কাছে_দূরে ??পর্ব___৬৭

0
1769

#কাছে_দূরে ??
#muhtarizah_moumita
#পর্ব___৬৭

—-‘ বাবা! বাবা তুমি এখানে-

সাবাবের এক আকাশ সম বিস্ময়কে আরও দিগুন করে দিয়ে পেছন থেকে রেজা ভয়ার্ত কন্ঠে বারবার করে বলতে লাগল,

—-‘ আ-আআজিম ভাই! আজিম ভাই আমাকে এখান থেক উদ্ধার করো! ম-মমনিকাকে হীর ম-মেরে ফেলেছে আ-আজিম ভাই! এখানে থাকলে হ-হীর আমাদের কাউকে বাঁচতে দিবেনা আজিম ভাই!’

রেজার শরীর ব্যাথায় বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। আর বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে সে এমনিই মারা যাবে। ঘাড়ের রগ গুলো কেমন করে একটা একটা করে ছিঁড়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে! তার বাঁচার থেকে মরার আশংকাই এখন বেশি। আর সেই ভয়ই তাকে বাকিটুকু গ্রাস করে নিচ্ছে।

সাবাব নিজের মনের অজানা ভয় আর বিস্ময় কোনোটিই চেপে রাখতে পারছেনা। অজানা ভয়ে তার মুখের রং কেমন রক্তশূণ্য হয়ে পড়েছে। অদ্ভুত দৃষ্টিতে বাবার পা থেকে মাথা অব্দি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। মনের ভেতর তোলপাড় হচ্ছে শতশত প্রশ্নদের অত্যাচারে। কোন প্রশ্ন আগে করবে আর কোন প্রশ্ন পরে করবে কিছুতেই ঠাওরে উঠতে পারছেনা। বাবাকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখতেও যে মন পুড়ছে। কোথা থেকে শুরু করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা সে।

খানিক প্রত্যাশার পর মুখ খুললেন আজিম সাহেব। আজ সে টগবগে যুবক নয়। আজ সে মাঝবয়সী বৃদ্ধ। বয়সের ভারে তার অনেক কিছুই বদলেছে আজ। আর অনুশোচনার টানাপোড়েনে সে বেঁচে থেকেও মৃত। তার চোখ অনুশোচনায় কাতরাচ্ছে। ভেতরটা কেবল জ্বলে পুড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে। জীবনে পাপের পরিমান এতই বেশি যে সে শতবার মরলেও সে পাপ কমবে না। সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে তার পাপের হিসাবের তরতাজা একটা প্রমান। আর তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রানের ধন, তার একমাত্র ছেলে সাবাব। কখনও লোভ সবাবের ভবিষ্যত গড়ার জন্য হলেও অপরাধী তো তিনি নিজেই ছিলেন। ছেলের ভালো ভবিষ্যত গড়ার জন্য তিনি সৎপথেও থাকতে পারতেন। মুল উদ্দেশ্যই ছিলো তার কারিকারি টাকা পাওয়ার লোভ! সেখানে সৎপথে হাঁটা নিতান্তই হাস্যকর। তার ছেলে কেমন করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আচ্ছা সে কি এতক্ষণে আন্দাজ করতে পেরেছে রিয়াদের খুনির তিন নাম্বার কালপ্রিট তার বাবা? এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছে। আজিম সাহেবের বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠল। সে আজ পারছেনা তার পাপের বোঝা বইতে।

সাবাব তার বাবার নিশ্চুপ ভঙ্গিমাতে কথা খুঁজে পাচ্ছেনা। মন যে অনেক অমিলিত অংকের হিসেব মিলিয়ে দিচ্ছে। বাবার পানে দু-কদম এগোতেই হীর সাবাবের হাত ধরে ফেলল। সাবাবের পানে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

—-‘ খবরদার! ভুল করেও ওদিকে যাওয়ার চেষ্টা করো না। উনি তোমার বাবা নয় সাবাব। উনি একজন-

—-‘ খুনি! আমি একজন খুনি!’

হীরের কথার মাঝেই নিজের স্বীকারোক্তি দিলেন আজিম সাহেব। হীর বাদে বাকি উপস্থিত সকলেই যেন বিস্ময়ে তলিয়ে গেলো। অবিশ্বাস্যের পাহাড় ঢলে পড়লো সকলের মন-মস্তিস্কে! সাবাব যেন কেঁপে উঠলো বাবার ছোট্ট একটা কথায়। তার বুকের উপর ভেঙে পড়লো বাবার প্রতি ভালোবাসার বিশাল বিশাল পাহাড় গুলো। কয়েক মুহুর্তের জন্য দম বন্ধ হয়ে গেলো তার। শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল কিছু নেমে যেতে লাগল। এক ঝটকায় মনে পড়তে লাগল বাবার সাথে কাটানো অজস্র খুনসুটিময় সময়। কত আনন্দ, আর ভালোবাসায় ভরপুর বাবা নামক শব্দটায়। আর আজ সেই শব্দের মানেটাই তো পাল্টে দিলো তার বাবা। চোখজোড়া টলমল করে টুপ করে গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোঁটা জল। ছেলের চোখে জল দেখে আজিম সাহেব ভেতর থেকে একদম ভেঙে গেলেন। ছেলের মুখটা বেশিক্ষণ দেখতে পারলেন না। হীরের দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলল,

—-‘ আমাকে আমার শাস্তি দিয়ে দাও মামনী! আমায় আমার শাস্তি দিয়ে দাও!’

আজিম সাহেবের বানীতে সাবাব অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। ঘৃনা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,

—-‘ নিজের আপন ভাইয়ের সাথে এমনটা কেন করলেন আজিম সাহেব? সে আপনার কি এমন ক্ষতি করেছিলো যে তাকে এমন নৃশংস শাস্তি পেয়ে মরতে হয়েছিলো? বলুন আজিম সাহেব?’

আজিম সাহেব কাঁদতে কাঁদতে রাঙা চোখে দেখলেন সাবাবকে। কন্ঠে হাহাকার নিয়ে বললেন,

—-‘ তুমি আমায় নাম নিয়ে ডাকছো সাবাব! নিজের বাবাকে-

—-‘ সরি মি. আহমেদ। আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন আমি একজন ব্রিগেডিয়ার। এন্ড আ’ম অন মাই ডিউটি। আর সাদমান সাবাব অন ডিউটিতে থাকলে কোনো সম্পর্ক মনে রাখেনা।’

আজিম সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মাথা নীচু করে তিনিও ডুব দিলেন অতীতের কয়েক পাতায়___

—-‘ ছোট থেকেই বদ মেজাজী ছিলাম আমি। বাবা-মায়ের প্রত্যেক কথার অবাধ্য! যখন যা চাই সেটাই মুখের সামনে হাজির হতে হবে। বাবা দিনকে দিন খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো আমাকে নিয়ে। আমি তার বড় ছেলে যার কিনা ভবিষ্যতে তার সমস্ত দায়িত্বের ভার কাঁধে নেওয়ার কথা সে জন্ম থেকেই তৈরি হয়েছিলো এক কুলাঙ্গার! অন্য দিকে তার ছোট ছেলে যে কিনা বড় ভাইয়ের অধীনে থেকে সু-শিক্ষা পাবে সে জন্ম থেকেই যেন একশটা গুন নিয়ে জন্মেছে। যেটা বাবা আমার মধ্যে আশা করতো সে-সবটাই রিয়াদের মাঝে অবশিষ্ট ছিলো। তাই বাবার সব আশা-ভরসা রিয়াদকে জুড়েই ছিলো। আমার বেহায়াপনা দিনদিন মাত্রা ছাড়িয়ে গেলো। আমার নেশা ছিলো নারী আর টাকা। আহমেদ ভিলার মত একটা পবিত্র জায়গাকে আমার কারনে বারবার অপবিত্র হতে হয়েছে। আমার এমন বেড়ায়াপনাতে বাবা অতিষ্ঠ হয়ে গেলো। আমাকে বাড়ি থেকে দূর শহরে পাঠিয়ে দিলো। বছরের পর বছর আমি সেখানেই কাটাই! বাবা আমার প্রয়োজন মতো টাকা পাঠাতো। কিন্তু তাতে আমার বিন্দু মাত্র মন ভরত না। আমি পড়াশোনা সেখানেই শেষ করি। বাবা ভেবেছিলো তার ব্যবসাটা অন্তত আমি ভালো ভাবে দেখবো। কিন্তু ঘটল ব্যতিক্রম। বাবার ব্যবসায় ঢুকে আমি শুধু টাকা নিয়েছি কখনও এক পয়সাও আয় করে দেখাতে পারিনি। বাবা তেতে গেলো। আমাকে ব্যবসায় থেকে বের করে দিলো। তারপর আমাকে না জানিয়ে আমাকে বিয়ে করিয়ে দিলো নাজমার সঙ্গে। আমি কখনও ভাবতেও পারিনি এমন একটা গেঁয়ো মেয়ে আমার বউ হবে। নাজমাকে দেখলেই আমার মনে পড়ত ঐসব মেয়েদের কথা যাদের সাথে আমি পার করেছি কত রাত। নাজমার থেকে ওদের স্ট্যান্ডার্ড ভাল ছিলো। আমি নাজমার উপর কম অত্যাচার করিনি। পশুর মতো আচরন করেছি। কিন্তু কোনোদিন সে আমায় মুখ ফুটে একটা জবাবও দেয়নি। কিছুদিন পর হঠাৎ বাবা-মা মারা গেলো। বাবা-মার মৃত্যুতে আমার কোনো ভাবান্তর ছিলো না আমার শুধু একটাই চিন্তা ছিলো সম্পত্তি কার ভাগে বেশি পড়ল? খুঁজে খুঁজে দেখলাম বাবা শুধুমাত্র আহমেদ ভিলা আর একটা কোম্পানিই কেবল আমার নামে লিখে দিয়ে গেছে বাকি পুরোটা,এতো বড় সোনার সাম্রাজ্য, সোনার খনি,গুপ্তধন,সেই ছোট্ট চাবির গুচ্ছের বক্সটা সব.. সবটা রিয়াদের নামে লিখে দিয়ে গেছে! আমার যতক্ষণে এসব বোধগম্য হলো ততক্ষণে আমার পাগলের মতো অবস্থা হয়ে গেলো! আমি পাগলের মতো আচরন করতে লাগলাম। কি করব, কিরব ভেবে না পেয়ে নাজমা কে টর্চার করতে শুরু করলাম। নিজের রাগ টা তো দমাতে হবে। এমনই চলতে থাকল সব টা।
সময়ের শ্রোতে নাজমার কোল আলো করে এলে তোমরা। আমার মনে তখন শয়তানের জাল আবারও বুনতে লাগলাম। আমার মাথায় এলো রিয়াদ যদি কখনও বিয়ে না করে তাহলে ও নিশ্চয়ই ওর নামের সব সম্পত্তি আমার একমাত্র ছেলের নামে করে দিবে। তাহলে তো দিনশেষে সে সম্পত্তির মালিক আমিই হবো। আমার মনে আবারও লালসার দানা বাঁধল। এখন আমার মূখ্য উদ্দেশ্য হলো রিয়াদকে কখনও বিয়ে করতে না দেওয়া। কিন্তু না,আমার সে উদ্দেশ্য পূরন হলো না। বছর একটা ঘুরতেই রিয়াদ কনিকাকে নিয়ে এলো। আহমেদ ভিলাতেই ওদের সংসার হলো। আমি মনকে বুঝালাম। বিয়ে আটকাতে পারিনি তো কি হয়েছে? কনিকাকে রিয়াদের জীবন থেকে সরিয়ে দিলেই তো আমার উদ্দেশ্য আবারও সফল হতে পারে। তাই দিনের পর দিন কনিকাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করি। কিন্তু কখনও এই ষড়যন্ত্রে সফল হতে পারিনি। সেবার নাজমার বুদ্ধির জন্য কনিকা বেঁচে যায়। আর রিয়াদও জেনে যায় আমার উদ্দেশ্য। রিয়াদ সেদিনই আমায় শেষ করে দিতো কিন্তু কনিকার জন্য পারেনি। পরদিন ওরা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। নিজেদের আলাদা সংসার করে। তখন হীর কনিকার পেটে। একতো একটাকেই মারতে পারছিলাম না তারউপর আরেকজনের উৎপত্তি। আমার এতো সব প্ল্যানের খবর কোনো ভাবে মালয়েশিয়া চলে যায়। রেজা আর মনিকা রিয়াদ-কনিকার উপর সর্বক্ষণ নজর রাখতে গিয়ে জেনে যায় আমিও ওদের সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই আমরা তিনজন হাত মিলাই। রেজা বলে সম্পত্তির তিন ভাগ হবে। এক ভাগ মনিকা নিবে একভাগ সে নিবে আর এক ভাগ আমার হবে। আমি এতদিনে বুঝেছিলাম রিয়াদকে বা কনিকা-হীরকে আমি কখনই একা মারতে পারবো না। আর সম্পত্তিও আমার চাই। তাই আমি ওদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। সম্পত্তির লোভে আমি অন্ধ হয়ে যাই। নিজের ভাইকেও মেরে ফেলতে দ্বিধা করি… নি-

হীর বাঁকা হেসে গুলি চালায় আজিম সাহেবের বুকে! আজিম সাহেব ধাক্কা খায় স্বজোরে। মুহুর্তেই নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার মতো কষ্ট হয় তার। সাবাবের চোখ জোড়া লালচে হয়ে যায়। টলমল করা দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে সেও রিভলবার তুলে। পরপর একসাথে তিনটে গুলি বেরিয়ে তার বাবার বুকটা ঝাঝড়া করে দিয়ে যায়। আজিম সাহেব রক্ত টগবগ করা দৃষ্টি মেলে ছেলেকে শেষ দেখা দেখে। অতঃপর লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। কয়েক মুহুর্ত পেরোতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে। এবার রেজার পালা। প্রথম গুলিটা হীরের রিভলবার থেকে বেরিয়ে রেজার কপাল ফুটো করে দিয়ে যায়। অতঃপর সবার হাতের রিভলবার থেকে পরপর গুলি বেরিয়ে রেজার শরীর ভাসিয়ে তুলে রক্তে। রোজকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আদ্রিক। সাবাব অসহায় চোখে জল মুছতে মুছতে বাবার লাশটা দেখে। আর মনেমনে ভাবে,

—-‘ অর্থের লোভ টা দমিয়ে রাখতে পারলে আজ আমাদের পরিবারটা সুখের আমেজে ভরে থাকত বাবা। আজ তুমিও থাকতে আমাদের মাঝে আর ছোট-মা বাবাইও থাকতো আমাদের মাঝে। পরিবারের সুখের চেয়ে কি অর্থলোভটাই বেশি ছিলো বাবা?’

পাশ থেকে সাবাবের হাতটা শক্ত করে মুঠোবন্দি করে ধরে হীর। একবার আজিম সাহেবের লাশটার দিকে তাকিয়ে ফের সাবাবের দিকে তাকায়। অতঃপর ভারী কন্ঠে বলে,

—-‘ আমাদের পরিবারের মানুষ গুলো অদৃশ্যভাবে সারাজীবন আমাদের কাছেই থাকবে। দূর থেকে।’

সাবাব মাথা নুইয়ে নেয়। উপর নীচ করে মাথা নেড়ে ভারী নিঃশ্বাস ফেলে নিঃশব্দে বলে, ‘হ্যাঁ,কাছে-দূরে।’

পেছন থেকে মীর এসে সাবাবের কাঁধে হাত রেখে ক্লান্ত স্বরে বলে,

—-‘ মিশন সাকসেসফুল। চল এবার ফেরা যাক নিজেদের গন্তব্য।’

—-‘হু চল।’

_________________

রোজ আর আদ্রিককে সাথে নিয়েই বাংলাদেশে ফিরে আসে তারা। আদ্রিক এয়ারপোর্ট থেকে নিজের বাড়িতে চলে যায়। আর রোজকে হীর-সাবাব তাদের সঙ্গে নিয়ে আসে। বাড়িতে ঢুকতেই সানিয়া এসে ঝাপটে ধরে সাবাবকে। বাবার মৃত্যুতে খুব ভেঙে পড়ে সানিয়া। আজিম সাহেব আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখে যান। তিনি মালয়েশিয়া পৌঁছতেই বাংলাদেশে খবর আসে একটা গাড়িতে তার এক্সিডেন্ট হয় আর তিনি সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। একটা বডি মর্গে আসে আজিম সাহেবের নামে। নাজমা বেগম,সানিয়া আর নেহাল গিয়ে লাশ নিশ্চিত করে আসে। গত কাল যোহরের পরে তার লাশ দাফন করা হয়। সানিয়ার ভাবনা মতে ওটা তার বাবাই ছিলো। কিন্তু নাজমা বেগম জানতেন ওটা তার স্বামী নন। তার স্বামী বাংলাদেশেই ছিলেন না৷ তিনি মালয়েশিয়া গিয়েছেন। তবে তার স্বামীর মতো তিনিও নিশ্চিত ছিলেন সে আর বেঁচে ফিরতে পারবেন না।

—-‘ ভাই! বাবা আর নেই ভাই! বাবা আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে রে-

ফোপাঁতে ফোপাঁতে কথা গুলো বলে সানিয়া। সাবাব বোনকে আগলে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

—-‘ আমি শুনেছি! তুই এভাবে কাঁদ- কাঁদলে বাবা যে আরও কষ্ট পাবে পাগলি! কাঁদিস না বোন!’

সাবাবের আদুরে কন্ঠে সানিয়া আরও কাঁদতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে তার। নাজমা বেগম মেয়ের চোখের পানি সহ্য করতে পারেনা। তিনি মুখে আঁচল চেপে চলে যান ওখান থেকে। হীর অসহায় চোখে দেখে নাজমা বেগমের চলে যাওয়া। দূরে হাত পা গুটিয়ে বসে আছে নেহাল। হীর তার পানে এগিয়ে গেলো। পাশে বসতে বসতে আগ্রহী কন্ঠে জানতে চাইল,

—-‘ বাবাইয়ের ডেডবডি আইডেন্টিফাই কে করেছে?’

হীরের প্রশ্নে মুখ তুলে তাকায় নেহাল। কিছু একটা ভাবতে ভাবতে জবাব দেয়,

—-‘ মা আইডেন্টিফাই করেছেন। আমি আর সানি লাশ দেখে তো চিনতেই পারিনি। এক্সিডেন্টে কি বিভৎস চেহারা হয়েছে বাবার! সানি একবার দেখেই সেন্সলেস হয়ে পড়ে। মা পুলিশকে বলেন, এটাই বাবার লাশ। তারপর পোস্টমর্টেম করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় লাশ। আমরা চেয়েছিলাম তোমরা যেন এসে বাবাকে শেষ দেখা দেখতে পারো… কিন্তু মা বললেন জানাজা পড়িয়ে যতদ্রুত সম্ভব কবর দিয়ে দাও। মায়ের কঠিন আদেশ ফেলতে পারিনি। তাই তোমরা আসার আগেই বাবাকে-

—-‘ না না ঠিকাছে ভাইয়া। বড় মা যখন চাননি তখন হয়তো আপির কথা ভেবেই-

—-‘ হ্যাঁ গো হীর। গতকাল থেকে সানির অবস্থা খুব খরাপ! না খাচ্ছে না কিছু করছে। শুধু বাবাকে ডেকে কেঁদেই চলেছে।’

—-‘ মেয়েরা তার বাবাকে একটু বেশিই ভালোবাসে গো! একটু বেশিই ভালোবাসে!( সরি আপি! তোমার প্রিয় বাবাকে তোমার থেকে কেড়ে নেওয়ার জন্য)

—-‘ সানি!’

সাবাব সানি বলে চেঁচিয়ে উঠতেই চমকে উঠলো হীর। নেহাল আর রোজও চমকালো। সবাই উঠে গেলো সানিয়া-সাবাবের কাছে! নেহাল সানিয়াকে নিজের দিকে ফেরাতে গিয়ে বুঝল সে আবারও জ্ঞান হারিয়েছে। সাবাব সানিয়ার অচেতন মুখটির দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বলল,

—-‘ নেহাল ভাই, সানিকে তুমি রুমে নিয়ে যাও আমি ডক্টর আঙ্কেলকে একটা কল করি।’

নেহাল সম্মতি সূচক মাথা নেড়ে সানিয়াকে পাজাঁ কোলে তুলে তাদের রুমে নিয়ে গেলো। সাবাব জলদি ডক্টরকে ফোন করে বাসায় ডেকে সানিয়ার রুমের দিকে যেতে নিলেই হীর তার হাত ধরে ফেলে। সাবাব দাঁড়িয়ে পড়ে। হীরের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে ভরসা দিয়ে বলে,

—-‘ চিন্তা করো না হীরপাখি। সানির কিচ্ছু হবেনা।’

হীর ঢোক গিলে মনেমনে প্রার্থনা জুড়ে উপরওয়ালার কাছে,যেন সানিয়ার কিছু না হয়। সে যেন একদম সুস্থ থাকে।

সাবাব সানিয়ার রুমের দিকে চলে গেল। রোজ সাবাবের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,

—-‘ কোন দুঃসংবাদ আসবে না তো আপু?’

হীর রোজের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

—-‘ না রে! এতকিছুর পরেও আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের দুঃসংবাদ দিবেন না।’

—-‘ সেটাই প্রত্যাশার।’

#চলব___

[ বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here