#এক_সায়াহ্নে_প্রেমছন্দ
লেখিকাঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৭
রুমে ফিরে মাশরিফ প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা পর ফোন হাতে নিয়েছে। এতোটা সময় ফোন সাইলেন্ট ছিল। ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিন অন করতেই দেখে চারটা মিসডকল। প্রথম দুইটা বাড়ি থেকে আর শেষ দুইটা এক অচেনা নাম্বার থেকে। প্রথমে বাড়ির নাম্বারে কল করে মায়ের সাথে কথা বলে নিলো। অতঃপর সেই অচেনা নাম্বার কার জানতে কল করল। দুইবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলে মাশরিফ সালাম দিয়ে জানতে চায়, ‘কে?’
নাজমা বেগম সালামের জবাব দিয়ে বলেন,
“আমি নাজমা আক্তার। চিনতে পেরেছ? সেদিন রাতে যে তুমি আমাদের বাড়িতে এসেছিলে।”
মাশরিফ এবার চিনতে পেরে সহাস্যে বলে,
“ওহ হ্যাঁ। কেমন আছেন আন্টি? সরি আমার ফোন কাছে ছিল না। আপনার বাড়ির সবাই কেমন আছে?”
নাজমা বেগম মলিন কণ্ঠে বলেন,
“এখন আছি কোনোমতে। নাতনী হয়েছে আমার।”
মাশরিফ উৎফুল্ল চিত্তে বলে,
“আলহামদুলিল্লাহ্। এতো দারুন খুশির খবর আন্টি। কিন্তু আপনার কণ্ঠে মলিনতা কেন?”
“কী বলব বাবা? এলাকার মা*স্তা*ন গুলো হা*ম*লা করেছিল। সেদিস আল্লাহ সহায় ছিলেন। নয়তো কি হতো ভাবতেই শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।”
মাশরিফের অনুতাপ হলো,
“সরি আন্টি। আমি নিরুপায় ছিলাম। ফোন সত্যি কাছে ছিল না। কিছু করতে পারলাম না।”
“না না বাবা তোমার তো কোনো দোষ নেই। আমি তোমাকে বরং হসপিটালে এসে একটা সাহায্যর জন্য ফোন করেছি।”
নাজমা বেগমকে আশ্বাস দিয়ে মাশরিফ বলে,
“জি আন্টি। নিঃসংকোচে বলুন। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব।”
নাজমা বেগম জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলেন,
“তুমি বলেছিলে বাড়ি বিক্রি করতে চাইলে বলতে।”
মাশরিফের ঠোঁটকোণে স্বস্থিমিশ্রিত হাসি ফুটল।
“জি আন্টি। আমি আমার ফ্রেন্ডকে বলছি। আপনারা প্রয়োজনীয় সব কাগজ রেডি রাইখেন। কালকে পরশুর মধ্যে উকিল নিয়ে আসবে।”
“ধন্যবাদ বাবা। বড়ো উপকার করলে।”
“দোয়া করবেন আন্টি।”
কথা বলা শেষে মাশরিফ তার সিনিয়র বন্ধুকে ফোনে বলল। সে না থাকাকালীন সবটা কম সময়ে সামলে নিতে বলল।
_____
পরেরদিন হিয়া সুস্থ হলে ডাক্তার ওকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেয়। হিয়া, নাজমা বেগম ও হিয়ার নবজাতক বাচ্চাটাকে নিয়ে তিতির বাড়ি ফেরে। মৃদুলা, ইতি, হাসিব, সাইফদেরও সাথে নিয়ে এসেছে। ওরা সবাই মিলে বাজার করে আধঘণ্টার মধ্যে আবার হসপিটালে ব্যাক করবে। মাঝে দেড় ঘণ্টার ব্রেক পেয়েছে যে। এরমধ্যে তিতিরের চাচারাও চলে এসেছেন। তিতির স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। এখনি একা রেখে যেতে ভয় করছিল। সবাই হিয়া ও বাচ্চাটাকে নিয়ে মেতে আছে। তিতির মাকে বলে বন্ধুদের সাথে মেডিকেলে চলে যায়। ক্লাস শুরু হওয়ার একটু সময় বাকি তাই ভাবল এডমিশন অফিসে কথা বলবে। যেই ভাবা সেই কাজ। বন্ধুদের এখনি কথাটা জানায়নি। কথা বলে এসে ক্লাসটা করে তারপর জানাবে।
তিতির এডমিশন অফিসে মেডিকেল কলেজ মাইগ্রেশনের কথা বলে এসেছে। প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার তা করে এক মাসের মধ্যেই মাইগ্রেশন সম্ভব। তিতিরের মাইগ্রেশনের খবরে মৃদুলা, ইতি, হাসিব, সাইফ, রিক্তারা সবাই আপসেট। ওদেরকে বোঝানোটাই কঠিন হয়ে পরেছে। ওদের সাথে ক্যান্টিনে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। নিরবতায় অস্বস্থি লাগছে। এবার টেবিলে হাত দিয়ে বা*ড়ি দিয়ে নিজের দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিতির বলে,
“এই এমন করিস কেনো? প্লিজ এভাবে রাগ করে থাকিস না।”
মৃদুলা গোমড়া কণ্ঠে বলে,
“তুই আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না? আমরা কি তো ফ্রেন্ড না?”
তিতির নিজের কপাল নিজেই চাঁ*পড়ে বলে,
“সে একই সংলাপ বারবার আউড়াচ্ছিস। আমার সমস্যাটা বোঝ। দুইদিন পর চাচারা চলে গেলে আমি কী ভয়ের মধ্যে থাকব তার ধারণা আছে?”
হাসিব বলে,
“তাই বলে সমস্যার মোকাবেলা না করে এভাবে পালিয়ে যাবি?”
তিতির মলিন কণ্ঠে বলল,
“বাবা, ভাই, স্বামী ছাড়া দুইটা মেয়ে, একজন বৃদ্ধা ও বাচ্চা নিয়ে ভয়ে কাটানোটা কেমন সেটা নিজে উপলব্ধি না করলে বোঝা সম্ভব না। আর যদি শ*কু*নের নজর পড়ে তাহলে তো কথাই নাই। আর আমার এলাকার মানুষজন! হাহ্! এরা তো আমরা ম*রে গেলেও খবর পাবে না।”
“ময়মনসিংহতে কি ওরা পৌঁছাতে পারবে না?”
সাইফের কথায় তিতির তাচ্ছিল্য হাসল। অতঃপর বলল,
“কপাল মন্দ থাকলে পৌঁছাবে। কিন্তু আগে তো ওদের জানতে হবে আমরা কই যাচ্ছি! আমি এডমিশন অফিসে বলে এসেছি আমার সকল সমস্যা কথা। আশাকরি উনারা সাহায্য করবেন। এখন বাড়ি ভাড়া দিয়ে গেলেও সমস্যা। কারণ ভাড়ার টাকা নিতে যোগাযোগ রাখতে হবে। সেই সূত্রে পলাশ, সুজনরা জেনে যেতেও পারে। তাই মা বলছে সে নাকি একজনের সাথে কথা বলেছে। দেখি কি হয়। আজকে আমি বাসায় গেলে চাচার সাথে এই বিষয়ে আলাপ করবে।”
ইতি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,
“তুই আমাদের ভুলে যাবি নাতো?”
ইতির করুণ কণ্ঠে তিতির ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“উঁহু। তোদের ভোলা যায় নাকি? আমাদের যোগাযোগ থাকবে। এখন কাঁদিস না। আরেকটা ক্লাস আছে চল।”
তিতির ওদের এক প্রকার টেনেই নিয়ে গেল। ক্লাস শেষে টিউশন করিয়ে রাত আটটার পর বাড়ি ফিরে। বাড়ি ফিরে সোফায় দুইজন অচেনা মুখ দেখল। একজন কালো কোর্ট পড়া। তিতির ভ্রুঁ কুঁঁচকে মাকে ইশারায় সুধালে, নাজমা বেগম উঠে এসে মেয়ের কানে কানে বলেন,
“উকিল এসেছে। বাড়ি বিক্রির জন্য। তোকে বলেছিলাম না ওই ছেলের কথা? জায়গাটা নাকি সাথের জনই কিনবেন। তার পরিবার নিয়ে এখানে আসবেন।”
“মা, একটু চাচাদের সাথে বুঝে শুনে নাও। হুট করে এক অচেনা আগুন্তকের কথায় যেভাবে চলছ তাতে ভয়ই করতেছে।”
তিতিরের সাবধানী বাণীতে নাজমা বেগম বলেন,
“তুই গিয়ে ফ্রেস হ। আমরা বুঝে নিব। তোর মাইগ্রেশন হলো?”
“বললেই হয়ে গেলো? সময় লাগে না! অপেক্ষা করো। সব বলেছি তাদের।”
নাজমা বেগম মেয়ের অপ্রসন্ন কণ্ঠ শোনে সুধান,
“কী হয়েছে? চেতে যাচ্ছিস কেনো?”
“জানিনা। আমার মা*থা ধরেছে।”
তিতির নিজের ঘরে চলে যায়। নাজমা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তিনি তো বোঝেন, এইটুকু বয়সে কতো মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তার মেয়েটা।
______
“স্যার আমি তৈরি। আজকে রাতেই বের হবো? ওদের সঠিক ঠিকানা জানিনা তাই ফোর্স বেশি লাগবে।”
হেড অফিসারকে চিন্তিত দেখাল। তিনি একটা রেডিও বার্তা শোনালেন যা টে*রো*রিস্টদের থেকে এসেছে।
“তোমরা এতো বোকা কিভাবে হতে পারো? আমাদের ধরা এতো সহজ না। আমরা নিজেদের জান দিতে প্রস্তুত কিন্তু কথা লিক করব না। তোমাদের মরহুম মেজর রাহান আহমেদের লা*শ পাওনি বলে আশা রাখছ সে বেঁচে আছে? ভুল ভাবছ। আরও এক বছর আগেই সে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছে। এখন নতুন যেই মেজরকে পাঠাচ্ছ তার জীবনও সংকটে। আমাদের ইউনিটি ভাঙতে পারবে না জেনারেল মিরাজ।”
জেনারেল মিরাজ এবার বললেন,
“বুঝলে? খুব সতর্ক থাকতে হবে। তুমি পারবে?”
“ইয়েস স্যার। মেজর রাহানকে নিয়ে ওরা যা বলল তাতে আমাদের ভয়ের কিছু নেই। কারণ মেজর রাহান অন ডিউটি নিঃখোঁজ হননি। আমি তখন তার আন্ডারে ছিলাম। তিনি অফিসে এসে সব বুঝিয়ে বাড়ি ফিরতে রওনা করেছিলেন। তারপর থেকেই নিঃখোঁজ।”
দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজরের কথায় জেনারেল খুশি হলেন। বললেন,
“প্রস্তুতি নাও। মিশন থেকে ফিরলে সপ্তাহ খানেক ক্যাম্প ও সেনানিবাস ত্যাগ করবে না। ফর সেফটি।”
“ইয়েস স্যার।”
ওরা মিশনের জন্য চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজারের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা টার্গেট করে। যাওয়ার আগে একটা চিঠি ডাকঘরে ছেড়ে যায়। গন্তব্যে পৌঁছানোর অপেক্ষা।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
রাহান বেঁচে নেই। যারা রাহানকে চেয়েছিলেন দুঃখিত। আমার থিম সাঁজানো ছিল। মেইন হিরোর এন্ট্রি আমি করিয়েছি শুধু খোলোসা করা বাকি।। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।