একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি পর্ব ৮

0
139

একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি -৮

সন্ধ্যা হয় নি এখনো। চারপাশে সড়কবাতি জ্বলে উঠেছে। অমিতের নিঃশ্বাস গাঢ় হয়ে আসছে। বিষয়টা কি হলো! অমিত কি নওরিনের প্রেমে পড়ে গেল নাকি!

এসব চিন্তা লুকিয়ে অমিত বলল৷ চলুন, যাওয়া যাক।

নওরিন বলল, একটু টেনশন হচ্ছে।

তা হোক, সমস্যা নেই। আপনাকে পৌছে, আমি আমার কাজে যাব।

এত ঝামেলা করার কি দরকার ছিল?

এটা অবশ্য আমিও জানি না, কি দরকার ছিল।

বাই দ্য ওয়ে, আপনার চেহারাটা এখনো দেখা হয় নি ঠিক করে, যতবারই দেখা হয়েছে, ক্যাপ আর গ্লাসে চোখ মুখ ঢাকাই থাকে। কারণ কি?

মুখটা বাংলার পাঁচের মত, তাই দেখাতে চাই না সবাইকে।

বলে অমিত হাসল।

চলুন, জ্যাম শুরু হয়ে গেছে অলরেডি।

গাড়িতে বসে অমিত বলল, দিস ইজ রিয়াজুল, মাই এসিস্ট্যান্ট, আর ড্রাইভার মোকছেদ ভাই।

নওরিন সৌজন্যতার হাসি হাসল।

গাড়িটা আপনার?

অমিত বলল, আপাতত আমার।

মানে কি, অফিসের?

সেটাও হতে পারে৷

নওরিন ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল৷ এত রহস্য করার কি আছে!

অমিত হাসতে হাসতে বলল, একদিন সব রহস্য উম্মোচিত হয়ে যাবে। আপনাকে বেশ মিষ্টি লাগছে আজকে। চেহারা দেখে চাকরি দিয়ে দিলো বোধহয়।

নওরিন বলল, আমার মনে হয় গুলিয়ে ফেলেছে আমাকে অন্য কারো সাথে। আমার কোনো মামা চাচা নাই যে সুপারিশ করবে, কিন্তু বলেছে, আমার অনেক বড় লিংক আছে, সরকারি চাকরির চেষ্টা করি যেন। কি হাস্যকর!

নওরিন, বাড়িতে কে কে আছে আপনার?

প্রসঙ্গ পাল্টে জানতে চাইল অমিত।

মা, বাবা, এক বোন, এক ভাই।

সবাই ছোটো আপনার থেকে?

হ্যা।

গাজীপুরে বাসা আপনার?

না, আমার হোমডিস্ট্রিক্ট বরিশালে, বাড়ি সদরে না, একটু গ্রাম সাইডে।

আচ্ছা।

আপনার কে কে আছে?

বাবা মা আর ছোটো ভাই। দুই ভাই আমরা।

কোথায় থাকেন তারা?

ঢাকাতেই৷ ধানমণ্ডিতে।

আপনি একচুয়েলি কি করেন? মানে কিসে জব করেন?

কেন কি দরকার? পাত্রী দেখবেন নাকি?

নওরিন অপ্রস্তুত হয়ে বলল, না, না৷ সরি।

আচ্ছা নওরিন, পুরুষ মানুষের কাজটাকে সবাই এত গুরুত্ব কেন দেয়? আমি কেমন মানুষ, সেটার থেকে আমি কি কাজ করি, সেটা জরুরি?

কাজের বিষয়টা কেন গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমি জানি না, হয়তো সমাজ ব্যবস্থায় সেভাবে প্রচলিত।

ইউনিভার্সিটিতে আমার এক বন্ধু ছিল, এককথায় যাকে বলে মা★গী★বাজ! সরি ফর মাই স্ল্যাং, বাট এটাই সত্য। একশ একটা মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করত, টিউশনি করতে গিয়ে ছাত্রীর সাথে আগে একদফা বিছানায় গিয়ে নিত, আর এসব সে নিজেই গল্প করত আমাদের সাথে। সবাই জানে তার এই চরিত্র।

নওরিনের কান ঝিমঝিম করছে, অমিত এত ফ্রি ভাবে কথা বলছে কিভাবে!

সেই ছেলে বিসিএস এ টিকল। তার সকল দোষ ধুয়ে পানি হয়ে গেল। এখন সে সবার আইডল!
ভাবতে পারো, কিয়েক্টাবস্থা!

নওরিন বলল, দুটো তো আলাদা বিষয়।

হোক আলাদা, কিন্তু চরিত্র বা ব্যক্তিত্ব সবার আগে। একজন দায়িত্ববান মানুষ কিনা, সেটা দেখা জরুরি।

অমিত, আপনি বেশ গুছিয়ে কথা বলেন।

নওরিনের কমপ্লিমেন্টে অমিত মনে মনে কলার ঝেড়ে নিলো একবার।

আপনি কোথায় যাচ্ছেন গাজীপুরে?

আমার মামার বাসায়।

এত তাড়াহুড়ো করে যেতে হচ্ছে?

আজকে রাতে ওখানে কয়েকজন অতিথি আসবে, তাদের মূল উদ্দেশ্য পাত্রী দেখা। আর সেই পাত্রী আমি।

অমিতের মেজাজ খিচড়ে গেল, এজন্য শাড়ি পরে।এত গুছিয়ে নিয়েছে। লুকিয়ে ফেলল না অমিত৷ জিজ্ঞেস করল, এজন্য শাড়ি পরেছেন?

না, শাড়ি বদল করার সুযোগ পাই নি আসলে।

যাই হোক, আপনার জন্য শুভকামনা। আজ জবের একটা ভালো খবর হলো৷ বিয়েও হয়ে যাক, এই প্রার্থনা করি।

নওরিন একটু হাসার চেষ্টা করল।

গাজীপুরে পৌঁছে নওরিনের মামার বাসার সামনে অমিত নওরিনকে নামিয়ে দিলো।

নওরিন বলল, ভেতরে আসুন প্লিজ?

আজ না নওরিন, তবে আসার ইচ্ছে আছে, আসব নিশ্চয়ই।

অমিত চোখ থেকে গ্লাস খুলে ফেলল, আর তখনি নওরিন অমিতকে চিনে ফেলল।

নওরিন হতভম্ব হওয়ার সুযোগ পেল না৷ তার আগে অমিত গাড়ি নিয়ে চলে গেল।

চলবে

শানজানা আলম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here