এক মঠো অনুভূতি পর্ব ৯ + ১০

0
901

#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:০৯

অনুষ্ঠান শেষে সবাই বসে আছে ভার্সিটির মাঠে। রোদ্দুর সবার জন্য আইসক্রিম নিয়ে এসেছে। সবার জন্য এক রকম আইসক্রিম নিয়ে আসলেও জাইমা আর নিজের জন্য অন্য আইসক্রিম এনেছে। তা দেখে আফরা আর আশ্বিন একে অপরের দিকে তাকায়। রোদ্দুর আড়চোখে তাদের দিকে একবার তাকিয়ে ভেংচি কাটে।

–জাইমা, তুমি যে এতো ভালো গান পারো! আজ তা না শুনলে আমি হয়তো কখনো জানতাম’ই না যে আমাদের ভার্সিটিতেই ভালো একজন শিল্পি আছে।
রোদ্দুরের কথায় জাইমা কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে,
–আপনি একটু বেশিই বলছেন রোদ ভাইয়া। আমার থেকেও বাকিদের গান অনেক বেশি ভালো ছিলো।
–কে বলেছে তোমাকে? আরে, তাদের গান কোন গান হলো নাকি? জাইমা, তোমার কোন ধারনাই নেই যে তোমার গাওয়া গান কিভাবে আমার হৃদয়ে গিয়ে স্পর্শ করেছে।
রোদ্দুরের কথায় আফরা মুখে হাত রেখে অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে রেখেছে। এদিকে জাইমা লজ্জায় লাল লাল হয়ে বসে আছে। ওহি আইসক্রিম খেতে খেতে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে,
–আর আমার গান কেমন লেগেছে রোদ্দুর ভাইয়া?

ওহির কথায় আশ্বিন তার দিকে তাকায়। রোদ্দুর ওহির দিকে ফিরে,
–তোমার গান তো পুরাই মাস্টারপিস ছিলো ওহি। আমি বুঝি না তোমরা দুই বান্ধবী কোন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সাথে যোগাযোগ করছো না কেনো?
আফরা একটু জোরপূর্বক হেসে রোদ্দুরের কাধে হাত রেখে তার কানের কাছে ফিসফিস করে,
–হয়েছে অনেক বলে ফেলেছিস। এবার চুপ থাক।
–আরে আফরা, ইমপ্রেস না করলে তোর জন্য একটা ভাবি ম্যানেজ করবো কিভাবে? বুঝিস না কেনো?
রোদ্দুরের কথায় আফরা হেসে উঠে একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে মজা করে,
–ঠিক আছে। জাইমাকে ইমপ্রেস করতে চাইছিস, জাইমার মধ্যেই থাক। আবার ওহির প্রশংসা করছিস কেনো? ওহির জন্য তো আমার আশ্বিন আছেই।

আশ্বিন এতোক্ষণ সবার কথা চুপচাপ শুনছিলো। রোদ্দুরকে বলা আফরার কথাটা শুনতে পেয়ে আফরাকে আলতো করে ধাক্কা দেয়।
এদিকে, ওহি আইসক্রিম খেতে খেতে দূরে রাফিনকে দেখে তাকে ডেকে উঠে সেদিকে চলে যায়। ওহির মুখে রাফিনের নাম শুনে আশ্বিন সেদিকে ফিরে তাকায়। শান্ত দৃষ্টিতে দেখতে থাকে ওহি আর রাফিনকে।

–রাফিন ভাইয়া, আপনি বলেছিলেন ফাংশন শেষে দেখা করার জন্য।
–হুম বলেছিলাম। ভেবেছিলাম ফ্রি হয়ে একসাথে আড্ডা দিবো। এখন, একটু স্যারের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
–সমস্যা নেই ভাইয়া। আপনি দেখা করে আসুন, আমরা অপেক্ষা করছি।
রাফিন ওহির গাল টেনে একটা চকলেট দিয়ে,
–নাও, চকলেট খাও। বাই দ্য ওয়ে, তোমাকে কিন্তু আজকে অনেক সুন্দর লাগছে।
রাফিনের কথায় ওহি খুশি হয়ে হেসে উঠে। রাফিন চলে যেতেই ওহি চকলেট হাতে নিয়ে আবার জাইমার পাশে এসে বসে। সবাই আবারও গল্প করতে শুরু করে। এদিকে, আশ্বিন আড়চোখে তাকিয়ে আছে ওহির হাতের চকলেটের দিকেই।
——————

রোদ্দুর আফরা আর জাইমাকে নিয়ে তাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য চলে গিয়েছে। আশ্বিন হাসান স্যারের কাছে ফাংশনের হিসেব পত্র বুঝিয়ে দিয়ে ভার্সিটির মাঠের কাছে এসে দেখে ওহি একাই দাঁড়িয়ে আছে।
–তুমি এখনো বাসায় যাওনি?
ওহি আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,
–ভাইয়াকে ফোন করেছি, বললো একটু অপেক্ষা করার জন্য। তার ক্লাস শেষ হলেই চলে আসবে।
–কতোক্ষণ এভাবে অপেক্ষা করবে তুমি? সবাই চলে যাচ্ছে, পরে একা হয়ে যাবে।
ওহি কিছু বলতে নিবে তখনই তখনই রাফিন তার কাছে এসে,
–তোমার ভাইয়া এখনো আসেনি, ওহি?
ওহি রাফিনের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না বোঝায়।
–আচ্ছা,সমস্যা নেই। আমি তোমাকে বাসায় ড্রপ করে দিচ্ছি। চলো।
আশ্বিন রাফিনের দিকে শান্ত ভাবে তাকিয়ে,
–তার প্রয়োজন নেই, রাফিন। ফাইজাকে আমি পৌঁছে দিবো। তোমার কষ্ট করতে হবে না। এসো চশমা..।
আশ্বিন কথাটা বলে ওহিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তার হাত ধরে চলে আসে। রাফিন তাকিয়ে থাকে তাদের যাওয়ার দিকেই।

গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে ওহি আর আশ্বিন। আশ্বিন আপনমনে গাড়ি ড্রাইভ করছে আর ওহি তাকিয়ে আছে তার হাতের ফুলগুলোর দিকে।
–আপনি সবসময় এভাবে গম্ভীর মুখ করে বসে থাকুন কেনো?
–কি বললে তুমি?
ওহির কথায় আশ্বিন তার দিকে তাকায়। ওহি ফুলগুলো থেকে মুখ তুলে,
–আমরা সবাই যখন গল্প করছিলাম, আপনি তখন একটা কথাও বলেননি। তারপর রাফিন ভাইয়া যখন আসলো আমাদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য, তখন তো আপনি উঠেই চলে গেলেন। এমন কেনো করলেন?
–তেমন কিছু না। আমার একটু কাজ ছিলো তাই চলে গিয়েছিলাম।
–কোন কাজ ছিলো না আপনার। রাফিন ভাইয়া আর আপনি, আপনারা কি বন্ধু না?
–নাহ। রাফিন আমার বন্ধু না, ফাইজা। এক ক্লাসে পড়ছি বলেই সবাই বন্ধু হয়ে যায় না। তুমি যেভাবে রাফিনকে দেখছো, রাফিন আসলে এমন না। তাকে আমরা কোনদিন প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলতেও দেখিনি। স্বার্থ ছাড়া সে কোন কিছুই করেনা।
–কিন্তু রাফিন ভাইয়া আমার অনেক খেয়াল রাখেন। একজন ভালো বন্ধুর মতোই আচরণ করেন। আমার সাথে বন্ধুত্ব করায় উনার কি স্বার্থ থাকতে পারে?
–জানি না আমি।
আশ্বিন জোর দিয়ে কথাটা বলে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে থাকে। ওহি একবার তার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে।
–আশ্বিন ভাইয়া, আপনি আর এভাবে গম্ভীর হয়ে থাকবেন না তো। আপনাকে হাসি খুশি দেখতেই ভালো লাগে।

আশ্বিন আড়চোখে একবার ওহির দিকে তাকিয়ে রেডিওতে গান প্লে করে।
“আমার সকল অভিযোগে তুমি,
তোমার মিষ্টি হাসিটা কি আমি?
আমার না বলা কথার মাঝে,
তোমার গানের কতো সুর ভাসে।..”
ওহি গানের তালে সিটে মাথা রেখে গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। আশ্বিন আড়চোখে দু’এক বার ওহির দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে।
——————-

রাতে,
সাদা গোলাপটা হাতে নিয়ে বারান্দায় বসে আছে ওহি। আজকের দিনে এই ফুল পাওয়ার মুহূর্তটা তার কাছে সবচেয়ে স্পেশাল ছিলো। আশ্বিনের কথা মনে হতেই তার গাড়িতে বলা কথাটা মনে পড়ে,
–ফাইজা, তুমি আর চুলে খোঁপা করো না। তোমাকে খোলা চুলেই বেশি ভালো লাগে।
কথাটা মনে হতেই ওহি নিজের চুলগুলো এলোমেলো করে আনমনে হেসে উঠে।

এদিকে,
আশ্বিন,রোদ্দুর আর আফরা বসে আছে আশ্বিনের বাড়ির ছাদে। রোদ্দুর আপন মনে জাইমাকে নিয়ে কথা বলে যাচ্ছে, আশ্বিন তার ফোনে গেমস খেলছে আর আফরা দোলনায় বসে রোদ্দুরের ফোনে আজকের ফাংশনের ছবি দেখছে।
–রোদ,এই ছবি তুই কখন তুলেছিস?
–কোনটা?
আফরা তাদের দিকে ফোন দেখালে সেখানে আশ্বিন আর ওহির একটি সুন্দর ছবি ভেসে উঠে, যখন আশ্বিন ওহিকে সাদা গোলাপ দিচ্ছিল।
–তুই এই ছবি তুলেছিস রোদ?
–আরে আশ্বিন, শান্ত’হ। তোদের একসাথে অনেক কিউট লাগছিলো। তাই তো তুলেছি।
আশ্বিন কিছু বলতে নিবে তখন আফরা বলে উঠে,
–ঠিক বলেছিস রোদ। ওহি আর আশ্বিনকে একসাথে খুব মানায়।
–বাজে বকিস না তো আফরা। আমাদের মাঝে ঐরকম কিছু নেই।
–আমি বাজে বকছি? আশ্বিন তুই শুধু আমার বন্ধু না, আমার ভাইও তুই। আমাদের যখন চার বছর, তখন থেকে আমরা একে অপরের বন্ধু। তোর জন্য কোনটা ভালো, কোনটা ভালো না, এটা আমাকে শিখাতে আসবি না।
আফরার কথায় রোদ্দুর মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
–আর কিছু না হলেও, ওহি তোর হবু ভাবির একমাত্র বান্ধবী হয়। এই হিসেবে তাকে সম্মান করবি তোরা।
রোদ্দুরের কথায় আশ্বিন আর আফরা একসাথে হেসে উঠে।

–যাই হোক, তোদের যা বলার জন্য এখানে ডেকেছি আমি।
আশ্বিনের কথায় দুজনেই সিরিয়াস হয়ে বসে। আশ্বিন তাদের দিকে তাকিয়ে,
–ঐ চিরকুট লেখকের রহস্য বের করেছি।
–কি? কে সে?
–চিরকুট লেখক আর কেউ নয়, রাফিন।
আফরা আর রোদ্দুর একে অপরের দিকে অবাক হয়ে তাকায়। রোদ্দুর আশ্বিনের দিকে ফিরে,
–মানছি, রাফিন আমাদের ক্লাসে সবচেয়ে অদ্ভুত ছেলে। তাই বলে সে এভাবে তোকে হুমকি দিবে কেনো?
–আর,তুই বুঝলি কিভাবে এসব রাফিনের কাজ?
আশ্বিন আজকে সকালে পাওয়া চিরকুট তাদের দিকে এগিয়ে দেয়।

“কেমন সারপ্রাইজ দিলাম আশ্বীন? এখন কীভাবে সবটা সামলাবে তুমি? আমার তো ভয় হচ্ছে, হাসান স্যার না এবার তোমাকে লিডার থেকেই বাদ দিয়ে দেন। বেচারা আশ্বীন!”

রোদ্দুর চিরকুট পড়ে আশ্বিনের দিকে তাকায়,
–কি?
–দেখ, আশ্বিন নামের বানান আশ্বীন লেখা আছে। পুরো ক্লাসে একমাত্র রাফিন আমার নামে ঈ-কার ব্যবহার করে। তোর মনে আছে?
রোদ্দুর কিছু একটা মনে করে মাথা নাড়ে।
–কিন্ত এই ছোট একটা বিষয় নিয়েই আমরা রাফিনকে দোষী ভাবতে পারি না। এমন তো হতে পারে রাফিনের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব সম্পর্ক না থাকায় চিরকুট লেখক তাকে ফাঁসাতে চাইছে।
–আফরা ঠিক বলছে আশ্বিন।
–আমি জানি। আজ ফুল আর খাবারের প্যাকেট হারিয়ে যাওয়ার পর আমি সেখানের সিসি.টিভি ফুটেজ দেখেছিলাম। সেখানে একটা ছেলেকে দেখেছি প্যাকেট সরিয়ে ফেলছিলো। তাকে খুঁজে বের করে জোর দিয়ে জিজ্ঞেস করার পর সে স্বীকার করেছে এটা রাফিনের কাজ। এখন এই ছেলে কতোটুকু সত্য বলছে, রাফিন আসলেই দোষী কিনা তা প্রমাণ করতে আমার তোদের সাহায্য প্রয়োজন।
রোদ্দুর আর আফরা একসাথে বলে উঠে,
–আমরা আছি তোর সাথে।
আশ্বিন কিছু না বলে মাথা নাড়ে।

–চলবে(ইনশাআল্লাহ)

#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:১০

নবীন বরণ ফাংশনের আজ এক সপ্তাহ পর,
রোহান আর মিতু এসে ওহির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ইতিমধ্যে মিতু বেশ কয়েকবার ওহিকে জোড়ালো ভাবে ভিডিও ডিলিট করে দিতে বলেছে। কিন্ত ওহির মধ্যে মিতুর কথায় কোন হেলদোল নেই। সে স্বাভাবিক ভাবেই তাদের কথাগুলো শুনছে। ওহিকে এভাবে দেখে রোহান রেগে ওহির গাল চেপে ধরে,
–ভালোয় ভালো বলছি ওহি। আমাদের খারাপ হতে বাধ্য করো না। নয়তো পরে আফসোস করবে।
ওহি রোহানের হাত সরিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়িয়ে,
–এতো ভয় পাচ্ছেন কেনো রোহান ভাইয়া? আপনি আমার কথামতো আর কোন জুনিয়রদের বিরক্ত না করলেই তো আমি এই ভিডিও স্যারকে দেখাবো না। আমার কথা মেনে নিলেই তো পারেন।
–রোহান কারো কথায় চলে না। আর আমাকে হুমকি দেওয়ার আগে তোমার দুবার ভেবে নেওয়া উচিত ছিলো। এখনো বলছি ভিডিও ডিলিট করো। নয়তো..।
–আপনার যা ইচ্ছে হয়, আপনি করতে পারেন। কিন্তু আমি যা বলেছি, তাই হবে।
ওহি কথাগুলো বলে আর একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে আসে। রোহান রেগে ওহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিতুর দিকে ফিরে,
–এর একটা ব্যবস্থা করো, মিতু। এমন শিক্ষা দাও, যেনো পরবর্তীতে কেউ এমন ভুল করার আগেই কেঁ/পে উঠে।
রোহানের কথায় মিতু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোঝায়।

এদিকে,
আফরা আর রোদ্দুর একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আশ্বিন তাদের পাশে বসে বই পড়ছে। রোদ্দুর আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,
–সেদিন তো বলেছিলি রাফিন আসলেই চিরকুট লেখক কিনা তা বের করবি। এখন তো কিছুই করছিস না তুই।
–একটু অপেক্ষা কর রোদ। রাফিন এতো সহজে ধরা দেওয়ার মতো ছেলে না। আমরা সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছি।
–রাফিনকে ধরা এতো সহজ হবে না আশ্বিন। ভার্সিটিতে সে তার রেজাল্ট, পারফরম্যান্স সবকিছু কিন্তু তোকে টক্কর দেওয়ার মতো করেই করে। স্যারদের দৃষ্টিতেও সে ভালো। এখন আমাদের একটা ভুল কাজ কিন্ত স্যারের চোখে আমাদেরই খারাপ করতে পারে।
আফরার কথায় আশ্বিন মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। রোদ্দুর তাদের দিকে তাকিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য অন্য বিষয়ে কথা বলতে শুরু করে।

ক্লাসে বসে আছে ওহি আর জাইমা। নবীন বরণের জন্য বেশ কয়েকদিন পড়ালেখায় গাফিলতি হওয়ায় ওহি এবার বেশ সিরিয়াস হয়েই পড়ছে। সেদিন তো, আশ্বিনকে জোর গলায় বলে এসেছিলো তার রেকর্ড ভাঙার কথা। কিন্ত এই রেকর্ড ভাঙা কি এতোই সহজ কাজ নাকি? দিন রাত এক করে পড়লেও সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ আছে, অথচ আশ্বিন কিভাবে পড়ার পাশাপাশি এভাবে ভার্সিটির ছোট খাটো দায়িত্ব পালন করছে!
ওহি কথাগুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লাসের জানালা দিয়ে বাহিরে মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখে আশ্বিন একটা বেঞ্চে বসে মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে। তার পাশে বসে আফরা আর রোদ্দুর কিসব কথা বলে যেনো হাসছে।
–কি দেখছিস তুই এভাবে?
–এমনি তাকিয়ে ছিলাম।
–নিশ্চয়ই এতো সুন্দর আবহাওয়া দেখে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে? আমিও তাই ভাবছিলাম, চল কোথাও ঘুরে আসি।
–সম্ভব না জাইমা।
–ওমা, কেন? কি হয়েছে তোর?
–এমনিতেই ফাংশন আর গানের জন্য অনেক পড়া ফাঁকি দিয়েছি। কাল তো বাবাও রাগ করেছে এই নিয়ে। তাই এখন সিরিয়াস মুডে আছি।
–তোর আব্বুও না, সারাদিন পড়া আর পড়া! যাই হোক, ক্লাস শেষ। বাসায় যাবি?
–তুই যা। আমার একটু লাইব্রেরীতে কাজ আছে।
–ঠিক আছে। বাসায় পৌঁছে ফোন দিস।
জাইমা চলে যেতেই ওহি ক্লাস থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরীতে চলে আসে।

এদিকে, জাইমা ক্লাস থেকে বেরিয়ে মাঠের কাছে আসতেই রোদ্দুর আফরাকে বসে থাকতে দেখে সেদিকে এসে,
–কেমন আছেন রোদ ভাইয়া?
রোদ্দুর পিছনে ফিরে জাইমাকে দেখেই একটা হাসি দিয়ে,
–আরে জাইমা! বিশ্বাস করবে কিনা জানি না, কিন্ত আমি এই মাত্র তোমার কথাই বলছিলাম তাদের। তাই না আফরা?
আফরা রোদ্দুরের দিকে একবার তাকিয়ে,
–হ্যাঁ। রোদ তো এখন সারাদিন তোমাকে নিয়েই গল্প করে। জাইমা, ওহিকে দেখছি না যে। আসেনি আজ?
–এসেছে তো। ওহি একটু লাইব্রেরীতে আছে। ক্লাস শেষ, তাই আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।
রোদ্দুর বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে,
–কিহ? চলে যাবে মানে? এতো সুন্দর আবহাওয়া আজ। এই আবহাওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে তুমি কিভাবে চলে যাবে? আমি আরও ভেবেছিলাম তোমাকে সাথে নিয়ে ঘুরতে যাবো।
জাইমা কিছুটা লজ্জা পেয়ে,
–কোথায় যাবেন রোদ ভাইয়া?
–চলো দেখি কোথায় যাওয়া যায়।
রোদ্দুর কথাটা বলে জাইমার সাথে চলে যেতে নিতেই আফরা তাদের থামিয়ে,
–আরে রোদ কোথায় যাচ্ছিস? ক্লাস আছে এখন আমাদের।
রোদ্দুর আফরার কথায় জাইমার দিকে একবার তাকিয়ে আফরার কানের কাছে এসে,
–তুই কর ক্লাস। আমি এখন তোদের ভাবিকে ইমপ্রেস করতে ব্যস্ত আছি।
রোদ্দুর কথাটা বলেই জাইমার সাথে চলে আসে। আফরা অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে,
–এই রোদ তো দেখছি, হাত ধুঁয়ে জাইমার পিছে পড়ে আছে। এরপর, বিকেলে এসে আমার কাছে নোট চেয়ে দেখুক খালি। দেখে নিবো তাকে।
আশ্বিন আফরার কথায় কিছু না বলে উঠে দাঁড়িয়ে,
–চল ক্লাসে যাই।
আফরা আর কথা না বাড়িয়ে আশ্বিনের সাথে ক্লাসের দিকে চলে আসে।

আশ্বিন ক্লাসের দিকে যাওয়ার সময় নিজের অজান্তেই লাইব্রেরীর দিকে একবার তাকিয়ে দেখে ওহি আর রাফিন একসাথে বসে পড়া নিয়ে আলোচনা করছে। আশ্বিনকে কিছুক্ষণ সেদিকে চুপচাপ তাকিয়ে থাকতে দেখে আফরা সেদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে,
–রাফিনের এভাবে ওহির সাথে বন্ধুত্ব করাটা আমার কাছে সুবিধার মনে হচ্ছে না আশ্বিন। ওহিকে এই নিয়ে সতর্ক করা উচিত।
–লাভ নেই বলে। ফাইজাকে সেদিন বলেছিলাম রাফিনের কথা। হয়তো বিশ্বাস করেনি। তাই তো, এখনও রাফিনের সাথে আছে সে।
আশ্বিন কথাটা বলে সেখান থেকে চলে যায়। আফরা ঠিকই বুঝতে পারছে আশ্বিন রেগে আছে। সে ওহির দিকে একবার তাকিয়ে চলে আসে।
——————-

–ধন্যবাদ ভাইয়া, আমাকে এই প্রশ্নটা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। এখন মনে হচ্ছে, এই টপিক বুঝতে আর কোন অসুবিধা হবে না।
–আরে ঠিক আছে। এভাবে, কখনও সাহায্য লাগলে আমাকে বলবে। আমি চেষ্টা করবো হেল্প করার।
ওহি মাথা নেড়ে রাফিনের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।

ওহি লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই কয়েকজন মেয়ে ওহির সামনে এসে তার হাত টেনে ধরে তাকে পুরনো এক রুমে নিয়ে আসে। ওহি তাদের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে,
–ছাড়ুন আমাকে। এভাবে আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন?
ওহি রেগে তাদের দিকে তাকিয়ে চলে আসতে নিতেই দুজন মেয়ে ওহির মুখ আর হাত বেঁধে ফেলে। ওহি যখন নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলো তখন মিতু মাক্স পড়ে রুমে প্রবেশ করে ওহির চোখ থেকে চশমা নিয়ে তা ভেঙে দূরে ফেলে দেয়। এমনিতেও রুমে খুব হালকা আলো তার উপর চশমা নিয়ে নেওয়ায় ওহি সবকিছুই ঝাপসা দেখতে থাকে।

মিতু কোন কথা না বলে ওহির কাছে এসে তাকে এক ধাক্কা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ের সামনে ফেলে দেয়। মেয়েটি ওহিকে টেনে তুলে অপর জনের দিকে ধাক্কা দেয়। এভাবে সবাই মিলে ওহিকে একে অপরের দিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে শুরু করে। ওহি চিৎকার করলেও, মুখ বন্ধ থাকায় সেই শব্দ কেউ শুনতে পারে না। তখন, মিতু ওহিকে ধরে একটু দূরে সজোরে ধাক্কা দিতেই সেখানে থাকা টেবিলের কোণায় ওহির মাথা বাড়ি খেয়ে মুহূর্তেই জ্ঞান হারায়।
–কি হলো? মনে হচ্ছে এই মেয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।
একটি মেয়ে ওহির কাছে এসে তাকে খেয়াল করে,
–মিতু, মেয়েটার মাথা থেকে তো র/ক্ত বের হচ্ছে। এখন কি হবে? স্যারকে যদি এই নিয়ে বিচার দেয়। আমরা ফেঁ/সে যাবো সবাই।
–সেই সুযোগ সে পাবে না। তিনদিন ভার্সিটি বন্ধ। এই তিনদিন কেউ আসবে না এখানে।

মিতু কথাটা বলে ওহির ব্যাগ থেকে ফোন বের করে সবাই মিলে ক্লাস থেকে বেরিয়ে দরজায় তালা দিয়ে দেয়। তাদের মধ্য একটা মেয়ে অবাক হয়ে,
–মিতু, এভাবে থাকলে মেয়েটা মা/রা যাবে। আমরা তো তাকে ভয় দেখাতে এসেছিলাম, মে/রে ফেলতে না।
মিতু তার দিকে তাকিয়ে,
–তোর খুব মায়া হচ্ছে ওহির জন্য? চাইলে আমরা তোকেও তার পাশে রেখে যেতে পারি।
মিতুর কথায় মেয়েটি চুপ হয়ে যায়। মিতু হেসে উঠে ওহির ফোন দেখতে দেখতে সেখান থেকে চলে আসে।

–চলবে(ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here