এক সমুদ্র প্রেম পর্ব ৩৫+৩৬

0
1008

#এক_সমুদ্র_প্রেম!
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(৩৫)

সাদিফ, ধূসরের চেয়ে তিন বছরের ছোট। আর পুষ্প তার ছোট, পাঁচ বছরের। মধ্যকার গ্যাপটা ধূসরের অতিকায়,স্বভাবে সে নিরেট, এত সব কারণে পুষ্প তার সাথে মিশেছেও কম। কথাটা সে মিশেছে বললে ভুল হবে,তার বারো বছর বয়স থেকেই ধূসর বাড়িতে থাকেনি। বোধশক্তি হবার পর কাছে পেয়েছে সাদিফকেই। ধূসর দেশে ফিরতেই রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হলো। বাপ-চাচাদের সাথে চলল তার ঠান্ডা, বরফ যু*দ্ধ। বাড়িতে থাকতো কম,আসতো কম। এইসবের মাঝে পিউ-পুষ্পর মনে নিজের জন্যে জায়গা করল প্রবল আ*শঙ্কার।
পিউ লক্ষ্য-কোটি ধম*ক খেলেও সে খেয়েছে হাতে গোনা। যা না ধরলেও চলে। কিন্তু ধূসরের গা ঝাড়া ধরনের চলাফেরা,বাবা- চাচার মুখের ওপর জবাব দেয়া, তার বিরাট হস্তের যোগাযোগ ব্যবস্থা, এসব দেখে সে নিজেই ভ*য়ে সিটিয়ে থাকতো। জড়োতা আর সঙ্কোচে ধারে-কাছে ঘিষতোনা।
তাদের মধ্যে আজ অবধি নিজেদের নিয়ে কথা হয়নি। যা কথা,যত কথা সব পিউ সম্পর্কে,ওকে নিয়ে।

অন্যদিকে সাদিফের সঙ্গ ছিল ঠিক তার বিপরীত । দুজনের মেলবন্ধন চমৎকার । এই কথা বাড়ির প্রত্যেক সদস্যই মেনে নেবেন। ওদের মধ্যকার দারূন সম্পর্কে প্রভাবিত হয়েই তো জবা বেগম এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তেমনই সাদিফের প্রতি পুষ্পর ভরসা ছিল। আস্থা ছিল,ছিল বিশ্বাস। তার এমন সংকীর্ণ সময় সবার প্রথমে সে পাশে দাঁড়াবে এমনই ছিল ধারণা। সেজন্যেই সাহস করে মনের কথা সবার আগে তাকে জানিয়েছে। অথচ ফিরল শূন্য হাতে, রিক্ত মস্তকে। এইভাবে সাদিফ ভাই আশাহত করবেন সে কল্পনাও করেনি। এতটা স্বার্থপর তিনি হতে পারলেন? এখানে অন্য কেউ হলেওতো,সাহায্য করতেন। যদি কেউ অবগত হয়,সে যাকে বিয়ে করবে তার মনের রাজ্যে অন্য কারো প্রভুত্ব চলছে,তারপরেও সে মানুষ কী করে নির্লিপ্ত থাকে? সাদিফের প্রতি অভিমান, ক্ষো*ভে তার ভেতরটা বির্বজিত হয়। নিদারূন ঘৃনায় শিরশির করে শরীর।
ছুটে এসে ঘরের দোর চাপায় সে। অদ্ভূত,উৎকট শব্দের উদ্ভব হয় তাতে। পুষ্প দৌড়ে গিয়ে, হুমড়ি খেয়ে বিছানার গায়ে লুটিয়ে পরল। হাউমাউ করে কাঁদল। ভাগ্য এরকম কেন? সে চেয়েও কেন কিছু করতে পারছে না? কার কাছে যাবে,কার কাছে সাহায্য চাইবে? মাথাটা এত এলোমেলো লাগছে কেন?

তার মন বলছে একবার ধূসর ভাইয়ের দ্বারপ্রান্তে যেতে। মানুষটা যে কোনও অংশেই সাদিফ ভাইয়ের মত নন,সে জানে। কিন্তু, ওই যে ভ*য়! পারছেনা। সঙ্কোচ,ত্রাস,ঘিরে ব*ন্দী করেছে তাকে। আ*তঙ্ক দাপ*ট চালাচ্ছে বক্ষে। পুষ্প নিজেকেই দোষারো*প করছে আজ,কেন সে ভাইয়ের বন্ধুকে ভালোবাসতে গেল? কেন জড়াল সম্পর্কে?
ঠিক সেই সময় ফোন বাজল। পুষ্পর কা*ন্না কমছেনা। লাগাতার রিংটোনের শব্দ একটা সময় বাধ্য করল মুখ তুলতে। নিরন্তর আওয়াজে সে চোখ তোলে। বালিশের পাশে রাখা ফোনের স্ক্রিনে চোখ বোলায়। অচেনা,তবে পরিচিত সেই নম্বরের ডিজিট গুলো তার বক্ষে উত্থাল-পাতাল শুরু করে নিমিষে।
পুষ্প চোখ মুছে উঠে বসল। রিসিভ করে বলল ‘হ্যালো।’
ওপাশের মানুষটি উত্তে*জিত। ধৈর্যহীনতায় খেয়ালও করল না প্রেয়সীর ভগ্ন স্বর। উলটে রে*গে-মেগে বলল,
‘ কোথায় ছিলে এতক্ষণ? কতক্ষণ ধরে ফোন করছি আন্দাজ আছে তোমার? কটা বাজে দেখেছো পুষ্প? ব্যস্ত থাকলে আমাকে একবার জানাবে না? আশ্চর্য মেয়ে তো তুমি!’ ‘

পুষ্পর মন-মানসিকতা ভালো না। তার মধ্যে ইকবালের চোট*পাট মেজাজ বিগড়ে দেয়। রীতিমতো ব্রক্ষ্মতালু অবধি দাউ*দাউ করে জ্ব*লে উঠল। হিতাহিতজ্ঞান ভুলে বলল,
‘ সমস্যা কী তোমার ইকবাল? যাস্ট কয়েকবার ফোন করে মাথা কিনে নিয়েছো আমার? এভাবে কথা শোনাচ্ছো! আমিত বলেছি,আমি নিজে কল না দিলে রাতে আমাকে কল দেবেনা। তাও নির্লজ্জের মত একই কাজ করছো। উঠতে,বসতে,গি*লতে সবেতে তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হয়। আমার জীবন নিজের মত চালানোর স্বাধীনতা আমার আছে। তাহলে তুমি ডোমি*নেট করবে কেন? কে তুমি? ‘

ইকবাল থমকে গেল কথাগুলোয়। পুষ্পর মত নম্র মেয়ের মুখে এমন কিছু শোনাও কল্পনাতীত। বিহ্বল হয়ে বলল,
‘ আমি তোমাকে ডোমি*নেট করছি পুষ্প?’
পুষ্প মুখের ওপর বলে ফেলল,
‘ হ্যাঁ করছো। রীতিমতো ট*র্চার বলে এটাকে। তোমার জন্যে আমার লাইফটা হ্যে*ল হয়ে যাচ্ছে ইকবাল। প্লিজ,লিভ মি আলোন। অসহ্য!’
ইকবাল বিস্ময়াহ*ত, স্তব্ধ। অনাকাঙ্ক্ষিত বাক্য গুলোয় থিতিয়ে গেল হৃদয়। পুষ্প দুম করে লাইন কে*টেছে,অথচ সে কথা বলতে পারছে না। শব্দবাক্য খুঁইয়ে ওভাবে অনড় সেজে,একভাবে বসে রইল। নিজেকেই শুধাল,
‘ আমি সত্যিই পুষ্পকে ট*র্চার করছি?’

পুষ্প অনুতপ্ত। পরিতাপে ডু*বে মর*ছে এখন। ইচ্ছে করে বলেনি ওসব। জ্ঞানহীন হয়ে,ভুল করে রা*গ থেকে বেরিয়ে এসেছে। সাদিফের ক্ষোভটাই ঝেড়ে ফেলেছে ইকবালের ওপর। আর বোঝার পর কা*ন্না বেড়েছে আরো। না জানি ইকবালটা কত ক*ষ্ট পেল! ক্ষমা চাওয়া দরকার। তার ভুলের বোঝা ও কেন বইবে? সে তড়িঘড়ি করে আবার ডায়াল করতে যায় ইকবালের নম্বরে।
এর আগে,আচমকা কাঁধে পেল উ*ষ্ণ, নরম হাতের স্পর্শ। সে চকিতে তাকাল। পিউকে দেখতেই স্ক্রিন বন্ধ করে ফোন রেখে দিলো পাশে। হন্তদন্ত ভাবে চোখ মুছে,হাসার চেষ্টা করে বলল,
‘ কখন এলি?’
পিউ মনোযোগ দিয়ে বোনের মুখস্রী দেখল। কয়েক ঘন্টায় কেঁ*দে কী বেহাল অবস্থা হয়েছে! গোলাপি গাল দুটো ফ্যাকাশে এখন।
এসব দেখে পিউয়ের বুকে ব্য*থা করে। খা*রাপ লাগে।
সে শান্ত গলায় বলল,
‘ ইচ্ছে করলেই অনেক কিছু লুকিয়ে রাখা সম্ভব। কিন্তু কোথাও না কোথাও তার চিহ্ন রয়ে যায়। এই মুহুর্তে তোর চোখের জলটা ঠিক সেরকমই। ‘

পুষ্প বোনের মুখের দিকে হা করে চেয়ে থাকল। কথাটা পিউয়ের ব্যক্তিত্বের সম্পূর্ন বিপরীত। তার চপল, চঞ্চল, বোনের এমন ভারি কথা তাকে বিস্মিত, বিভ্রান্ত করে।

পিউ জেনে-শুনেও শুধাল
‘ কাঁদছিলি কেন?’
পুষ্প দুদিকে মাথা নেড়ে মিথ্যে বলতে গেল। এর আগেই পিউ প্রশ্ন ছুড়ল,
‘ তুই ইকবাল ভাইয়াকে ভালোবাসিস, তাইনা?’
পুষ্প চমকে যায়। ভূত দেখার মত বিকট চোখে তাকায়,
‘ ততুই… তুই কী করে জানলি? ‘
পিউ স্মিত হাসে,
‘ কেন? তুই না বললে বুঝি জানার উপায় নেই?আকাশে চাঁদ উঠলে কতক্ষণ লুকিয়ে রাখা যায় আপু?’

তার কণ্ঠে আদ্র অভিমান। হলদেটে মুখটাও অনুরা*গে কালো।
পুষ্প মাথা নামিয়ে নিলো। ছোট বোনের কাছে ভালোবেসে ধরা পরার পরিস্থিতি হয়ত সবচেয়ে বিব্রতকর।
আস্তে করে জবাব দিল,
‘ ভ*য় পাচ্ছিলাম। যদি বাবা বা ধূসর ভাইয়ার কানে যায়! তাই চেয়েও কাউকে বলতে পারিনি রে।’

বলতে বলতে তার চোখের টলমলে জল উপচে আসে। ক ফোঁটা গাল অবধি এসে থেমে যায়। পিউ তুলতুলে হাতে মুছিয়ে দিয়ে বলল,
‘ কাঁ*দলে কি সমাধান হবে? ভা*ঙতে পারবি বিয়েটা?’

পুষ্প ব্যাকুল কণ্ঠে বলল,
‘ কী করলে পারব? তুই একটা কিছু উপায় বল না পিউ।আমি সাদিফ ভাইয়ার কাছেও গিয়েছিলাম জানিস?ওনাকে বলেছি। অথচ সব শোনার পর উনি জানিয়ে দিলেন কিছুই করতে পারবেন না।’

পিউ খুব বির*ক্ত হলো। কপাল কুঁচকে বলল,
‘ সাদিফ ভাইয়ের কাছে কেন যাবি? উনি যে কিছু করবেন না সেতো জানা কথা।’
পুষ্প বুঝতে না পেরে বলল,
‘ কেন?’
‘ কেন আবার? ওনার তোকে পছন্দ,আর দ্বিতীয়ত উনি এ বাড়ির বাধ্য,ভদ্র সন্তান। কোনও দিন দেখেছিস? কারোর মুখের ওপর না বলেছে? ‘

তার প্রথম কথাটুকু পুষ্পর মাথায় তুখোড় ভাবে ঢুকল। প্রগাঢ় বিস্ময়ে মিলিয়ে গেল কপালের গুটিকয়েক ভাঁজ। সাদিফের ওকে পছন্দ? কই, সেত কোনও দিন বোঝেনি। হাবভাব,তাকানোর ধরন দিয়েওতো নারীগুনে বোঝার কথা। ভ্রান্ত হয়ে বলল,
‘ তোর কোথাও ভুল হচ্ছে,সাদিফ ভাই আমাকে কেন পছন্দ করবেন?’
‘ কেন করবেন না? তোর মতো সুন্দরী মেয়েকে পছন্দ করাতো অস্বাভাবিক নয়। ‘

‘ কিন্তু… ‘
পিউ মৃদূ চেঁ*তে বলল,
‘ আজব! তোকে পছন্দ করেন না তো কী আমাকে করেন?’
সে ভ্রুঁ বাঁকায়,
‘ আমি তা কখন বললাম?’
‘ তাহলে আমি যা বলছি তাই শোন। উনি যে তোকে পছন্দ করেন, এটা আমি আরো আগে থেকে জানি।’

‘ করলে করুক। আমার যায় আসেনা। ইকবাল ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করতে পারব না,ম*রেই যাব।’
পিউ প্রতিবাদ করল,
‘ ছি! এসব বলে না। ‘
পুষ্প আবার কেঁ*দে ফেলল। শরীর ভে*ঙেচূড়ে এলো কান্নায়।
পিউ বিমর্ষ নেত্রে চেয়ে থাকে। মনঃদ্বিধায় ভোগে। ধূসর ভাইতো কিছু বলতে মানা করেছেন। কিন্তু সে পারছেনা হাত গুঁটিয়ে বসে থাকতে। ইতোমধ্যে হাজার বার বোনের ঘরে উঁকিঝুঁকি মে*রেছে। এতটা সময়ে পুষ্পর কা*ন্নাকা*টি স্বচক্ষে দেখেছে। শেষ মেষ নিজেকে রুখতে বিফল হয়েই তো হাজির হলো এখানে। আর এত কিছুর পর তার পক্ষে চুপচাপ থাকাও অসম্ভব।
সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ খুলল,
‘ ধূসর ভাইকে বলে দ্যাখ।’

পুষ্পর কা*ন্না বিদ্যুৎ বেগে থেমে যায়।
হতবাক হয়ে বলে,
‘ কী বলছিস?’
পিউ মাথা দোলাল,
‘ ঠিকই বলছি। এই সময় তোকে যদি কেউ বাঁচাতে পারে তবে উনিই পারবেন।’
পুষ্প ঘন ঘন মাথা নেড়ে আওড়াল,
‘ না না। উনি জানলে আমায় মে*রেই ফেলবেন। ইকবাল বলেছিল ভাইয়াকে আস্তে-ধীরে বোঝাবে। হঠাৎ আমার মুখে এসব শুনলে উনি কী না কী ভাববেন। ওনাদের বন্ধুত্বটাও নষ্ট হবে। আমি এসব কী করে হতে দেই পিউ?’

বোনের আকুল,ব্যগ্র, চিন্তিত চোখমুখ দেখেও পিউয়ের হাসি পেলো। বোকা মেয়েটা তো জানেনা,ধূসর ভাই আগেই সব জেনে বসে আছেন।

সে প্রযন্তে হাসি চে*পে রাখল। চেহারায় রা*গী রা*গী ভাব ফুটিয়ে বলল,
‘ এত কিছু প্রেম করার বেলায় মনে ছিল না?’
পুষ্প নাক ফুলিয়ে বলল,
‘ বড়দের মত কথা বলবি না।’
পিউ ফুঁ*সে উঠল,
‘ তাহলে কী করব? কেঁ*দেকে*টে এইটুকু সময়ে কী অবস্থা করেছিস চেহারার? ইকবাল ভাইয়াকেও যা নয় তাই শোনালি। দোষ কি তোর না ওনার? নিজে কিছু সামলাতে পারিস না। ভালোর জন্য বলছি,যদি জীবনে ইকবাল ভাইকে পেতে চাস,তবে ধূসর ভাইকে গিয়ে বল। এছাড়া আর উপায় নেই। আর যদি না পারিস তাহলে বসে থাক। একটু পর খেতে ডাকবে,পেটপুড়ে খেয়ে এসে আবার কাঁ*দিস। বাকী জীবনে কাঁ*দার কথাতো বাদই রইল। আমি আর এসবে নেই। যা মন চায় কর গে। যত্তসব!’

হড়বড় করে ভেতরের রা*গ, ক্ষো*ভ উগলে দিলো পিউ। পেটটা ভীষণ ক্রোধে ফাঁটছে। ভালোবাসার আগে এসব মাথায় থাকেনা এদের? বিয়ের কথা উঠলেই হাজারটা চিন্তা দেখা দেয়। কই, সেতো এরকম নয়। ধূসর ভাইকে ভালোবেসেছে যখন,পৃথিবীর সাথে লড়া*ই করতেও সে প্রস্তুত। তবুও ওই মানুষকেই চাই ওর। জীবন দিয়ে হলেও চাই। বোনের ওপর রা*গে গজগজ করে বেরিয়ে গেল সে। পেছনে রেখে গেল মর্মা*হত পুষ্পকে। মেয়েটা নির্বোধ,নিহ*ত চোখে বোনের যাওয়া দেখল। বিভ্রমে মস্তিষ্ক শুষ্ক। কী করবে, জানেনা। প্রচন্ড সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
ধূসর ভাইয়ের কাছে যাবে? অথচ সাহসে কূলোচ্ছে না।

কিন্তু পিউয়ের কথাগুলো ক্রমশ মাথায় ঘুরছে। মনে হচ্ছে সেই ঠিক। এই বাড়িতে বো*ম ব্লা*স্ট করার মত দুঃ*সাহস ওই একজনেরই আছে । নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাকে নড়ানোর সাধ্যি এ বাড়ির কারোর নেই। সিকদার বাড়ি যার ভ*য়ে তটস্থ থাকে সেই আমজাদ সিকদার অবধি বহুবার সারেন্ডার করেছেন তার সিদ্ধান্তের নিকট। সে মানুষটি ধূসর ভাই। একবার ওনাকে বলেই দেখা যাক না! ভাগ্য সহায় হলেও তো হতে পারে।

পুষ্প দোনামনা করে উঠে দাঁড়াল। বিচলিত ভঙিতে দরজা অবধি গিয়ে আবার ফিরে এলো। ওড়নার কোনাটা আঙুলে প্যাচাতে প্যাচাতে দাঁড়িয়ে রইল। পিউয়ের বলে যাওয়া ,
‘ বাকী জীবনতো কাঁদার জন্য বাদই রইল।’
সে আঁ*তকে উঠল কথাটা মনে পড়তেই। এক বিন্দু মিথ্যে নেই এতে। ইকবাল কে না পেলে ম*রার আগ অবধি সে কাঁদ*বে। হাহা*কার করবে। তার থেকে ধূসর ভাইয়ের মুখোমুখি হওয়াও ঢেড় ভালো। পুষ্প দোয়া ইউনিস পড়ে বুকে ফুঁ দিলো। বুক ফুলিয়ে,দৃঢ় চিবুকে বাইরে গেল। উদ্দেশ্য, ধূসর ভাইয়ের কক্ষ। যা হবার হবে। হয় এসপাড় নয় ওসপাড়।

ঠিক ধূসরের রুমের সামনে এসে ব্রেক কষল সে। পুনরায় বিড়বিড় করে দোয়া পড়ল। সহস্র ঝাড়ফুঁকে ভরিয়ে ফেলল বুকটা। এই ছোট্ট জীবনে ধূসরের শ*ক্ত হাতের চ*ড় খাওয়ার দূর্ভাগ্য তার হয়নি। আজ হয়ত সেই রেকর্ডটাও ভে*ঙে যাবে। হয়ত কি? ভা*ঙবেই ভা*ঙবে। কথাটা শোনামাত্র ধূসর ভাই এমন ভাবে থা*বড়া দেবেন সে উলটে পরবে। জ্ঞান ও হারিয়ে ফেলতে পারে কয়েকবার।
পুষ্প ছাদের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করল,
‘ ইয়া মা’বূদ! এবারের মত বাঁচিয়ে নাও।’

ধূসরের ঘরের দরজা চাপানো। পুষ্প আস্তে করে ঠেলল। মাথাটা ঢুকিয়ে উঁকি দিল। ধূসর উল্টোঘুরে কথা বলছে ফোনে। তার মেজাজ ভালো না। রাজনৈতিক ব্যাপার স্যাপারে মাথা গ*রম। ওপাশের ব্যক্তিটি অনর্গল কথা বলছে। ধূসর এক ফাঁকে ধম*ক দিল,
‘ এত বেশি বুঝতে কে চলেছে তোকে? রাবিশ! আমাকে জিজ্ঞেস না করে কোনও কাজে হাত দিবিনা। ‘
পুষ্পর সঞ্চিত সাহস ওমনি ফুস করে উড়ে গেল। কলিজা ছলাৎ করে ঝাঁ*প দিলো কূয়োয়। তড়িৎ বেগে মাথাটা বাইরে বের করে আনল আবার।

ধূসরের একেকটা উঁচু কণ্ঠে বুক ধড়াস ধড়াস করছে তার। এদিক সেদিক,দ্বিগবিদিক লাফাচ্ছে। অনবরত চলছে কাঁ*পা-কাঁ*পি। না বাবা,এখন গিয়ে লাভ নেই। ধূসর ভাইয়া এমনিই রে*গে আছেন। পরে আসবে না হয়। সে কেবল পা বাড়াল প্রস্থান নিতে,সেই মুহুর্ত গম্ভীর ডাক ভেসে এলো,
‘ পুষ্প?’
তার চোয়াল ঝুলে যায়। কদম স্থিতি পায় সেখানে। অক্ষিযূগল প্রকট হয়। ধূসর ভাই দেখে ফেলেছেন?
ঘনঘন জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কোনও মতে উত্তর দেয়,
‘ জজি।’
‘ ভেতরে আয়।’
পুষ্পর গলা শুকিয়ে গেল।
ঢোক গি*লতে গি*লতে মৃদূ হস্তে দরজা ঠেলল। ভেতরে ঢুকল বিনম্র পায়ে।
ধূসর কান থেকে ফোন নামায়। লাইন কে*টে টেবিলের ওপর রেখে শুধায়,
‘ কিছু বলবি?’
সে জোরে জোরে দুপাশে মাথা নাড়ল। বোঝাল ‘ না’। ধূসর দৃষ্টি চোখা করে বলল,
‘ তাহলে ওখানে কী করছিলি?’

‘ এমনি, দা দাঁড়িয়ে ছছিলাম।’
ধূসর মেঘমন্দ্র কণ্ঠে বলল,
‘ এমনি দাঁড়ানোর জন্য আমার রুমটাই পছন্দ হলো?’
পুষ্প জবাব দিতে পারল না। তার সংকুচিত মুখচোখ ধূসর তীক্ষ্ণ নেত্রে দেখল। ঘুরে পানির গ্লাস তুলে মুখের সামনে ধরতে ধরতে বলল,
‘কিছু বলার থাকলে বল।’

পুষ্পর ঢোক গে*লার মাত্রা বাড়ছে। হাঁটু দুটো ভূমিক*ম্পের মতো কাঁপ*ছে। যেন এক্ষুনি ধ্ব*সে পরবে দেয়ালের ন্যায়। কপাল,নাক ঘামে একাকার। শ্বাস প্রঃস্বাস চলছে দ্রুত।

কিন্তু না, আজকে বলতেই হবে। অনেক হয়েছে লুকোচুরি। সে নিজেও এখন বিশ্বাস করে,এই সমস্যার সমাধান একমাত্র ধূসর ভাইয়াই।
পুষ্প চোখমুখ সুদৃঢ় করল।
সাদিফের সহিত বিয়ে,ইকবালের বিবর্ন মুখবিবর,তাদের বিচ্ছেদ এসব মাথায় আসতেই তার বক্ষস্পন্দন থমকায়। দৈব দুঃসাহস ভর করে সেখানে। মন,মস্তিষ্ক সজাগ, সচেতন হয়। নিজেই নিজেকে সাহস যোগায়,
‘ আজ বলতেই হবে পুষ্প। মা*র খেলে খাবি,ম*রে তো যাবিনা।’

ধূসর তাগাদা দিল ‘ কী? বলবি না দাঁড়িয়ে থাকতে এসছিস?’
পুষ্প তাকাল। তাড়াহুড়োতে মেরুদণ্ড সোজা করল। ফটাফট মুখ খুলল,
‘ আমি বিয়ে করব না ভাইয়া।’
ধূসর ভ্রুঁ উঁচায়,
‘ কেন? বিয়েতে কী সমস্যা? ‘
পুষ্প নিশ্চুপ। সে নিজেই বলল,
” সাদিফ তো ভালো ছেলে। তাছাড়া বিয়ের পর তোকে অন্যের বাড়িতেও যেতে হচ্ছেনা। ”

পুষ্প মাথা নামিয়ে নিলো। ভেজা কণ্ঠে বলল,
‘ আমি এসব কিছু চাইনা।’

ধূসরের বিলম্বহীন প্রশ্ন ‘ তাহলে কী চাস?’
পুষ্প নিরুত্তর। ভেতরে দ্বিধাদ্ব*ন্দের পাহাড়টা তখনও দৃশ্যমান। ধূসরের সাথে সামান্য আলাপ যেখানে হয়নি কখনও, সেখানে এসব নিয়ে আলোচনা করা ক*ঠিন। ভ*য়ের পাশাপাশি গাঢ় অস্বস্তিতে অন্তঃপুট ডুবু*ডুবু।
সে প্রয়াস চালায় দ্রুত বলার। কিন্তু ধূসরের সামনে জ্বিভ থেকে কথাটা বের করাই দুঃসাধ্য যেন।
বহু ক*ষ্টে, টেনেহিঁ*চড়ে শব্দ আনল ভেতর থেকে। জানাল,
‘ আমি অন্য কাউকে পছন্দ করি, তাকে চাই।’
বলতে বলতে গলা ভে*ঙে এলো তার। বুজে গেল কণ্ঠ।
শোনা গেল ধূসরের ভারী স্বর
‘ কাকে?’
পুষ্পর বুক কাঁ*পুনি বৃদ্ধি পায়। সীমানা ছাড়ায় আকাশ-বাতাস ।
ভীষণ আত*ঙ্কে, কাঁ*পতে কাঁপ*তে খিঁ*চে নেয় চোখ। গড়গড়ে ভঙিতে জানায়,
‘ ইকবাল কে।’
‘ কী?’
ধূসরের চমকিত, চকিত আওয়াজ। পুষ্প ভ*য় পেলো, গুটিয়ে গেল। তাকিয়ে মুখোমুখি হলো এক জোড়া নিরেট,শীতল চাউনীর। গ্রা*সে অর্ধডু*বন্ত অবস্থা তখন। শ্বাসরুদ্ধ*কর পরিস্থিতি। অবিন্যস্ত জ্ঞানশক্তিতে অচিরাৎ ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলল সে। কে*দেকে*টে অস্থির,অসহায় কণ্ঠে বলল,
‘ ওর কোনও দোষ নেই ভাইয়া। সব দোষ আমার। ওকে তুমি কিছু বোলোনা।’

ধূসর চোখমুখের পরিবর্তন হলো না। অনমনীয়তা পরতে পরতে। ভাইয়ের কাছে ছোট বোন ভালোবাসার কথা জানাতে এলে যেমন থাকা দরকার, ঠিক তাই।
অথচ দরজার আড়াল থেকে নাকমুখ কোঁচকায় পিউ। ধূসরের প্রতি কটমট করে ভাবে,
‘ এই লোকটা আস্ত একটা বদ! সব জেনেশুনেও আমার বোনটাকে কাঁ*দাচ্ছে কেন?’

ধূসর গুমোট,গুরুভার কণ্ঠে বলল,
‘ তোরা আমার আড়ালে এসব করছিস তাহলে? কতদিন ধরে চলছে?’
পুষ্পর কান্না বাড়ল। কম্পিত স্বরে জানাল,
‘ দু বছর। ‘
‘ এখন আমার কাছে কেন এসছিস? বি*পদে পড়ে তাইত? আজকের এই পরিস্থিতি না এলে আজও বলতিনা নিশ্চয়ই। ‘

পুষ্পর হৃদয়পুরে আমাবস্যা নামল। অপ*রাধবোধ হানা দিলো ভেতরে। মুখমণ্ডল ছেঁয়ে যায় কৃষ্ণবর্ন কাদম্বীনিতে। হতা*শায় কালো মুখখানা কালবৈশাখির ন্যায় আঁধারে মেলালো। কথাটুকুন ছু*ড়ির ন্যায় বুকে বিঁ*ধল। ধূসর যেন বলেনি,প্রকাশ করেছে বোন আর বন্ধুর প্রতি তার আকাশসম অভিমান।
পুষ্প ছুটে এসে ধূসরের পায়ের কাছে বসে পরল। সে চমকে,ভড়কে পিছিয়ে গিয়ে বলল,
‘ কী করছিস?’

পুষ্প থামল না। হুহু করে কেঁ*দে বলল,
‘ আমাকে ক্ষমা করে দিন ভাইয়া। আমি জেনেবুঝে এরকম করিনি। আপনার ভ*য়েই সবটা লুকিয়েছিলাম। বিশ্বাস করুন।’

পিউয়ের কা*ন্না পেয়ে গেল বোনের অবস্থা দেখে। চোখে টলটলে জল। ইশ! ভালোবাসলে মানুষ কত কী করে?
সে উদ্বীগ্ন চোখে ধূসরের দিক তাকিয়ে থাকে। আপুটা কীভাবে কাঁ*দছে! উনি কেন বলছেন না কিছু?

এতটা সময় চোখমুখ পাথরের ন্যায় শ*ক্ত রাখার চেষ্টায় ছিল ধূসর। পুষ্পর কা*ন্না দেখে নরম হলো পেশী।
দুপাশে মাথা নেড়ে ফোস করে শ্বাস ফেলল। পুষ্পর দুবাহু ধরে দাঁড় করিয়ে বলল,
‘ সামান্য কারণে এত কাঁ*দার কী আছে? আমি কিছু বলেছি তোকে?’

পুষ্পর হেঁচকি উঠেছে। ধূসর ফিনফিনে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ চোখ মোছ।’
পুষ্প নিলো। কিন্তু মুঠোয় মুচ*ড়ে ধরে রাখল। তার ভেতর সহ মাথাটাও নুইয়ে আছে কুন্ঠায়,অভিশঙ্কায়।

ধূসর বলল,
‘ বিয়ে করবিনা,তখন বললেই পারতি। ভালোবাসলে বুকে সাহস রাখতে হয়। ভীতুরা কখনও ভালোবাসতে পারেনা।’

পুষ্প কিছু বলতে চায়। হেঁচকির দমকে কথা ফোটেনা। নাকের জল,চোখের জলে চেহারাটা একশেষ। পিউয়ের মায়া হলো খুব।
ধূসর গ্লাসে পানি ঢেলে এগিয়ে দিলো। সে হাতে নিতেই অনতিবিলম্বে ফাঁকা হলো গ্লাস। নিজেকে সামলাতে দেরী হয়। ধূসর তাড়া দেয়না,স্থির থাকে। আত্মস্থ হতে সময় দেয় ওকে।
পুষ্প ঠিকঠাক হয়ে,অনুতাপ নিয়ে বলল,

‘ আমি বুঝতে পারিনি ভাইয়া। ভুল হয়ে গিয়েছে।’
‘ এখন কী চাইছিস?’

‘ সবাইকে একটু বোঝাবেন?’
তার ভীত,সংশ*য়ী আবেদন। সাদিফের মত ধূসর ভাইও না বলবেন কী? তবে যে ওর একূল ওকূল দু-কূলই শেষ। তার বিভ্রমের মাঝে জবাব এলো,
‘ বোঝাব। ‘

পিউয়ের ঠোঁট দুদিকে সরে গেল তৎক্ষনাৎ। রীতিমতো বড় বড় চোখ ছোট হয়ে এলো হাসিতে। পুষ্প অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলল,
‘ সত্যি বোঝাবেন ভাইয়া?’

ধূসর এ পর্যায়ে হাসল।
বলল ‘ হু।’
পুষ্পর চাউনীতে অগাধ শ্রদ্ধা লেপ্টে গেল। পরমুহূর্তে কা*ন্না পেল। অধরযূগল ভে*ঙে এলো তাতে। এতগুলো দিন অযাচিত ভ*য়ে গুটিয়ে ছিল সে। ভাইয়া কত ভালো মানুষ! একটুতেই বুঝে ফেললেন। আর সে কী না!
তার র*ক্তাভ আঁদল দেখেই
ধূসর হুশিয়ারি দিলো,
‘ আমি না যেন এ নিয়ে তোকে আর কাঁ*দতে না দেখি। ‘

পুষ্প মাথা কাত করল। চোখে জল এলেও সামলে নিলো তা। এতটা সময়ের পান্ডুর মুখমন্ডলে এখন চকচকে ভাব স্পষ্ট। ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার একটুখানি আশা,পথ্যের ন্যায় একজন অসুস্থ মানুষের রো*গ সাড়ানোর ক্ষমতা রাখে হয়ত।

ধূসর একটু ভেবে বলল,
‘ ইকবাল কে বলবিনা আমি জানি। আর আমি না বলা অবধি এই বিষয়ে ওর সাথে কোনও আলোচনা করবি না।’
পুষ্প সামান্যতম দ্বিরুক্তি করল না। বিনাবাক্যে মেনে নিয়ে বলল,
‘ ঠিক আছে ভাইয়া। ‘
‘ যা। ‘
পুষ্প উলটো ঘুরতেই পিউ সরে গেল। সে আবার ফিরে তাকায়। দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে বলে,
‘ সব ঠিকঠাক হবে তো?’

ধূসর উত্তর দিলো না। অথচ তার চাউনী দেখেই পুষ্প নিজে নিজেই বলল,
‘ না না হবে। জানি আমি, হবে।’

এরপর খুব দ্রুত ঘর ছাড়ল সে।
ধূসর বিড়বিড় করে বলল ‘ কেউ কারো থেকে পিছিয়ে নেই। দুই বোনই সমান সমান গাধা।

পিউ দেয়ালের সাথে লেপ্টে থাকায় পুষ্প খেয়াল করেনি। সে আনন্দ সমেত ঘরে ঢুকে যায়। পিউ হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। বোনের খুশিতে তার মুখমণ্ডলও উজ্জ্বল। মনে মনে স্বস্তি পেল ধূসরের কথায়। ওনার ওপর অগাধ বিশ্বাস যে! পিউ বুক ভরে শ্বাস নেয়। চোরাপথে আরেকবার উঁকি দেয় ধূসরের কামড়ায়। বুঝতে চায় তার পরবর্তী পদক্ষেপ। মানুষটার অভিব্যক্তি। কিন্তু দেখা যাচ্ছেনা কেন? কোথায় তিনি?
সে আরেকটু এগোয়। দরজায় দুহাতের ভর দিয়ে পুষ্পর মত মাথাটা ঢোকাতে যায়। অকষাৎ দরজা টান মে*রে খুলে ফেলল ধূসর। পিউ হো*চট খেল। ব্যর্থ হলো নিজেকে সামলাতে। রীতিমতো হুম*ড়ি খেয়ে পরে গেল মেঝেতে। হকচকাল,হতভম্ব হলো। ধূসরের সটান দাঁড়ানো দুটো পা এসে ভিড়েছে তার সম্মুখে। পিউ কনুইয়ে ব্য*থা পেয়েছে। হাত দিয়ে আহ*ত স্থান ডলতে ডলতে পা থেকে চোখ নিয়ে ধূসরের মুখের ওপর ফেলল।
তার শৈলপ্রান্ত বেঁকে আছে। তামাটে চিবুক অভঙ্গুর। সে তাকাতেই পুরূ ভ্রুঁ নাঁচিয়, নিম্নভার কণ্ঠে বলল,
‘ অন্যের ঘরে আড়িপাতার জন্য তোকে ঠিক কী শা*স্তি দেয়া উচিত ?’

চলবে।

#এক_সমুদ্র_প্রেম!
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(৩৬)

স্বভাবে মুখচোরা মানুষগুলো সমাজে সবথেকে বড় অসহায়। তারা নিজেদের জন্য মুখ ফুটে কখনওই কিছু চাইতে পারেনা। সোজাসুজি মনের কথা জানাতে সর্বদা বিফল তারা। আমার এটা চাই,ওটা লাগবে,এটা দরকার,নাহলে হবেনা,এরকম বাক্যগুলো ওদের জন্য নিষিদ্ধ, অস্বাভাবিক। যে একবার অন্তর্মুখী হয়,সে নিজের সীমারেখা থেকে বাইর আসতে শেখেনি। ঠেলেঠুলেও আনার সাধ্য নেই।
এরা কিছু বিশেষ মানুষের সঙ্গে মেশে,তাদেরকেই ভালোবাসে সবটুকু দিয়ে।
আজ সেই কাতারে তবে সাদিফও পরল?
সে টানটান ভাবে লেপ্টে বিছানায়। মাথার ওপরে রাখা আড়াআড়ি হাত। নেত্রযূগল নিবদ্ধ সম্মুখে লাগানো সাদা এসিটার ওপর। চোখে ঘুম নেই, মনে শান্তি নেই।
সমস্ত মুখজুড়ে বিষাদের চিহ্ন। আঁকিবুঁকি করছে হতাশা,বেদনা। এক জীবনে অনেক কিছু পেয়েছে সে। পাওয়ার খাতা ভর্তি ছিল আদরে,স্নেহে,আহ্লাদে,ভালোবাসায়। এতদিন অবধি জীবন নিয়ে ছিল যথেষ্ট হৃষিত। কী পায়নি? স্কুল,কলেজে ভালো রেজাল্ট করেছে। নিজের প্যাশন ফলো করে হয়েছে সাকসেসফুল। ভালো ছাত্র ও আদর্শ ছেলের ব্যাকরণ মানা লক্ষীমন্ত ছেলে সে। যতটা ভালো হলে পাড়ার মহিলারা তাদের মেয়ের জামাই করতে বিলম্ব ব্যাতীত ভাববেন, ঠিক অতটাই। আত্মীয়-স্বজন সকলের চোখের মণি সে। দেখতে সুদর্শন আবার লেখপড়ায় ভালো, ইউনিভার্সিটিতে ডিপার্টমেন্টের বেশিরভাগ মেয়ে তার প্রতি দূর্বল ছিল । যেচেপড়ে আসত আলাপ করতে। কত মেয়ের প্রেমের প্রস্তাব নাকচ করেছে অবলীলায়! তাদের ব্য*থিত চোখমুখ দেখে একটিবার মায়া করেনি। হত্যে দিয়ে পড়ে থেকেছে কেউ কেউ।

সব সময় নিজেকে নিয়ে মনে মনে ভীষণ গর্ব করত সাদিফ। বাড়িময় বাপ-চাচারা যখন ধূসরের কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে তাকে গা*লমন্দ করতেন,পালটা মুখরিত হতেন ওর প্রসংশায়। ভাইয়ে-ভাইয়ে তুলনা লেগে থাকত যেন। অথচ আজ প্রতিটি পদক্ষেপে সেই সাদিফই নিজেকে ধি*ক্কার দিচ্ছে। নিজের ব্যক্তিত্বহীনতা নিয়ে তাচ্ছ্যি*ল্য করছে।

পুষ্পর দিয়ে যাওয়া বিশেষণ’ তুমি স্বার্থ*পর!’ কানে বাজছে নিরন্তর। সে কী আসলেই স্বার্থ*পর? এই পরিবারের জন্য সত্যিই বিষা*ক্ত? কেন? কেন সে স্বার্থ*পর হবে? পুষ্পটা তো জানেনা,পরিবারের সবার ওপর সেও না বলতে পারেনি। মেয়েটা দুবছর ধরে ভালোবেসে কেঁ*দে ব্যকুল। আর ওর ভালোবাসা? বেহিসেবী। কবে থেকে, কত বছর থেকে পিউকে হৃদয়ে জায়গা দিয়েছে গুনে পাওয়া যাবে? পুষ্প কাঁ*দছে,চোখের পানি ফেলছে,প্রকাশ করতে পারছে নিজের ক*ষ্ট। কিন্তু সে? সে কিচ্ছুটি করতে অপারগ। বুকটা ব্য*থায় ছিড়লে বাইরে থেকে সে নিশ্চুপ,নির্বিকার। বিয়ের আলাপ করার সময় মা আর বাবার মুখের হাসিটুকু তার হাসি কে*ড়ে নিয়েছে। কখনওই একটা মানুষের মুখের ওপর সে না করতে পারেনি। কাউকে না বলার ক্ষমতাই নেই ওর। কেন যেন পেরে ওঠেনা। বলতে চায়,খুব করে চায়, অথচ শক্তিতে কূলোয় না।
এই দোষ কী ওর? আজ প্রবল আক্ষেপে বক্ষ জ্ব*লছে তার। এই গুড বয়ের খেতাব তার চাইনা। কেন ধূসরের মতো হলোনা সে? ওরকম কাঠখোট্টা মানুষরাই জীবনে জিতে যায়। ঠকে যায় ভদ্রতার বেড়াজালে আটকে পরা সাদিফরা।
এই যে, নম্রতার আখ্যান পেয়ে হাত পা বেঁ*ধে গেল মোটা রশিতে। চোখ ঢেকে গেল স্নেহের পুরূ কাপড়ে। একটিবার মুখ ফুটে বলতে পারল না,আমি পুষ্পকে নয়,পিউকে চাই। ওর সাথে কাটাতে চাই সারাটাজীবন।
সত্যি বলতে পুষ্প ভুল বলেছে। না জেনেবুঝে মিথ্যে বিশেষন দিয়েছে। সে স্বার্থ*পর নয়,সে আসলে ভদ্রের নামে জ্বলজ্যান্ত কাপু*রুষ। যে মানব বুক ফুলিয়ে ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করতে অক্ষম,তার ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ আছে।
সাদিফ চোখের কোনা বেঁয়ে গড়ানো অশ্রু চটজলদি মুছে নিলো। অন্ধকারে,বদ্ধ রুমে সেই জল কেউ দেখল না। কয়েক হাত দূরের সটান দাঁড়ানো দেয়ালটাও না।

***
পিউয়ের চেহারা ভীত। মধ্যরাতে কারো ঘরে চুরি করতে গেল,আর বাড়ির লোক ধরে ফেলল হাতে-নাতে। তাও আবার দারোগা রকম লোকের হাতে ধরা! সে আত*ঙ্কিত চেহারা লোকাতে ব্যস্ত। ধূসরের মুখে ‘শাস্তি’ শব্দটায় যে বুক ধড়ফড় করছে খুব।
সে বসা থেকে আস্তেধীরে, লতিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মিনমিন করে বলে,
‘ আড়ি পাতছিলাম না ধূসর ভাই।’
‘ কী করছিলি তাহলে? ‘
‘ ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম,আপুকে দেখে দাঁড়িয়েছি। ‘
কথাটা মিথ্যে নয়। সে পুষ্পকে ঢুকতে দেখেই তীব্র কৌতুহল সমেত এগিয়ে এসেছে। এতক্ষণ ধরে দেয়া বুদ্ধিটা আপু কাজে লাগালো কী না সেসব বুঝতে। অথচ কে জানত,এই লোক এটাও ধরে ফেলবেন।
ধূসরের দৃষ্টি তার হাতের ওপর। যেটা ডলতে ব্যস্ত পিউ। কতটুকু কী আ*ঘাত পেয়েছে তীক্ষ্ণ চোখে নিরীক্ষন করছে। তেমন লাগেনি। অথচ এই মেয়ে ডলে -টলে কী অবস্থা।
সে বলল,
‘ এবার থাম,চামড়া উঠে যাবে।’
পিউ তৎক্ষনাৎ থেমে গেল।
প্রচন্ড নার্ভাস লাগছে তার। ধূসরের শা*স্তিটা ঠিক কীরকম হতে পারে সেই চিন্তায় অবস্থা করূন।
তক্ষুনি ধূসর ঠান্ডা গলায় শুধাল,
‘ পুষ্পকে আমার কাছে কে পাঠিয়েছে?’
পিউ চমকে উঠল।
দুদিকে মাথা নেড়ে বলল ‘ আমি পাঠাইনি।’
‘ তার মানে তুই-ই পাঠিয়েছিস।’
পিউ চোখ নামিয়ে নিলো। ধূসর ধম*কে বলল,
‘ পাঠিয়েছিস কেন? মানা করেছিলাম না তোকে? ‘
পিউ সরল কণ্ঠে বলল,
‘ আমার কী দোষ? আপু এত কাঁ*দছিল বলে সহ্য করতে পারিনি। ‘
ধূসরের অভিব্যক্তি বোঝা গেল না। বলল,
‘ কী কী বলেছিস আর?’
‘ আর কিছু বলিনি। সত্যি বলছি, বিশ্বাস করুন।’
ধূসরের মন গলেনি। তার গম্ভীর কণ্ঠে শোনা গেল,
‘ তোর তাহলে দুটো শা*স্তি জমা হয়েছে। আমার অবাধ্য হয়েছিস,আবার মিথ্যে বলছিস। ‘

পিউ বোঝাতে ক্লান্ত,এমন স্বরে বলল,
‘ মিথ্যে বলিনি ধূসর ভাই।’
‘ চুপ।’
চোখ রা*ঙানো দেখে দমে গেল সে। সন্তর্পনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মন খা*রাপে হাবু*ডুবু শরীরটাকে নিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সে চোখ বুজে ধূসর ভাইকে বিশ্বাস করে। এতটা ভরসা তার নিজের প্রতিও নেই। আর সেখানে কী না ধূসর ভাই ওর কথা কানেই তোলেননা। সব বিশ্বাসের দ্বায়ভার তার একার?
প্রেমের মানসিক টানাপো*ড়নে পরে গেল সে। ধূসর ভাইয়ের মন বোঝা শ*ক্ত। মানুষটাই একটা স্টিলের কারখানা। ভা*ঙেনা,মচকায় না, শুধু ঝনঝন শব্দ করে। কানের বদলে ঝালাপালা করে ওর হৃদয়টা। তার কোমল মনের আনাচে-কানাচে তমসা নামবে নামবে ভাব,সেই ক্ষনে পেলো কারো কাছে এসে দাঁড়ানোর মত অনুভূতি।
কে যেন ভীষণ করে ঘেঁষে এলো শরীরের ধারে। পিউ চকিতে তাকায়। অভাবনীয়, ধূসরকে সান্নিধ্যে দেখে গলায় আটকে যায় নিঃশ্বাস। কবুতরের ছানার মতোন থরথ*র করে ওঠে দেহটা।
ধূসরের আবেশিত, মোহময়, মাদকের ন্যায় চাউনী শীতল করে দেয় হাত-পা। এমন করছেন কেন মানুষটা?
কেন এত কাছে আসছেন? পিউ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। পায়ের পাতা শিরশির করছে। যেন তলায় মাটি নেই। ধূসর ভাইয়ের উষ্ণ শ্বাস, শাণিত চাহনী,এই অকষাৎ কাছাকাছি আসায় নাভিশ্বাস অবস্থাপ্রায়। রুদ্ধ*কর পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে সে দু কদম পিছিয়ে গেল। সরে যেতে চাইল ধূসরের থেকে।

সে মানুষের চক্ষুযূগল এক মুহুর্ত সরল না। একটিবার পল্লব পড়ল না। তার দূর্বোধ্য,খুরখার দৃষ্টি ।এই চাউনীর সঙ্গা নেই,নেই ব্যকরণে উল্লেখ করার যথাযথ বিশেষণ। তবু পিউ বারংবার আহ*ত হলো । ভয়া*বহ পর্যায়ে বক্ষ কাঁ*পল তার। সে অলস গতিতে পেছনে যেতেই পিঠ গিয়ে দেয়ালে ঠেকে। একটা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে ব*ন্দী হয়ে কেঁ*পে ওঠে।
ধূসরের চোখ দুটোতে আজ লুকোচুরি নেই। সরাসরি, সোজাসাপটা নিক্ষিপ্ত, পিউয়ের প্রশ্নবিদ্ধ আঁখিজোড়ায়।
পিউ দুরুত্ব বাড়ানোর প্রয়াসে সফল হলো না। ধূসর আরো ঘেঁষে দাঁড়াল কাছে। মেয়েটার মাথার ওপর দিয়ে দেয়ালে ঠেসে দিল এক হাত। অদ্ভূত পুরুষালি গন্ধে রোমকূপ পর্যন্ত ঝাঁকু*নি তুলল তার। গোটা দেহে অনিয়ন্ত্রিত খেলে গেল অনুভূতির ঢেউ। মন,মস্তিষ্ক ফুঁড়ে বেরিয়ে গেল আয়ত্তের বাইরে। এই সুগন্ধে চোখ বুজে আসতে চায়। বুঁদ হয়ে ভেসে যেতে চায়,শূন্য আকাশে।
পরপর কানে লাগে একটি ভরাট,শীতল,ফিসফিসে কণ্ঠ,
‘ মাঝে মাঝে তোকে খুব কঠিন শা*স্তি দেয়ার ইচ্ছে হয় পিউ। বাধ্য হয়ে আটকে রাখি,বুঝিয়ে শুনিয়ে থামিয়ে দেই। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাওয়া কত ক*ষ্টের তুই জানিস?’

পিউ ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,
‘ আমি কী করেছি ধূসর ভাই?’
ধূসর নিঃশব্দে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রয়। এই মেয়ের এইরকম শত শত বোকা বোকা প্রশ্ন, বোকা বোকা চাউনী, তার ভেতর কী মাত্রাধিক তোল*পাড় চালায় কেউ জানে?

তার ত*প্ত শ্বাস ছুঁয়ে গেল পিউয়ের মুখমণ্ডল। সে তীর্যক হেসে, নীচু কণ্ঠে জানাল,
‘ এত বা*জে কিছু করেছিস,যার কোনও ক্ষমা নেই। ‘
তারপর কয়েক সেকেন্ড চোখ অবিচল রইল তার। এক চুল অনড় হলোনা পিউয়ের মুখস্রী থেকে। ধীরে ধীরে তার মুখটা আরও কাছে চলে আসে। ধূসরকে এইভাবে এগোতে দেখে পিউয়ের র*ক্তাসঞ্চালন অবধি স্থিত হয়। বক্ষপিঞ্জর ভে*ঙে বেরিয়ে আসতে চায় হৃদপিণ্ড। স্থায়িত্ব পেলো হাত পায়ের অনির্দিষ্ট কাঁ*পন। কপালে ঘাম ছুটল সবেগে। দূর্নিবার অনুভূতিতে, গুরুতর হয়ে এলো নিঃশ্বাস। ধূসর, পিউয়ের করূন অবস্থা বুঝল কী না কে জানে। তার লম্বা দেহ ঝুঁকে গেল,উষ্ণীষ প্রঃশ্বাস ছিটকে ফেলল পিউয়ের ঘাড়ে। আবেগের তাড়াহুড়োতে, অচিরেই দূর্বল দেহটা পিউ ছেড়ে দিলো দেয়ালে।
জোর করে চেষ্টা করল ঠিক ওই অক্ষিপট বরাবর চেয়ে থাকতে।
আস্তেধীরে পরিবর্তিত হলো তার অভিপ্রায়। হারিয়ে ফেলল নিজেকে। তিনটি বছর ধরে হৃদয়ের চারটে অলিন্দে বয়ে বেড়ানো মানুষটার প্রতি এক সমুদ্র প্রেম বেরিয়ে এলো ডাগর ডাগর চাউনীতে। মোহিত ভঙিতে চেয়ে রইল সে । ধূসর ভাই এত কাছাকাছি এলে তার কিছু একটা হয়ে যায়। কেমন কেমন লাগে। বুকের মধ্যে কেউ ঢোল বাজিয়ে নাঁচে। হৃদযন্ত্র ধ্বক ধ্বক করে। সে নিরব লোঁচন ধূসরের সমগ্র চেহারায় বোলালো। মাঝেমধ্যে
ভীষণ রকম ইচ্ছে হয়, ধূসরকে একটা সাদা কাঁচের বোতলে পু*ড়ে ফেলতে। সেই বোতলটা জীবনভর স্বযত্নে বুকের সাথে চে*পে রাখবে সে। ওই আলিফ লায়লার জ্বীনদের মত। মাঝে মাঝে বের করবে, আঁশ মিটিয়ে দেখবে, আর প্রানভরে চুঁমু খাবে। এরকম হলে কী দারূন হতোনা? পরমুহূর্তে চটক কাটল তার।
নিলজ্জের মত চুঁমুর কথা ভাবতেই লজ্জ্বায় নুইয়ে গেল। প্রেমে পড়ে সে ভাষাহীন বেহায়া হয়ে যাচ্ছে। কোথায় লজ্জ্বাবতী বৃক্ষের ন্যায় গুঁটিয়ে রবে তা না!
সে মাথা নামিয়ে কুন্ঠা ঢাকতে ব্যস্ত যখন, আচমকা ধূসর ফুঁ দিলো মুখবিবরে।
সমস্ত গাত্র শিউরে উঠল তার। চিনচি*নে শিরশিরানিতে ভরে গেল। বসন্তের হাওয়ার মত দুলে উঠল শীর্ন দেহখানি। এই অল্প ছোঁয়া, ক্ষন হাওয়া,এইটুকু সময়েই আ*গুন ব্যাতীত তাকে পু*ড়িয়ে দিল।

ধূসর কণ্ঠ খাদে নামিয়ে শুধাল,
‘ তুই এরকম কেন পিউ? কারো নিবারণের বেড়ি ভা*ঙতে কেন এত উঠেপড়ে লেগেছিস? দিনকে দিন তোর নিপুণ দক্ষতা,কারো অমোঘ বনিয়াদ নাড়িয়ে দিচ্ছে। এরপর সে একটা বড়সড় অন্যায় ঘটিয়ে ফেললে অপ*রাধী কে হবে? সে না তুই?’

দু সেকেন্ড অবাক চোখে চেয়ে রইল পিউ। শেষ কথাটার ইঙ্গিত বুঝতেই হাঁসফাঁস করে চোখ খিঁচে বুজে নিলো। জোড়ালো নিঃশ্বাসে ঝ*ড়ের গতিতে বুক ওঠানামা করে। ওষ্ঠাগ*ত প্রাণে দিশেহারা হয়ে বলল,
‘ শা*স্তিটা দিয়ে দিন ধূসর ভাই। চলে যাই আমি।’
ধূসরের ওষ্ঠপুটে ভিড়ে গেল হাসি। পিউ অস্থির ভাবে চোখ মেলল আবার। অনুভব করল, এমনিতে সে মুখে খই ফোটাতে ওস্তাদ হলেও, এই নির্দিষ্ট মানুষটির সামনে সে কিচ্ছুটি না। মনে প্রানে বিশ্বাস করে ফেলল, ধূসর ভাইয়ের কাছে আসার পর, শ*ক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে, তার হাতে দু চারটে চ*ড় খাওয়াও সহজ। এরকম দম*বন্ধ হয়ে আসেনা। রুহুটা গলার কাছে এসে আটকে থাকেনা। পুনরায় ধূসরের চোখের দিকে তাকাল সে।
ঠোঁটের কোনের ওই নির্ম*ম,দুষ্প্রাপ্য, অন্তর্ভে*দী হাসিটা টর্নেডোর ন্যায় ঘুরপাক খেল মনে।
সে তখন ভ্রুঁ উঁচায় ‘ শাস্তি চাস?’
পিউ আজ আর ভ*য় পেলোনা। একটু আগের ঘটনাচক্রের রেশ তার মনে তখনও বহমান। সে আই-ঢাই করে মাথা দোলায়। এই শাস্তি বরেণ্য। অন্তত বেচে থেকেও অনুভূতিদের কবলে নিহ*ত হওয়ার থেকে অকঠিন।

তার ভাবনার মধ্যে ধূসরের অধরদ্বয় এগিয়ে আসতে দেখা যায়। পিউ চমকে, বিমুঢ় হয়ে পরল। আগত পরিস্থিতি বুঝতেই বুকের বা পাশে অনুভব করল অসরল ভূমিকম্প। ধূসর ভাই কি চুমু খাবেন? আল্লাহ, সে নিশ্চিত ম*রে যাবে । পিউয়ের হার্টবিট থেমে গিয়েছে। র*ক্ত সমেত যেন এক্ষুনি বুক ফুঁড়ে বাইরে আসবে ওটা। সর্বদা ধূসরকে কাছে চাওয়া মেয়েটি আজ আকষ্মিক তার অচেনা আগমন মেনে নিতে পারেনা। ধূসরের স্পর্শ পাওয়ার জন্য উচাটন মন আজ হতচকিত। অলীক স্বপ্নের ন্যায় ঠেকছে সব। চোখ,কান,উন্মুখ,ব্যকুল থাকে যার জন্য সে কাছে এলে এমন হয় কেন? ছট*ফট করা অন্তকরন,আর মাথার ভেতর বাজতে থাকা রুমঝুম সুরে পিউ পাগলপ্রায়। এমন মিহি,মিধুর, ভয়*ঙ্কর য*ন্ত্রনা বোধহয় ভালোবাসায় হয়। সুরেলা, মিষ্ট পী*ড়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে সে দুহাত রাখল ধূসরের ইস্পাত,প্রসস্থ বক্ষে। পরপর মৃদূ ধা*ক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। ধূসর স্বেচ্ছায় সরেছে,তার ধা*ক্কায় নয়। ওই বলিষ্ঠ মানুষটিকে নড়ানোর সাধ্যি সপ্তদশীর নেই।

পিউ লজ্জ্বায় সহস্র হাত নীচু হয়ে রইল। তারপর নিভু নিভু চোখ তুলে তাকাল ধূসরের, উদ্বেগশূন্য, নিরেট চিবুক পানে। মানুষটার স্বল্প,ঈষৎ মিটিমিটি হাসিটা বুকের গোপন কুঠুরির সবটা এলোমেলো করে দিল। বেসামাল হওয়ার আগেই মুচকি হেসে, এক ছুট্টে, ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল সে।

ধূসর সেদিক তাকিয়ে ঘাড় ডলল ডান হাতে। তার ঠোঁটের কোনায় দূর্বোধ্য, দূষ্টু হাসি। ইচ্ছে করে করেছে এমন। ফাজলামো করে পিউকে জ্বা*লাতে স্বেচ্ছায়,বুদ্ধি এঁটে এগিয়েছে ঠোঁট। চুঁমু অবধি যেতনা নিশ্চিত। এখনও যে, ওই এক ভুল দুবার করার সময় আসেনি। অথচ এর আগেই পালালো মেয়েটা। ধূসর বক্র হেসে বিড়বিড় করে বলল,
‘ এইটুকুতে এই অবস্থা,সারাটাজীবন তো পরেই রইল।’

****

পার্লামেন্টে উৎসব আজ। নতুন দল নিয়ে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া হবে। হাজির হবেন নব নমিনীত তাদের মেয়র প্রার্ত্রী খলিলুল্লাহ সাহও।
তদারকিতে বরাবরের মতো ধূসর রয়েছে। একে ওকে হুকুম দিচ্ছে। না বুঝলে, বোঝাচ্ছে ভালো করে। মাঝে মাঝে হাতঘড়ি দেখছে। ঘড়িতে একটা ছাড়াবে অথচ ইকবালের দেখা নেই। এই প্রোগ্রামের জন্য আজ সে অফিস থেকে লাঞ্চের আগে বেরিয়েছে। রিসিপশনে বলে এসছে, ফিরবেনা বিকেলে। অথচ সভাপতি নিখোঁজ। ছেলেটা মাঝেমধ্যে এত দায়িতজ্ঞানহীনের মত কাজ করে কেন? একেই কীনা সে ভবিষ্যতে মেয়র করার পায়তারা করছে!
ধূসর ঠোঁট ফুলিয়ে শ্বাস ফেলল। ফুল দিয়ে মূল গেটে ডেকোরেশন হচ্ছে। পুরো পার্লামেন্ট সাজানো শেষ প্রায়।
ঘেমে-নেয়ে গোসল করার মতন অবস্থা। সোহেল এসে খাবারের মেন্যু দেখিয়ে শুধাল,
‘ কোক তো খলিল ভাই খাননা,স্প্রাইট আনব না কি? একী! তুইত একদম ঘেমে গেছিস ধূসর। ভেতরে গিয়ে বসবি? আমি বরং দেখি এদিকিটা!’

ধূসর রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল,
‘ লাগবে না। তুই এক কাজ কর,সবার জন্য স্প্রাইট আনা। ওনার একার জন্য আলাদা করে আনালে খারাপ দেখায়। ‘
‘ আচ্ছা ঠিক আছে। ‘

সোহেল চলে গেল। তার ও অনেকটা সময় পর দৃশ্যমান হলো ইকবালের সাদা গাড়িটা।
ধূসর,ওমনি চোখ-মুখ পাথরের ন্যায় শ*ক্ত করল। বোধহীন ছেলেটার ওপর মেজাজ দারূনভাবে চটেছে আজ। তাকে ক*ঠিন কিছু কথা শোনানোর উদ্দেশ্যে গটগটিয়ে হেঁটে গেল কাছে।
ইকবাল গাড়ি থেকে নামল। দরজা আটকে ঘুরতেই ধূসর সামনে পড়ল। ত্বরিতে তার পো*ক্ত চিবুক মসৃন হলো। ক*ড়া কথা শোনাতে চাওয়ার ইচ্ছে, হুরহুর করে উবে গেল।
ইকবালের অবিন্যস্ত মুখমণ্ডল থামিয়ে দিয়েছে। টকটকে লাল দুটো চোখ ,অসিত ঠোঁটযূগল আরো বেশি কালো আজ, চুল অগোছালো হয়ে কপালে পরেছে,সাথে বাম চক্ষু রেখেছে দৃষ্টির আড়ালে।
ধূসর চিন্তিত কণ্ঠে বলল,
‘ কী অবস্থা চেহারার?’
ইকবাল একটু হাসল। সত্যি বলতে ছেঁচড়ে এনেছে হাসিটা। বলল,
‘ রাতে ঘুম হয়নিতো,তাই আর কী!’

গলার স্বরও অন্য রকম। ভা*ঙা-চোড়া, রুগ্ন। ধূসর কাঁধে হাত রেখে বলল,
‘ তুই ঠিক আছিস?’
ইকবালের অন্তঃস্থল হুহু করে উঠল। ধূসরকে দুহাতে আগলে ধরতে মন চাইছে। মন চাইছে চিৎ*কার করে জানাতে,
‘ আমি ঠিক নেই ধূসর। তোর বোন আমায় ঠিক থাকতে দিচ্ছেনা। ভালোবাসার অনলে জ্বা*লাচ্ছে,পোড়া*চ্ছে,পুতুলের ন্যায় নাঁচাচ্ছে। ওর একটা সুষ্ঠু বিচার কর ভাই।’
মুখে বলল
‘ একদম।’

ধূসর তাও শুধাল
‘ ইজ এভ্রিথিং অলরাইট ইকবাল?’
ইকবাল স্বভাবসুলভ হেসে বলল,
‘ আরে হ্যাঁ হ্যাঁ। আমাকে দেখে অলরাইট মনে হচ্ছেনা তোর? ‘
‘ না। ‘
সে ঠোঁট ওল্টায় ‘ ঠিক আছি রে বাবা। এক মাঈল দৌড়ে এলে বিশ্বাস করবি?’
‘ থাক। ভেতরে চল,খলিল ভাই অপেক্ষা করছেন।’
‘ ও ব্যাটা এত আগেভাগে এসেছে কেন? পরে এলে খাবার কী কম পাবে?’
‘ সবাই তোর মত লেট লতিফ নয়। হি ইজ আ পাংকচুয়্যাল গাই। আয় এখন।’

ধূসর উল্টোপথে কদম ফেলল। ইকবাল দাঁড়িয়ে রইল স্থির। তার ভেতরটা খচখচ করছে অন্য কিছু নিয়ে। পুষ্প কাল রাতে হঠাৎ অস্বাভাবিক ব্যবহার করেছে। সে ক*ষ্ট পেয়েছে বুঝেও একটি বার ফোন করল না,খবর নিলো না।
হঠাৎ কী হলো সেই চিন্তা, আর ভারী বুক সমেত সারারাত বিনিদ্রায় কে*টেছে তার। এক ফোঁটা চোখ বোজেনি, ঘুমায়নি। অসংখ্য সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়েছে বাতাসে। সকালে যাও একটু ঘুমাতো,পুষ্পর নো কল,নো মেসেজ দেখে অভিমানে মাথার রগ দপদপ করে উঠল। ক্রো*ধ ছড়াল শিরাসমূহে। সব সময় রা*গ করবে ও,ভা*ঙাবে সে? কেন, এক তরফা কেন হবে এই নিয়ম? অত গুলো কলে ওকে না পেয়ে একটু না হয় উচু কণ্ঠে কথা বলেছে,তাই বলে এভাবে রিয়্যাক্ট করবে? এত বা*জে বা*জে কথা শোনাবে? সে ট*র্চার করছে মানে,সে কি অত্যা*চারী?
ইকবাল ফের অনুরাগী হয়। মনের সাথে সাথে চোখমুখ শ*ক্ত করে।
অভিমানে ছেঁয়ে যায় তনুমন। কিন্তু একটিবার পুষ্পর কথা জানার স্পৃহা কমেনা। ইনিয়ে-বিনিয়ে যদি ধূসরের থেকে একবার শুনতে পারত,সে আজ ইউনিভার্সিটি গিয়েছে কী না! তবে যা বোঝার বুঝে নেবে।
‘ কী? দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
তার ধ্যান কা*টল। দুপা এগিয়ে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে গেল। ধূসরের দৃষ্টি বদলাল সন্দেহে। ওর উশখুশানি নজর বন্দী হতে কয়েক সেকেন্ড লাগে। ইকবাল জ্বিভে,কৃষ্ণবর্ন ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
‘ ইয়ে মানে,বলছিলাম যে বাড়ির সবাই কেমন আছে?’
ধূসর একটুও অবাক হলোনা এমন ভঙিতে বলল,
‘ ভালো।’

‘ পিউয়ের পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?’
‘ শুনছি তো ভালো।’
সে অকারণে সব দাঁত দেখিয়ে বলল,
‘ ভালো,ভালো। তোর হিটলার চাচার কী খবর?’
ধূসর চোখ রাঙাতেই, দাঁতে, জ্বিভ কে*টে বলল,
‘ ভালো মানুষ আঙ্কেলের কী খবর?’
‘ হঠাৎ সবার খোঁজ খবর নিচ্ছিস যে?’
‘ এমনিই। তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড, তোর পরিবার আমার পরিবার না?’
‘ হু। বাড়ির সবাই ভালো আছে। এখন আরেকটু বেশি ভালো থাকার কথা। খুশির খবর চলছে তো।’
ইকবাল কপাল কুঁচকে বলল,
‘ কী খবর? তোর চাচার আবার ইয়ে টিয়ে হবে না কী?’
ধূসর চোখ গ*রম করে বলল,
‘ উজবুকের মত কথা বলবিনা।’
ইকবাল মাথা দোলাল। মনে মনে একটুখানি সুযোগ হাতাল পুষ্পর নাম উচ্চারণ করার। কিন্তু, ওই যে,চোরের মন পুলিশের মতো। পাছে ধূসর সন্দেহ করে বসলে!।

‘ আর কোনও প্রশ্ন?’
‘ হু? হ্যাঁ, না মানে ওই,খুশির সংবাদটা কী?’
‘ পুষ্পর সঙ্গে সাদিফের বিয়ে।’
ইকবাল বেখেয়ালে মাথা দুলিয়ে বলল,
‘ ও,ভালো।’
হুশে ফিরতেই বজ্রাহ*তের ন্যায় তাকাল। আ*র্তনাদ করে বলল,
‘ কীইইই?’
ধূসর কাঁধ উঁচু করে বলল,
‘ হ্যাঁ। এইত, কালই পাকাপাকি করল। দুদিনের ভেতর বোধহয় এনগেজমেন্টের দিনও ঠিক হবে।’

ইকবালের কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল। বক্ষে সাই করে একটা তী*র বসল। বুকটা বি*চ্ছিন্ন,ফালা-ফালা করল নিমিষে। এতটা দেবে বসল যে, এফোড়-ওফোড় হয়ে গেল সব। অদৃশ্য র*ক্ত ঝড়ল অনর্গল। সে উত্তর দিতে পারল না। কেমন র*ক্তশূন্য চেহারায় ধূসরের মুখের দিক চেয়ে রইল। অক্ষিপটের শ্বেত রঙটা বিবর্ন,ফ্যাকাশে। নিশ্চিত হতে, শুকনো খনখনে কণ্ঠে শুধাল,
‘ কী বলছিস?’
ধূসরের আনন্দিত জবাব,
‘ ইয়েস! ঠিক শুনেছিস। এইত কদিনের মধ্যেই ওদের বিয়ের ডেট পরবে শুনলাম। ভাবছি, হলুদের প্রোগ্রাম অনেক বড় করে করব। উম,আমরা এক রকম পাঞ্জাবি নেই কী বলিস! আফটার অল, আমার পরিবার তোর পরিবার হলে, পুষ্প অলসো লাইক ইউর সিস্টার। ‘
ইকবাল অদৃশ্য দুহাতে কান চে*পে ধরল নিজের। অদ্ভূত অদ্ভূত আর্ত*নাদ করল। কিন্তু কথা ফুটল না। পুষ্প তার বোন? না, ইহকালে না।
ধূসর ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ কী হয়েছে?’
সে ক্লান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ পানি খাব।’
ধূসর ছোট্ট শ্বাস ফেলে আশেপাশে তাকাল। সামীরকে দেখে আদেশ করল পানি দিয়ে যেতে। ইকবালের বুকে ব্য*থা উঠেছে। বিকল বিকল লাগছে হার্টবিট। যেন এক্ষুনি অ্যা*টাক-ফ্যাটাক করে লু*টিয়ে পরবে মাটিতে। তার পুষ্পরানির বিয়ে,অন্য কারো সাথে? সে ম*রে যাবে, বাঁচবে না। এই খা*রাপ,কু*ৎসিত দিন দেখার আগে ঝাঁ*প দেবে খাদে।
যতটা কাতর ভাবে পানি চাইল সে,অতটা গলা দিয়ে নামল না। বোতলে এক চুমুক দিয়ে বাকীটা রেখে দিল। এদিকে ব্য*থা বাড়ছে। বাড়তে বাড়তে ছড়িয়ে পরছে শরীরের সবখানে। বাম পাশে মনে হচ্ছে বহ্নির লেলি*হান শিখা ঢেলে দিয়েছে কেউ। ধূসর কিছুই জানেনা এমন ভাণ করে বলল,
‘ তাহলে কী বলিস? আমরা পার্লামেন্টের সবাই মিলে প্ল্যানিং শুরু করি?’
ইকবাল নির্জীব দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধায়,
‘ কীসের প্ল্যান যেন?’
‘ পুষ্প আর সাদিফের বিয়ের? সিকদার ধূসর মাহতাবের ভাইবোনের বিয়ে,ধুমধাম করে হবে, বুঝতেই পারছিস।’

ইকবালের মুখ তেঁতো হয়ে এলো। তিক্ততায় গলার কাছটা ফ্যাসফ্যাসে। ঢোক গিল*তেও যেন নরকীয় ক*ষ্ট। ধূসরের খুশিতে প্রথম বার তার বিতৃষ্ণা হলো,রা*গ হলো। চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইল চকচকে অশ্রু। গুমড়ে গুমড়ে কথা চে*পে রাখার এত য*ন্ত্রনা? এই জন্যেই কি পুষ্প কাল ওমন করেছিল? বাড়ির সবার রা*গ,ক্ষো*ভ ওর ওপর ঢেলেছে?
ইকবালের বক্ষ যাত*না অস্থির ভঙিতে বৃহৎ হচ্ছে৷ চট করে বুকের বাম পাশ চে*পে ধরে বসে পরল পার্লামেন্টের সদর সিড়িতে।
ধূসর ধড়ফড় করে ধরে বলল,
‘ কী হলো?’
ইকবাল সত্যিটা বলতে অক্ষম। বুক ডলতে ডলতে জবাব দিল,
‘ এমনি। বুকে ব্য*থা করছে একটু।’
‘ গ্যাস্ট্রিকের বোধহয়। খাসনি সকালে? ওষুধ আনাব,খাবি? ‘
ইকবাল অসহায় চোখে তাকাল। তারপর ফেলল দীর্ঘশ্বাস। সে কী করে বোঝাবে? এই ব্য*থা কীসের? এক সৎ প্রেমিক পুরুষের, প্রেমিকা হারানোর পী*ড়া, দুনিয়ার কোনও ওষুধ সাড়ানোর যোগ্যতা রাখেনা। প্রেমের মাম*লায়,বুকটা আ*সামী। প্রেমিক কাঠগড়ায় দাঁড়ালেও উকিল হয়না কেউ।
মাঝখান থেকে বিনা-দোষে হৃদয় শা*স্তি পায়। ফাঁসি হয় প্রেম ভালোবাসা আর মহব্বতের। এই নিদারূন খেলায় আজ থেকে ভাগ্য খেলোয়াড়। আর সে ছুটে চলা খেলোয়াড় দের পায়ে নি*ষ্ঠুর ভাবে ঠেলতে থাকা গোলাকার ফুটবল।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here