একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি – ১৭
নওরিন প্রথমে ভাবল ভুল শুনেছে, পরে চোখ ডলে উঠে বসে দেখল ভুল না, সত্যি সত্যি অমিত ফোন করেছিল৷
নওরিনের মনে হলো, এক দৌড়ে চলে যায় অমিতের কাছে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো নওরিন।
আলুথালু পোশাকেই নিচে নেমে এলো। অমিত একাই এসেছে ড্রাইভ করে।
-চোখমুখের কি অবস্থা করেছ তুমি? একদম আমসি হয়ে গেছে!
-রাতে ঘুম কম হয়েছে।
-অফিস নেই?
-আছে।
-আজ ঢপ দাও। চলো আজ আমরা বিয়ে করি। ইনফ্যাক্ট আমি আজ বিয়ে করব বলেই বের হয়েছি।
নওরিন বলল, জীবনটা তো সিনেমার গল্প না।
-তবুও সিনেমাটিক অনেক কিছুই তো ঘটে আমাদের জীবনে!
আমাদের বিয়েটাও সিনেমাটিক হোক!
-না, এভাবে আমি বিয়ে করব না। বিয়ে তো অপরাধ না। দুই পরিবারেরই সম্মতি প্রয়োজন।
-আমার পরিবার থেকে বিশেষ কোনো সমস্যা নেই।
আমি চাচ্ছিলাম সংসারী হতে।
-কিন্তু গোপনে? তাই তো?
-আসলে আমাদের দেশে এখনো ম্যারিড নায়ক নায়িকাকে দর্শক নিতে পারে না। ক্যারিয়ারের একটা পিক পয়েন্টে আছি, এখন সব কিছু ভেবে চিন্তে করা উচিৎ।
নওরিন বলল, হ্যা, সালমান খান থেকে জায়েদ খান, কেউই বিয়ে করেনি!
আর শাকিব খান দুটো বিয়ে করেছে, দুটোই গোপনে, রাজ পরীর বাচ্চা না আসার আগ অবধি সব গোপন ছিল!
হ্যা, অমিত রাজের বিয়েটাও গোপন থাকবে। তুমি তোমার মত থাকবে, আমি আরেকটু গুছিয়ে সব সামনে নিয়ে আসব৷
নওরিন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কি করবে এখন! অমিতকে ফেরাতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু গোপন রাখার বিষয়টা ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। কতটুকুই বা চেনে অমিতকে, যদি এমন হয়, অমিত…..
কি করবে অমিত! ওকে ভুলে যাবে? নাকি…
-এত কনফিউশান কেন নওরিন? শুধু আমি সিনেমায় কাজ করি বলে? ব্যক্তি অমিতকে কি তোমার অপছন্দ?
নওরিন অমিতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, এত গ্ল্যাম ওয়ার্ল্ডে থেকে অমিতের কেন সাধারণ একটা মেয়েকে ভালো লাগল? বিশেষ কারণটা কি?
সত্যিটা শুনতে চাও?
হ্যা?
সত্যি কারণটা আমি জানি না। তবে গ্লামারটা শুধুই বাইরের চাকচিক্য। তুমি পরিশ্রমী মেয়ে, সব গুছিয়ে নেওয়ার যোগ্যতা তোমার আছে। হয়তো আমার জীবনটাও গুছিয়ে দিতে পারবে, এমন ভাবছি!
নওরিন বলল, অমিত, আমি আপনাকে বিয়ে করব না৷
এটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ?
হ্যা।
কারন কি একটাই?
না, বিয়েটা আপনার জন্য ভালো হবে না। আরো চাপ হবে, গোপন রাখতে হবে, আপনাকে লুকিয়ে একটা জীবন মেইনটেইন করতে হবে। কি দরকার এভাবে জীবন কাটানো! আপনি সময় মত বিয়ে করুন ঢাক ঢোল পিটিয়ে৷
আমি এখব যাব। আর অমিত, আপনি আমার সাথে যোগাযোগ না করলে আমি খুব খুশি হবো।
অমিত বলল, তথাস্তু! তুমি না ডাকলে আমি আর কখনো আসব না৷
সানগ্লাসে চোখ ঢেকে অমিত চলে গেল। নওরিন ফোনে দেখল, সাড়ে সাতটা বাজে, অফিসে ঢুকতে হবে সাড়ে আটটার মধ্যে। মন খারাপ লাগছে, বিষন্ন লাগছে, কি করবে নওরিন? অমিতকে ডাকবে? নাকি ডাকবে না!
অফিসে নওরিন মন দিতে পারল না একদম। কিছুই ভালো লাগছে না৷ ডেস্কে বসে নওরিন রেজিগনেশন লেটার টাইপ করে ফেলল। এই শহরেই আর থাকবে না। সত্যি সত্যি বাড়ি চলে যাবে।
চলবে
শানজানা আলম