এক ফালি রোদ্দুর পর্ব:১২

0
824

#এক_ফালি_রোদ্দুর?
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম?
#পর্ব:১২ #স্পেশাল_পর্ব(২)

“পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে রিয়াদ তানজুর দিকে’!!কারন তানজু একটা সুন্দর ফুল দিয়ে সাজানো দোলনায় দুলছে,তানজুর খোলা চুলগুলো অসম্ভবভাবে উড়ছে,সাথে তানজুর ঠোঁটের মিষ্টি হাসি খুব গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে রিয়াদকে’!!রিয়াদ তার ক্যামেরায় তানজুর ছবিগুলো তুলে মিষ্টি হাসলো’!!গাছের পাতাগুলো দুলছে খুব,সাথে চারপাশের ফুলের গন্ধ আর মিষ্টি বাতাস তো আছেই, সবমিলিয়ে এক নজর কারা মুহূর্ত,

“বেশকিছুক্ষন পর….

“দোলনা থেকে নেমে পরলাম আমি,আমার প্রিয় একটা জায়গা এটা,তার চেয়ে বেশি প্রিয় এই দোলনাটা,আমার সব পিচ্চি বন্ধুদের নিয়ে তৈরি করেছি এটা,

“অবশেষে সবার সাথে আনন্দ মজা করে সবার কাছ থেকে বিদায় জানিয়ে চললাম আমি’!!সামনেই রিয়াদ ভাইয়াকে দেখে এতক্ষণ পর মনে পরলো আমার, আমার সাথে তো রিয়াদ ভাইয়াও আছে,হায় রে আমি তো ভুলেই গেছিলাম ওনার কথা,না জানি আমায় কি ভাবলো উনি…

“আমি পা টিপে ওনার সামনে দাঁড়িয়ে ঠোঁট কামড়ে বলে উঠলামঃ

—-“ভাইয়া….

“তানজুর কথায় রিয়াদ তার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো তারপর বললোঃ

—-“হুম…

—-“চল যাই….

—-“এখন…

—-“হুম…

—-“আচ্ছা…

“তারপর আমি, রিয়াদ ভাইয়া আর তরী সবার কাছ থেকে বিদায় জানিয়ে চললাম নিজেদের গন্তব্যে’!!হর্ঠাৎই রিয়াদ ভাইয়া বলে উঠলঃ

—-“তুই কি সবসময় এখানে আসিস…

—-“না সবসময় নয় মাঝেমধ্যে….

—-“ওহ…

—-“হুম…

“এমন সময় একদল মেয়ে যাচ্ছিল আমার সামনে থেকে’!!সবাই তো হ্যাঁ হয়ে তাকিয়ে ছিল রিয়াদ ভাইয়ার দিকে যা দেখে তরীর কানে কানে বললাম আমিঃ

—-“কাম সারছে সব কয়টায় ক্রাশ খাইয়া উল্টাইয়া গেছে তরী….

“তরীর আমার কথার আগামাথা কিছু বুঝতে না পেরে বললো ওঃ

—-“কি বললে তানজু আপু…

—-“তোর মাথা…

“বলেই ওর মাথায় একটা চাটি মারলাম আমি’!!

“অন্যদিকে রিয়াদ তানজুর কাজে মুখ চেপে হাসলো’!!

.

“আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে হেঁটে চলেছি আমরা’!!হর্ঠাৎই দূরে দেখতে পেলাম আমি রামু চাচা ট্রাক্টর চালাচ্ছে,ব্যস হয়ে গেল সাথে সাথে খুশিতে মনটা মেতে উঠল আমার’!!আমি উওেজনায় রিয়াদ ভাইয়ার হাত ধরে বললামঃ

—-“তুমি দু’মিনিট দাঁড়াও ভাইয়া আমি আসছি…

“বিনিময়ে রিয়াদ ভাইয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমি আমার ঘাগড়াটাকে ধরে দৌড়’!!

“তানজুর কাজে রিয়াদ চরম অবাক”!!অবাক চোখে তানজুর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো সে তরীকেঃ

—-“ও কোথায় যাচ্ছে তরী…

—-“তানজু আপু মনে হয় ওই ট্রাক্টরের কাছে….

“তরীর কথা শুনে রিয়াদ অবাক চোখে তরীর দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—-“কি…

—-“তানজু আপু এমনই গ্রামে আসলেই সব জায়গা ঘুরবে আর সবার সাথে মিশবে,আর ওই ট্রাক্টরে থাকা রামু চাচা আমাদের খুব ভালোবাসে আর তানজু আপু মনে হয় ওই রামু চাচার কাছেই যাচ্ছে….

—-“কিন্তু ও ওখানে গিয়ে কি করবে তাও আবার এই কাঁদার ভিতর….

—-“আমার মনে হয় তানজু আপু ট্রাক্টরে উঠবে,প্রতিবার তো এমনই করে….

“বিনিময়ে রিয়াদ আর কিছু বললো অবাক দৃষ্টিতে সে তাকালো তানজুর দিকে’!!

!!

“তুমুল বেগে দৌড়ে আমি এসে থামলাম রামু চাচার কাছে,ট্রাক্টর চালাচ্ছেন উনি, আমি তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েই চেঁচিয়ে বলে উঠলামঃ

—-“রামু চাচা….

“ট্রাক্টর চালাতে চালাতে অনেক আগেই দেখেছিল রামু তানজুকে তার দিকে আসতে’!!তাই খুব একটা অবাক না হয়ে বললোঃ

—-“কি ট্রাক্টরে উঠবে তো…

“রামু চাচার কথা শুনে আমি খুশি হয়ে বললামঃ

—-“হুম তুমি কি করে বুঝলে..

—-“এটা ছাড়া তুমি আমার কাছে আর আসো নাকি…

—-“হি হি হি…

—-“আসো তাড়াতাড়ি….

—-“হুম…..

“বলেই আমি দৌড়ে উঠে পরলাম রামু চাচার ট্রাক্টরে,উনি আমায় খুব ভালোবাসে যখনই আমার ইচ্ছে হয় তখনই আমি ওনার ট্রাক্টরে উঠে ঘুরি,হর্ঠাৎই আমার ভাবনার মাঝখানে রামু চাচা বলে উঠলঃ

—-“এখানে কি করছো তুমি তানজু…

—-“তেমন কিছু নয় তুমি তো জানো আমি ঘোরাঘুরি কতটা পছন্দ করি,তাই ঘুরতে বেরিয়ে ছিলাম আর কালকে আমরা চলে যাবো তাই আর একবার ঘুরতে বের হলাম আর কি…

—-“ওহ,কালকেই চলে যাবে…

—-“হুম,কালকে রাতের ট্রেনে…

—-“আখ খাবে….

—-“আছে নাকি তোমার কাছে…

—-“হুম…..

—-“তাহলে দেরি কিসের দেও তাড়াতাড়ি…

“হাসলো রামু চাচা’!!তারপর আমার হাতে একটা আখ দিয়ে বললোঃ

—-“খাও….

“আমিও খুশি মনে রামু চাচার কাছ থেকে আখ খেতে শুরু করলাম’!!

“মস্ত বড় ধবধবে সাদা রঙের আকাশের নিচে চলন্ত ট্রাক্টরের ওপর বসে আখ খাওয়ার মজাই আলাদা’!!এক অফুরন্ত ভালো লাগা কাজ করছে আমার,প্রকৃতির এই মুগ্ধতায় চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি,মাটির সুগন্ধ আসছে নাকে,সাথে বাতাসের তীব্র গতি সহজেই স্পর্শ করছে শরীর যাতে মুহূর্তেই পুরো শরীর শিহরিত হয়ে যাচ্ছে খুব, বার বার মনে হচ্ছে আমার, যেন প্রকৃতির প্রেমে বার বার পড়ে যাচ্ছি আমি….

.
.
.

“দূর থেকে তানজুর কান্ড দেখে চোখ আঁটকে যায় রিয়াদের’!!যেন আজ নতুন করে চিনলো রিয়াদ তানজুকে,,মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে রিয়াদ তানজুর দিকে…..

“হাজারো কথা-বার্তা আর গল্প করতে করতে অনেকক্ষণ ঘুরলাম আমি ট্রাক্টরে,এরই মাঝে পরিষ্কার আকাশটা কালচে বর্ন ধারণ করতে লাগলো যা দেখে রামু চাচা বলে উঠলঃ

—-“এখন তাহলে যাও তানজু,মনে হয় বৃষ্টি হবে….

“আমিও আর কথা বাড়ালাম না মুচকি হেঁসে বললামঃ

—-“তোমাকে এওতো এওতো থ্যাংকু রামু চাচা…

“মুচকি হাসলেন উনি,তারপর আমিও ট্রাক্টর থেকে নেমে রামু চাচাকে বিদায় জানিয়ে দৌড়’!!আমার দৌড়ানো দেখে রামু চাচা বলে উঠলেনঃ

—-“আস্তে যাও নয়তো পড়ে যাবে….

“রামু চাচার কথাটা কানে এসেছে আমার,কিন্তু এই মুহুর্তে সেটাকে উপেক্ষা করে আমি দৌড়….

“মাঝপথেই এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে বৃষ্টি পড়তে লাগলো’!!বৃষ্টির ফোঁটা এসে পরছে গায়ে,এক অদ্ভুত ভালো লাগা নিয়ে দৌড়াচ্ছি আমি,,

।।

“এদিকে বৃষ্টি পরছে দেখে তরী বলে উঠল রিয়াদকেঃ

—-“ভাইয়া বৃষ্টি পরছে,চলো আমরা ওখানে দাঁড়াই…

“রিয়াদ এক পলক তানজুর দিকে’ তাকিয়ে বললোঃ

—-“কোথায়…

—-“ওই যে দেখো একটা কুঁড়েঘর আছে চল তাড়াতাড়ি না হলে ভিজে যাবো আমরা….

“রিয়াদও আর কথা না বারিয়ে তরীর দেখানো পথে হাঁটতে লাগলো’!!একটা খড়কুটো দিয়ে তৈরি কুঁড়েঘরের ভিতরে এসে দাঁড়ালো রিয়াদ আর তরী,যার চারদিকে বাশ দিয়ে আটকানো, এরই মাঝে মুসুলধারে বৃষ্টি পরতে লাগলো’!!আর রিয়াদ কুঁড়েঘরের এক কোনায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো তানজুর দিকে,,কারন তানজু খোলা মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তাদের দিকেই আসছে,আবারো ক্যামেরায় ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো রিয়াদ…..

………

“বৃষ্টিতে ভিজতে বরাবরই ভালো লাগে আমার,তার চেয়ে বেশি ভালো লাগছে এই চিপচিপে কাঁদার মাঝে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে,মেঘ চিঁড়ে বৃষ্টি হচ্ছে খুব, বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে আমার পুরো শরীর,এক অদ্ভুত বৃষ্টিপ্রেমিকের মাঝে হারিয়ে গেছি আমি,,,

!!

“এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে রিয়াদ তার ক্যামেরায় থাকা তানজুর ছবির দিকে,যেন এক ঘোর লাগানো মুহূর্তে চলে গেছে সে’!!হর্ঠাৎই তানজুর ডাকে ঘোর ভাঙল তার…

—-“ভাইয়া…..

—-“হুম হ্যাঁ কি হয়েছে….

—-“বলছিলাম বৃষ্টিতে ভিজবে….

—-“না না…

—-“আরে কিছু হবে না,তরী তুই আয়…

—-“না না তানজু আপু তুমি ভিজো আম্মু জানলে আমায় খুব বকবে….(তরী)

—-“আরে কিছু হবে না, আয় না….

—-“না না আমার ঠান্ডা লেগে যাবে… (তরী)

—-“আরে কিছু হবে না বললাম তো,রিয়াদ ভাইয়া তুমি আসো তাহলে…

“এবারের কথা শুনে রিয়াদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললোঃ

—-“আমার ক্যামেরা ভিজে যাবে….

—-“তোমার ক্যামেরাটা তরীর কাছে দিয়ে আসো…

“রিয়াদও আর বেশি ভাবলো না’!!ক্যামেরাটা তরীর হাতে দিয়ে সে বেরিয়ে আসলো কুঁড়েঘর থেকে,

—-“আমরা যতক্ষণ ফিরে না আসছি তুই কোথাও যাবি না তরী….

—-“কেন তোমরা কোথায় যাবে তানজু আপু…

—-“দূরে কোথাও নয় কাছেই…

“এতটুকু বলে আমি রিয়াদ ভাইয়ার হাত ধরে বললামঃ

—-“চল ভাইয়া আজকে তোমাকে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখাবো….

“তারপর আমি রিয়াদ ভাইয়ার হাত ধরে দৌড়,রিয়াদ জানে না সে কোথায় যাচ্ছে,কিন্তু তার ভালো লাগছে তাই নীরবেই সে দৌড়াচ্ছে তানজুর সাথে…..

_________________________________________

_____________________

“মুসুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে খুব, বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাচ্ছে গ্রামের নদী-নালা,খাল-বিল সাথে গাছ পালা, পাখিসহ সবকিছু,,এরই মাঝে খোলা মাঠের মাঝখানে সবুজ ঘাসের ওপর শুয়ে আছি আমি আর রিয়াদ ভাইয়া,বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি দু’জনেই,হর্ঠাৎই বলে উঠলাম আমিঃ

—-“কেমন লাগছে তোমার ভাইয়া…

“চোখ বন্ধ করেই রিয়াদ বলে উঠলঃ

—-“খুব ভালো….

—-“আমি কিছু বলছি তুমি মন দিয়ে শুনবে কিন্তু,চোখ খুলবে না কিছু অনুভব করবে…

“মাথা নাড়ালো রিয়াদ ভাইয়া’!!তারপর আমি বলতে শুরু করলামঃ

—-“মনে কর তুমি এক সমুদ্রের মাঝখানে বালির নিচে শুয়ে আছো,পাখির কিচিরমিচির শব্দ,বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ,সাথে মাটির সুগন্ধে মন মাতাল করে দিচ্ছে তোমার….

“এক অদ্ভুত ভালো লাগার মধ্যে চলে গেছো তুমি,যেন এক স্বপ্নে ঘেরা ঝর্ণার নিচে শুয়ে আছো তুমি,চারিপাশে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য পাথর,আর মন মাতাল করা ফুলের গন্ধ…..

“কিছু কি ফিল হচ্ছে তোমার…

“কয়েক মুহূর্ত পর….

“চোখ খুলে তাকালো রিয়াদ,সে সত্যি অনেককিছু ফিল করছিল এতক্ষণ যেন প্রকৃতিকে নতুন ভাবে চিনতে আর বুঝতে শিখেছে সে’!!

—-“কি কেমন লাগলো ভাইয়া….

—-“অসম্ভব ভালো…

—-“চলো তাহলে আরেক জায়গায় যাওয়া যাক…

—-“আবার কোথায়….

—-“চলই না….

“বলেই হাত বারিয়ে দিলাম আমি’!!

”রিয়াদও আর কিছু বললো না তানজুর হাত ধরেই মুচকি হেঁসে চললো সে’!!কারন তার অসম্ভব ভালো লাগছে…..

!!

“সেদিনের সেই পানিতে ঘেরা কোলার মাঝে সবুজ ফসলের মাঝখানে কলাগাছের তৈরি ভেলায় উঠে পরলো রিয়াদ আর তানজু’!!এবারে রিয়াদ আর কিছু বললো না সে তো তানজুর সাথে এক অদ্ভুত মায়ায় আঁটকে গেছে,,শাপলায় ঘেরা সেই পথ বেয়ে এগিয়ে চলেছে রিয়াদ আর তানজু’!!ভেলার ওপর বসে পানির নিচে পা ঝুলিয়ে আছে দুজনেই,এক অফুরন্ত ভালো লাগার মধ্যে দিয়েই কাটছে তাদের সময়,,উপরে আকাশের মাঝখানে দিয়ে মেঘ চিঁড়ে বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ,সাথে চারপাশের শাপলার মন মাতাল করা সৌন্দর্য আর গ্রান,

—-“চোখ বন্ধ করো ভাইয়া…

—-“আবার….

—-“হুম…

“রিয়াদ তার চোখ আবারো বন্ধ করে নিলো’!!রিয়াদ ভাইয়া চোখ বন্ধ করতেই এক ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিলাম আমি,যাতে অবাক হয়ে বললো রিয়াদ ভাইয়াঃ

—-“এটা কি হলো…

—-“কিছুই না প্রকৃতিকে কাছ থেকে ফিল কর ভাইয়া এই সুযোগ কিন্তু বার বার আসবে না…

____________

“বেশ কিছুক্ষণ পর…..

“বৃষ্টিতে ভিজে আর প্রচুর মজা করে আমি আর রিয়াদ ভাইয়া চললাম সেই কুঁড়েঘরটার উদ্দেশ্যে….

“কারন আমরা অনেকটাই দূরে চলে গিয়েছিলাম না জানি তরী কি করছে এখন,,,,,,
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে……

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ’!!আর গল্প কেমন লাগছে কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here