরা সব হৈহৈ করে উঠলো। আমি চোখ তুলে তার চোখে চোখ রাখতেই সে আমায় ছেড়ে দিলো। আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। আঙ্গুল উঁচিয়ে আমার চোখের দিকে নির্দেশ করলো। কিন্তু কিছু বলতে পারলো না। এর মাঝেই কেউ তাকে টেনে খানিক দূরে নিয়ে গেলো। আমি ঘাড় কাত করে দেখলাম। ওটা রেজা ছিলো। রিয়াদকে কিছু বলছিলো। আর বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। রিয়াদের চোখে কনিকার জন্য যে ভালোবাসা দেখেছিলাম সেটা রেজার চোখেও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু এর মাঝে পার্থক্য ছিলো পবিত্রতার। রেজা কেমন বাঁকা করে আমাকে দেখেছিলো। তার মানে রেজাও কনিকাকে পছন্দ করত। ব্যাপারটা উপলব্ধি হলেও সেটা নিয়ে ভাবার সময় হয়নি কখনও। কারন আমার টার্গেট ছিলো রিয়াদ।
সেদিন রেজা রিয়াদকে নিয়ে চলে গেলো। রিয়াদ চলে যাওয়ার পরে আমিও আর বেশিক্ষণ দাঁড়ালাম না সেখানে। সোজা বাসায় চলে এলাম। বাসায় ফিরে জানতে পারলাম বোনের জ্বর বাড়াবাড়িতে পৌঁছেছে। এখন যদি আমি ওর দেখাশোনা না করি তাহলে বাবা ঠিকই আমাকে দোষারোপ করবে। বাবার ভয়ে বোনের দেখাশোনা করতে লাগলাম। দুপুরের পরে বাসায় ডক্টর আনালাম। ডক্টর বোনকে দেখে বললেন, ‘টাইফয়েড হয়ে গেছে। সম্পুর্ন বেড রেস্ট নিতে হবে সেই সাথে হাজার খানিক নিয়ম।’ আমি সবটা শিলার উপর চাপিয়ে দিলাম। আর বললাম মরলে মরুক সমস্যা নেই কিন্তু অসুস্থ হয়ে যেন না মরে। ওকে সুস্থ করার দায়িত্ব তোর। শিলা আমার ভয়ে বোনের পুরোপুরি যত্ন নিতে লাগল। আর ঐদিকে রোজ বোনের বেশে আমি ভার্সিটি যাওয়া-আসা করতে লাগলাম। কিন্তু সেই প্রথমদিনের মতো বোনকে ভেবে ভুল করে রিয়াদ আর এমন কোনো কাজই করল না। মনে হতো ও আমার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজত। আমার চোখ দুটো তীক্ষ্ণ নজরে দেখত। প্রথম দিনে যেমন কাছে এসে দেখেছিলো সেরকম আর কোনোদিনও হয়নি। বরং দিনদিন আমার আর ওর মাঝে দুরত্ব বাড়তে লাগল। ও দূর থেকে দেখে চলে যেতো। এমন প্রায় দিন পনেরো চলল। আমার আর ধৈর্য্যে কুলালো না। তাই আমি নিজ থেকে গিয়েই রিয়াদের সাথে কথা বললাম।
—-‘ তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো!’
রিয়াদ শুঁকনো মুখে জবাব দিলো,
—-‘ বলুন?’
আমি রিয়াদের চোখের দিকে তাকিয়ে মনের কথা বলে ফেললাম,
—-‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি! কথাটা আমি অনেকদিন ধরেই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু একটা জড়তার কারনে বলতে পারিনি। তোমাকে দিনদিন যত দেখেছি আমার সব জড়তা কেটে গেছে। তাই আজ বলতে পারছি। আমি সত্যি তোমাকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি। আমি জানি তুমিও আমাকে ভীষণ ভালোবাসো।’
কথাগুলো আমি একদমে বলে ফেললাম। আগ্রহী দৃষ্টিতে রিয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম উত্তরের আশায়। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে রিয়াদ হাসতে শুরু করল। প্রথমে নিঃশব্দে আর তারপর জোরেশোরে হেসে উঠলো। আমি বোকার ন্যায় তাকিয়ে আছি ওর দিকে। অবাক কন্ঠে বললাম,
—-‘ হাসছ কেন? আমি হাসির কি বললাম?’
আমার প্রশ্নে রিয়াদ হাসি থামানোর চেষ্টা করলো। বড়বড় নিঃশ্বাস নিয়ে হাসির বেগ থামিয়ে বলল,
—-‘ আপনার এই প্রশ্নের সঠিক জবাব এখন দিতে পারছি না। অপেক্ষা করুন। একদিন ঠিকই দিবো।’
এই বলে চলে গেল রিয়াদ। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম ওর কথায়। ও কি বোঝাতে চাইলো। আমি আকুতি ভরা কন্ঠে ওকে বারকয়েক পিছু ডাকলাম কিন্তু ও আর ফিরে তাকালো না। চলে গেলো।
আমি বাসায় ফিরে এলাম। এসে শুনি কনিকার অবস্থা খুব খারাপ। হসপিটালে ভর্তি না করালেই নয়। মনেমনে রাগ হলো। ওর উপর আমার দুটো কথার খুব বেশি আচর পড়েছে। তাই এমন অসুস্থতা। কথাগুলো ওভাবে না বললেই হতো। তাহলে আর এসব ঝামেলাও পোহাতে হতো না। শিলা বলল, ম্যাডাম আপনি একবার যান তার কাছে। আমার মনেহয় আপনি আপার কাছে কিছুক্ষন থাকলেও আপা একটু ভরসা পাবে।’
শিলার কথাই ঠিক। ওর এমন অসুস্থতায় হয়তো ও নিশ্চয়ই মনেমনে আমাকে ওর পাশে চাইবে। আর কিছু না ভেবে ওর কাছে চলে গেলাম। বিছানার উপর বেহুঁশের মতো পড়ে আছে বোন। ওকে এই অবস্থায় দেখে ভালো লাগছেনা। ওর কাছে গিয়ে মাথায় হাত রাখলাম। মনে হলো ছ্যাঁত করে পুড়ল আমার হাতটা। এখনও প্রচুর জ্বর। শিলার থেকে চেয়ে জলপট্টির ব্যবস্থা করে কিছুক্ষন জলপট্টি দিলাম মাথায়। এক পর্যায়ে দেখি ঘোলাটে চোখে দেখছে আমায়। বোন চোখ খুলতেই মনেমনে শান্তি অনুভব করলাম যেন। নাক কুঁচকে বললাম,
—-‘ আর কতদিন অসুস্থ থাকবি বল তো? শিলার হাতের রান্না আমার মুখে রোচে না! জলদি সুস্থ হয়ে ওঠ!’
আমার এটুকুই কথাই বোনকে রাজ্যের সুখ এনে দিলো। শুঁকনো মুখে ফ্যাকাসে হাসল। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
—-‘ কালকের মধ্যে যেন দেখি সুস্থ হয়ে গেছিস নয়তো বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিবো কিন্তু।’
বোন আবারও হাসল। ওর এই হাসিতে আজ প্রথমবার কেন জানি রাগ করতে পারলাম না। অসহ্যও লাগলো না। শুধু শান্তি অনুভব করছিলাম। বোনের রুমের জানালা গত পনেরো দিন যাবত বন্ধ পড়ে আছে। শিলাকে বলে সব জানালা গুলো খুলে দিলাম। অসুস্থ থাকাবস্থায় প্রাকৃতিক আলোবাতাসের জরুরি আছে। আমি আর বসলাম না। নিজের ঘরে চলে গেলাম। চেঞ্জ করতে করতে ভাবতে লাগলাম রিয়াদের কথাটা। কি বোঝাতে চাইল সে?
রাতে আরেকবার দেখতে গেলাম ওর শরীরের কন্ডিশন কেমন? মনে মনে ভেবে রাখলাম কাল সত্যি ওকে নিয়ে একবার হসপিটালে যাবো। প্রয়োজন হয়তো এডমিট করবো। এভাবে বসে থেকে কিছুই হবেনা। উল্টে ওর শরীর অসুস্থ হবে। মনেমনে ভেবে রেখে বোনের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দরজা চাপিয়ে দিলাম। তারপর শিলাকে বলে শুতে চলে গেলাম।
রাত -২টা।
কনিকার জানালার উপর কারোর বিশাল এক প্রতিচ্ছবি এসে পড়ল। পা টিপে টিপে জানালা ধরে রুমের ভেতর চলে এলো অবয়বের অধিকারী ব্যাক্তি। সামনে তাকিয়ে বড়বড় নিঃশ্বাস ফেলে স্থির হওয়ার চেষ্টা করল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চারপাশে ভালো করে পরখ করে কম্বলের নীচে শুয়ে থাকা মানুষটিকে দেখার চেষ্টা করল। যা দূর থেকে সম্ভব হলো না। তাই পূনরায় পা টিপে টিপে এসে বিছানার পাশ ঘেঁষে নিঃশব্দে বসল। কাঁপা কাঁপা হাতটা তুলে কম্বলটা সরাতে গিয়ে মনের সাথে যুদ্ধ লেগে গেলো। এখানে যদি কনিকা না হয়? তবে___
মন মস্তিষ্কের যুদ্ধে কেউ-ই জিতল না। আর হারলোও না। কনিকার অসুস্থ মুখ খানা দেখতেই ভোঁতা হয়ে গেল রিয়াদের অনুভূতি! অসুস্থতায় কনিকার মুখের চকচকে নিখুঁত ভাবটা নিগড়ে নিয়েছে। চোখের নীচে কালো দাগ,শুষ্ক ঠোঁট, শুঁকিয়ে টানটান করছে মুখের ভাব!রিয়াদের বুকের ভেতরটায় তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো। মনের মধ্যে হাহাকার করছে। টানা পনেরোটা দিন কনিকার বেশ নিয়ে অন্য কেউ তার সামনে এসেছিলো,তাকে ভড়কানোর চেষ্টা করেছে। এসব সে কেন করেছে একমাত্র সেই জানে! কিন্তু রিয়াদ প্রথম দিনেই মনিকাকে চিনতে পেরে যায়। তার চোখ দেখেই রিয়াদ সিওর হয় এটা কনিকা নয়। তার বোন মনিকা। তাই রোজ কনিকার অপেক্ষা করতে করতে যখন মনিকা তার সামনে এসে দাঁড়াতো তখন সে তার চোখ জোড়া দেখতো। কনিকার চোখ যে কথা বলত মনিকার চোখ সে কথা বলতো না। আর বলবেই বা কি করে? তার চোখ তো জানেই না মায়াবতীদের চোখ কেমন হয়!
রিয়াদ কনিকার দু-গালে হাত রাখল। কনিকার শরীরের তাপমাত্রা বেশ। রিয়াদ বুঝতে পারল এতদিন কনিকার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে মনিকা তার জায়গা নিতে চেয়েছিলো। এই পনেরো দিন রিয়াদ রাত করে একশবার এসেছে কনিকাকে দেখতে! কিন্তু জানালা বন্ধ থাকায় চেয়েও সে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। তবে আজ জানালা খোলা দেখে সে যেন আবারও একবার তার জীবন ফিরে পেয়েছে। তড়িঘড়ি ভেতরে ঢুলে পড়ল।
—-‘ কনিকা-
রিয়াদ কোমল স্বরে ডাকল কনিকাকে। কিন্তু কনিকার কর্ণগোচর হচ্ছে কিনা সে কথা নিশ্চিত নয় রিয়াদ। তাই একবারের জায়গায় বার কয়েক ডাকল। আর একপর্যায়ে গিয়ে কনিকা নড়েচড়ে উঠে ক্লান্ত দৃষ্টি মেলে তাকানোর চেষ্টা করল। ঘোলাটে চোখে অনাকাঙ্ক্ষিত কাউকে দেখতেই তার বুকের ভেতর কেঁপে উঠল। আচমকা চোখ দুটো বড়বড় করে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠতেই রিয়াদ তড়িঘড়ি করে তার মুখ চেপে ধরল। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আশেপাশে দেখতে দেখতে অসহায় কন্ঠে বলল,
—-‘ কনিকা আমি,আমি। চেঁচিয়ো না। আমি। দেখো? এটা আমি। রিয়াদ-
রিয়াদের কথায় কনিকা আচমকা শান্ত হয়ে গেলো। বড়বড় চোখ জোড়া ধীরেসুস্থে ছোট হয়ে এসে তার দৃষ্টি শান্ত আর ক্লান্ত হয়ে গেলো। তপ্ত হাত দুটো মুখের কাছে এনে রিয়াদের হাতটা নামিয়ে দিলো। রিয়াদ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে অস্বস্তি নিয়ে গুটিয়ে নিলো। আমতাআমতা করে বলল,
—-‘ স-স-সরি!’
কনিকা ঢোক গিলে ক্লান্তস্বরে বলল,
—-‘ আ-আআ-আপনি-
—-‘ পনেরো টা দিন পার হয়ে গেলো তোমায় না দেখে! কি করে এখনও টিকে আছি সেটাই ভাবছি।’
—-‘ এ-এ-এখানে কি চাই?’
—-‘ তোমায় কিডন্যাপ করতে এসেছি।’
—-‘ ম-মম-মানে!’
রিয়াদ হেসে পড়লো। রিয়াদ হাসতেই কনিকা চোখ বুঁজে নিয়ে অস্থির কন্ঠে বলল,
—-‘ প-প্লিজ! এভাবে হাস-বেননন নাহ!’
রিয়াদ আঁড়চোখে তাকালো কনিকার দিকে। কনিকা অস্থিরতায় কাঁপছে। তার চোখ দুটো বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। রিয়াদ কনিকার কথায় জবাব না দিয়ে ফট করে কনিকার কপালে চুমু খেয়ে বসলো। এমন আকস্মিক ঘটনার জন্য কনিকা কোনো কালেই প্রস্তুত ছিলো না। চাপা আর্তনাদ করে বলল,
—-‘ এ-এএ-এটা আপনি ক-কক-কি করলেন!’
—-‘ শোনো মায়াবতী, আমাদের বংশীয় কিছু গোপন জুলুম আছে যে যেটা চায় সে যদি সেটা পায় তাহলে কেঁড়ে নিয়ে আসে। তো আমি ভাবছি তোমার ক্ষেত্রে আমি এমন নিয়ম প্রয়োগ করব। আমি যেটা চাইছি সেটা যদি না পাই তাহলে সেটা জোর করে আদায় করব। এখন বলো তুমি কি চাও আমি তোমায় তুলে নিয়ে যাই? বাইরে কিন্তু আমার পুরো গ্যাং অপেক্ষা করছে। আমার একটা ইশারাতে তোমাকে এখান থেকে তুলে নিয়ে যাবে।’
রিয়াদের এহেম কথায় কনিকা ভড়কে গেলো। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে জানালার দিকে একবার তাকিয়ে বিছানার সাথে আরও সিঁটিয়ে গিয়ে বলল,
—-‘ আ-আআ-আমি চ-চ-চলে যাবো!’
রিয়াদ এক ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
—-‘ কোথায় চলে যাবে?’
—-‘ আপনাকে কেন বলবো! আপনার থেকে প-পপ-পালাতেই তো চলে যাবো!’
রিয়াদ মুখ বাঁকিয়ে বলল,
—-‘ তো কি হয়েছে? তুমি কি ভাবছো আমি তোমায় খুঁজে পাবোনা? তুমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাওনা কেন? মনে রেখো রিয়াদ আহমেদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সেখানেই থাকবে। তার চোখে ফাঁকি দিয়ে পালানো -আআ- সম্ভবই না সুইটহার্ট।’
কনিকা ঠোঁট কামড়ে ইনোসেন্ট মার্কা ফেস করে বলল,
—-‘ এ-এই রিয়াদ আহমেদটা কে?’
কনিকার এমন প্রশ্নে রিয়াদের চোখমুখের এক্সপ্রেসন উড়ে গেলো। বোবা চোখে কনিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-‘ ইট’স মি- রিয়াদ আহমেদ। দ্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রিয়াদ আহমেদ। যদিও এখনও পুরোটা পদবীটা পায়নি। তবে অতি শীঘ্রই পেয়ে যাবো।’
রিয়াদের মুখে তার পরিচয় শুনে কনিকার চোখ জোড়া চড়কগাছে উঠে গেলো। ছোটখাটো একটা হা মার্কা রিয়াকশন দিয়ে বলল,
—-‘ আ-আ-আপনি ব-ব-ব্রিগেডিয়ার-
—-‘ জি ম্যাম।’
কনিকা ঢোক গিলে অসহায় কন্ঠে বলল,
—-‘ আ-আ-আপনি সত্যিই কি আমাকে কিডন্যাপ করতে এসেছেন?’
রিয়াদ কনিকার খুব কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলল,
—-‘ তুমি রাজি থাকলে সত্যি সত্যি কিডন্যাপ করব।’
রিয়াদ আচমকা কাছে এসে পড়াতে কনিকা ভয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো। জবাবে কি বলবে তার আর মাথায় এলো না। কনিকাকে পুনরায় চোখ বুঁজে নিতে দেখে রিয়াদ মুচকি হেসে কনিকার চোখের পাতায় চুমু একে দিলো। আবারও একই কাজ করাতে কনিকা চাপা আর্তনাদ করে চোখ খুলল। রিয়াদ তখনও কনিকার কাছে। এক চুলও সরেনি। কনিকা চোখ খুলে তাকাতেই রিয়াদের চোখে চোখ পড়ল। কি অদ্ভুত নূর রিয়াদের মুখে। কনিকা ঢোক গিলে কিছু বলতে নিলেই রিয়াদ বলল,
—-‘ আর ঠিক তিনদিন বাদে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আমি তো আমার মনের কথা জানিয়ে দিয়েছি এবার তোমার পালা। আমি জবাবের অপেক্ষায় থাকব। ঠিক সেখানটায় তোমার জন্য অপেক্ষা করবো যেখানটাতে আমাদের প্রথম দেখা। আমি অপেক্ষা করব।’
—-‘ আ-আ-আমি কখনই যাবোনা।’
—-‘ আমি অপেক্ষা করব। তুমি আসবে। আমি জানি। তাই আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো।’
কথাটা বলতে বলতে রিয়াদ জানালা ধরে নীচে নেমে গেলো। কনিকার তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিচলিত কন্ঠে বলল,
—-‘ আ-আ-আমিহ!! য-যাবো না! স-স-সত্যি যাবো না কিন্তু-
#চলব___
[ বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ। ]