এক বেরঙ চিলেকোঠায় পর্ব ৪৮+৪৯

0
382

#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-৪৮

দরজায় নক পরায় প্রচন্ড বিরক্তিতে কাম ইন বলে আরাবো কাজে মনোযোগ দিলেন তৌফিক ওয়াহিদ। দোয়া দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে সালাম দিয়ে বললো,

-গুড মর্নিং বাবা।

চোখ তুলে তাকালেন তৌফিক ওয়াহিদ। দোয়াকে দেখে ধীরগলায় সালামের উত্তর নিয়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলেন উনি। দোয়া খাবারটা টি টেবিলে রেখে জানালার পর্দা সরিয়ে দিলো। তৌফিক ওয়াহিদ টের পেলেন রুমে কিছু ঘটছে,তবুও কিছু বললেন না। বিছানার চাদরটা ভাজ করে ফাইলের তাকগুলো গোছালো,এসি,ফ্যান,লাইটের রিমোটটা অবদি ঠিকঠাক জায়গায় রেখে তৌফিক ওয়াহিদের দিকে তাকিয়ে দেখে সে তখনো সোফায় বসে ফাইল ঘাটছে। একটা ক্ষুদ্রশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে ঢুকে হাত ধুয়ে আসলো ও। খাবার হাতে নিয়ে সোফায় তৌফিক ওয়াহিদের ঠিক পাশে বসে গেলো ও। তখনই নিজের কাজে ব্যস্ত তৌফিক ওয়াহিদ। হঠাৎই মুখের সামনে খাবার দেখে চমকে উঠে পাশে তাকালো সে। পরনে শাড়ি,মাথায় আঁচল দিয়ে বসে তার ছেলের বউ! দোয়া! তাকে খাইয়ে দিচ্ছে! তৌফিক ওয়াহিদ ফাইল বন্ধ করে কড়াভাবে বললেন,

-হোয়াটস্ দিস ননসেন্স?

-সেন্স ননসেন্সের কথা তো আপনি নাই বলুন তো ভালো বাবা! সকাল সকাল কেউ ব্রেকফাস্ট বাদ দিয়ে ফাইলের ঘ্রানে পেট ভরায়,এটা কোন ধরনের সেন্স বলুনতো?

-দেখো দোয়া…

দোয়া খাবার মুখে পুরে দিয়েছে তৌফিক ওয়াহিদের। আটকে পাথর হয়ে রইলেন তৌফিক ওয়াহিদ। দোয়া আবারো খাবার মাখাতে মাখাতে বললো,

-সাফাত রওশনের এন্টিডোড যদি রংধনু থেকে লন্চ করাতে চান,আমার দু চারটে আবদার মানতে শিখুন বাবা!

আপনাআপনিই মুখ চলতে লাগলো তৌফিক ওয়াহিদের। দোয়া ওনাকে খাওয়াতে খাওয়াতে বললো,

-বিজনেসের ভাষায় আরেকটা কথা বলি বাবা? দুটো ওয়েতে আপনি প্রফিট করতে পারেন। এক, হয় আপনি রেগুলার সবার সাথে বসে খাবার খাবেন,নয় আমি রেগুলার আপনাকে খাইয়ে দিয়ে যাবো! যেটা আপনার ভালো লাগে,সেটাই মন্জুর। কোনো জোরাজুরি নেই।

তৌফিক ওয়াহিদের কাশি উঠে গেছে। দোয়া তাড়াতাড়ি পানি এগিয়ে দিলো তাকে। ব্যস্তভাবে মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। তৌফিক ওয়াহিদ বড়বড় চোখে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। এইসব কথা বলে ওই বাধ্য করছে ওনাকে প্রেশার নিতে,আবার ওই ব্যস্ত হয়ে পরছে। কাশি থামলে দোয়া আলতোভাবে শাড়ির আঁচলে মুখ মুছিয়ে দিতে যাচ্ছিলো তৌফিক ওয়াহিদের। উনি তৎক্ষনাৎ পিছিয়ে গেলেন। দোয়া মুচকি হেসে বললো,

-বউমা হতে আসিনি বাবা। মা হতে এসেছি। শুনেছি মায়ের চেয়ে বেশি নাকি ছেলেকে আর কেউ বোঝে না। আর আপনার ছেলে বলেছে,আপনাকে বোঝার কেউই নেই নাকি। একটু অনুমতি দিন না বাবা? আমিও দেখি,বুঝতে পারি কিনা আপনাকে। হতে পারি কিনা আপনার..মা।

আরেকদফায় চুপ হয়ে গেলেন তৌফিক ওয়াহিদ। দোয়া শাড়ির আঁচলেই মুখ মুছিয়ে দিলো তার। এবার আর বাধা দেয়নি সে। দোয়া আর কোনো কথা না বলে খাবারের ট্রে নিয়ে বেরিয়ে আসলো ও ঘর থেকে।

দুপুরের খাবারটা খেয়ে হাটতে হাটতে মুখার্জীবাড়ির পেছনের পুকুরের দিকে আসলো তন্নি। তৃষা টিউশনির জন্য বেরিয়ে গেছে। ওর স্টুডেন্ট নানুবাড়ি বেরাতে গেছে বলে ছুটি নিয়েছে। দিয়ানকে ঘুমোতে দেখে কিছুক্ষন ওউ চেষ্টা করেছিলো ঘুমোনোর,অভ্যেস নেই বলে ঘুম আসেনি। মনটাও ভালো নেই। দোয়া চলে যাওয়ার পর পুরো বাড়িতে এক অপুরনীয় শুন্যতা জেকে বসেছে। সালমা বেগমকে কিছুটা ভুলিয়ে রাখতে সবাই যতোটুকো স্বাভাবিক ব্যবহার করা সম্ভব,করে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে দোয়ার অনুপস্থিতি সবাইকেই খুটিয়ে বেরায়।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে তন্নি পাড়বাধানো ঘাটের সিড়িতে পানিতে পা ভিজিয়ে বসলো। একধ্যানে পুকুরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আজ পুকুরে কোনো পদ্ম নেই। স্থির পানিতে ওর নিজেরও বিষন্ন প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এইতো কিছুদিন আগে,কতোটা উচ্ছ্বল ছিলো ও,তৃষা,দোয়া। সেদিন ছাদ থেকে দেখেছিলো,পদ্মভর্তি এই পুকুরেই দোয়া বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঝাপ দিয়েছিলো। প্রথমবারের মতো মুখার্জীবাড়িতে বৃষ্টিবিলাস করেছিলো দোয়া। আর সেটা আরাবের সাথে দেখা হওয়ার পর। আরাবকে ভালোবাসার পর। ভালোবাসা নিয়ে সুক্ষ্ম ধারনা না থাকা সত্ত্বেও মৃদ্যু হেসে মনেমনে আওড়ালো,ভালোবাসা সুন্দর। পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো,

-ইচ্ছে করে পানিতে পা ডুবিয়ে,সব মাছ ভাগিয়ে দেওয়ার ধান্দায় বসেছো রাইট?

কপাল কুচকে পেছনে তাকালো তন্নি। বড়শি হাতে স্বস্তিক ঠিক ওর পেছনেই দাড়িয়ে। পানি থেকে পা তুলে পেছন ফিরে দাড়ালো ও। স্বস্তিক এমনিতেও লম্বা,তার উপর তন্নির চেয়ে এক সিড়ি উপরে দাড়িয়ে। মাথা উচু করে তাকিয়ে তন্নি বললো,

-একদম ফালতু বকবেন না! ইচ্ছে করে পা ডুবিয়ে বসা মানে? মাছ ভাগিয়ে দেওয়ার ধান্দা মানে?

স্বস্তিক ওকে পাশ কাটিয়ে দু সিড়ি নিচে নামলো। ওখানে ঠেকানো বড়শি পানি থেকে তুলে তন্নির সামনে ধরে বললো,

-সি! একটাও মাছ পরেনি!

কিছুটা দমে গেলো তন্নি। ও খেয়ালই করে নি ওখানে বড়শি দেওয়া ছিলো। বেশ দামী বড়শি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আরো একটা হাতে! বিদেশীবাবুর মাছ ধরার শখ বেশিই,টের পেলো ও। দোষ ঢাকতে বললো,

-এক ছিপে একটা ছেড়ে কয়টা মাছ ধরে?

-তোমার এই পা ভিজিয়ে বসার জন্য একটাও ধরেনি!

কথাটা বলে স্বস্তিক বড়শিতে দানা লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। সরু চোখে তাকিয়ে রইলো তন্নি। এই বিলেতি কদু ওকে কথা শুনিয়ে জিতে যাবে,তা কি করে হয়? সিড়ির পাশেই দুটো ছোটছোট কচুগাছ। একটু বাকা হেসে তা থেকে একটা কচুপাতা ছিড়ে সিড়িতে রেখে উঠে আসলো তন্নি। স্বস্তিক বড়শি ঠিক করে সবে নিচের সিড়িতে পা রেখেছে,কচুপাতায় পা পরতেই পিছলিয়ে সোজা পুকুরে পরেছে ও। আড়াল থেকে পুরোটা দেখে ফিক করে হেসে দিয়ে মুখ চেপে ধরলো তন্নি। স্বস্তিককে শায়েস্তা করতে পেরে বিশ্বজয়ের এক হাসি দিয়ে চলে আসছিলো ওখান থেকে। স্বস্তিক পানিতে হাতপা ছুড়তে ছুড়তে বলে উঠলো,

-হেল্প! আই কান্ট সুইম! ক্ কেউ আছো? বাচাও!

তন্নির পা থেমে গেলো। আস্তেধীরে পেছন ফিরলো ও। স্বস্তিক প্রানপণ চেষ্টা করছে ওঠার,তবুও ভারসাম্য রাখতে পারছে না। বিদেশী থেকেছে এতোদিন,সাতার না জানা অস্বাভাবিক কিছু না। সাতার না জানলে তো মরে যাবে মানুষটা! কিন্তু তন্নি তো ঠান্ডা পানিতে চুবাবে বলেই…স্বস্তিক আবারো চেচিয়ে উঠলো,

-কেউ বাচাও! আমি সাতার জানিনা! হেল্প!

একমুহুর্ত দেরি করেনি তন্নি। ছুট লাগিয়ে এগিয়ে গেলো পুকুরপারে। স্বস্তিক ডুবে যাচ্ছে,আবার কোনোমতে মাথা তুলে শ্বাস নিচ্ছে। দিশেহারার মতো আশেপাশে ওকে বাচানোর মতো কিছু খুজলো তন্নি। পায়নি। ফাকা মাথায় গলায় থাকা ওড়নাটা ছুড়ে মারলো পানিতে। চেচিয়ে বললো,

-এটা ধরুন! আমি টেনে আনছি! শক্তকরে ধরুন এটা!

স্বস্তিক অসাড় হয়ে আসছে ক্রমশ। ওর কথা কানে গেলেও,বোঝেনি কিছুই। ঠান্ডা পানিতে আরো জমে যাচ্ছে যেনো। ঝাপসা চোখে লাল ওড়নাটাকে বাচার সম্বল ভেবে একহাতে পেচিয়ে ধরলো ও। কোনোমতে টেনে ওকে সিড়ি অবদি আনলো তন্নি। কিনাড়ায় এসে সিড়িতেই চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরলো স্বস্তিক। তন্নি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। স্বস্তিককে ঝাকিয়ে সরি বললো দুবার। চোখ না মেলে স্বস্তিক হাতের মুঠোয় থাকা ওড়নাটা তন্নির গলায় জরিয়ে দিয়ে বললো,

-নিজের আত্মসম্মানের পরোয়া না করে আমার মতো ভিনদেশী,ভিনধর্মী কাউকে না বাচালেও পারতে।

স্তব্ধ হয়ে গেলো তন্নির চারপাশ। দুহাত নিজের বুকে গুজে ছুট লাগালো ও। পায়ের আওয়াজ শুনে স্বস্তিক বুঝলো ও চলে গেছে। চোখ মেলে আস্তেধীরে উঠে বসলো স্বস্তিক। দুবার কাশি দিয়ে,ভেজা চুলগুলো উল্টালো স্বস্তিক। পেছনে হাত রেখে,আকাশের দিকে মুখ উচু করলো। তারপর চোখ বন্ধ করে ভেজা শরীরেই বসে রইলো ওভাবে।

দোয়া টুইঙ্কেলকে নিয়ে ব্যালকনির ফুলগুলো দেখাচ্ছে আর বাংলা,ইংরেজীতে ওগুলোর নাম শেখাচ্ছে। টুইঙ্কেল মজায় মজায় শিখছে ওগুলো,খুশিতে হাততালি দিচ্ছে। ফোন স্ক্রল করতে করতে ঘরে ঢুকলো আরাব। ওর চোখ গেলো সোজা বারান্দায়। দোয়া আর টুইঙ্কেলের হাসিতে। ব্যালকনিতে আজ যেনো ফুলের মেলা বসেছে। হলুদ রঙের জামা পরা টুইঙ্কেলকে দেখে সুর্যমুখী ফুলের মতোই দেখাচ্ছে। আরাব চোখ আটকালো দোয়ার পেছনের অবয়বের দিকে। কোমড় অবদি ছাড়া কোকড়া চুল,হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি গায়ে,পড়ন্ত বিকেলের রোদ এসে লাগছে দোয়ার গায়ে,এটুকো দেখেই আরাবের মনপ্রান জুরে স্নিগ্ধতা। আজ বুঝি বসন্ত! ওর ব্যালকনিতে থাকা ফুলেরা শীতের জীর্নতাকে থামিয়ে দিয়ে,বসন্তের রঙ বইয়ে দিচ্ছে। টুইঙ্কেল আরাবকে দেখে দৌড়ে এসে ওর আঙুল ধরে ব্যালকনির দিকে এগোতে এগোতে বললো,

-দেখো মামা! উইশমাম সবগুলোর নাম শিখিয়ে দিয়েছে আমাকে!

আরাব একধ্যানে দোয়ার দিকেই তাকিয়ে হাটছে। ওর চাওনি দেখে কপালের চুলগুলো কানে গুজে দিয়ে মাথা নামিয়ে নিলো দোয়া। টুইঙ্কেল আরাবকে নিয়ে ব্যালকনিতে এসে থামলো। ফু দেখিয়ে দেখিয়ে বলতে লাগলো,

-দেখো মামা! এইটা রোজ! এইটা বেলি! এইটা…

টুইঙ্কেল বলেই চলেছে। কিন্তু কানে যায়নি আরাবের। ও তখনও দোয়ার দিকেই তাকিয়ে। দোয়া রেলিং ধরে গেইটের কাছের কাঠগোলাপ গাছটা দেখছে। ওর চুলের কাছ দিয়েই কাঠগোলাপ দেখা যায়। আরাবের মনে হচ্ছিলো,ফুলগুলো যেনো দোয়ার খোলা চুলেই সাজবে বলে ফুটেছে। হঠাৎই টুইঙ্কেলকে ডাক লাগালো মিসেস ওয়াহিদ। দোয়া আরাবের দিকে ফিরলো। ধ্যান ভাঙলো আরাবের। টুইঙ্কেল গাল ফুলিয়ে বললো,

-দেখেছো মামা! একদন্ডও শান্তি নেই!

দোয়া হেসে দিলো। বললো,

-চলো যাই টুইঙ্কেল। নানুমনি কেনো ডাকছে শুনে আসি।

দোয়া টুইঙ্কেলকে নিয়েই হাটা লাগাচ্ছিলো।আরাব বাধা দিতে যাচ্ছিলো দোয়াকে। কিন্তু টুইঙ্কেলই নিজে থেকে থেমে গিয়ে বললো,

-না না উইশমাম! তুমি গেলে নানুমনি আরো আড্ডা জুড়বে! তখন আর আমরা তিনজনে ফ্লাওয়ার্স দেখতে পারবো না! নানুমনির পুরোনো কাহিনী শুনতে হবে! তুমি এখানেই থাকো,আমি একদৌড়ে যাবো,একদৌড়ে আসবো! টাটা!

দোয়ার হাত ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো টুইঙ্কেল। আরাব মুচকি হেসে এগিয়ে দোয়ার দু গালে হাত রাখলো। বললো,

-আজ আমার ঘর,আমার ব্যালকনি ফুলে ফুলে সেজেছে। আমার জন্য! এন্ড ইউ নো হোয়াট দোয়া? পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর,সবচেয়ে স্নিগ্ধ,সবচেয়ে আদুরে ফুল এখন আমার দুহাতের মাঝে। যাকে বারবার দেখতে ইচ্ছে করে,বারবার মোহিত হয়ে হারাতে ইচ্ছে করে,বারবার…আদর করতে ইচ্ছে করে।

দোয়া মাথা নামিয়ে নিলো। বলা শেষ করে অতি সন্তর্পনে দোয়ার ঠোটে ঠোট ছোয়ালো আরাব। চোখ বন্ধ করে ওর টিশার্ট খামচে রইলো দোয়া। ওর কাপতে থাকা চোখের দিকে নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আরাব। ইজিচেয়ারে রাখা আরাবের ফোনে ম্যাসেজের শব্দে সেদিকে তাকালো দোয়া। একপলক সেদিকে তাকালো আরাবও। হাসি প্রসারিত হলো আরাবের চেহারায়। দোয়াকে আবারো নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,

-তোমার রিসেপশনে দিয়ান আসবে দোয়া। এক নতুন দিয়ান! সম্পুর্ন সুস্থ্য দিয়ান। এজন্যই রিসেপশন ডিলে করিয়েছি। কাল দিয়ানের অপারেশন দোয়া। এটা তারই কনফার্মেশন ম্যাসেজ।

দোয়ার চোখ ভরে উঠলো নিমিষেই। এই মানুষটাকে ওর আগে থেকে কিছুই বলার প্রয়োজন হয়না। এমনকি ওর কি প্রয়োজন,সেটা ওরও উপলব্ধির প্রয়োজন হয়না। প্রতিবার ওর উপলব্ধির আগেই তা বুঝে,ওকে সেই চাওয়ায় ভরিয়ে দেয় আরাব। নিজের উপর নিজেরই হিংসা লাগছিলো ওর। খুশিতে দিশেহারা লাগছে। আরাব বুঝলো,ওই চোখে অশ্রু ঝরতে শুরু করবে এখনই। হোক তা আনন্দঅশ্রু! দোয়ার চোখের জল বেরিয়ে আসার আগেই ওর দু চোখে চুমো একে দিয়ে সে অশ্রুকে থামিয়ে দিলো ও।

#চলবে…

#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-৪৯

মায়ের কোলে মাথা রেখে নিচে বসে দোয়া। সালমা বেগম নিথর হয়ে বসে। তার দৃষ্টি মেঝেতে স্থির। আরাব পাশেই দাড়িতে। অরুনাভ মুখার্জী,স্বস্তিক,তন্নি,তৃষাও আছে। দোয়ার ফোন পেয়ে অরুনাভ মুখার্জী সবাইকে নিয়ে চলে এসেছেন। হসপিটালে আসার কথা শুনেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন সালমা বেগম। অনেককষ্টে তাকে বুঝিয়ে এনেছেন অরুনাভ মুখার্জী। আসার পর দিয়ানকে সাথে করে চলে যায় দুজন ডক্টর। অবুঝের মতোন কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে অস্থির হয়ে পরেন সালমা বেগম। কেনো কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দিয়ানকে। এই ভয়টাই এতোদিন পেয়ে এসেছিলো দোয়া। কিভাবে ভাইয়ের এতোবড় অসুস্থ্যতার কথা মাকে বলবে ও। জলভরা চোখে আরাবের দিকে তাকালে সে মাথা নাড়িয়ে আস্বশ্ত করলো ওকে। দোয়া শক্ত হয়ে মায়ের দুকাধ ধরে বললো,

-শান্ত হও মা।

-দ্ দোয়া? দিয়ানকে কোনো নিয়ে গেলো ডক্টর? হসপিটালে কেনো আসলাম আমরা? দিয়ানকে কেনো নিয়ে গেলো? আ্ আমাকে কিছু বলছিস না কেনো? ওনারা…

দোয়া অসহায় হয়ে পরলো। দুফোটা চোখের জল ফেলে বললো,

-একটু শান্ত হও মা? বলছি সবটা। একটু শান্ত হও?

-আরে বলবি তো দিয়ানকে কোনো নিয়ে গেলো! আসছে না কেনো এখনো? আমরা হসপিটালে থেকে কি করবো? চল চল! দিয়ানকে নিয়ে ফিরবো চল! অরুনাভ দাদা? আপনি চুপ করে কেনো?

চোখ বন্ধ করে একটা ক্ষুদ্রশ্বাস ফেললো আরাব। এগিয়ে গিয়ে সালমা বেগমের সামনে দাড়ালো ও। নিজেকে শক্ত রেখে বললো,

-মা,ওরা দিয়ানের কিছু টেস্ট করাতে গেছে।

অস্থিরতা কমিয়ে শান্তভাবে আরাবের দিকে তাকালেন সালমা বেগম। দোয়া মাথা নিচু করে কাদছে। আরাব জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে সালমা বেগমের দুহাত মুঠো করে নিয়ে বললো,

-আজকে দিয়ানের একটা ছ্ ছোট অপারেশন হবে মা।

বিস্ফোরিত চোখে তাকালেন সালমা বেগম। দোয়া ওভাবে মাথা নিচু করেই কাদছে। তন্নি তৃষাও বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকে ওকে ধরলো। সালমা বেগম কম্পিতকন্ঠে বললো,

-অ্ অপারেশন মানে?

আরাব ওনাকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। আরো শক্ত করে তার হাত মুঠো করে মেঝেতে বসে বললো,

-দিয়ানের হার্টে একটা ছোট ফুটো আছে মা। এজন্যই ওর এতো ফিজিকাল কম্প্লিকেশনস্ ছিলো এতোদিন। এ অপারেশনটা করালেই…

সালমা বেগম দোয়ার দিকে তাকালেন। দোয়া মাথা নিচু করে ফোপাচ্ছে। আরাব আরো কিছু বলছিলো। তা না শুনে সালমা বেগম উঠে দাড়ালেন। দোয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে শান্ত গলায় বললেন,

-তুই আগে থেকেই জানতি দিয়ান স্বাভাবিক না।

-ম্ মা আমি….

দোয়ার নতমস্তকের উত্তর দেখে এবার শব্দ করে কাদতে লাগলেন সালমা বেগম। ওর দুকাধ ধরে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে বলতে লাগলেন,

-আর কতো? আর কতো করবি তুই? আর কতোভাবে নিজের মাঝে এতোটা শুষে নিবি তুই? খেয়ে না খেয়ে এতো কষ্ট করে এজন্যই বুঝি টাকা জমাচ্ছিলি? এজন্যই বুঝি দিয়ানের কুটোটা ভাঙাও পছন্দ ছিলো না তোর? এজন্যই বুঝি দিয়ানকে কাছছাড়া করতি না তুই? এজন্যই বুঝি সবটা নিজের উপর নিয়ে আমাদেরকে হাসিখুশি রেখে সুস্থ্য রাখার চেষ্টা করছিলি তুই? হ্যাঁ দোয়া? বল?

মাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো দোয়া। গায়ের জোর নিমিষেই নুইয়ে গেলো সালমা বেগমের। ক্লান্ত স্বরে কাদতে লাগলেন উনি। দোয়া মাকে জরিয়ে রেখেই বললো,

-শান্ত হও মা। সব ঠিক হয়ে যাবে। দিয়ানও ঠিক হয়ে যাবে।

সালমা বেগম কাদছেনই। তন্নি তৃষাও মুখ চেপে ধরে কাদছে। স্বস্তিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে গলায় থাকা ওদের পবিত্র চিহ্নটা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে রইলো। দোয়াও কাদছে। আরাব এগিয়ে গিয়ে সালমা বেগমকে দোয়ার থেকে ছাড়িয়ে নিলো। দোয়া জলভরা চোখে তাকালো আরাবের দিকে। ওর চোখমুখও লালচে হয়ে আছে। দোয়া বুঝলো,এই কান্নাকাটিতে আরাবও দুর্বল হয়ে পরছে। দু দন্ড অসহায় দৃষ্টিবিনিময় হলো দুজনের। দোয়া হাত তুলে মুছে নিলো চোখের পানি। কিন্তু আবারো টুপটাপ পানি বেরিয়ে আসলো ওর চোখ থেকে। আরাব চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। একটা শুকনো ঢোক গিলে সালমা বেগমকে বললো,

-মা? একটু শান্ত হন প্লিজ! কিচ্ছু হবে না দিয়ানের। অপারেশনের পরই পুরোপুরিভাবে ঠিক হয়ে যাবে ও। ভরসা রাখুন।

-আর কাদবেন না মা। প্লিজ আর কাদবেন না!

-এখনই দিয়ানকে এখান দিয়েই ওটিতে নেওয়া হবে মা। আপনি যদি এখনো এভাবে কাদতে থাকেন,নিজেকে সামলাতে না পারেন,দিয়ানকে সামলাবে কে বলুনতো?

মাথা তুলে আরাবের দিকে তাকালেন সালমা বেগম। একটু থেমে থেকে কি বুঝে চোখমুখ মুছে ফেললেন উনি। এগিয়ে গিয়ে দোয়ার কাধে হাত রেখে বললেন,

-কাদিস না দোয়া। সব ঠিক হয়ে যাবে।

কাদতে কাদতেই ঠোটে আশ্বাসের হাসি ফুটালো দোয়া। একটুপরেই হুইলচেয়ারে বসিয়ে দিয়ানকে আনা হলো করিডরে। সবাই ছুটে এগোলো ওর দিকে। দোয়া ভাইয়ের সামনে হাটুগেরে বসে গেলো। দিয়ান আশেপাশের সবার দিকে তাকিয়ে মুখচোখ পরখ করে নিলো একদফা। আলতোভাবে বোনের গালে হাত রেখে বললো,

-কাদিস না আপুনি। আমার কিচ্ছু হবে না।

চিৎকার করে কান্না পাচ্ছিলো দোয়ার। আরাবও ওর পাশে বসে গেলো। দোয়ার হাত একহাতে মুঠো করে নিয়েছে ও। দোয়া তাকালো ওর দিকে। কিন্তু আরাব দিয়ানের দিকে তাকিয়ে ওর একগালে হাত রেখে বললো,

-দ্যাটস্ লাইক দিয়ান! তোমার এখনো অনেককাজ বাকি দিয়ান! আর সেগুলোর জন্য এখন থেকে,এভাবেই স্ট্রং হতে হবে তোমাকে। ইউ আর স্ট্রং রাইট?

মাথা উপরনিচে নাড়ালো দিয়ান। ওর সামনে থেকে সরে দাড়ালো দোয়া আরাব। সালমা বেগমসহ বাকিসবাই শুধু একটা কৃত্রিম হাসিতে ছেড়ে দিলো দিয়ানকে। ছুটতে ছুটতে হসপিটালে ঢুকলো তাজীন নিরব। নিরব এসে সোজা আরাবের পাশে দাড়িয়ে বললো,

-স্যার? দিয়ান?

-সবে ওটিতে নিয়ে গেছে।

কিছুক্ষন দোয়াকে ধরে দাড়িয়ে রইলো তাজীন। কিন্তু হসপিটালে ঢোকার পর থেকে ওর শরীরটাও ভালো লাগছে না। ফিনাইলের গন্ধে গা ঘিনঘিন করছে ওর। মনে হচ্ছে এই বুঝি জ্ঞান হারায়। সহ্য করতে না পেরে মৃদ্যুস্বরে আমি আসছি বলে সরে আসলো ও। একটু আড়াল হতেই মুখ চেপে ধরে ছুট লাগালো।নার্সের থেকে জেনে কোনোমতে ওয়াশরুম খুজে ঢুকে পরলো। বমি হলো ওর কয়েকবার। চোখে মুখে পানির ছিটে দিয়ে শান্ত হলো তাজীন। কিছুক্ষন চুপচাপ আয়নায় তাকিয়ে রইলো নিজের দিকে। ঠোটের কোনে হঠাৎই লজ্জার হাসি ছেয়ে গেলো ওর।

ওটির সামনে সবাই নিরব অস্থিরতার সাথে যুদ্ধ করছে। তৌফিকা,মিসেস ওয়াহিদও এসে পৌছেছে। দুজনেই দোয়া আর ওর মায়ের কাছে। আরাব খানিকটা দুরে দেয়ালে একহাত রেখে দাড়িয়ে। ওর আরেকহাত থেকে রক্ত ঝড়ছে। কিছুক্ষন আগে কয়েকবার দেয়ালে ঘুষি ছুড়েছে ও। রাগের কারন,মুফতাহির। জরুরি কল এটেন্ড করার জন্য কিছুক্ষনের জন্যই সরেছিলো ও। এসে দেখে তৌফিকা এসেছে। আর হঠাৎই কম্প্লিকেশন দেখা দেওয়ায় অপারেশনের মাঝেই মুফতাহিরকে ভেতরে ডেকেছে ডক্টর। কথাটা শুনে ভয়,রাগ চরম পর্যায়ে পৌছেছে ওর। দুবার দরজায় চেচিয়ে বলেছেও,বেরিয়ে আসো মুফতাহির ভাইয়া! কিন্তু লাভ হয়নি। বেরোয়নি ও। মুফহাহিরও হার্টসার্জন,ভেতরে থাকলে ক্ষতি কি? তৌফিকার প্রশ্নে জবাব দিতে পারেনি আরাব। সরে এসেছে ওখান থেকে। ভয় হচ্ছে ওর। মুফতাহির যদি সুমনকে আটকে রাখার জন্য দিয়ানের কোনো ক্ষতি করে দেয়,সেই ভয়! টুইঙ্কেল আশেপাশেই ঘুরছিলো। রক্ত দেখে আরাবের হাত উপরে তুলে বললো,

-তোমার এখানে কি হয়েছে মামা? রক্ত কেনো?

হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রুমাল দিয়ে বেধে নিলো আরাব। ওটির দরজা খোলার শব্দ কানে আসলো ওর। সবাই এগিয়ে আসলো ডক্টরের দিকে। আরাবও ছুট লাগিয়েছে। অর্ধেক পথে এসে দেখলো মুফতাহির মাস্ক খুলে হাতের গ্লাভস খুলতে খুলতে পাশ কাটিয়ে আরেকজন এপ্রোন পরিহিতার পেছনে চলে গেলো। দোয়া ব্যস্তভাবে ডক্টরকে বললো,

-দিয়ান কেমন আছে ডক্টর? কেমন আছে ও এখন? হঠাৎ…হঠাৎ কি এমন কম্প্লিকেশন হয়েছিলো ডক্টর যে মুফতাহির ভাইয়াকেও…

ডক্টর শান্তভাবে বললেন,

-শান্ত হন আপনারা। হসপিটালে,ওটির সামনে ভায়োলেন্স ক্রিয়েট করবেন না প্লিজ।

দোয়া থামলো কিছুটা। সালমা বেগম কাতরভাবে বললেন,

-বলুন না ডক্টর? আমার ছেলেটা কেমন আছে এখন? বলুননা?

-ডোন্ট ওয়ারি মিসেস রওশন। দিয়ান ভালো আছে। হ্যাঁ ওর কেইসটা অনেকটাই জটিল হয়ে গিয়েছিলো অপারেশন চলাকালীন। আমরা তো ভেবেছিলাম…যাইহোক,হি ইজ আউট অফ ডেন্জার নাও। থ্যাংকস টু ডক্টর মুফতাহির। আমরা তো ছিলামই,বাট হি ডিড হিজ বেস্ট!

আরাব আর একবর্নও শোনেনি। ডক্টর ওর চেনাজানা। ইচ্ছে করেই মুফতাহিরকে ছেড়ে ওই ডক্টরের কাছে দিয়ানকে এনেছে ও। তাই ডক্টর মিথ্যে বলবে,এমনটা সম্ভব না। সোজা পাশের করিডরে হাটতে থাকা মুফতাহিরের কাছে গিয়ে বলে উঠলো,

-কেনো ঢুকেছিলে দিয়ানের ওটিতে?

মুফতাহির আরাবের পেছনে চলে যাওয়া ডক্টরের দিকে তাকালো একপলক। তারপর আবারো আরাবের দিকে তাকিয়ে বললো,

-আমাকে ডক্টর বলেছিলো বলেই ঢুকেছিলাম।

-আজ যদি দিয়ানের কোনো ক্ষতি হয়ে যেতো,আমি কোনোদিনও ক্ষমা করতাম না তোমাকে!

মুফতাহির এপ্রোনটা খুলে বাহুতে ঝুলালো। মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলো খানিকক্ষন। তারপর আবারো মাথা তুলে বললো,

-দিয়ান এখন ভালো আছে আরাব। তোমার সাথে দোয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। রংধনু গ্রুপে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছি আমি। তোমার বোন,টুইঙ্কেল সবাই ভালো আছে আরাব। তুমি যা যা চেয়েছিলে,তাই তাই হয়েছে। এবার তো আমার ভাইটাকে ছেড়ে দাও আরাব? এবার অন্তত সুমনকে ছেড়ে দাও?

আরাব শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো। মুফতাহির ধরা গলায় বললো,

-বাবা,মা মারা যাবার পর থেকে আজ অবদি সুমনকে কোনোদিনও কোনো কষ্টে রাখিনি আরাব। ওর জন্য সবকিছু করতে রাজি আছি আমি। ওকে আর কষ্ট দিও না প্লিজ। প্লিজ ছেড়ে দাও ওকে। প্লিজ?

আরাব চোখ সরিয়ে নিলো। বললো,

-ওকে ছাড়লে ও সোজা পুলিশ কাস্টাডিতে যাবে। আর ওখানে যদি ও কোনোভাবে তোমার নাম নেয় তখন?

-পাপ করেছি,শাস্তি তো পেতেই হবে।

হতাশার স্বরে বললো মুফতাহির। আরাব খিচে উঠে ওর কলার চেপে ধরলো। দাতে দাত চেপে বললো,

-শাস্তি শুধু তুমি পেলে তো হতোই! আমি শান্তি পেতাম তাহলে! কিন্তু তোমার পাপের শাস্তি যে আমার বোন,টুইঙ্কেল দুজনকেই সইতে হবে! আর আমি আমার বোনের চোখের জল দেখতে পারবো না মুফতাহির! দেখতে পারবো না! আপুর খুশির জন্য যা করার দরকার আমি করবো! সুমনকে এভাবেই গুম রাখতে হলে,রাখবো! তোমাকে আজীবন এই দুর্বলতায় দুর্বল করে রাখতে হলে রাখবো! আমি জানি আমি ভুল করছি! আমি জানি এতে পুলিশ,দোয়া এমনকি আপুকেও ঠকানো হচ্ছে! কিন্তু তবুও! তবুও তুমি,সুমন দুই ভাই,রওশন স্যারের এন্টিডোড তোমরা প্লান করে চুরি করেছিলে,তাজীনের কাছে সুমনকে নিজের সিভি দিয়ে তুমিই পাঠিয়েছিলে,আপুকে বিয়ে করেছো রংধনু হাসিল করবে বলে,যা যা করেছো তোমরা দুজন,আমি কিছুতেই আপুকে জানতে দেবো না মুফতাহির! এতে যা হবার,হবে! আপুকে কষ্ট পেতে দেখতে পারবো না,দ্যাটস্ ইট!

আরাব ঝারা মেরে ছেড়ে দিলো ওর কলার। পেছন থেকে স্টিলের ট্রে মেঝেতে পরার শব্দ কানে আসলো ওর। পেছন ফিরতেই চারপাশ থমকে গেলো আরাবের। অপরাধীর মতো জলভরা চোখ নামিয়ে নিলো সামনের মানুষটার দিক থেকে। সে মানুষটাও পাথর হয়ে দাড়িয়ে। সবচেয়ে আপন মানুষটার কাছ থেকে পাওয়া বিশ্বাসঘাতকতার আঘাত যে বড্ড গভীরে আঘাত করেছে তাকে। বড্ড গভীরে!

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here