একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব ১৬+১৭

0
3595

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
১৬+১৭
#writer_Mousumi_Akter

ঘড়িতে সময় রাত দশ টা বেজে পনেরো মিনিট।ডিনার শেষ করে ডায়নিং এ বসে আছি।আম্মু আমার কানের কাছে এসে ফিস ফিস করে বলল,
‘তুমি এসব কী পোশাক পরেছো সারাহ?এখন তোমার বিয়ে হয়েছে মা।জামাই একটা সম্মানজনক পেশায় আছে, তোমার এসব পোশাক দেখলে মানুষ জামাই কে কথা শোনাবে।আর এসব পরোনা মা।’
‘আম্মুউউ তুমি জানোনা আমি কম্ফোর্ট ফিল করিনা অন্য কিছুতে?’
‘করতে হবে মা,মানিয়ে নিতে হবে সব।’
রোশান স্যার আমার দুঃখী দুঃখী মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘আম্মা সমস্যা নেই।ওর যা ভাল লাগে পরুক।’
‘না বাবা তুমি এসব প্রশ্রয় দিও না।মানুষ তোমাকেই কথা শোনাবে।’
‘আম্মা সময় হোক,ও নিজেই এসব ত্যাগ করবে।নিজের মন থেকে।জোর করার দরকার নেই। ‘
আমিও তৎক্ষনাৎ বলে উঠলাম,
‘আম্মু তোমার জামাই যদি আমাকে এসব নিয়ে প্রেশার করে তাহলে আমি কার্ফু জারি করব।সমস্ত পুরুষদের বিরুদ্ধে কার্ফু জারি করব।তাকেও দাঁড়ি রাখতে হবে,পায়জামা-পাঞ্জাবি , টুপি এসব পরিধান করতে হবে।তবেই আমাকে নিষেধ করতে হবে।’
‘উফ! এই মেয়েটা কবে বুঝবে!সব সময় এত কথা বলতে নেই।স্বামীর সাথে এসব নিয়ে ঝ*গ*ড়া করতে নেই।আমার মেয়ে কি সব থেকে ঝ*গ*ড়ু*টে বউ হবে শ্বশুরবাড়িতে।মানুষ আমাকে বলবে আমি মেয়েকে কোনো শিক্ষা দিতে পারিনি?’
‘আম্মু উচিত কথা শুনতে খারাপ শোনা যায় বুঝলে?আর তাছাড়া মানুষ তো বলবেই।মানুষের কাজ বলাবলি।’
‘তবুও আমাকে মানুষের কথার ও গুরুত্ব দিতে হবে।মানুষ কি নিয়ে সনালোচনা করছে,সেটা ভাল না খারাপ,সেটা নিয়েও ভাবতে হবে।’
‘উঁহু আম্মু!আমার কথা সব যদি আমি একাই ভাবব।তাহলে মানুষ কি ভাববে বলোতো।ভাবার জন্য পাড়াপ্রতিবেশিরা আছেতে।তারা ভাববে। একদম বিনাবেতনের কর্মচারী।আমাদের বিষয়ে এমন অনেক কথা আছে যা আমরা জানিনা অথচ মানুষ জানে।ওয়াও!আমি মুগ্ধ আম্মু তাদের মানবতা দেখে।মানবতা আজও বেঁচে আছে।নাহলে এইভাবে কেউ কাউকে নিয়ে ভাবতে পারে।’
‘সারাহ!আস্তে বলো।এইভাবে গড়গড় করে কথা বললে জামাই কি ভাববে বলোতো!ভাববে একটা ঝ*গ*ড়ুটে মেয়ে বিয়ে করেছে।’
‘যা সত্যি তাই ভাববে আম্মু।আমি কোনো শান্ত-শিষ্ট নম্রভদ্র মেয়ে নই।আমি উচিৎ কথা বলতে জানি আর বলব।উচিৎ কথা বলাকে যদি বেয়াদব বলা হয় তাহলে হ্যাঁ তোমার মেয়ের জামাই এর কপাল খারাপ।সে একটা বেয়াদব বউ পেয়েছে।’
‘আল্লাহ এই মেয়ে নিয়ে কি করি।আজ এত চেতে আছো কেনো তুমি?’
‘চেতে থাকব না কেনো?তোমার বান্ধবী মানে মফিজ কাকার বউ কি বলেছে জানো?’
‘আমার বান্ধবী কে?সে আমার বন্ধবী হলো কিভাবে?’
‘তোমার বেষ্ট ফ্রেন্ড,শুধু বন্ধবী নয়।গলায় গলায় পিরিত তোমার।এটা যশোরের সব মানুষ ই জানে আম্মু।’
‘আচ্ছা মানলাম আমার বান্ধবী,কি বলেছে।’
‘আমার বর নাকি বুড়ো।’
সাথে সাথে রোশান স্যার আমার দিকে তাকালেন।আম্মু বিস্মিত হয়ে তাকাল আমার দিকে।আমি কি কথাটা জোরে বলে ভুল করে ফেললাম।আম্মু যেনো ভীষণ রকমের লজ্জা পেয়েছে।রোশান স্যার ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে আছেন।উনার কি প্রেজটিজ এ লাগল।
আম্মু আমাকে ধ*ম*ক দিয়ে বলল,
‘যাও ঘুমোতে যাও।’

রোহান তার বাবার সাথে কথা বলার জন্য বায়না ধরেছে।তরী আপুর নাম্বার থেকে বারবার কল দেওয়ার চেষ্টা করেই যাচ্ছে অথচ বিজি দেখাচ্ছে।বুঝতে বাকি রইল না ছোঁয়ার সাথেই কথা বলছে।তরী ও বুঝতে পারছে ওশান ছোঁয়ার সাথেই কথা বলছে।তরীর চোখ পানিতে ছলছল করছে।আপু আর দুলাভাই খুব খুঁনসুটি করছে।তরী অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে তাদেরকে।কষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক বিষয়। কে না চায় তার নিজের স্বামীর সাথে এমন সুন্দর সম্পর্কে থাকতে!
আমার আপু সেলাই এর কাজ জানে।সাথে একটা পার্লার ও আছে।তরীর মন অন্যদিকে ঘোরাতে আপুকে বললাম,
‘আপু দশ টা থ্রি পিছ তরীর গায়ের মাপ নিয়ে বানিয়ে দাও।আমরা যে দু’দিন থাকব তোমার আর কোনো কাজ নেই তরীর জন্য থ্রি পিছ বানাও।আমি তোমাকে পারিশ্রমিক দিয়ে দিবো।’
আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘খুব টাকা হয়েছে তাইনা?তুই আমার কেউ না।তরী আমার বোন।ওর জন্য আমি সব করতে পারব।তরী একটা কিউটের ডিব্বা।সাজালে পুতুল লাগবে।’
আপু দুলাভাই কে বলল, ‘তুমি দাদুদের সাথে ঘুমোও।আমি তরীকে নিয়ে ঘুমোবো।’
‘আচ্ছা ঘুমাও, কোনো সমস্যা নেই।একটা রাত বউ ছাড়া কষ্ট হবে তবুও মানিয়ে নিবো।’
তরী রোশ্যান স্যার এর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ভাইয়া আম্মা বকবে তো।যদি থ্রি পিছ পরি।ভাবিকে নিষেধ করুন।আমি তো ভাবছিলাম যে দুই-তিনটা শাড়ি কিনেছে ওইটা আমার জন্য।’
‘তোমার ভাবিকে নিষেধ করেও লাভ নেই।যা ভেবেছে তাই ই করবে।’
‘আম্মাকে কী বলব?
‘আচ্ছা আমি দেখবো। এইদিকে এই মেয়ে যদি বাড়ি গিয়ে জিন্স পরে কী হবে সেই চিন্তায় আছি!’
তরীর কথা শুনে আমি এগিয়ে এসে বললাম,
‘ তোমাকে যদি থ্রি পিস পরা নিয়ে কিছু বলে তাহলে আমি তোমাকে জিন্স ও পরাবো।আম্মা দেখবে তরী শাড়ি থেকে জিন্স পরেছে।হ্যাঁ শাড়িতে নারী একথা ঠিক।শাড়ি ই নারীর সঠিক পোশাক।এর বাইরেও তো মেয়েদের কিছু শখ থাকতে পারে।সেগুলো ও পুরণ করতে দেওয়া উচিত। মেয়ে বলে কি সব ইচ্ছা মনের মাঝে দাফন করতে হবে?এই সব নিয়ম আমি মানিনা।আমাকে বলুক শাড়িতে তোমাকে ভাল লাগে,কিন্তু তোমার যেটা তে সুবিধা হয় সেটাই পরো।তাহলে আমি নিজেই বিবেক থেকে ভেবে দেখব কী করা উচিত। কিন্তু আমাকে কড়া শিকল আর শাসনে বাঁধতে চাইলে সেটা পসিবল না।আমাকে ভালবাসায় বাঁধতে হবে।’
কথাটা রোশান স্যার কে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম।জ্ঞান থাকলে বুঝে নিবে আমাকে ভালবাসতে হবে।রোশান স্যার চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

রাতে ঘুমোনোর জন্য বেডরুমে গেলাম।উনি দেখলাম স্যুটকেসের মধ্যে কিছু একটা খুঁজছেন।আমি দরজায় দাঁড়িয়ে পরখ করছি।খোঁজাখুঁজি দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
‘কী খুঁজছেন?’
‘ট্রাউজার।’
‘এখন পরবেন?’
‘না হলে ঘুমোবো কিভাবে?গ্যাবাডিং পরে ঘুমোনো যায়?’
‘ট্রাউজার পরেও কি ঘুমোনো যায়?’
‘তাহলে কী পরব?’
‘লুঙ্গি পরবেন।আমার তো মনে হয় লুঙ্গি পরে ঘুমানোই আরামদায়ক। এনে দেবো বাবার থেমে একটা?’
‘নো!আমি লুঙ্গি পরেই ঘুমোয় রাতে।তবে তোমার সাথে ঘুমোতে গিয়ে লুঙ্গি পরতে পারবো না।’
‘কেনো?’
‘রিস্ক আছে।তোমার মত পেটিকোটের নিচে আন্ডারওয়্যার পরা লাগবে।’
আমি ফিক করে হেসে দিলাম উনার কথা শুনে।ইজ্জতের ভয় সবার ই আছে।প্রতিটা সিঙ্গেল মানুষ যাদের একা ঘুমোনোর অভ্যাস, হঠ্যাৎ একজনের সাথে ঘুমোনো কি বিশ্রী ফিলিংস! উনি কালো ট্রাউজার আর বাদামি একটা গেঞ্জি পরে বিছানায় এসে বালিশ হেলান দিয়ে বসলেন।পা দুটো মেলানো।আমি ও ওয়াশ রুমে গিয়ে প্লাজু আর সুতির কামিজ পরে এলাম।প্লাজুর নিচে গিট দিয়ে সেফটিন দিয়ে আটকে দিলাম যেনো উপরে না ওঠে।ওড়না খুব শক্ত ভাবে পেঁচিয়ে নিয়ে দুই চারটা সেফটিন দিয়ে আটকে নিলাম।ঘর জুড়ে পায়চারি করছি ছোঁয়াকে জানানোর বাকি অনেক কিছু।নতুন একটা ফেসবুক আইডি খুলতে হবে!

উনি আমাকে পর্যবেক্ষণ করে বললেন,
‘দরজা কি খোলা রেখেই ঘুমাবে?আমার ঘুম পাচ্ছে,জানালা ও বন্ধ করে দাও।’

দুপুরে একবার ভীষণ লজ্জা পেয়েছি।তাই এখন বাবা না ঘুমালে দরজা লাগাবো না।ছিঃ!কি লজ্জার ব্যাপার!দুপুরে আপু আর দুলাভাই জোর করে উনাকে আর আমাকে এক ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়েছিলো।লজ্জায় আমার কেমন মরি মরি অবস্থা! বিয়ের পর বাবার বাড়িতে এসে দিন দুপুরে ঘরে দরজা দেওয়ার মত লজ্জাজনক কাজ দুনিয়াতে বোধহয় আর নেই।তাই এখন বাবা ঘুমাবে তারপর ই দরজা লাগাবো।
রোশান স্যার ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,
‘কি আশ্চর্য! তুমি কি দরজা লক করবেনা?ওভাবে থম মেরে কী ভাবছো?’
‘দেখুন,বাবা আগে ঘুমিয়ে যাক।নয়তো ভাববে দেখো মেয়ে কেমন নির্লজ্জ!জামাই পেয়েই ঘরের দরজা লাগিয়েছে।এই মেয়ে তাহলে বিয়ের জন্য কত পা*গ*ল ছিলো।উপর উপর যতই বলুক বিয়ে করব না।মনে মনে ঠিক ই বিয়ে পা*গ*লী ছিলো।’
‘ছিলে না?’
‘নাহ, মোটেও না।’
‘মেসেঞ্জার প্যানেলে কী লিখতে;ভুলিনি কিন্তু।’
‘ওটা তো এমনি দুষ্টুমি করতাম।’
‘তুমি যে কোন লেভেলের দুষ্টু আমি ভালোই বুঝেছি।’

উনি ফোন স্ক্রল করছেন চুপচাপ।আমি ফ্লোরে বসে আমার ফোন নিয়ে নতুন আইডি খোলার চেষ্টা করছি।কিন্তু কিছুতেই হচ্ছেনা।কয়েক দফা চেষ্টার পর হিমশিম খেয়ে রাগে ফোনটা আছাড় মারলাম।আমার এই মুহুর্তে ছোঁয়ার সাথে যোগাযোগ করতেই হবে।ফোনে যে কথা বলব, সে সুযোগ টুকুও পাচ্ছিনা।আমাকে মেসেঞ্জারে জানাতে হবে।আমাদের ফ্রেন্ডদের নিয়ে প্যানেল খুলে জানাতে হবে।

আমাকে ফোন আছাড় মারতে দেখে উনি বললেন, ‘কী সমস্যা ফোন আছাড় মারছো কেনো?’
‘সেই কখন থেকে ফেসবুক আইডি খোলার চেষ্টা করছি হচ্ছেইনা।’
‘আগের আইডি কী হয়েছে?
‘নষ্ট হয়ে গিয়েছে,নিউ আইডি খুলব।’
‘হচ্ছেনা কেনো?’
‘নতুন নাম্বার লাগবে? এই নাম্বার দিয়ে অনেক আইডি খুলেছি।’
‘কতো গুলা? ‘
‘হিসাব রাখিনি।’
‘ওয়াও! তাহলে আম্মু বা অন্য কারো নাম্বার দিয়ে খোলো।’
‘আম্মু-বাবা,দাদু,আপু,আশে পাশে চাচা-চাচি মোটামুটি পরিচিত যত মানুষ আছে,আত্মীয় স্বজন কারো নাম্বার দিয়ে আইডি খুলতে বাকি নেই।আইডি খুলেছি আর বাদ দিয়েছি।কোনো সমস্যা মনে হয়েছে বাদ দিয়েছি।’
‘মার্ক জাকারবার্গের উচিত তোমাকে গোল্ড মেডেল দিয়ে সম্মানিত ঘোষণা করা।’
‘অপমান করছেন,করেন!কিন্তু এখন কী করব?এই মুহুর্তে তো আর কেউ বাদ নেই যার সিম দিয়ে আইডি খুলব।’
‘আছে আর একজন।সে হলো রোশান সিদ্দিকী।দাও খুলে দিচ্ছি।’
‘আচ্ছা ধন্যবাদ, দিন। ‘
‘আইডির নাম কী দেবো?
‘এঞ্জেল সারাহ দিয়েছিলাম জীবনের প্রথম আইডিটা।আর ক্যাপশন কী দিতাম জানেন?’
উনি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলেন,
‘কী?’
‘প্রথমে এইচ আই মানে হাই লিখে নিজের একটা ছবি আপলোড করতাম।’
‘তারপর’
‘তারপর শাড়ি পরা ছবিতে ক্যাপশন দিতাম,
‘শাড়িতে কেমন লাগছে বন্ধুরা?’
‘তারপর?’
‘সিঙ্গেল ছবি আপলোড দিয়ে পোস্ট দিতাম,আমাকে কেমন লাগছে বন্ধুরা?’
‘তারপর?
‘গ্রামের মেয়ে বলে কেউ লাইক দেয়না!
‘তারপর?
‘শুধু তারপর তারপর করছেন কেনো?তার আর কোনো পর নেই শুধুই আপন।’
‘এখন কী দেবো?এঞ্জেল সারাহ?
‘এম্মা নাহ! আমার প্রেস্টিজে লাগবে।আপনার ইচ্ছামত দিন।’
‘সারাহ সিদ্দিকী দিলাম।’
“আচ্ছা দেন।’
‘পাসওয়ার্ড কী দেবো?’
‘উমমমম!! ভেবে নেই।’
‘কী ভাবছো কার বাচ্চা দিবা তাই?’
‘না।’
‘তাহলে বলো।’
আমি উনার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে আড়ালে গিয়ে পাসওয়ার্ড দিলাম।যাতে উনি দেখতে না পারেন।
উনি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।
আইডি ঠিক হওয়ার পর রিলাক্স হলাম।ভ্রু উঁচিয়ে বললেন, ‘বারবার উমমমম সাউন্ড উচ্চারণ করবে না মুখ দিয়ে।শুনতে অন্যরকম শোনায়।’
সন্দিহান হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
‘কেমন শোনায়?’
‘না কিছু না।’
‘বলুন আগে আপনাকে বলতেই হবে।’
‘কাউকে চুমু দিয়েছো কখনো?’
ইশ!কি লজ্জার কথ।লজ্জামিশ্রিত মুখে তাকিয়ে বললাম,
‘আমার কি আগে বিয়ে হয়েছিলো নাকি।’
‘ওহ!বর ছাড়া কাউকে চুমু দেওয়া যায়না।’
‘না।’
‘তোমার বর তাহলে অনেক চুমু খাচ্ছে তাইনা?’
কি ফাজিল এই লোকটা।দেখে যা মনে হয় তা নয়।কথা কম বলে আবার ফাজিল ও আছে।

এরই মাঝে দেখলাম জানালায় উঁকি দিচ্ছে পাড়ার কয়েকজন মহিলা।পাড়া বলতে পাশের বাসার ই।দুপুরের সেই মহিলা গুলো।আমি জানালার পাশে গিয়ে বললাম,
‘এই দাঁড়ান উঁকি দিচ্ছেন কেনো এত রাতে।?’
‘একটু জামাই কে দেখছি।’
‘আপনারা দুপুরে কী বলছিলেন?আমার বরের আমাকে দেখে পছন্দ নয়। কেনো আমার বরের কি আপনাদের দেখে পছন্দ হয়েছিলো? ।আপনাদের সাহস হয় কী করে এলোমেলো কথা বলার?আমার বর আপনাদের কানে কানে বলেছে আমাকে পছন্দ হয়নি? আর বলেছে আপনাদের বিয়ে করবে? আমার বর এর বয়স বেশী?আপনাদের বর কি ফিডার খায় আন্টি।শুনুন আমি আর আর বর বয়সে পারফেক্ট
আর এত রাতে পাড়া দিয়ে বেড়াচ্ছেন কেনো?লজ্জা থাকলে আর কোনদিন মানুষ নিয়ে এসব বলবেন না।শুনেন আমার বর আমাকে দেখেই পা*গ*ল হয়ে গিয়েছে।
এই শুনুন আপনার নাকি আমাকে পছন্দ হয়নি?’
উনার কি হাসি পাচ্ছে।শুকনো কাশি দিয়ে বললেন,
‘মানুষের কথায় কান দিতে নেই।আমি কি কাউকে বলেছি আমার পছন্দ নয়।আমার প্রথম পছন্দ তুমি।’
মহিলাদের মুখের উপর জানালা লাগিয়ে দিয়ে বললাম,
‘ধন্যবাদ প্রফেসর,যদি চুপ থাকতেন খবর ছিলো।’
‘আমি জানতাম আমার খবর ছিলো।তাই আর ভুল করিনি।’

হঠাৎ মধ্যরাতে ঘুমের মাঝে শ্বাস আটকে গিয়েছে আমার।কিছুতেই শ্বাস নিতে পারছিনা।ছটফট করছি আর হাঁপাচ্ছি।রোশান স্যারের ঘুম ভেঙে গেলো। আমাকে ছটফট করতে দেখে উনি চট জলদি উঠে পড়লেন।গলায় ওড়না আটকে গিয়েছে আমার।তড়িঘড়ি করে আমাকে উঠিয়ে বসালেন।গলা থেকে উড়না সরিয়ে দিলেন।কেমন যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।দ্রুত নিঃশ্বাস নিচ্ছি আর হাঁপাচ্ছি।উনি আমাকে এভাবে দেখে দ্রুত উনার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।উনার মাঝে কেমন যেনো ব্যাকুলতা দেখছি।আমাকে কষ্ট পেতে দেখে উনার চোখে ভ*য় আর কষ্ট উভয়ই দেখলাম।কেমন অস্হির হয়ে বলছেন,
‘সারাহ!কষ্ট হচ্ছে তোমার।খারাপ লাগছে।’ বলেই জগ থেকে পানি খাইয়ে দিলেন।আমি কিছুই বলতে পারছিনা।উনি আমাকে উনার বুকের সাথে আগলে ধরে মোলায়েম কন্ঠে বললেন,

‘বিয়ের আগে শুনেছিলাম আমি যাকে বিয়ে করছি সে খুব উৎশৃংখল। পোশাকের ও কোনো ঠিক নেই।যে মেয়ে বিবাহিত স্বামীর সামনে নিজের শরীর ঢাকতে গিয়ে নিজের জীবন দিতে যায় সে মেয়ে অন্য পুরুষের সামনে নিজেকে কতটা হেফাজতে রেখেছে সে আইডিয়া আমার হয়েছে।মানুষের কথা আমি কানে নেই নি।আমি জানতাম তুমি সব দিক থেকে পারফেক্ট মেয়ে।’

এটুকু বলে আরো শক্তভাবে আমার মাথা উনার বুকে চেপে ধরলেন।
আমি কোনো কথা না বলে থর থর করে কাঁপতে থাকা শরীর নিয়ে উনার বুকে চুপ করে পড়ে রইলাম।শরীর অবশ হয়ে আছে আমার।কেমন যেন মনে হচ্ছে!উনি পরম মমতা আর আদরে হাত বোলাচ্ছেন আমার মাথায়।হঠাৎ ই খেয়াল হলো উনার বলা কথাটা।উনি জানতেন আমি ভাল;মানে উনি কি জানতেন আমার সাথেই বিয়ে হবে!শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে চারিদিকে।নিশ্চুপ প্রকৃতির মাঝে আমার কর্ণকুহরে পৌঁচাচ্ছে উনার হৃদয়ের স্পন্দন। আমি অদ্ভুত এক ভালো লাগা অনুভব করছি।যেনো পিপাসিত হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটছে আমার।এটা কেমন ভাল লাগা।যা আমাকে ভীষণ তৃপ্তি দিচ্ছে।

রোশান স্যার ঘুমিয়ে পড়েছেন, কপালে একহাত ঠেকানো।আমি উনার চোখ থেকে চশমাটা খুলে রেখে দিলাম।উনি কি কিছুক্ষণ আগেও চশমা পরেছিলেন?কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম মানুষটার দিকে।ঘুম নেই আমার দু’চোখের পাতায়।ছোঁয়া কুমিল্লা গিয়েছে ওর মামাতো বোনের বিয়েতে।এই মুহুর্তে ছোঁয়াকে কিভাবে জানাবো সবটা!ফোনে এসব বললে ও বিশ্বাস করবেনা।ছোঁয়া আমার ছোট বেলার বেষ্ট ফ্রেন্ড।ওর জীবন টা এভাবে নষ্ট হোক সেটা আমি কখনোই চাইবো না।রোশান স্যারের মা আরেক টা সমস্যা।আমি তাকিয়ে আছি রোশান স্যারের দিকে।এই মানুষ টা কষ্ট পেলে আমি কিছুতেই সেটা সহ্য করতে পারব না।উনার মায়ের ব্যাপারে যদি এইভাবে সবটা জানিয়ে দেই তাহলে উনি বিশ্বাস করতেও পারেন আবার নাও করতে পারেন।তাছাড়া মাত্র দু’দিন আমার ও বাড়িতে বিয়ে হয়েছে এখনি এত বেশি বাড়াবাড়ি করা উচিত হবেনা।কোনো কিছুই গরম খাওয়া উচিত হবেনা।আমার কথা কেউ এখন মেনে নিবেনা।উলটা আমাকে ও বাড়ি ছেড়ে চলে আসতেও হতে পারে।অবশেষে তরী একা হয়ে যাবে।আরো বেশি কষ্ট নেমে আসবে তরীর জীবনে।আমি বেশি বাড়াবাড়ি করলে রোশান স্যার আমাকে নিয়ে আলাদা বাসায় ও উঠতে পারেন।যদি রোশান স্যার আমার কথা বিশ্বাস করেও নেন তাহলেও কষ্ট পাবেন।মায়ের থেকে সম্মানীয় আর ভালবাসার মানুষ এই পৃথিবীতে কেউ হতে পারেনা।সেই মায়ের সম্পর্কে খারাপ ধারণা কোনো সন্তান ই সহ্য করতে পারেনা।আমি তরীর ভাল চাই,কিন্তু একজন মাকে তার সন্তান থেকে আলাদা করতে চাইনা।তরীকে ভালো প্রমান করতে আমি খারাপ হবো।আমি অনিচ্ছায় খারাপ ব্যাবহার করবো যাতে অন্তত বুঝতে পারেন উনি যাকে অবহেলা করেন সেই উনাকে ভালবাসেন।তাছাড়া তরীর জন্য ভিন্ন কিছু ভাবতে হবে।তরীকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে।লেখাপড়া না শিখেও তো মানুষ কতভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে।বাংলায় একটা প্রচলিত কথা আছে”টাকা দেখলে কাঠের পুতুলও হা করে” কথা টা মিথ্যা না।আজ টাকা থাকলে ওশান ও তরীর জন্য পা*গ*ল থাকত।তরীকে আমি লেখাপড়া শেখাবো।

কেটে গিয়েছে পনেরো দিন।ছোঁয়া কুমিল্লা ছেড়ে চলে এসেছে। আমাদের সেকেন্ড ইয়ারের ফরম ফিলআপ এর ডেইট ও দিয়েছে।কাল সকাল হলেই আমাকে কলেজ যেতে হবে।ছোঁয়ার সাথে অনেক কথা আছে আমার।

চলবে?

নোটঃ(প্রফেসরের জায়গা লেকচারার হবে।আমি প্রথম থেকেই প্রফেসর লিখে ফেলছি।বিষয় টা নিয়ে ভাল ভাবে জেনে কোনো এক পর্বে ক্লিয়ার করে দিবো।)

(আজ কিন্তু বড় পর্ব দিয়েছি।সারাদিন লেগেছে লিখতে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here