একটি নির্জন প্রহর চাই ৫২ +৫৩

0
1242

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
৫২+৫৩
#WriterঃMousumi_Akter.

বাইরে ঝড়ো হাওয়া, হিম বাতাস,ঝুম বৃষ্টি, বিদ্যুৎ-এর ঝলকানি,মেঘের গর্জন,শরীরে শীতল অনুভূতি সাথে প্রিয় মানুষটার আদুরে সঙ্গ;সব মিলিয়ে দারুণ এক অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে হৃদয়ে।এই দারুণ আবহাওয়ায় মনে হচ্ছে জীবনের শ্রেষ্ঠ ভালো লাগাময় অনুভূতিটুকু হৃদয়ে দোলা দিচ্ছে।আকাশের মেঘ বুঝি প্রেমবর্ষণের জন্য আজ ঝরছে।বৃষ্টির সাথে প্রেমের নিশ্চয়ই কোনো কানেকশন আছে।শীতল হাওয়ার সাথেও রোমাঞ্চকর অনুভূতিরও নিশ্চয়ই কোনো যোগসূত্র আছে।তা না হলে বৃষ্টি এলে প্রিয় মানুষের সঙ্গ কেন এত বেশি ভালো লাগে,শীতল হাওয়ায় কেন প্রিয় মানুষের আত্মার সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে?

নিচ তলায় বাড়িওয়ালা খুব জোরে গান ছেড়েছেন “আমারও পরাণও যাহা চায়, তুমি তাই তুমি তাই গো।”
গানের সুরে মন মাতোয়ারা করে তুলছে।নিচে কামিনী ফুলের মিষ্টি সুবাস নাকে খুশবু ছড়াচ্ছে।শ্যামসুন্দর মানুষটা আমাকে জড়িয়ে ধরে আদুরে আবদার করেই যাচ্ছে।সেই তখন থেকে কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আর আমার সাথে বৃষ্টি দেখছে।তাকে বাঁধা দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না।বরং আজ একটু বেশি ভালো লাগছে।তার প্রেম,তার ভালবাসা, তার আদুরে স্পর্শ সবই ভীষণ ভালো লাগে আমার।বেশ কিছুক্ষণ পরে আবারও দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে বললেন, ‘বারবার আমিই তোমার কাছে আসি।তুমি আসো না কেন হুম?কখনো নিজে থেকে আমাকে কিস করোনি।আমার বার্থডেতে গিফট হিসাবে কিস চেয়েছিলাম।কী বলেছিলে,পরীক্ষার পরে।এখম তো পরীক্ষাও শেষ,ওয়েদারটাও উস্কানিমূলক। তাই গিফটটা আজই চাই।’

সত্যি তো সেদিন লজ্জা পেয়ে বলেছিলাম পরীক্ষা শেষ হোক।আজ কী বলব!নিজে থেকে কীভাবে কিস করব! মিননিনে কন্ঠে বললাম,
‘আপনি না সিক আজ,এসব কী কথা?’

‘ আজ আমি সিক, তুমি গিফট দিলে মনে হচ্ছে সুস্থ হয়ে যাব।বউয়ের আদরের উপর আর কোনো মেডিসিন নেই।’

উনি আমাকে এবার উনার দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁট এগিয়ে বললেন,
‘গিভ মি। ‘

হঠাৎ কী ভেবে যেন দারুণ লজ্জা লাগছে।কীভাবে চুমু দিব?।উনি চুমুর কথা বলছেন!লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছি আমি।একদমই অসম্ভব ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে।তাকে ধাক্কা দিয়ে বেলকনির দরজা খুলে বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়ালাম।এলোমেলো বাতাসে সামনের চুল উড়ছে।বেলকনিতে আঁচড়ে পড়া বৃষ্টি সমস্ত আমার গায়ে এসে লাগছে।মুহূর্তের মাঝে খানিকটা ভিজে গেলাম।কেন যেন বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করছে,মন খুলে নাচতে ইচ্ছে করছে।ভীষণ ভালো লাগছে সব কিছু।পিছন ফিরে উনার দিকে তাকালাম।ইশ!কী সুন্দর দেখাচ্ছে উনাকে!এই যে ঢেলাঢালা সাদা গেঞ্জি,কালো ট্রাউজার,মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি,কী সুন্দর দেখাচ্ছে উনাকে!উনি লাজুক হেসে নিচের ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িতে হাত বুলোচ্ছেন আর গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।এই চাহনি আমার সব কিছু এলোমেলো করে দেয়।মানুষ এতটাও ফিট হয়! সবদিক থেকে পরিপূর্ণ। আমি লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে আবারও বাইরে তাকালাম।
উনি আমাকে ডাকলেন, ‘সারাহ ভিজলে কিন্তু ঠান্ডা লাগবে। ‘

‘লাগুক।তবুও ভিজব আমি।’

‘এইভাবে কিন্তু আমার থেকে পালাতে পারবে না আজ।স্বামীগত অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করতে পারবে না।’

‘পালাচ্ছি না তো,আপনিও আসুন, একসাথে ভিজি।’

‘আমি গেলে কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।কিছু করে ফেলব কিন্তু,অনর্থক হয়ে যাবে।’

‘আচ্ছা, আপনাকে তাহলে আসতে হবে না,অনর্থকও করতে হবে না। আপনি অসুস্থ ভিজলে আপনার ঠান্ডা লেগে যাবে।’

‘তুমি না এলে কিন্তু আমাকে যেতে হবে।আর গেলে বুঝতেই পারছ কী হতে পারে।’

‘বারবার কীসের ভ**য় দেখাচ্ছেন?আমি কোনো ভ**য় পাওয়া মেয়ে নই।’

‘তাই না?’

‘হুম তাই।’

‘ওকে,কাম।’

এরই মাঝে বিদ্যুৎ চলে গেল।রুম অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে। আকাশে বিদ্যুৎ-এর ঝলকানিতে দেখা যাচ্ছে সুদর্শন এক পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে রুমের মধ্য।
উনি ডাকলেন,’ সারাহ রুমে এসে লাইট অন করো।’

‘কেন,ভ**য় পাচ্ছেন?’

‘পাচ্ছি,বেলকনিতে প**রি দাঁড়িয়ে আছে।অনেক দিনের শখ প**রির সাথে রোমান্স করার।’

‘মনে হচ্ছে আগে করেননি?’

‘কথা বলে সময় নষ্ট করছ?রুমে এসো কুইক।না হলে আমিই আসছি।’

‘আসছি আমি।’

অন্ধকারে পা টিপে টিপে রুমে প্রবেশ করতেই উনি আমায় ধরে ফেললেন।অন্ধকারে উনাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না তবে বাইরের ল্যাম্পপোস্টের আলোয় উনার মুখ দেখা যাচ্ছে।
কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন, ‘এত পালাচ্ছ কেন?দাও এবার।’

‘লজ্জা করছে আমার।’

‘কীসের লজ্জা?’

‘জানি না।’

‘এসব লজ্জার কথা বলে আজ আর পার পাবে না।নিড এ কিস।’

‘আমি পারি না এসব।’

‘শিখিয়ে দিচ্ছি আমি।’

‘না শেখাতে হবে না।’

‘তাহলে তুমি আমায় শিখাও।’

‘তাও পারব না আমি,কিছুই পারব না।’

‘এভাবে পারব না,আর পারি না বলে বলে আমায় ফাঁকি দিচ্ছ তুমি।আজ পারতেই হবে তোমাকে।’

‘ছাড়ুন আমায়, লজ্জা পাচ্ছি আমি।’

উনি আমার ডান গালে হাত রেখে বাম গালে চুমু দিয়ে বললেন, ‘এভাবে কিস দিতে হয়,আমি যেভাবে দিলাম।তুমি চাইলে একটু ভিন্ন ভাবে দিতে পারো।হিন্দি মুভির মতো।’

‘ছিঃ! আমি পারব না।’

উনি আমায় ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘ওকে লাগবে না।বুঝেছি ভালোবাসো না আমায়।নিশ্চয়ই অন্য কারো সাথে কমিটেড তুমি।নিশ্চয়ই কাউকে কথা দিয়ে রেখেছ বরকে কোনদিন চুমু টুমু দিবে না।ফাইন দিতে হবে না।’

‘ছিঃ!কাকে কথা দিব!এমন কেউ নেই।’

‘আছে কি না নেই আই ডোন্ট নো।গুড নাইট।’

‘রাগ করলেন?’

‘আমার রাগ এখনও দেখোনি তুমি তাই জানো না।এইবার বুঝবে রাগ।’

উনি বেশ রাগ দেখিয়েই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন।পুরুষ মানুষ কি ননসেন্স না কি?এরা বোঝে না কেন, মেয়েদের সব কিছুই ভালো লাগে কিন্তু লজ্জায় প্রকাশ করতে পারে না।এসব নিয়েও মানুষ রাগ করে!কী করব এখন?রাগ করে থাকলে তো আমারই ভালো লাগবে না।চোখ-মুখ বন্ধ করে একটা চুমু দিয়ে দিব ব্যাস।কীভাবে রাগ ভাঙাতে হয় সারাহ ভালো করেই জানে।সারাহ এমন ম্যাজিক জানে রাগ টাগ সব ফুস হয়ে রোমান্টিক হয়ে যাবে এক্ষুনি।

বেলকনির দরজা বন্ধ করে চেঞ্জ করে একটা হালকা গোলাপি নাইটি পরে ফোনের টর্চ অন করে উনার পাশে শুয়ে পড়লাম।আজ প্রথমবার নাইটি পরলাম।এর আগে কখনোই পরা হয়নি উনার সামনে।মানুষটা কী পরিমান রা*গ করেছে!আমার যে ইচ্ছা নেই চুমু দেওয়ার তা নয়;কিন্তু লজ্জা লাগছে এটাই সমস্যা।উনি তো এদিক তাকাচ্ছেনই না। মনে হচ্ছে খুবই রেগে গিয়েছেন।রা’গটা ভাঙাতেই হবে।আস্তে করে বুকের উপর হাত রাখলাম। হাত রাখতেই উনি হাতটা সরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘কী হচ্ছে এসব?’

‘কী হবে?ওদিকে ঘুরে শুয়ে আছেন কেন?আমার মুখ দেখতে কি খুব বিশ্রী?

‘একদম ন্যাকামি করবে না।কথা বলতে ভালো লাগছে না, ঘুমোব।’

‘দেখুন কী পরেছি।’

‘যা ইচ্ছা পরো।’

‘হট ড্রেস পরেছি।’

‘ন্যাকেড থাকলেও দেখার ইচ্ছা নেই।’

‘কী অসভ্য কথা বলেন আপনি!ভারি অসভ্য তো।’

‘হু।’

বুঝতে পারলাম মুখে কিছু বলে রাগ কমবে না।ভিন্ন কিছু করতে হবে।উনার পরনের ঢিলাঢালা গেঞ্জির ভেতর কিছু না বলেই ঢুকে গেলাম।উনি বলে উঠলেন,আরে আরে কী করছ? বাকিটুকু বলার আগেই উনার দুই গালে চুম্বনের আদর এঁকে দিলাম।ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে কোনো কথা বলারই সুযোগ দিলাম না।সব লজ্জা অতিক্রম করে গেলাম।পুরুষ মানুষ বোধহয় আদর আর ভালোবাসা পেলে সব রাগ ভুলে যায়।এরা নারীর ভালোবাসাতেই তুষ্ট।শুদ্ধ ভালবাসা দিয়ে পুরুষ মানুষকে বশ করে রাখা যায়।নিমিষেই সব রাগ ভুলে জড়িয়ে নিলেন উনার সাথে।সহস্র চুম্বনের আদরে ভরিয়ে দিতে দিতে বললেন,

‘আমিতো রা’গ ই করিনি।এটাতো একটা ট্রাপ ছিল।আই লাভ ইউ বউ।’

মনে মনে বললাম, ‘সম্পর্ক গাঢ় করতে মাঝে মাঝে এমন ট্রাপও বেষ্ট।’

আরও একটি রাত ভালোবাসাময় মধুচন্দ্রিমার সাক্ষী হলো।

কেটে গেল আরও কিছুদিন।উনিও এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।শহরে শীত চলে এসেছে।সারাদিন কেমন ধোঁয়া ওড়া কুয়াশার মতো ছিল।আজ একটুও রোদ ওঠেনি।দু’জন মানুষের সংসার, উনি ইদানিং কী করেন তা জানি না।বেশিরভাগ সময়ই ব্যস্ত থাকেন।কিন্তু কেন?কী করেন উনি!প্রায়শই গভীর রাতে বাসায় ফেরেন আর বলেন কাজ ছিল।কী কাজ থাকে উনার!হয়তো সত্যি কাজ থাকে।না থাকলে কেন বলবেন যে কাজ ছিল।উনি তো মিথ্যা বলা মানুষ নন।বিকাল বেলা মনটা কেমন বিষন্ন লাগছে।ছাদ থেকে জামা,কাপড় তুলে তন্ময়ের বাসার দিকে রওনা দিলাম।ছোঁয়ার সাথে গিয়ে একটু আড্ডা দিলে ভালো লাগবে।রাস্তার মাঝে তন্ময়ের সাথে দেখা হয়ে গেল।তন্ময় বাজার করছে।আমাকে দেখেই হাত ইশারা করল।তন্ময়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম, ‘কী বাজার করছিস নতুন বর?’

‘তোর বান্ধবী তো আমাকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছে সারাহ।’

‘কেন?’

‘মাছ,মাংস এসব নাকি সে খায় না।মোট কথা তার এসব ভালো লাগে না।আলু ভর্তা,ডিম,ডাল এসব নাকি তার খুব প্রিয়।’

‘তাহলে তো ভালো বউ পেয়েছিস তন্ময়, তোর খরচ কম হবে।’

‘সে ভাবে যে তার চালাকি আমি বুঝতে পারি না।’

‘কীসের চালাকি?’

‘সে যে আমার বেকার জীবনে আমাকে বেশি প্রেসার দিতে চায় না বলে এসব বলে।আমি কি তা বুঝি না।ছোঁয়ার লাইফস্টাইল কী আমি জানতাম।মেয়েটার কাছে ভালোবাসার দিক থেকে আমি হেরে যাচ্ছি সারাহ।ও এমন ভাবে থাকে আমার সাথে,এমন ব্যবহার করে কোনভাবেই যে ও খাওয়া বা বিলাসিতায় কষ্ট পাচ্ছে সেটা বুঝতে দিতে চায় না।বরং আমার চেয়ে বেশি হিসাবি ও।ওর ধারণা আমি বেশি খরচ করি।আমাদের এখন হিসাব করে চলা উচিত।এখন আমাদের এত বিলাসিতা মানায় না।এসবের জন্য নাকি সময় পড়ে আছে।’

‘দেখছিস আমার বান্ধবী কত ভালো?এখনি একটা ট্রিট দে আমাকে।’

‘কী খাবি বল?এখনি খাওয়াচ্ছি।’

‘আইসক্রিম খাব।’

‘তুই আর তোর বান্ধবী কি আইসক্রিম ছাড়া আর কিছু খাইস না?’

‘জামাই-এর মাথা খাওয়া বাকি আছে।’

‘হ্যাঁ ওটাই বাকি আছে।’

‘বাজার করা শেষ তন্ময়?’

‘নাহ চিংড়ি কিনব।তুই কিন্তু খেয়ে যাবি।’

‘ওয়াও! আই লাভ চিংড়ি।’

‘শোন ছোঁয়া চিংড়ি খেতে খুব পছন্দ করে।বিয়ের পর তো ওকে চিংড়ি খাওয়াতে পারিনি।প্রচুর দাম বলে ছোঁয়া একদম নিষেধ করেছে কিনতে।তোর বান্ধবীকে চিংড়ি খাওয়াব বলে তোর বান্ধবীর গলা জড়িয়ে ধরে খুব অনুনয় করে বললাম “জানো ছোঁয়া, আমার খুব চিংড়ি খেতে ইচ্ছে করছে। কী করি বলো তো প্রচুর দাম।”
আমার খেতে ইচ্ছা করছে এই কথা শুনে ছোঁয়ার হৃদয় যেন খুব ব্যাথিত হলো।দ্রুত ওর কাছ থেকে ৫০০ টাকা বের করে দিয়ে বলল,’তুমি এখনি বাজারে যাও আর বড়ো দেখে চারটা চিংড়ি কিনবা সাথে একটা নারকেল কিনবা।ইশ!তোমার খেতে ইচ্ছা করছে আমি বুঝতেই পারিনি।তুমি না খাওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না।’অথচ সে জানে না সে না খেলে আমার শান্তি হবে না।তাকে খাওয়ানোর জন্যই এত অভিনয়।সে নিজেকে খুব চালাক ভাবে।অথচ তাকে বোকা বানাচ্ছি।’

‘কী অদ্ভুত তাই না তন্ময়? ছোঁয়া বাসায় বসে ভাবছে তুই কখন বাসায় ফিরবি আর ও রান্না করে তোকে খাওয়াবে।আর তুই ভাবছিস কখন বাসায় যাবি আর ছোঁয়া রান্না করে নিজে খাবে।দুজনের চাওয়া একই।ভালবাসা কী সুন্দর রে তন্ময়!’

‘আমি সব সময় জানতাম ছোঁয়া একটা লক্ষ্মী মেয়ে।আমাকে একবার ভালোবাসলে আমার সব অন্যরকম হয়ে যাবে।’

‘তন্ময় কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো চলতে?’

‘আরে না, কী সমস্যা হবে?সমস্যা এইটুকুই ঘর,ছোটো,ছোঁয়াকে প্রচুর বিলাসিতা দিতে পারছি না এইটুকুই।এক্সট্রা দুইটা টিউশনি নিয়েছি।অভাব তো একটু থাকবেই,তাই না?’

‘একদিন তোরা প্রচুর বড়োলোক হবি, বুঝলি?’

‘বড়োলোক না হলেও চলবে,তবে ছোঁয়াকে ভালো রাখার মতো টাকা হলেই হবে।’

‘আন্টি কি জানেন কিছু?’

‘হুম জানে।ছোঁয়ার কথা মা আগেই জানত।মা অনেক খুশি এ বিষয়ে।’

‘যাক,আলহামদুলিল্লাহ।’

তন্ময়ের বাসায় ঢুকেই দেখি ছোঁয়া ঘরের নিচে মাটির চুলায় ফুঁ দিয়ে দিয়ে আগুন জ্বালাচ্ছে।প্রচন্ড ধোঁয়া হচ্ছে।ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে ফুঁক দিয়ে যাচ্ছে উনুনের মুখে।ছোট্ট একটা হাড়ি চুলার উপরে বসানো আছে।তন্ময় এগিয়ে গিয়ে নিজে বসে পড়ল।ছোঁয়ার সাথে নিজেও ফুঁ দিচ্ছে।কী অপূর্ব সুন্দর সেই দৃশ্য! দুজনেই একসাথে ফুঁ দিচ্ছে।
এরই মাঝে আগুন জ্বলে উঠল।দুজনেই গাল ভরে হেসে উঠল।কী সুন্দর সেই হাসি!মুগ্ধ হাসিতে দুটো সুন্দর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।ছোঁয়া হাসতে হাসতে তন্ময়ের গালে চুমু দিল।তন্ময় ছোঁয়ার এলোমেলো চুলগুলো এক জায়গায় করে হাত খোপা করে দিয়ে আমাকে দেখাল।

ছোঁয়া আমার দিকে তাকিয়েই লাফিয়ে উঠে বলল, সারাহ বেবি তুই!আমাকে বললি না কেন যে,তুই আসবি?’

‘তোর বাসায় যে ভালো-মন্দ রান্না হচ্ছে আমাকে বলিসনি কেন?’

‘আরে মাংস টাংস না। তন্ময়ের চিংড়ি খেতে ইচ্ছে করছে।’

‘আচ্ছা বুঝছি।প্রব্লেম নেই আমাকে দাওয়াত দিতে ভুললেও আমি আসতে ভুল করব, সেটা কি হয় বেবি?’

‘এই জন্যই তো তুমি আমার বেবি।’

তন্ময় বলল, ‘আমি টিউশনিতে যাচ্ছি, সারাহ, তোরা গল্প কর।’

‘ফিরবি কখন?’

‘আজ একটা টিউশন আছে।ফিরে আসব সন্ধ্যায়।’

ছোঁয়া বলল, ‘তন্ময় আমি একটা টিউশনি করাতে চাই।’

‘টিউশনি করাতে চাই মানে,কীসের অভাবে?আমি টিউশনি দুইটা বেশি নিয়েছি কি তোমাকে দিয়ে টিউশনি করিয়ে সংসার চালাতে?ছোঁয়া এই সব চলবে না কিন্তু।আমি যেভাবেই হোক তোমার চাহিদা পূরণ করব।আর ২-৩ টা বছর কষ্ট করো।তোমার জামাই-এর ভালো জব হয়ে যাবে।রাণী করে রাখব।’

‘উহু,এসব ভাবিইনি আমি।একা ভালো লাগে না বাসায়।’

‘তাহলে বেবি নিয়ে নাও একটা।আমিতো বলছি না যে,আমাদের মাত্রই বিয়ে হয়েছে এখনি বেবি নিতে হবে না।রিযিকের মালিক আল্লাহ।আমাদের একটা বেবি থাকলেও চালাতে পারব না,এমন তো নয়।’

‘এই বয়সে বিয়ে করেছ আবার এই বয়সেই বাবা হওয়ার শখ!এই বয়স কত তোমার?’

‘বাবা হওয়ার সাথে বয়সের সম্পর্ক নেই।’

‘দেরি আছে ওসবের,বুঝলে?যাও তুমি লেট হয়ে যাচ্ছে।’

‘যাচ্ছি বাট যাও মাছে কেটে দিয়ে যায়।’

‘আমি করে নিব।’

‘তুমি কি জীবনে মাছ কেটেছ?এসব তুমি পারবে না। আমার কাছে দাও।’

‘তুমি তো আমাকে শিখতেই দিচ্ছ না।ঘর মোছা,সবজি কাটা,কাপড় ধোয়া সবই তো তুমিই করো।’

‘না শিখলেও চলবে।আমি সারাজীবন এসব করে দিতে পারব।’

তন্ময় মাছ আর বটি নিয়ে বসে গেল।আমি মুখে হাত দিয়ে বসে একটা হাই তুলে বললাম, ‘আমার মতো সিঙ্গেলের সামনে এসব কী শুরু করলি তোরা?এমন প্রেম বাপের জন্মে দেখিনি।’

তন্ময় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুই সিঙ্গেল?রোশান স্যার কি জানে?

‘রোশান ফোশানকে আমি চিনি না?হুজ দ্যা পারসন?’

‘ওহ আচ্ছা, চিনিস না!স্যার কে জানাতে হচ্ছে বিষয়টা।’

‘আমি বলব তুই বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলেছিস আমার নামে।’

‘মেয়ে মানুষের মাথায় আল্লাহ এত প্যাঁচ দিছে!’

আমি আর ছোঁয়া দুজনেই হাসছি খুব।তন্ময় মাছ ধুয়ে বেরিয়ে পড়ল।ছোঁয়া পিছু পিছু এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘আজ কিন্তু তাড়াতাড়ি ফিরবে তন্ময়।’

তন্ময়,ছোঁয়ার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বলল, ‘দ্রুত ফিরে আসব।কী হয়েছে,মন খারাপ কেন?’

‘মায়ের কাছে ফোন দিয়েছিলাম।’

‘তারপর?

‘আমার ভয়েস শুনে কেটে দিয়েছে।’

‘মন খারাপ করো না।রাগটা মিটে যাক।ওঁরা নিজেরাই কথা বলবে।’

‘মা-বাবা কি কোনদিন আর আমার সাথে কথা বলবে না?’

‘আবার মন খারাপ করে।মেনে নিবে, আর সে ব্যবস্থা আমিই করব।’

তন্ময় চলে গেলে ছোঁয়াকে বললাম, ‘আচ্ছা বেবি তোর কি খারাপ লাগে কখনো?’

‘কী নিয়ে?’

‘এই যে আগে অনেক বিলাসবহুল জীবন ছিল।’

‘আমার তো মনে হয় আমি আগের থেকে বেশি বিলাসবহুল জীবনযাপন করছি।নিজেকে কোনো রাজ্যর রাণী মনে হয়।আর তন্ময় অনেক কেয়ারিং।এত কেয়ারিং মানুষ জীবনে দেখিনি আমি।ও আমাকে এত ভালোবাসে আমার মনে হয় জীবনের শুরুটা ওর সাথে না হয়েই অনেক কিছু মিস করেছি।ভালো থাকা-সুখে থাকা অনেক সহজ।শুধু চাহিদা সাধ্যের মধ্যে রাখতে হয়।’

‘তোদের দেখেও ভালো লাগছে সত্যি।আজ যায় তাহলে।’

‘কই যাবি?না খেয়ে কোথাও যাওয়া চলবে না।’

‘বলে আসিনি।এসে না পেলে ভাববে কই হারাই গেছি।সে তো বউ পা-গ* ল লোক।’

‘সব ছেলেই কি এমন?’

‘হয়তো এমনই, আবার সবাই না ও হতে পারে। আচ্ছা,আমি আসি বেবি আজ।’

‘নো বেবি।কোথাও যাওয়া হবে না।’

‘অন্য একদিন খাব।সত্যি,বলে আসিনি আমি।’

ছোঁয়ার আজ কত পরিবর্তন!কলেজে গাড়িতে করে চলাফেরা করা মেয়েটা আজ উনুনে ভাত রান্না করেও কত সুখী।ভালবাসা সত্যি সুন্দর।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here