#কাছে_দূরে ♥️
#muhtarizah_moumita
#পর্ব___২৬
উত্তর দিকটাতে কালো মেঘের হাট বসেছে। পশ্চিমের মেঘগুলোও উত্তরের মেঘেদের বদৌলতে কালো রং ধারন করছে ক্রমশই। দু’পাশের মেঘ দু’দিকে ছুটে চলে একজন আরেকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ করছে। আর সংঘর্ষ হতেই হাঁকডাক পেড়ে সেই সংবাদ পাঠিয়ে বিদপ সংকেত জানাচ্ছে পৃথিবীবাসীকে। ধীরেধীরে ঝড়হাওয়া বইতে আরম্ভ করল। সামনের দিকে ধুলোবালিতে অন্ধকার লাগছে পুরোটাই। এমন অবস্থায় সাবাবের মনের মধ্যে ভয় উঁকি দিলো। অন্ধকার হাতড়ে গাড়ি আগানো বোকামো হবে। বলা যায়না উল্টো পাশ থেকে ছুটে আসা কোনো গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে গেলো। এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে সময় নিবেনা। তাই বিপদ বুঝে পা না বাড়িয়ে রাস্তার পাশে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করালো।
হীরের মন খারাপের সঙ্গী হতে মেঘেদের আনাগোনা। হীর প্রকৃতির এই সঙ্গতার ঋণ যেন কোনো কালেই শেষ করতে পারবে না। বুক চিঁড়ে তপ্ত দীর্ঘশ্বাসের আবির্ভাব ঘটল। দৃষ্টি সেই তখন থেকেই মাটিতে বিদ্ধ হয়ে আছে তার। বুকের ভেতরে মন খারাপ ভাবটার পাশাপাশি একরাশ অভিমান চেপে বসেছে। সাবাব তাকে না জেনেই কেমন করে ভুল বুঝলো! কেন পর্যবেক্ষণ করলো না সবটা? কেন জানতে চাইলো না তার মন খারাপের কারন? কেন মাঝখানে একজন বহিরাগতকে টেনে আনলো? সে কি জানেনা? হাজারো ভয়,হতাশা,আতংক সব কিছু নিজের মাঝে চেপে রাখার পরও সেই বারোটা বছর যাবত সেও তার অপেক্ষা করেছে! বারোটা বছর! কম সময়? না। বরং একটু বেশিই সময়। বাবা-মা কে হারিয়ে যেদিন সে দুয়ারে পা রাখে, ভয়ার্ত চোখ জোড়া মেলে এই মানুষটিকেই আবিষ্কার করেছিলো বড়মার পেছনে। সটান হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। চোখ জোড়া সরু আকার নিয়েছিলো। তার চাহনি ছিলো বিচলিত! মায়া মায়া মুখটা আরও মায়াবী হয়ে উঠেছিলো তার বাচ্চাসুলভ কন্ঠটিতে, ‘মা, হীরপরি কি আজ থেকে আমাদের সাথেই থাকবে?’
বড়মা তাকে দু’হাতে আগলে নিয়ে বলেছিলো, ‘আজ থেকে সারাজীবন হীরপরি আমাদের সাথেই থাকবে।’
এই কথা শুনে তার মুখে ফুটে উঠেছিলো তৃপ্তিময় হাসি। আহ্লাদে গদোগদো করে মায়াবী মুখে সে আবারও বলে উঠেছিলো, ‘ইয়ে, আজ থেকে সারাজীবনের জন্য হীরপরি আমাদের সাথে থাকবে।’
বিকট আওয়াজে কেঁপে উঠলো পৃথিবী! মনে হলো যেন পুরো আকাশটাই ভেঙে পড়ল মাথার উপর। হঠাৎ আলোতে অন্ধকার কেটে এমন বিকট আওয়াজ তুলতেই হীর চিৎকার করে দু’হাতে মুখ চেপে ধরলো! বজ্রপাতের আওয়াজে সাবাবের ভাবাবেগ না হলেও হীরের চিৎকারে সে ঠিকই চমকে উঠলো! সঙ্গে সঙ্গে নিজের সিটবেল্ট খুলে হীরের দিকে এগিয়ে গেলো! হীর মুখে হাত চেপে কাঁপতে লাগল ভয়ে! সাবাব হীরের দিকে হাত বাড়িয়ে প্রথমে তার সিটবেল্ট খুলে দিলো। কাছাকাছি সাবাবের অস্তিত্ব আবিষ্কার করতেই হীর যেন গলা ভেজানোর জন্য পানি পেলো! চোখ জোড়া বন্ধ রেখেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সাবাবকে। হীরের শরীর কাঁপছে। সাবাব তা দূর থেকেই অনুমান করেছিলো। বজ্রপাতের বিকট শব্দে হীর যে এখনও অজ্ঞান হয়ে যায়নি সেই কথা ভেবে খুব হাসি পেলো সাবাবের। কিন্তু এই মুহুর্তে হাসা পাপ হবে। বেচারি ভীষণ ভয় পেয়েছে। আপাতত তার ভয় দূর করা দরকার! সাবাব মনকে শান্ত করে হীরের মাথায় হাত রাখল। পরম স্নেহে হীরের মাথায় হাত বুলিয়ে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
—-‘ ভয় হচ্ছে?’
হীর কিঞ্চিৎ নড়ল। কিন্তু সাবাবকে ছাড়লো না৷ একই ভাবে শক্ত করে জড়িয়ে থেকে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠলো,
—-‘ খুববব! প্লিজ আমায় ছেড়োনা। আমা,,,র খুবব ভয় করছে!’
সাবাব মনেমনে হাসল। একহাত নামিয়ে হীরকে নিজের আরেকটু কাছে নিয়ে এসে শান্ত কন্ঠে বলল,
—-‘ ভয় নেই, আমি আছি তো।’
সাবাব কথাটা শেষ করতেই আবারও বজ্রপাতের শব্দে কেঁপে উঠলো চারিপাশ! হীর আবারও চেঁচিয়ে উঠে খামচে ধরলো সাবাবকে। এবার সে নিজের সীট ছেড়ে লাফিয়ে পড়ল সাবাবের কোলে। বাচ্চাদের মতো করে গুটিশুটি মেরে একদম ছোট্ট হয়ে গেলো। সাবাবের বুকে মুখ লুকিয়ে ক্রমশই ঢুকে যাচ্ছে তার শরীরের মধ্যে। সাবাব লেপ্টে গেলো নিজের সীটের সাথে। হীরের পাগলামি তাকে কেমন করে জ্বালাতন করছে! সে সহ্য করতে পারছেনা। হীরের নখের আচরে নিশ্চয়ই দাগ পড়ে গিয়েছে সাবাবের শরীরে। দুই-এক জায়গায় তো জ্বলছেও! সাবাব নিঃশ্বাস আঁটকে ধরে হীরকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো! একটু ভালো করে শুনলে বোঝা যাবে দু’জনের হৃৎস্পন্দনই কতটা ভয়ংকর গতিতে ছুটছে! সাবাব ঢোক গিলে হীরের মাথায় হাত রাখলো। আবারও মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
—-‘ আরে বোকা মেয়ে! সামান্য বজ্রপাতের শব্দে কেউ নাকি এতোটা ভয় পায়। কই আমি তো পাচ্ছি না!’
হীর তার বুকে মুখ গুঁজে রেখেই জবাব দিলো,
—-‘ পাষাণ হৃদয়ের মানুষরা এই শব্দে ভয় পায়না!’
সাবাব এক ভ্রু উঁচিয়ে মৃদুস্বরে বলল,
—-‘ আচ্ছা? তাহলে কারা ভয় পায় শুনি?’
হীর ফট করে জবাব দিলো,
—-‘ কোমল হৃদেয়র মানুষরা ভয় পায়! যেমন আম….’
—-‘ যেমন তরী ভয় পায়! দেখছিস ওর সবটা কেমন সুন্দর মিলে যাচ্ছে! যেমন রূপ,তেমন গুন আর তেমন সব অসাধারণ ব্যাপার। ধর, আমাদের বিয়ের পর কোনো এক জড়ের রাতে পৃথিবী কাঁপিয়ে বজ্রপাত হবে আর সে ভয় পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরবে। ইশশ, ভাবলেই যে…’
সাবাবের পুরো কথাটা শেষ করা অব্দি টিকতে পারলনা হীর। সাবাবের থেকে ছিটকে সরে যেতে নিলেই ভয়ংকর ভাবে পিঠের মাঝে আঘাত করলো গাড়ির স্টিয়ারিং! আকষ্মিক পিঠে আঘাত লাগতেই ব্যাথায় মাথা নুইয়ে নিলো হীর। সাবাব ঘটনার আকস্মিকতায় কোনোটাই ঠিকভাবে বুঝতে পারলো না! হীরের ব্যাথার গভীরতা মাপতে তার পিঠে হাত রাখতেই হীর নিজের সীটে চলে এলো। সীটের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে তীব্র যাতনায় চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিলো। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার দশা! সাবাব যেন বোকা বনে গেলো নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য। আর একটু মুহুর্তও দেরী না করে হীরকে একরকম জোর করে নিয়েই গাড়ির পেছনের সীটে নিয়ে এলো। হীর আবারও পিঠ ঠেকিয়ে বসতে নিলে সাবাব তাকে বসতে দিলোনা। হীরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরলো। হীর নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে নিলেই সাবাব হীরের ব্যাথা জায়গায় হাত চেপে ধরলো! হীর ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে ছটফট করে বলে উঠলো,
—-‘ মনে হচ্ছে আমার পিঠের হাড় ভেঙে গিয়েছে! ভীষণ ব্যাথা করছে।’
সাবাব চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। রাগে কটমট করে বলল,
—-‘ বেশি ছটফট করলে এই হয়! যখন ভয় পেয়ে জড়িয়েই ছিলি তখন এতো লাফালাফি করার কি ছিলো?’
—-‘ আমি মোটেই লাফালাফি করিনি! আমার মনে হচ্ছিল আমি তরী আপুর জায়গা দখল করে বসে আছি তাই উঠতে চাচ্ছিলাম!’
—-‘ তরী আপুর জায়গা মানে?’
হীর সাবাবকে জড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই সাবাবের বুকের উপর হাত রাখল। অভিমানী কন্ঠে বলল,
—-‘ এই নিরাপদ জায়গাটা তরী আপুর। আমি ভুল করেই এই জায়গা দখল করে বসেছিলাম! যখন তুমি মনে করিয়ে দিলে তখন তাড়াহুড়ো লেগে গেলো জায়গা ছাড়ার। আর জায়গা ছাড়তে গিয়েই অন্যের জায়গা দখল করার অপরাধে যথাযোগ্য শাস্তিও মিলে গেলো!’
সাবাব ঠোঁট কামড়ে হাসল। হীরের কথা গুলোতে ঠিক কতটা অভিমান ভরে আছে সেই আন্দাজ করতে করতে জবাব দিলো,
—-‘ তরী তো বলেনি জায়গা ছেড়ে দিতে!’
—-‘ জায়গা দখল নিতেও তো বলেনি।’
—-‘ জায়গা দখল নিতে কি পারমিশন লাগে?’
—-‘ অধিকার লাগে?’
—-‘ অধিকার নেই?’
—-‘ অধিকার সবার থাকে না!’
—-‘ অধিকার তো সবাইকে দেওয়া যায়না।’
হীর মাথা তুললো সাবাবের বুক থেকে। সাবাবের বলা কথাটা তার মনে তীরের মতো বিঁধেছে! সাবাব কি তাকে উদ্দেশ্য করে বলল? ‘অধিকার তো সবাইকে দেওয়া যায়না।’
হীরের চোখ জোড়া ক্ষনিকের মাঝেই টলমল করে উঠলো। সাবাবের থেকে চোখ নামিয়ে নিলো হীর। সাবাব মাথা নুইয়ে হীরের মায়াবী চোখ দুটো দেখার চেষ্টা চালাতেই হীর ভারী গলায় বলে উঠলো,
—-‘ একদম! অধিকার তো সবাইকে দেওয়া যায়না!’
সাবাব মনে মনে হাসলো। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাথায় হাত চালালো। চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলে সীটের সাথে হেলান দিয়ে বলে উঠলো,
—-‘ নিজের অধিকার বুঝে নিতে হয়! যেমনটা তরী নিয়েছে।’
হীরের পক্ষে আর সম্ভব হলো না নিজেকে সামলানোর! মুখে হাত চেপে ডুকরে কেঁদে উঠল সে। সাবাব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো হীরের কান্না দেখে। চমকে উঠে হীরের দিকে ফিরে বসে হীরের হাত ধরে নিজের দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করলো! চেষ্টা বিফল হতেই সাবাব অপরাধী কন্ঠে বলে উঠলো,
—-‘ হীর! হীর আমি তো… আমি তো শুধু মজ,,মজা..(না, মজা বলে ব্যাপারটা কাটানো ঠিক হবেনা! আমি জানি একটু কষ্ট হলেও তুমি ঠিকই মুখ ফুটে আমাকে ভালোবাসার কথা বলবে হীরপাখি। বলবে)
হীর? হীর তাকা আমার দিকে? দেখ আমি কি বলছি? আরে বাবা তুই কাঁদছিস কেন? কি হলো? হীর?’
হীর ফোপাঁতে ফোপাঁতে উত্তর দিলো,
—-‘ কিছু না!’
—-‘ কিছু না হলে কাঁদছিস কেন হ্যাঁ? প্লিজ কাঁদিস না? দেখ,আমরা একটা ভালো কাজে যাচ্ছি আর যাওয়ার আগে তুই যদি এভাবে কাঁদিস তাহলে কিভাবে হবে বল?’
—-‘ ক,,কাঁদছি কারন… কারন আমা,,,রর….’
—-‘ কারন? কারন তোর… কি?’
—-‘ মায়ের শেষ স্মৃতি টুকু আমি হারিয়ে ফেলেছি! আমার লকেটটা আমি কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না সকাল থেকে। ত,,তুমি আপিকে কল করার আগে থেকে সমানে খুঁজে গিয়েছে। পুরো বাড়ি তল্লাশি করেছি কিন্তু কোথাও পাইনি!’
—-‘ এজন্যই মন খারাপ ছিলো?’
হীর ফোপাঁতে ফোপাঁতে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। সাবাব স্মিত হেসে হীরের আড়ালে বুক পকেটে হাত রাখল। লকেটটা এখনও নিরাপদে আছে। কিন্তু এই মুহুর্তে সাবাব হীরকে এটা দিতে চায় না। সাবাব এমনই এক দিন এই জিনিসটা হীরকে দিতে চায় যে দিনটা হীর আর তার জন্য হবে সবচেয়ে বিশেষ দিন আর বিশেষ মুহুর্ত হবে। একান্তই ব্যাক্তিগত দিন।
সাবাব হীরের মাথায় হাত রেখে বলল,
—-‘ কাঁদিস না! ছোট মায়ের দেওয়া শেষ স্মৃতিটা হয়তো কোথাও খুব নিরাপদে আছে। আমি তোকে খুঁজে এনে দিবো। প্রমিজ!’
হীরের কান্না থেমে গেলো। ঠোঁটের কোনে এক চিলতে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে উঠলো। আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে বলে উঠলো,
—-‘ প্রমিজ তো?’
সাবাব মিষ্টি হেসে জবাব দিলো,
—-‘ পাক্কা প্রমিজ।’
সাবাবের আশ্বাসে হীরের ঠোঁটে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটলেও মনের কোনে কোথাও একটা থেকে গেলো একরাশ অভিমান। খুব গোপনে,একান্ত ব্যাক্তিগত হয়ে।
_________
—-‘ আমি কিন্তু এখনও জানিনা কে আসছে? কার আসার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি?’
হীরের অস্থির কন্ঠে সাবাব মুখ উঁচিয়ে তাকালো। জবাবে কিছু বলতে নিলেই হীরের পেছনে এসে দাঁড়ালো প্রত্যাশিত মানুষটি। মুখে একগাদা হাসি। তার আর ধৈর্য্য কুলচ্ছে না হীরকে জড়িয়ে ধরার জন্য। সাবাব তাকে দেখতেই দাঁড়িয়ে গেলো। তার মুখজুড়েও দেখা মিলল মিষ্টি হাসির ঝিলিক। হীর তার অদ্ভুত আচরন দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। তার অস্থির দৃষ্টি অনুসরণ করে পেছন মুড়ে তাকাতেই যেন বুকের ভেতর ধক করে উঠলো! মনটা চিৎকার পেড়ে বলে উঠতে চাইল, ‘মা।’
মা শব্দটা মনে উচ্চারিত হলেও মুখে উচ্চারিত হলো না। গলাটা ভিজে উঠলো কান্নায়! ভেজা কন্ঠেই বলে উঠলো,
—-‘ মনি….’
মনিকা হাতের ট্রলিটা পাশে সরিয়ে হাসি মুখে হীরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। স্নেহে ভরা হাত জোড়া তুলে হীরের গালে রাখতেই হীরের চোখের জলে ভিজে উঠলো মনিকার হাত! হীর অস্ফুট স্বরে আবারও ডেকে উঠলো, ‘মনি তুমি…’
মনিকা দু’হাতে জড়িয়ে নিলো হীরকে! হীর তাকে ঝাপটে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। সাবাব সন্তুষ্ট চোখে দেখতে লাগল হীরের কান্ড। আঁড়চোখে বারবার মনিকাকেও দেখতে লাগল। মনিকা দেখতে হুবহু হীরের মায়ের মতো। আজ মানুষ টা বেঁচে থাকলে দ্বিধাদন্দে ভুগতে হতো দু’জনকে আলাদা করতে। দিন পেরিয়ে মাস যেত আর মাস পেরিয়ে বছর। তবুও দু’জনকে আলাদা আলাদা ভাবে চিনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হতো!
—-‘ একজন কি ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে? মনির কাছে আসবে না?’
সাবাব স্মিত হেসে কাছে এগিয়ে আসলো মনিকার। মাথা নুইয়ে মিষ্টি হাসতে মনিকা এক হাত তুলে সাবাবের গালে রেখে আদুরে গলায় বলল,
—-‘ সেই আট বছর বয়সে তোমায় দেখেছিলাম। বাচ্চা একটা ছেলে। আর আজ দেখো চব্বিশ বছরের যুবক হয়ে গিয়েছো। মনির কথা মনে আছে?’
সাবাব ঠোঁট টেনে হাসল। হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বলল,
—-‘ খুব মনে আছে। কেমন আছো মনি?’
—-‘ খুব ভালো বাবা। আর আমার এই যে মেয়েটাকে পেয়ে এখন আরও বেশি ভালো আছি।’
সাবাব হাসি মুখেই আরেকবার দেখলো হীরকে। হীর এখনও জড়িয়ে ধরে আছে তার মনিকে। মনির পেছনের দিকে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। মেয়ে কম মহিলাই বলা চলে। সাবাব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। তার আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে উচ্ছাসিত গলায় বলে উঠলো,
—-‘ শীলা আপু না?’
শীলা চকচকে দাতের হাসি দিয়ে তুমুল বেগে মাথা নাড়লো। বোকা গলায় বলল,
—-‘ হ ভাইজান। আমি শীলাই।’
সাবাব হাসল। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—-‘ কি খবর তোমার? কেমন আছো তুমি?’
শীলা দাঁত কপাটি কেলিয়ে হেসে রইলো আগের মতোই। সাবাবের প্রশ্নে তৎক্ষনাৎ ঘাড় কাত করে বলল,
—-‘ ভালা। আপনার খবর কন? কিরাম আছেন আন্নেরা হগগোলে?’
সাবাব চোখ ঝাপটে হাসি মুখে বলল,
—-‘ ঝাক্কাস।’
শীলা হেসে পড়ল। হীর এতক্ষণে মুখ তুললো। মনিকে ধরে ঘাড় কাত করে একবার দেখলো শীলাকে। শীলা হীরের তাকানোর অপেক্ষাতেই ছিলো। হীরকে তাকাতে দেখেই শীলা খুশিতে নাচ পেড়ে উঠে বলল,
—-‘ হীরজান!’
শীলার মুখে ‘হীরজান’ নামটা শুনতেই খিলখিল করে হেসে উঠলো হীর। মনিকে ছেড়ে শীলার দিকে এগিয়ে যেতেই শীলা ছলছল চোখে তাকালো। মুখে হাত চেপে কান্না ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো,
—-‘ চৌদ্দ বছর পার হই গেছে হীরজান বুবু।আইজ আবার চৌদ্দ বছর বাদে তোমায় দেখতাছি।’
হীর চোখ ঝাপটে মৃদু হাসল। শীলাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
—-‘ কেমন আছো?’
#চলবে_