#এক_কাপ_চা
#পর্বঃ২৯+৩০
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(৮৫)
ইখুমকে যা ইচ্ছে তাই বলে গালি দিচ্ছে তার শাশুড়ি। সেদিকে কোনো কর্ণপাত করছে না সে। আপাতত সে ব্যস্ত স্নেহাকে নিয়ে। সামিনার সাথে এক দফা কথার তর্ক বির্তক হয়েছে তার।
লোকে যতই সামিনার এই বিষয়ে কোনো দোষ নেই কিন্তু ইখুম আজ সামিনার দোষ খুঁজে পাচ্ছে।
মা হয়ে অবশ্যই স্নেহার এই দিকটা অবশ্যই তার খেয়াল রাখা উচিৎ ছিল। কিন্তু রাখেনি এবং যা ঘটেছে এটার উপর অন্য কারোর হাত নেই। ধর্ষন হতে হতে বেঁচে গেলেও এর প্রভাবটা খুব বাজে ভাবেই স্নেহার উপর পড়েছে।
স্নেহার একটা ভবিষ্যৎ আছে।ওই ঘটনার পর থেকে সে একদম চুপ হয়ে গেছে।একটা বাচ্চা মেয়ে সে খেলবে,কথা বলবে কিন্তু স্নেহা কারোর সাথেই কোনো কথা তো দূরে থাক কোনো রেসপন্স করছে না।
পাঁচ মাসের ভরা পেট নিয়ে ইখুমের কিছুটা কষ্ট হয় স্নেহাকে কোলে নিতে তবুও সে যতটা পারছে স্নেহাকে সময় দিচ্ছে।
নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে,তার পছন্দের কার্টুন দেখছে, তার সাথে ওয়ার্ড গেমস খেলার চেষ্টা করছে কিন্তু স্নেহা চুপচাপ।
সকাল বেলা খুব একটা খাবার না খাওয়ায় বেলা এগারোটার দিকে ইখুম এক গ্লাস দুধ নিয়ে সামিনার ঘরে যায়। স্নেহার দুধ খুব পছন্দের কিন্তু সামিনা সেই দুধ স্নেহাকে খেতে দিতে নারাজ।
তার কেন যেন মনে হয় ইখুম তার মেয়ের ক্ষতি করবে। সে স্নেহাকে নিয়ে যেতে চাইলে আজ ইখুম তাকে কিছু কথা শুনিয়েছে।
ব্যস এতেই যা হওয়ার হয়ে গেল।কারণ সামিনা তার শাশুড়ি মায়ের কাছে কি বলেছে আর সে তেড়ে এসেছে ইখুমের দিকে।
ভদ্র মহিলা বাড়ির সব থেকে বয়স্ক মানুষ হলেও তার
তার মুখের ভাষা অভব্য।
ইখুম দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে বাইরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল তখন স্নেহা এসে ইখুমের শাড়ির আঁচল টেনে ধরে দু হাত বাড়িয়ে দেয় কোলে উঠার জন্য।
ইখুমের সকল মন খারাপ এক নিমিষেই উড়িয়ে দিলো সে।
কষ্ট হলেও সে কোলে তুলে নিলো স্নেহাকে।
কিছু দূর যেতেই দেখা হলো শুভ্রের সাথে। স্নেহাকে কোলে নিতে চাইলে স্নেহা শক্ত করে ইখুমের গলা জড়িয়ে ধরলো।
শুভ্রকে দেখে সে ভয় পাচ্ছে।
শুধু শুভ্র নয় সে তাশদীদ সহ সবাইকে দেখেই ভয় পাচ্ছে।
কষ্ট হলেও ইখুম স্নেহাকে নিয়ে নিজের ঘরে ফিরে এলো।
সাগরিকার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে তাশদীদ বলল,
“আমাদের মনো বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলা উচিৎ।”
“কিন্তু!”
“স্পেশাল ভাবেই ট্রিট করবে তাকে। চিন্তা করিস না।”
“ওদের কী হবে?”
“যা হবার হবে। তোর কী হয়েছে?”
সাগরিকা একবার ভাবলো কথাটা বলবে, পুনরায় ভাবলো নিজের দিকে কথাটা নিয়ে কোনো লাভ নেই।
সে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে তখন তাশদীদ বলল,
“এদিকে আয়।”
“কেন?”
“আমার আজ অনেক ক্লান্তি গেলো। ক্লান্তি দূর করে দে।”
“আমি কি ক্লান্তি রিমুভার?”
“হ্যাঁ, আয় মাথা টিপে দিবি।”
“আপনার গলা ব্যথা করে না?”
“কেন গলা টিপে দিবি?”
তাশদীদের কথায় সাগরিকা নিভু নিভু গলায় বলল,
“আমি তা বলিনি।”
“দ্রুত আসবি কী?”
সাগরিকা তাশদীদের পাশে দাঁড়িয়ে তার মাথা টিপে দেওয়ার জন্য তার মাথায় হাত দিতেই তাশদীদ বলল,
“এখানে বোস।”
“কোথায়?”
তাশদীদ নিজের উরুর উপরে ইশারা করতেই সাগরিকা বলল,
“ছিঃ অশ্লীল।”
“তাশদীদ তার হাত ধরে তাকে বসিয়ে দিতে দিতে বলল,
” ইউ আর মাই রাইটফুল ওয়াইফ। আর এই কথাটা গত রাতে বিয়ে করার আগে মাথায় ছিল না?”
সাগরিকা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলল,
“আই উইশ, আমার একটা ডোরেমন থাকতো। আমি টাইম মেশিনে সব মুছে দিতাম।”
(৮৬)
তাশদীদ, সাগরিকার বিয়েটা যদি কেউ মেনে নিতে না পারে সে হচ্ছে মৌসুমি।সে রাগে ক্ষোভে গতকাল থেকে না খাওয়া। শুধু তাই নয় আজ সে চলে যাচ্ছে তার বাবার সাথে।
যাওয়ার আগে যখন তার নান্নান তার কাছে এলো তখন সে বাজে ব্যবহার করতে একবার ভাবছিল না।
“আফারে আমি তো চাই তুই আয় আমার ঘরে কিন্তু সাগরিকারে বিয়া করলে আমার কী দোষ?”
“হয়েছে থামেন।”
“রাগ করিস না আফা।”
“আপনার নাতীকে বিয়ে করার জন্য আমি মরে যাচ্ছি না।হাজারো ছেলের লাইন ধরে আছে আমাকে বিয়ে করার জন্য।”
“তা জানি।থাকবো না কেন?যেমন তোমার রূপ তেমন গুণ।”
“আমার বা পায়ের ছোটো আংগুলের সমান যোগ্যতা আপনার পুরো পরিবারের নেই। তাই তাশদীদ কে বিয়ে না করতে পেরে আমি মরে যাচ্ছি এমনটা ভাবা ভুল।”
“আমরা তা বলি নাই।”
মৌসুমি আরো দু কথা বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু গাড়িতে থেকে তার বাবা ডাক দিতেই দ্রুত পা বাড়ায় রাস্তার দিকে।
সেদিকে যেতেই সে ধপ করে মাটিতে বসে পড়েছে। তার হাই হিল আটকেছে ছাগলের দড়ির সাথে। মুখ তুলে চাইতেই দেখতে পেলো একজন বলিষ্ঠ সুপুরুষ তার থেকে হাত দুই দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সে নিজ হাতে সেই ছাগলের দড়ি খুলে চলে যাচ্ছিলো।
মৌসুমিকে একবার তুলার প্রয়োজন তো দূর তার দিকে একবার ফিরেও তাকায়নি।
মৌসুমি উঠে দাঁড়িয়ে তাকে বলল,
“আস্ত বেয়াদব একটা।মেয়ে মানুষ দেখলেই এমন করতে ইচ্ছে করে?”
লোকটা পিছন ফিরে চাইতেই মৌসুমি তার গালে ঠাস করে চড় মেরে দিলো।বিগত দুই দিনের রাগ ছেলেটার উপর দিতে পেরে নিজেকে হালকা লাগছিল কিন্তু কোথা থেকে সাগরিকা ছুটে এসে বলল,
“নেহাতই তুমি আমার থেকে বয়সে বড় না হলে তোমার এই চড় আমি তোমায় ফিরিয়ে দিতাম।তাছাড়াও তোমার কপাল ভালো সে সুমন ভাই অন্য ছেলের মতোন নয়। নইলে তোমার গালে ঘুরে এই ছেলে থাপ্পড় দিলে মান থাকতো তোমার?”
ছেলেটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, সাগরিকা মৌসুমিকে কথাগুলো বলে ছেলেটাকে বলল,
“ভাইয়া এই বেয়াদবের হয়ে আমি মাফ চাইছি।তুমি প্লিজ এসো না।ভেতরে এসো।”
ওরা দুজন বাড়ির পথে পা বাড়ালে মৌসুমি রাগে ফোসফাস করে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
ছেলেটা ডক্টর সুমন আহমেদ। মনো বিশেষজ্ঞ। এর আরো একটি পরিচয় আছে। সেটা হলো সাগরিকার হোম টিউটর ছিল।
সাগরিকা যখন একের পর এক ক্লাস টেস্টে ফেল করছিল কেমিস্ট্রি আর ম্যাথে। তখন এই ছেলেটা লেখাপড়া করছে৷
হাত খরচ চালানোর জন্য দুই একটা টিউশনি করে।
একই গ্রামের তাই সাগরিকাকে পড়ানোর দায়িত্ব তার উপরেই পড়ে।
তার জন্যই সাগরিকা ক্যালকুলাস নামক ভয়াবহ দানবকে কব্জা করতে পেরেছে ।
সাগরিকা মানে,
যে মানুষটা ক্যালকুলাস এবং জৈব যৌগের মতোন কঠিন বিষয় সহজে বুঝাতে পারে সে আর যাই হোক সহজ মনের মানুষ ছাড়া আর কিছুই না।
(৮৭)
তাশদীদের দাদী অনেক সময় যাবত সাগরিকার কানের কাছে প্যান প্যান করেই যাচ্ছে। তার যেহেতু বিয়ে হয়েছে তাই এখন তার উচিৎ নাক ফুটো করা, নাক ফুল দেওয়া।এতে স্বামীর সুস্থতা কামনা হয়।
সাগরিকা স্পষ্ট জানিয়েছে সে এমন কিছুই করবে না।এমন হাদিসে কোথাও লেখা নেই। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
অনেক ক্ষণ যাবত বলার পর যখন সে বলল,
“পোলাডা দুই দিন আগে অসুখ থেইক্কা উঠছে এহন আবার অসুখে পড়লে?”
পুরো দিন সাগরিকাকে বিভিন্ন কথা বলার পর সাগরিকা এক সময় তার দাদীর মন রাখার জন্য হলেও রাজী হয়ে যায়। কিন্তু বিপত্তি বাজে যখন তার নাকের কাছে সুই নেওয়া হয়।
সে চিৎকার করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলছে। উঠানের মাঝে বসে দুজন তার দুই হাত, দুজন পা ধরেছে। তার মা মেয়ের কান্না শুনে আগেই বাড়ির থেকে দূরে বসে আছে।তাজবীদ,শুভ্র,তুলি সবাই এখানে কিন্তু সাগরিকা কারোর কথা কানে তুলছে না।
ঠিক সেই সময় তাশদীদ এসে বলল,
“দিন ওকে আমার কাছে দিন।”
সে সাগরিকার পিছনে বসে সাগরিকার মাথাটা তার বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। এক হাতে তার মাথা অন্য হাতে হাত ধরে রইল।সাগরিকা তার ডান হাতে তাশদীদের পিঠের দিকটায় খামছে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল।
তাশদীদ বলল,
“এসবের কোনো দরকার নেই।”
কিন্তু সাগরিকা নাছোড়বান্দা। যখন সুই তার নাকের কাছাকাছি আনা হয়েছে সে সর্ব শক্তি দিয়ে খামছে ধরলো তাশদীদের কোমরের দিকটা।যেখানে ডেবে যাচ্ছে তার হাতের নখ গুলো।
চলবে,,,
#এক_কাপ_চা
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ৩০
(৮৮)
“এই বাচ্চা মেয়ে গুলোকে বিয়ে করতে কে বলেছে? এদের বিয়ে করা মানেই আকাশ সমান ঝামেলা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো।না এরা বুঝে কোনো কিছু না পারে সমস্যা মেটাতে। খালি পারে নাত্তাইলি করতে।”
তাজবীদের কথায় মুনির বলল,
“ছোত্ত বাঈ মাতা তান্ডা কয়ো। কি হয়েছে এবার বলো।”
“আন্টি বিয়ে করবো আমি বুঝছো?একদম আন্টির বয়সী।যে মেয়ে সব বুঝবে।”
“কী হয়েছে বলবি তো?”
“ভাইয়া কই?তাকে নিচে শালিসে যেতে বলো।তার বউ সেখানে নাত্তাইলি শুরু করেছে।”
“নাত্তাইলি মানে কী আগে এইটা তুই বল।”
“বেশি বুঝা যাকে বলে। নিচের শালিসে সে চেয়ারম্যান, মেম্বারকে তাদের বিচার শেখাচ্ছে। এত বেশি বুঝে মেয়েটা। মনে হয় মাথায় তুলে আছাড় মারি।”
তাশদীদ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তোয়ালে বিছানার পাশে রেখে বলল,
“কী হয়েছে?”
তাজবীদের মুখ থেকে অর্ধেক কথা শুনেই সে দৌড়ে নিচে নামলো।
গ্রামের চেয়ারম্যান তাশদীদের বাবার চাচাতো ভাই। গ্রামে মোটামুটি সুপরিচিত হওয়ায় তাদের বাড়িতেই সকল বিচার হয়। নিচে বিচার বসেছে একটি মেয়েকে উত্যক্ত করেছে গ্রামের কিছু ছেলে।তার প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এসিড ছুড়ে মারবে বলে হুমকি দিয়েছে।
মেয়েটার বাবা গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের একজন।পরের জমিতে চাষ করে যা পায় তাই দিয়েই কোনো মতে তার সংসার চলছে।
মেয়েটাও একটা কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিয়ে লেখাপড়া চালাচ্ছে কোনো ভাবে।
কিন্তু গ্রামের উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলের প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে ক্ষমতা বলে কোচিং এর লোক দের বলেছে মেয়ে যেন ওখানে ক্লাস না নিতে পারে।
বাধ্য হয়েই মেয়েটার লেখাপড়া চালানোর জন্য টিউশনি শুরু করেছিল কিন্তু সে বাড়িতে গিয়েও মেয়ের নামে মিথ্যা বলেছে ছেলেটি।বাধ্য হয়েই গরীব বাবা এবার মেয়ের বিয়ে দিতে চাইলেন। এতে ক্ষেপে উঠলো ছেলেটা।সন্ধ্যেবেলা যখন মেয়েটা বাড়ির পিছনের পুকুর পাড়ে হাস গুলোকে আনতে গিয়েছে তখন ছেলেটা তার সাথে শালীনতা হানীর চেষ্টা করে। মেয়েটা চিৎকার করতেই ছেলেটা সব দোষ মেয়ের দেয় এবং নিজের ছেলেকে বাঁচাতে তার বাবা গ্রামে বিচার ডেকেছে।
অথচ মেয়েটার হাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সে এবং তার বাবা থানায় একটা সাধারণ জিডি করেছে তিন মাসেই আগেই।কিন্তু তাদের এই কথা কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না।অথচ সবাই ছেলের দোষ না দেখে সবাইকে নিয়ে মেয়ে এবং তার পরিবারকে গ্রাম থেকে বের করে দিতে চাচ্ছে।
সাগরিকা তার দাদীর ঘরের একপাশে দাঁড়িয়ে সবটা শুনছিল কিন্তু এই বিচার সে মেনে নিতে না পেরে প্রতিবাদ করলো।যেহেতু বড়রা কথা বলবে তাই তাশদীদ ওরা কেউ ছিল না। সাগরিকার কন্ঠস্বর শুনে তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে তাকে বলল,
“কি হয়েছে? বাড়ির ভিতরে যাও।”
“আপনি আমাকে বাড়ির ভিতরে কেন যেতে বলছেন?আজ আপনার সামনে যদি আমাকে কেউ ওমন প্রস্তাব দিতো মেনে নিতেন? গত পরশুর কথা ভুলে গেলেন?
তখন তো আপনি কাউকে পাত্তা দেননি?যা হয় হোক আপনারা বিচার করেছেন। কিন্তু আজ মেয়ের কোনো কিছুই আপনারা দেখতে পাচ্ছেন না?
কেন?এই মেয়ের বাবার টাকা পয়সা নেই বলে?এরা দরিদ্র বলে?
এরা থানায় মাল-পানি দিতে পারে না বলে এদের কোনো বিচার হবে না?কেন হবে না?আমাকে জবাব দিন।
আপনাদের কাছে গরু আর নারীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই?
আপনারা চাইছেন দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে?
না কী চাইছেন আমাদের কোনো সম্মান বোধ না থাকুক?
পুরুষ কে হয় নারীকে আঘাত করার?নারীকে হুকুম দেওয়ার কোনো অধিকার পুরুষের নেই।পুরুষকে নারী কখনো হুকুম দেয় না।কিন্তু নারীর সব কাজেই পুরুষের সমস্যা।
দেশে হরতাল,নারীর দোষ। যাই হোক নারীর দোষ। নারীর পোশাক খারাপ। কেন? নারীই কেন?”
কথাগুলো বলে সাগরিকা অস্থির হয়ে উঠেছে। তার মাথায় এক হাত রাখলো তাশদীদ। সামনে বসে থাকা চেয়ারম্যান এর দিকে তাকিয়ে সাগরিকা বলল,
“আমি এই বাড়ির মেয়ে। এখন এই বাড়ির বৌ।আমার দিকেও যদি সে এমন দৃষ্টিতে তাকায় তবে কী মেনে নিবেন?না কী তার চোখ তুলে ফেলবেন?
কাউকে নয়, আমার ভাইয়েরাই তাই করবে এবং করে। এদের সব ধরনের ব্যাক সাপোর্ট রয়েছে কিন্তু এই মেয়ের নাই বলে কী এই মেয়েকে হেলার চোখে দেখবেন?এর মান সম্মান কোনো কিছুই নয় কী?
যদি নারীকে সম্মান করতেই হয় তবে সব নারীকে এক চোখে দেখুন।তার বাবা বা স্বামীর পরিচয়ে নয়, সমাজে তার স্থানের পরিচয়ে নয়, তাকে সম্মান করুন একজন নারী হিসেবে।তার সম্মানের জন্য তাকে যেন বিচারে না আসতে হয়।”
বিচারের পর মেয়েটা সাগরিকার দুই হাত ধরে বলল,
“আজ আপনার জন্য আমার বাপের সম্মান রক্ষা হইলো।আমি যদি পারি কোনো দিন আপনার এই ঋণ শোধ করতে তবে অবশ্যই করবো।আমার সব কিছু দিয়েই আপনার উপকার করবো।”
তাশদীদ মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখে তাকিয়ে রইল সাগরিকার দিকে।
হয়তো সে পেরেছে সাগরিকাকে কিছুটা সাহায্য করতে। স্বামী হিসেবে তার যা করা দায়িত্ব সে না হয় সেটুক পালন করবে।
(৮৯)
তাজবীদ এবং সাগরিকা পাশাপাশি বসে আছে। শুভ্র আগামীকাল চলে যাচ্ছে। তার ছুটি শেষের পথে। এ নিয়ে সবার মন খারাপ। চায়ের কাপ তুলে নিয়ে তাজবীদ সাগরিকা বলল,
“ভালোবাসা বুঝিস?”
“নারীর জন্য পুরুষের প্রেম নারীই আগে অনুভব করে। সামনে থাকা মানুষটা ভালোবাসে কী না তার চোখের চাহনী বুঝিয়ে দেয়।”
“ভাইয়ের টা বুঝিস নি কেন?”
“কে বলেছে বুঝিনি?”
“অনুভব করিস?”
“সব সময়।”
“তবে এমন ভাবে থাকতিস যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানিস না।”
“আমি তার ভালোবাসা অনুভব করি, না বুঝার মতোন থাকি এটাই সে বেশি ভালোবাসে। যদি তার ভালোবাসা বুঝে ফেলার কথা তাকে জানাই আর যদি সে ভালোবাসার ধরন বদলে দেয়?
মানুষটা আমাকে বকবে, শাসন করবে আবার নিজেই সোহাগ করবে এটাই কী অনেক না?তবে হ্যাঁ, তার প্রতি আমার ভয়টা কিন্তু একদম সত্যি। এক বিন্দুও মিথ্যে না।তাকে রাগে দেখলেই আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে।”
“আর শুভ্র?”
“আমি তার অনুভূতিও বুঝি।কিন্তু কী বলো তো! সে তো আমায় পুরো দিন ব্যস্ত রাখে তাই অন্য কাউকে নিয়ে ভাবার সময় নেই। তার ভালোবাসা আমাকে জ্বালায়, পুড়ায় যা অন্য কারোরটা করে না।”
(৯০)
তাশদীদের দিকে চাল ভাজা এগিয়ে দিয়ে সাগরিকা ধপ করে তার কোলের কাছটায় বসে পড়েছে। সে হন্যি হয়ে তাশদীদ কে অনুনয় করে বলল,
“আমি কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়বো না।দোহাই লাগি। আমি আর লেখাপড়া করবো না।”
তাশদীদ ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
“কেন?”
“লেখাপড়া করে কী লাভ? সেই রো আপনার আর আমার বাচ্চাকাচ্চা কেই সামলাতে হবে, রান্নাবান্না করতে হবে।”
সাগরিকা এমন ভাবে কথাটা বলেছে যেন সে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জবাবের আশায় তাশদীদের দিকে তাকিয়ে রইল।
ফোন হাত থেকে বিছানার উপর রেখে তাশদীদ বলল,
“বাচ্চাকে পড়াতে হলেও লেখাপড়া করা দরকার।”
“টিউটর রেখে দিবো।”
“নতুন নতুন রান্না শিখতে হলেও পড়া দরকার।”
“ইংলিশ সাবটাইটেল পড়তে পারি।”
“তবুও পড়তে হবে। অন্তত গ্রাজুয়েশন করা লাগবে।”
“তাহলে এক হালি বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে এক্সাম হলে যেতে হবে।”
“এত যে বাচ্চা বাচ্চা করছিস তোর মতলব তো ভালো লাগছে না।একটু দূরে যা।”
সাগরিকা ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইল এরপর ওড়না কোমরে গুজে তাশদীদের দিকে ঝুকে তার থুতনি ধরে বলল,
“ইউ আর মাই রাইটফুল ওয়াইফ থুক্কু হাজবেন্ড। ভুলে গেছেন?”
তাশদীদ জবাব দেওয়ার আগেই নিচ থেকে তার দাদীর চিৎকার শুনতে পেল,
সে চিৎকার করে বলছে
“স্নেহারে তোর বাপ বেঁচে আছে রে। এই দেখ তোর বাপ কল দিছে আমার মোবাইলে।”
চলবে…..