#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:০৪
ওহি বাসার সামনে আসতেই ওহির মা তাকে জানালা দিয়ে দেখে দ্রুত তার কাছে এসে,
–ওহি,তোমাকে সকালে কতোবার করে বলেছি আজ তোমার বাবা আসবে, তাড়াতাড়ি চলে এসো। আমার কোন কথাই তুমি শোন না।
–মা, আমি ভুল করে লাইব্রেরীতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
–তোমাকে আসলেই কিছু বলার নেই আমার। এখন চলো, বাবা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
ওহি চুপচাপ মাথা নেড়ে মায়ের সাথে ঘরে এসে দেখে বাবা, দাদি আর ওসমান একসাথে বসে গল্প করছে। ওহি সেখানে যেতেই বাবা ওহির দিকে তাকিয়ে ইশারায় তাকে বসতে বলে। ওহি বাবার পাশে বসে মায়ের দিকে একনজর তাকিয়ে,
–বাবা, কেমন আছো তুমি?
–এইতো ভালো আছি। ভার্সিটিতে ক্লাস কেমন চলছে তোমার?
–ভালই চলছে বাবা।
–ভালো হলে তো ভালোই। নিয়মিত ক্লাস করছো তো? ক্লাস কিন্তু মিস দিতে পারবে না ওহি।
–জি বাবা।
–হুম। ভেবেছিলাম ওসমানের মতো তুমিও মেডিকেলে পড়বে, ডাক্তার হবে। কিন্তু, ভর্তি পরীক্ষায় চান্স না পেয়ে তুমি সত্যিই আমাকে হতাশ করেছো। যাই হোক, ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছো, ভালো কথা। এখন তোমার রেজাল্ট কিন্তু ভালো চাই আমার। বুঝেছো তুমি?
–জি বাবা।
ওহি মাথা নিচু করে কথাটা বলে চুপ হয়ে যায়। ফারজানা বেগম একনজর ওহির দিকে তাকিয়ে,
–আচ্ছা এসব কথা এখন থাক না। এতদিন পর এসেছেন। সেখানে গিয়ে কি কি হয়েছে সেই গল্প বলুন বাচ্চাদের।
ফারজানা বেগম কথাটা বলে ওসমানকে চোখ দিয়ে ইশারা দিতেই ওসমান মাথা নেড়ে ওহির দিকে তার হাতটা এগিয়ে দিয়ে,
–এই ওহি দেখ, বাবা আমার জন্য ঘড়িটা নিয়ে এসেছে।
–খুব সুন্দর হয়েছে ভাইয়া। এই ঘড়িটা কিনার তোমার অনেক ইচ্ছে ছিলো, ফাইনালি পেয়ে গিয়েছো।
–হুম। বাবা, ওহির জন্য কি নিয়ে এসেছো?
ওহির বাবা একনজর ওহির দিকে তাকিয়ে ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বক্স বের করে ওহির দিকে এগিয়ে দেয়। ওহি চুপচাপ চকলেট বক্সটা নিয়ে বসে থাকে।
ওহিকে মাথা নিচু করে এভাবে চুপচাপ থাকতে দেখে ওসমান আর ফারজানা বেগম একে অপরের দিকে তাকায়। দাদি তখন তাদের অবস্থা বুঝে,
–এই ওহি বুড়ি, অর্ধেক চকলেট কিন্তু আমাকেও দিবি। মনে থাকে যেনো। বুড়ো হয়ে গিয়েছি বলে কি চকলেট খেতে পারবো না নাকি?
ওহি মাথা তুলে দাদির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে,
–চকলেট খেলে কিন্তু তোমার দাঁতে পোকা হবে দাদি।
ওহির কথায় ওসমান হেসে উঠে। ওহির বাবা শক্ত মুখে ওহির দিকে তাকাতেই ওহি চুপ করে মাথা নিচু করে ফেলে।
–তুমি এখন বড় হচ্ছো ওহি। দাদির সাথে এভাবে কথা বলবে না।
–ওহি তো মজা করে কথাটা বলেছে বাবা…।
–এখন এভাবে মজা করার বয়স তার নেই ওসমান। ওহিকে এখন সিরিয়াস হয়ে পড়ায় মনোযোগ দিতে হবে। কারন এটাই তার একমাত্র দায়িত্ব।
যাই হোক, এখন সে ভার্সিটিতে পড়ে, যথেষ্ট বড় হয়েছে। তাই এই ফোনটা ওহির জন্য নিয়ে এসেছি। তবে খবরদার, এই ফোনের জন্য যেন তোমার পড়ার কোন ক্ষতি না হয়।
বাবা কথাটা বলে ওহির হাতে একটা ফোনের বক্স দিয়ে তাকে নিজের ঘরে যেতে বলে। ওহি মাথা নেড়ে বাবাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাধ্য মেয়ের মতো ঘরে চলে আসে।
সন্ধ্যায় নিজের রুমে পড়ছিলো ওহি। তখনই ওসমান তার রুমে প্রবেশ করে পড়ার টেবিলের উপর ওহির নতুন ফোনের বক্সটা হাতে নিয়ে খাটে বসে,
–জীবনের প্রথম নিজের একটা ফোন পেয়েও কীভাবে এটা ফেলে রেখেছিস। আয় তো, দেখি তোর নতুন ফোনটা কেমন। বেশি ভাল হলে কিন্ত আমি নিয়ে নিবো। কি হলো? আয় এখানে..।
ওসমান কথাটা বলে ওহির দিকে তাকাতেই ওহি চুপচাপ পড়ার টেবিল থেকে উঠে ওসমানের পাশে বসে পড়ে।
–তোর মন খারাপ?
–বাবা সবসময় এমন কেনো করে ভাইয়া? কখনো ভালো করে জিজ্ঞেসও করে না, ওহি কেমন আছো? বাবার কাছে আমার থেকে আমার ভালো রেজাল্ট বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেনো? সবসময় আমাকে তোমার মতোই হতে হবে কেনো?
–ওহি, বাবা আমাদের দুজনকেই সমান ভাবে ভালোবাসে। বাবা সবসময় চায় তুই যেনো অনেক বড় কিছু হতে পারিস। আমি জানি, বাবা তোকে নিয়ে আমার থেকেও বেশি স্বপ্ন দেখে। সবার ভালোবাসা প্রকাশের পদ্ধতি এক হয় না বোন। বাবার প্রকাশ করার এই পদ্ধতি মানছি কঠোর, কিন্তু গভীর।
ওসমানের কথা শুনে ওহি একনজর তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ে। ওসমান মুচকি হেসে,
–এই ওহি। দেখ তোর ফোনের ক্যামেরা কতো সুন্দর। ভালোই হলো এখন আর কোন অনুষ্ঠানে আমার তোর ছবি তোলে দিতে হবে না। আয়, ভাই বোন মিলে একটা ছবি তুলে তোর ক্যামেরার উদ্ভোদন করি।
ওহি ওসমানের হাত থেকে ফোন নিয়ে দুজন মিলে একটা ছবি তোলে।
–ভাইয়া, আমাকে কতো সুন্দর লাগছে দেখো। আর সব সময়ের মতোই তোমাকে কেমন বোকা বোকা লাগছে ছবিটায়।
ওহি কথাটা বলে আপন মনে হাসতে শুরু করে। ওসমান মুচকি হেসে ওহির দিকে একবার তাকিয়ে দরজার আড়ালে ফারজানা বেগমের দিকে তাকায়। মা ঠিকই বলে, ওহির মন খারাপ ভালো করতে একমাত্র তার ভাইয়াই যথেষ্ট।
মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে ওসমান মুচকি হেসে ওহির সাথে খুনসুটি শুরু করে।
——————-
মুখ ফুলিয়ে ক্লাস করছে ওহি। সকালে উঠে জাইমার টেক্সট দেখে তার মনটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে। কি সুন্দর করে জাইমা লিখেছে,
“ওহি, আমি বাবা মায়ের সাথে দাদু বাড়ি যাচ্ছি। বাবা হুট করেই সিদ্ধান্ত নিলো সেখানে যাওয়ার। তাই তোকে আগে বলতে পারিনি। ভাবিস না, দুদিন পরেই ফিরে আসবো। এর মাঝে বাহাদুরি করে একাই আবার রোহান বা আশ্বিন ভাইয়ার সাথে কোন রকম ঝামেলা করিস না। ফিরে এসে তোর নতুন ফোন দিয়ে ছবি তুলবো। মিস ইউ বান্ধুবী।”
কথাগুলো ভেবে ওহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
–ধুর, ভালো লাগছে না। এভাবে একা একা ক্লাস করা যায় নাকি?
একাই কথাটা বলে ক্লাস থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরীর দিকে যাওয়ার সময় হঠাত গানের শব্দ শুনে অডিটোরিয়ামের সামনে এসে দরজার আড়াল থেকে দেখে সেখানে কয়েকজন ছেলে আর মেয়ে মিলে গ্রুপ ডান্স প্র্যাক্টিস করছে। কয়েকজন আবার কাপল ডান্স করছে তো কয়েকজন মিলে র্যাম-শো করছে। একজন মেয়ে তাদের ডান্সের স্টেপ শিখিয়ে দিচ্ছে। ওহি আড়াল থেকে এসব দেখে আনমনে বলে উঠে,
–মনে হচ্ছে নবীন বরণে খুব বড় করেই আয়োজন করা হবে।
–ঠিক ধরেছো তুমি।
হঠাত কেউ তার কথার উত্তর দেওয়ায় ওহি চমকে উঠে পিছনে ফিরে দেখে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
–এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে ডান্স দেখতে হবে না। ভেতরে প্রবেশ করার পারমিশন সবারই আছে। চলো আমার সাথে।
ওহি কিছু না বলে ছেলেটার পিছু পিছু অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ে। ছেলেটা তার সামনে বসে,
–এই ছোটু এই আপুর জন্য এক কাপ চা নিয়ে আয় তো।
–না না ধন্যবাদ। আমি চা খাবো না। গানের শব্দে শুনে এমনি দেখছিলাম ডান্সগুলো।
–সমস্যা নেই। তোমাকে তো আগে দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না।
–জি। আমি এবার নতুন। মানে ফাস্ট ইয়ার।
–ওহ আচ্ছা। কি নাম তোমার?
–আমি ওহি।
–ওহি! সুন্দর নাম। আমার নাম রাফিন। নবীন বরণের এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সকল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমার উপর।
–ওহ! আমি শুনেছিলাম নবীন বরণের দায়িত্ব আশ্বিন ভাইয়াকে দেওয়া হয়েছিল।
–হুম। আশ্বিনের উপর অনুষ্ঠানের ডেকুরেশন, প্রধান এবং বিশেষ অতিথির আপ্যায়ন সহ আরো কিছু দায়িত্ব দেওয়ার হয়েছে। আর আমাকে এটা।
–বুঝতে পেরেছি। আপনি কি আশ্বিন ভাইয়ার বন্ধু?
–আশ্বিন আমার ক্লাসমেট। সেই হিসেবে বন্ধুও বলতে পারো। বাই দ্য ওয়ে, তুমি চাইলে নাচ গানে নাম দিতে পারো।
–আমি? আমি তো নাচ গান তেমন পারি না।
–সমস্যা নেই। রিমা আছে তো সবাইকে শিখিয়ে দেওয়ার জন্য।
ওহি স্টেজের দিকে একবার তাকিয়ে মুচকি হেসে,
–আমার বান্ধবী আজ ক্লাসে আসেনি। কাল তার সাথে কথা বলবো, যদি সে রাজি হয় তো আমি এসে আপনাকে জানাবো।
–ঠিক আছে।
ওহি মাথা নেড়ে চলে আসতে নিতেই রাফিন পেছন থেকে ডেকে উঠে,
–ওহি! তোমার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। দেখা হবে।
ওহি রাফিনের দিকে ফিরে তাকিয়ে মুচকি হেসে বেরিয়ে মাঠের দিকে আসতেই আশ্বিনের সামনে পড়ে।
ওহি তাকে দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিতেই,
–চশমা! অডিটোরিয়ামে কি করছিলে তুমি? প্লিজ বলো না, তুমি নাচে নাম দিয়েছো।
ওহি শান্ত ভাবে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,
–দিয়েছি। কেনো কি হয়েছে? আমি নাচে নাম দিলে কি সমস্যা হবে?
আশ্বিন একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,
–রোদ্দুর, ডেকুরেটরকে বলিস যেনো স্টেজটা মজবুত করে বানায়। আমি কোন রিস্ক নিতে চাই না।
আশ্বিনের কথায় ওহি রেগে তার দিকে তাকিয়ে,
–এই কি বললেন আপনি? কি বুঝালেন এটা বলে?
এদিকে রোদ্দুর ওহির এমন রেগে বলা কথাটা শুনে হেসে উঠে।
আশ্বিন একটা বাঁকা হাসি দিয়ে কিছু বলতে নিবে হঠাত ওহির পেছনে তাকিয়ে আচমকা ওহির হাত ধরে টেনে তার কাছে নিয়ে আসে। হুট করে এমন করায় ওহি অবাক হয়ে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দেখে, আশ্বিন খুবই শান্ত ভাবে তার পিছনে কারো দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে আশ্বিন ধীরে ধীরে সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে ওহির দিকে তাকিয়ে দেখে সে অবাক হয়ে চোখ বড় করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
হঠাত ওহি আশ্বিনকে একটা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই রোদ্দুর আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
–এই বল কোথা থেকে আসলো? তুই না দেখলে এখনই তো একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো।
রোদ্দুরের কথায় ওহি তাকিয়ে দেখে আশ্বিনের হাতে একটা ক্রিকেট বল। মানে বলটা ওহির মাথায় এসে লাগার আগেই আশ্বিন সেটা ধরে ফেলেছে। ওহি একবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে,
–এই বল কোথা থেকে এলো? এখানে তো কেউই খেলছে না। তবে?
আশ্বিন কিছু না বলে ওহির দিকে তাকিয়ে,
–তোমার ক্লাস নেই? যাও ক্লাসে যাও।
ওহি ভ্রু কুঁচকে আশ্বিনের দিকে একবার তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে চলে আসে। ওহি চলে যেতেই আশ্বিন হাতে থাকা বল’টায় তাকিয়ে দেখে বলের ভেতর একটা চিরকুট রাখা আছে। রোদ্দুর চিরকুট দেখে আশ্বিনের দিকে অবাক হয়ে তাকাতেই আশ্বিন বলে উঠে,
–কালো শার্ট পড়া একটা ছেলে এই বলটা এদিকে ছুঁড়েছে। মাক্স পড়া ছিলো তাই চেহারা খেয়াল করিনি। তুই গিয়ে দেখ কে এই ছেলে।
রোদ্দুর মাথা নেড়ে দ্রুত সেদিকে চলে যায়। আশ্বিন রোদ্দুরের যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে হাতের চিরকুট পড়ে ভার্সিটির ভেতর চলে আসে।
–চলবে(ইনশাআল্লাহ)
((আসসালামু আলাইকুম। ভুল ত্রুটি ক্ষমা চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ))
#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:০৫
ক্লাসে বসে আছে ওহি আর জাইমা। স্যারের দিকে দৃষ্টি রেখে ওহি ফিসফিস করে জাইমাকে বলে উঠে,
–দাদু বাড়ি থেকে দুদিন পর চলে আসবি বলে আজ সাতদিন পর ভার্সিটি আসলি। আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম আংকেল হয়তো তোর বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
জাইমা মুচকি হেসে স্যারের দিকে তাকিয়েই,
–বিয়ে দিলে তো ভালোই হতো, পড়ালেখার দ্যা-ইন্ড হয়ে যেতো। কিন্ত বিয়ে দিচ্ছে না। অনেক দিন পর দাদুর কাছে গিয়েছি তো তাই দাদু আসতেই দিতে চাইছিলো না।
ওহি একনজর জাইমার দিকে তাকিয়ে আবার স্যারের কথায় মনোযোগ দেয়।
ক্লাস শেষে সবাই বের হতে নিবে তখন আফরা আর কয়েকজন মেয়ে তাদের ক্লাসে প্রবেশ করে,
–একটু বসো সবাই। তোমাদের সাথে কথা আছে।
আফরার কথা মতো সবাই যার যার সিটে বসে পড়ে।
–আগে নিজের পরিচয় দিয়ে নেই, যদিও জানি তোমরা কম বেশি সবাই আমাকে চেনো। আমার নাম আফরা। এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ার। আর ও হলো ইশা, আমার ফ্রেন্ড। যাই হোক, তোমারা জানোই ভার্সিটির সকল ফাংশনের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে আর আশ্বিনকে। এবারও তোমাদের নবীন বরণের দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয়েছে। তো, নবীন বরণ নিয়েই কিছু কথা তোমাদের বলি।
ওহি এতোক্ষণ হা করে আফরার বলা কথাগুলো শুনছিলো। জাইমা একবার ওহির দিকে তাকিয়ে তার মুখ বন্ধ করে দিয়ে,
-মুখ বন্ধ রাখ, মশা ঢুকে যাবে।
–আপুটা এতো সুন্দর কেনো জাইমা? দেখ কি সুন্দর করে কথাগুলো বলছে।
–হুম। শুধু সুন্দর না, আফরা আপু অদ্ভুত সুন্দরী। ভার্সিটিতে আপুর মতো সুন্দর কেউ আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে।
–আমারও তাই মনে হয়।
–জানিস, আফরা আপু আশ্বিন ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড? তারা সেই কিন্ডারগার্ডেন থেকে একসাথে পড়ছে। তাদের মাঝে বন্ধুত্বের বন্ডিং কিন্তু অনেক স্ট্রং।
জাইমার কথায় ওহি একবার তার দিকে তাকিয়ে আবার আফরার দিকে তাকায়।
–আমরা প্রতি বছর নবীন বরণের অনুষ্ঠান অনেক বড় করে আয়োজন করার চেষ্টা করি। কেননা, হাসান স্যার বলেন নবীনরা হলো আমাদের ভবিষ্যত। আজ আমরা যেই নবীনদের উৎসবমুখর পরিবেশে নিজেদের মাঝে আপন করে নিচ্ছি, ভবিষ্যতে তারাও আমাদের মতো করে তাদের নবীনদের জন্য এভাবে বড় আয়োজন করে বরণ করে নিবে। এর ফলে, সিনিয়র আর জুনিয়রদের মাঝে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হবে।
এক সপ্তাহ পর তোমাদের নবীন বরণ। তোমরা যদি কেউ নাচ গান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাম দিতে চাও তবে ক্লাস শেষে আমার সাথে যোগাযোগ করবে।
আফরা কথাগুলো বলে মুচকি হেসে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতেই ওহি এক ছুঁটে তার কাছে এসে,
–আফরা আপু!
আফরা ডাক শোনে পিছনে ফিরে,
–কিছু বলবে ওহি?
আফরার মুখে নিজের নাম শুনে ওহি অবাক হয়ে,
–আপনি আমার নাম জানেন?
–আশ্বিন আর রোদ্দুরের কাছে শুনেছি তোমার কথা। এছাড়াও তোমার সাথে সেদিন ভার্সিটির ছাদে দেখা হয়েছিলো। মনে আছে?
–ওহ! জি মনে পড়েছে। আপু আমি আর জাইমা মিলে গানে নাম দিতে চাই। সেদিন রাফিন ভাইয়া বলেছিলেন উনার কাছে নাম দেওয়ার জন্য। কিন্তু জাইমা এতোদিন ক্লাসে না আসায় আমি নাম দিতে পারিনি।
আফরা কিছুটা অবাক হয়ে,
–রাফিন তোমাকে বলেছে নাচ গানে নাম দেওয়ার কথা?
–জি আপু।
–ওহ! ঠিক আছে। তুমি ক্লাস শেষে অডিটোরিয়ামে চলে এসো। আর আমাকে তুমি করেই ডাকবে, আপনি করে বলতে হবে না।
–ঠিক আছে আপু।
আফরা মুচকি হেসে চলে যেতেই ওহি জাইমার কাছে চলে আসে।
ক্লাস শেষে ক্যান্টিন থেকে অডিটোরিয়ামের দিকেই যাচ্ছিল ওহি আর জাইমা। হুট করে রোহান আর মিতু তাদের পথ আগলে দাঁড়ায়।
–কি খবর চশমিশ? ভালোই তো, সেদিন আশ্বিন ভাইকে বলে আমাদের শাস্তির ব্যবস্থা করেছো। তোমার জন্যই এই এক সপ্তাহ আমার ক্লাস মিস দিতে হয়েছে।
মিতু ওহির সামনের এসে,
–তুমি ভেবো না। আশ্বিন ভাইয়াকে বলে তুমি আমাদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছো। এর ফল তোমাকে পেতে হবে। কথাটা মনে রেখো।
মিতুর কথায় ওহি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,
–জানতাম আপনারা এতো সহজে ভালো হবেন না। তবে এটা ভুল বলেছেন, আমি কাউকে বলে আপনাদের শাস্তির ব্যবস্থা করিনি। কারন, আপনাদের শিক্ষা দিতে আমার কাউকে প্রয়োজন নেই। আমি একাই যথেষ্ট আছি।
ওহির কথায় রোহান আর মিতু একসাথে হেসে উঠে,
–তুমি আমাদের ভয় দেখাচ্ছো চশমিশ?
–ভয় দেখাচ্ছি কি না, এটা তো সময় হলেই দেখা যাবে। আমাকে দূর্বল ভেবে ভুল করবেন না রোহান ভাইয়া।
–ঠিক আছে, দেখা যাবে। তুমি কি করতে পারো।
রোহান কথাটা বলে মিতুকে নিয়ে চলে যায়। জাইমা ওহির দিকে তাকিয়ে,
–এতোকিছু হয়ে যাওয়ার পরও আমাদের পিছু ছাড়ছে না কেনো তারা? অসহ্য!
–এর একটা ব্যবস্থা করা এখন জরুরী হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই তাদের বুঝিয়ে দিবো ওহি আসলে কি।
ওহি কথাটা বলে জাইমার সাথে অডিটোরিয়ামে চলে আসে।
আশ্বিন রোদ্দুর আর আফরা মিলে অনুষ্ঠানের সব জরুরী হিসাব পত্র দেখছিলো। ওহি আর জাইমা আফরার কাছে আসতেই আশ্বিন মাথা তুলে একবার ওহির দিকে তাকায়। আফরা তাদের দেখে মুচকি হেসে,
–এসেছো তোমরা? আমি তোমাদের নাম লিখে দিয়েছি। যেহেতু অনুষ্ঠানের আর বেশি সময় নেই তাই তোমাদের প্রতিদিন ক্লাস শেষে দু’ঘন্টা করে প্র্যাক্টিস করতে হবে।
আশ্বিন আফরার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,
–নাম দিয়েছিস মানে? এই চশমা, তুমি কি সত্যিই নাচে নাম দিয়েছো নাকি?
ওহি আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে,
–নাহ, আমি আর জাইমা মিলে গানে নাম দিয়েছি।
–গান? গান পারো তুমি?
ওহি রেগে আশ্বিনকে কিছু বলতে যাবে তখন আফরা বলে উঠে,
–আশ্বিন, বিরক্ত করিস না তো মেয়েটাকে। ওহি শখ করে গানে নাম দিয়েছে, তোর এতে কি সমস্যা?
আফরার কথায় আশ্বিন কিছু না বলে ওহির দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেয়।
এদিকে, রোদ্দুর জাইমার দিকে তাকিয়ে,
–কোন গান গাইবে তোমরা?
–এখনো সিলেক্ট করিনি ভাইয়া।
জাইমার কথায় রোদ্দুর মুচকি হাসে। আশ্বিন একবার ওহির দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে হিসাবের খাতাটা খুলে,
–রোদ্দুর তুইও না, আসলেই। এই পিচ্চি চশমা, “আমাদের দেশটা স্বপ্নপরি” ছাড়া আর কি গাইবে।
আশ্বিনের কথায় জাইমা সহ বাকিরা একসাথে হেসে উঠে। ওহি রেগে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,
–আপু দেখেছো তুমি, উনি আমাকে নিয়ে কিভাবে মজা করছে।
আফরা আলতো করে আশ্বিনকে ধাক্কা দিয়ে,
–থামবি তুই? ওর কথায় কিছু মনে করো না ওহি। আমাদের গান শেখানোর জন্য ম্যাডাম আছে। উনি তোমাদের গান সিলেক্ট করে দিবে। এসো পরিচয় করিয়ে দেই তোমাদের।
ওহি আশ্বিনের দিকে একটু রাগী ভাবে তাকিয়ে আফরার সাথে যেতে নিতেই পেছন থেকে কেউ একজন তাকে ডেকে উঠে। ওহি পিছনে ফিরে মুচকি হেসে,
–রাফিন ভাইয়া!
ওহি কথাটা বলেই রাফিনের দিকে চলে যায়।
এদিকে ওহির মুখে রাফিনের নাম শুনে আশ্বিন খাতা থেকে মুখ তুলে পিছনে ফিরে দেখে ওহি আর রাফিন একসাথে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলছে। আশ্বিনের মতো রোদ্দুরও একবার সেদিকে তাকিয়ে,
–হ্যাঁ! কি দেখছি আমি? প্লিজ কেউ আমাকে বলো আমি ভুল দেখছি। মানে রাফিন ওহির সাথে কথা বলছে! তাও নিজ থেকে?
আফরা আর জাইমা রোদ্দুরের পাশে বসে। আফরা রোদ্দুরের কথায় সায় দিয়ে,
–ঠিকই দেখছিস তুই। বাই দ্য ওয়ে, রাফিন নাকি নিজ থেকেই ওহিকে বলেছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাম দেওয়ার জন্য।
আফরার কথায় রোদ্দুর চোখ বড় বড় করে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে আফরার দিকে ফিরে তাকায়। এদিকে, আশ্বিন এক ধ্যানে ওহি আর রাফিনের দিকেই তাকিয়ে আছে।
–যাক ভালোই। খুশি হলাম তুমি গানে নাম দিয়েছো শুনে।
–আমি আসলে দুঃখিত, সেদিন আপনাকে বলার পর এতোদিন দেখা করতে পারিনি।
–আরে ব্যাপার না। এখন তো প্রতিদিনই দেখা হচ্ছে।
–হুম। আচ্ছা ভাইয়া, আমি আপনার সাথে একটু পর কথা বলছি আসলে আমরা গান সিলেক্ট করবো।
–ওহ। ঠিক আছে। বাই।
ওহি রাফিনের থেকে বিদায় নিয়ে আশ্বিনদের সামনে আসতেই আফরা তাদের নিয়ে স্টেজের কাছে চলে যায়। আশ্বিন সেদিকে একবার তাকিয়ে আবার খাতায় নিজের কাজ করতে শুরু করে।
কিছুক্ষণ পর স্টেজ থেকে মন কেড়ে নেওয়ার মতো একটি গানের সুর শুনে আশ্বিন সামনে ফিরে দেখে ওহি আপনমনে গান গাইছে। ওহির গান শুনে আশ্বিন অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠে,
–পিচ্চি তো ভালোই গান গায়। হুহ, দেখে বোঝা যায় না তার গানের কণ্ঠ এতটা সুন্দর।
আশ্বিন নিজের অজান্তেই একমনে ওহির দিকে তাকিয়ে তাকে দেখে যাচ্ছে। এদিকে রোদ্দুর সেই কখন থেকে আশ্বিনের সাথে কথা বলছে। কিন্তু আশ্বিনের কোন প্রতিক্রিয়া না পেয়ে তার দিকে ফিরে দেখে আশ্বিন অবাক চোখে ওহির গান গাওয়া দেখে যাচ্ছে। রোদ্দুর কিছুক্ষণ ব্যাপারটা খেয়াল করে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,
”আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি,
আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি…”
রোদ্দুরের কথায় আশ্বিনের হুশ ফিরতেই সে রাগী ভাবে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে,
–কি বলছিস তুই পাগলের মতো।
–বুঝি বন্ধু, বুঝি। আমার চোখ ফাঁকি দেওয়া কি এতোই সোজা নাকি? নিজের চোখে সব কিছুই দেখছি আমি।
–হুম, এই জন্যই এখনো হিসাবে কোথায় ভুল করেছিস এটা খুঁজে পাচ্ছিস না। বেশি কথা না বলে নিজের কাজে মনোযোগ’দে।
রোদ্দুর আশ্বিনের কথায় হাসতে হাসতে খাতার দিকে ফিরে কাজ শুরু করে। আশ্বিন রোদ্দুরের থেকে চোখ সরিয়ে আড়চোখে একবার ওহির দিকে তাকিয়ে নিজের খাতায় লিখতে শুরু করে।
–চলবে(ইনশাআল্লাহ)
((আসসালামু আলাইকুম। ভুল ত্রুটি ক্ষমা চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ))