#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_২০+২১
নিহিলা সব গোছাগাছ করে নিল। হোস্টেল রুমটার প্রতি মায়া জন্মে গেছে। সে সবকিছু ঠিকঠাক করে বসা থেকে উঠে জানালার দিকে এগিয়ে গেল। শেষবারের মতো জানালাটির বাইরে দৃষ্টি দিল। সে আলতো করে পর্দাগুলো ছুঁয়ে দিল। এরপরে মনকে শক্ত করে পর্দা টেনে দিয়ে ব্যাগ সব নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
এয়ারপোর্ট এ রিনা আহমেদরা আসবেন বিদায় দিতে। নিহিলা এয়ারপোর্ট এ নেমে আশেপাশে তাকাতেই অরিন এসে দাঁড়ালো। একে একে আহান আর রিনা আহমেদও এসে দাঁড়ালেন। নিহিলা একটু উঁকি দিল। তার ভাবনাতে এসেছে কোনো একটা ইমাজিন হোক যে রাহান ভাইও এসেছে কিন্তু অনেকক্ষন কথা বলে বুঝতে পারলো তিনি আসেনি। তিনি অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছেন। আজ ফিরবে। আচ্ছা? উনি যদি নিহিলা চলে গেছে জানে তাহলে কী খারাপ লাগবে? পরক্ষনেই নিহিলা নিজের বোকামির জন্য হাসলো। উনার কেন খারাপ লাগবে!
নিহিলা সবার সাথে বসে রইল। পাশেই অরিন আহান কথা বলছে। নিহিলা চারপাশে তাকালো। শেষবারের মতো জাপান দেখে নিচ্ছে। সে জানে হয়ত আর আসা হবে না। প্রথমবার এখানে পা রাখার স্মৃতিটা মনে পড়ে যাচ্ছে। কী সুন্দর মুহূর্ত! নতুন জায়গা, তার স্বপ্নের জায়গা! আহান নিতে এসেছিলো, তারপর রাহান ভাইয়ের প্রথম দেখাতেই ধমক। নিহিলার চোখে একে একে সব ভেসে উঠছে। সময় কত দ্রুত ফুরোই! দেখতে দেখতে চারবছর সে কাটিয়ে দিয়েছে । আজ বাড়ি ফেরার পালা।
উপরের মনিটর থেকে শেষ বারের মতো আওয়াজ আসলো বোর্ডিং আওয়ার শেষ, যাত্রীদেরকে উদ্দেশ্য করে স্পিকারে বলছে। নিহিলা অরিনকে জড়িয়ে নিল। আহানকে সহ বিদায় দিয়ে সে পা বাড়ালো রিনা আহমেদের কাছে।
“শুধু একটা বছর কাছে ছিলি, কিছুই তো করতে দিলি না। এই তিনবছর যখন ইচ্ছে দেখতে পারতাম, চলে আসতিস। কিন্তু এখন তো আর তাও পাবো না।”
“মায়ের মতো আগলে রেখেছ। যা করেছ অনেক বেশি করেছ ফুপি। কৃতজ্ঞতা রইল।”
রিনা আহমেদ এক গাদা আদেশ দিল। তার চোখ গড়িয়ে অশ্রু পড়ছে। ভাবতেও অবাক লাগছে যে এই মেয়েটিকে সে হয়ত আর কাছে পাবে না।
নিহিলা চোখ মুছে পা বাড়ালো। রিনা আহমেদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো, “চিন্তা করো না ফুপি,তোমাকে আমি পরিবারের সাথে মিলাবোই।”
নিহিলা হাঁটতে হাঁটতে পিছু ফিরে তাকালো। এই মানুষগুলো তার দ্বিতীয় পরিবার ছিল। অচেনা দেশের পরিবার। নিহিলা ঝাঁপসা দৃষ্টিতে তাদের হাত নাড়িয়ে বিদায় দিল।
নিহিলাকে যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যায় ততক্ষন তাকিয়ে রইল ওরা। অরিন আহানের মন খারাপ। রিনা আহমেদও চোখ মুছে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। এইবার ফিরতে হবে। বাসায় শুধু শফিক আহমেদ আছেন। রাহান আজ বাইরে থেকে ফিরবে। ছেলেটাকে কিছু ভালোমন্দ খেতে দিতে হবে।
রিনা আহমেদ অরিন আহানকে ডাক দিতেই অরিন আহান না করলো।
“আরেকটু থাকি, নিহিলার ফ্লাইটের প্লেনটা অন্তত দেখি। শেষবারের মতো।”
রিনা আহমেদ দিরুক্তি করলো না। তিনিও দাঁড়িয়ে রইলেন।
নিহিলা সবকিছু শেষ করে প্লেনে নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়লো। ভাগ্য ভালো জানালার পাশেই সিট্ পড়েছে। অন্য সময় হলে খুশি লাগতো কিন্তু আজ লাগছে না। আজ যেন ভেতরে ভেতরে র’ক্ত’ক্ষরণ হচ্ছে। এতদিন একটা আশা ছিল কিন্তু আজ সেটাও আর নেই। একেবারের জন্য মিলিয়ে গেল। নিহিলার হুট্ করে কান্না চলে আসলো। কান্নার মাঝে হিচকি উঠতেই আশেপাশের মানুষগুলো তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে ফিরে তাকালো। নিহিলার লজ্জায় অস্বস্তি ঘিরে ধরতেই সে মাথা নিচু করে ফেলল। মানুষগুলো একবার দৃষ্টি দিয়েই তারপর ফিরিয়ে নিয়েছে। নিহিলা জানালার বাইরে দৃষ্টি দিল। ক্ষনে ক্ষনে হিচকি উঠছে। সে মুখ চেপে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। জীবন কী অদ্ভুত! চারবছর আগে যখন এই দেশে আসবে তখন কান্না এসেছিল সেই পরিবারের জন্য আর এখন কান্না এসেছে এই পরিবারের জন্য। অথচ চারবছর আগে এই মানুষগুলোর প্রতি কোনো মায়ায় ছিল না। না ছিল কারোর প্রতি টান। প্লেন ছেড়ে দিছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। যখনোই আকাশে উড়াল দিল তখনই কান্না আর আটকে রাখতে পারলো না। কান্নার সাথে সাথে বুক ছিঁড়ে তপ্ত শ্বাস বেরিয়ে এলো। আজ থেকে সব আশা বেরিয়ে গেল। শেষ সব। দ্বিতীয়বারের মতো অনুভূতিটা এই দেশ ছাড়ার সাথে সাথেই বিসর্জন দিল।
কিন্তু নিহিলা যদি জানতো! মুদ্রার এই পিঠটা যদি দেখতো! তবে পরিস্থিতি অন্তত ভিন্ন হতো। মুখে হাসি রেখেই যেতে পারতো।
রাহান দ্রুত দৌড়ে এয়ারপোর্ট এ এগিয়ে এলো। রিনা আহমেদরা এগিয়ে সামনে আসতেই আহান ডাক দিল,
“মা, এটা রাহান ব্রো না?” আহানের কথা শুনে অরিন, আর রিনা আহমেদ দুজনেই তাকালো। হ্যাঁ, রাহান এগিয়ে আসছে।
রিনা আহমেদ একটু এগিয়ে যেতেই রাহান এসে দাঁড়ালো।
“কিরে বাবা!”
মায়ের কথা শুনে রাহান আশেপাশে তাকালো।
“শুনলাম, নিহিলা চলে যাবে আজ?”
“চলে গিয়েছে তো। এখনই বিদায় দিলাম।”
“ওহ।” রাহান পিছু ফিরে গেল।
“ব্রো দেখো। নিহিলার ফ্লাইটের প্লেন।” আহানের কথা শুনে রাহান উপরে তাকালো। মাথার উপর খোলা আকাশে প্লেনটি উঠে যাচ্ছে। রাহান আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। যতক্ষণ পর্যন্ত প্লেনটা চোখের আড়ালে মিলিয়ে যাচ্ছে ততক্ষন তাকিয়ে রইল। আকাশে প্লেনটা ছোট আকার ধারণ করে মিলিয়ে যেতেই রাহানের চোখ ঝাঁপসা হয়ে এলো। তার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়ত হাটু গেড়ে বসে পড়তো কিন্তু রাহান নিজেকে শক্ত করলো। তার বুঝতে বেশ দেরি হয়ে গেছে। সে কেন আগে এই অনুভূতিটার সাথে পরিচিত হয়নি! তাহলে হয়ত আজ পরিস্থিতি অন্যরকম হতো! এভাবেই হারিয়ে ফেলল!
অরিন,আহান দুজনেই ভাইয়ের দিকে তাকালো। তারা বেশ বুঝতে পারলো তাদের ভাইয়ের কষ্ট হচ্ছে কিন্তু দেখাচ্ছে না। তাদের খারাপ লাগলো। ওদের চোখ দেখে রিনা আহমেদ তাকালেন। তিনি এগিয়ে রাহানের কাঁধে হাত রাখতেই রাহানের ধ্যান ফিরে আসলো। সে পিছু ফিরলো।
“তো এভাবে দৌড়ে এলি? আর বাহির থেকে কখন ফিরলি?”
“এমনি নিতে এলাম।”
“আহান তো আছেই ড্রাইভিং করার জন্য। তুই এতো জার্নি করে আসতে গেলি কেন? সবেমাত্র বাইরে থেকে এলি। বাসায় বিশ্রাম নিতি।”
“নিতে এসেছি বলে দুঃখ পাচ্ছ যে?”
বলেই রাহান গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। ড্রাইভিং সিটে বসতে নিতেই আহান ডাক দিল,
“ব্রো, তুমি অন্য সিটে বসো। ড্রাইভ আমি করবো।”
আহানের কথায় রাহান কিছু না বলে সরে গিয়ে ড্রাইভিং এর পাশের সিট্ টাতে বসলো।
রাহান জানালার বাইরে দৃষ্টি দিল। তার কিছুই হুট্ করে ভালো লাগছে না। বুঁকের ভেতর কোথাও যেন চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে। তার এমন কেন লাগছে! বাবার মুখ থেকে নিহিলা চলে যাচ্ছে শুনে সে কেন দৌড়ে এলো! কেন নিহিলাকে একটি ফলক দেখার জন্য এতো জার্নির পরেও আবার এখানে চলে আসলো! তার এমন বাজে অনুভূতি কেন হচ্ছে! তাহলে কী নিহিলা চলে গেছে তাই! কিন্তু তার সাথে নিহিলার কিসের সম্পর্ক! এমন তো না যে অনেক ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। তবে এই অনুভূতির নাম কী!
#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। রিচেক করা হয়নি ভালোমতো। ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার নজরে দেখার অনুরোধ। গঠনমূলক মন্তব্যের শুকরিয়া। ভালোবাসা নিবেন🌸)
#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_২১
নিহিলা চাঁদর গায়ে ভালোমতো জড়িয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়ালো। শীত শীত লাগছে কিন্তু তার এই আবহাওয়াটা ভীষণ করে ভালো লাগছে। রিহি নিহিলার রুমে ঢুকলো। রুম অন্ধকার। রাতের খাবার খাওয়ার জন্যই ডাকতে এসেছে সে। সে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে গেল। নিহিলাকে অন্ধকারে অন্যমনস্ক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিহি পাশে দাঁড়ালো।
নিহিলা অনুভব করলো রিহি এসে দাঁড়িয়েছে কিন্তু কিছু বললো না।
রিহি এক ফলক নিহিলার দিকে তাকিয়ে বাইরে দৃষ্টি দিল।
“কী হয়েছে তোর?”
“কী হবে!”নিহিলা বাইরের দিক থেকে দৃষ্টি না সরিয়ে শান্তস্বরেই কথাটা বলল।
“তোকে এমন কেন লাগছে?”
নিহিলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ভেবেছিল ঐ দেশ ছাড়ার সাথে সাথে দ্বিতীয় অনুভূতি বিসর্জন দিয়েছিল কিন্তু না। এদেশে এসে তার আরো খারাপ লাগছে। বুকে গভীর ভাবে চিনচিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে। নিহিলা নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
“ইমন ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে?”
ইমনের কথা বলতেই রিহি মাথা নিচু করে ফেলল। নিহিলা অন্ধকারেও বুঝতে পারলো রিহির মুখশ্রী লজ্জায় রাঙা হয়ে গেছে। রিহি ‘হ্যাঁ-সূচক’ মাথা নাড়লো।
নিহিলা রিহির দিকে তাকালো। কেমন অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। প্রেমে পড়লে বুঝি এমনই লাগে! রিহির জন্য খারাপ লাগবে। নিহিলা মলিন শ্বাস ফেলে বাইরের দিকে দৃষ্টি দিল।
রিহি নিহিলার দিকে তাকালো। ঘরে আলো জ্বলছে না কিন্তু বাহির থেকে টুকটাক আলো এসে ব্যালকনিতে পড়ছে। পূর্ণিমার তির্যক আলো এসে সোজা নিহিলার মুখের উপর পড়ছে।
রিহি তাকালো। নিহিলার চেহারা অগোছালো, শান্ত, নির্জীব।
“এমন নির্জীব দেখাচ্ছে কেন তোকে?”
নিহিলা হাসার চেষ্টা করলো,
“অনেকদিন পরে দেখেছিস তাই এমন লাগছে।”
রিহি জবাব দিল না। নিহিলার দিকে তাকিয়ে রইল। ওকে অরিন কিছু হলেও বলেছে। ও জানে নিহিলা এইসব ভেতর থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে তাই কাউকে না বলে নিজেই কষ্ট পাচ্ছে।
“আচ্ছা, সাফাত ভাইরা এখানে থাকে না? আসার পরে একবারও দেখলাম না।”
নিহিলার কথায় রিহি তাকালো। সে জানে নিহিলা কথা ঘুরাচ্ছে কিন্তু এটাও তো তার জন্য কষ্টকর। রিহির জবাব দিতে দেরি হতে দেখে নিহিলা হাসলো,
“ভাবিস না, কষ্ট থেকে জিজ্ঞেস করছি। আমি ভুলে গেছি এসব। মাঝখানে চারবছর কেটে গেছে। তোর কী মনে হয় আমি এখনো এসবে পড়ে আছি!”
নিহিলার কথায় রিহি মলিন শ্বাস ফেলল,
“সাফাত ভাই আর আগের সাফাত ভাই নেই রে নিহি। বড়ো বাবা আলাদা করে দেওয়ার তিনমাসের মাথায় ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। এখন সাফাত ভাই একা থাকে। বাড়িতেও আসে না। ভাইয়ের সাথে কথা দূরের কথা চোখের দেখা দেখেছি আজ থেকে দুবছর আগে। পরিবারের সাথেও তেমন একটা কথা হয় না। ও এখানে আসে না। জানি না, আমার ভাইটা কেমন আছে। আমার মাঝে মাঝে কী মনে হয় জানিস?”
নিহিলা থমকালো। এতকিছু হয়ে যাবে সে সেটা কোনোদিন কল্পনাতেও আনেনি। সে নিজেকে শান্ত করে রিহির জবাব দিল,
“কী মনে হয়?”
“আমার মনে হয় সাফাত ভাই বিয়ের নতুন বছরেই অনুশোচনায় দ’গ্ধ হয়েছিল। কারণ মিলি মেয়েটা ভাইকে হাত করেছিল শুধুমাত্র সম্পদের জন্য। ভাই একমাত্র ছেলে ছিল, এতদিকে ব্যাবসা ছিল -এসবকিছু জেনে বুঝেই ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক করেছিল কিন্তু আমার বো’কা ভাইটা বুঝতেও পারেনি যে কোনটা হীরা আর কোনটা নকল!”
দরজা ধাক্কানোর শব্দে রিহি থামলো। দরজার ওইপাশ থেকে রেহেনা বেগমের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। রিহির খেয়াল হলো,
“এই দেখ, আমাকে রাতে খাওয়ার জন্য তোকে ডাকতে পাঠিয়েছে। আর আমিও গল্পে লেগে গেছি। একদম মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। আয় চল।”
নিহিলা রিহির সাথে পা বাড়ালো।
খাওয়া শেষ করে আমান শেখ উঠতে যাবে তখনই নিহিলা বড়ো বাবার দিকে তাকালো,
“বড়ো বাবা একটা কথা বলি?”
আমান শেখ টিস্যুতে হাত মুছতে মুছতে নিহিলার দিকে তাকিয়ে হাসলো,
“একটা কেন! যতটা ইচ্ছে বল। অনুমতি নেওয়ায় কী আছে!”
নিহিলা নিজেকে শান্ত করে প্রস্তুত করলো,
“তুমি সাফাত ভাইকে মেনে নিয়েছিলে। যদিওবা চাপে পড়ে কিন্তু ফুপিকে কেন মেনে নাওনি! এটা কৈফিয়ত না শুধু জিজ্ঞেস করছি। যদি শাস্তির কথা বলো তবে পরিবার ছাড়া এতগুলো বছর উনি বাইরে আছেন – এটা উনার জন্য অনেক বড়ো শাস্তি । উনাকে দেখতাম প্রায় সময় মন খারাপ করে থাকেন। আদরের বোনের সাথে যোগাযোগ না রেখে শুধু তুমি কষ্ট পাচ্ছ যে তা না, ফুপিও পাচ্ছে অনেক। আমার একটা অনুরোধ রেখো। মেনে নেও প্লিজ।”
আমান শেখের এতক্ষন থাকা হাসোজ্জল মুখটা মুহূর্তের মধ্যে নির্জীব হয়ে গেল। তিনি চুপ হয়ে গেলেন। নিহিলা তাকিয়ে রইল। ঘরে থাকা প্রতিটি সদস্যর দৃষ্টি আমান শেখের দিকে। বেশ কিছু সময় পরে আমান শেখ মাথা তুলে নিহিলার দিকে তাকালেন,
“রিনা আমাকে চিনে উঠতে পারেনি। আমার কাছে সরাসরি এসেছে? ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে! সে যদি কাছে আসতো আমি তাকে ফিরিয়ে দিতে পারতাম! হয়ত প্রথম প্রথম অভিমানে দূরে সরিয়ে দিয়েছি আর আমার বোন কী করলো! আমার সেই অভিমানটাকে একেবারের জন্য মনের মধ্যে আবদ্ধ করে নিয়ে দেশ ছেড়ে দিল!”
“এখন এতো সব ভুলে যাও বড়োবাবা। রিহির বিয়েতে ফুপিকে বলো।”
“তোরা বল। আমি তো আপত্তি করছি না।” বলেই তিনি রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন।
নিহিলাকে উৎফুল্ল দেখালো। রেহেনা বেগম, আমেনা বেগম ভারী খুশি হয়ে নিহিলাকে এসে জড়িয়ে নিল। অবশেষে এই বাড়ির মেয়ে ফিরে আসবে বলে কথা!
রিহি দূর থেকে নিহিলার দিকে তাকালো। নিহিলাকে মন থেকেই উৎফুল্ল লাগছে। এতক্ষন যে নির্জীব ভাবটা ছিল মুহূর্তের মধ্যে যেন সেটা কেটে গেছে। নিহিলা মোবাইল হাতে নিয়ে কল দিতে গিয়েও দিল না। হুট্ করে আগের মতো মুখভঙ্গি করে ফেলল। রিহি বুঝতে পারে না এই মেয়েটার হুটহাট কী হয়!
নিহিলা রিনা আহমেদকে মেসেজ লিখলেন। মিনিট দুয়েকের মাঝে রিনা আহমেদের কাছ থেকে কল আসলো। বেশ কিছুসময় কথা বলে শেষপর্যায়ে নিহিলা নিজেকে শান্ত করে রিনা আহমেদের উদ্দেশ্যে বলল,
“পরের সপ্তাহে রিহির বিয়ে।”
“ওহ।” রিনা আহমেদের এই কথাটা শুনেই নিহিলা বুঝতে পারলো উনি কষ্ট পেয়েছেন। নিহিলা চুপ রইল। উনাকে সময় দিল। বেশ কিছুসময় পরে রিনা আহমেদ মন খারাপ আড়ালে ঠেলে দিয়ে আবারো বললেন,
“সবাই কত বড়ো হয়ে গেল! অথচ পাশ থেকে ছুঁয়েও দেখতে পারলাম না। আর রিহি তো একবারও বললো না।”
নিহিলা রিহির দিকে তাকালো। রিহি প্রথমেই রিনা আহমেদের সাথে কোনোমতে কুশলাদি শেষ করে ব্যালকনিতে চলে গিয়েছে। হবু বরের সাথে কথা হচ্ছে বোধহয়।
“লজ্জা পেয়ে বলেনি। রিহি কাল বলবে তোমাকে। আমি বলছি তো। তুমি এসো। মা-বড়ো চাচীও কল দিবে তোমাকে কাল।”
“আর ভাইজান? সে তো মেনে নিবে না।”
“তুমি সরাসরি এসে রাগ ভাঙিয়েছো? কল করলে এড়িয়ে যাওয়া যায় কিন্তু সরাসরি নিজের র’ক্ত’কে এতবছরেও এড়িয়ে যাবে না।”
“ঠিকাছে। আমরা আসবো। ভাইজান ফিরিয়ে দিবে না তো?
“আমি চিনি বড়ো বাবাকে। আর তুমি আমার চেয়ে বেশি চিনবে। এখন উনার মন অনেক নরম হয়ে গিয়েছে। আর বড়ো বাবাই তোমাকে দাওয়াত করেছে।”
“সত্যি?ভাইজান বলেছে?” রিনা আহমেদের কণ্ঠ উৎফুল্ল শোনালো। তা বুঝতে পেরে নিহিলা হেসে ‘হ্যাঁ’ জানালো।
রিনা আহমেদ কী বুঝে নিহিলার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
“নিহিলা মা? তোর মন ভালো তো?”
রাহান মাত্রই মায়ের সাথে কথা বলতে রুমে ঢুকতে নিচ্ছিলো কিন্তু মায়ের কথাটা শুনে দরজার এখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো।
নিহিলা থমকালো। সে তো উপরে যথেষ্ট ভালো আছে তবে কণ্ঠস্বরে কী কিছু বোঝা যাচ্ছে! নিহিলা নিজেকে শান্ত করলো,
“কেন মনে হচ্ছে ফুপি?”
“না, কেমন শান্ত শান্ত কণ্ঠস্বর।”
নিহিলা হাসার চেষ্টা করলো।
“এমনি মনে হচ্ছে ফুপি। রিহির বিয়ে হয়ে যাবে না? একটু মন খারাপ। তুমি এসো কিন্তু। রাখছি আমি। পরে আবার কথা হবে ফুপি। আসসালামু আলাইকুম।” বলেই নিহিলা রিনা আহমেদ কিছু বলার পূর্বেই তাড়াহুড়ো করে কল কেটে দিল।
রাহান রিনা আহমেদ না দেখে মতো আগের ন্যায় দরজা আস্তে করে লক করে পিছু ফিরে আসলো। মন থেকে সে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে কিন্তু কাউকে বোঝাতে পারছে না।
#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। রিচেক করা হয়নি। অগোছালো আর ভুল ভ্রান্তির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। পর্বের কথা সঠিক বলতে পারছি না 😑তবে বেশি নেই। ভালোবাসা নিবেন সবাই🌸)