এক_ফাগুনের_গল্প
পর্বঃ- ২৫ /২৬
অর্পিতার কথা মোহনার সাথে আলোচনা করতে তো সাহস পাচ্ছি না, অর্পিতা ফিরে এসেছে এ কথা যদি জানে তাহলে কষ্ট পাবে। এই মুহূর্তে অচেনা স্থানের মধ্যে মোহনাকে রেখে যাওয়া ঠিক হবে না। পরিস্থিতি এমন হবে কোনদিন ভাবতে পারিনি, আমার সাথে কেন বারবার এমন হবে?
– কিছুক্ষণ পরে আমি অর্পিতার কাছে কল দিলাম আর বললাম, আমি তো চট্টগ্রাম থেকে অনেকটা দুরে আছি। হাসপাতালে পৌঁছাতে প্রায় তিন ঘন্টার বেশি লাগবে, তোমরা কতক্ষণ থাকবে?
– অর্পিতা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললো, সে মারা গেছে অনেক সময় হয়ে গেছে। তার পরিবার সবকিছু ঠিক করে নিয়েছে আমরা মনে হয় একটু পরেই বের হবো।
– তাহলে কি দেখা হবে না?
– তুমি কি একটু চেষ্টা করে তাড়াতাড়ি আসতে পারো না সজীব?
– সম্ভব হলে তো অবশ্যই যেতাম, কিন্তু সময় যেটা লাগার সেটা তো লাগবেই।
– আচ্ছা ঠিক আছে আসতে হবে না, টুট টুট টুট।
কল কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দিল, বারবার কল দিয়ে ব্যর্থ হলাম। মিথ্যা বলে সকাল পর্যন্ত সময় নিলাম কারণ মোহনাকে অপরিচিত এখানে একলা রাখা ঠিক নয়। তাছাড়া আমি সেখানে গিয়ে কি বা করতে পারি…?
আমরা দুজন একই রুমে ঘুমাবো কারণ আমার বন্ধু এই বাসায় নিয়ে আসার সময় তাদের বলেছে আমরা স্বামী স্ত্রী দুজন। কিন্তু অর্পিতা আর বিজনের জন্য মনটা খারাপ লাগছে, জীবন কখন কীভাবে ফুরিয়ে যায় বোঝা বড় কঠিন।
আমার বন্ধু আমাদের পৌঁছে দিয়ে সিএনজি নিয়ে চলে গেছে আর আমরা দরজা বন্ধ করে দুজনেই বিছানায় বসে আছি। মোহনাকে বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে না সে হয়তো আনন্দিত কিন্তু আমার মনের মধ্যে কি চলে?
– মোহনা বললো, কি ভাবছো? যা হবার পরে দেখা যাবে এভাবে মন খারাপ করে থেকো না।
– তুমি ঘুমিয়ে পরো মোহনা, আমার ঘুম পেলে আমি নিচে শুয়ে পরবো।
– কেন? দুজন একসাথে ঘুমালে সমস্যা কি? আজ নাহয় দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে থাকলাম। এমন একটা বিপদের রাতে কাছাকাছি থেকেও আলাদা কেন রবো?
– মানে…?
– মানে হচ্ছে বিয়ের আগেই বাসর।
– আমার মনটা সত্যি সত্যি খারাপ প্লিজ তুমি ঘুমিয়ে পরো মোহনা।
– তুমি মন খারাপ নিয়ে অন্ধকারে হাহুতাশ করবে আর আমি ঘুমাবো? আমাকে তোমার এতটা স্বার্থপর মনে হয় গো?
– তা বলছি না আমি, কিন্তু রাত প্রায় শেষ হয়ে গেছে তাই ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে তো তাই না?
– তাহলে তুমিও আসো, একটা হাত বাড়িয়ে দাও আমি সেই হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমাবো।
– আমরা এখন চট্টগ্রাম থেকে কোথায় যাবো?
– যেতে হবে কেন?
– তোমার বাবার হাত থেকে পালাতে হলে অবশ্যই ঢাকা ও চট্টগ্রাম ত্যাগ করতে হবে। কোন একটা ছোট্ট মফস্বল শহরে গিয়ে দুজন একসাথে থাকবো।
– তাহলে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
– কিন্তু কোন যায়গা যাবো?
– ভালো ভাবে চিন্তা করে তোমার কোন বন্ধু আছে কিনা খুঁজে বের করো।
– আচ্ছা ঠিক আছে বালিশে মাথা দিয়ে তারপর না হয় ভেবে দেখি।
★★
সকাল বেলা ঘুম থেকে আগে উঠলাম আমি, মোহনা আমাকে ধরে ঘুমিয়ে আছে। তার মাথা এলোচুল আমার মুখের ওপর কিছুটা আছে। এক মুহুর্তর জন্য আমি চলমান পৃথিবীর কোলাহল ভুলে যাচ্ছি। এমন করে জীবন কাটানোর স্বপ্ন সবাই দেখে কিন্তু বাস্তব হচ্ছে যে বিয়ের পরে বেশিরভাগ জীবন এমন থাকে না। আমি মোবাইল বের করে অর্পিতার নাম্বার ট্রাই করছি কিন্তু নাম্বার বন্ধ। মনে হয় রাগ করে এমনটা করেছে কিন্তু আমার সঙ্গে এত রাগ কেন?
অফিসের এক স্টাফের কাছে কল দিয়ে জানলাম যে বিজনের লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেছে।
ঘড়িতে সকাল নয়টা বেজে গেছে, গতকাল রাতে ভেবে রেখেছি সকাল বেলা খুলনায় রকির কাছে কল দেবো। রকি সপ্তাহ খানিক আগে খুলনা গেছে, তাই এখনো মনে হয় খুলনাতে আছে।
– হ্যালো রকি?
– হ্যাঁ সজীব বল, কি খবর তোর?
– বেশি ভালো না রে, খুব বিপদের মধ্যে আছি।
– কি হইছে..?
– আমি সবকিছু সংক্ষিপ্ত আকারে বললাম, সবটা শুনে রকি বললোঃ- তাহলে তুই সরাসরি খুলনা চলে আয়। আমি তোর জন্য সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেবো চিন্তা করিস না, কিন্তু ভালো কোন চাকরির ব্যবস্থা করতে পারবো না বন্ধু।
– আপাতত চাকরির ব্যবস্থা দরকার নেই, আগে এক নিরাপদ স্থান দরকার।
– তাহলে আজকেই খুলনা চলে আয়।
– অনেক ধন্যবাদ বন্ধু।
মোবাইল কেটে দিলাম তখন মোহনা চোখ বন্ধ করেই বললোঃ- তোমার বন্ধুকে বলবে আমাদের জন্য যেন একটা সুন্দর বাসর ঘর সাজিয়ে রাখে।
– তাকিয়ে দেখি মোহনা চোখ বন্ধ করে আছে, আমি কিছু না বলে তাকিয়ে আছি। কিছুক্ষণ পরে মোহনা তার এক চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, দেখ দেখ আমার একটা চোখ ঘুমিয়ে আছে আর অন্য চোখের ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
– আমি শুধু একটু হাসলাম, আর অমনি মোহনা হাত বাড়িয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিল।
বিছানা থেকে উঠে গেলাম, সামান্য কিছু খাবার তো খেতে হবে। দরজা খুলতে গিয়ে দেখি দরজা বাহির থেকে বন্ধ করা হয়েছে। বারবার ধাক্কা দিয়েও আমি দরজা খুলতে পারলাম না, মোহনার চোখ মুখ যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
– মোবাইল বের করে গতকাল রাতে যে বন্ধু এখানে দিয়ে গেছে তাকে কল দিলাম। সে রিসিভ করে তখন বললোঃ- কি খবর সজীব? ঘুম ভাঙলো?
– হ্যাঁ ভেঙেছে কিন্তু দরজা বন্ধ কেন বাহির থেকে?
– ওহ্ জেনে গেছো তাহলে? দরজা খোলার দরকার কি ভাই? সবকিছু তো ভিতরে আছে। ভালো করে গোসল করো, তারপর আবার গোসল করো কোন সমস্যা নেই।
– ফাজলামো বন্ধ করো, তাড়াতাড়ি তাদের দরজা খুলে দিতে বলো আমাদের খুব ক্ষুধা পাচ্ছে।
– একটু সহ্য কর ভাই, দরজা তোমার ওই নায়িকার বাবা নিজের হাতে খুলবে।
– আমার নিশ্বাস বন্ধ হতে চললো, কোনরকমে নিজে সামলে নিয়ে বললাম, মানে কি?
– বন্ধু মানে খুবই সহজ, টাকার লোভ বড় ভয়ংকর রকমের বস্তু। আমি কোন নামকরা ওলি আউলিয়া নই যে টাকার লোভ থাকবে না। বিনা পরিশ্রমে এত গুলো টাকা কেউ হাতছাড়া করে বন্ধু?
চলবে…..
এক_ফাগুনের_গল্প
পর্বঃ- ২৬
– এসব নাটক বন্ধ করে তাড়াতাড়ি দরজা খোলার ব্যবস্থা কর সত্যি সত্যি খুব ক্ষুধা লেগেছে।
– আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে রাগ করিস না আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোদের কাছে খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। ততক্ষণে দুজনেই ফ্রেশ হয়ে থাক আর গোসল করতে হলে তাও করে নিস।
– গোসল করতে হবে কেন? সেরকম কিছু হয়নি।
– পুরুষ মানুষের বিশ্বাস আছে নাকি?
– তুই তোর নিজেকে বিশ্বাস করো?
– আমি পারি না তাই তো তোকেও সন্দেহ করি, কিছু হয়ে থাকলে গোসল কর।
– তুই খাবার ব্যবস্থা কর তাড়াতাড়ি।
– হুম ঠিক আছে।
এমন সিরিয়াস মুহূর্তে যখন ও ফাজলামো করলো তখন রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিল। কিন্তু কিছু করার নেই বলে সবকিছু মুখবন্ধ করে সহ্য করছি। নাস্তা সত্যি সত্যি কিছুক্ষণ পরে চলে এসেছে, এক মহিলা নাস্তা নিয়ে এসেছেন। তার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো, মনে হয় যেন আমরা তার অনেক দিনের পরিচিত। খুব তৃপ্তি করে খাবার শেষ করলাম, এখন শুধু খুলনা শহরে যাবার ব্যবস্থা করতে পারলেই হয়।
মোহনা সেই নাস্তা নিয়ে আসা মহিলার সাথে তার রুমে চলে গেল, আমি কিছুক্ষণ বসে ছিলাম তারপর ভাবলাম যে যেভাবেই হোক টিকিটের ব্যবস্থা করতে হবে। হঠাৎ করে অর্পিতার নাম্বার থেকে মোবাইলে একটা মেসেজ আসলো। মেসেজ পড়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
” বহু জল্পনা কল্পনা চলে গেছে দুজনের জীবন এর উপর দিয়ে, সেগুলো মনে করলে সুখদুঃখ সবই মনে হয় পাওয়া যায়। তোমার সাথে এ জীবনে আর দেখা হবে না সজীব, তোমার অফিসের বসের মেয়ে যিনি তোমাকে পছন্দ করে আবার তুমিও যাকে পছন্দ করো তাকে নিয়ে ভালো থেকো সবসময়। তোমাদের দুজনের জন্য দুর থেকে আশীর্বাদ করবো, তোমরা সুখী হও। তোমাকে আরেকটা বার দেখতে খুব ইচ্ছে করছে, যদিও তুমি আমার সাথে দেখা করতে চাও না তবুও শেষ আবদার করলাম। যদি পারো সাড়ে এগারোটা দিকে বাস স্ট্যান্ড থেকে শেষ আবদার পূরণ করিও। তুমি আসো কিংবা না আসো সেটা চিন্তা করি না তবে তোমার আশায় বাস ছাড়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষায় রইলাম। ”
আমি দ্রুত ওয়াশরুমের মধ্যে গেলাম ফ্রেশ হতে।
ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে দেখি মোহনা বসে আছে, আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললামঃ- কি হইছে? চলে এলে কেন?
– এমনি ভালো লাগে না, তুমি কি বের হচ্ছো?
– হ্যাঁ একটু বের হবো।
– কেন?
– খুলনার টিকিট কেটে আসবো।
– তোমার বন্ধুকে বলে তো কাটা যায় শুধু শুধু তুমি কেন বের হবে?
– ও তো এখন সেই জিইসি মোড় আছে, এমনিতেই অনেক ঝামেলা করেছে আমাদের জন্য গতকাল রাতে। তাই ওকে আর বিরক্ত করতে চাই না, তুমি থাকো আমি শুধু গিয়ে টিকিট কেটে চলে আসবো।
– ওহ্হ আচ্ছা।
– মন খারাপ কেন?
– কেন যেন মনে হচ্ছে তোমাকে হারিয়ে ফেলছি।
– ধুর বোকা সেটা কেন ভাবো?
– আচ্ছা যাও তাহলে।
– ঠিক আছে সাবধানে থেকো।
★★
অর্পিতা ও আমি দুজনেই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি।
মাত্র একটা রাতের ব্যবধানে চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না। কেমন এক বিষন্নতা একাকীত্বের বেদনা প্রকাশ করে যাচ্ছে তার ওই মুখের মধ্যে।
– আমি বললাম, তুমি মোহনার ব্যাপারে জানলে কীভাবে?
– সেটা জানা কি খবর জরুরি?
– না সামান্য জরুরি।
– তোমাদের অফিসের একজন এসেছিল ভোরবেলা বাসায়, তার কাছে জানতে পারলাম তোমার আর মোহনার প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে যুদ্ধ চলছে।
– ঠিক তেমন কিছু না।
– আমি সে বিষয় কিছু জানতে চাই না সজীব।
– আচ্ছা ঠিক আছে জানাবো না।
– তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে ছিল তাই জোর করে আসতে বলেছি, অবশ্য না আসলে ক্ষতি ছিল না।
– আমি জানি আমাদের আবার দেখা হবে, কারণ আমি আর মোহনা আজকে খুলনায় যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে কিছু একটা করবো, ওর বাবার কাছ থেকে পালিয়ে থাকতে এ ছাড়া উপায় নেই।
– ঠিক আছে যেও সমস্যা নেই তো, তবে সত্যি সত্যি আমাদের আর দেখা হবে না। কিন্তু হুট করে চলতি পথে অপ্রত্যাশিত ভাবে দেখা হলে সেটা ভিন্ন কথা।
– খুব রেগে আছো?
– নাহহ, বিজনের লাশ নিয়ে রওনা হয়ে গেছে লাশ বাহী গাড়ি আর আমরা বাকিরা বাসে যাবো। সবাই একটা শোকাহত সময় অতিবাহিত করে যাচ্ছে কিন্তু আমার তেমন প্রতিক্রিয়া নেই। যে মনটা আগেই পুড়ে গেছে সেটা নতুন করে কি পুড়বে?
– আমি খুলনা গেলে তোমার সাথে যোগাযোগ করে দেখা করার চেষ্টা করবো তোমার কাছে অনুরোধ তুমি যোগাযোগ বন্ধ করবা না।
– হয়তো সম্ভব হবে না, এ কথা বলেই অর্পিতা তার মোবাইল বের করে সিম খুলে সাথে সাথে ভেঙ্গে ফেলে দিল।
– আমি চুপ করে থেকে আবার বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে তোমার ইচ্ছে।
– ভালো থেকো সারাজীবন সবসময়।
– তুমিও ভালো থেকো।
অর্পিতাদের গাড়ি ছাড়লো বেলা বারোটার দিকে, আমি ততক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওরা যাবে বাগেরহাট আর আমরা যাবো বিকেলে খুলনা শহরে। আবারও সেই “হানিফ পরিবহন” এর দুটো টিকিট সংগ্রহ করে আকবর শাহ থানার দিকে রওনা দিলাম। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম দেরি হচ্ছে বলে মোহনা কল দিয়ে খোঁজ নিতে পারে। আমার ধারণা ভুল, মোহনা কল দিল না।
বাসা থেকে বের হয়েছিলাম সাড়ে দশটার দিকে আর এখন পৌনে একটা বাজে। একটু পরে জোহরের আজান দেবে দুই ঘন্টা পেরিয়ে গেছে তাই তাড়াতাড়ি করে বাসায় গেলাম। রুমের মধ্যে গিয়ে দেখি সেই মহিলা একা বসে আছে, মনের মধ্যে ভয় চলে এলো। সন্দেহ হচ্ছিল, চারিদিকে তাকিয়ে দেখি মোহনার ব্যাগ বা কোনকিছু নেই শুধু আমার গুলো আছে।
– আমি মহিলার দিকে তাকিয়ে বললাম, আন্টি সে কোথায় গেছে?
– মহিলা কিছু না বলে আমার দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললোঃ- সে তার বাবার সাথে চলে গেছে, আর এই চিঠিটা তোমাকে দিতে বলেছে।
আমি তার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে দেখিঃ-
সজীব…..
তোমাকে কিছু না বলে চলে যাচ্ছি তাই রাগ করো না প্লিজ, এ ছাড়া উপায় নেই। তোমার মনে আছে? কথা দিয়েছিলাম একদিন, যে কখনো যদি হুট করে কোন এক সময় অর্পিতা ফিরে আসে। তাহলে চলে যাবো তোমার জীবন থেকে, আমার সেই কথা রাখার জন্য ফিরে যাচ্ছি। ভালবাসা, ভাললাগা, সুখী হবার সকল কিছু তোমার কাছে রেখে গেলাম। জানিনা কখনো ভালো থাকবো কিনা…! কিন্তু আমার এই জীবনের সবটুকু দিয়ে চাই তুমি ভালো থেকো।
আমি থাকতে চাই না তোমার আর অর্পিতার মাঝে পথের কাটা হয়ে, অজস্র ভালবাসা অবিরাম অফুরন্ত অন্তহীন রেখে গেলাম তোমার কাছে। প্রতিদিন কত মানুষ কত স্বপ্ন দেখে, সবকর সব স্বপ্ন কভু পূরণ হয় না। মাঠের সকল পাকা ধানে যেমন চাল হয় না ঠিক তেমনি জগতের সকল মানুষের ভালবাসা পূর্ণতা পায় না। কত কষ্টই তো করলাম তোমাকে নিজের করে নেবার জন্য কিন্তু লাভ কি হলো? সেই অর্পিতা একটা মেসেজ করার সাথে সাথে তুমি তার কাছে ছুটে গেলে।
আমি একটা মেয়ে তাই আরেকটা মেয়ের জীবনের সুখ স্বপ্ন কেড়ে নিতে পারবো না। সবকিছু ছেড়ে শুধু তোমার ওই বুকে মাথা রেখে সারাজীবন থাকার জন্য এসেছিলাম। স্বপ্ন আমার পূরণ হয়েছে, একটা রাত্রি আমি তোমার বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার এত কষ্টের ভালবাসার মধ্যে একটা সফলতা অর্জন হয়েছে, সেটাই কম কিসের?
পরিশেষে তোমাদের দুজনের চিরস্থায়ী সুখের রাজ্য কামনা রইলো, তোমরা সুখী হও। ফুটফুটে সন্তানের মা-বাবা হয়ে সুখী দাম্পত্যের প্রতিচিত্র দিয়ে ফুটিয়ে দাও সমগ্র দেশ।
ইতি
মোহনা………….!
চিঠি পড়া শেষ করে কিছুক্ষণ নিজের মনে হাসলাম, সবাই আমাকে সুখী হতে দোয়া করেছে। পকেট থেকে হানিফ পরিবহনের টিকিট দুটো বের করে চোখের সামনে নিয়ে দেখলাম। কি লাভ হলো তবে এই টিকেট দিয়ে?
আপন কিন্তু হয়েছে সবাই
প্রিয় হয়নি কেউ…!
বুকের মধ্যে সৃষ্টি হলো
শত বেদনার ঢেউ।
সবাই আমাকে বাসলো ভালো
চাইলো আপন করে।
যার যার মতো চলে যাচ্ছে
আবার তারা ঘরে।
আমি কিন্তু কাঁদছি না আর
কষ্ট পেলেও হাসি।
এমন করেই কাটাবো জীবন
সকল আঁধার নিশি।
ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম
জানিনা কোথাও যাবো?
মনের অজান্তেই হাঁটবো রাস্তায়
সেথায় পরে রবো।
আকাশটা আজ পরিষ্কার খুব
মেঘ কোথাও নাই।
আকাশের নিচে হাঁটছি শুধু
গন্তব্য যদি পাই।
রাস্তার পাশে ধুলো জমেছে
চলছে নতুন প্রকল্প।
হঠাৎ করে ফুরিয়ে গেল
এক ফাগুনের গল্প।
চলবে….
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব।