#এক_কাপ_চা
#পর্বঃ৩৫+৩৬
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(১০৩)
দুপুরের খাবারের আগে মাছের মাথা খাওয়া নিয়ে একদফা কথা শুনতে হলো সামিনাকে। স্নেহা ইদানিং কারোর সাথেই কথা তেমন বলে না। চুপচাপ ড্রয়িং রুমে বসে থাকে কিংবা শুয়ে থাকে।কখনো তার দৃষ্টি টিভির দিকে থাকে আবার কখনো সে অযথাই মাথা নিচু করে বসে থাকে। আজ সকাল বেলা বাজার থেকে বড় একটা কাতল মাছ আনা হয়েছে। মাছটা যখন রান্না ঘরে রাখা হলো তখন স্নেহাও পিছন পিছন রান্না ঘরে এসে দাঁড়ায়।মাছ কাটা থেকে শুরু করে পরিষ্কার করার পুরো সময় সে রান্না ঘরেই দাঁড়িয়ে ছিল।মাছের মাথা যখন রান্না করা হচ্ছিলো তখন কাজের মহিলা তাকে রান্না ঘর থেকে নিয়ে চলে আসে।
ঘরে ফিরে এসে সে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল,
“মা আজ মাছের মাথাটা আমায় দিবে?”
দীর্ঘ একমাস পর মেয়ের মুখে মা ডাক শুনে সামিনার কান্না গলায় আটকে গিয়েছিল।নিজেকে সামলে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে সে উত্তরে বলেছিল,
‘অবশ্যই মা।তুমি খেতে চেয়েছো আর কেউ না করবে?এটা হয় না কী? তুমি তোমার কাকীদের বলতে। যে কেউ আগে তোমাকে খেতে দিয়ে নিতো।”
“না তুমিই খাইয়ে দিও।”
“আচ্ছা দিবো।”
স্নেহা মাছের মাথা দিয়ে ভাত খাবে বলে সকাল সকাল গোসল করে নিয়েছে। নিজেই নিজের মাথার চুল আঁচড়ে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন মাছ রান্না শেষ হবে।এর মাঝে দুই বার রান্না ঘরে উঁকিঝুঁকি দিয়েছে সে।
মাছ রান্না শেষ হতেই দৌড়ে এসে মা কে বলল,
“মা রান্না শেষ। তুমি নিয়ে আসো না। আমার ক্ষুধা পেয়েছে।”
সামিনা অসুস্থ শরীর নিয়েই নিজেকে বিছানা থেকে টেনেটুনে তুলল।রান্নাঘরে গিয়ে একটা প্লেটে ভাত বেড়ে তাশদীদের মা কে বলল,
“ভাবী স্নেহা মাছের মাথা খাবে। আমি মাছের মাথাটা নেই?”
তাশদীদের মা সরাসরি তার মুখের উপর না করে দিয়ে বললেন,
“তুই মাছ দেখেছিস?একবার ঢাকনা তুলে মাছের মাথার সাইজটা দেখ। এতবড় মাথা ও খেতে পারবো না। অযথা নষ্ট করবে।”
“আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিবো।নষ্ট হবে না।ও খেতে…..
সামিনা কথা শেষ হওয়ার আগেই তাশদীদের মা বলল,
” এত কথা কেন মেঝ?ও খেতে পারবে?তুই নিজের বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা কর তো। আর তাছাড়া মাথাটার কথা তোর মিয়াভাই আগেই বলছে।মানুষটা সারাদিন কাজের পর এসে যদি দেখে যে মাছের মাথার আশায় আছে সেটা নাই তার খারাপ লাগবে না?”
সামিনা চোখ তুলে চাইতে পারলো না।সে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে যাবে এমন শক্তিও যেন তার নেই।লজ্জায়, অসহায়ত্ব তাকে এতটা কুঁজো বানিয়ে ফেলল যে সে মাথা নিচু করে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল যতক্ষণ না তাশদীদের মা তার হাত থেকে প্লেট নিয়ে এক পিস মাছ তুলে দিলো তার প্লেটে।
প্লেট হাতে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে ফিরে আসার সময় দেখল স্নেহা দাঁড়িয়ে আছে রান্না ঘরের দরজায়।
সে তার মায়ের আগে আগে রুমে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
সামিনার কান্নাগুলো তখন দুচোখ বেয়ে খাবারের প্লেটের উপর পড়ছে।
নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়ের মাথায় হাত রেখে তাকে ডাকলেন।মায়ের ডাকে স্নেহা উঠে বসল।
“আমি ভাত খাবো না।”
“শুনো মা কী হয়েছে জানো?এত বড় মাছের মাথার কাটা গলায় বিধলে কী কান্ড হবে তুমি জানো?”
“আর সবাই তো খায় ওদের হয় না।আমার কেন হবে?বড় মা কেন দিলো না।”।
” তুমিও বড় হলে খাবে মা।এখন মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে নাও।”
“মা! আব্বু থাকলে আমায় মাছের মাথা এনে দিতো তাই না?”
সামিনা কোনো জবাব দিতে পারলো না।জ্বর জ্বর শরীরেই মেয়েকে নিজের বুকের মাঝে লুকিয়ে বলতে লাগলো,
“যার কেউ নেই তার আল্লাহ্ আছে মা।আল্লাহ্কে ডাকো।”
(১০৪)
স্নেহা দুপুরে আর খাবার খায়নি।মায়ের বুকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েছে। মেয়েকে বুকে নিয়ে ক্লান্ত সামিনাও ঘুমিয়ে কাঁদা।
কথায় আছে,
“কান্না হচ্ছে সেরা ঘুমের মেডিসিন।”
দুপুরে খাবার টেবিলে বসে সাগরিকার পাতে যখন তাশদীদ নিজ প্লেট থেকে মাছের টুকরো তুলে দিচ্ছিলো তখন সাগরিকা বলল,
“এই মাছ আমি খাবো না।”
সাগরিকার কথা শুনে তার বাবা তাকে জিজ্ঞেস করল,
“মাছ খাবে না কেন?তবে কী খাবে?তোমার মা ডিম ভেজে এনে দিবে?”
“বাবা ছোটো বেলা থেকেই তো দেখেছি আমার জন্য তোমাদের প্রত্যেকের প্লেটে মাছ, মাংসের টুকরো থাকে। ছোটো বেলা থেকেই তাশদীদ ভাই নিজে না খেয়ে আমার জন্য মাছ রাখে। এ বয়সে আমি কত মাছের মাথা নষ্ট করেছি, খাইনি,একটু খেয়েছি,ফেলে দিয়েছি৷ তাই বলে কখনো তো আমার জন্য মাছ আনা বা মাছের মাথা রাখা বাদ যায়নি।এমন সময় আমি দেখেছি যে আমি বলেছি বলে পদ্মার ইলিশ মাছ আনা হয়েছে রাত দুটোর সময়।”
সাগরিকার কথা শুনে তাশদীদের বাবা বলল,
“মা, মাছের মাথা খাবি বললেই হয়।তোরা খেলেই আমাদের খাওয়া। এটা বুঝিস না?”
এরপর তিনি তার স্ত্রীকে বললেন,
“মাথাটা সাগরিকার প্লেটে তুলে দাও।”
“আমি খেলে তোমার খাওয়া হয়। স্নেহা যদি খেতো তবে তোমার খাওয়া হতো না?”
“কেন হবে না?স্নেহা আর তুই দুজনেই আমাদের কাছে সমান।”
“তবে কেন আজ স্নেহা এই মাছের মাথাটার জন্য কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে?অসুস্থ মেয়েটা কারোর সাথে কথা বলে না।পাঁচ বছরের ছোট্ট একটা মেয়ে আজ আবদার করলো মাছ খাবে। মাছের মাথা খাবে অথচ তাকে দেওয়া হলো না কারণ সে পুরোটা খেতে পারবে না। নষ্ট করবে বলে।”
এত সময় পর খাবারের প্লেট থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে তাশদীদ বলল,
“কী হয়েছে?”
সাগরিকা কথাগুলো বলার সময় কাঁদছিল। তাশদীদ সাগরিকার মাথায় হাত রেখে বলল,
“কাঁদিস না।যা স্নেহাকে নিয়ে আয়। আমরা বাহিরে খাবো আজ।”
তাশদীদের কথায় সাগরিকা সামিনার ঘরের দিকে চলে গেল।
তাশদীদ বসে রইল খাবার টেবিলে।আজ
কারোর গলা দিয়ে আর খাবার নামলো না।তাশদীদের বাবা তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন,
“আমার ভাইটা আজ দুনিয়াতে নাই।আজ এই যে বড় মাছের মাথা রান্না করে নিজ স্বামীর জন্য তুলে রেখেছো এটা রাখতে পারতে না যদি ওই মেয়েটার বাবা বিদেশ না যেত। পরিবারের দুঃসময়ে বাহির থেকে টাকা আয় না করতো। আর তুমি এই কাজ……
ও না খেতো,ফালিয়ে দিতো। যা ইচ্ছা করতো। যেখানে ওই মেয়েটা খেতে চেয়েছে আর কোনো কথা থাকার দরকার ছিল না।
আজ তোমাদের ব্যবহারে আমার মনে হচ্ছে আম্মা এই দিনের কথা চিন্তা করেই স্নেহার দায়িত্ব দায়িত্ব করতো।আমি বেঁচে থাকতেই এমন?মরে গেলে তো ওদের বের করে দিবে তোমরা।”
(১০৫)
সাগরিকা,স্নেহাকে নিয়ে বেরিয়েছে তাশদীদ। স্নেহা চুপচাপ বসে আছে সাগরিকার গলা ধরে। সামিনাকে নিয়ে আসতে চেয়েছিল কিন্তু সামিনার শরীর আসলেই খারাপ।বাইরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে তাই আর জোর করেনি। আগামীকাল ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাবে তাশদীদ। সামিনা যেহেতু ঠিক করেছে সে আর বিয়ে করবে না, স্নেহাকে আগলে থাকবে তবে তাই হোক।তাদের ভালো মন্দ আর অন্য কারোর হাতে ছাড়া যাবে না।তাশদীদ কে অন্য মনস্ক দেখে সাগরিকা স্নেহাকে বলল,
“টুংকু যাদু দেখবে?”
স্নেহা মাথা দুলালেই সাগরিকা সজোরে চিমটি মারলো তাশদীদের কোমরে। ওমনি জোড়ে ব্রেক কষলো তাশদীদ। সাগরিকার দিকে চোখ গরম করে তাকালেও ওদিকে পাত্তা না দিয়ে স্নেহাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে৷
“যাদু না?এক সেকেন্ডে গাড়ি থামিয়ে দিয়েছি।তাই না?”
“হুম।”
তাশদীদ কিছু না বলে পুনরায় চলতে লাগলো।কারণ শয়তানের সাথে লাগলে শয়তান কোমর বেধে নেমে যায় শয়তানি করতে। এজন্য তাকে ইগ্নোর করাই শ্রেয়। খাওয়া শেষ করে তারা স্নেহাকে নিয়ে গেল একটা ঘড়ির দোকানে। স্নেহার জন্য ঘড়ি কিনবে।পাশাপাশি বসে এত লোকের মাঝে তাশদীদ একটা কাজ করে বসলো,
কিছুক্ষণ পর পর সে আলতো চিমটি দিচ্ছে সাগরিকার কোমরে। দেখে বুঝার কোনো উপায় নেই।কিন্তু তাশদীদের প্রতিটি স্পর্শে সাগরিকার পেটে যেন হাজার খানেক প্রজাপতি উড়তে লাগলো।
চলবে,,,
#এক_কাপ_চা
#পর্বঃ৩৬
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(১০৬)
মায়ের গায়ে যখন সন্তান হাত তুলে তখন সেই মায়ের মতোন অসহায় মা এই পৃথিবীতে আর একটিও থাকে না। তার পুরো মা জনম বৃথা হয়ে যায়। নারী জনমের সব’চেয়ে মধুর জনম হচ্ছে মাতৃত্ব। মৌসুমির মায়ের এই মাতৃত্বের স্বাদ যেন বিষাক্ত। আজ মৌসুমি তার গায়ে হাত তুলেছে।শুধু তাই নয়, পায়ের জুতো খুলে তাকে মারতে গিয়েছিল।
কারণ খুবই স্বাভাবিক। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় একজন যুবতী মেয়ে যখন পর পুরুষের কোলে করে বাড়ি ফিরে তখন সেই মেয়েকে একজন মা অবশ্যই শাসন করবে।
কারণ কোনো মা নিজের সন্তানের ক্ষতি চায় না। মৌসুমিকে ধমক দিতেই সে তেড়ে আসে মায়ের দিকে। তার বাবার সামনে এবং এক ঘর কাজের লোকের সামনে তাকে ইচ্ছে মতো পেটায় মৌসুমি।
বয়সের ভাড়ে নয় লজ্জায় নুইয়ে পড়েছে তার মা। আজ তার বড় আফসোস হচ্ছে সে কেন সময় থাকতে নিজ মেয়েকে কষিয়ে দুই গাল দুটো থাপ্পড় মারেনি।কেন তার বাবার ভয়ে তাকে সঠিক শিক্ষা দেয়নি।
সে কী তবে এতকাল দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষছিল?
যা সুযোগ পেলেই ছোবল মারছে?
সন্তানের এমন বেয়াদবির কারণে তার মাকে আজ হেনস্থা হতে হচ্ছে। বাজে ভাষায় গালিগালাজ করে নিজ রুমে চলে গেল মৌসুমি।মৌসুমির বাবা ওসব দেখেও দেখে না।তিনি ব্যস্ত নিজের হুইস্কির বোতলে।
কাজের লোকগুলো দুজনে ধরে তাকে নিয়ে ঘরে শুইয়ে দিলো।হুট করেই তার বুকে প্রচন্ড ব্যথা হতে শুরু করলে সে কল দেয় তাশদীদ কে।
মিনিট পনেরো লেগেছে তাশদীদের এখানে আসতে। বাড়ির সামনে গাড়ি রেখে তাশদীদ ভিতরে যাওয়ার আগে সাগরিকাকে বার বার নিষেধ করে ঢুকেছে বাহিরে বের হতে কিংবা বাড়ির ভিতর যেতে। কারণ এই বাড়িতে বাস করা প্রানী গুলো মানুষ তো বটে কিন্তু এদের মনুষ্যত্ব নেই।
গাড়ির ভিতরে বসে সাগরিকা আর স্নেহা কিছুটা বিরক্ত হচ্ছিলো।
স্নেহা সাগরিকার দিকে মুখ ভার করে তাকালে সাগরিকা তাকে বলল,
“চিনহা গান শুনবা?”
“কী গান?”
“আমরা রেডিও শুনতে পারি। কিংবা ইউটিউব? ”
“ভালো লাগে না।”
“আমি গাইবো?”
“তোমার যা গলা!আমার ভয় লাগে।”
“আরে লাগবে না। আমি নিশ্চিত তুমিও গাইবে গান শেষ হওয়ার আগেই।”
“না।”
স্নেহার কথার পাত্তা না দিয়ে সাগরিকা গান শুরু করলো,
“মশায় আমায় কামড় মারে
শরীরে গরমের জ্বালা……..
ফ্রিজের ঠান্ডা পানি তুমি
একশো তারার মালা।
মশা- কারেন্টের এই কাহিনী
হাজার বছর ধরে…..
মশা ভালোবাসার গান শোনায় যে
কারেন্ট শুধু গেলে।
ওওওওও মশা………
কারেন্ট গেলে আমার রক্ত নিয়ে করিয়ো না খেলা।
ছাইড়া গেল পল্লী, অবদা
হাত পাখা তবু পাশে
ওয়াইফাইয়ের মতোন এমন হতাশায় আর কে রাখতে জানে
স্কিটোর অফার বড় অফার
২১.টাকায় এক জিবি……….
আগলে রাখে স্কিটো আমায় কারেন্ট চলে গেলে
ও ওয়াই-ফাই………..
কারেন্ট থাকতেও নেট স্পীড নিয়ে করিয়ো না খেলা
কালো মেঘে ডুবলে আকাশ
কারেন্ট নাই নাই করে
অন্ধকার জানে মশা তাকে
ভালোবাসে কত খানি
ও মশা……………..
কারেন্ট গেলে আমার রক্ত নিয়ে করিয়ো না খেলা
ও মশা…….
কারেন্ট গেলে রক্ত নিয়ে করিয়ো না খেলা।
(১০৭)
ইখুমের পাশে রাশেদ বসেছে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় হয়ে এলো।ইখুম চুপচাপ নিজের কাজে ব্যস্ত। ইদানিং তাকে নিজের জন্যই নিজেকে সুস্থ রাখতে হচ্ছে। বাদাম ছিলতে ব্যস্ত থাকা ইখুম রাশেদের উদ্দেশ্যে বলল,
” আজ স্নেহার সাথে এমন না হলেও চলতো।”
“এটা আমরা সবাই জানি।ভাবী হয়তো ভুলে করে ফেলেছে।এত কিছু চিন্তা করেনি সে।”
“আজ আমাদের সন্তানের সাথে কেউ এমন করতে পারবে?যদি আমার ছেলে বড় হয়ে মাছের মাথা খেতে চাইতো?আপনি কী বসে থাকতেন?”
“আমার এক মাত্র ছেলে।”
“স্নেহাও ওর মায়ের একমাত্র মেয়ে। পার্থক্য একটাই ওর বাবা নেই। ওর মায়ের এই বাড়িতে উঁচু গলায় কথা বলার আগে দুবার ভাবতে হয়। সে আমাদের মতোন চাইলেই শাড়ি কিনতে পারে না।ইচ্ছে হলেই বাহিরে যেতে পারে না।
তাকে ১০ টাকার জিনিসের জন্য হলেও অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়।”
“এমন ভাবে চিন্তা না করলেও হয়৷ কেউ তাকে কোনো কিছুর জন্য নিষেধ করেনি।”
“বুঝবে না।”
“স্নেহার দায়িত্ব নিতে চাইলে নিবে?”
“কেন নিবো না?স্নেহা কী আমাদের কেউ না?”
“ওর বাবার নামের জায়গায় আমার নাম?”
“এটাও মানতে পারবো।”
“বেশ তবে আমরাই স্নেহাকে দত্তক নিবো।এবং ভাবীর জন্য একটা ভালো ছেলের সন্ধান করবো। যাতে তার নিজের একা জীবন কাটাতে না হয়।”
ইখুমদের ঘরের দরজার সামনে থেকে সরে এলো জুলি।সে সামিনাকে সঠিক ভাবে এই কয়দিন ব্যবহার করতে পারছিল না। তার কাছে কোনো ইস্যু ছিল না।আজ ইখুম নিজেই সেই কথা তাকে বের করে দিলো।
সামিনার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে জুলি তার কথাগুলো সাজিয়ে নিলো।এরপর ঘরের ভিতর ঢুকে দেখলো সামিনা বিছানায় শুয়ে আছে।
ফ্লোরে বসে তার কপালে হাত রাখলো জুলি। তার শরীরে ভালো জ্বর। মেয়েটার জন্য তার মায়া হয় কিন্তু সেই মায়াকে জুলি পাত্তা দেয় না।জীবন যুদ্ধে এমন সব মায়াকে বলি দেওয়া শিখে গেছে জুলি।
জুলির স্পর্শে চোখ মেলে তাকায় সামিনা। চোখ দিয়ে ইশারা করতেই জুলি বলল,
“আম্মা তোমার খারাপ চায় নাই। দেখছ আজকে?”
“বাদ দেও। আমার ভালো লাগছে না।”
“এসব কথা ভালো লাগে না।শুনো তোমার মেয়ের নামে এই সম্পত্তির একটা ভাগ আছে জানো তো?
সাগরিকারে তাশদীদ বাবা বিয়া করছে।তার সম্পত্তি কিন্তু বাড়ছে। আর রাশেদ?তার কিন্তু কম।এখন যদি স্নেহারে রাশেদ নেয় তাইলে কিন্তু স্নেহার ভাগের সম্পত্তি রাশেদের ভাগে চলে যাবো।মেয়ে বড় হইলেই যেমন তেমন একটা ছেলে এনে বিয়ে দিব। আর সম্পত্তি কিন্তু ওদের থাকবো।”
“স্নেহার ভাগের সম্পত্তি রাশেদকে কেন নিবে?”
“তোমার মেয়েরে দত্তক নিতে চায় রাশেদ। দেইখো আজ রাইতেই কইবো তোমারে।”
“আমার মেয়ের অন্য কারোর পরিচয়ের প্রয়োজন নেই। সে তার বাবার নামেই পরিচিত হতে পারবে।”
জুলির কথা সত্যি করে দিয়ে রাতের খাবারের সময় রাশেদ দত্তকের কথা তুললে সামিনা সরাসরি না করে দিলো।এটা নিয়ে যেন সংসারে আরো এক দফা অশান্তির শুরু ছিল।
(১০৮)
মৌসুমির মাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছে তাশদীদ। কোনো প্রয়োজন নেই এমন বাড়িতে থাকার যেখানে এতটা অসম্মান পোহাতে হয়। চলে আসার আগে তার স্বামী তাকে বারণ করলেও সে মেনে নেয়নি। পানি তার গলার উপরে উঠেছে। এক কাপড়ে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে।
বাড়ি ফিরে সাগরিকা গা এলিয়েছে নিজের বিছানায়।
ঘুম কখন এসেছে সে নিজেও জানে না।শুধু এটা জানে যে তার পাশে এক সময় তাশদীদ এসে শুয়েছিল।রাতে সাগরিকা স্বপ্নে দেখছিল তাশদীদ হারিয়ে গেছে।অনেক লোকের ভীড়ে তাকে খুঁজে পাচ্ছে না সে। তার চার পাশে অনেক মানুষ অথচ তাশদীদ কোথাও নেই।অচেনা একটা জায়গায় একা একা সাগরিকা উপায় না পেয়ে হাত পা ছেড়ে কাঁদতে বসে পড়ে। হঠাৎ করেই সে তাশদীদের কন্ঠস্বর শুনতে পায়। কিন্তু অনেক দূরে। সেই কন্ঠের দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে এক সময় ঘুম ভাঙ্গে সাগরিকার।
ঘুম থেকে উঠে দেখে সে বিছানার মাঝে কোণাকুণি ভাবে শুয়ে আছে। বিছানায় কোথাও তাশদীদ নেই।সাগরিকা মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইল।এরপর বলল,
“আমার একটা মাত্র বর। সেই বর কোথায় হারালো?”
সে হন্যি হয়ে খুঁজতে লাগলো বালিশের ফাক দিয়ে, বিছানার নিচে। যেন তাশদীদ ছোট্টো একটা চুলের কাটা, যা হারিয়েছে বালিশের মাঝে।
তাকে এমন ভাবে খুঁজতে দেখে কাউচ থেকে উঠে এলো তাশদীদ। চশমাটা সাইড টেবিলে রেখে বলল,
“কী খুঁজছিস?”
“আরে আর বলো না, আমার বরটা যেন কই হারিয়েছে। খুঁজেই পাচ্ছি না।আমার একটা মাত্র বর। এখনো ভালো ভাবে ভালোই বাসলাম না তার আগেই হারিয়ে গেল।”
“কী খুঁজছিস?”
“আমার বর কে?”
“তো আমি কে?”
সাগরিকার যেন এতক্ষণে খেয়াল হলো তার সাথে তাশদীদ কথা বলছিল। তার ঘোর কেটেছে সম্পূর্ণ
।সে তাশদীদের পেটের দিকের টি-শার্ট ধরে বলল,
“আমাকে ছেড়ে কোথাও গেলে আপনার হাত পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিবো।মনে থাকে যেন।”
চলবে,,