#এক_কাপ_চা
#পর্ব-৩+৪
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(৭)
বাড়ির ছোটো বড় সবার সামনেই রাশেদ ইখুমকে থাপ্পড় মেরেছে। ইখুমের গালে দাগ পড়ে গেল সাথে সাথেই।
শাড়ির আঁচল শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে ইখুম ড্রয়িং রুমে।সামিনা মেয়েকে কোলে নিয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে তাকে শান্ত করতে ব্যস্ত৷ স্নেহার গলায় মাছের কাটা বিধেছে।
তাকে না কি ইখুম ভাত খাওয়াচ্ছিলো।
সামিনার ধারণা ইখুম স্নেহাকে সহ্য করতে পারছে, সেখানে তার নিজের সন্তান আসতে চলেছে।এবার সে চাইছে স্নেহার ক্ষতি করতে৷ তার মেয়ের নিরাপত্তা এ বাড়িতে নেই।সে এখানে থাকতে ভয় পাচ্ছে। যদি তার সন্তানের বড় রকমের কোনো ক্ষতি হয়ে যায়?
রাশেদ, তাশদীদ অফিস থেকে ফিরে এসব শুনতে পায়।বড় বৌ এবং সাগরিকার মা তখন স্নেহাকে নিয়ে ব্যস্ত।কয়েক লোকমা সাদা ভাত খাইয়ে দিতেই কাটা নেমেছে।
তবুও স্নেহা কাঁদছে। ইখুমকে মার খেতে দেখে সাগরিকা দ্রুত এসে তাকে ধরলো।
তারপর কিছু বলতে চাইলে ইখুম নিষেধ করে৷ সাগরিকা শুধু তার চাচাকে বলল,
“আমি তোমাকে সব থেকে বেশি ঘৃণা করি।সব থেকে বেশি।”
ইখুমের হাত ধরে টানতে টানতে তাকে নিজের ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো সে।
তাশদীদ বাড়ির কোনো বিষয়ে কথা বলে না।এটার জন্য বাবা-মা, চাচীরা আছে। কিন্তু আজ ইখুমকে মার দেওয়াটা সে মেনে নিতে পারলো না।
হাত ঘড়ি খুলতে খুলতে বলল,
“স্নেহাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে চলে যাও মেঝ কাকী।সন্দেহ থাকলেও দূর হয়ে যাবে। আর চাচ্চু তুমি কী ভুলে গেছো?রাঙ্গা বৌ মা হতে চলেছে। এটা অবশ্যই ভালো নয় তুমি তোমার গর্ভবতী স্ত্রীর গায়ে হাত তুলছো।”
তাশদীদের কথা শেষ করার পূর্বেই বাসার কাজের মহিলা এসে বলল,
“ভাত ছোটো বউ না, সাগরিকা খাওয়াতেছিল।তাশদীদ বাবারে দেইখা সাগরিকা ভয় পায়। যদি তারে বকা দেয়, তাই ছোটো বউ কইছে সে খাওয়াতাছিল।ছোটো বউ স্নেহারে কষ্ট দিবো এমন মাইয়্যা সে না।”
(৮)
রাতের খাবার বানানোর সময় সামিনা এসে বলল,
“আমার ভাই বলতেছে তার ওইখানে চলে যেতে৷ আমিও চাই। অন্তত আমার মেয়েটার জীবনের নিরাপত্তার জন্য।”
‘তুই কী বলতে চাচ্ছিস স্নেহার এই বাড়িতে কোনো নিরাপত্তা নেই?আমরা সবাই ক্রিমিনাল? ”
এই পর্যায়ে সামিনা প্রায় কেঁদে দিয়ে বলল,
“ভাবী!আমি খুব ছোটো হয়ে থাকি।মানুষটা নাই চারটা বছর। তোমরা আমাকে কষ্টে রাখোনি কিন্তু তবুও আমার একটা জিনিস চাওয়ার আগে চিন্তা করতে হয়। মেয়েকে এক পিস মাছ দিতে হলেও আমার ভয় লাগে। কারণ এই বাড়িতে আমার পরিচয়টাই এখন মৃত।”
“কায়সার বিদেশ গেছিল কেন জানিস?ব্যবসায় তখন লস।ভাই-বোনের সংসার টানা কষ্ট তাই সে বিদেশ গেল।শাশুড়ি অসুস্থ হইলো, তাজবীদ পেটে। তখন বাধ্য হয়েই মেঝোর বিয়ের আগে সেঝোর হলো।
আর মাছের পিস বলছিস?তোদের মিয়া ভাই নিজের ভাগের মাছ না খেয়ে তাশদীদের জন্য রাখতো। আর তাশদীদ অর্ধেক খেয়ে বাকীটা সাগরিকাকে খাওয়াতো।তখন আমাদের টানপোড়নের সংসার। যদি সাগরিকাকে এত যত্নে তার চাচা-ভাইয়েরা রাখতে পারে যখন তাদের ব্যবসায় লস ছিল তো এত এত টাকার এখন তারা কামাই করে, তারা কী স্নেহার দায়িত্ব নিতে পারে না?”
বড় বউয়ের কথায় সামিনা কোনো জবাব দিলো না।রান্নাঘর থেকে চুপচাপ বেরিয়ে গেল বাগানের দিকে।সেখানে তার জন্য স্নেহাকে কোলে নিয়ে অপেক্ষা করছে রাশেদ।
(৯)
তাশদীদের সামনে বসে আছে সাগরিকা।তার চোখ,নাক, গাল গোলাপি রঙের হয়ে আছে।
কাঁদতে কাঁদতে তার চোখ ফুলেছে। চোখের পানি শুকিয়ে গালে দাগ ফেলেছে।
তাকে দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল তাশদীদ। টিস্যু দিয়ে গালের পানি মুছে দিতেই তার মনে হলো,
পুরো দিনের দেহের তৃষ্ণা, মনের ক্লান্তি এবং মস্তিষ্কের ক্ষুধা মিটে গেল।
চোখ বুঝে সে সাগরিকা কে জিজ্ঞেস করলো,
“কাঁদছিস কেন?”
“রাঙ্গা মা আমার জন্য মার… ”
“দেব এক চড়। তখন বলিস নি এখন কেন কাঁদছিস?”
তাশদীদের ধমকে সাগরিকার কান্না আরো বেড়ে গেল।ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো সে।
তাশদীদ উঠে এসে তার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বলল,
“রাঙ্গা বৌ কে নিয়ে দিবি।আর ১০ মিনিটের মধ্যে নিচে খেতে আসবি।”
তাশদীদ চলে যাচ্ছিলো তখন মিনমিনে স্বরে সাগরিকা বলল,
“খাবো না, পেট ভরা। বকা খেয়ে পেট ভরে গেছে আমার। আমার পেট ফেটে যাবে এখন। এত্ত ভরা।”
তাশদীদ ফিরে এসে কাজের লোককে ডেকে পাঠিয়ে বলল তিন জনের খাবার ঘরে দিয়ে যেতে।
এরপর ইখুম কে নিয়ে এলো সেখানে। ইখুম কাঁদছে না তার মন খারাপ ও না।সে অভ্যস্ত কিন্তু সাগরিকা, তাশদীদ কে ভয় পায়।তাশদীদ গম্ভীর ধরণের মানুষ। সাগরিকার ভয়ের কথা মনে করেই সে বলেছিল কিন্তু এত কিছু হবে সে নিজেও বুঝেনি।
ইখুমের প্লেটে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজ প্লেটে খাবার বেড়ে নিলো তাশদীদ।সাগরিকা চুপচাপ বসে আছে।এমন দৃশ্য এবাড়িতে অহরহ দেখা যায় না।তাশদীদ সাগরিকাকে খাইয়ে দিচ্ছে।উল্টোটাই দেখা যায়, তাশদীদ ধমকে দিচ্ছে তাকে। খাবার টেবিলে বসেও অনেক দিন তাকে ধমকে দিয়েছে সে।কিন্তু দোষ সাগরিকার থাকে বলেই বকা খায়।
এখনো তাশদীদ পুরো মাছ খায় না। অর্ধেকটা প্লেটে রেখে উঠে যায়। ছোটোবেলার অভ্যেস সে ছাড়েনি।আর তার মা সে মাছের অংশ তুলে নেয় নিজ প্লেটে।
তার শাশুড়ি না কি বলেন,
“ছেলের আধখাওয়া জিনিস ফেলে দিতে নেই।হায়াত কমে।”
হতে পারে কুসংস্কার তবুও তিনি মানেন।
আজ তাশদীদ নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে সাগরিকা।ইখুম ম্লান হেসে বলল,
“ভাবছি সাগরিকাকে বিয়ে দিবো না তাশদীদ।ওকে ঘরে খাম দিবো।”
তাশদীদ সাগরিকার মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে জবাব দিলো,
“ও হচ্ছে একটা বেগুন।যার কোনো গুন নেই।এই বেগুনকে কে বিয়ে করবে?সারা জীবন বাপের ঘরেই থাকবে।”
সাগরিকা মাথা নিচু করে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো,
ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে সে প্রেম ও করবে এবং বিয়েও করবে।তারপর এ বাড়ি থেকে চলে যাবে। কোনো দিন আসবে না।
ইখুম হাত ধুতে উঠে গেলে তাশদীদ সাগরিকার কাছাকাছি এসে তার ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা ভাত তুলে নিয়ে নিজের মুখে দিয়ে বলল,
“বেগুন বেগুনের মতো থাক।আলুর মতোন হওয়ার চেষ্টা করলে একদম ভর্তা বানিয়ে ফেলবো।”
নিজ হাতে তার মুখ মুছিয়ে দিচ্ছে সে। সাগরিকা যদি তাশদীদের দিকে তাকাতো তবে দেখতে পেত যে আংগুল স্পর্শ করেছে সাগরিকা ঠোঁট সে আংগুল এখন ব্যস্ত তাশদীদের ঠোঁটে।
খাবার শেষ করার পর তাশদীদ চলে গিয়েছে নিজ রুমে।সে জানতো যদি নিজ থেকে খাবার না নিয়ে যেত তবে ইখুম কিংবা সাগরিকা কেউ রাতে খেতে নামতো না।
সাগরিকার রুমের জানালায় দাঁড়িয়ে ইখুম নিচে বাগানের দিকে তাকিয়ে ছিল।বাড়ির পিছনের গেট দিয়ে তখন রাশেদের গাড়ি ঢুকলো।স্নেহাকে কোলে নিয়ে নামলো সামিনা।সামিনার থেকে স্নেহাকে কোলে নিয়ে বাড়িতে ঢুকছিল রাশেদ।
হঠাৎ ইখুমের তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা হলো।সে অনুভব করলো তার পা বেয়ে নেমে আসছে ক্ষীণ রক্তের স্রোত।
টেবিলের উপর থেকে ফোন হাতে নিয়ে সে রাশেদকে ম্যাসেজ করে বলল,
“আমাদের সন্তান আসতে চলেছিল। আমি আপনাকে জানাতেও পারলাম না।হয়তো আপনি ঠিক বলেছিলেন অন্যের সন্তানের ক্ষতি চায় তাকে মা হওয়ার অধিকার সৃষ্টি কর্তা কীভাবে দেয়?
আমাদের না,না আমার সন্তান হয়তো পৃথিবীতে আসার পূর্বেই বাবার কথা শুনেছে।আপনি এবার আমায় তালাক দিতে পারেন। আমি দ্বিমত করবো না।”
সাগরিকার মা ঘরে এসে দেখলেন ইখুমের কাপড়ে রক্ত। বুঝতে বাকী রইল না ইখুম হয়তো তার সন্তান হারিয়েছে।
চলবে,,,
#এক_কাপ_চা
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ৪
(১০)
ইখুমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাশদীদ, সাগরিকা, তাজবীদ তিনজনে নিয়ে গিয়েছে।
ইখুমের মুখ তখন ব্যথায় নীল রঙ ধারণ করেছে।
রাশেদকে কেউ ডাকেনি।কিন্তু আজ আর কেউ চুপ রইল না।বড় বৌ এবং সাগরিকার মা সব কিছু তাদের কর্তাদের জানিয়েছেন। এতদিন শাশুড়ি মায়ের ভয়ে দুই বৌ চুপ থাকলেও আজ দুজনে সব কিছু জানিয়েছে।
সব জানার পর দুই ভাই কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ডেকে পাঠালেন রাশেদকে৷ রাশেদ বেরিয়ে এলো সামিনার ঘর থেকে। ইখুমের এই অবস্থার কথাও সে জানে না।
বড় ভাই রাশেদকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন,
“ইখুমের গায়ে হাত তুলেছো তুমি?”
রাশেদকে চুপ থাকতে দেখে রেগে গেলেন তার সেঝ ভাই সোহেল।সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো রাশেদের গালে।রাশেদ তবুও নিশ্চুপ।
“ইখুম এই বাড়ির মেয়ের মতোন না। এই বাড়ির মেয়ে।কোন দিন দেখছো?তোমার ভাবীদের সাথে আমরা উঁচু গলায় কথা বলেছি? তুমি কোন সাহসে বৌ মারো?
কত দিন ধরে এসব চলে? আর তোমরা এত দিন আমাদের বলার প্রয়োজন মনে করো নাই?
একটা মেয়েরে এতটা মানসিক অশান্তিতে রাখছো?
ভুলে যাও কেন?সাগরিকাও বড় হচ্ছে, অন্যের ঘরে দিতে হবে। তার সাথে এমন করলে মেনে নিতে পারবো আমরা?”
রাশেদ চুপচাপ দাঁড়িয়ে কথা শুনছে। তখন ইখুমকে নিয়ে প্রবেশ করলো সাগরিকা৷ তাশদীদের মা এগিয়ে গিয়ে তাকে ধরে বসিয়ে দিলো।
তাশদীদ ফিরতেই তাকে জিজ্ঞেস করলো,
“কী বললেন?”
“মা সন্তান দুজনেই সুস্থ আছে। কিন্তু কেয়ারফুল থাকতে বলেছেন।”
রাশেদ অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো,
“ইখুম তুমি ডক্টরের কাছে কেন গিয়েছিলে?তোমার শরীর ভালো তো?”
রাশেদের দিকে তাকিতে ম্লান মুখে হাসে ইখুম।চোখ বন্ধ করে তাশদীদের বাবাকে বলল,
“ভাইজান, আমাকে আমার বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দিবেন? আমি এখানে থাকতে ভয় পাচ্ছি।আমার সন্তানের নিরাপত্তার জন্য হলেও অনুমতি দিন।”
রাশেদের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা সামিনার চোখেমুখে বিস্ময় প্রকাশ পাচ্ছে।ঘন্টা কয়েকের মধ্যেই ইখুম কথাগুলো যেন তাকেই ফেরত দিয়ে দিচ্ছে।
(১১)
মৌসুমী দাঁড়িয়ে আছে তাশদীদের ঘরের সামনে।তাশদীদ সকালের মর্নিং ওয়ার্কআউটে ব্যস্ত। তার পেটানো শরীর এবং পিঠ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।সেদিকে তাকিয়েই কামনার দীর্ঘশ্বাস ফেলল মৌসুমি। সম্পর্কে সে তাশদীদের ফুপাতো বোন।
তাশদীদ পুশ-আপ করছিল এবং সাগরিকা তার পাশে বসে আঙ্গুরের পাতলা খোসা ছাড়াতে ব্যস্ত।
ইখুমের জন্য নিয়ে যাবে সে। কিন্তু তাশদীদ তাকে ডেকেছে। কারণ আজ বাড়িতে মৌসুমীর বাবা-ভাইয়েরা আসবে।
তাদের খুব একটা পছন্দ করে না এই বাড়ির কেউ।বোন বিয়ে দিয়েছে তাই তাদের সাথে নাম মাত্রের সম্পর্ক। কারণ পুরো পরিবার রাজনীতির সাথে যুক্ত। এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মৌসুমীর মা কে তার বাবা তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল আজ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর পূর্বে।এলাকায় প্রভাবশালী ছিল বলে আটকাতে পারেনি কেউ।তাছাড়া তখন তার ভাইয়েরাও ছিল ছোটো।শুধু তাশদীদের বাবা বড় ছিলেন।
“কালো রঙের জামাটা পড়ে তৈরী হয়ে নে৷ তুলিকেও বল তৈরী হয়ে নিতে। রাঙ্গাবৌ কে নিয়ে ঘুরে আয় আশেপাশে।
তাজবীদ যাবে সাথে।”
“আপনি যাবেন না?”
তাশদীদ এবার ফ্লোরে বুক ঠেকিয়ে শুয়ে পড়ে৷ বার দুয়েক শ্বাস নিয়ে বলল,
“কাজ আছে আমার। তাজবীদ তো থাকছেই।তবুও হবে না?”
“কোথায় যাবো?রাঙ্গামা তো অসুস্থ।”
“শপিংয়ে যাবি?অথবা কোনো প্রিয় রেস্টুরেন্টে?”
“ইচ্ছে করছে না।”
তাশদীদ এবার উঠে এসে সাগরিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“ক্যাশ রেখে যাচ্ছি।পাশের এলাকায় কুমোর পাড়ায় যেতে পারিস। রাস্তা ভালো।সাথে আমার ফোন নিয়ে যা।”
সাগরিকা এবার খুশী। তাশদীদের জায়গায় যদি তাজবীদ থাকতো তবে এতক্ষণে তার চুল এলোমেলো করে দিতো সে৷ কিন্তু তাশদীদকে এমন কিছু করার চিন্তাও করতে পারবে না।
সাগরিকা চলে যেতেই মৌসুমি ধীরেধীরে প্রবেশ করলো তাশদীদের রুমে। পিছন থেকে তাশদীদকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁট ছোঁয়ায় তার পিঠে।
তাশদীদ দ্রুত সরে গিয়ে পিছন ফিরে মৌসুমিকে কিছুটা ধমকে বলল,
“এটা কেমন বেয়াদবি? থাপড়ে গাল লাল করে দিবো।”
“এই বাহানায় তো স্পর্শ করবে?”
তাশদীদ এক মুহুর্ত অপেক্ষা করে না।বড় বড় কদমে শার্ট নিয়ে নেমে যায় নিচে। তাশদীদের থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে মৌসুমি তাজবীদের রুমে যায়।তাজবীদ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছে।
“ভালোবাসায় কীভাবে তাকে ভোলাবো রে তাজ?”
“কাকে আবার পটাতে চাইছো?তুমি যা মেয়ে মাইরি!তোমাকে আবার ভোলাতে হয়?”
“হয় রে। হয়।এই বান্দা চালু চিজ।বলতো কী করি।সরাসরি কিসিং অফারটাও নেয় না।”
“চুমুই ক্যান দিতে হবে। কাছাকাছি আসা যায়। দুষ্টু মিষ্টি টাইপ। আদর না করে ডিরেক্ট ধর তক্তা মার পেরেক করলে কি আর হবে?
আইমিন আস্তেধীরে আগাও। আজ চোখাচোখি, তারপর হাত ধরাধরি তারপর না হয় বাকী সব।”
(১২)
ইখুম গতকাল থেকে রাশেদের সাথে কথা বলেনি।রাশেদ চেষ্টা করেছিল কিন্তু সে তাকে সুযোগ দেয়নি।
কারণ ইখুমের মনে হচ্ছে,
“আঘাতের পরিমাণ যখন বেশি হয়ে যায়, মাফ চাওয়াটা তখন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা।”
তুলি, সাগরিকার সাথে বেরিয়ে যাচ্ছে ইখুম।রাশেদ তাকে ডাকলেও সে ফিরে তাকায়নি।সম্পর্কটা যখন মরেই গেছে সামান্য বৃষ্টির পানি গড়িয়ে সম্পর্কটা জীবন্ত করতে পারে না।
তাজবীদ ড্রাইভ করবে। তার পাশে বসবে সাগরিকা।পিছনে তুলি,ইখুম এবং স্নেহা।গাড়িতে উঠার আগে তাশদীদ সাগরিকার কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধ থেকে ওড়নাটা সরিয়ে বেরিয়ে থাকা আন্ডারগার্মেন্টস এর স্ট্রিপ কামিজের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে ওড়না ঠিক করে দিতে দিতে তাশদীদকে বলল,
“সাবধানে যাবি।আর ফোন সাথে রাখিস। কোনো প্রয়োজনে কল দিবি।আর অবশ্যই সাবধানে ড্রাইভ করবি।”
কিন্তু তাশদীদের করা কাজ তুলির নজর এড়িয়ে গেল না।সে ফাঁকা ঢোক গিলে মনে মনে বলল,
“আমি তবে ফুপাতো স্ককায় দুলাভাই পেতে চলেছি।”
তাশদীদ সাগরিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“যদি শুনেছি উল্টোপাল্টা কিছু….”
ভয়ে থতমত খেয়ে থাকা সাগরিকা বলল,
“আমি কিছু করবো না। সাবধানে থাকবো।”
সাগরিকারা চলে যাওয়ার পর তাশদীদ সবাইকে বলল সেঝ কাকীকে তৈরী হতে কারণ আজ তাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে।
তাশদীদের পরিচিত একজন।কেউ আপত্তি করলো না। তাশদীদের দুটো যুক্তিতে।
সামিনার বয়স এখনো অনেক বাকী।সে চাইলে পুনরায় শুরু করতে পারবে।
ইখুম, রাশেদের সংসার কিংবা অনাগত সন্তানের জন্যও এটা প্রয়োজন।
কিন্তু রাশেদ মেনে নিতে পারলো না। সে তাশদীদের মতে দ্বিমত।ইখুমের সমস্যা আলাদা।এখানে সামিনাকে টেনে আনা বোকামি।সে সামিনার বিয়েতে রাজি নয়।
সামিনা শুনেও অঝোরে কাঁদছিল।কিছুক্ষণ পর সে দৌড়ে গিয়ে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।
বাহির থেকে ডাকাডাকির পর দরজা খুলছিল না। পিছনের জানালা দিয়ে রাশেদ ঘরে উঁকি দিয়ে দেখতে পেলো সামিনার দেহ ততক্ষণে ঝুলছে সিলিংয়ের সাথে।
চলবে,,,,,