এক কাপ চা পর্ব ৩৩+৩৪

0
600

#এক_কাপ_চা
#পর্বঃ৩৩+৩৪
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

(৯৭)

জুলেখা সবার সামনে ইখুমের নামে এসব বললেও সবাই চুপ করে শুনছিল।সবাইকে চুপ থাকতে দেখে জুলেখা যেন একটু সাহস পেলো।সে আরো মরা কান্না জুড়ে দিলো।
কপালে হাত দিয়ে বসে রইল ফ্লোরে। কিছুক্ষণ পরপর কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো,

“আম্মারে আফনেরা যত খারাপ মনে করেন তত খারাপ আম্মা না।আপনেরা তো বিনা পছন্দের একটা জামা গায়ে দেন না আর আম্মার কাছে আশা করেন সে বিনা পছন্দের ছেলের বৌ নিয়া সংসার করবে? জামা পছন্দ না হইলে বদলাই আনা যায়, পুরান হইলে ফালায় দেওয়া যায় কিন্তু ছেলের বৌ কি তা পারা যায়? তবুও আম্মা সহ্য কইরা নিয়া খাইতেছিল। কিন্তু ইখুম কামডা ভালা করলা না।মানতাম আমি যে আম্মায় তোমারে মায়া বড়ি খাওয়ানের চেষ্টা করছিল, তোমারে তালাক দেওয়ার চেষ্টা করছে, বদনাম করছে তাই বইলা তুমি আম্মারে মাইরা ফেললা?”

বলেই আঁচলে মুখ ঢাকলো জুলেখা।তার শেষ কথা গুলো তে হচকচিয়ে উঠেছে সবাই।বাড়ির সব থেকে বৃদ্ধ মানুষ, রাশেদের মা মেরে ফেলতে চেয়েছে তার অনাগত সন্তানকে।

রাশেদ খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,

“কী বললেন? মা কী করেছে?”

জুলেখার টনক নড়লো, সে বুঝতে পারলো একটু বেশিই বলে ফেলেছে।আমতা আমতা করে সে জবাব দিলো,

“কি কমু ভাই? কিছুই তো কই নাই।আম্মার এমন অবস্থায় আমার মাতা আইলায় গেছে। কী রাইখা কি কইছি কে জানে? তুমি কিছু মনে কইরো না।”

“কী রেখে কী বলেন নি আপনি।আপনি কী সব বলছেন একবার নিজে চিন্তা করুন।একবার আপনি বলছেন ইখুম আমার মা কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে তাকে মারতে চাইছে আবার বলছেন মা আমাদের সন্তানকে মারতে চেয়েছে? আপনি সামান্য কাজের মানুষ এটা ভুলে যাবেন না।”

“ঠিক কইছেন আমি কামের মানুষ। অশিক্ষিত মানুষ। কিন্তু আপনার মায়েও শিক্ষিত না। আপনারাও অশিক্ষিত মানুষের সন্তান।”

“আপনি পারবেন আপনার যেকোনো একটা কথার সত্যতা প্রমাণ করতে?”

“কোন কথা?”

“ইখুম মাকে ধাক্কা দিয়েছে কিংবা মা ইখুমকে…..”

“আমি আপনার মায়ের সব থেইকা কাছের মানুষ। বিশ্বাস না হইলে কিছুই করার নাই।সময় একদিন সব কইয়া দিবো।”

জুলেখা এক মুহুর্ত অপেক্ষা করে না।দ্রুত বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।বাড়ির বাইরে তার জন্য অপেক্ষা করছে বর্তমান সময়ের সব থেকে দামী গাড়ি। গাড়িতে উঠে সে ড্রাইভার কে ইংরেজিতে কিছু একটা বলে। ড্রাইভার ছুটে চলেছে জুলেখার নাম বলা সেই পাঁচ তারকা হোটেলের দিকে।

(৯৮)

স্নেহা খুব একটা কথা বলে না।এক দৃষ্টিতে শুধু মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। সামিনার মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় তাকে বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখতে। যেখান থেকে কেউ মেয়েটার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। জুলেখা আজ বাড়িতে অনেক কথা বলেছে।আজ সামিনা বুঝতে পারছে সে শুধুই তার শাশুড়ীর হাতের পুতুল ছিল।সে ইখুমকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য তাকে শুধু ব্যবহার করেছে। এসব ভেবে সামিনার কষ্ট হচ্ছে না বরং লজ্জা হচ্ছে। সে কীভাবে তার বাচ্চার দোহাইয়ে অন্য একজনের সংসার নষ্ট করে ফেলেছিল।শুধু তাই নয়, তান্ত্রিক এনে ইখুমের চূড়ান্ত ক্ষতি অবধি করতে চেয়েছিল সে।

এই পৃথিবীতে স্বামী হারা স্ত্রী এবং পিতৃহীন সন্তানের মতোন অসহায় কেউ নেই।
কথায় বলে

“জামাই রা সাত ভাই, জামাই মরলে কেউ নাই।”

কিন্তু সামিনাকে বাঁচতে হবে তার মেয়ের জন্য।সব থেকে খারাপ চরিত্র সামিনার মনেও কিছু স্বপ্ন, আশা ছিল মেয়েকে নিয়ে। কিন্তু এই মেয়েটাই এখন কোনো কথা বলে না।
মেয়েকে নিয়ে শুরু হচ্ছে তার নতুন পথ চলা।যেখানে কারোর সাহায্য প্রয়োজন নেই। তার বাবা মৃত হলেও মৃত বাবার পরিচয়েই সে বড় হবে৷ অন্য কাউকে সে কেন দেবে তার একমাত্র মেয়েকে দত্তক?

তবে এই পরিবারের মেয়ে হিসেবেও স্নেহা সবার পরেই থাকবে। এইতো আজ সকালের নাস্তার পর ফ্রিজে মাত্র একটা ডিম ছিল। সামিনা সেই ডিমটা হাতে নিয়েছে কেবল স্নেহার জন্য অমলেট বানাবে বলে কিন্তু সাগরিকার মা বলল সাগরিকা সকাল থেকে কিছু খায়নি। কখন মেয়েটার আবার শরীর খারাপ করবে কে জানে?তাইতো ডিম সেদ্ধ করতে এসেছে সে। স্নেহাকে মাছ ভাত খাওয়াতে বলে হাত থেকে ডিম নিয়ে গেল সে।

তারা এতদিন বাড়ি ছিল না।হাসপাতালে, গ্রামে এসব করতে করতেই দিন শেষ । আজ সকালে বাজারে পাঠানো হয়েছে।
ক্ষুধায় স্নেহার মুখটা একটু হয়েছিল।ফ্রিজে ছোটো মাছের তরকারি। এত কাটা স্নেহার পক্ষে খাওয়া সম্ভব ছিল না।সাগরিকাকে ডিম সেদ্ধ করে দিলেও সে খায়নি।ডায়নিং টেবিলের উপরে বাটিতে পড়ে রইল ডিমটা।সাগরিকার খাবারের জন্য তার মা একটু অপেক্ষা করতে পারলো না।
অথচ মিনিট দশেক পরেই ব্যাগ ভর্তি বাজার এলো।কত ডিম আনা হলো এক সপ্তাহের জন্য। সামিনা নিজের চক্ষু লজ্জার জন্য সেই ডিমে হাত দিতে পারলো না।কান্নাগুলো গলায় আটকে গেল তার।টেবিলের উপর থেকে দুটো শুকনো ব্রেড নিয়ে পানিতে দিয়ে খাইয়ে দিচ্ছিলো মেয়েকে।তাশদীদের মা সেখানেই ছিল।তারা ইদানীং সামিনাকে কিছু বলে না।হয়তো তাকে এই বাড়ির সবাই ঘৃণা করে। সে তার কর্মফল পাচ্ছে কিন্তু তার মেয়েটা?

(৯৯)

তাশদীদের জন্য চা নিয়ে যেতেই তাশদীদ বলল,

“চা খাবো না।”

সাগরিকা টেবিলের উপর চায়ের কাপ রেখে বলল,

“কষ্ট করে বানালাম।”

“তো?”

“খাবেন।”

“কী খাবেন তবে?”

“তোকে।”

“আশ্চর্য। নাউজুবিল্লাহ মার্কা কথা। আমাকে খেলে আমার পেটের নাড়িভুঁড়ি কি করবেন?”

“দেখ কী করি।”

সাগরিকা বুঝতে পারলো কোনো বিষয়ে তাশদীদ রেগে আছে। তাই প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার। কিন্তু আর হলো কই। তাকে ধরে, উঁচু করে নিয়ে খাটে বসিয়ে দিলো তাশদীদ।
তার হাত শক্ত করে ধরেছে সাগরিকার কোমর এবং সে হিসহিসিয়ে বলল,

“শুভ্রকে এত পছন্দ তো আমায় বিয়ে করলি কেন?”

চলবে,,,

#এক_কাপ_চা
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৩৪

(১০০)

তাশদীদের খুব ইচ্ছে হয়েছে তার নিজ বৌ, একমাত্র বৌ এর হাতে সে লেবুর এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত খাবে। তার পুরো দিনের সকল যন্ত্রণা, চিন্তা, ক্লান্তির থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবে সে। আর সাগরিকার ইচ্ছে হলো সে তার প্রাণ প্রিয় স্বামীকে আজ ইচ্ছে মতোন নাকানিচুাবানী খাওয়াবে। যখন তখন তাকে ওমুক তমুকের সাথে গুলিয়ে ফেলার এই বাজে ইনফেকশন টা যে তার হয়েছে, এই ইনফেকশন থেকে তাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তার এই নাকানিচুাবানীটা বড্ড বেশি প্রয়োজন।
ফ্রিজ থেকে গোটা চারেক লেবু বের করলো সাগরিকা। খুব যত্ন সহকারে লেবু গুলো পরিষ্কার করে কেটে একটা গ্লাসে চিপড়ে নিয়ে দেখলো আধা গ্লাস লেবুর রসেই ভরে গেছে।
এটা দেখে মনে মনে বেশ খুশি হলো সে। এরপর ছোট্ট একটা জগে পানির সাথে লেবু মিশিয়ে তাতে চার চামচ লবণ মিশিয়ে ইচ্ছে মতো নাড়তে লাগলো সে। এরপর একটা গ্লাসে শরবত আর বরফ নিয়ে এগিয়ে চলল তাশদীদের দিকে।
ইদানীং তার মাথায় একটাই গান বাজে। যার গীতিকার, সুরকার সবই হচ্ছে ইয়ামিন। আর গানটা হলো,

পানির নিচে ডলফিন টা তো জঙ্গলের মতোন এ দাদা জংগলের মতোন।

গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে তাশদীদের সামনে শরবতের গ্লাস রেখে দাঁড়িয়ে রইল সে।
তাশদীদ যেই মাত্র গ্লাসটা হাতে নিয়ে শরবতে চুমুক দিবে সেই মুহুর্তে তার মা এসে সাগরিকাকে বলল,

“তাশদীদ থামো।শরবর মুখে তুলো না।শরবতে লবন।আর সাগরিকা, জানিস? পুরুষ মানুষ সারাদিন পর শান্তি খুঁজে তার ঘরের মানুষের কাছে। সারাদিন তুমি কি কাজ করো? সব তো আমি আর তোমার মা মিলেই করি। বেহুশের মতোম দশটা অবধি ঘুমাও। সকালে ছেলেটা যখন অফিসে যায় তখন ও তুমি এগিয়ে এসে কোনো দিন বলো না যে এক গ্লাস পানি বা একটা ফাইল এগিয়ে দেই। সারাটা দিন ঘুমাও, ফোন টিপো। অথচ আজ এক গ্লাস লেবুর শরবত চেয়েছে তাই তুমি দিতে পারো নাই?চিনি বাদ দিয়ে লবন দিছো? দেওয়ার আগে কি একবার মুখে দিয়ে দেখা যায় না? এই শরবত খেলে ও বমি করবে না?এখন মনে হচ্ছে তোমার বড় আব্বু ঠিক বলেছিল
ঘরের মেয়ে ঘরে রেখে কোনো সংসার হবে না। তাকে দিয়ে কোনো কাজ করানো যাবে না, না যাবে তাকে কিছু বলা। মাঝ থেকে ছেলের জীবন, সংসার নষ্ট।”

তাশদীদের মা এতগুলো কথা বলে গ্লাসের দিকে হাত বাড়ালো।তাশদীদ সাগরিকার দিকে তাকিয়ে দেখল মেয়েটা জুবুথুবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে পানি টলমল করছে। এই বাড়িতে তাশদীদ ছাড়া ওকে কেউ কখনো ধমক দেয় না।যতই ভুল করুক না কেন সবাই ভুল শুধরে দেয় কিন্তু আজ কেন এতগুলো কথা শোনালো তা বুঝতে পারলো না।
তাশদীদের মায়ের হাত থেকে শরবতের গ্লাস সে নিজে হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা শেষ করে ফেলল।
মা বার বার বারণ করা স্বত্বেও সে শুনলো না।খাওয়া শেষ করে সাগরিকার দিকে তাকিয়ে সে বলল,

“মা, যেমন হোক না কেন ওর সব অধিকার আছে আমার উপর। ও যাই খাবার বানিয়ে আনুক, যেমন হোক আমি খেতে পারবো।তার থেকে বড় কথা তোমাদের কাজে সমস্যা হলে কাজের লোক বাড়িয়ে নেও।আমিও চাই না তোমাদের বুড়ো বয়সে তোমাদের কষ্ট হোক।ওকে হাতে ধরে কাজ শিখিয়ে নাও, বকাবকি করো না।আর এখন কী ওর বয়স হয়েছে সংসার সামলানোর? সময় হলে ও দায়িত্ব নিয়ে নিবে মা।”

সাগরিকা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল তাশদীদের দিকে। তাশদীদ খুব ভালো করেই জানে সাগরিকা ইচ্ছে করে তাকে এমন শরবত এনে দিয়েছে তবুও তার কোনো অভিযোগ নেই। কারণ সে চায় সাগরিকার পুরো পৃথিবী তাশদীদময় হোক, সেখানে অন্য কারো প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা থাকুক আজীবন।

(১০১)
তাশদীদের দাদীর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে সে সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ নয়। তার কথাগুলো এখনো অস্পষ্ট। অস্পষ্ট উচ্চারণে সে তার ছেলেদের কাছে ডাকলেন।সামিনার কথা কিংবা স্নেহার কথা একবারো জিজ্ঞেস করলেন না, সে মুখ খুলে প্রথমেই জানতে চাইলেন জুলি কোথায়। জুলি দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। তাকে ডাকতেই সে দ্রুত ঘরের ভিতরে ঢুকলো।

জুলিকে হাত ইশারায় ডেকে ভদ্রমহিলা বলল,

“তুই আমার কাছে থাক। বাকীদের বাইরে যেতে বল।তোরে ছাড়া আমি আর কাউরে বিশ্বাস করি না।”

“আম্মা, আফনে কোনো টেনশন নিয়েন না আমি আছি এইখানে। আফনে কী খাইবেন?আমি নিজ হাতে রাইন্ধা আনুম।জানি কাউরে বিশ্বাস আপনি করতে পারতাছেন না।আর এইটাই স্বাভাবিক। কারণ নিজের পোলার বৌ যদি শাশুড়ীরে তাও বয়স্ক শাশুড়ীরে ধাক্কায় মাইরা ফেলতে চায় তখন কী আর কিছু থাকে?নিজের ছায়ারেও অবিশ্বাস হয়।”

সাগরিকার বাবা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনলেন। তার মায়ের অভিব্যক্তি দেখে মনে হলো জুলেখার বলা প্রতিটি কথা সত্য।তিনি এক মুহুর্ত অপেক্ষা করলেন না সেখানে। বাইরে এসে দ্বিধায় পড়ে গেলেন। তবে কী সত্যি?ইখুম তার মা কে ধাক দিয়ে মেরে ফেলে দিয়েছিল?
না কী তার মা হার্ট অ্যাটাক এর কারণে বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে নাকে মুখে ব্যথা পেয়েছিল।কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যে এসব নিয়ে দ্বিধায় থাকা সাগরিকার বাবা উত্তরের আশায় অপেক্ষা করতে লাগলেন তার মা এবং ইখুমের সুস্থতার।
এক পক্ষের কথা শুনে তিনি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান না, বা এমন কোনো কথা বলতে চান না যার ফলে পরিবারের সকলের মধ্যে একটা বিভেদ সৃষ্টি হোক।

(১০২)

ইখুমের বাচ্চাটাকে তাদের কাছে এখনি দেওয়া হবে না।কারণ বাচ্চাটার প্রিম্যাচ্যুরিটি।নিজের বাচ্চার সুরক্ষার জন্য তারা তার কাছে যায় না। বাইরের কত প্রকার জীবাণু থাকে,কত রোগ থাকে। এসব কথা চিন্তা করেই তারা যেতে পারে না বাচ্চার কাছে। ইখুমের অনেক ইচ্ছে করে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিতে। দুই হাত দিয়ে তাকে ধরতে। তার কান্না শুনতে।ইখুম মাঝেমধ্যে স্বপ্নে দেখে তাদের মাঝে বাচ্চাটা ঘুমিয়ে আছে। হুট করেই বাচ্চাটা কাঁদতে শুরু করলেই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভাংতেই খালি বিছানা দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে ইখুম।মা হওয়ার যন্ত্রণা বড় যন্ত্রণা। একজন নারী শুধু সন্তান জন্ম দিলেই মা হয় না, মা হওয়ার জন্য তাকে দীর্ঘ নয় মাস তাকে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হয়। নিজ রক্ত মাংসে গড়া ছোট্ট জানটাকে ধীরে ধীরে বড় করতে থাকে। নিজের খাওয়া,ঘুম, নিজের সকল আরাম আয়েস ত্যাগ করতে হয়। ইখুম মা হয়েও হতে পারছে না।নিজ সন্তান কে ধরতে না পারার যন্ত্রণা তাকে পুরোদিন পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে।

আজ তাজবিদ এসেছিল ইখুমকে নিয়ে তারা চলে যাবার পর জুলেখা বেরিয়ে এলো তাশদীদের দাদীর কেবিন থেকে।সে বেরিয়ে আসতেই বাইরে থাকা দুজন সাদা পোশাকের লোক দাঁড়িয়ে তাকে বলল,

“ম্যাম কোনো প্রয়োজন?”

“আমাকে সবার সামনে ম্যাম ডাকবেন না।আর কিছুর প্রয়োজন নেই। শুধু যা করতে বলেছি তাই ঠিক মতো করুন। আর হ্যাঁ ডক্টরের সাথে কথা বলুন যেন এই বৃদ্ধ মহিলার সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় লাগে। সে যেন কথা খুব একটা না বলতে পারে, ডক্টরের সাথে কথা বলুন। আর বাচ্চাটার কী খবর?”

“বাচ্চাটা সুস্থ আছে।”

“বাচ্চাটা নিজেই এক যোদ্ধা। যুদ্ধ ক্ষেত্রে যোদ্ধাদের মৃত্যু হবে এটাই স্বাভাবিক।আশা করি আপনাদের কাজ বুঝতে পেরেছেন।”

ইখুমের সন্তানের মৃত্যু গল্পে নতুন মোড় আনবে এটা জুলি জানে।জানে বলেই সে বাচ্চাটাকে মারতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। নিজের ভিতরের ঝড় যে ওদের চোখের পানিতেই নিভে।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here