#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৪৪
_________________
“ভাবনা তো আকাশ ছোঁয়া কিন্তু প্রকাশ কন্ঠ নালী’তেই সীমাবদ্ধ। স্বপ্ন’রা উড়ে বেড়ায় হৃদয় জুড়ে তবে ধরা দেয়নি প্রাপ্তি’রা। বক্ষগহ্বরে
ভালোবাসা’ময় অনুভূতি গুলো প্রজাতির ন্যায় উড়ে বেড়ায় আফসোস স্থান পায় না পুষ্পতে”
মদ্য পান করে ছাদের একপাশে স্থির হয়ে বসে মনের অনুভূতি গুলো বির বির করে আওড়িয়ে আওড়িয়েই রাতটা পাড় করে দিলো হ্যাভেন। ভোর পাঁচটা’র দিকে ঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে মদের বোতলটা পাশে ছুঁড়ে ফেলে ওঠে দাঁড়ালো। উদ্দেশ্য শাওয়ার নিয়ে হিয়া সহ প্রত্যেককে নিয়ে ঘুরতে বের হওয়া।
.
রিদি এবং আহি এক সঙ্গেই শুয়েছিলো। হিয়া দরজায় কয়েকবার টোকা দিতেই রিদি ঘুমকাতুরে কন্ঠে জিগ্যেস করলো,
-‘ এতো সকালে কে ‘?
-‘ আমি হিয়া দরজা খোল তাড়াতাড়ি ‘?
-‘ বইন একঘন্টা পর আয় প্লিজ ‘।
-‘ দাদানের দশমিনিটের মধ্যে সবাইকে রেডি হয়ে বাড়ির সামনে যেতে বলেছে’।
ধড়ফড়িয়ে ওঠে বসলো রিদি। আহির দিকে এক নজর তাকিয়ে ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। হিয়া রুমে প্রবেশ করে বললো,
-‘ শোন দাদান আমাকে খুব আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে। আর বলেছে আমাদের সকলকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে ‘।
ভূত দেখার মতো হিয়াকে আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করে রিদি বললো,
-‘ ভোর সকালে কি ভুলভাল বকছিস? তুই কি ভুলে গেছিস গতকাল কি মাইরটাই খাইছোস ‘?
-‘ কিছু ভুলিনি ওটা আমাদের ভাইবোনের ব্যাপার তুই ফ্রেশ হয়ে নে আমি ভাবিকে জাগাচ্ছি ‘।
রিদি থম মেরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। আজ নাকি তার বিয়ে… অথচ তার পাগল,ছাগল,খ্যাপাটে ভাই-বোনরা সকাল সকাল ঘুরতে বের হবে তবুও তাকে নিয়ে ভাবা যায়! তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এসব জানলে নিশ্চয়ই তাকে বেশরম বলে আখ্যা দেবে? আত্মীয় স্বজনরাই বা কম কি তাদের মনে কি প্রশ্ন নাড়া দেবে না বিয়ের কনে বিয়ের দিন সকাল সকাল ভাই বোনদের সঙ্গে ধেই ধেই করে ঘুরতে বেড়িয়েছে কেন?
.
হিয়া আহিকে দুবার ডাকতেই ওঠে বসলো আহি। ঘুমজড়ানো কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
-‘ কি হয়েছে? ক’টা বাজে ‘?
-‘ তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও ভাবি আমরা সব ভাই বোনরা মিলে ঘুরতে যাবো। জানো আমরা আগে প্রায়ই এমন করতাম কখনো খুব ভোরে সব ভাইবোনরা বেড়িয়ে যেতাম কখনো বা রাত গভীর হলে ‘।
প্রচন্ড খারাপ লাগা অনুভব করলো আহি। মনে পড়ে গেলো ছাদে দাঁড়িয়ে হ্যাভেনের সঙ্গে তার কথোপকথন গুলো। হ্যাভেনের বলা সেই শেষ বাক্যটি মনে পড়তেই আবারও নিঃশ্বাস বদ্ধ হয়ে এলো। ভাগ্যিস সে সময় ছুটে চলে এসেছিলো। নয়তো লজ্জায় অস্বস্তি’তে মরেই যেতো। হিয়ার দিকে কিছুক্ষণ ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। পরোক্ষণেই মনে পড়ে গেলো হ্যাভেন তো বলেছিলো রিজভী আর হিয়া কে মেনে নেবে তার মানে ভাই বোনদের ঝামেলা ফিনিশড? বাহ! মা, বাবা, ভাই,বোনদের মধ্যে মান-অভিমান, ঝগরা,ঝামেলা কতো দ্রুত মিটে যায়। অথচ স্বামী-স্ত্রী,প্রেমিক, প্রেমিকাদের সম্পর্কে দ্রুত সব মিটে যাওয়া তো দূরের কথা দিনের পর দিন জটিলতা বাড়তে থাকে। কেনো এমন হয়? ভালোবাসা থাকে না বিধায়? পৃথিবীর কোন জটিলতাই পারেনা রক্তের সম্পর্কে ভাঙন ধরাতে একদিন না একদিন কোন না কোন সময় তারা এক হয়ই। তাহলে কি রক্তের সম্পর্ক বিহীন আর কোন সম্পর্কেরই কোন ভিত্তি নেই? তাই যদি হবে সাবা ম্যান কেনো নির্মল নামক পুরুষটির জন্য আত্মত্যাগ করলো?
-‘ কি হলো ভাবি কথায় হারিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি করো’।
-‘ভালো লাগছে না হিয়া আমার একটু ঘুম প্রয়োজন তোমরা ভাইবোনরাই যাও ঘুরে আসো আমাকে টেনো না’।
-‘ হিয়া… কেউ যদি আজ তোদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া নিয়ে অনিহা প্রকাশ করে তাহলে তাকে বলে দে হাত,পা,চোখ,মুখ বেঁধে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে ‘।
শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে রুমে ঢুকে কথাটি বললো হ্যাভেন। আহি চমকে ওঠে গায়ে ওড়না জরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে কিছু বলতে উদ্যত হতেই হ্যাভেন তার দিকে দৃঢ় চোখে চেয়ে বললো,
-‘ নিশ্চয়ই এখন সিনেমার মতো করে এই ডায়লগ টা দেবে – জোর করে আমার দেহ নিতে পারবেন কিন্তু মন নিতে পারবেন না’?
ব্যঙ্গার্থে বলা কথাটি শুনে চোখ কটমট করে তাকালো আহি। হিয়া হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। হ্যাভেন শার্টের কলার উচিয়ে ঘড়ি ঠিক করতে করতে আহিকে চোখ মেরে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। আহি ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললো,
-‘তোমার ভাই’টা দিনকে দিন আরো বেশী বেহায়া, অসভ্য, অশ্লীল রূপ ধারণ করছে ‘।
-‘ তাই বুঝি তা আমার ভাই নতুন করে কি অশ্লীল কাজ করলো শুনি ‘?
ঠাট্টার স্বরে কথাটি বলতেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকালো আহি। বললো,
-‘ ভাই, বোন দুটোই বেশ বজ্জাত ‘।
হিয়া এবার আহির কাঁধে নিজের কাঁধ দিয়ে ধাক্কা মেরে বললো,
-‘ তা যাই বলো না কেনো দাদাদের বেশ উন্নতি ঘটেছে। সেই সাথে দিন দিন আগুনের গোলা থেকে বরফের গোলাতেও পরিণত হচ্ছে ‘।
.
ইচ্ছে না থাকলেও সকলের জোরাজোরি তে আহিকেও যেতে হলো। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ডানদিক গিয়ে পশ্চিম দিকের কাঁচা রাস্তা ধরে সকলের সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে আহি। সবার সামনে রয়েছে হ্যাভেন আর হ্যারি। তার পিছনে ড্রাইভার তমাল। তার পিছনে হিরা,রিমন,শশী,শিফা, তাদের পিছনেই আহি, রিদি,আর হিয়া। রিজভীকে বলা হলেও সে আসেনি। অবশ্য সে এসবে খুব কমই জয়েন করে। সকলেই বেশ গল্প গুজব, হাসি,ঠাট্টা করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে। আহিও গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে কখনো কখনো হ্যাভেনকে পিছন থেকে আগাগোড়া দৃষ্টিপাত করছে। হ্যাভেনের পড়নে কফি কালারের শার্ট,কালো রঙের প্যান্ট। শার্টের হাতা গুটিয়ে রাখাতে এক হাতে ঘড়ি আরেক হাতে কালো রঙের পুঁতির ব্রেসলেট স্পষ্ট দেখতে পেলো আহি। ভাল্লাগে না তার। পুরুষ মানুষের চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, হাতে ঘড়ি যতোটা ভদ্র সভ্যতার পরিচয় দেয়। ঠিক ততোটাই কেড়ে নেয় এই সং ঢং এর ব্রেসলেট পড়লে। এটাই মনে হয় তার। বিরক্ত হয়ে চোখ ফিরিয়ে আশেপাশে তাকালো। রিদি, হিয়াদের কথায় মনোযোগ দিয়ে বুঝলো হ্যাভেন তাদের সকলকে নৌকা দিয়ে ঘোরাতে নিয়ে যাচ্ছে। কখনো নৌকায় চড়া হয়নি আহির৷ সে সাঁতার পারে না। তাই মা,বাবা কখনো তাকে নৌকায় ওঠতে দেয়নি। মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে করলেও ভয়ে সেই ইচ্ছে টা’কে দমিয়ে রাখতো। আজো ভয় করছে সে তো সাঁতার পারে না। বাই চান্স কোন এক্সিডেন্ট ঘটে গেলে কি হবে? দুরুদুরু বুকে এগিয়ে যেতে থাকলো আর নানা রকম ভয়ানক ভাবনা ভাবতে লাগলো। একসময় তারা এসে পৌঁছালো বিস্তর এক জায়গায় সামনে। জায়গাটি দেখেই বুঝলো বিস্তীর্ণ এক চড়া এটি। তবুও রিদি কে প্রশ্ন করায় জানতে পারলো চড়ার পরই বিল রয়েছে। বেশ উৎসুক চোখে মুখে হিয়া বললো, সে বিলে নাকি সাদা শাপলা,লাল শাপলাও পাওয়া যায়। মৃদু হাসলো আহি মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেছে তার। ভীষণ ভালো লাগা কাজ করছে। খোলা আকাশের দিকে চেয়ে আবার নিম্নে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। থৈথৈ পানিতে গা ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে করলো খুব। আবার কেমন ভয় ভয় অনুভূতিও হলো।
ডাঙায় বাঁধা নৌকাটির বাঁধন আলগা করে কাণ্ডারি সেজে ড্রাইভার তমাল ওঠে পড়লো নৌকায়। তার পাশের নৌকাটির কাণ্ডারি হলো রিমন। রিমনের নৌকায় হ্যারি,হিরা, হিয়া,শশী ওঠে পড়লো৷ রিদি ওঠলো হ্যাভেনের সঙ্গে পাশের নৌকায় যেটির নাবিক তমাল। আহি যেহেতু আগে কখনো নৌকায় ওঠেনি তাই সে ভীষণ নার্ভাস ফিল করছিলো। তমাল বৈঠা নিয়ে নৌকার এক মাথায় বসে পড়লো আরেক পাশে হ্যাভেন দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো আহির দিকে। আহি ত্যাজ দেখিয়ে বললো,
-‘ আমি হিয়াদের সঙ্গে বসবো ‘।
আহির পাশেই ছিলো শিফা সে হ্যাভেনের নৌকাতে ওঠার জন্য উশখুশ করছে। তাছাড়া ঐ নৌকাও ফিলাপ। তাই আহির কথাটি শুনে শিফা হ্যাভেনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। হ্যাভেন আহির দিকে চেয়ে মুচকি হেসে শিফার হাতটি ধরে নৌকায় ওঠালো। শিফা খুশিতে গদগদ হয়ে আহির দিকে চেয়ে বললো,
-‘ আচ্ছা তুমি বরং ওদের সঙ্গেই বসো গিয়ে ‘।
হ্যাভেন শিফাকে নিচু স্বরে ধমক দিয়ে বললো,
– ‘ চুপ করে বসে থাক ‘।
তারপর রিমনকে বললো নৌকা টানতে কিন্তু আহি হাত বাড়িয়ে দিলো। আহি যখন হিয়ার দিকে হাত বাড়ায় রিদি তখন উচ্চকন্ঠে বলে,
-‘ ও ভাবি তুমি এখানটায় আসো প্লিজ ‘।
আহি তবুও হিয়াকে তার হাত ধরতে বললো। বিরক্ত হয়ে হ্যাভেন ধমক দিয়ে বললো,
-‘ এই মেয়ে এতো ত্যাড়ামি কিসের তোমার বলছি না এটাতে ওঠতে ‘?
-‘ আপনি চুপ করুন আমি আপনার নৌকায় যাবো না ‘।
-‘ নৌকা টা এক পড়শিদের আমার না এবার চলে এসো প্লিজ ‘। বলেই হাত বাড়িয়ে দিলো।
আহি ভাব দেখিয়ে বললো,
-‘ যাবো না আমি হিয়ার সঙ্গেই যাবো ‘।
-‘ চুপ! একদম চুপ বলছিনা এটাতে ওঠো ওটাতে কজন হয়েছে দেখেছো ছোট নৌকা যখন উল্টে পড়বে তখন বুঝবে কেমন লাগে ‘।
চোখ কটমট করে ধমকে ওঠলো হ্যাভেন৷ আহি চোখ,মুখ কুঁচকে হাতটা বাড়িয়ে দিলো। হ্যাভেন বাঁকা হেসে বাড়িয়ে দেওয়া হাতটি বেশ শক্ত করে চেপে ধরলো। আহি এক পা বাড়িয়ে দিতেই নৌকা দুলে ওঠলো। প্রচন্ড ভয় পেয়ে দুহাতে হ্যাভেনের এক হাত আঁকড়ে ধরলো আহি। মৃদু হাসলো হ্যাভেন। ভালোলাগার শেষ সীমানায় পৌঁছে গেলো সে। ভাবা যায়! মেয়েটা ভয়ে চুপসে গিয়ে তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে এখন। হ্যাভেনের চোখে, মুখে হাসির রেখা দেখে আহি হাত ছাড়াতে চেষ্টা করলো। হ্যাভেন হাত ছেড়ে কাঁধে ধরে তাকে সাবধানে বসিয়ে দিয়ে পাশেই বসে পড়লো। তারপরই তমাল এবং রিমনকে নৌকা টান দিতে বললো। পাশাপাশি দুটো নৌকা। ধীর গতিতে এগুতো থাকলো থৈথৈ পানির মাঝ বরারবর।
.
গাঢ় গোলাপি রঙের গাউনের সঙ্গে হালকা হলুদ রঙের চুরিদার সেলোয়ার,ওড়না পরিহিত আহিকে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে হ্যাভেন। সকলেই হৈ-হুল্লোড় নিয়ে ব্যাস্ত৷ আহি মুগ্ধ নয়নে চারপাশ চেয়ে দেখছে, কখনো বা হাতটা বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে পানিতে। হলদে রঙের ওড়নাটা দিয়ে মাথায় ঘোমটা দেওয়াতে মুখের গোলাপি ফর্সা ভাবটা হলদে ফর্সা লাগছে। সেই সাথে লাগছে বউ বউ। দৃষ্টিতে যতোটা মুগ্ধতা মিশিয়ে আহি চারপাশের প্রকৃতি অনুভব করছে তার থেকেও দ্বিগুন মুগ্ধ হয়ে আহির মুগ্ধতা উপভোগ করছে হ্যাভেন৷
নৌকা যখন বেশী দুলতে থাকে ভয়ে মেয়েটা আড়ষ্ট হয়ে যায়। হ্যাভেন তার দিকে আরেকটু ঘেষে বসে ভরসা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। আহি চোখ সরিয়ে নেয়। মনে মনে হাসে, ভেঙচি কাটে। আবার ভাবে আকাশ যেমন রংধনুর সাত রঙে রঙিন হয়। মানুষেরও রয়েছে অসংখ্য রং। তারাও তাদের সেই অসংখ্য রং দিয়ে ক্ষণে ক্ষণে অসংখ্য ভাবে চারপাশ রাঙিয়ে দেয়।
বিলের কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ শিফা চিল্লিয়ে বলে,
-‘ এই তোরা কেউ গান টান গেয়ে শোনা ‘।
সকলের থেকে উত্তর আসে,
-‘ আরে আমরা গান শুরু করলে বিলে থাকা সকল ভূত পেত্নীর দলেরা ওঠে এসে ঘাড় মটকে দিয়ে যাবে’।
কথাটি শুনে হৈ হৈ করে হেসে ওঠে সকলে। শিফা বেশ ভাবসাব নিয়ে বলে,
-‘ ধূর তোরা না বেশ আনরোমান্টিক এমন মোমেন্টে গান টান না হলে চলে নাকি আমিই গাইছি দাঁড়া ‘।
শিফার কথা শুনে সবাই অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো। তাদের হাসির তাণ্ডবে নৌকা বেশ ঘটা করেই দুলে ওঠলো। সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে আহি খামচে ধরলো হ্যাভেনের বাহু। সুযোগ পেয়ে হ্যাভেন আরেকটু ঘেষে বসে আহির কাঁধ জরিয়ে ধরলো৷ আহি চমকে ওঠে নিচু স্বরে বললো,
-‘ কি করছেন কি? সবাই দেখছে ‘।
-‘ সবাইকে চোখ বুজে থাকতে আদেশ দেবো ‘?
-‘ এই না একটু সরে বসুন শুধু হাতটা ধরে থাকুন খুব ভয় লাগছে ‘।
মুচকি হেসে সরে বসলো হ্যাভেন। শিফা ওদের কাণ্ড দেখে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে গলায় ক্রোধ মিশিয়ে একটা ইংলিশ গান ধরলো। পাশের নৌকার সবাই হু,হা করে হেসে ওঠলো৷ রিদি দু আঙুলে কান চেপে ধরলো। হ্যাভেন আহির দিকে তাকিয়ে বললো,
-‘আহা কি অমায়িক ভয়েস ‘।
বিরক্ত হলো আহি একেতো ষাঁড়ের মতো গানের গলা তারওপর নুন ছাড়া প্রশংসা। স্নিগ্ধ অনুভূতি, চারপাশের মনোরম সৌন্দর্য সেই সাথে শিফাকে গান কাকে বলে, কন্ঠস্বর কেমন হওয়া উচিত,পাশাপাশি তখনকার হ্যাভেনের কথার উপযুক্ত জবাব বোঝানোর জন্য বহুদিন পর নিজের ভিতর জমিয়ে রাখা সুপ্ত প্রতিভা,সুপ্ত অনুভূতির প্রকাশ ঘটালো। আচমকাই আহির কন্ঠে গান শুনে সবাই নির্বাক শ্রোতা হয়ে বসে রইলো। হ্যাভেন তো ভূত দেখার মতো চেয়ে রইলো।
নৌকা চলছে তার আপন গতিতে। আহির একটি হাত হ্যাভেনের মুঠো বন্দি, আর হ্যাভেনের দৃষ্টিজোড়া আহিতে নিবদ্ধ।
.
আমার হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবি
মন বান্ধিবি কেমনে?
আমার চোখ বান্ধিবি, মুখ বান্ধিবি
পরান বান্ধিবি কেমনে?
আমার হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবি
মন বান্ধিবি কেমনে?
আমার চোখ বান্ধিবি, মুখ বান্ধিবি
পরান বান্ধিবি কেমনে?
আমি না গেলাম যমুনার ঘাটে
না তুলিলাম জল
না হেরিলাম তারে সখী
না হইলাম চঞ্চল
আমি না গেলাম যমুনার ঘাটে
না তুলিলাম জল
না হেরিলাম তারে সখী
না হইলাম চঞ্চল
আমার ইচ্ছা বান্ধিবি, সোহাগ বান্ধিবি
অনুরাগ বান্ধিবি কেমনে?
আমার হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবি
মন বান্ধিবি কেমনে?
আমার চোখ বান্ধিবি, মুখ বান্ধিবি
পরান বান্ধিবি কেমনে?
গান শেষে একদম হৈচৈ বেঁধে গেলো৷ সকলেই বাহবা দিতে শুরু করলো আহিকে। শুধু নিশ্চুপ রইলো শিফা আর হ্যাভেন। বিলের ধারে অসংখ্য শাপলার মাঝে নৌকা দুটো থামতেই সকলেই শাপলা ওঠাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। আহিও শাপলার দিকে নজর ফেলে হাত বাড়াতে উদ্যত হলো তৎক্ষনাৎ তার কানের কাছে নিজের ওষ্ঠজোড়া ছুঁইয়িয়ে দৃঢ় কন্ঠে হ্যাভেন বললো,
-‘ তোমার হাত বাঁধবো হাত দিয়ে, পা বাঁধবো পা দিয়ে আর মন বাঁধবো মন দিয়ে।
তোমার চোখ বাঁধবো চোখ দিয়ে মুখ বাঁধবো ঠোঁট দিয়ে পরান বাঁধবো পরান দিয়ে।
তোমায় পুরোটাই বাঁধবো এই আমাকে দিয়ে। উত্তর পেয়েছো সুন্দরী ‘?
চলবে…
দুঃখিত মেবি অগোছালো হলো আজ। গল্পটির আর পাঁচ,ছয় পর্ব রয়েছে তাই নেক্সট পর্ব টাইম নিয়ে লিখে পোস্ট করবো সকলে ধৈর্য্য ধরবেন।