এক কাপ চা পর্ব ৯+১০

0
1058

#এক_কাপ_চা
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৯+১০

(২৫)
সাগরিকাকে নিজ বেডে শুইয়ে দিয়ে তাশদীদ তার পাশেই বসেছিল।হঠাৎ তার নাকে ধুনোর গন্ধ এসে ধাক্কা দিচ্ছে। এই গন্ধটা তার পরিচিত। মনে পড়ে গেল এই গন্ধটা তার গ্রামের এক দাদার বাড়ি থেকে সন্ধ্যে বেলা পাওয়া যেত।
ধুনোর গন্ধ মানেই সাধু সন্ন্যাসীর একটা ব্যাপার মনে হচ্ছিলো তার। হঠাৎ মনে জেকে বসেছে এক রাশ অস্বস্তি।

অস্বস্তিটা কে পাত্তা না দিলেও গন্ধটা তীব্র হতে লাগলো।সে মোটামুটি নিশ্চিত হলো যে এই বাড়িতেই কেউ কারোর ক্ষতির উদ্দেশ্যে কোনো সাধনা করতে বসেছে।কিন্তু বাড়ি তখনো ফাঁকা।
সাগরিকার গায়ে চাদর টেনে দিয়ে দরজা খুলেই নিচে নামতেই দেখতে পেলো ইখুমের ঘর ধোঁয়ায় ভর্তি।
কোনো কিছু চিন্তা না করে তাশদীদ দ্রুত ছুটে গেল ঘরের দিকে।পুরো ঘর ধোঁয়ায় পূর্ণ। তার সামনেই চেয়ারে বসে আছে ইখুম।সম্ভবত তার কোনো জ্ঞান নেই।মাথা নুইয়ে ঠেকেছে বুকে।শরীরের কাপড় এলোমেলো।তার সামনেই চলছে যজ্ঞের আগুন।সাধু বেশে একজন মহিলা বিড় বিড় করে মন্ত্র পড়ে আগুনে আহুতি দিচ্ছে কিছু একটা।
অন্য সময় হলে চক্ষু লজ্জায় ঘরে প্রবেশ তো দূর,ইখুমের দিকে তাকানোর সাহস করতো না তাশদীদ কিন্তু এখন ইখুমের এলোমেলো শাড়ির ঠিক থাকার থেকে তার জীবনের নিরাপত্তা অধিক জরুরী।

ঘরে আর কেউ নেই। তান্ত্রিক মহিলা এবং ইখুম।কিন্তু তাশদীদ খেয়াল করলে দেখতে পেত ইখুমের ঘরের দরজার ঠিক পিছনটায় ধোঁয়ায় দাঁড়িয়ে আছে জুলি।
তাশদীদ এগিয়ে যেতেই সে সুযোগ বুঝে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।সামিনা গিয়েছিল নিচে, বলির জন্য পশুর ব্যবস্থা করতে কিন্তু জুলি দৌড়ে এসে তাকে বলল,

“বড় বাবা বাড়িতে কেন?কোন সময় আইলো?”

জুলির কথায় জান-পরাণ অবাক হয়ে সামিনা বলল,

“মানে?”

“মানে তাশদীদ বাবা বাসায়। ইখুমের ঘরে। তান্ত্রিক মা কিছু বলার আগেই আপনে বাগানে চইলা যান। বাকীটা আমি সামলে নিমু।যান দেরি কইরেন না।”

“কিন্তু ইখুম?”

“এই বাড়িত থাকলে আপনি অনেক সুযোগ পাবেন।বাড়ি থেকে বাইর কইরা দিলে পাবেন না।”

তান্ত্রিকের যজ্ঞের আগুনে পানি ঢেলে দিয়ে ইখুমকে টেনে তুলে নিলো তাশদীদ। সোজোরে দরজা বন্ধ করে সিকিউরিটি গার্ডদের কল দিয়ে উপরে আসতে বলল।ইখুম কে নিয়ে শুইয়ে দিয়েছে সাগরিকার পাশে।
সাগরিকা ততক্ষণে উঠে বসেছে।ইখুমকে দেখে সাগরিকা কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেও তাশদীদের জন্য কিছু বলল না।

ইখুমের চোখে মুখে পানি দিলেও যখন তার জ্ঞান ফিরলো না তখন সাগরিকার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলল,

“আংকেল কে কল দিয়ে আসতে বল এক্ষুণি।আর নিচে আসবি না। যাই হোক,আমি না আসা অবধি আসবি না।”

(২৬)

পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেছে সেই তান্ত্রিক মহিলাকে। সে বোবা মনে হচ্ছে কারণ তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের করা যায়নি।তাকে বাড়িতে আসতে দেখেনি কেউ।কিন্তু এমন কেন করেছে সে এটা জানা গেল না।পুলিশ নিশ্চয়তা দিয়েছে বিষয়টা তারা গুরুত্বের সাথে দেখবে।বাড়িতে ততক্ষণে সবাই ফিরে এসেছে। সাগরিকার মা সেই যে ইখুমের পাশে বসেছে এখনো উঠেনি।
ভাগ্যিস তাশদীদ দেখেছিল না হলে আজ ইখুমের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত। কিন্তু বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছে না রাশেদ।
আজ যেন সে অনেকটা পাগল ষাঁড়ের মতোন আচরণ করছে। এই বাড়িতে এতগুলো সিকিউরিটি গার্ডকে চোখে ধুলো দিয়ে একজন সরাসরি কারোর বেড রুমে চলে গেল কী করে?
কিন্তু পরক্ষণেই তাদের খেয়াল হলো বাড়ির পিছনের দরজা, মানে ফায়ার এক্সিটটা ভাঙ্গা।কেউ ইচ্ছে করে ভেঙ্গেছে।
এত কিছুর মাঝে তুলি এক কান্ড করে বসলো।সে সরাসরি সামিনাকে জিজ্ঞেস করলো,

“আপনি তো ছিলেন। আপনি বুঝেন নি?”
সামিনা কাঠ কাঠ গলায় জবাব দিলো,

“না।”

(২৭)
সাগরিকা বার বার কেঁপে উঠছে আজ তাশদীদের কথাগুলো মনে করে। সে যেন আজ তাকে মেরেই ফেলতো। গালে আংগুলের ছাপ পড়েছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে দাগ গুলোর দিকে তাকিয়ে সাগরিকা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,

“আমি বড় হয়ে তোমার ছেলে মেয়েদের পড়াবো।আমিই তাদের টিউশন দিবো তাদের। তারপর পড়া পারুক বা না পারুক তাদের পাচ্ছুতে পটাশ পটাশ মার দিবো।তখন বুঝবে নিজের
বাচ্চাদের মারলে কেমন লাগে।”

কারো আসার শব্দে সাগরিকা দ্রুত তার নিজের বিছানায় শুয়ে কম্ফোর্টারে তার মুখ ঢেকে ফেলল।
কিছুক্ষণ পর অনুভব করলো কেউ একজন ধীরেধীরে এগিয়ে আসছে তার দিকে।উষ্ণ এক স্পর্শে কেউ ছুয়ে দিচ্ছে সাগরিকার গালের দাগ।সাগরিকা প্রানপণে চেষ্টা করছে সেদিকে না তাকানোর। এজন্য সে উল্টো পিঠে ঘুরার আগেই তার নাকে এলো কড়া বেলি ফুলের গন্ধ এবং গলায় পেলো এক জ্বলন্ত ঠোঁটের স্পর্শ। বিছানার চাদর খামছে ধরে সে শক্ত হয়ে মনে মনে ভাবলো

“আজ তো বিয়ের কথা ভাবিনি।তবে আশিক জিন কেন এলো?”

ইখুমের পায়ের কাছে বসে আছে রাশেদ। তার চোখে যেন আগুন জ্বলছে।ইখুমের নগ্ন শুভ্র পায়ে তখন ক্ষততে ভরপুর। রশি দিয়ে শক্ত করে বাধার ফলে কালো দাগ পড়েছে। খুব আস্তে-ধীরে সেই ক্ষততে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে রাশেদ। সে না চাইতেও অনেক ক্ষতি ইখুমের চারপাশে ঘুর ঘুর করে। তিন বছরের এক তরফা ভালোবাসা রাশেদের এই ইখুম।যাকে বিয়ে করার জন্য সে বাড়িতে সাত দিন না খেয়ে পড়ে ছিল।রাগ জেদ দেখিয়েছিল মায়ের সাথে। সে নিতে রাজি হয়নি সামিনার দায়িত্ব কিন্তু নিয়তি এমন কেন?

উদ্ভ্রান্ত মরু পথিক হয়ে বেঁচে থাকা তার জন্য সত্যি মৃত্যুর থেকেও জঘন্য। মানুষ শুধু বাঁচার নামেই বেঁচে থাকে অনেক সময়। দায়িত্ব এবং ভালোবাসা দুটোর মাঝে দায়িত্বকেই কেন বেছে নিতে হয়?
যে দায়িত্বে ভালোবাসার স্পর্শ থাকে না সে দায়িত্ব কেবল মাত্র গলার ফাঁস। এই ফাঁস থেকে বাঁচতে চায় রাশেদ।ইখুমকে নিয়ে কিন্তু তা হয় না।

নিজের সমস্ত আবেগ পানির সাথে ঢকঢক করে গিলে ফেলল রাশেদ।সামিনা কখন তার ঘরে এসেছে সে বুঝেনি কিন্তু উপস্তিতির টের পেয়ে সে বলল,

“কেন করলেন ভাবী এমন?”

“আমার স্নেহার জন্য।”

“আমি তো আপনাকে নিষেধ করিনি।দায়িত্ব থেকে সরে যাইনি।”

“তোমার সন্তান থাকলে তুমি স্নেহাকে মানবে না।”

“ইখুম স্নেহাকে ভালোবাসে। ও স্নেহাকে নিজের সন্তানের পরিচয় দিবে।এখন সময় এসেছে ওকে সবটা জানানোর।”

“তবে আমি গলায় দড়ি দিবো।স্নেহা মা আমিই থাকবো।”

“কিন্তু বাবা আমি হলে মায়ের জায়গায় ইখুমের নামই আসবে।”

“আসবে না।কারণ আমিই স্নেহার মা।”

“কী চাইছেন আপনি?”

“বিয়ে করো আমাকে রাশেদ।শরীয়ত এবং আইন মোতাবেক।”

চলবে

#এক_কাপ_চা
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-১০

(২৮)

নিজের আধ খাওয়া সিগারেট তাশদীদের দিকে এগিয়ে দিয়ে রাশেদ বলল,

“মেঝ ভাবী কী বলেছে শুনেছিস?”

“তোমার সাথে আমার সম্পর্ক সিগারেট ভাগ করে নেওয়ার। তোমার মনে কি চলছে আমি বুঝি।”

“সব কিছু আয়ত্তের বাহিরে চলে যাচ্ছে।”

“তুমি যদি চন্দ্র কে হাতে নিয়ে সূর্যকে স্পর্শ করেও মাফ চাও, ভুল স্বীকার করো তবুও তোমার কোনো মাফ হয় না।”

“আমি নিরুপায়।”

“পুরুষ মানুষকে নিরুপায় হতে নেই।নারীরা নির্ভর করে পুরুষদের উপর। সেই পুরুষ যখন মাঝ পথে নারীর হাত ছেড়ে দেয় তবে নারীর কী হয় কখনো ভেবেছো?
তুমি যতই নিরুপায় হও না কেন, একজন নারীকে তোমার মানসিক ভাবে ভেঙে দেওয়ার কোনো অধিকার তোমার নেই। একজন নারীর অনাগত সন্তানকে খুন করতে চাওয়ার মতো দুঃসাহস তোমার দেখানো উচিৎ হয়নি।”

“দায়িত্ব এমনি।”

“না, ভুল বললে।দায়িত্ব এমন নয়। দায়িত্ব এমন হতেই পারে না।নিজ সন্তানকে খুন করে অন্যের সন্তানের দায়িত্ব নিতে হবে?এমন দায়িত্ববান পুরুষ উপন্যাসেও হয় না।”

“আমি জানি ইখুম নিজের সন্তানের কোনো ক্ষতি করবে না।তাই আমিও মেঝ ভাবীকে দমাতে ওসব বলেছি।আর তুই?”

“হাসালে তুমি। খুব ক্ষতি হতো বিয়ের রাতেই সবটা খোলাসা করলে?রাঙ্গাবৌ তো মা হতে চলেছে, তুমি তার গায়ে হাত তুলেছো।বাদ দাও কথা বলতেও গায়ে লাগছে আমার।”

রাশেদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।মাথার উপর দিয়ে নাম না জানা এক অতিথি পাখি উড়ে গেল।আলো ফুটেছে কিছুক্ষণ হলো। কুয়াশাটা জেকে বসতে শুরু করেছে। শীতের আমেজ বুঝতে হলে গ্রামে যাওয়া প্রয়োজন। এমন দিনে ভাপা পিঠা, সকালের প্রথম রোদে বসে আগের দিন রাতের বানানো দুধ চিতই খাওয়ার আমেজ আলাদা।
তাছাড়া ফুলকপি এবং শিমের বাসি তরকারি যখন চুলোয় জাল হয় এবং সেই তরকারির সাথে রুটি! আহা সে যেন এক অমৃত৷ কিন্তু জীবনটাই এখন বিষাক্ত লাগছে রাশেদের কাছে। তাশদীদ চলে গেছে অনেকক্ষণ পূর্বে। দ্রুত পায়ে দৌড়াচ্ছে সে। রাশেদের আজ আর দৌড়াতে ইচ্ছে হলো না। ইচ্ছে হচ্ছে কোথাও একটা শান্তির ঘুম দিতে৷

(২৯)

আজ মৌসুমির বড় ভাই মুনিরের গায়ে হলুদ।সকাল থেকে তোড়জোড় চলছে হলুদের অনুষ্ঠানের। তার বাবা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি।তার বড় ছেলের বিয়ে হচ্ছে ধুমধামে। ফোন হাতে নিয়ে মৌসুমি বার পাঁচেক কল দিয়েছে তাশদীদকে।কিন্তু কল রিসিভ করছে না সে। কল রিসিভ না করায় মৌসুমির মেজাজ দ্রুতই খারাপ হতে লাগলো।

তার মা রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত। এত মানুষের খাবারের আয়োজন নিজে দেখছে। মৌসুমি সেখানে এসে জিজ্ঞেস করলো,

“মামারা কখন আসবে?”

ব্যস্ত হয়েই নীলুফার বেগম বললেন,

“এসে যাবে। আমার সাথে তো কথা হয়নি।”

“কল দিয়ে জিজ্ঞেস করো।”

“সময় নেই আমার। তুই এক কাজ কর ওইযে আমার ফোন জিজ্ঞেস করে নে।”

“তুমি আমাকে হুকুম দিচ্ছো?কী এমন ব্যস্ত তুমি?আমি বলেছি মানে এখনি কল দিবে।”

মিনিট খানেকের মধ্যে মৌসুমি পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নিয়েছে। তার চেঁচামেচি শুনে তার বাবা দ্রুত নিচে নেমে এলো।একমাত্র মেয়ের কোনো আবদার অপূর্ণ রাখেনি তিনি।কাজের লোকেরা কাজ বাদ দিয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মৌসুমি এমন ব্যবহার করছে যে শুধু তার মায়ের গায়ে হাত তুলতে পারছে না।

তার বাবা এসে কোনো কথা না বলেই সজোরে থাপ্পর মারলো নীলুফার বেগমের গালে।নীলুফার বেগমের গালে দাগ পড়তে খুব একটা সময় নিলো না।ততক্ষণে তার চুলের মুঠি ধরে মেয়ের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলল,

“এবার বল কী হয়েছে? ”
মৌসুমি বললেই স্ত্রীর হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে কথা বলতে বলল,

এবার একবার কল হতেই তাশদীদ রিসিভ করে কথা বলে জানালো তারা খুব দ্রুত বের হবে। সবাই তৈরী হচ্ছে। মৌসুমির মুখে দ্যুতি খেলে গেল এক মুহুর্তে।
ছোটো বেলা থেকেই মা কে এভাবে মার খেতে দেখে সে অভ্যস্ত। তাদের মা হলেও নীলুফার বেগমকে সে বা তার মেঝ ভাই তোয়াক্কা করে না।বরঙ প্রচন্ড রাগ হলে বাবার কাছে নালিশ করে তাকে মার খাওয়াতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কিন্তু তার বড় ভাই মুনির মা ভক্ত। সে থাকলে মৌসুমির গালেই থাপ্পর লেগে যেত কয়েকটা।

প্রশন্ন চিত্তে টেবিলের উপর থেকে একটা কমলা তুলে নিয়ে ছিলতে ছিলতে উপরে উঠে এলো মৌসুমি। হলুদের জন্য স্পেশাল অর্ডার দিয়ে আনা শাড়ি এবং স্লিভলেস ব্লাউজ বের করে রাখলো বিছানার উপর।
সম্পূর্ণ কাপড় ছেড়ে নগ্ন অবস্থায় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুটিয়ে দেখছিল সে।
কী এমন কমতি আছে তার যে তাশদীদ ফিরেও তাকায় না।

কিন্তু হায়! আফসোস, আয়নায় শুধুই বাহিরের আবরণ দেখা যায়, যদি ভিতরটা দেখা যেত তাহলে সেখানে শুধুই কালো অন্ধকার এবং ভ্যাপসা বাজে গন্ধ পেত মৌসুমি।

(৩০)

ইখুমের খাওয়ায় বিশেষ নজর দিচ্ছে সাগরিকার মা।যাই রান্না হোক না কেন সে নিজ হাতে গরম গরম অবস্থায় ইখুমকে খাইয়ে দিয়ে আসছে। কাউকে বিশ্বাস করে না সে। মাঝেমধ্যে নিজের ছায়াকে দেখেও মানুষ বড্ড সন্দেহ করে এখন তেমন সময় চলছে।
ইখুম মোটামুটি সুস্থ। রাশেদের সাথে কথা বলার জন্য খুব মন খারাপ হয় কিন্তু সামনে সামিনা চলে আসে। চলে আসে গতকাল যখন সে মরতে বসেছিল তখন সামিনার কণ্ঠ।

হলুদ শাড়ি পরে গড়পড়তায় তৈরী হয়েছে ইখুম। সে জানে তার শাশুড়ি আজ আসবে না তাই গয়না পড়েনি খুব একটা।প্রচন্ড ঘুম পায় তার ইদানীং। বাচ্চাটাকে নিয়েও ভয়ে থাকছে কিন্তু রাশেদ নেই,যার তাকে রক্ষা করার কথা ছিল,ভরসার হাত দেওয়ার কথা ছিল, রাত-বিরেতে ভয়ংকর মন খারাপ হলে তাকে নিজের পাশে পাওয়ার কথা ছিল সে নেই। কোথাও নেই৷ তার মধ্যে বেড়ে উঠা একটা ছোট্ট স্বত্তা এবং সে দুজনেই যেন বড্ড একা।

সাগরিকা আজ হলুদ রঙের শাড়ি পরেছে৷ সাদা সিল্কের ব্লাউজের সাথে৷ ঠোঁটে দিয়েছে কড়া রঙের লাল টকটকে লিপস্টিক। চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে হাতে চুড়ি নিয়ে বসে আছে৷
তাকে দেখে মৃদু পায়ে ঘরে প্রবেশ করেছে তাশদীদ৷ নেভি ব্লু ডেনিমের প্যান্টের সাথে সাদা রঙের পাঞ্জাবী। হাতের ঘড়িটায় যেন তাকে বেশ মানিয়েছে কিন্তু তার ঠোঁটে থাকা সিগারেট অসহ্যকর।

ঘরে প্রবেশ করতে না করতেই সাগরিকা উঠে দাঁড়িয়েছে।তার কোল থেকে টুপ করে সকল চুড়ি নিচে পড়ে গেল।হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে উঠেছে গত দিনের ঘটনা।একরাশ ভয় এসে গলায় জমাট বেধেছে৷ মাথার পিছনের ভোতা যন্ত্রণা হওয়ার আগেই সাগরিকা অনুভব করলো তাশদীদ এসে দাঁড়িয়েছে তার সামনে। এক হাত দিয়ে তাকে ধরে অন্য হাত গলিয়ে দিয়েছে সাগরিকার শাড়ির দিকে।
কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে সাগরিকা অনুভব করলো,

জ্বলন্ত সিগারেট তাশদীদ ঠেসে ধরেছে তার নাভির দিকটায়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here