এক কাপ চা পর্ব ২৫+২৬

0
665

#এক_কাপ_চা
#পর্ব-২৫+২৬
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

(৭৩)
সামিনা তার বড় ভাইয়ের সাথে হাসপাতালে এসেছে। ডক্টর সব কিছু জানার পর কিছু টেস্ট করতে দিয়েছেন।ভাইয়ের সাথে সামিনা বসে আছে ওয়েটিং রুমে।স্নেহা তার কোলের মাঝে ঘুমিয়ে আছে। স্নেহাকে তার বড় মামাতো ভাই নিতে চাইলে ইখুমের হঠাৎ মনে পড়লো স্নেহা তাকে বলেছিল সে কারোর কাছেই যাবে না। তাই সে না করলো কিন্তু মিনিট দুই পর প্যাথলজি ল্যাব থেকে ডাক পড়তেই স্নেহাকে তার মামাতো ভাইয়ের কাছে রেখে যেতেই হলো।কারণ সামিনার বেশ কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা দিয়েছে। রক্ত নেওয়াটা স্নেহা সহ্য করতে পারে না।

সামিনা চলে যেতেই স্নেহা কারোর শক্ত স্পর্শে জেগে উঠেছে।
অপুষ্পিত দেহে পুরুষালী স্পর্শে কেঁদে উঠলো স্নেহা।
নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে হাতের বাধন আরো শক্ত হলো।
স্নেহা শুধু বলল,

“মায়ের কাছে যাবো।মা কই?”

“আছে আছে। চলো একটু বর বৌ খেলি।”

“না আমি খেলবো না।”

“কেন?”

“আমার ভালো লাগে না।তুমি ভালো না।”

“তোমার ভাইয়ারা বুঝি তোমার সাথে বর বৌ খেলে না?”

“না, আমার ভাইয়ারা আমাকে খুব আদর করে। ওরা ব্যথা দেয় না।”

“আহারে দেখছো?ওরা তোমার সাথে খেলেও না আর তুমি আমাকে পছন্দ করো না।আমি তোমার সাথে বর বৌ খেলতে চাচ্ছি, সুন্দর সুন্দর পুতুল কিনে দিবো আর তুমি নিবে না?”

“লাগবে না। তুমি আমাকে ব্যথা দাও খালি আর আমার ভাইয়া, চাচ্চুরা আমাকে এমনিতেই পুতুল এনে দেয়। আমার লাগবে না তোমার পুতুল। আমি মায়ের কাছে যাবো।”

“আমিও ব্যথা দেবো না সোনা।একটু খেলবো।”

“আমি মায়ের কাছে যাবো। আমি মা কে সব বলে দিবো।”

“কান্না করে না।মানুষ জানলে কিন্তু তোমাকে পঁচা বলবে। তোমার মা কিন্তু আর তোমার সাথে কথা বলবে না।তোমাকে বের করে দিবে।”

“দিবে না।আমার বড় মা কে আমি সব বলে দিবো।তাশদীদ ভাইয়া তোমার নাক ফাটিয়ে দিবে। আর সাগরিকা আপু তোমাকে মার দেবে।”

“তুমি যদি এসব বলো তো তোমার তাশদীদ ভাইয়া, সাগরিকা আপু কেউ তোমাকে আর আদর করবে না।”

“আমার রাঙ্গা মা আছে।ছোটো চাচ্চু আমাকে আদর করবে। বড় বাবা আমাকে আদর করবে। আমি রাঙ্গামা কে সব বলে দিবো।”

“তাহলে তোমার মা কে আর তোমাদের বাড়িতে যেতে দিবো না।এইখানে আটকে রেখে দিবো।তোমার বাবাকে আর দেখেছো?ওই রকম হারিয়ে যাবে সে। ভালো হবে না?”

“আমি মায়ের কাছে যাবো।”

স্নেহার মামাতো ভাই তাকে নিয়ে ওয়েটিং সিটে বসে ছিল।এতক্ষণ এদিকটা ফাকা থাকলেও স্নেহার কান্নার শব্দে রিসিপশন ডেস্ক থেকে একজন এগিয়ে এলো।সে জিজ্ঞেস করতেই বলল,

“ফুপু একটু ব্লাড দিতে গেছেন তাই কান্না করছে।তেমন কিছু না।”

কিন্তু লোকটার যেন বিশ্বাস হলো না তাই সে স্নেহাকে জিজ্ঞেস করলো,

“তোমার কী লাগে? তুমি একে চিনো?”

স্নেহা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“আমার ভাইয়া লাগে।”

লোকটা চলে গেলেও যেন তার দৃষ্টি নিবিষ্ট রইল ওদের উপর।
স্নেহার মামাতো ভাইয়ের বেশ রাগ হলো।এবার বাড়ি আসার পর সে স্নেহাকে একা পায়নি। সব সময় মায়ের আঁচল ধরেই থাকে। যা একটু সুযোগ পেয়েছে সব’টা এই রিসিপশনের লোকটার জন্য মাঠে মারা গেল।
রাগে কিড়মিড় করে ছেলেটা আরো জোড়ে চাপ দিয়ে ধরলো স্নেহার নিতম্বে।

(৭৪)
তাশদীদের জন্য খাবার নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো সাগরিকা।তাশদীদ নিজে নিজেই ব্যস্ত তার কপালের ব্যান্ডেজটা পাল্টাতে। কিন্তু ডান হাতে ব্যথা পাওয়ার কারণে সে করতে পারছে না।একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সামনে থাকা আয়নার দিকে তাকালো তাশদীদ। আয়নার সাগরিকার অবয়ব স্পষ্ট। চোখের ইশারায় বলল এইড বক্সটা নিয়ে বারান্দায় আসতে। তাদের বাড়ির এই বারান্দাটা লম্বালম্বিভাবে এগিয়েছে। যেমনটা দেখা যায় পুরোনো কোনো রাজবাড়ী কিংবা একচালা প্রাইমারি স্কুলে।
সাগরিকা লম্বার তাশদীদের থেকে অনেকটা খাটো হলেও এখন সে লম্বা।তাশদীদ বসেছে একটা টুলে। কিন্তু এবার সাগরিকার জন্য ঝামেলা হলো।সে দাঁড়িয়ে যে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিবে, কাজটা খুব কষ্টের হচ্ছে। সাগরিকা উবু হয়েও কাজটা করতে পারছে না।
কিছুটা দূরে গিয়ে নিজের গায়ের চাদর রেখে সামনে এগিয়ে এলো সাগরিকা।একটু ঝুকে হাত দিলো তাশদীদের কপালে।

শুভ্র সকাল সকাল একটা আপেল হাতে এদিকটায় আসছে। আপেলে কামড় বসাতেই নজর গেলো তাশদীদ এবং সাগরিকার দিকে। তাশদীদ নিজেও এক নজর শুভ্রকে দেখেছে। তাদের মধ্যকার স্নায়ু যুদ্ধ এবং যুদ্ধের পর সাগরিকা নামক স্বাধীনতা সবটাই দুজনের সামনে।শুভ্র যত দ্রুত এগিয়ে আসছিল তার আগেই তাশদীদ একটা কাজ করে বসলো।
বাম হাতে সাগরিকার কোমড় জড়িয়ে তাকে নিজের উরুর উপর বসিয়ে দিয়েছে। ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটলো যে সাগরিকা নিজেও কিছুটা বোকা বনে গেলো।
তাশদীদ স্বাভাবিক ভাবে বলল,

“এবার তোর হাইটের সাথে ঠিক আছে। দ্রুত কর,ক্ষুধা পেয়েছে।”

সাগরিকা চুপচাপ কাজ চালিয়ে গেলো।কোনো কথা বলার তার ইচ্ছে নেই।আজকের পর এমনকি কিছুক্ষণ পর থেকেই মৌসুমি সবটা করবে। শুধু একটু সময়ের জন্য তর্ক বির্তক করার মন টানলো না সাগরিকার। দ্রুত ব্যান্ডেজ পালটে উঠে দাঁড়ালো সে। মৌসুমি ততক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। বারান্দায় রোদ আসায় মুনির, তাজবীদ ওরা সবাই জমেছে সকালের নাস্তা করার জন্য। তাশদীদের পাশে মৌসুমি বসার জন্য দাঁড়াতেই সাগরিকা উঠে দাঁড়ালো।সে নিচের দিকে চলে যাচ্ছিলো তখন তাজবীদ বলল,

“কই যাচ্ছিস? খাবি না?”

“বসার জায়গা নেই, তোমার কোলে বসবো?আসি?”

সাগরিকার এমন কথায় তাজবীদ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

“রাগ করেছিস কেন?কী হয়েছে?”

সাগরিকা কোনো জবাব না দিয়ে নিচে নেমে গেলো।সোজাসুজি গিয়ে নেমেছে পুকুরে। ঠান্ডা পানিতে পর পর সাত টা ডুব দিয়ে বসে রইল শান বাধানো পুকুর ঘাটে।

সাগরিকা চলে যাওয়ার পর তাজবীদ বলল,

“কেউ ওকে কিছু বলেছে?ওর এত রাগ উঠেছে কেন?”

তাজবীদের কোথায় শুভ্র বলল,

“মেয়েরা সব সহ্য করতে পারে কিন্তু নারী দেহে অযাচিত কারোর স্পর্শ নয়। জোড় করে আর যাই হোক নারী মন স্পর্শ করা যায় না।মন স্পর্শ করতে হলে তাদের স্নেহের সমেত আগলে রাখতে হয়। নারী যখন স্নেহ বুঝে, প্রেমিক পুরুষের ভালোবাসার জন্য তখন সে নিজেই এগিয়ে আসে। অথচ যে পুরুষ কোনো দিন প্রেমিক ছিলোই না তার স্পর্শ নারী মনে শুধু ঘৃণার জন্ম দেয়।”

(৭৫)

সাগরিকা কোনো কালেই তার দাদীর কাছে প্রিয় ছিল না।কেন ছিল না সে জানে না।শুধু জানে তার দাদী তাকে পছন্দ করে না।পুকুর পাড় থেকে ফিরে এসেই দাদীর সামনাসামনি হলো সে। তার দাদী তাকে কিছুটা বিরক্তির সাথেই অনেক কথা শুনালো।সাগরিকাকে পছন্দ না করার একটি অন্যতম কারণ হলো সাগরিকা মেয়ে। সে খুব করে চেয়েছিল তার সেঝ ছেলের একটা ছেলে হবে কিন্তু সাগরিকা জন্মের পর ডক্টর জানিয়েছিল সাগরিকার মা আর কোনো দিন মা হতে পারবে না।এজন্য তার দাদী তাকে দেখতে পারে না।একটা মেয়েকে ঘিরে কী করে জীবন চলতে পারে। বিরক্তি এসে গেছে তার সাগরিকার উপর। যদিও তাকে মেনে নেওয়া যায় কিন্তু মেয়ে হয়েছে উড়নচণ্ডী। নিজের ইচ্ছে মতোন সব করে। এবাড়ির ছেলেদের নিয়ে তার যত চিন্তা।সে চেয়েছে সাগরিকাকে যত দ্রুত বিয়ে দেওয়া যায়। তাই পাত্র ও দেখেছে কিন্তু মেয়ে কোনো কাজ পারে না,ছেলের বাড়ি সব প্রকার ফসল ফলে।পুরো বছর বত্রিশ জন মানুষের ভাত তিন বেলা রাধতে হবে। তাছাড়া আরো কত কাজ।শহরে থেকে এই মেয়ে রুপচর্চা করতে জানে শুধু।

এমন বনেদি পরিবার সে হাত ছাড়া করবে না। সে ওতটা অবুঝ না। সাগরিকাকে যে তাশদীদ পছন্দ করে এটা সে বুঝে। কিন্তু সাগরিকার থেকে মৌসুমি তাশদীদের জন্য ভালো। ওদের ক্ষমতা আছে, তাশদীদকে সাহায্য করবে বিপদে পড়লে তাছাড়া মৌসুমিকে সে কথা দিয়েছে। আজ কালের মধ্যেই ওদের চিনি পানিটা করিয়ে দিবে। এরপর ঘরে বৌ এলে তাশদীদের আর অন্য দিকে মন যাবে না।তখন এই সাগরিকার এক ব্যবস্থা হবে।

“যা চুলোয় পানি দেওয়া আছে, সবাইরে চা দিবি।”

সাগরিকা কিছু না বলে চলে এলো।কাপড় বদলে চা ঢালতে গেলেই বাধলো বিপত্তি।পুরো এক পাতিল চা পড়ে তার হাতে ফোস্কা পড়ে গেল।মা কোথাও নেই, তার দাদী এসে সবটা দেখেও দেখলো না,
পুনরায় চা বসাতে বলল সে।আজ সাগরিকার ইচ্ছে নেই জেদ করার। তাই যা বলল তাই করলো। কিন্তু চা নিয়ে যখন উপরে গেল তখন হাত টা ঢেকে ফেলেছে সে।

মুচকি হাসি হেসে তাশদীদ এবং মৌসুমিকে চা দিয়ে বলল,

“চায়ে আজ চিনি কিছুটা বেশি দিয়েছি। কারণ তোমাদের বিবাহিত জীবন মিষ্টিময় হোক।”

“কাদের বিয়ে?”

“আপনার এবং মৌসুমি আপুর।”

“মানে?”

“আগামীকাল চিনি পানি আপনাদের।”

তাশদীদ এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে সাগরিকার হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে এলো।তাকে গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভার কে বলল,

“কাজী অফিসে চলেন।”

চলবে,,

#এক_কাপ_চা
#পর্ব-২৬
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

(৭৬)

স্নেহার ডান পা অনেকটা ফুলেছে। সাগরিকার নাক দিয়ে বেশ খানিকটা রক্ত ঝরেছে। দুজনে পাশাপাশি একটা খাটে শুয়ে আছে।সাগরিকার মাথার কাছে ইখুম বসে আছে। মেয়েটার অসম্ভব জ্বর এসেছে। ভয় পেয়েই যে জ্বর এসেছে এটা আর বুঝতে কারোর বাকী নেই। পাশের ঘরে সামিনাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত দুর্বলতার কারণে সে উপায় জ্ঞানহীন।

রাশেদ ইখুমের পাশে এসে দাঁড়িয়ে তার কাধে হাত রাখতেই ইখুম দুহাতে শক্ত করে রাশেদের কোমর জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল।
কান্নার দমকে তার হেঁচকি উঠেছে।
রাশেদ ইখুমের মাথায় হাত রেখে বলল,

” শান্ত হও, ওরা ঠিক আছে। তোমাদের কাঁদতে দেখলে আরো ভয় পেয়ে যাবে।”

“আমি চাই না আমার পেটের সন্তান মেয়ে হোক।আর যদি মেয়ে হয় তবে যেন মরে যায়। এই জঘন্য পৃথিবীতে আমি তাকে আনতে চাই না।”

ইখুমের এমন কথায় রাশেদ তাকে কিছুটা ধমক দিয়ে বলল,

“কী বলছো এসব?এসব কথা বলতে নেই।”

“স্নেহার পাঁচ বছর হয়নি।ওর শরীরে কামনার কিছুই নেই। ও একটা ছোট্ট পুতুলের মতোন।কেউ কীভাবে ওর দেহকে কামনার বস্তু মনে করতে পারে?ওকে এভাবে আঁচড়ে কামড়ে দিতে পারে?”

“নরপশুরাই পারে। আমরা তো আছি। আমরা থাকতে কেউ কিছুই করতে পারবে না।”

“কই আছি?স্নেহা কতটা সহ্য করেছে?”

আমরা তো এখনো আছি। পেরেছি মেয়েটার কষ্ট লাগব করতে?এইযে ছোটো বেলার ট্রমাটা!এই ট্রমা থেকে বের করে আনতে পারবো তো?”

“পারবো।আমরা সবাই মিলে মেয়েটাকে স্বাভাবিক করে ফেলবো তুমি দেখো।এবার চলো ঘুমাতে যাবে।”

“স্নেহাকে আমি নিয়ে যাই?আমাদের সাথে আজ রাতে থাকুক।”

“আচ্ছা বেশ তবে চলো।”

সাগরিকার গায়ে চাদর টেনে দিয়ে ইখুম উঠে দাঁড়ালো।রাশেদ খুব সাবধানে স্নেহাকে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।

তাশদীদ রাশেদকে দেখে এগিয়ে এসে বলল,

“সাগরিকা?”

“ঘুমে।”

“একা? ”

“হুম,তুই বরং যা। মেঝ ভাবীর কাছে ওর মা।তুই বরঙ ওর কাছে থাক।”

তাশদীদ ঘরে ফিরে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। চোখ দুটো ভীষণ জ্বালা ধরেছে।
সাগরিকার পাশে বসে তার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

“তোর এত সাহস কোথায় থেকে এলোরে?তুই কী নিজের জন্য একটুও ভয় হলো না?”

সাগরিকা পাশ ফিরে তাশদীদের হাতে হাত রেখে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,

“আপনি থাকতে আমার ভয় কীসের?আপনি আমার রোগ-শোক, আনন্দ-বিচ্ছেদ সব কিছুর স্থান।তবে আমি কেন ভয় পাবো?”

তাশদীদ কিছুই বললো না, বিনিময়ে ফুটে উঠেছে তার ঠোঁটের কোণে হাসি।সাগরিকার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

“আমি সারা জীবন আছি, থাকবো।তোকে আদর করার জন্য, স্নেহ করার জন্য কিংবা তোর অন্যায় আবদার গুলোকে প্রশয় দেওয়ার জন্য। আমি আমার পুরোটা সময় তোকেই নিয়ে ভাবতে চাই। তোর রোগ-শোক নয় তোর সব কিছুই আমাকে ঘিরেই হোক।”

(৭৭)
সাগরিকা তাশদীদের গাড়ি যখন শহরের কাছাকাছি দিকটায় তখন স্নেহা সাগরিকার ফোনে কল দিয়ে কান্নাকাটি করছিল।সাগরিকা কিছু বলার আগেই স্নেহা বলেছিল ওর মা না কী মরে গেছে।
আর ও লুকিয়ে আছে। ও বের হলেই ওর মামাতো ভাই ওর সাথে বর বৌ খেলবে। ওকে খুব ব্যথা দিচ্ছে আজ।
পুরোটা শুনতে পারেনি তাশদীদ। দ্রুত গাড়ি ঘোরাতে বলে।কিন্তু ওরা পুরো উল্টো পথে ছিল।এখান থেকে যেতে হলেও ঘন্টা খানেক সময় লাগবে। তাশদীদ বা সাগরিকা কারোর বুঝতে বাকী নেই যে স্নেহা কী বুঝাতে চেয়েছে।
এমনটা ভেবে সাগরিকা ভিতরে ভিতরে কেঁপে উঠছে। রাগে তার পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো।
সাগরিকার হাত থেকে ফোন নিয়ে তাশদীদ স্নেহাকে জিগ্যেস করলো,

“তুমি ফোন পেয়েছো কোথায়?”

“মায়ের ফোন।”

“মেঝ কাকী কোথায়?”

“মা জানি না।ভাইয়া বলছে মা মরে গেছে। আর আমি বর বৌ খেলার কথা তোমাদের বললে তোমরা আমাকে আদর করবে না।বাড়িতে নিবে না।ভাইয়া আমি বাড়ি যাবো।তুমি কী আমায় পঁচা বলবে?আমায় নিবে না?”

“সোনা কাঁদে না। তুমি না আমাদের ব্রেভ গার্ল?আমরা আসছি।তুমি বলো তুমি কোথায়?”

“আমি রান্না ঘরে লুকিয়ে আছি।পাতার বস্তার পিছনে।”

“সোনা তুমি ওখানেই থাকবে। ভয় পাবে না।আমি আসছি দ্রুত। ভয় নেই।কাঁদবে না।কেউ ডাকলে বের হবে না।বুঝেছো?”

“তুমি আমায় বকবে না তো?”

“কেন বকবো?”

“এই যে আমি তোমায় বলে দিলাম বর বৌ এর কথা।”

“না আপু।তুমি তো ভালো মেয়ে, লক্ষী মেয়ে তাই তোমাকে বকবো কেন?”

“আসবে তো?”

“এইতো এসে পড়েছি।”

সাগরিকা তাশদীদের হাত থেকে ফোন নিতেই ফোন কেটে গেলো।কেটে যাওয়ার আগে শুধু তারা স্নেহার চিৎকার শুনেছিল।
যাওয়ার পথেই তাশদীদ শুভ্র,রাশেদ, মুনিরকে কল দিয়ে সবটা বলে। ওদের কারোর বুঝতে বাকী থাকে না যে স্নেহা কতটা বিপদে রয়েছে।
রাশেদ সব থেকে ভয় তখন বেশি পায় যখন তাশদীদের সাথে কথা বলার পর স্নেহা তার নাম্বারে কল দিয়ে বলে,

“তার মামাতো ভাইয়ের বন্ধুরাও এসেছে। তাকে সবাই মিলে খুঁজছে।”

সাগরিকা, তাশদীদ যখন পৌঁছেছে তখন জোহরের আজান দিচ্ছে। পুরো বাড়িতে কেউ নেই। এই বিষয়টা তাশদীদের খটকা লাগলো।সাগরিকার হাত ধরার আগেই সে এক ছুটে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেছে। ভিতর বাড়ির উঠোনের সামনে দাঁড়িয়ে সে চিৎকার করে উঠলো।

মানুষ রুপী কয়েকজন জানোয়ার তখন স্নেহাকে নিয়ে নগ্ন করার উল্লাসে ব্যস্ত। স্নেহার গায়ের জামা খুলে ফেলেছে। স্নেহা কান্নায় ভেঙে পড়েছে।তার হাতে, পায়ে কয়েক জায়গায় জানোয়ারগুলোর নখের দাগ বসেছে।
সাগরিকা এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে পাশে থাকা একটা বাঁশ উঠিয়ে নিয়ে সজোরে আঘাত করে একজনের পিঠে৷ বাঁশটা ভেঙ্গে যায়। সাগরিকাকে দেখে চিৎকার করে স্নেহা।স্নেহা
তার কাছে আসতে চাইলে তার মামাতো ভাই বলল,

“ভুল বুঝবেন না।ফুপু বাসায় নেই।মা ওরাও নেই।আমরা সবাই পুকুরে গোসল করতে যাবো।স্নেহাকে নিতে চাইনি।ও যেতে চাচ্ছে, কান্না করছে তাই ওর জামা খুলে দিচ্ছিলাম।”

সাগরিকা সে দিকে পাত্তা না দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে করতে বলল,

“কুত্তার বাচ্চা। তোর সাহস কী করে হয়। শালা তোদের আজ দেখ কী করি।”

তাশদীদ দৌড়ে এসে দাঁড়িয়ে রইল।সে কাকে ধরবে?স্নেহার পা দেখে তার মনে হচ্ছে ভেঙ্গেছে এদিকে সাগরিকা সবগুলো মারছে।
নিজের ব্যথা ভুলে তাশদীদ এক হাতে স্নেহাকে কোলে তুলে নিয়ে অন্য হাতে সাগরিকাকে সামলানোর চেষ্টা করলো।ততক্ষণে রাশেদ ওরা পৌঁছেছে।
শুভ্র সাথে পুলিশ নিয়ে এসেছে। তিনজনকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছিলো তখন সে কিছুটা ছুটে এসে একটা ইটের টুকরো নিয়ে সাগরিকার দিকে ঢিল ছুড়ে দিলে তা সরাসরি সাগরিকার নাক বরাবর এসে লাগে। সাথে সাথেই রক্ত ঝড়তে থাকে।

তাশদীদ স্নেহাকে শুভ্রর কোলে দিয়ে মুনিরকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পায়,

সামিনা পড়ে আছে ফ্লোরে। তার কোনো হুশ জ্ঞান নেই।পাশেই পড়ে আছে তার বড় ভাই ভাবী।
পুলিশ তাদের দেখে ধারণা করে বলল,

খুব সম্ভবত তাদের চেতনানাশক কিছু একটা খাওয়ানো হয়েছে। কারণ তাদের সামনে রয়েছে আধ খাওয়া শরবতের তিনটে গ্লাস।

(৭৮)
এক ঘুমে রাত পার করে সাগরিকা কেবল উঠে বসেছে। তার পাশেই তাশদীদ ঘুমিয়ে আছে। তাশদীদের কপালে হাত দিয়ে শুয়ে থাকার ধরণটা সাগরিকার খুব ভালো লাগে।
আলতো স্পর্শে সাগরিকা হাত বুলিয়ে দেয় তাশদীদের ভ্রু-যুগলে।
কিছুটা উবু হয়ে তার বুকের দিকটায় হাত রেখে বলল,

“সারা রাত এখানে ঘুমালেন যে?লোকে দেখলে কী বলবে?”

বিছানা ছেড়ে উঠে সাগরিকা বাহিরে আসতেই খেয়াল করলো তার দিকে সবাই কেমন একটা করে তাকাচ্ছে।
শুধু তুলি এসে বলল,

“আপু গোসল কেন করোনি?”

“এই শীতে এত সকালে গোসল কে করে?মাথা খারাপ?আমি তো ভাবছি আজ গোসল করবোই না।”

“বিয়ের রাতের পর ফরজ গোসল করে এটা জানো না?”

“বিয়ে?ফরজ গোসলের জন্য বিয়েটা দরকার।”

“আমি নিশ্চিত আপু তুমি গতকালের সব কথা ভুলে গেছো। তাইনা?”

তুলির কথায় কয়েকটা ফাঁকা ঢোক গিলে সাগরিকা জিজ্ঞেস করলো,

“মানে কী?”

“মানে এই যে গতকাল রাত ১২ টায় এত্ত ড্রামা করে , নানুকে গালি দিলে, মৌসুমি আপুকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে তাশদীদ ভাইয়ার গলায় ছুড়ি রেখে বিয়ে করলে সব’টা ভুলে গেলে?”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here