#এক_সমুদ্র_প্রেম!
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(৪৫)
লাঞ্চ টাইম শুরু। সবাই রওনা করল ক্যান্টিনে। কেউ বা ডেস্কেই বসল বাটি খুলে। বাড়ি থেকে আনা সুস্বাদু খাবারের ঘ্রানে মুহুর্তে অফিস ম ম করে উঠল। একেকজন যখন তৃপ্তি নিয়ে খেতে থাকে,সেই ক্ষনে চুপ করে বসে আছে মারিয়া। চেহারায় বিষাদের ছাঁয়া। পেট খুদায় চোঁ চোঁ করলেও খাওয়ার ইচ্ছে নেই। কারণ,আজ তার মন খা*রাপের দিন। কয়েক বছর যাবত এই দিনে, আয়োজন করে মন খারা*পেরা ছুটে আসে। আজও এলো। ব্যাতিক্রম কিছু হওয়ার কারন কই! মারিয়া হতা*শ ভঙিতে কিছুক্ষন বসে থেকে ডেস্কের টেবিলে মাথাটা নুইয়ে দিলো।
সাদিফ নিজের কেবিন রেখে বেরিয়েছে কেবল। শার্টের হাতা কনুই অবধি ওঠাতে ওঠাতে ক্যান্টিনের দিকে রওনা হলো সে। মারিয়ার ডেস্ক পেরোতে হয় তাতে। সে যাওয়ার সময় একবার পাশ ফিরে স্বাভাবিক চোখে চাইল। মারিয়াকে ওমন করে বসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এলো। আস্তে করে ডাকল,
‘ ম্যালেরিয়া,এই যে ম্যালেরিয়া?’
মারিয়া চটপট মাথা তুলল। ভেজা চোখ দুটো মুছল ত্রস্ত হাতে। কিন্তু বিধিবাম! নজরে পরে গেল তার। অবাক হয়ে বলল
‘ কাঁদ*ছেন কেন?’
‘ কই, কাঁ*দছি না তো। ‘
হাসার চেষ্টা করল মারিয়া। সাদিফ ভ্রু কুঁচকে রেখেই বলল,
‘ উম,মিথ্যা বলা ভালো নয়। আমি স্পষ্ট দেখলাম আপনার চোখে জল।
তারপর মোলায়েম কণ্ঠে শুধাল, ‘ কী হয়েছে? আমাকে বলা যাবে?’
মারিয়া মলিন হেসে বলল,
‘ সত্যিই কিছু হয়নি…’
সাদিফ দুহাত তুলে, শ্বাস ফেলে বলল,
‘ ওকে, বলতে না চাইলে জোর নেই। মুখে মুখে হওয়া বন্ধুকে তো আর কেউ মনের কথা বলবেনা,এটাই স্বাভাবিক। ঠিক আছে থাকুন।’
সাদিফ চলে যেতে নেয়। শান্ত গোছের কথাগুলোর আড়ালে তার অভিমান ঠিক বুঝে নিলো মারিয়া। সে হাঁটা ধরতেই পেছন থেকে হাতটা টেনে ধরল ওমনি। সাদিফ থেমে দাঁড়াল৷ হাতের দিক একবার তাকিয়ে মারিয়ার মুখের দিক চাইল। মেয়েটার চোখ টইটম্বুর এখন। সে তাকাতেই গলগল করে গলে পরল যেন। অনুরোধ করে বলল,
‘ যাবেন না প্লিজ!’
সাদিফ বিস্মিত চোখে-মুখে এগিয়ে আসে। পাশের ডেস্ক থেকে চেয়ারটা এনে মারিয়ার পাশে বসে। মারিয়া ফুঁপিয়ে কেঁ*দে উঠল। সে বিহ্বল স্বরে শুধাল,
‘ কিছু হয়েছে?’
‘ ভাইয়ার কথা মনে পড়ছে খুব!’
রওনাকের ব্যাপারে কিছুই জানেনা সাদিফ। তাই বুঝতেও পারল না। মারিয়া নিজেই বলল,
‘ জানেন,আজ আমার জন্মদিন।’
‘ ওয়াও,তাই না কী? কালতো বলেননি।’
প্রফুল্ল চিত্ত সাদিফের।
মারিয়া বিরস গলায় বলল,
‘ ভাইয়া চলে যাবার পর থেকে আমি আর পালন করিনি।’
সাদিফ কপাল কোঁচকায়। চলে গেছে কথাটা ঠিক ঠাওর হলো না।
মারিয়া ভেজা কণ্ঠে জানাল,
‘প্রতি বছর এই দিনে, ঠিক বারোটার সময় ভাইয়া আমায় উইশ করত। ছোট থেকে সবার আগে ওর উইশ পেয়ে বড় হয়েছি আমি। ভাইয়া দুহাত ভরে বাজার করত, তারপর আম্মু আমার পছন্দের খাবার রান্না করতেন। এইদিনটা ছিল আমার ইচ্ছে-পূরণের মতো। যা চাইতাম ভাইয়া উপহার হিসেবে তাই আনত। দুপুরে ওদের পার্লামেন্ট থেকে এক ঝাঁক লোক সাথে এসে পেটপুড়ে খেত। আনন্দে হৈহৈ করে কেক কা*টতাম। ভাইয়া আমার কপালে চুঁমু খেয়ে বলত,উপহার পাওয়ার পর আমি যেভাবে হাসতাম, সেটা দেখলেই ওর মনে হয় জীবন স্বার্থক।’
বলতে বলতে মৃদূ হাসল সে। অথচ কোটরে চিকচিক করছে অশ্রু।
সাদিফ আগে-পিছে না ভেবেই প্রশ্ন করে বসল,
‘ এখন কোথায় উনি?’
মারিয়া থামল। সবেগে ভে*ঙে এলো কণ্ঠ। উদাস ভঙিতে বলল,
‘ মা*রা গেছে।’
সাদিফের ভ্রু কুঞ্চন মিলিয়ে যায়। বিমূর্ত হয়ে পরে। জিজ্ঞেস করে,নিজেই মিইয়ে গেল লজ্জায়। থতমত খেয়ে বসে রইল কিছুক্ষণ। জ্বিভ কে*টে বার বার নিজের নির্বুদ্ধিতার প্রতি হতাশ জানালো।
মারিয়া চোখ মুছল ফের। নাক টেনে বলল,
‘ আপনি খেতে যাবেন না? সময়ত বেশি নেই।’
সাদিফ নড়ে ওঠে,
‘ হু? হ্যাঁ যাব। আচ্ছা,আপনার ভাইয়া চলে যাওয়ার পর আর কখনও কেক কে*টেছেন? ‘
মারিয়া মাথা নাড়ল দুপাশে। বলল,
‘ ইচ্ছে হয়নি। ও মা*রা যাওয়ার পর জন্মদিন কেন? কোনও অনুষ্ঠানই আমরা পালন করতে পারিনা। ‘
সাদিফ দুর্বোধ্য হাসল। উঠে দাঁড়িয়ে তাকেও টেনে তুলে বলল,
‘ আসুন।’
‘ কোথায়?’
সাদিফ এগিয়ে চলল, ‘ আগে আসুন তো। ‘
ক্যান্টিনে নিয়ে এসেছে সে। মারিয়ার মুখ শুকিয়ে গেল সহসা। এখানে একেকটা খাবারের যেই দাম! পাঁচ টাকার রুটি দশ টাকা। সে ব্যস্ত ভঙিতে বলল,
‘ আমি কিছু খাব না স্যার।’
সাদিফ ফিরে তাকায়। কপালে আবার ভেসে ওঠে ভাঁজ। খালি চেয়ারটায় বসতে বসতে বলল,
‘ কীসের স্যার? কাল না বললেন আমরা বন্ধু? বন্ধুকে কেউ স্যার বলে ম্যালেরিয়া?’
মারিয়া পালটা কপাল কোঁচকাল এবার। এক নিমিষে উধাও হলো তার বিষন্ন মুখবিবর। নিজেও বসতে বসতে বলল,
‘ আচ্ছা,তাই? তাহলে বন্ধুকে আপনি করে কে বলে শুনি?’
সাদিফ ডান ভ্রুঁটা ঈষৎ উঁচুতে তুলে বলল,
‘ তুমি করে বলতে বলছেন?’
মারিয়া টেবিলে হাতের কনুই ঠেকাল। আঙুল গুলো গালে রেখে পল্লব ঝাপ্টে বলল,
‘ কেন? খুব সমস্যা হবে বললে? চাইলে তুই করেও বলতে পারেন।’
সাদিফ হেসে ফ্যালে। দুপাশে মাথা নেড়ে বলে,
‘ না না,মধ্যের টাই পার্ফেক্ট। আচ্ছা আজকে থেকে আমি তুমি বলব। তবে আমাকেও কিন্তু স্যার ফ্যার বলা চলবে না। নাম ধরে ডাকতে হবে,এন্ড তুমি।’
মারিয়া বিস্ময়ে স্বর, আকাশে উঠিয়ে বলল ‘ নাম ধরে? কিন্তু আপনি যে আমার বড়।’
সাদিফ কাঁধ উঁচায়, ‘ সো হোয়্যাট? তুমিই না বললে বন্ধুত্বে বয়স,সময় এসব ব্যাপার না?’
তারপর আঙুল তুলে সচেতন কণ্ঠে বলল,
‘ এই দেখেছো,আমি কিন্তু তুমি করে বলেছি মাত্র।’
সাদিফের কণ্ঠ চমৎকার। যেমন চমৎকার তার মুখমণ্ডল। সব যেন শিল্পীর হাতে নিঁখুত অঙ্কনীয়। মেপে মেপে চোখ,নাক, ভ্রুঁ বসানো। মারিয়া মোহিত হয়ে পরে। আরো কয়েকশ ধাপ বেশি অনুভব করে আকর্ষণ।
মাথা কাত করে বলল,’ ঠিক আছে । ‘
‘ তুমি বোসো,আমি আসছি।’
সাদিফ উঠে গেল। খাবার অর্ডার করতেই গিয়েছে। মারিয়া পরল ভীষণ চিন্তায়। তার ব্যাগ হাতড়ে দুশো টাকার মত হবে। খাবারের বিল আবার বাড়ি ফেরা!
সাদিফ ফিরে এলো দশ মিনিটের মাথায়। তার বসার হুলস্থুল ভঙিমায় নড়েচড়ে উঠল সে। তাকাতেই সাদিফ অমায়িক হেসে বলল,
‘ মজার ব্যাপার কী জানো?’
মারিয়া মাথা নাড়তেই বলল, ‘ আমি কখনও ফ্যামিলি মেম্বর বাদে কারো কেক কা*টিনি। যেটা আজ কা*টব।’
মারিয়া কিছু জিগেস করার পূর্বেই ওয়েটার ছেলেটি হাতে কেক নিয়ে হাজির হলো। একটা এক পাউণ্ডের ছোট ভ্যানিলা কেক। রাখল টেবিলের ঠিক মাঝখানে। মারিয়া হো*চট খেল। অবাক চোখে সাদিফের দিক তাকাল। চশমা ভেদ করে বড় বড় নেত্রজোড়া তাকেই দেখছে। সে তাকাতেই হাসি বিনিময় হয়। মারিয়া বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
‘ এসবের কী দরকার ছিল?’
সাদিফ নিজস্ব ভঙিতে বলল,
‘ দরকার ছিল ম্যালেরিয়া,ভাইয়া নেই বলে তোমরা কেক কা*টবেনা? ওনাকে মনে করে কা*টবে। উনি যা যা পছন্দ করেন,করতেন তাই তাই করবে। তোমরা মন ম*রা থাকলে ওনার কী ভালো লাগবে? নিশ্চয়ই না। উনি যেমন চেষ্টা করতেন তোমাকে হাসিখুশি রাখার,উনি না থাকাকালীন তোমারও উচিত তেমন থাকা।’
‘ কিন্তু… ‘
‘ কোনও কিন্তু নয়,এসো….’
সাদিফ উঠল,মারিয়াও মন্থর বেগে দাঁড়াল। ছেলেটা ওর হাতে প্লাস্টিকের ছু*রি ধরিয়ে নিজেও ওপর থেকে আকড়ে ধরল।মারিয়ার গাত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই অল্প ছোঁয়ার শিহরন বইল। সাদিফের কাছাকাছি আসা, সুনামি ছোটাল বক্ষপটে। নিভু নিভু আড়চোখে একবার তাকায় সে। পাশ থেকে সাদিফের সাদাটে চিবুক দেখে জোড়াল শ্বাস ফ্যালে। হঠাৎ কেকের লেখার দিক চোখ পরতেই হেসে ফেলল।
‘ হ্যাপি বার্থডে ম্যালেরিয়া!’
সাদিফ বলল, ‘ হাসলে কেন?’
‘ কেকেও ম্যালেরিয়া?’
‘ হ্যাঁ, কোনও সমস্যা? তোমাকে এই নামেই মানায়। দরকার পরলে সারাজীবন ডাকব।’
কথায় কথায় বলেছে সাদিফ৷ অথচ মারিয়ার অন্তঃস্থল অবধি পৌঁছে গেল তা। সারাজীবন ডাকবে? ডাকুক,যা ইচ্ছে ডাকুক। সত্যিই এই মানুষটা সারাজীবন তার পাশে থাকুক। এইভাবে ম্যালেরিয়া বলে ডাকতে হলেও থাকুক।
দুজন এক সঙ্গে কেক কা*টল। সাদিফ টেনে টেনে আওড়াল,
‘ হ্যাপি বার্থডে টু ইউ………হ্যাপি বার্থডে টু ইউ….’
মারিয়া বিমুগ্ধ নয়নে দেখে গেল সব। কেকের একটা ক্ষুদ্র অংশ মুখের সামনে ধরল সাদিফ। মেয়েটার মূক চক্ষু দেখে হেসে বলল,
‘ হা করুন ম্যাডাম….’
মারিয়ার সম্বিৎ ফিরল। ধাতস্থ হয়ে হা করল। সাদিফ ঠুসে দিলো কেক। মারিয়া নিজেও একটু করে তুলল। সাদিফ হা করল,তবে মারিয়া মুখে না দিয়ে মেখে দিলো তার ফর্সা গালে। ভ্যাবাচেকা খেল সে। হতভম্ব হয়ে বলল,
‘ এটা কী হলো?’
মারিয়া হুহা করে হেসে ফেলল। চোখের জল শুকিয়েছে সেই কখন। সাদিফ ঠোঁট ফুলিয়ে রুমাল বের করে গাল মুছতে মুছতে বলল,
‘ খুব চালাক তাইনা? ওয়েট হাসি বের করছি….’
বলতে বলতে থাবা মেরে কেক তুলে পুরোটা মারিয়ার মুখে ঘষে দিল। মেয়েটা ভড়কে, চোখ ছানাবড়া করে বলল,
‘ এটা কী করলে?’
‘ আমাকে আর লাগাবে?’
‘ আমিত এতখানি লাগাইনি।’
কাঁদো-কাঁদো কণ্ঠ তার। সাদিফ যুক্তি দিলো,
‘ আমি ঋন রাখিনা ম্যালেরিয়া। ইন্টারেস্ট সমেত ফেরত দেই।’
মারিয়া ফোস করে এক শ্বাস ফেলে, অসহায় চোখে চাইল। ভাবল,
‘ এই যে ভালোবাসা দিচ্ছি,এর ইন্টারেস্ট সমেত ফেরত দেবে তো?’
মুখ বলল,
‘ ঠিক আছে। ধুঁয়ে আসি আগে,পরে দেখে নিচ্ছি।’
সে হাঁটা ধরতেই সাদিফ বলল,
‘ লাঞ্চ টাইম ওভার। ছুটির পর দেখা হবে। আজ টি এস সিতে চা খেতে যাব। মনে রেখো।’
মারিয়া বিলম্বব্যাতীত বলল ‘ আচ্ছা।’
তারপর চলে গেল। অর্ধ খাওয়া কেকটা সাদিফ বিলিয়ে দিলো ক্যান্টিনে। মুক্ত শ্বাস ফেলে ভাবল,
‘ যাক,মেয়েটার মন ভালো করতে তো পেরেছি।’
‘
****
আস্তে-ধীরে পুষ্পর বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো । গায়ে হলুদের আগের দিন থেকে বাড়িঘরে উপচে পরল মেহমান। মৈত্রীরা হাজির হলো প্রথম দিনে। মেয়েটার দুগাল ফুলেফেঁপে উঠছে হাসিতে। চাঁদ হাতে পাওয়ার মত আনন্দ যেন। খুশির ছটায় জ্বলজ্বল করছে চোখ-মুখ। পুষ্পর বিয়ে অন্য কারো সাথে। তাহলে সাদিফ?
সাদিফ তবে তার?
এই একটা কথা মাথায় ঘুরছে ক্রমশ। খবরটা পেতেই তিনদিন ধরে ব্যাগ গুছিয়েছে। সারাটা পথ একা একা নিরবে হেসেছে।
সাদিফকে প্রথম দেখায় ভালো লেগেছিল ওর। সেই যখন বর্ষাকে কোলে এনে পাটার ওপর দাঁড করিয়ে কপালের ঘাম মুছেছিল। তা দেখেই টুপ করে প্রেমে পড়েছিল মন। সেই আকর্ষণ ছিল ভ*য়ানক। কিন্তু ওই মোহ,ভালোবাসায় ইউটার্ন নিয়েছে আস্তে-ধীরে। যেদিন পিউয়ের কাছে জেনেছিল,পুষ্পর সাথে তার বিয়ে ঠিক,কী কেঁ*দেছে সেই জানে। ওই কা*ন্নার পরেইত নিশ্চিত হতে পারল,ছেলেটাকে সে ভালোবাসে! ক*ষ্টে,দুঃ*খে কত রকম ব্যস্ততা দেখিয়ে তাড়াতাড়ি বিয়ে বাড়ি ছেড়েছিল। তবুও এক মুহুর্ত মন থেকে সরাতে পারেনি। বিয়ে বাড়িতে তোলা সেইসব ছবি গুলো,যেখানে সাদিফকে একটুখানিও দেখা যায়, স্বযত্নে রেখেছে সে। পুষ্পর সাথে আরেকজনের বিয়ে মানে,সাদিফ তাহলে তার। নাহলে কেন ওদের বিয়েটা হতে হতেও ভে*ঙে যাবে? সব তো শুনল শান্তার কাছে। পুষ্প অন্য কাউকে পছন্দ করে,বাড়ির কেউ তা না জেনেই বিয়ে ঠিক করেছিল। যাক! ভালোই হয়েছে। সাদিফকে পাওয়ার ক্ষীন আশা পূর্ন হয়ে ধরা দিয়েছে হাতে। মৈত্রী বুক ভরে শ্বাস নিলো। বাধভা*ঙা উচ্ছ্বাস আর স্বতস্ফুর্ত চিত্তে,বাবা মায়ের সাথে সিকদার বাড়িতে পা রাখল বিকেলে। সবার আগে পিউ ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল ওকে। মৈত্রী আহ্লাদে আটখানা হয়ে পরে। ওখানেই সিদ্ধান্ত হয় তাদের এক ঘরে থাকার।
তার তুষাতুর দুটো লোচন সাদিফকে খোঁজে। সকলের কান এড়িয়ে যখন পিউয়ের কাছে জানতে চায়, মেয়েটা দুষ্টু দুষ্টু হাসে। কাঁধে ধা*ক্কা দিয়ে, টেনে টেনে বলে,
‘ এত অধৈর্য হলে হয় হবু ভাবি? অপেক্ষা করো।’
‘হবু ভাবি’ সম্বোধনে লাল- নীল হয়ে পরে মৈত্রী। লজ্জ্বার অত্যুজ্জ্বল কিরণ ছড়িয়ে পরে গ্রীবায়। পুষ্প তাকে পেয়েই আবদার ছোড়ে,
‘ আমাকে কিন্তু তুমি মেহেদী পরাবে মৈত্রী। পার্লার টার্লার বাদ।’
‘ নিশ্চয়ই। শুধু হাতে কেন? দরকার পরলে সারা গায়ে লাগিয়ে দেব আপু। তুমি যে আমার কত বড় উপকার করেছ ভাই তুমি নিজেই জানোনা।’
পুষ্প না বুঝেই হাসল। পরমুহূর্তে চোখ পিটপিট করে পিউয়ের দিক চাইল৷ মেয়েটা ঠোঁট চেপে হাসছে। তখন ইকবালের কল আসায় ঘাটালোনা সে। রিসিভ করে উঠে গেল ওদের মাঝ থেকে।
মৈত্রী পিউকে পাকড়াও করে বলল,
‘ আচ্ছা হাতে না বেশি সময় নেই। তুমি আমাকে বলে দিও তোমার সাদিফ ভাইয়ের কী কী পছন্দ!’
পিউ ভেবে ভেবে বলল,
‘ ওনার যে কী পছন্দ আমি নিজেই জানিনা গো। তোমার জন্য না হয় জেনে নেব।’
মৈত্রী কৃতজ্ঞতায় ওকে জড়িয়ে ধরে। পিউ মনে মনে ঘোষনা করল, এই মেয়েটা তার ভাবি হিসেবে পার্ফেক্ট। ননদ – ভাবি মিলেমিশে সারাজীবন মহানন্দে কা*টানো যাবে।
***
সাদিফ-মারিয়াকে নিয়ে টি -এস- সি ঘুরল। ইচ্ছেমতো স্ট্রিটফুড খেলো দুজন। জোরাজোরি করেও কোনওটার বিল মারিয়া দিতে পারেনি। তারপর কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে তাকে বাসায় নামিয়ে দিল সে। মারিয়া আজও চায়ের জন্য সাধল। ছেলেটা সবিনয়ের সহিত মানা করল। মারিয়া ধন্যবাদ দিলো সব কিছুর জন্য। রওনাক মা*রা যাওয়ার পর এই প্রথম তার জন্মদিন এত ভালো কেটেছে। কৃতজ্ঞতায় ভেতর ভেতর নুইয়ে পরে সে।
সাদিফ চলে যায়। দুই পথে যেতে যেতে দুজনেই আবিষ্কার করল,
‘ আজকের দিনটা ছিল এখন অবধি কাটানো,তাদের জীবনের সবচাইতে সুন্দর আর শ্রেষ্ঠ দিন।’
***
গৃহে মেহমান গিজগিজ করছে। বর্ষা হাজির তার বর-সহ। অমায়িক মানুষ সৈকত! আচার ব্যবহার অনবদ্য। জামাই জামাই ভাব ধরে না রেখে লেগে পরেছে কাজে। কারো নিষেধই নিচ্ছেনা কানে। রাশিদ আর মুত্তালিব তাদের পরিবার সহ উপস্থিত । একমাত্র ঢাকায় নিবাসী আত্মীয় -স্বজন বাদ দিয়ে বাকী সকলেই এসেছে।
ধূসরের সঙ্গে কাল থেকে দেখা হয়নি পিউয়ের। হলেও,পলক ফেলার আগেই গায়েব হয় সে। দু দন্ড তাকিয়ে থাকারও সময় দেয় না। এদিক ছোটে, ওদিক ছোটে। ইকবাল ভাই আবার তাকে বগলদাবা করে কেনাকা*টাও করতে যান। সব মিলিয়ে মানুষটার শ্বাস ফেলার ও ফুরসত হচ্ছে না।
বাড়ির ছাদে গায়ে হলুদের প্যান্ডেল বসানো হয়েছে।
আজকাল প্রায়শই অসময়ে বর্ষা ধেঁয়ে আসছে। এই নিয়ে সকলেই বেশ চিন্তায়। হঠাৎ বৃষ্টি নামলে অনুষ্ঠানই মাটি। প্যান্ডেল লণ্ডভণ্ড হলে পুষ্পর দুঃখ আর দেখতে হবে না। নিজের গায়ে হলুদ নিয়ে নিজেই মাতোয়ারা সে।
তার কনুই থেকে শুরু করে নখ অবধি মেহেদী পরিয়েছে মৈত্রী।
মেয়েরা সবাই মিলে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পরেছে। সন্ধ্যার পর শুরু হবে নাঁচগান।
মৈত্রী মেহেদী লাগাতে লাগাতে চোখের কোনা দিয়ে দরজার দিক চাইল একবার। সাদিফ এটা সেটা হাতে তুলে আসছে,যাচ্ছে। পর্দা ওড়ার ফাঁকে ফাঁকে দেখা যাচ্ছে ওকে। ওই একটুখানি দেখেই শান্তি পাচ্ছে মেয়েটা।
কাল সাদিফ ফেরা মাত্রই তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল সে। কতদিন পর দেখায়,আবেগে ভেসে গেল। অথচ
তাকে দেখে ভূত দেখার ন্যায় চমকে উঠেছিল ছেলেটা৷ চোখেমুখে বিস্ময় নিয়ে চেয়ে ছিল কিছুক্ষণ। মৈত্রী মিনমিন, করে দুগালে লাজুক ভাব নিয়ে শুধাল,
‘ ভালো আছেন?’
সাদিফ কোনও রকম হেসে বলল, ‘ জি আপনি? ‘
‘ভালো। ‘
ফের হা করার সময় দিলো না সাদিফ। তড়িঘড়ি পায়ে ওপরে উঠে গিয়েছিল।
মারিয়াও দাওয়াত পেয়েছে বিয়ের। মিনা বেগম নিজে ফোন করে নিমন্ত্রন করেছেন ওকে। অফিস থেকে দুটো দিনের ছুটি নিতে গিয়ে বড় ঝামেলায় পরেছিল সে। নতুন জয়েন করলে,তিন মাসের আগে,ছুটি দেয় কেউ? তাকেও দিতে চায়নি। এই যাত্রায়ও তাকে উদ্ধার করেছে সাদিফ। নিজে সাথে গিয়ে ছুটি চেয়েছে। যেহেতু সে ম্যানেজার,তার সুপারিশ অফিসের বস ফেললেন না। মারিয়া নাঁচতে নাঁচতে হাতে ব্যাক প্যাক নিয়ে বাড়িতে ঢুকল। সাদিফ তাকে দেখেই বলল,
‘ এসে গিয়েছেন?’
মারিয়া স্ফুর্ত চিত্তে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ কাজ করতে হবে কিন্তু… ‘
‘ নিশ্চয়ই। আপনি খালি বলবেন,কী হেল্প দরকার,আমি সব করে দেব।’
সাদিফ দুই ভ্রু উঁচায়,
‘ বাবাহ! এত কাজের মানুষ!’
***
গায়ে হলুদের দিন ধূসরকে দেখেই মাথা চক্কর কা*টল পিউয়ের। একটা লাল রংয়ের পাঞ্জাবি পরেছে সে। সঙ্গে সাদা প্যান্ট। দুহাতা কনুইয়ের একটু নীচে গোটানো। ঘামে ভিজে বুকের কাছটা মিশে গেছে গায়ে। পিউ হা করে আহাম্মক বনে চেয়ে থাকল। তার পল্লব আটকে গিয়েছে। নড়ছেনা। চোখের মণি এক স্থানে স্থির।
ইশ! মানুষটা এত নেশা ধরানো দেখতে কেন? এই যে অল্প দাড়ি গজানো শক্ত চিবুক,মাথাভর্তি অপরিপাটি চুল,শ্যামলা সুঠাম হাতে ভাঁজ করা লাল পাঞ্জাবির পাড়। এই যে সুগভীর নেত্রের পৌরুষদীপ্ত মুখ,এসব তো স্বপ্নে আসা অচিনদেশের রাজকুমারের মত। বাস্তবে কারোর হতে দেখেনি। হয়না, এ হতেই পারেনা। এই তামাটে চেহারার বলিষ্ঠ গড়নের যুবক তার ভেতরের সবটা এলোমেলো করে দিয়েছে। এই খবর কেউ জানলে কী হতো? প্রেস -মিডিয়া হাজির হত চৌকাঠে। বড় বড় পত্রিকা শিরোনামে ভরে যেত। আর টিভি চ্যানেলে নিরন্তর খবর চলতো, প্রেমের ফাঁ*দে ফেলে এক সপ্তদশী কিশোরীর মন নিয়ে ছিনি*মিনি খেলছে এক পাষাণ যুবক। মেয়েটি আহত,না না নির্মম ভাবে নিহত। তাকে অতিসত্ত্বর ভর্তি করা হবে মনের হাসপাতালে। অপারেশন হবে চারটে অলিন্দের। অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে রাখা হবে ভালোবাসার আইসিউতে।
সে দুই ঠোঁট অর্ধেক ফাঁকা করে চেয়ে যখন ধূসর এগিয়ে এলো। তুড়ি বাজাল মুখের সামনে। পিউ ধ্যান ভে*ঙে ,নড়েচড়ে উঠল। অপ্রস্তুত হয়ে এলোমেলো পাতা ফেলল মেঝেতে। ধূসর কিছু বলল না। চুপচাপ পাশ কা*টাতে গিয়ে আবার দাঁড়াল। আড়াআড়ি হলো দুজন। পিউ তাকাতে গিয়ে আবার চট করে নামিয়ে ফেলল চোখ। যখন বুঝল ধূসর দাঁড়িয়ে লজ্জা পেলো সে। আচমকা উত্তপ্ত প্রঃশ্বাসের সঙ্গে ধূসরের ঠোঁট দ্বয় ছুঁয়ে গেল পিউয়ের কানের কাছটা। শীতল কণ্ঠে, ফিসফিস করে বলে গেল,
‘আ’ম রেডি টু ডাই, এগেইন। ‘
***
পুষ্প লাইন কে*টে দিচ্ছে ফোনের। ইকবাল তাও থামছে না। একের পর এক ভিডিও কল দিচ্ছে। মেয়েটা বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করল,তবে ক্যামেরা ঘুরিয়ে রাখল আরেকদিক। ইকবাল তখন আধশোয়া বিছানায়। দুকাধে তোয়ালে প্যাচানো। গালে বাটা কাচা হলুদ। মাথার চুল এলোমেলো হয়ে ললাট ছুঁয়েছে। পুষ্পর চোখ জুড়িয়ে গেল দেখে। এই সৌষ্ঠব পূর্ন মানুষটা তার? ভাবলেই নিজেকে ধন্য লাগে। ইকবাল ক্যামেরার ওপাশ থেকে কিছুক্ষণ উঁকিঝুঁকি দিলো। দেখার চেষ্টা চালায় তাকে। শেষে ব্যর্থ হয়ে বলে,
‘ প্লিজ মাই লাভ, সামনে এসো।’
পুষ্প মুখের ওপর বলল,
‘ পারব না।’
‘ এমন করেনা সোনা! হলুদের সাজে তোমাকে কেমন লাগছে দেখি একটু।’
‘ বললামত না।’
‘ এত নিষ্ঠুর হচ্ছো কেন?’
‘ আমি এরকমই।’
‘ মাথাটা গরম মনে হচ্ছে!’
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ আমি কিন্তু কিছু করিনি।’
পুষ্প কঠিন কণ্ঠে বলল,
‘ করেছো। এই যে বারবার ফোন করে বিরক্ত করছো,এটাই অনেক বড় অপরাধ!’
ইকবাল নিষ্পাপ কণ্ঠে বলল,
‘ আমিতো তোমাকে দেখার জন্য এমন করছি মাই লাভ। তোমাকে সবার আগে দেখা আমার অধিকার।’
‘ বলেছিনা,বিয়ের আগে দেখা হচ্ছেনা। দেখতে হলে কাল দেখো।’
তৎক্ষনাৎ লাইন কে*টে দিলো ইকবাল। পুষ্প আহত হলো। সে কি বেশি শক্ত-পোক্ত হয়ে কথা বলে ফেলেছে? না বলে উপায় কী! মা কড়া করে বলে দিয়েছেন বিয়ের আগে একে অন্যের মুখ না দেখতে। যদিও এসব কুসংস্কার, কিন্তু মায়ের আদেশ,না মেনে উপায় আছে?
তাইত অমন করল সে। ইকবালটা কি রাগ করল? পুষ্প ওকে মানাতে ফোন করতে যাবে সে সময় মারিয়া ঘরে ঢোকে। ওকে দেখে থেমে গেল মেয়েটা। খুশিতে উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। ব্যস্ত হলো গল্পে।
আধঘন্টার মাথায় ইকবাল নিজেই ফোন করল। পুষ্প তখন মেহেদী পরছে পায়ে। অধৈর্য হাতে সাথে সাথে রিসিভ করল সে। মুখ ফুটে সরি বলার আগেই ইকবাল বলল,
‘ বাড়ির পেছনে এসো একবার। ‘
পুষ্প বিস্ময়াবহ হয়ে বলল, ‘ কেন?’
‘ আমি দাঁড়িয়ে আছি।’
সে হতবিহ্বল। বিশাল জোরে ধা*ক্কা খেয়েছে। বলদ বনে গেল। ইকবাল বলেই লাইন কা*টল। পুষ্পর উশখুশ শুরু হলো ওমনি। ইকবালের পাগলামিতে একবার ভালো লাগছে, একবার অসহ্য। বাড়ি ভর্তি এত মানুষ! সে যাবে কেমন করে? এখন কাউকে কিছু বললেই মজা নেবে সবাই। কী করবে তবে?
শেষে মারিয়াকে কাছে ডেকে কানে কানে বলল কথাটা। মেয়েটা ফিক করে হেসে ফেলতেই পুষ্প নুইয়ে গেল লজ্জায়।
মারিয়া উপকার করেছে অবশ্য। সকলের চোখ এড়িয়ে তাকে পৌঁছে দিয়েছে গন্তব্যে। নিজে হয়েছে পাহারাদার।
***
অন্ধকারে হাত খুঁজে পাওয়াও মুশকিল যেখানে,গায়ে হলুদের ভারি সাজগোজ নিয়ে পুষ্প দাঁড়িয়ে সেথায়। ইকবালের টিকিটিও দেখা যাচ্ছেনা। তাকে আসতে বলে কোথায় নিরুদ্দেশ হয়েছে এই লোক? নাম ধরেও তো ডাকতে পারবে না। পাছে কেউ শুনে নেয়! তাই ফিসফিস করে বলল ‘ ইকবাল,আছো?’ ইকবাল!’
জবাব এলো না। তবে এক জোড়া শক্ত হাত পেছন থেকে কোমড় চে*পে ধরে, মুখ গুজে দিলো কাঁধে। কবুতর ছানার ন্যায় কেঁ*পে উঠল মেয়েটা। ঘুরে দেখতে চায়,ইকবাল দিলোনা। জড়ান কন্ঠে, কাধে নাক ঘষে বলল,
‘ হলুদের ঘ্রান এত সুন্দর হয় মাই লাভ? এরপর তোমাকে সারাদিন হলুদে ভিজিয়ে রাখব আমি।’
পুষ্প হাসল। পরমুহূর্তে মেকি রা*গ নিয়ে বলল,
‘ এভাবে এলে কেন? কেউ দেখে ফেললে? ‘
‘ কেউ ‘এই শব্দটাকে ইকবাল ভয় পায়না মাই লাভ। পেয়্যার কীয়া তো ডারনা ক্যা,? সেখানে আমিতো বিয়ে করছি ৷ ভয়ের প্রশ্নই আসে না।’
‘ বাবাহ! এত সাহস? কে যেন ধূসর ভাইয়ের নাম শুনলেই…’
‘ এখন তো ওউ সব জানে মাই লাভ। তাই ভয়কে করেছি জয়। নিজের বউয়ের কাছেইত এসেছি।
এনি ওয়ে,অমন করলে কেন তুমি? একটু দেখা দিলে কী হোতো? ”
‘ মা বারণ করেছিল।’
‘ ওওও… বারণ করে কিন্তু খা*রাপ হোলো না। তখন মুখটা দেখতাম আর এখনও পুরোটা দেখছি, সাথে ছুঁতেও পারছি বলো।’
পুষ্পকে নিজের দিকে ঘোরাল ইকবাল। আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে বলল,
‘ মনে হচ্ছে জ্যান্ত একটা হলুদপরী দাঁড়িয়ে আমার সামনে। ‘
পুষ্প লজ্জা পেয়ে মাথা নামাল। ইকবাল ফিসফিস করে বলল,
‘ এমন আস্ত একটা গাঁদা ফুল আমার ঘরে থাকবে,ভাবলেই নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে মাই লাভ।’
পুষ্প আই-ঢাই করে বলল,
‘ ধ্যাত,এসব বোলোনা তো। লজ্জা লাগছে আমার।’
‘ তাই? তাহলে লজ্জাটা আরেকটু বাড়িয়ে দেই?’
পুষ্প প্রশ্ন নিয়ে তাকাল। ইকবালের ঠোঁটের কোনায় দুষ্টু-মিষ্টি হাসিটা তাকে বিভ্রান্ত করে দেয়। হা করে কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই, পুরু, অসিত ওষ্ঠ জোড়া ছুটে এসে আকড়ে নেয় লিপস্টিক পরা অধরদ্বয়। হকচকিয়ে তার শার্টের কলার চেপে ধরে পুষ্প। ইকবালের হাত উঠে আসে পিঠে। গভীর ভাবে লেপে যায় স্পর্শ। আরেকটু কাছে টেনে নেয়। দুজনের মাঝের ওই এক ইঞ্চির দুরুত্ব টুকুও ঘুচে যায় মুহুর্তে।
***
পিউ শাড়ি পরতে গিয়ে এলোমেলো করে ফেলছে। তার মাথায় শুধু ঘুরছে ধূসরের কিলার লুক,তার মারাত্মক চেহারা
আর বলে যাওয়া রহস্যময় কথাখানা। ম*রতে রাজি আছি,মানে দিয়ে কী বোঝালেন উনি? কোনদিন ম*রেছেন? সে ভাবতে ভাবতে কুচি ঠিক করে,আবার তা উলটে যায় দুদিকে। নতুন শাড়ি পরার এই এক জ্বালা। পিউ বিরক্ত হয়ে রেখে দিলো। অসহায় হয়ে বসে রইল বিছানায়। সেই সময় মারিয়া ঢুকল। তার কাজলের মাথাটা ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। কা*টা দরকার। সার্পনার খুঁজতে এসে পিউয়ের অবস্থা দেখে বলল
‘ ওমা! তুমি এখনও তৈরী হওনি?’
‘ কী করে হব? আমিত শাড়িটা পরতেই পারছিনা আপু।’
‘ আরে এই কথা, এসো আমি পরিয়ে দিচ্ছি।’
পিউয়ের চেহারা ঝলমলে হলো। ঝটপট উঠে দাঁড়াল। মারিয়া এগিয়ে এসে দক্ষ হাতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শাড়ি পরিয়ে বলল,
‘ চুল খোলা রাখবে না খোঁপা করে দেব?’
‘ খোলা থাকুক।’
‘ আচ্ছা।’
চুল গুলো সেভাবে আচড়ে দিয়ে কিছু অংশ কাধের এপাশে ঝুলয়ে দিল মারিয়া। বলল ‘ তোমাকে শাড়ি পরলে একদম অন্য রকম লাগে পিউ। মনে হয় কত বড়! বোঝাই যায়না,ইন্টার দিচ্ছো। আমি ছেলে হলে,তোমাকে লাইন মা*রতাম শিয়র।’
পিউ লজ্জা পেয়ে বলল, ‘ কী যে বলো!’
আচ্ছা, তুমি শাড়ি পরলে না কেন?’
‘ আমারতো শাড়ি নেই। তাছাড়া আমি সামলাতেও পারিনা।”
‘ আজ ওসব বললে হবেনা আপু। আমি শাড়ি দিচ্ছি, চটপট পালটে নাও।’
মারিয়া মানা করতেও পারল না, পিউ ছুটে গেল মায়ের ঘরে। লাল টুকটুকে শাড়ি নিয়ে আবার ফিরে এলো। হাতে দিয়ে বলল
‘ আপুর আর তোমার গায়ের মাপ এক। তাই ওর ব্লাউজ এনেছি। একটু এদিক সেদিক হলে পিন দিয়ে আটকে নিও। কেমন?’
‘ শাড়ি না পরলে হয়না?’
পিউ দৃঢ় গলায় বলল ‘ না হয় না। পরো, কুইক। ড্রেসিং টেবিলের ওপর সব কসমেটিকস রাখা যেটা ভালো লাগে পরে নিও।’
তারপর ঠেলেঠুলে তাকে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিল পিউ।
মৈত্রী সেজেগুজে তৈরি। মেক আপের আস্তরনে তার মুখের সঠিক রঙ ঢাকা পরেছে। কিন্তু সুন্দর লাগছে বেশ! ডালা শাড়ি পরায় বাঙালী বধূর মত ভাব ফুটেছে। সে নিজেই মুগ্ধ হলো নিজেকে দেখে। এখন শুধু সেই মানুষটার মনে ধরলে হয়!
মৈত্রী ঘর থেকে বের হতেই সাদিফ সামনে পরে। তাকে এক পলক দেখেও চলে যেতে নেয়। মৈত্রী আটকে দিয়ে বলল ‘ কেমন লাগছে আমায়?’
সাদিফ মহাবিরক্ত হলো। কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
‘ ভালো। ‘
আবার যেতে নিলে মৈত্রী আবার আটকে বলল ‘ শুধু ভালো?’
‘ জি। আমি মেয়েদের প্রসংশা করতে পারিনা।’
তারপর চলে গেল। মৈত্রী হাসল একা একা। ভাবল,
‘ আমাকে দেখলেই পালাতে চান। আচ্ছা দেখি, পালিয়ে কতদূর যেতে পারেন আপনি!’
‘ এরকম বিরক্তিকর মেয়ে আগে দেখিনি। দেখছে ইগ্নোর করছি, তাও গায়ে পরে কথা বলে? আশ্চর্য! ‘
সাদিফ বিড়বিড় করে হাঁটতে হাঁটতে থেমে দাঁড়াল। কী মনে করে পাশ ফিরে তাকাল। শাড়ি পরে এগিয়ে আসছে মারিয়া। খোঁপায় গোঁজা গাজরাটা দুহাত দিয়ে ঠিকঠাক করার ব্যস্ততা তার। সাদিফ প্রথম দফায় বিস্মিত হলো। প্রথম বার মারিয়াকে শাড়ি পরা দেখে চোখ থমকে রইল। পরপর সেখানে ছড়িয়ে গেল মূঢ়তা।
সব ভুলে অভিভূতের ন্যায় চেয়ে রইল সাদিফ। লাল শাড়ি পরা ফর্সা মেয়েটিকে স্বর্গের অপ্সরী মনে হচ্ছে যেন। এটা কি সত্যিই ম্যালেরিয়া? সব সময় সাদামাটা বেশে দেখা মেয়েটিকে সাজলে এত সুন্দর লাগে বুঝি?
সেই মুহুর্তে পিউ ছুটতে ছুটতে এলো। তার পড়নেও শাড়ি। মারিয়াকে ডেকে বলল,
‘ আপু তোমার ফোন বাজছে।’
মারিয়া ফিরে তাকায়। ধ্যান কেঁটে যায় সাদিফের। হুশে এলো সে। থতমত খেয়ে কেশে উঠল। পরপর লজ্জায় মিশে গেল মাটিতে। পিউ থাকতে অন্য কোনও মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিল ভাবতেই নিজেকে ছোট মনে হয়। দু একবার আনমনে ছি! ছি! বিড়বিড় করল সে। পালানোর জন্য একরকম দ্রুত জায়গা ছাড়ল তারপর।
***
একটা হলুদ শাড়ি, পিঠের শেষাংশ অবধি খোলা চুল আর দুহাত ভর্তি লাল চুড়ি পরা সপ্তদশী মেয়েটা হাতে ভাতের প্লেট নিয়ে ঘুরছে। মাঝে মাঝে মুখে দিচ্ছে। এত বড় বাড়িতে কোথাও একটু বসে খাওয়ার জায়গা পাচ্ছে না সে। এদিকে ছোটাছুটি তে সকাল থেকে খেতে পারেনি। একটা দানাও পরেনি পেটে। খিদে তো আর স্থান-কাল মানে না!
মিনা বেগম এক ফাঁকে দেখে গেলেন মেয়ের কান্ড। বলেও গেলেন,
‘ দাঁড়িয়ে ভাত খায়না,বসে খা।’
মেয়েটা শুনল,গিয়ে খাবার ঘরে জায়গাও খুঁজে এলো, কিন্তু পেলোনা। এক ব্যাচ বসছে,আরেক ব্যাচ উঠছে। মেহমান দের রেখে সে আগে বসে গেলে কেমন দেখায় না!
হেঁটে হেঁটে খেতে খারাপ লাগছে না অবশ্য । পারলে রুমে বসে খেতে পারে,কিন্তু ইচ্ছে করে যাচ্ছে না। তার কাজল কালো চক্ষুদ্বয় ম*রিয়া হয়ে আছে ধূসরের প্রতীক্ষায়। নিরবে,নিঃশব্দে মানুষটাকে খুঁজছে সে। সেই কখন বিকেলে একটু দেখেছে,আর না। মানুষ টা যে কী সাংঘাতিক ব্যস্ত! কাল থকে পা দুটো জিরোচ্ছেই না। ছাদ থেকে এক দণ্ড নামার সময় মিলছে না তার। তার কি বুকটা আকুপাকু করছেনা ওকে দেখার? এই যে সে সেজেগুজে ঘুরছে,সাজত উঠে আসারই সময় হয়ে যাচ্ছে। একবার কি এর আগে দেখবেন না ধূসর ভাই? পিউ সিড়িঘরের কাছে ঘুরঘুর করছিল খেতে খেতে। সেই সময় কারো পায়ের শব্দ এলো কানে। কেউ নামছে। পিউ ভাবল অন্য কেউ। অনাগ্রহে ফিরে তাকালো না তাই। অথচ নামল ধূসর। তার কাঙ্ক্ষিত পুরুষ! পিউকে এভাবে দেখে সিড়িতেই থেমে দাঁড়াল সে। পেছন থেকে মেয়েটার খোলা চুলের দিক চেয়ে ঢোক গিলল। পিচ্চিটা আবার শাড়ি পরেছে! আচ্ছা ফাজিল তো!
ধূসর ধীর পায়ে নেমে এলো। গলা খাকাড়ি দিতেই ঘুরে চাইল পিউ। ধূসরকে দেখেই তার গাল দুটো রোদ্দুরের ন্যায় চকচক করে উঠল। ওষ্ঠপুটে ভীড়ল কুণ্ঠিত, মায়াময় হাসি। লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে নিভু চোখ তুলে চাইল। সামনে থেকে সেকেন্ডে সেকেন্ডে তৃষ্ণা মিটিয়ে দেখল। ধূসরের নেত্রদ্বয় থেমে নেই। পিউ ঘোরা মাত্র তার ধারাল চাউনী পা থেকে মাথা পর্যন্ত মেপে নিয়েছে। ওইটুকু সময়েই মুখস্থ করে ফেলেছে তার প্রতিটি সাজ।
তারপর সামনাসামনি হলো। পিউ চোখ নামিয়ে, বাম হাতে কালো চুল গুঁজে দিল কানে। যাতে প্রকাশ পেলো, ধূসরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকায় তার অস্বাভাবিক লজ্জা।
ধূসর হঠাৎই গম্ভীর গলায়, কপাল কুঁচকে বলল,
‘ বিয়ে টা কী তোর?’
পিউ তটস্থ নজরে চাইল। দুদিকে মাথা নেড়ে বলল’ না তো। ‘
‘ তাহলে এত সেজেছিস কেন?’
মেয়েটা হতবুদ্ধি হয়ে নিজের সারা গায়ে চোখ বোলায়। অন্যদের সাজগোজের ধারেকাছেও যায়নি ও। একটু ফাউন্ডেশন অবধি মাখেনি। ওনার চোখে কী ন্যাবা হলো? এত সাজ কই দেখলেন তিনি?
পিউয়ের মনটাই খা*রাপ হয়ে গেল। কই ভাবল,সেই বর্ষা আপুর বিয়ের মত উনি হা করে চেয়ে রইবেন। কুচি ঠিক করে দেবেন। মুগ্ধ হয়ে দেখবেন। তা না!
ধূসর কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
‘ তুই কি আমাকে মা*রার প্ল্যান করছিস?’
পিউ চমকে তাকাল। অদ্ভূত কণ্ঠস্বরের মালিকের প্রতি এক পশলা অভিমান হানা দিল বক্ষে। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ঝড় নামাতে চাইল। চোখের সামনে,ধূসরের শক্ত চিবুক দেখে দিশেহারা হয়ে বলল,
‘ ছি ছি! আমি কেন…
কথা শেষ করার আগেই ধূসর এসে হাত চে*পে ধরে।
নিজের সাথে টেনে বলে ‘ আয়।’
‘ কোথায় যাব?’
ধূসর উত্তর না দিলেও,
কলের পুতুলের মত পা চালাল পিউ। তার ডান হাতে ভাতের প্লেট। এভাবে টানলে পরে যাবে তো।
ধূসর ওকে নিয়ে ওর ঘরেই এল। আপাতত ফাঁকা কামড়া। পুষ্পর কক্ষজুড়ে সবার ভীড়।
একদম রুমে ঢুকে পা দিয়ে দরজা ঠেলে দিল। খট করে শব্দ হয়ে বন্ধ হলো সেটা। পিউ চোখ বড় বড় করে ফেলল এতে।
ধূসর একেবারে বিছানার ওপর বসে হাতখানা ছাড়ল। রিমোর্ট হাতড়ে এনে এসি চালাল। পাঞ্জাবির কলার ঝাঁকাতেই বেলি ফুলের কড়া সুবাস,আর ঘামের গন্ধ মিলিয়ে অন্য রকম সুঘ্রান আছড়ে পরল পিউয়ের নাকের ছিদ্রে।
ধূসর সহজ কণ্ঠে আদেশ করল,
‘ খাইয়ে দে।’
পিউ অবিশ্বাস্য চোখে চাইল। বিস্ময়ে কণ্ঠ শৃঙ্গে তুলে বলল,
‘ হ্যাঁ? ‘
ধূসর ভ্রু কোঁচকায়,শান্ত -শীতল কণ্ঠে বলে,
‘ কানে শুনিস না? খাইয়ে দিতে বলেছি। ‘
পিউ হতচেতন। নেত্রপল্লব পরছেনা। ঠিক শুনল সে?
ধূসর অধৈর্য কণ্ঠে বলল,
‘দিবি? না দিলে চলে যাই।’
মিছেমিছি ওঠার ভ*য় দেখাতেই পিউ ব্যস্ত হয়ে বলল,
‘ না না দিচ্ছি।’
মনে মনে বাকবাকুম করে লাফিয়ে উঠল সে। আনন্দে ভাষাহারা,নির্বাক। গত তিন বছর, প্রার্থনা করল,ধূসর ভাই ওকে খাইয়ে দেবেন। কতদিনের ইচ্ছে তার! অথচ আজ সে নিজে খাওয়াবে ওনাকে? আল্লাহ! এত সুখ এই ছোট্ট কপালে সইবে?
উত্তেজনায় পিউয়ের আঙুল কাঁ*পছে। সে দাঁড়িয়ে, ধূসর বসে। কোনও রকমে গরুর মাংসে ভাত মেখে তার মুখের সামনে ধরল সে। লজ্জায় তাকানো অবধি দুঃসাধ্য।
ধূসর আপোসে খেয়ে নিলো। কোনও জড়তা,সঙ্কোচ নেই সেখানে। তার পাতলা,নরম ঠোঁট পিউয়ের আঙুল গুলো অগাধ ভাবে ছুঁয়ে দেয়। অচিরেই মেয়েটার শরীর শিউরে ওঠে। পায়ের তলা অবধি শিরশির করে। মাথার তালু,কান, গাল গরমে ইটের ভাটার ন্যায় ধোঁয়া ছাড়ে। বুকের ভেতর শুরু হয় দুরুদুরু প্রেমময় বার্তা।
পিউ তুমুল বেগী, বক্ষস্পন্দন নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। প্রযত্নে নিজের উদ্বোলিত হার্টবিট ধামাচাপা দেয়। সময় যেন থেমে গেছে আজ। ভাত ফুরাচ্ছে না থালার।
ধূসরের খাবার চিবানোর শব্দ ছাড়া পুরো ঘর নীরব। কাজের তোপে সারাদিন না খাওয়ায়,বেশ খিদে পেয়েছিল। এতক্ষণ টের না পেলেও,পেটে দানা পরতেই টের পাচ্ছে।
পিউ শশব্যস্ত থাকার ভাণ করে। মোমের মত গলতে গিয়েও সজাগ হয়। এই পিনপতন শব্দের মাঝে তার হৃদকম্পন না শুনে ফ্যালেন উনি।
পুরো প্লেট খালি করতে বেশি সময় লাগেনি । শেষ লোকমা মুখের সামনে ধরতেই ধূসর এক অদ্ভূত কাজ করে বসল। হঠাৎ নিজেই পিউয়ের কব্জির কাছটা ধরল। মুখে পুড়ে, ভাত তো খেলোই সাথে আঙুল শুদ্ধ চেটে নিলো। পিউ স্তম্ভিত, স্তব্ধ। হাঁস*ফাঁস করে উঠল। অনুভূতির লেহনে চোখ খিঁচে বুজে ফেলল। ধূসর মিটিমিটি হেসে চোখ তুলে দেখল। পিউয়ের সমস্ত গাত্র স্রোতের মত বয়ে যায়। দোল খায় বসন্তে। কোনও রকমে হাত ছোটাতে গেলেও ধূসর ছাড়ল না। পিউ করূন চোখে তাকাল। তার পল্লব থেকে শুরু করে হাঁটুদুটোও কাঁপছে,টলছে।
কম্পিত কণ্ঠে বলল, ‘ ককী ককরছছেন?’
ধূসর নিশ্চুপ। ওমন চেয়ে থেকেই হাতটা ছাড়ল সে। পিউ চটপট টেনে বুকের কাছে নিয়ে এলো। নিঃশ্বাস ক্রমশ ভারি হচ্ছে তার। আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে নির্ঘাত মাথা ঘুরে পরে যাবে। এই প্রগাঢ় স্পর্শের রেশ এত সহজে কাটবে?
ধূসরের গভীর চোখে মাত্রাধিক ক্ষুরক্ষারতা মিশে। পিউ ছিন্ন*ভিন্ন হয়ে যায় অচিরে। ঘোলা,অশান্ত অক্ষিপটে একবার দেখতে চায়। দশটা কাঁ*পতে থাকা আঙুলে আকড়ে ধরে খালি প্লেট।
পরপর ছুটে বের হতে নিলেই ধূসর ডেকে উঠল,
‘ দাঁড়া।’
পিউ চাইছিল দাঁড়াবে না। শুনবেনা কথা। কিন্তু পদযূগল স্তব্ধ হয়ে থেমে গেল। অবাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে পরল। ফিরে তাকানোর সাহস হলো না। টর্নেডোর মত ঘুরছে হৃদয়।
ধূসর উঠে নিজেই এগিয়ে এলো। তার জুতোর শব্দ যত জোড়াল হয়,জোড়াল হয় পিউয়ের ধুকপুকানি। ধূসর একদম পিঠের সহিত মিশে দাঁড়ায়। কথাবার্তা ছাড়াই পিউয়ের পাতলা সুতির শাড়ি ভেদ করে প্রবেশ করে তার নিরেট,অনমনীয় হস্তখানি। তুলতুলে পেটে অত্যুষ্ণ স্পর্শে আরেক দফা থরথর করে কেঁ*পে ওঠে পিউ। অজ্ঞাত, নারী অনুভূতি জানিয়ে দেয়,কিছু ঘটতে যাচ্ছে নিশ্চিত।
চলবে।