#কহিনুর
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৬
অধরা ভয়ে পিছিয়ে আসলো। জুবায়ের ক্রমশ ওর দিকে এগিয়ে আসছে। ছেলেটার হঠাৎ এমন পরিবর্তন নিয়ে ও বেশ চিন্তিত। মনে হলো আবার কিছু হয়ে যায়নি তো? কথাটা ভেবে ও ঢোক গিলল। কতবার নিষেধ করেছিল বাইরের কিছু না খেতে। এই পেটুক ছেলেটা হয়তো দুমদাম খেয়ে নিয়েছে। অধরার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। গুটিসুটি হয়ে বিছানার এক কোনে বসে পড়লো। জুবায়ের লাফ দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসতেই অধরা কেঁপে উঠলো। ভাবলো দৌড়ে পালিয়ে যাবে কিন্তু হলো না। ততক্ষণে জুবায়ের ওকে ঝট করে বিছানায় ফেলে দিয়ে ওর উপরে ঝাপিয়ে পড়েছে। অধরা ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলল। কয়েক মূহুর্ত পর হঠাৎ উষ্ণ অধরের ছোঁয়া ললাটে পেতেই অধরা চোখ খুলে ফেলল। জুবায়ের ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। অধরার ভয়ানক মেজাজ খারাপ হলো। এমনিই ডাইরী পড়ে মাথা আউলে গেছে তার মধ্যে ছেলেটা এসে বেয়াদবি করছে। ফাজিল ছেলে। অধরা দাঁতে দাঁত চেপে ধরে উঠতে চাইলো কিন্তু জুবায়ের দিলো না। ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে। ঝকঝকে খঞ্জরটা তুলে অধরার কপাল থেকে শুরু করে গল পযর্ন্ত আলতো ছোঁয়া দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
> আমি ডাকাতি করতে এসেছি। ভালোবাসা দিবে কিনা বলো? অবশ্য বউ আমার, সেহেতু বউয়ের ভালোবাসা না দিলেও তা আমার। মোটকথা বউয়ের সব কিছু আমার ।
জুবায়েরের কথা শুনে অধরা জ্বলে উঠলো। সিরিয়াস সময়ে এই লোকটা এসেছে মজা করতে। অধরা এবার ঝাঝালো কন্ঠে বলল,
> জুহি আছে না ওর কাছে গিয়ে ডাকাতি করেন। বেচারীর প্রেমে পড়ে ছ্যাকা খেয়ে বাঁকা হয়ে গিয়েছিলেন। আপনাদের বংশে আছে তো বউ রেখে সুন্দরীদের পেছনে ছুটতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়া। পড়লাম আপনার গোষ্ঠীর এক প্রেমিকের কাহিনি। সব গুলো এক।
জুবায়ের খঞ্জর টা ফেলে দিয়ে উঠে বসলো। মুখটা করুন করে বলল,
> মৃত মানুষকে নিয়ে কিছু বলতে হয়না। তাছাড়া আমার জানিনা কি হয়েছিল তখন অদ্ভুত অদ্ভুত কাণ্ড করে ফেলতাম। সরি বউ।
অধরা উঠে বসলো। ওড়নাটা ঠিক করে বলল,
> ঠিক আছে ঠিক আছে। ওসব নিয়ে কোনো ঝামেলা করতে চাইনা। আপনার মাথায় সমস্যা সে আমি অজানা নেই। এবার ডাইরীটা দেখুন, এখান থেকে জেনেছি আপনাদের বংশে কহিনুরের ঝামেলাটা কিভাবে ঢুকেছিল। সবটা ছিল একটা মহিলার উচ্চ আকাঙ্ক্ষার ফল। উচ্চ আকাঙ্ক্ষা ভালো তবে নিয়মের বাইরে গিয়ে না। এই ভদ্রমহিলা একজন মানুষকে পাবার জন্য কালো যাদু করে ফেলল কি জঘন্য তাঁর মেন্টালিটি।
জুবায়ের ভ্রু কুচকে বলল,
> নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আর্কষণ বেশি থাকে উনাকে খারাপ বলো না। আচ্ছা ডাইরী পেলে কিভাবে? বিস্তারিত বলবে কি লেখা আছে?
অধরা জুবায়েরকে মোটামুটি গুছিয়ে সবটা বলে দিলো। দাদু বলেছিল কাউকে না বলতে কিন্তু অধরা সেটা পারলো না। তাছাড়া জুবায়েরের থেকে লুকিয়ে রেখে বিশেষ কোনো সুবিধা হতো না। সব শুনে জুবায়েরের কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো। বলল,
> অনেক প্রশ্ন কিন্তু পরিস্কার হয়নি। তুমি ভাবো এখানে কহিনুরের জন্ম নিয়ে কোনো কথা উল্লেখ নেই। বলা হয়েছে পাথর মানবির কথা। ধরো কহিনুরের জন্ম কখন কিভাবে হবে, কিভাবে পাথরের ক্ষমতা ফিরবে কিছুই উল্লেখ নেই।
অধরা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল,
> মেয়েটার রক্তে পাথর প্রাণ ফিরে পাবে। এসব কালো যাদু খুবই ভয়ংকর জিনিস। সাহায্য করার নামে সব কিছু কেড়ে নিতে উস্তাদ। আপনাদের বংশের মেয়েদের জন্য খারাপ লাগছে। একটা বিষয় কিন্তু ক্লিয়ার হয়নি। ডাইরীতে লেখা ছিল মানব নিষিদ্ধ মানবি হবে তাঁরা। যদি মানব নিষিদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে আপনার ফুপা কে? আপনার ফুপির কার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে? উনি মানুষ তো?
অধরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। সত্যি বলতে এই কথাটা ওর আগে মাথায় আসেনি। এখন হঠাৎ খেয়াল হলো। জুবায়ের ডাইরীটা নিয়ে সেই লাইনটা কয়েকবার উচ্চারণ করে বলল,
> এই ফুফাকে আমার বেশ সন্দেহজনক লাগে আগেই বলেছিলাম। আর যাইহোক ভদ্রলোক কিছুতেই মানুষ না। হয় জ্বীন নয়তো পিশাচ। নয়তো এই কহিনুরের সঙ্গে জড়িত কোনো রহস্যময় চরিত্র।
অধরা কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বলল,
> বাদ দিন পরে দেখা যাবে। আগে বলুন উকিলের সঙ্গে কথা হয়েছে?
> সব ঠিকঠাক আছে। নোটিশ পাঠানোর ব্যবস্থাও করেছি। আশাকরি কোনো ঝামেলা হবে না। ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলা জরুরী। ও হয়তো আমার মতো ভূল করেছে। আরমান ফারুকী যে আমাদের বাবা না এটা ও জানেনা।
অধরা বিরক্ত হলো জুবায়েরের কথা শুনে। নাক মুখ কুচকে বলল,
> একদম ওকে কিছু বলবেন না। ও না জানলেও অসুবিধা নেই। ক্ষতি আপনার হবে ওর না। আরমান ফারুকী ওকে বিশেষ কোনো কাজে ব্যবহার করছে তাই ওকে এতটা কদর করে। ও ওর মতোই থাক সময় হলে সব প্রকাশ পাবে। খেয়েছেন রাতে?
জুবায়ের ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো। মুখটা করুন করে বলল,
> তুমিই তো বললে তোমার হাতের খাবার ছাড়া খাওয়া যাবে না তাহলে এখন বলছো কেনো?
>অপেক্ষা করুন আমি যাচ্ছি। ধন্যবাদ কথা শোনার জন্য। বিপদ ঘাপটি মেরে আছে যখন তখন হামলে পড়বে। সাবধানের মার নেই।
জুবায়েরের চোখ বন্ধ করে বলল,
> বুঝলাম ম্যাম। তুমি দেখেছো আমার সঙ্গে থেকে তোমার কেমন বুদ্ধি বেড়েছে।
অধরা ভ্রু কুচকে ফেলল। গুরুত্বপূর্ণ কথার মধ্যে কি সব বলছে। বিরক্ত হয়ে বলল,
> কেমন বুদ্ধি জানা আছে। আচ্ছা বলুন তো আপনার ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ হয়েছিল আমাদের বিয়ের মাস খানেক আগে। উনার ভাষায়, আমাকে দেখে উনার চোখের এন্টেনা নড়ে গিয়েছিল। ক্রাশ খেয়ে নিজে না বিয়ে করে আপনার সঙ্গে কেনো বিয়ে দিলেন? উনি নিজের বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারতেন। প্রশ্ন জাগে না আপনার মনে?
অধরার কথা শুনে জুবায়েরের ভীষন মন খারাপ হলো রাগ ও হলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
>তোমার কি এখন আফসোস হচ্ছে? আমি বর হিসেবে দেখতে খারাপ নাকি তোমার অন্যকিছুতে সমস্যা? ভাইয়ের সঙ্গে তুমি জীবনে আর কথা বলবে না। আমার পছন্দ না তুমি বাইরের লোকদের সঙ্গে আলাপচারিতা করো।
> বোকা বোকা কথা বলবেন না। আমি বিষয়টাকে ওরকম ভাবে ভাবিনি। আমি শুধুমাত্র বলতে চেয়েছি লোকটা নিজের পছন্দের মেয়েকে কারণ ছাড়া হাতছাড়া কেনো করলেন? নিজেও বিয়ে করতে পারতেন। নিশ্চয়ই কারণ আছে? আপনার ভাইয়ের মধ্যে ঘাবলা আছে।
> ওকে নিয়ে কোনো কথা হবে না। আমার কিন্তু ভীষন ক্ষুধা পেয়েছে। খেতে দিবে নাকি বাইরে গিয়ে দুম করে খেয়ে আসবো?
অধরা বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে আসলো। এই ছেলেটা এতদিন বউয়ের সঙ্গে খারাপ খারাপ ব্যবহার করে এখন জেলাস ফিল করছে যেটা একদম বিরক্তিকর। রহস্য উদ্ধারে মন নেই আছে বউ হারিয়ে যাবে সেই চিন্তা নিয়ে। অধরা কথাগুলো বিড়বিড় করতে করতে রান্নাঘরে গিয়ে হাজির হলো। রাতের ডিনার রেডি হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। জুবায়েরকে হয়তো এখনই ডাকা হবে। অধরা একটা কাজের মেয়ের সাহায্য নিয়ে দ্রুত কয়েকটা রুটি আর ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে রান্না বসিয়ে দিলো। মাংস নেওয়ার সময় চিকেন নাকি সিউর হয়ে নিলো। এই বাড়ির যে অবস্থা দেখা গেলো ফ্রিজে চিকেনের বদলে মানুষের হাত পা রেখে দিয়েছে। কিছুই অস্বাভাবিক না। আধা ঘন্টার মধ্যে ওর রান্না শেষ হলো। দ্রুত খাবার নিয়ে উপরে আসার সময় দাদু ওর রাস্তা অবরোধ করে দাঁড়িয়ে পড়লো। অধরা চমকে উঠেছে তবে সেটা বুঝতে দিলো না। ওষ্ঠে হাসি এনে বলল,
> কিছু বলবেন?
> বাড়িতে এতো লোকজন থাকতে তুমি রান্না করছো বিষয়টা ভাবাচ্ছে আমাকে।
অধরা ঢোক গিলে বলল,
> জানেন তো দাদু খুব সখ জেগেছে বরকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবো। বরের সেবাযত্ন করবো আম্মুরা যেমন করে আরকি। বাঙ্গালী মেয়েরা তো এমনিই করে তাইনা দাদু?
> বেশ ভালো কিন্তু কেমন জানি লাগছে। আচ্ছা যাও।
অধরা অনুমতি পেয়ে আর অপেক্ষা করলো না দ্রুত উপরে উঠে গেলো। অন্যদিকে রান্নাঘরের পাশ থেকে একজন ওর দিকে লাল লাল চোখে চোখে তাকিয়ে আছে সেটা ও দেখতে পেলো না।
☆☆☆☆☆☆☆☆
গভীর রাত, চারদিকে শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। পাশে জুবায়ের ঘুমিয়ে আছে। অধরার কিছুতেই ঘুম আসছে না। পেটের ডান সাইডে চিনচিন করে ব্যাথা করছে। একটু হাঁটতে পারলে হয়তো ভালো লাগবে। কথাটা ভেবে ও চুপচাপ জুবায়েরের পাশ থেকে উঠে আসলো। ছেলেটার ঘুম বেশ গভীর। অধরা দরজা খুঁলে বাইরে পা রাখতেই খেয়াল করলো বারান্দা ধরে কেউ এগিয়ে যাচ্ছে। পায়ের শব্দের সঙ্গে ঠুকঠাক আওয়াজ হচ্ছে। অধরা কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে শব্দের উৎসের দিকে এগিয়ে গেলো। অজানা উত্তেজনাই শরীর মৃদু মৃদু কাঁপছে। অধরা খুব সাবধানে এগোতে থাকলো। দু’তালা বাড়ি, দোতলার কক্ষ গুলো এল আকৃতির লম্বা ভাবে তৈরী। দুপাশ দিয়েই বাইরে যাওয়ার সিঁড়ি। বাড়িটা যেমন অদ্ভুত তেমনি এই বাড়ির প্রতিটা সদস্যও কেমন অদ্ভুত। এখানে থাকা প্রতিটা মানুষের মধ্যে রহস্য খেলা করে। অধরা ভাবতে ভাবতে শেষ সীমান্তে পৌঁছে গেলো। সিঁড়ি ধরে বাইরে নেমেই অধরার চোখ চড়কগাছ। অনেকগুলো লোকজন বাইরে জড় হয়েছে। সকলের দৃষ্টি সামনের দিকে। আকাশে পূর্নিমা চাঁদের জোছনা পৃথিবীতে ঠিকরে পড়ছে। দূর থেকে মানুষগুলোর মুখগুলো ভালো স্পষ্ট না হয়ে কেমন আবছা দেখা যাচ্ছে। অধরা দ্রুতগতিতে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলো। এখানে পিনপতন নিরবতা কেউ করো দিকে তাকাচ্ছে না। হঠাৎ ফ্যাচ ফ্যাচ কান্নার আওয়াজে ওর ঘোর কাটলো। সামনে তাঁকিয়ে দেখলো ওর মেঝো ননদ রুশনারা ফারুকী বসে আছে। ওকে ঘিরেই কিছু একটা চলছে। মেয়েটার গলাই মালা পাশের চেয়ারটা খালি। কি হচ্ছে এখানে কে জানে। অধরা কৌতূহলী হয়ে ভাবলো কাউকে জিঞ্জাসা করবে। পরিচিত কেউ নেই তাই সাহস পেলো না। এতগুলো অপরিচিত মানুষ এই বাড়িতে কিভাবে এলো? আশেপাশে দেখে এবার সামনের দিকে তাঁকিয়ে ঝটকা খেলো। রুশনারার এখন আর একা বসে নেই। ওর পাশে একজন অর্ধমানব বসে আছে। যার পায়ের দিকে মানুষের আকৃতি আর মাথার দিকটা পশুর। কি ভয়ংকর দৃশ্য। ভয়ে ওর বুকটা ধুক করে উঠলো। রুশনারা ভয়ে চুপসে আছে। এই অর্ধমানবটা নিজের মালাটা খুলে মেয়েটাকে পরিয়ে দিতেই মেয়েটা ছটফট করতে শুরু করলো। অধরা আর চুপ থাকতে পারলো না। চিৎকার করে বলে উঠলো,
> কি হচ্ছে হচ্ছে এখানে? মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছো কেনো? এই লোকটা কে?
অধরা একদমে কথাগুলো বলে থামলো। সকলের দৃষ্টি এবার ওর উপরে পতিত হলো। অধরা খেয়াল করলো এখানে অবস্থানকারী সকলেই অর্ধমানবে রূপান্তরিত হয়েছে। ওরা এসে অধরাকে ঘিরে ধরলো। ক্রমশ অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেছে। অধরা ভয়ে গুটিয়ে গেলো। মনে হচ্ছে সবটা স্বপ্ন। প্রচণ্ড ভয়ে ওর বুক ঢিপঢিপ করছে। বেশিক্ষণ আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। ধপাস করে পড়ে গেলো।
☆☆☆☆☆☆☆
আলো ঝলমলে সোনালী দিনের সূচনা হয়ে রাতের আধারের সঙ্গে সকল অশুভ কালো ছায়া দূর হয়ে গেছে। চোখে আলোর রশ্মি পড়তেই অধরার ঘুম ভাঙলো। নড়াচড়া করে হামি ছেড়ে উঠে বসলো। মাথাটা কেমন ভার হয়ে আছে। বিছানা থেকে নামতে চাইলো কিন্তু হলো না। জুবায়েরের গায়ের নিচে ওর কাপড় অর্ধেক আটকা পড়েছে। অধরা কাপড় টেনে নিতেই জুবায়ের হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসলো। চিন্তিত হয়ে জিঞ্জাসা করলো,
> তুমি ঠিক আছো? শরীর ঠিক লাগছে? কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাতো? গতকাল রাতে তুমি বাইরের লেনে একা পড়ে ছিলে। ভাগ্য ভালো আমি পেছনে পেছনে গিয়েছিলাম। সারারাত টেনশনে আমি শেষ।
জুবায়ের একদমে কথাগুলো বলে থামলো। গতকাল রাতের সবকথা ওর মনে পড়ে গেছে সেই সঙ্গে ভয় ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। অধরা ঢোক গিয়ে জুবায়েরকে সবটা খুলে বলল। জুবায়ের বিশ্বাস করলো কি ঠিক বোঝা গেলো না শুধু বলল ফ্রেস হয়ে নিতে। অধরা চুপচাপ ওয়াশরুমে ঢুকতেই জুবায়ের বেরিয়ে গেলো। অধরা বাইরে এসে ওকে পেলো না। ধীর পায়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালো। দোতলা থেকে নিচে তাকিয়ে দেখলো ডাইনিং রুমের সোফায় ছোটখাট একটা আড্ডা বসেছে। রুশনারার পাশে একজন সুদর্শন যুবক বসে আছে। দুজনের চেহারাই লাজুক হাসি। অধরা নেমে আসলো। ঘটনা কি জানার জন্য। ওকে নামতে দেখে দাদু সরে গিয়ে ওকে বসতে দিয়ে বলল,
> বসো দাদুভাই। তোমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। এইটা আমার আরেকটা দাদুভাই। আমাদের রুশনারার জামাই গালিব। ওদের বিয়ে হয়েছে তবে অনুষ্ঠান করা হয়নি। ভাবছি ঘরোয়া একটা অনুষ্ঠান করবো। ছেলেটা আমাদের বাড়িতে কিছুদিন থাকবে।
অধরা হতবাক হয়ে সামনে বসা যুবকের দিকে তাঁকালো। লোকটার চোখেমুখে খুশির ঝলক কেমন জানি চকচক করছে। অধরা দ্রুত দাদুর দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো। কি হচ্ছে এখানে মাথা আবারও ঘুরছে। এই বাড়ির মেয়েদের তো বিয়ে হয়না। মানব নিষিদ্ধ তাহলে এসব কি? কথাগুলো ভেবে হঠাৎ ওর শরীর খারাপ হচ্ছে। জুবায়ের রান্নাঘরে ছিল। রান্না শেষে কাজের মেয়েকে দিয়ে খাবার রুমে পাঠিয়ে অধরা পাশে এসে বসলো। দাদু জুবায়েরের দিকে তাঁকিয়ে বলল,
> ওকে কক্ষে নিয়ে যাও। মেয়েটার শরীর খারাপ লাগছে। এই সময় এতটা টেনশন শরীরের জন্য ভালো না।
জুবায়ের ভ্রু কুচকে অধরাকে জিঞ্জাসা করলো,
> তুমি ঠিক আছো? রুমে যাবে?
অধরা কিছু বলতে পারলো না। জুবায়ের দ্রুত ওকে কোলে তুলে নিয়ে কক্ষের দিকে এগিয়ে আসলো। ওকে বিছানায় রেখে পানি খেতে দিলো। অধরা ঢকঢক করে পানিটা গলাই ঢেলে নিয়ে বলল,
> এসব কি হচ্ছে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আপনার বোনের বিয়ে হয়ে গেলো আপনি জানতেন কিছু? তাছাড়া বড় বোনের বিয়ে না দিয়ে মেজোটার মানে কি?
জুবায়ের কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বলল,
> ডাইরীর প্রতিটা পাতায় রহস্য লুকিয়ে আছে তুমি ধরতে পারোনি। ডাইরিটা আবারও পড়বে। তাহলে বুঝতে পারবে। অধরা আমাদের মেয়েটার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে। ওর পরিণতি কি এমন হবে? মানুষ হয়ে কিভাবে ও এসব শয়তানের সঙ্গে সংসার করবে? অধরা চলো আমরা এই বাচ্চাটাকে এবোর্ট করি। দরকার নেই ওকে পৃথিবীর আলো দেখানোর। ওর কষ্টে আমার মরে যেতে মন চাইবে। বোনদের জন্য কিছু করতে পারিনি কিন্তু ওর জন্য এইটুকু তো পারবো। প্লিজ চলো।
জুবায়েরের কথা শুনে অধরা ভয় পেলো। ছেলেটা এমন ভুলভাল বকছে কেনো? বাচ্চাটাকে মেরে ফেলবে বললেই হলো। কখনও না। দরকার হলে অধরা নিজে মরে যাবে তবুও কহিনুরকে আসতে হবে। এতগুলো মানুষের প্রাণের দাম মিটিয়ে দিতে হবে। হোক সে অশুভ খারাপ কিছু তবুও দিতে হবে। এত বছরের অভিশাপ কাটিয়ে দিতে হবে সুলতান বংশের উপর থেকে। সুলতানা কহিনুর ফারুকী চন্দ্রের করা পাপ নিজের প্রাণ দিয়ে হলেও মিটিয়ে দিয়ে যাবে। ওর র*ক্তে দিয়ে যদি সকল অভিশাপ কেটে যায় তবে তাইহোক। শেষ চেষ্টা অধরা করবে। কথাগুলো ভেবে ও মুখ খুলল,
> আপনি টেনশন করবেন না। এমন কিছু হওয়ার আগেই আমরা ঠিক একটা ব্যবস্থা করে ফেলবো। আমাদের একটা কাজ করতে হবে। এই বাড়ি থেকে ওসব আজেবাজে কাজকর্ম বন্ধ করতে হবে। কালো যাদুর বইটা উদ্ধার করে পুড়িয়ে দিতে হবে। মোটকথা এই বাড়িতে আর কোনো শয়তানের উপাসনা হবে না। মুসলিম তো দূর পৃথিবীর কোনো ধর্মেই নেই শয়তানের উপাসনা করা ভালো কিছু। এসব খারাপ কাজ। খোঁজ নিয়ে দেখুন কোন ব্যাক্তি এই পাপের সঙ্গে জড়িত আছে।
জুবায়েরের অধরার মুখে খাবার তুলে দিয়ে বলল,
> খেয়ে শান্ত হয়ে বসো। খোঁজ নিবো তবে তুমি একা কোনো ঝামেলায় জড়াবেনা। আমাকে সঙ্গে নিবে। সারারাত আমার দম আটকে আসছিল। চলো ফিরে যায়। এখানে ভালো লাগছে না।
> ভালো লাগাতে হবে। হাট গুটিয়ে বসে থাকার কোনো মানে হয়না। আপনার বোনের বিয়েটা আটকাতে পারলাম না। ওই শয়তানটাকে তো আমি দেখে নিবো। কিভাবে এই বাড়িতে থাকে সেটাও দেখবো।
জুবায়েরের অধরার মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল,
> এমন কেনো তুমি? ভয় পেয়েও পিছিয়ে আসো না। অন্য মেয়ে হলে ঠিক পালিয়ে যেতো।
অধরা ভাব নিয়ে বলল,
> আমি সুলতান জুবায়ের ফারুকীর স্ত্রী। ক্লাবের মেয়েদের ক্রাশের বউ। একটু তো সাহস হতেই হয়।
জুবায়ের তৃপ্তি নিয়ে হাসলো। দিনগুলো ভয়ংকর ভাবে কাটছে তবে খারাপ যাচ্ছে না। ভালো খারাপ মিলিয়ে হিসেবে করলো মেয়েটার সঙ্গে সঙ্গ দিয়ে সব দিক থেকে দারুণ লাগছে। সুখ দুঃখ মিলেই জীবন। খাওয়া শেষ করে অধরা ডাইরী নিয়ে ছুটলো দাদুর কক্ষে।ভয় হচ্ছে নিষেধ সত্ত্বেও এটা ও জুবায়েরকে পড়তে দিয়েছিল। তবে লোকটা যদি ঠিক ধরতে পারে তবে বুঝতে হবে এই লোকটার মধ্যে কিছু একটা আছে। আর না বুঝতে পারলে স্বাভাবিক। দাদু কি বুঝতে পারবে অধরা জুবায়েরকে ডাইরীটা দেখিয়েছে?
চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। দুঃখিত প্রতিদিন আমি এক পর্ব করে লিখতে পারি অতিরিক্ত আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।