#এক_কাপ_চা
#পর্ব-২১+২২
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(৬১)
ইখুমের গায়ে মারের দাগ গুলো এখনো স্পষ্ট। তার কপালের দিকটায় দাগ এখনো সতেজ। পায়ে বেধে রাখা রশির দাগগুলো আছে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাটা জায়গায় দাগ বসে যাওয়া অংশে সযত্নে হাত বুলায় সে।
নিজের প্রতি নিজের মমতা মিশিয়ে স্পর্শ করে নিজেকে।
ইদানীং সে বুঝতে শিখেছে নিজেকে নিজে না ভালোবাসলে কেউ তাকে ভালোবাসবে না।টিকে থাকার লড়াই করার জন্য সর্ব প্রথম যা করা উচিৎ তা হলো নিজেকে ভালোবাসা। এটাই কেবল এবং কেবল মাত্র শান দেওয়া অস্ত্র। যা ঘাত প্রতিঘাত থেকে রক্ষা করবে নিজের ভিতর অন্ধকারে থাকা আপন স্বত্তা কে।
শান্ত দিঘীর জলের উপরিভাগ দেখে এর গভীরতা আন্দাজ করা যায় না ঠিক তেমনি রাশেদ অনুমান করতে পারছে না ইখুম কে।
ইখুমের মন ইদানীং খারাপ হয় না। রাশেদের মনে হয় সে নিজেই নিজের মন ভালো করার জন্য আছে।
গাছ থেকে সদ্য পেড়ে আনা টক বড়ই বিছানায় রেখে ইখুমকে ডাকলো রাশেদ। রাশেদের ডাকে কিছুটা ঘোর কাটলো।
মলম রেখে টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলল,
“কিছু বলবে?”
“বড়ই আনলাম।লবণ আছেই খাবে না?”
“ইচ্ছে করছে না।”
“কেন?”
“ইচ্ছের উপর কারোর জোড় নেই।”
ইখুম জুতো পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো।রাশেদ তার হাত ধরে টেনে বলল,
“আমার সাথে রাগ করেছো?”
“রাগ কেন করবো?”
“ওভাবে কেন কথা বলছো?”
“কীভাবে?”
“মাফ করতে পারোনি আমায় তাই না?”
“মাফ করার আমি কেউ না।আর সব কিছুর মাফ হয় না।”
“আমি সত্যি….”
“আমি কিছু জানতে চাইনি। আমাদের সংসার চলতে থাকুক না আর দশ জনের মতোই।”
“কী বলতে চাচ্ছো?”
“আমার সময় প্রয়োজন। আমি পারছি না মাফ করতে। কেন পারছি না জানি না।”
“মাফ করার হাজার কারণ থাকতে পারে কিন্তু মাফ না করার একটা কারণ যথেষ্ট। বেশ তবে নাও তোমার সময়।”
“একটা কারণ তো নয়। কয়টা কারণ চাচ্ছো তুমি? প্রতিটা কারণের জন্য আমি এই এক জন্মে তোমায় মাফ করতে পারছি না।”
“এভাবে আমার সাথে থাকতে কষ্ট হচ্ছে না?”
“সমঝোতা ছাড়া আপাতত আর কোনো কিছুই আমার করার নেই।”
“বেশ তুমি যা চাইছো তাই হোক।দোষ যখন করেছি। মাথা পেতেই না হয় নিবো সব শাস্তি।”
(৬২)
এই পুকুরটার বয়স অনেক।কথায় কথায় শোনা যায় যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর অনেক লোককে গলা কেটে এই পুকুরেমাছ দের খাইয়েছিল তাশদীদের দাদা। যুদ্ধে যেতে পারেনি ভদ্রলোক।অসুস্থ ছিলেন। ডান পায়ে ভর কম দিয়ে হাটতে হতো তাকে কিন্তু তার দেহ ছিল জেদের আগ্নেয়াস্ত্র। দেখতে সুদর্শন তেমনি ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত।
তার খানিকটা এসেছে তাশদীদের মাঝে। মাঝেমধ্যে তাশদীদের বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন ছেলের দিকে যখন তার চেহারায় ফুটে উঠে তার বাবার দ্যুতি।
চাল চলনে কথা বার্তায় তাশদীদ অন্য ধরনের ছেলে।তার ঈগলের দৃষ্টি থেকে কিছুই বাদ যায় না কিন্তু সে বিড়ালের মতোন গা আরামদায়ক স্বভাবে চলে কিন্তু ক্ষিপ্রতায় সে গ্রে লায়নের মতোন।
বিড়াল জাত হলেও গ্রে লায়ন যেমন শিকারে পারদর্শী ঠিক তেমনি শান্ত তাশদীদের আঁতে ঘা লাগলে সে হয়ে উঠে অন্য মানুষ।
পুকুর পাড়ে বসে নিজের ছোটো বোনের স্বামী মানে শুভ্রর বাবাকে কথাগুলো বলছিলেন তাশদীদের বাবা।
আগের দিনের কথা সাথে এক কাপ চা। আসর জমে উঠেছিল ঠিক তখন শুভ্র বলল,
“পুকুরে মাছ নেই?”
“আছে। জাল ফেলে দেখো।”
জাল ফেলতে না ফেলতেই সাত কেজি ওজনের রুই মাছ ধরা দিলো জালে। মাছ দেখে প্রায় সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইল।বিশেষ করে স্নেহা।কারণ ওরা মাছ খুব কম দেখে। খায় ঠিক কিন্তু মাছ ধরা তার কাছে প্রথম।
শুভ্র মাছ ধরে এনে সাগরিকার পাশে রেখে বলল,
“তো! গিন্নি রান্না করে খাওয়াবেন না কী?”
“আমি কাটতে পারি না।তবে?”
“ট্রায়াল হয়ে যাক। চল দেখি আজ দুজনে মিলে কেটে ফেলি মাছটা।”
এই শীতের মাঝেও শুভ্র নিজের গায়ের সাদা রঙের শার্ট খুলে তুলির হাতে দিয়ে দিলো।বড় সাইজের দুটো বটি নিয়ে আসা হলো ভিতর থেকে।শুভ্রের
উন্মুক্ত বুক পিঠ দেখে মৌসুমি লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে আছে বাড়ির আরো অনেকেই।শুভ্রের পেটানো শরীর, কাঁধের নিচে ফুলে উঠা হাতের পেশি,মেদহীন পেট দেখে মুনিরের স্ত্রী মুনিরকে বলেই ফেলল,
“উনি কী এক্টিং ফেক্টিং করে না কী?এত ফিটনেসের কারণ কী?”
মাছ কাটা শেষ হলে বাগান থেকে বেগুন তুলে আনলো তুলি।
ইখুম চুলোয় আগুন ধরিয়েছে।তাজবীদ ইট দিয়ে পুকুরের দিকটায় চুলো বানিয়ে দিয়েছে। ঘর থেকে তুলাইপাঞ্জি চাল এনে প্রথমে সে চালের পোলাও রান্না করলো ইখুম অন্য পাশে মুনিরের স্ত্রী আস্ত আস্ত বেগুন ভাজি করছে সরিষার তেলে।
মাছ ধুয়ে আনার পর রুই মাছের মাখো মাখো ঝোল করে রান্না করলো ইখুম।পেটির টুকরো ভাজা হলো কড়া করে। সাথে ঘিতে ভাজা হলো সরু সরু করে আলু।
কাজ শেষ করে শুভ্র সরাসরি লাফ দিলো পুকুরে গোসল করে ঘরে গিয়ে কাপড় বদলে যখন নিচে ফিরছিল তখন তার দেখা হলো মৌসুমির সাথে।
এত কাজ করে ক্ষুধাটা তখন বেশ জমিয়ে লেগেছে। তাছাড়া ওদিক থেকে ভুরভুর করে আসছে পোলাওয়ের সুগন্ধ।মৌসুমি কে তাই আপাতত কাটাতে চাইলো শুভ্র। কিন্তু মৌসুমি এসে সরাসরি হাত রাখলো শুভ্রের নগ্ন বুকে।
শুভ্র কিছুটা সরে যেতেই মৌসুমি বলল,
“আমি বরফ শীতল না জ্বলন্ত?”
“বড়ই দূর্গন্ধ।”
বলেই মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে ডান হাত মুখের সামনে এনে দ্রুত চলে গেল শুভ্র। পিছনে ফেলে রেখে গেল বিস্ফোরিত চোখে থাকা মৌসুমিকে।
(৬৩)
খাবার বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল নিচে বাগানে।সবাই সেখানে একত্রে বসেছে। তাজবীদ এবং মুনির শামিয়ানার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। তুলির সাথে সাথে স্নেহাও হাতে হাতে কাজ করছে। সামিনার শরীর খারাপ লাগছিল তবুও বেরিয়ে এসে কিছুটা হাত লাগাচ্ছে সে। তাশদীদের দাদু এলেন হাতে ঘি এর কৌটা নিয়ে। তাদের নিজের দেশি গরুর দুধ থেকে বানানো ঘি।
প্রত্যেকের পাতে নিজ হাতে ঘি দিলেন তিনি নিজে। কিন্তু বসার সময় ঝামেলায় পড়লো সাগরিকা।তাশদীদ এবং শুভ্রের মাঝে তার জন্য জায়গা রাখা হয়েছে।
তাশদীদের পাশে বসে বাম হাত লুকিয়ে ফেলল ওড়নার নিচে কিন্তু তবুও রক্ষা হলো না।ডান হাতে খাবার ধরতেই মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো আর্তনাদ। আজ তার দুই হাত কেটেছে অনেক জায়গায়। প্রথম মাছ কেটেছে সে তাও আবার এত বড় একটা মাছ।
খাবারে হাত দিতেই তাশদীদ ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে রইল।এরপর নিজ প্লেট থেকে বেগুন ভাজা দিয়ে পোলাও মেখে সাগরিকার মুখের সামনে ধরতেই শুভ্র বলল,
“ওর হাত আছে ব্রো।”
তাশদীদ ঠাট্টার ছলে বলল,
“তাই না কী?জানতাম না।আজ জানলাম।”
সাগরিকা মাথা নিচু করে শুভ্র কে কনুই দিয়ে গুতো মেরে বলল,
“আমার হাত কেটেছে।”
কারণ হয়তো সাগরিকাও চাচ্ছে তাশদীদের এমন যত্নশীল আচরণ।
বিনা বাক্যে সে তাশদীদের হাত থেকে খাবার খাচ্ছিলো।ওদের দেখে মৌসুমির মা নীলুফার বেগম একটু গলা উঁচিয়ে সবার সামনে বলল,
“মিয়া ভাই মনে আছে?আম্মা অসুখ হলে আব্বা তার পাশে বসিয়ে আম্মাকে ঠিক এই ভাবে খাইয়ে দিতো আর নিজেও খেয়ে নিতেন?তাশদীদ, বাবা তুমি ঠিক আমার আব্বার মতো হয়েছো।”
তার কথা শুনে সাগরিকা মাথা নিচু করে বলল,
“আর আমি কি আপনার মায়ের মতো?আমি ওমন কুটনী হতে চাই না।”
মাছের একটু অংশ সাগরিকার মুখে তুলে দিয়ে নিচু স্বরে তাশদীদ তাকে বলল,
“কাল সকালে দেখবো তুই দুই হাতে কত মাছ কাটতে পারিস।আর কে তোকে সাহায্য করে।”
সাগরিকার গলা দিয়ে আর খাবার নামলো না।মনে হচ্ছে তাশদীদের কথাগুলো গলায় আটকে গেল।কারণ সে ভালোই জানে আগামীকাল কী কী হতে পারে।
চলবে,,,
#এক_কাপ_চা
#পর্ব-২২
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(৬৪)
তাশদীদ পুনরায় যখন সাগরিকার মুখের সামনে খাবার তুলেছে তখন মৌসুমি বলল,
“ও মা আছে। আর তাছাড়া এতটাও কাটেনি যে তুমি বড়দের সামনে ওকে এভাবে খাইয়ে দিচ্ছো।”
মৌসুমির কথায় ভ্রু-কুঁচকে তাশদীদ জিজ্ঞেস করলো,
“কীভাবে?”
“নিজ প্লেট থেকে।একটু আমার মান রেখো।”
“নিজ প্লেট থেকে খাইয়ে দিলে তোমার মান কেন যাবে?”
“তুমি কী অবুঝ?ওকে খাইয়ে এঁটো হাতে আবার তুমি নিজে খাচ্ছো।তুমি….”
“থামো।মনোযোগ দিয়ে খাবার খেয়ে নাও।না হলে গলায় কাটা বিঁধবে।”
মৌসুমি কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু তাশদীদের মা বলল,
“আজ কাল নয় মৌসুমি।সাগরিকার পাঁচ বছরের বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে থেকেই ও তাশদীদের হাতে খায়।শুধু তাই নয় স্নেহাও খায়। ওরা আগে খাবার খেলেও যদি তোমার বড় মামা কিংবা তোমার ভাইয়া ওদের মুখের সামনে খাবার তুললে এঁটো না কী ওরা দেখে না।খাবার খেয়ে নেয়।”
“ভাইয়া কে?তাশদীদ?”
“তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়। তাজবীদ, শুভ্র তোমরা না হয় সমবয়সী কিন্তু তাশদীদ বড়। সম্পর্কে তোমার ভাই হয়। আশা করি এরপর থেকে ভাই বলেই ডাকবে।”
ঘরে ফিরে এসে সাগরিকার অস্থিরতা শুরু।উপরে আসার আগে সে শুনেছে তাশদীদ তার বাবাকে বলছিল পুকুরে মাছ ধরার কথা।মাছ গুলো যেহেতু বড় হয়েছে তাই মাছ তুলে নতুন মাছ ছাড়ার জন্য। আগামীকাল সকালে জেলে পাড়ায় খবর দেওয়ার জন্য।
মানে ওটা নিশ্চিত আগামীকাল সাগরিকার কপালে শনি নৃত্য করছে। দ্রুত পায়ে সাগরিকা পুনরায় নিচে ফিরে এলো।তার ফোনে মেগাবাইট নেই।ফোন দাদীর ঘরে রেখেছিল সেখান থেকে ফোন নিয়ে ঘরে ফিরে এসে গুগলে সার্চ করলো
কীভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে জ্বর আনা যায়?
জ্বর আসার ঘরোয়া উপায়
কী খেলে জ্বর আসবে?
বগল তলায় রসুন রাখলে জ্বর আসে কি না?
আস্ত রসুনে জ্বর আসে?না কী রসুনের কোয়া নিতে হবে?
খোসা ছাড়ানো রসুনে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে না কী?
জ্বর আসার ১০১ উপায়
কিন্তু কোনো ভাবেই জ্বর আনা সম্ভব হচ্ছে না।এদিকে শেষ একটা কাজ করা যেতে পারে।
নাকে সরু একটা কাঠি ঢুকিয়ে হাঁচি দেওয়া।তাহলে অবশ্যই বিশ্বাস করবে ঠান্ডা লেগেছে। জ্বর না আসুক ঠান্ডা তো লেগেছে,এটাই বা কম কী?
তাশদীদ জোড় করবেই না আর যদিও করে বড় মা থোড়াই কেয়ার করবে তাকে?
অদৃশ্য হাতে নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দিলো সাগরিকা।বাহবা দিতে দিতে এগিয়ে গেল বারান্দায়। সবার সাথে বসেছে। চাদর দিয়ে মাথা হাত ভালোভাবে ঢাকা।মাথা নিচু করে ঠেকিয়েছে হাটুর সাথে। চাদরের নিচ দিয়ে নাকে সরু কাঠি ঢুকিয়ে ধপাধপ চার পাঁচটা হাঁচি দিয়ে দিলো সে।
পুনরায় একই কাজ করলো।পঞ্চম বারের বেলায় টানা সাত আটটা হাঁচি দিয়ে এবার আর মাথা দাঁড় করিয়ে রাখতে পারছে না।মাথার ভিতর ঝিম ঝিম করছিলো।হঠাৎ গলার কাছটায় তেঁতো স্বাদের অনুভূতি হলো।
মিনিট দুয়েকের ব্যবধানে হরহর করে বমি করে দিলো সে।
শারিরীক কষ্ট হলেও মনে শান্তি। যাক তাশদীদ তো অত্যাচার করতে পারলো না।
(৬৫)
স্নেহাকে কোলে নিয়ে বসে আছে সামিনা।মেয়েটার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আছে। তারা যাচ্ছে সামিনার বাবার বাড়ি।স্নেহা সে বাড়িতে খুব একটা যেতে চায় না।বাসায় তাশদীদ, তাজবীদের সাথে মিশছে, তাদের সাথে ঘুরতে যাচ্ছে, খাচ্ছে দেখা যাচ্ছে ওদের ঘরেও মাঝেমধ্যে ঘুমিয়ে যায় কিন্তু এ বাড়িতে এলেই কান্নাকাটি শুরু করে সে। বিশেষ করে যখন তার মামাতো ভাইয়েরা তাকে নিতে চায়। তাদের কাছে তো যাবেই না তারা কিছু দিলেও তাদের হাতে কিছু খেতে চায় না।
সামিনাও খুব একটা জোড় করে না।
কিন্তু আজ আসার সময় স্নেহা তার গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল,
“মা, আমরা দরজা ওয়ালা ঘরে ঘুমাবো।তুমি যখন কোথাও যাবা আমাকে বন্ধ করে রেখে যাবে।আমি বড় হয়েছি না? একাই থাকতে পারবো না হলে আমাকে নিয়ে যাইয়ো?আমি দুষ্টামি করি না। তাই না গো মা?”
“আচ্ছা।নিয়ে যাবো। কিন্তু তুমি কেন ওদের সাথে খেলো না?”
“ওরা পঁচা কথা বলে। মা তুমিই বলো বর বৌ খেলা ভালো?তুমি কখনো খেলেছো?”
“কে বলেছে বর বৌ খেলা ভালো না?”
“আমিও ছোটো বেলায় খেলেছি তো মা।আমরা পুতুল খেলেছি, বর বৌ খেলেছি, গোল্লাছুট খেলেছি।”
“কই আমাদের বাসায় তো কেউ খেলে না।
ভাইয়ারা তো খেলে না।ভাইয়ারা তো ভালো।কখনো বকা দেয় না।”
“তোমার ভাইয়ারা বড় হয়েছে তাই।আচ্ছা শোনো বাড়িতে গিয়ে সব্বাইকে সালাম দিবে কিন্তু।”
“আচ্ছা।”
স্নেহা তার মা কে আর কিছুই বলল না।চুপচাপ তার মায়ের বুকের সাথে লেপ্টে রইল।তার মায়ের শরীরের এই গন্ধটা তার খুব ভালো লাগে। নাক ডুবিয়ে দিলো মায়ের বুকে।
ইখুমকে নিয়ে তার শাশুড়ির বিচারের শেষ নেই। তার মতে ইখুমের কোনো গুন নেই।ইখুমের পোশাক ভালো নয়। শাড়ি পরলেও আঁচল টেনে রাখে তাতে না কী বাজে লাগে।আজ ইখুম রান্না করেছে বলে সে খেতে বসেনি সবার সাথে। পরে বসেছে। ইখুমের দোষ এখানে সে কেনো তার শাশুড়িকে খেতে বসতে বলেনি।পরে যখন সবাই বলাতে বসেছিল সে খাবার খেয়েছে সবার মন রাখতে। রান্না তার মনের মতোন হয়নি।বিনিময়ে ইখুম কিছুই বলেনি। সে তার মতোন আছে। নিজেকে খুশি রাখতে জানে সে। অন্যের উপর নিজের সুখ ছেড়ে দেওয়া বোকামির।
অথচ আমরা সেই বোকামি খুব ভালো করেই করি।
নিজের সুখ অন্য কেউ এনে দিতে পারে না কিন্তু দুঃখ, মন খারাপ সব’টা জানো অন্যের দান।
(৬৬)
জ্বলন্ত সিগারেট তাজবীদের দিকে এগিয়ে দিয়ে শুভ্র জিজ্ঞেস করলো,
“সাগরিকাকে পছন্দ করিস?”
তাজবীদের সোজা উত্তর,
“কেন করবো না?আমাদের বাড়ির মেয়ে বলে কথা। তাছাড়া আমার কাছের মানুষ বলতে তো সাগরিকাই।”
“আমি ওটা বুঝাইনি।তুই কী সাগরিকাকে ওই টাইপের পছন্দ করিস?”
“কোন টাইপ?”
“গাধা একটা। বুঝছিস না?”
“তুমি গাধা। তুমি জানো না?সাগরিকা আমার ছোটো বোন।ওকে আমি বোনের মতোই দেখি।”
“তবে চায়ের জন্য এত প্যারা দিস কেন?”
“ভাই তার বোনকে চায়ের কথা বলতে পারে না?কিন্তু ”
“কী?”
“বলা যাবে না।”
“বলে ফেল না হলে বলে দিবো তুই ফোনে কাউকে হাম্পি ঝাম্পি দিচ্ছিলি।”
“আশ্চর্য। তুমি খুব খারাপ তো।”
“বলবি?”
“সাগরিকাকে ওটার কথা বলো না।আমায় মেরে ফেলবে। ”
“কেন?”
“কারণ ও চায় না ওর কোনো বান্ধবী তার ভাবী হোক।”
“মানে?তুই ওর বান্ধুবীর সাথে প্রেম করিস? আর ও জানে না?মজা পাইলাম।”
“হুম।কোনো একটা কারণে ও রাজী নয়। তবে দেখা যাক কী হয়। এজন্যই আমি ওকে এত জ্বালাই যাতে অসহ্য হয়েও রাজী হয়ে যায়।”
“আর তোর ভাই?সে কী?”
“ওটা তুমি ভাইয়াকেই জিজ্ঞেস করে নাও৷ তোমাদের স্নায়ুযুদ্ধের মাঝে আমাকে ফেলো না।আর একটা কথা সাগরিকার মানসিক কোনো অশান্তির কারণ যেন তোমরা না হও। অনুরোধ রইল।
সাগরিকার পাশে বসে তাশদীদ তার কপালে হাত রেখে বলল,
” কী খাবি?”
“কিছু না।”
“একটু কিছু। মেডিসিন নিতে হবে।”
“দই খই খাবো।”
মিনিট দশেক পর দইখই নিয়ে এসে তাশদীদের মা সাগরিকাকে খাইয়ে দিয়ে গেল।তাশদীদ পাশে বসে বলল,
“রেজাল্ট হয়েছে আজ তোর।”
“আর কী?ফেল করেছি?আমি জানতাম।আমার মতোন লেমন চুষলে ছাত্রীর কিছুই হবে না।বলি বিয়ে দিয়ে দাও। তা তো দাও না। হলো তো?করলাম তো ফেল।”
“প্লাস এসেছে।”
“ওটাই তো। এবার সবাই আমাকে ফেল মারছি বলবে। কী বললে?প্লাস এসেছে? ”
“হুম।আর জ্বর আনার একশ এক উপায় সম্পর্কে জানার জন্য প্রস্তুত থাক।কারণ প্রাকৃতিক ভাবেই কাল জ্বর আসবে তোর। সকালে জেলে এসে মাছ ধরবে। বটি নিয়ে রেডি থাকিস।”
“মানে?”
“গুগলে ওসব সার্চ আপনি আপনার নয়, আমার ফোন দিয়েই করেছেন।”
সাগরিকা কিছুই বলার শক্তি পেলো না।এবার মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটা সত্যি গোল গোল হয়ে ঘুরছে।
চলবে,,,