একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব ৩

0
4329

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
৩.
#Writer_Mousumi_Akter

জানালায় লেগে থাকা থু’থুর দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবছি সব কি আজ আমার সাথেই হওয়ার ছিলো।এটাও কি আমার কপালের লিখন ছিলো।মানুষের কপালে এসব ও লেখা থাকে।যে লজ্জা আজ পেলাম জীবনের ইতিহাসে তা স্মরনীয় হয়ে থাকবে।এই জীবনে মনে হয়না আর রোশান স্যারের দিকে লজ্জায় মুখ তুলে তাকাতে পারব।ইয়া মাবুদ হয় আমাকে আকাশে তুলে নাও নয় মাটি ফাঁকা করে দাও নিচে চলে যায়।এই মুখ আর কাউকে দেখাতে চাইনা।উনি আমাকে কি পরিমান লেইম ভাবছেন তার হিসাব নেই।

উনার দিকে পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি চশমা চোখে দিয়েই ঘুমোচ্ছেন।খুলতে মনে নেই নাকি রাত কানা উনি।বাবা কিনা শেষে একজন রাত কানার সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো।ভালো ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছি,উনি বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছেন কোনো সাড়া শব্দ নেই।আমি বেশ অনেক্ষণ ধরে ঘুমোনোর চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না।গরমে আমার একটা সমস্যা আছে সেটা হলো পায়ের তালু জ্বলা পোড়া।ভয়ানক ভাবে পায়ের তালু জ্বলে -পোড়ে যার জন্য চাইলেই পা এক জায়গা স্হির রাখতে পারিনা।আজ ও তাই হচ্ছে।পা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।পা একবার খাটের এদিকে ফেলছি তো আরেকবার ওদিকে ফেলছি।জার জন্য খাটে কেমন অদ্ভুত একটা শব্দ হচ্ছে।এটা জোরে জোরে পা এদিক -সেদিক ফেলার জন্যই হচ্ছে।কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর হঠাত পায়ে কারো হাতের শীতল স্পর্শে অন্তরআত্মা কেঁপে উঠল আমার।আচমকা কেঁপে উঠে মাথা টা একটু তুলে দেখি রোশান স্যার আমার দু’পা ওনার দু’হাত দিয়ে চেপে ধরেছেন।ডিম লাইটের গোলাপি রঙা আভায় উনার মুখের অদল স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।কি অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে উনার মুখ।এইজন্যই কি মেয়েরা উনাকে দেখে ফিট হয়।গায়ের রং হালকা চাপা হলেও উনার সৌন্দর্যে বিন্দুমাত্র ঘাটতি ফেলতে পারেনি।খাটের সাথে ঘেষে ঝুঁকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।দৃষ্টিতে কোনো খাঁদ নেই,একটুও এদিক সেদিক নেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আস্তে করে উনার আঙুল এসে পায়ের তালু স্পর্শ করলো।এমনিতে পায়ের তালুতে আমার প্রচন্ড সুরসুরি। উনার মোলায়েম হাতের স্পর্শ পেতেই আমি লাফিয়ে উঠলাম যার জন্য খাটে এবার শব্দের মাত্রা দ্বীগুন বেড়ে গেলো।খাটে শব্দের মাত্রা বেড়ে যেতেই রোশান স্যার চট জলদি উনার বিশাল দেহ নিয়ে খাটের উপর এসে আমার উপর ঝুঁকে পড়ে উনার হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলেন।উনার এক হাত আমার বাম সাইডে রেখেছেন যা কোমর ছুইছুই অবস্থা প্রায় অন্য হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরেছেন।সাথে সাথেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো, চোখের মনিদ্বয় ঘুরছে।হৃদপিন্ড থর থর করে কাঁপছে।জীবনে প্রথম কোনো পুরুষ এভাবে আমার এত কাছাকাছি আমার উপর ঝুঁকে রয়েছে।মুহুর্তের মাঝেই আমার সন্দেহভাজন মনে একটাই প্রশ্ন উঁকি দিলো বাই এনি চান্স উনি কি ফুলসজ্জা করতে চাইছেন আমার সাথে?বিবাহিত বান্ধবীদের বাসর রাতের গল্প শুনেছি।ইয়া মাবুদ আমার সাথেও কি এখন আমার বর তাই করবে।উনার সাথে ওইসব ছিঃছি আমি ভাবতেই পারছিনা।বান্ধবীদের বাসর ঘরের রোমাঞ্চকর গল্প শুনে লজ্জায় মিহিয়ে গিয়েছি আর জিজ্ঞেস করেছি তারপর কি হলো।আমার কাছে জিজ্ঞেস করলে কি বলব যে আমি বায়ুদূষণ করেছিলাম।

দুনিয়ার উদ্ভট চিন্তা থেকে বের হয়ে বললাম,

‘কি ব্যাপার আপনি এভাবে ঝুঁকে এসেছেন কেনো?কন্ট্রোল করতে পারছেন না তাইনা?আর আমাকে অসভ্য মেয়ে বলেন।এখন নিজেই অসভ্যতা করতে চলে এসেছেন।’

উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

‘কন্ট্রোল করতে পারছি না মানে কি?কি মিন করছো তুমি?’

‘মনে হচ্ছে ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেন না।অসভ্যতা করবেন না একদম একটুও আমার সাথে।’

‘অসভ্যতা না করার পরেও তো তুমি আমার কাঁধে সেই অপবাদ দিচ্ছো মানে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছো।এতটুকু চেষ্টা লেখাপড়ার পেছনে দিলে অন্তত ৩-৪ টা সাব্জেক্ট এ ফেল থাকত না আর ইম্প্রুভমেন্ট ও দেওয়া লাগত না।’

‘আপনার কাঁধে দোষ চাপাচ্ছি মানে? শুনুন একটুও আমাকে ফেল করা নিয়ে অপমান করবেন না।ফার্স্ট ইয়ারে পরীক্ষা শুরু হলে আমার হঠাত ডায়রিয়া একদম পানির মতো মতো হচ্ছিলো সেই সাথে চিকুনগুনিয়া হয়েছিলো।’

‘সিরিয়াসলি দুনিয়ার যত্তসব অদ্ভুত জিনিস তোমার সাথেই হয়।যেভাবে খাটে শব্দ করছিলে তাতে পাশের রুম থেকে ওশান আর তরী উল্টাপাল্টা ভাবতে বাধ্য হবে।’

‘একটা রোগ কে আপনি অদ্ভুত বলছেন আশ্চর্য। কি উল্টাপাল্টা ভাববে।সবাই কি আপনার মতো।’

‘মেয়ে মানুষ একটু বেশীই আশ্চর্য হয় একেবারেই হুদাই।লিসেন তরী আর ওষাণ ভাববে আমি সিওর কোনো অসভ্যতাই করছি।যে ভাবে খাটে শব্দ করছো এ শহরের কারো জানতে বাদ থাকবে না আজ রোশান সিদ্দীকীর ফুলসজ্জা।আর একটা সাউন্ড ও যেনো না হয়।’

‘তাহলে কি করব? পায়ের তালু জ্বলে তো।’

‘তুমি কি আসলেই স্টুপিড।এভাবে কেউ বেনারসি গায়ে দিয়ে ঘুমোয়।তাতে যে গরম।’

‘কি করব আমি কেউ আমাকে এই শাড়িটা খুলতে দেয়নি।আর আমিও শাড়ি চেঞ্জ করে পরতে পারি নি।আপনি চলে এসছিলেন।’

‘ওয়াশ রুম ও কি ছিলোনা?’

‘ছিলো বাট আমি শাড়িতে অভ্যস্ত নই।আমি বাসায় টি-শার্ট পরি নাহলে থ্রি পিছ পরি।বাট এখানে সেসব কিছুই নেই।’

‘খুব বেশী প্রব্লেম হলে আমার একটা টি-শার্ট পরে নাও।ওঠো কুইক।’

উনিও উঠে গেলেন আর আমিও উঠলাম।উনি আলমারি থেকে ভাজ করা সাদা ধবধবে একটা টি-শার্ট বের করে আনলেন।আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

‘আমার প্যান্ট তো তোমার হবেনা।তাহলে কি উপায়?জাস্ট এই টি-শার্ট পরবে?’

‘আমি পেটিকোর্ট এর উপর পরে নিবো অসুবিধা নেই।’

‘ওকে ফাইন।গো টু দ্যা ওয়াশরুম।’

টি-শার্ট টা নিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম।শাড়ির পেছনের লাগানো সেফটিন গুলো হাত বাড়িয়ে খোলার চেষ্টা করছি অথচ পারছিনা।চোখে দেখা না গেলে কি খোলা যায়।অনেক চেষ্টার পরে আবার বেরিয়ে এলাম।উনি ডিভানে কপালে হাত ভাজ করে রেখে সুয়ে আছেন।দরজা খোলার শব্দ শুনেই উনি তাকালেন আমার দিকে।বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করলেন,

‘চেঞ্জ করোনি?কোনো সমস্যা।’

‘সেফটিন গুলা খুলতে অসুবিধা হচ্ছে।’

উনি কিছু একটা ভাবলেন আর চট করে উঠে এলেন।আমার কাছে এসে বললেন,

‘ঘোরো আমি হেল্প করছি।নিজেও ঘুমোলে না আর আমাকেও ঘুমোতে দিলেনা।’

আমি পেছন দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম।উনি আস্তে করে সব গুলো সেফটিন খুলে দিলেন।এবার একটু উনাকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কিভাবে দিবো তাও জানা নেই।শাড়িটা চেঞ্জ করে চোখে মুখে পানি দিয়ে টি-শার্ট টা গায়ে দিলাম।আয়নায় নিজেকে দেখে মুগ্ধ হলাম।অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে আমাকে।আমি তো এত সুন্দর নই দেখতে।আগে কখনো এত সুন্দর দেখায় নি আমাকে।আম্মু সব সময় একটা কথা বলত ‘বিয়ে হলে নাকি মেয়েদের সৌন্দর্য বেড়ে যায় বহুগুন।’ আমার ক্ষেত্রেও ও কি তাই হয়েছে।এসব ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে এলাম।শাড়ির আঁচল ওড়নার মতো বুকের উপর দিলাম।উনি খেয়াল করলেন শাড়ির আঁচল ওড়নার মতো জড়িয়েছি।আলমারি থেকে আরেক টা টাওয়াল এনে আমার হাতে দিয়ে বললেন,

‘ এটা গায়ে দাও আর শাড়ি টা রাখো।আর একটুও ডিস্টার্ব করবেনা আমাকে।বন্ধুরা ঠিক ই বলেছিলো বিয়ে করিস নি ভাল আছিস, বিয়ে করা মানেই জীবন টা শ্যাষ।’

‘আমি আপনার কি শেষ করলাম।’

‘এক রাতেই যে অত্যাচার টা করলে, আল্লাহ মালুম বাকি রাত গুলো আমার কিভাবে যাবে।নিজেকেই বলতে ইচ্ছা করছে রেস্ট ইন পিচ রোশান।’

‘সেইম টু ইউ।’

উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন আমার দিকে।আমি উনার কুচকানো ভ্রুর দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘শুনুন আমি আর খাটে ঘুমোবোনা?’

‘তাহলে কোথায় ঘুমোবে বাথরুমে।’

‘না খাটে ঘুমোলে শব্দ হলে আপনি বকবেন।’

‘তাহলে কোথায় ঘুমোতে চাচ্ছো?’

‘ফ্লোরে,কিন্তু ভ’য় করছে।’

‘কিসের ভ’য়’

‘খাটের নিচ থেকে যদি ভূ’ত আসে।’

‘স্ট্রেইঞ্জ। ‘
বলেই উনি ফ্লোরে নিজের বালিশ টা ফেলে সুয়ে পড়লেন অন্য দিকে ঘুরে।
আমি এবার আছি আরো বড় চিন্তায়।এইরে জীবনে তো এসব পেটিকোট পরে ঘুমোনোর অভ্যাস নেই।তাছাড়া আমার ঘুমোনো ও ততটা সুবিধার না।প্লাজু তাই হাঁটুর উপরে উঠে যায় আর এই পেটিকোট এর কি হবে।মান ইজ্জত আর কিছুই থাকবে না আমার।উনি ঘুমিয়ে গেলে আমি উঠে পড়লাম।কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।আস্তে করে ওনার আলমারি খুললাম ওনার কোনো থ্রি-কোয়ার্টার আছে কিনা দেখার জন্য।কিন্তু নেই,যা আছে সব বড় বড় প্যান্ট।এখন কি করব ভেবে ভেবে অস্হির সেই মুহুর্তে চোখে গেলো আরেকটি গুপ্ত জিনিসে।সেটা হলো আন্ডারওয়ার।লজ্জায় চোখ বন্ধ করলাম।এটা দেখলেই আমার লজ্জা করে কেনো তা জানিনা।এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে আমাকে এটাই পরে নিতে হবে নিজের সেফটির জন্য।পেটিকোট দিয়ে বিশ্বাস নেই।নতুন মোড়কে একটা রাখা আছে,এখনো প্যাকেট খোলে নি। বাধ্য হয়ে সেটা পরে নিশ্চিন্তে সুয়ে পড়লাম।

গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে স্বপ্ন দেখছি রোশান স্যার শামুক ভেঙে হাঁসের মতো খাচ্ছেন।দেখেই আমার প্রচন্ড বমি পাচ্ছে।স্বপ্নের মাঝে খানিক টা থুথু ফেললাম।থুথু ফেলার সাথেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো।চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি রোশান স্যার অদ্ভুত এক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।উনার ওই চোখে চোখ রাখতে সাহস ই পাচ্ছিনা।মানে স্বপ্নে ফেলা থুথু সবটা উনার মুখে গিয়ে পড়েছে।এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে অঘটনে নোবেল পাওয়ার যোগ্যতা রাখি আমি।

চলবে?..

(অবশ্যই কেমন লেগেছে জানাবেন।পাঠকের মন্তব্য লেখিকার শক্তি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here